ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ৩৬০০ মেগাওয়াটের কাড্ডালোর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প (Cuddalore power project) থেকে পিচাভারম (Pichavaram) নামের ছোট্ট ম্যানগ্রোভ বনটির দূরত্ব ৮ কিমি। ভারতের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত আইন ১৯৮৭ অনুসারে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫ কিমি সীমার মধ্যে কোন বনভূমি থাকা চলবে না। ফলে তামিল নাড়ুর রাজ্য সরকার ২০১০ সালে কাড্ডালোর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিবেশ ছাড়পত্র দিলেও ২০১২ সালের ২৩ মে সেই ছাড়পত্র স্থগিত করে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রীন ট্রাইবুনাল। ভারতীয় হিন্দু পত্রিকার রিপোর্টে এ বিষয়ে বলা হয়েছে: “the proposed power plant location violated the criteria for thermal power plants, being within 25 km of Pichavaram, an ecologically sensitive area.”
(সূত্রঃ Green tribunal suspends environmental nod for Cuddalore power project. http://www.thehindu.com/todays-paper/tp-national/tp-tamilnadu/green-tribunal-suspends-environmental-nod-for-cuddalore-power-project/article3454339.ece)
পিচাভারম ম্যানগ্রোভ বনটির আয়তন ১১ বর্গ কিমি যা ১০ হাজার বর্গকিমি আয়তনের সুন্দরবনের মাত্র ৯০০ ভাগের এক ভাগ। ভারতে ছোট্ট একটি ম্যানগ্রোভ বনের পাশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না-জায়েজ হলেও বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের পাশে বাংলাদেশে ভারতীয় কোম্পানিরই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন জায়েজ!
একই ভাবে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে অবস্থিত রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল পার্কের ২০ কিমি এর মধ্যে চামালাপুর গ্রামে ১ হাজার মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে নি ভারত ২০০৮ সালে। রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল পার্কের বিস্তৃতি ৬৪৩ বর্গকিমি জুড়ে যা সুন্দরবনের আয়তনের ১৬ ভাগের এক ভাগ। যে ভারত তার নিজ দেশে সুন্দরবনের ১৬ ভাগের একভাগ আয়তনের রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক এবং ৯০০ ভাগের একভাগ আয়তনের পিচাভারম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ২৫ কিমি সীমার মধ্যে তাপ ভিত্তিক কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেনি, সেই ভারত বাংলাদেশে সুন্দরবনের মতো একটি বিশ্ব ঐতিহ্য, জীব বৈচিত্রের অফুরন্ত আধার, রামসার সাইট এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বলে ঘোষিত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মাত্র ১৪ কিমি এর মধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিশাল তাপ ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে!ভারতের সীমানার ভেতরের বনাঞ্চল সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে যুক্ত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের যেন কোন গুরুত্ব নেই,যেন বাংলাদেশের সুন্দরবন একটি এতিম বনাঞ্চল যার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নাই!
অথচ শুধু গোলাপাতা, কাঠ, মোম, মধু, মাছ , সারি সারি গাছ আর নদ-নদী-খালের সজীব আধারই নয়, সুন্দরবন যেন গোটা বাংলাদেশকেই লালন করছে, আগলে রাখছে। একদিকে বনের গাঢ় সবুজের সমারোহ সাগরের উপর থেকে মেঘ টেনে আনে স্থল ভাগে, শিকড়ের জাল পেতে নদী বাহিত পলি ধরে রাখে অন্যদিকে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বুক পেতে রক্ষা করে গোটা উপকূল। সেই সুন্দরবন, সেই সজীব প্রাণের স্পন্দনে ভরা প্রিয় বাদাবন নিজেই এবার বিপদে পড়েছে। কঠিন বিপদ। গাছপালা-পশুপাখি-মানুষ সহ যে জগৎটাকে সে এতদিন আগলে রেখেছে, সেই গোটা জগৎটার অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখোমুখি। এমনিতেই প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট নানা দুর্বিপাকে সুন্দরবন অস্তিত্ব বিপন্ন,তার উপর এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যুক্ত হয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াটের ঐ বিশাল কয়লা বিদুৎ প্রকল্প। গত এপ্রিল ২০১৩ তারিখে ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির সাথে প্রয়োজনীয় চুক্তিও হয়ে গেছে। এর আগে স্থানীয় জনগণের প্রবল বিরোধিতা স্বত্বেও এমনকি পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়াই ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছিল।সম্প্রতি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে বিতর্কিত পরিবেশ সমীক্ষারও অনুমোদন হয়ে গেছে। সরকার জনগণের মধ্যে ভীতি তৈরী করে, রাষ্ট্রের পেশিশক্তি প্রদর্শন করে, দেশের বিশেষজ্ঞদের মতামত, স্থানীয় জনগণ এমনকি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যেমনঃ বন বিভাগ,নৌ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ইত্যাদির বিরোধিতা আগ্রাহ্য করে,ভারতীয় কোম্পানির মুনাফার স্বার্থে সামরিক বাহিনীর সাবসিডিয়ারি বাংলাদেশ ডিজেল পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেডকে দিয়ে প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের পাশেই রামপালে প্রস্তাবিত কয়লা বিদুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হলে সুন্দরবন যেসব বিপর্যয়ের শিকার হবে তার কয়েকটি নমুনাঃ
১) কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাইঅক্সাইড(SO2) ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড(NO2) নির্গত হবে যার ফলে পরিবেশ আইনে বেঁধে দেওয়া পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার সীমার (প্রতি ঘনমিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম) তুলনায় এইসব বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রা অনেক বেশি হবে (প্রতি ঘনমিটারে ৫৩ মাইক্রোগ্রামের বেশি) যার ফলে অ্যাসিড বৃষ্টি, শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি সহ গাছপালা জীবজন্তুর জীবন বিপন্ন হবে। অথচ জালিয়াতি করে সুন্দরবনকে পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার বদলে ‘আবাসিক ও গ্রাম্য এলাকা’ হিসেবে দেখিয়ে বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ নিরাপদ মাত্রার মধ্যেই থাকবে বলে প্রতারণা করা হচ্ছে।
সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে যেমন ১৪ কিমি দূরত্বের কথা বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চলছে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফায়েত্তি কাউন্টিতে ১৯৭৯-৮০ সালে ১২৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময়ও স্থানীয় মানুষকে এভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। এমনকি কিছু দিন পরে এর ক্ষমতা বাড়িয়ে ১৬৯০ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ করা হয়। ফলাফল সাথে সাথে বোঝা না গেলেও ৬৬ থেকে ১৩০ ফুট উচু বিশালাকৃতি পেকান বৃক্ষগুলো(একধরণের শক্ত বাদাম, কাজু বাদামের মতো) যখন একে একে মরতে শুরু করল ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের হিসেবে ফায়েত্তি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বিশেষত সালফার ডাই অক্সাইডের বিষ ক্রিয়ায় পেকান, এলম, ওক সহ বিভিন্ন জাতের গাছ আক্রান্ত হয়েছে, বহু পেকান বাগান ধ্বংস হয়েছে, অন্তত ১৫ হাজার বিশালাকৃতির পেকান বৃক্ষ মরে গেছে। এবং এই ক্ষতিকর প্রভাব কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এমনকি ৪৮ কিমি দূরেও পৌছে গেছে।
ফায়েত্তি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে গড়ে ৩০ হাজার টন সালফারডাই অক্সাইড নিঃসরণের ফলে সালফার ও অ্যাসিড দূষণে হাইওয়ে ২১ এর ৪৮ কিমি জুড়ে গাছপালার এই অবস্থা যদি হতে পারে তাহলে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরকারি হিসেবেই দৈনিক ১৪২ টন হারে বছরে প্রায় ৫২ হাজার টন (ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজার বা এফজিডি ব্যাবহার না করার কারণে দূষণ অপেক্ষাকৃত বেশি ) সালফার ডাইঅক্সাইড নিঃসৃত হলে মাত্র ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত সুন্দরবনের কি অবস্থা হবে তা ভাবতেও ভীষণ আতংক হয়!
২) সাড়ে চার বছর ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কালে নির্মাণের মালামাল ও যন্ত্রপাতি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নদী পথে পরিবহন করার সময় বাড়তি নৌযান চলাচল, তেল নিঃসরণ, শব্দদূষণ, আলো, বর্জ্য নি:সরণ, ড্রেজিং ইত্যাদির মাধ্যমে সুন্দরবনের ইকো সিস্টেম বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, ডলফিন, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদির উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
৩) কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে ৪ ৭ লক্ষ ২০ হাজার টন কয়লা পুড়িয়ে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। এই ফ্লাই অ্যাশ, বটম অ্যাশ, তরল ঘনীভূত ছাই বা স্লারি ইত্যাদি ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করে কারণ এতে বিভিন্ন ভারি ধাতু যেমন আর্সেনিক, পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম মিশে থাকে। এই দূষণকারী ছাই দিয়ে ১৪১৪ একর জমি ৬ মিটার উঁচু করা হবে। ফলে এই ছাই উড়ে, ছাই ধোয়া পানি চুইয়ে আশপাশের নদী খাল এবং আন্ডারগ্রউন্ড ওয়াটার টেবিল দূষিত করবে।
৪) কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন, জেনারেটর, কম্প্রেসার, পাম্প, কুলিং টাওয়ার, কয়লা উঠানো নামানো, পরিবহন ইত্যাদির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও যানবাহন থেকে ভয়াবহ শব্দ দূষণ হয়। বলা হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করে সুন্দরবনকে রক্ষা করা হবে। কিন্তু সবুজ বেষ্টনী বেড়ে উঠতে তো সময় লাগবে। ঐ কয় বছর শব্দ দূষণ প্রতিহত করা হবে কী ভাবে কিংবা সবুজ বেষ্টনীর বাইরে যন্ত্রপাতি ওমালামাল পরিবহন, ড্রেজিং ইত্যাদি কাজের সময় যে শব্দ দূষণ হবে তার ক্ষতিকর প্রভাবে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে?
