
[সাম্প্রদায়িকতা রাজনীতির জটিলতম প্রশ্ন। সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়া যেতে পারে, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সক্রিয় রাখার বন্দোবস্ত করেও রাজনীতির ফায়দা হাসিল হতে পারে। বাংলাদেশের বুর্জোয়া রাজনীতি বহুবিচিত্র উপায়ে সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক ব্যবহার করতে যে সক্ষম হচ্ছে, তার উৎস তো নিহিত আছে জনগণের মাঝে টিকে থাকা শক্তিশালী সাম্প্রদায়িক ভাবমানসের মাঝেই...। সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হামলায় হিন্দু অধ্যুষিত বিধ্বস্ত জনপদ যশোর ঘুরে লেখক লিখছেন এর আদ্যোপান্ত।]
ক. বিদ্বেষের তত্ত্বতালাশ
"একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন, ব্রিটিশরা যেটাকে সাম্প্রদায়িকতা বলছে, হিন্দু-মুসলমান বিভেদ বলছে, যার ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান ভাগ হলো, সেই জিনিসটা কিন্তু ব্রিটিশ আসার আগে এ দেশে ছিলো না।" ব্রাত্য রাইসুকে দেয়া সাক্ষাতকারে সলিমউল্লা খানের বরাতে পাওয়া অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের এই মতামতটি গ্রহণ করা কঠিন। সাম্প্রদায়িকতা কিংবা হিন্দু মুসলমান বিভেদের সামাজিক কারণগুলো উপস্থিত ছিলো বৃটিশদের আগমনের আগেই যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। মঙ্গল কাব্যের বহু লেখকই দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ সম্পর্কে একটি পরিচ্ছদ রাখতেন, অন্যান্য সূত্রগুলোতেও এমন নিদর্শন ঢের আছে।
সুলতানী আমলে লিখিত বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গলের বর্ণনায় মুসলমান কাজী হিন্দুর আচারাদি পালনে কোনো আপত্তি করেননি। মোল্লা কিন্তু সর্পদেবীর পুজানুষ্ঠানের অনুমতি দেয়ায় কাজীকে ভর্ৎসনা করেন। কাজী আর মোল্লার মাঝে ফারাকটি জরুরি, একজন রাজমতাকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, অন্যজন সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছেন। রাজার লক্ষ্য কর আদায়, মতার বিকাশ এবং স্থায়িত্ব সাধন, তাই প্রয়োজন যথাসম্ভব সাম্প্রদায়িক স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। এসবের স্বার্থেই তিনি সাধ্যানুযায়ী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে নিরুৎসাহিত করবেন, কিন্তু নিজ ধর্মের লোকদের কাছে 'ধার্মিক' সাজারও যথাসম্ভব চেষ্টা করে যাবেন। রাজার বিপদ একদিকে সংখ্যাগুরু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রজাকে ক্ষিপ্ত করতে সাহস না করা, অন্যদিকে তার শেষ ভরসা এবং মতার ভিত্তি নিজ ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা। সুলতানী আমল পরবর্তী মোঘল আমলেও রাষ্ট্রক্ষমতা এবং সম্প্রদায়ের প্রতি পপাত প্রদর্শন করা না করার এই জটিলতার আভাস পাওয়া যাবে ১৬৪০ সালের একটি বিচারের ঘটনার বর্ণনায়, যেখানে আধুনিক মেদিনীপুর জেলায় একজন বাঙালী মুসলিমের বিচার করছিলেন আরেকজন বাঙালী মুসলিম কাজী। অপরাধ ছিল হিন্দুগ্রামে এক জোড়া ময়ূর হত্যা ও ভক্ষণ, কাজী অভিযুক্তকে চাবকানোর হুকুম দিয়ে রায়ের ব্যাখ্যায় বলেন ছেষট্টি বছর আগে বঙ্গবিজয়ের সময়ে সম্রাট আকবর কথা দিয়েছিলেন যে বাঙালীদের তাদের প্রথা আর আইন অনুসরণ করতে দেয়া হবে। ফলে হিন্দুগ্রামে প্রাণীহত্যা করে মুসলমান প্রজাটি আইন ভঙ্গ করেছেন।
