প্রিয় মাহফুজ আলম (আবদুল্লাহ),
যে ইউরেকা মোমেন্ট এর সন্ধান করছিলেন আপনি তা হয়তো পেয়ে গেছেন, অন্তত আপনি তাই ভাবছেন ধরে নিয়ে আপনাকে লিখছি। পদের দিক থেকে আপনি সহকারী হলেও মহামান্য প্রধান উপদেষ্টা সাহেবও যেহেতু বিশ্বের সামনে আপনাকে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, এবং যখন তখন কেঁদে দিয়ে উনি যেভাবে বলেন “তোমরা বললে আমি চলে যাবো”, সেই তোমরা বা তুমি যে আপনি এটুকু আমরা বুঝতে পেরেছি। এজন্য আপনাকে সরকার প্রধান ধরে নিয়েই লিখছি।
কী শর্টকাট পদ্ধতিতে, কার হাত ধরে, কার কাঁধে ভর দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন সে আলোচনায় আমরা আপতত না যাই। ‘ফেছিবাদ’ এর ‘পতন’ ঘটেছে ক্ষমতা এখন আপনার হাতে। আসুন আমরা ৫ আগস্ট থেকে আপনার সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে কথা বলি।
১. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হত্যা ও নিপীড়ন:
৫ই আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সহিংস আক্রমণের অনেক রিপোর্ট এসেছে। হিন্দু, বৌদ্ধর মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো নিয়মিত আক্রমণের শিকার হচ্ছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে যথাযথ সুরক্ষা পাচ্ছে না। সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও রক্তপাত রোধ করার জন্য কী পরিকল্পনা রয়েছে?
২. রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা:
রাজনৈতিক বিরোধী দল ও কর্মীদের উপর সহিংসতা ও নিপীড়নের একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নাম দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে অসংখ্য নেতা-কর্মী, এটি গণতন্ত্রের মূলনীতি লঙ্ঘন করছে এবং জনগণের আস্থাও ক্ষুণ্ণ করছে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
৩. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের ওপর হামলা:
সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ও বর্বর হামলার শিকার হচ্ছে, যার ফলে অনেকে উদ্বাস্তু হয়েছে এবং জীবন নিয়ে শঙ্কিত। এক্ষেত্রে সরাসরি জড়িত আপনার সেনাবাহিনী। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের সুরক্ষার জন্য সরকারের পরিকল্পনা কী এবং তাদের দীর্ঘস্থায়ী দাবিগুলো কিভাবে সমাধান করা হবে?
৪. উগ্রবাদের বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি:
৫ই আগস্টের পর অসংখ্য জঙ্গী ও সাজাপ্রাপ্ত খুনের আসামীদের একের পর এক ছাড়া হচ্ছে। উগ্রবাদের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। গতকালও প্রকাশ্যে মিছিল হলো পূজা হতে দিবে না হুমকি দিয়ে। অথচ আপনার বক্তব্যে আপনি সবসময় ইনক্লুসিভ সোসাইটির কথা বলেন। এটি দেশের শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। উগ্রবাদ রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে?
৫. অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা:
বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে এবং বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে আমরা দেখলাম এতগুলা শিল্পকারখানা পুড়িয়ে ধংস করে দিলো আপনার অনুসারীরা। লাখ লাখ মানুষ চাকুরী হারালো। জিডিপি কমছে, রপ্তানী কমছে, ইনফ্লেশান বাড়ছে। এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে এবং পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করে তুলছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য সরকারের কৌশল কী?
৬. বুদ্ধিজীবীদের অবৈধ গ্রেফতার এবং উগ্রবাদীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ:
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের অবৈধভাবে গ্রেফতার এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। একই সময়ে, উগ্রবাদীদের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বুদ্ধিজীবীদের কণ্ঠ রোধের মাধ্যমে কীভাবে গণতন্ত্র রক্ষিত হতে পারে? সরকার কেন এই মিথ্যা মামলা এবং গ্রেফতার বন্ধ করছে না এবং উগ্রবাদীদের নিয়োগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
৭. মাজারের সুন্নি সুফিদের উপর আক্রমন:
এতগুলো মাজার ভাঙার পর আপনার বক্তব্যে আপনি বললেন যে আপনি মাজার পছন্দ করেন না, আপনার ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দ যাই হোক না কেন, আপনি যখন একজন সরকারের প্রতিনিধি তখন আপনার পছন্দ অপছন্দের প্রকাশ আপনার অনুসারীদের কাছে অনেক গুরত্বপূর্ণ। আপনি ইনক্লুসিভ সোসাইটির কথা বলেন, সেই ইনক্লুসিভ সোসাইটি মানে কি হিন্দুছাত্রীদের (রংপুরে) হিজাব পড়তে নির্দেশ দিয়ে ইনক্লুসিভ করা নাকি যে যার সংস্কৃতি যেন পালন, লালন করতে পারে সেই নিশ্চয়তা দেয়া? মাজার ভাঙার অপরাধের শাস্তিতে এবং মাজার ভাঙ্গা বন্ধে আপনার সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে বা নিচ্ছে?
যেভাবেই হোক আপনার হাতে এখন ক্ষমতা দায়দায়িত্বও আপনার হাতে। বাংলাদেশের জনগণ নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং একটি সুশাসনের অধিকার রাখে যা সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখে। আমি আপনার উত্তর এবং এই উদ্বেগগুলোর সমাধানের জন্য কার্যকর প্রচেষ্টার অপেক্ষায় রইলাম।
নিবেদক
কাজী মামুন
প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধা
বি.দ্র.: আশা করি, আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই চিঠি লেখার অপরাধে আমার উপর কোন আঘাত নেমে আসবে না, বলাবাহুল্য আপনার সাথে অনেক বিষয়েই একমত নই বলে প্রতিদিন অসংখ্য হুমকি-ধামকি ক্রমাগত পেতে হচ্ছে। জানি না এসব হুমকি-ধামকি আপনাদের সংজ্ঞা অনুসারে ‘ফেছিবাদ’ এর মধ্যে পড়ে কিনা।