৫) প্ল্যান্ট পরিচালনার জন্য পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার পানি সংগ্রহ করা হবে এবং পরিশোধন করার পর পানি পশুর নদীতে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে নির্গমন করা হবে। পরিশোধন করার কথা বলা হলেও বাস্তবে পরিশোধনের পরও পানিতে নানান রাসায়নিক ও অন্যন্যা দূষিত উপাদান থেকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকেই। তাছাড়া নদী থেকে এই হারে পানি প্রত্যাহার, তারপর বিপুল বেগে পানি আবার নদীতে নির্গমন, নির্গমনকৃত পানির তাপমাত্রা ইত্যাদি নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ, পানির প্লবতা, পলি বহন ক্ষমতা, মৎস্য ও অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন চক্র ইত্যাদির উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বেই যা নদী নালা খাল বিলের মাধ্যমে গোটা সুন্দরবনের জলজ বাস্তুসংস্থানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
৬) কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনী থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের তাপমাত্রা হবে ১২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা চারপাশের পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
৭) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা সুন্দরবনের মধ্য দিয়েই পরিবহন করা হবে। এ জন্য বছরে ৫৯ দিন কয়লা বড় জাহাজ এবং ২৩৬ দিন লাইটারেজ জাহাজ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে কয়লার মতো দূষণকারী কার্গো নিয়ে চলাচল করবে। ফলে কয়লা পরিবহন, উঠানো –নামানো, জাহাজের ঢেউ, নাব্যতা রক্ষার জন্য ড্রেজিং, জাহাজ থেকে নির্গত তরল কঠিন বিষাক্ত বর্জ্য, জাহাজ নিঃসৃত তেল, দিন রাত জাহাজ চলাচলের শব্দ, জাহাজের সার্চ লাইট ইত্যাদি সুন্দরবনের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ও জীব বৈচিত্র্য বিনাশ করবে। এগুলো আমাদের নিজেদের কথা না, প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিয়ে তারপর প্রকল্প জায়েজ করার জন্য যে পরিবেশ সমীক্ষা করা হয়েছে, শত জালিয়াতি করেও এইরকম ভয়ংকর ফলাফলগুলোকে ঢেকে রাখা যায় নি। বনঅধিদপ্তর থেকে গত ২৯ সেপ্টম্বর ২০১১ তারিখে পরিবেশ ও বনমন্ত্রালয় বরাবর চিঠি দিয়ে জানানো হয়ঃ
“কয়লা ভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তথা সমগ্র সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশ Ramsar Conservation এর Signatory থাকায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার বাধ্যবাধকতা আন্তর্জাতিক ভাবেও আরও বেশি দায়িত্বশীল করে। বন সংরক্ষক, খুলনা অঞ্চল সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কয়লা ভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। Sundarbans Ramsar Site(World Heritage Site) বিধায় কয়লা ভিত্তিক Power Plant প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে পু্নর্বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হল।"
কিন্তু এত কিছুর পরও বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর কোন ভ্রূক্ষেপ নেই,স্থানীয় জনগণ, সারা দেশের জনমত, বিশেষজ্ঞ মতামত এমনকি রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রের মতামত পর্যন্ত উপেক্ষা করে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য বিস্তারের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে। শুধু রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পই নয়,তিস্তার পানি বন্টন,তিতাসের বুকে বাঁধ দিয়ে ভারতীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি স্থানান্তর,টিপাইমুখ বাঁধ, ট্রানজিট, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই শাসক শ্রেণীর নতজানু অবস্থান খুব স্পষ্ট। ভারতের সরকারি বেসরকারি বৃহৎ কর্পোরেশনের মুনাফা নজরে এক দিকে ভারতেরই আদিবাসী, কৃষক,ভূমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে,প্রাণ-প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশি দেশের নদী,বনাঞ্চলও সাম্রাজ্যবাদের মুনাফা নজর থেকে মুক্ত নয়। ভারতীয় শাসকদের মুনাফা ও আধিপত্যের সম্প্রসারণে কখনও জুনিয়র পার্টনার,কখনও সাবকন্ট্রাক্টজীবি কিংবা কমিশনভোগী হিসেবে বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর এই নতজানু ভূমিকার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠা জরুরি। টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধে যেমন উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম মণিপুরের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের আন্তঃসংযোগ জরুরি,বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ জুড়ে থাকা এই সুন্দরবন ধ্বংসের রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই ভাবে শুধু রামপাল বা বাংলাদেশের জনগণই নয়, ভারতীয় এমনকি সারা দুনিয়ার সংগ্রামী জনগণের পারস্পরিক সংগ্রামের আন্তঃসংযোগ গড়ে তোলা দরকার।