কিন্তু রাজনীতি সর্বদা মতার বাধা নিয়মে চলেন না, দাঙ্গাটা হঠাৎ হঠাৎ লাগতো। বিপুল সংখ্যাগুরু হলেও রাজক্ষমতারহিত হিন্দু জনগোষ্ঠীই এই দাঙ্গার শিকার হতেন এবং তাদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতো, কবি বিজয়গুপ্তের বর্ণনায়
"যাহার মস্তকে দেখে তুলসীর পাত।
হাতে গলায় বাঁধি লয় কাজির সাক্ষাৎ।
কক্ষতলে মাথা থুইয়া বজ্র মারে কিল।
পাথর প্রমাণ যেন ঝড়ে পড়ে শিল।
পরের মারিতে পরের কিবা লাগে ব্যাথা।"
এই 'পর' তো শুধু ব্যক্তিগতভাবেই পর না, তুলসীধারণকারী সম্প্রদায়গত পরও বটে। কিন্তু এরপরও রাজক্ষমতা দাঙ্গা এড়িয়ে চলতে চাইতো, চৈতন্যদেবের প্রতি বিদ্বিষ্ট কাজীও মহাসঙ্কীর্তন রুদ্ধ করতে এসে শেষ পর্যন্ত তার প্রেমভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকে আলিঙ্গন করেন, এমন বর্ণনাও পাওয়া যাবে চৈতন্যের জীবনীতেই। আবার মোঘল সাম্রাজ্যেও একটা প্রকাশ্য সম্প্রীতির ভাব থাকলেও পারিবারিক দ্বন্দ্বে জীর্ণ হবার পর আওরঙ্গজেবের আমলে ধর্মীয় চিহ্নগুলোই যে প্রধান হয়ে উঠলো তার কারণ তার ভিত্তিটা সর্বদাই অস্তিত্বশীল ছিল।
অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মত হলো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণই ছিলো, এমনকি হিন্দু-মুসলিম মিলন, পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও উপভোগের অজস্র দৃষ্টান্তও ইতিহাসে পাওয়া যায়। মমতাজুর রহমান তরফদার ভাষায় "হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সম্পর্ক ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ এবং ধর্মান্ধতার ঘটনা ছিল বিরল।" যদিও "সতর্কতার সাথে এসব গ্রন্থ পড়লে মনে হয় যে কিছু কিছু মুসলমান কর্মকর্তার ব্যক্তিগত খেয়াল ও ধর্মান্ধতা এসব সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য দায়ী ছিল। আবার, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটেছিল" ( হোসেনশাহী বেঙ্গল)। অর্থাৎ প্রাকবৃটিশ আমলে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের তুলনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই প্রধান প্রবণতা ছিলো, এই মতটি একভাবে মেনে নেয়া যায়, কিন্তু জিনিসটা ব্রিটিশরা আসার আগে এ দেশে ছিল না, এই মতটি মেনে নেয়ার মত না।
তারপরও অধ্যাপক রাজ্জাকের বক্তব্যটির সারকথাটুকু গ্রহণ না করে উপায় থাকে না, কেননা আমাদের চেনা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্ম এবং বিকাশ উপনিবেশিক শাসকদের আশ্রয়ে এবং মদতে; হিন্দু মধ্যবিত্তের বিকাশের আদিপর্বে আধুনিক সাম্প্রদায়িকতার সূচনা এবং তারই প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পরবর্তীতে বিকশিত মুসলমান মধ্যবিত্তের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তার রমরমা। বিশেষ করে বৃটিশ আমলের শেষ পর্বটি এক রকম সাম্প্রদায়িক সংঘাতেরই ইতিহাসে পরিণত হয়, সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক ব্যবহার পরিণত হয় নৈমিত্তিক চর্চায়।
খ. বিদ্বেষের জের
ফরায়েজি আন্দোলন মুসলমান চাষা সম্প্রদায়ের ভেতর তৈরি হওয়া গোষ্ঠী অনুভূতির একটা বিশিষ্ট উদাহরণ, মর্মগত দিক দিয়ে পূববাঙলার নমশূদ্র চাষাদের মতুয়া ধর্মও তাই।একটি 'খাঁটি' ইসলাম কায়েমের ছলে দরিদ্র চাষীদের জমায়েত করেছিল, অন্যটি 'ভক্তি' আন্দোলনের ছলে বর্ণহিন্দু গোষ্ঠীর হিন্দুত্বের খাতা থেকে বাতিল হয়ে 'চণ্ডাল' তকমা পাওয়া জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করেছিল। একদা প্রভাবশালী এই দুটি ধর্মগোষ্ঠীই আজ কেবল ইতিহাসের বিষয়।
সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীস্বার্থে একাট্টা জমায়েতে আসা মানুষেরা একই সময়ে ভিন্ন অনুভূতির প্রাবল্যে ভিন্ন নিশানেও জমায়েত হতে পারেন। একটা চমৎকার উদাহরণ দেয়া যাকঃ "পূর্ববঙ্গের নমশূদ্র কৃষকদের একীভবনের আরও একটি স্তর ছিল। যারা হিন্দুকরণের রাজনীতিতে সাড়া দিচ্ছিলেন, তারাই কিন্তু আবার শ্রেণীভিত্তিক আন্দোলনেও যোগ দিচ্ছিলেন। ১৯৩৭ সালের মাঝামাঝি থেকেই খুলনা, ফরিদপুর, বাখরগঞ্জ প্রভৃতি জেলায় 'কম্যুনিস্ট ধাঁচে কৃষক সমিতি' গড়ে উঠতে শুরু করে, আর এই জেলাগুলোতে হিন্দু কৃষকদের অধিকাংশই ছিলেন "নমশূদ্র" (উন্নয়ন বিভাজন ও জাতিঃ বাংলায় নমশূদ্র আন্দোলন ১৮৭২-১৯৪৭, শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়) । একই উদহারণটি একই সময়ের মুসলমান চাষাদের জন্যও খাটে, তেভাগা আন্দোলন আর পাকিস্তান আন্দোলনে মুসলমান চাষার হৃদয় যেভাবে সাড়া দিয়েছে, খোকা রায়ের স্মৃতি কথায় উদ্ধৃত একটি বাক্যে তার পুরো প্রেক্ষিতটি পরিষ্কার হয়। ময়মনসিংহের এক মুসলিম লীগ নেতা গিয়াস পাঠান চাষীদের বলছেনঃ 'মিয়া, পাকিস্তান হইলে তেভাগা না, চৌভাগা পাইবা!' এর সরল অর্থ হচ্ছে হিন্দু জমিদার না থাকলে মুসলমানদের রাজত্বে চৌভাগা, অর্থাৎ মালিকের স্বত্বটাই কৃষকরা পাবে এই প্রলোভনটাই চাষীদের সামনে হাজির করে দরিদ্র চাষীদের জড় করা সম্ভব হয় মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত নেতাদের পেছনে।
চাষার হৃদয়ে একইসাথে শ্রেণীদ্বন্দ্ব আর ধর্মীয় পরিচয়ের ঐক্যের টানাপোড়েন ঔপনেবিশক আমলে যেভাবে জারি ছিল, তারই চূড়ান্ত ফল হলো জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কাছে শ্রেণীর রাজনীতির পর্যুদস্তই না কেবল, অনেকখানি অধীনস্তও হওয়া। কোলকাতা থেকে শুরু করে নোয়াখালি পর্যন্ত ৪৭ এর রক্তস্নাত দিনগুলো তাই নিয়তির মতই নেমে এল।
গ. সাম্প্রদায়িকতার পাটাতন কি উচ্ছেদ হয়েছে?
পাকিস্তান আন্দোলনে পূর্ববাঙলাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলো বাঙালি আশরাফ মুসলমান নেতৃত্ব, আর পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে বাঙালি আতরাফ মুসলমান নেতৃত্ব, রিচার্ড এম. ইটনের মূল্যায়নটি এমনই। কিন্তু এই সারসংক্ষেপের খাঁড়ার নিচে কাটা পড়ে যায় তৎকালীন পূর্ববাঙলারই বাসিন্দা বিশাল হিন্দু জনগোষ্ঠী, সাথে আর সব সংখ্যালঘু ধর্মসম্প্রদায়ও। বদরুদ্দীন উমরের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কিত আলোচনাতেও এই সীমাবদ্ধতাটি প্রকাশিত; কিন্তু এ কথাও ঠিক যে মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার পৃথকতা এবং বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন তিনিই প্রথম, এবং সবিস্তারে। কিন্তু যখন তিনি বলেন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা নেই কারণ সাম্প্রদায়িকতার আর্থ-সামাজিক ভিত্তি নির্মূল হয়ে গিয়েছে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিষয়ে তার যুগান্তকারী আলোচনার পরও এই সারসংকলনটুকু অর্থনৈতিক নির্ধারণবাদী সরলীকরণের দোষে দুষ্ট। হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগত উচ্ছেদের কারণে যদি সাম্প্রদায়িকতার আর্থ-সামাজিক ভিত্তি উচ্ছেদ হয়েই থাকে (কারণ কেড়ে নেয়ার মতো আর কোনও সম্পদ বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের নেই, যেটা আছে ভারতের কোনও কোনও অঞ্চলে মুসলমান জনগোষ্ঠীর হাতে এবং সেইটাই সেখানকার সাম্প্রদায়িকতার আর্থ-সামাজিক ভিত্তি)—এটা তো ভোলার উপায় নেই যে সাম্প্রদায়িকতার 'আর্থ-সামাজিক ভিত্তি' উচ্ছেদের এই প্রক্রিয়াটি ছিল নারকীয়, এবং এর নৃশংস রক্তপাতময় স্মৃতি এখনো যৌথস্মৃতিতে দগদগে ঘা এর মতোই বিকট। এর চেয়ে বড় কথা হলো, সাম্প্রদায়িকতার গভীর সাংস্কৃতিক আবহটি কোনও শিক্ষা-সংস্কৃতিগত সংগ্রাম ব্যতীত, পরমত সহিষ্ণুতার ক্ষেত্র প্রস্তুতি ব্যতীত শুধু অপরের শারীরিক উচ্ছেদ হবার মধ্য দিয়ে কিছুতেই দূরীভূত হয় না।
পাকিস্তান আমলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশের একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল দ্বিজাতিতত্ত্বকে অস্বীকার করা, এই বিরোধিতার সারকথা ছিল ধর্মীয় ঐক্য নয়, বরং ভাষা, ঐতিহ্য এবং ইতিহাস জাতীয়তার ভিত্তি। তারপরও একদম বাহাত্তর সাল থেকে যে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার শাসকেরা যে সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণে যথেষ্টই আগ্রহী ছিলেন, তার নিদর্শন বহু। একাত্তর পরবর্তী রাষ্ট্রীয় মতায় আসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে পুরোপুরি যায়নি, এবং খুব দ্রুত ও নিশ্চিত গতিতেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরাজয় ঘটতে থাকে বাংলাদেশে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সামাজিক নিপীড়ন ও চাপ সৃষ্টি করার প্রধান আইনী হাতিয়ার অর্পিত সম্পত্তি আইন বা শত্রু সম্পত্তি আইন দাপটের সাথেই চালু থাকে, রাষ্ট্রের মুসলমানীকরণও ধীরে হলেও অব্যাহত থাকে। এভাবে '৬৯ এবং '৭১ এর তীব্রতম সংগ্রামের পরও নানান ঐতিহাসিক পাকেচক্রে ক্ষমতায় আসীন হয় যে শ্রেণীটি, জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কোনও কার্যকর কর্মসূচির অভাবে এবং লুণ্ঠন তাদের সম্পদ উপার্জনের প্রধান তৎপরতা হবার কারণে আর সব প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠীর মতোই তারাও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারাকেই বাংলাদেশে স্থাপিত করার চেষ্টা করে।
বরং বলা যায়, পাকিস্তান আমলের যে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পাল্টা বিকাশ ঘটা শুরু করেছিল, জনগণের ভাবমানসের ওপর তার প্রভাবটুকু, ওই ছাপটুকুই বরং সমাজকে কিছুটা সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ মুক্ত করেছিলো, রাষ্ট্রকে বাধ্য করেছিলো বুলিবাগিশী হলেও অসাম্প্রদায়িক অলঙ্কারে ভূষিত হতে। শাসকদের কিন্তু সর্বদাই চেষ্টা ছিল সাধ্যানুযায়ী জনগণের মাঝে সাম্প্রদায়িক অনুভূতিটাকে প্রবলতর করার, সেটা শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনও মৌলিক পরিবর্তন না করা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র নানান ধর্মীয় আয়োজন নতুন করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে করা থেকে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে থাকে। সেই সাথে ভারতে আশ্রয় নেয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল তীব্র আকার নেয়। এরই ধারবাহিকতায় জিয়াউর রহমান এই কাজটিকেই আরও পাকাপোক্তভাবে সম্পন্ন করেন এবং অলঙ্কারটুকুও বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের ধর্মীয় চেহারা সুষ্পষ্ট করেন।
সাম্প্রদায়িকতার সাংস্কৃতিক ভিত্তি নির্মূল হবার কোনও কারণ বাংলাদেশে ঘটেনি, সংখ্যাল্প সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের হীন দৃষ্টিভঙ্গির কোনও অবসান এখানে হয়নি। এবং এর ফলেই মতাসীন কোনও তরফ ভূসম্পত্তি দখল কিংবা উৎখাতের সহজ ল্য হিসেবে তাকে বেছে নিতে পারে, সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে নারী নির্যাতনও পরিচালনা করতে পারে, যেটি আবার প্রতিপকে আরও দুর্বল করারই একটা অস্ত্র মাত্র। ধীরগতিতে সম্প্রদায়গত সংখ্যালঘুকে নির্মূল করার একটা শক্তিশালী সামাজিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এখানে কার্যকরভাবে জারি রয়েছে।
কিন্তু বিপরীতে এও সত্য যে রাষ্ট্র ও সমাজের বিকাশের সাথে সাথে, তার উৎপাদিকা শক্তির অগ্রগতি এবং মালিকানা সম্পর্কের বদলের সাথে সাথে আর সব সম্পর্কের মতো সম্প্রদায়গত সম্পর্কও পরিবর্তিত হয়। হিন্দু জমিদারের প্রতি বিদ্বেষের বাস্তব কারণ যখন অনুপস্থিত হয়, বাকি থাকে কেবল পারস্পরিক সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় অসূয়া। সেটাও খানিকটা দুর্বল হয়ে যাবার শর্ত তৈরি হয়েছে গ্রামীণ ও মফস্বলী ভেদরেখা মুছে ফেলা নাগরিক জীবনের বিস্তারে। আভিজাত্য-ধর্ম-সম্প্রদায় ইত্যাদির ভেদ মুছে প্রাত্যহিক লেনদেনের সম্পর্কই প্রবলতর হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। তারপরও সাম্প্রদায়িকতার এই সাংস্কৃতিক অবশেষও খুবই শক্তিশালী রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কার্যকর আছে। কেননা সহজে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে এমন বিপুল ছিন্নমূল এবং রাজনৈতিক ভাবে অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষ আছেন, সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলে আগ্রহী এমন মতাবান মধ্যবিত্ত আছেন এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নটিকে ব্যবহার করে ভোট বাগাতে চান এমন রাজনৈতিক নেতাও আছেন।
ঘ. সাম্প্রদায়িকতা রোখা কার দায়?
বাধ্য না হলে রাষ্ট্র সংখ্যালঘুর স্বার্থরায় যে উদ্যোগী হবে না, তা শুধু ক্রমে ক্রমে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভূসম্পত্তি অর্পিতসম্পত্তি আইনের গ্যাড়াকলে বেহাত হয়ে যাওয়ায় না, চাকরি-বাকরিতে তার সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব না ঘটনায় না, বাংলাদেশে হিন্দু নাগরিকের একটা বিশাল অংশ দেশান্তরী হওয়া থেকেও নয়, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পরিচালিত স্রেফ একতরফা হামলাগুলো প্রতিরোধে সরকার বা প্রশাসনের তেমন কোনও ব্যবস্থা না নেয়া থেকেও পরিষ্কার। ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্ট শ্রমিকদের গুলি করতে তার বাধে না, সারের দাবিতে কৃষকের ওপর গুলি করার ঐতিহ্য যেমন এই রাষ্ট্রের আছে, আছে ভিয়েতনামে যুদ্ধের প্রতিবাদে সংহতি মিছিলে গুলি করার কৃতিত্বও, কিন্তু সাম্প্রদায়িক হানাহানি বন্ধে আজ পর্যন্ত আইনের হাতকে উত্তোলিত হতে আমরা দেখিনি কখনো। রাষ্ট্রে নিরাপত্তা আর নাশকতা দমনের নামে কত শত গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট নীতি বাস্তবায়িত হয়, নিত্য নতুন বাহিনী গড়ে তোলা হয়, কিন্তু সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বন্ধে তা কবে কোথায় কাজে লেগেছে?
সর্বশেষ নির্বাচনোত্তর সাম্প্রদায়িক হামলার সরকারী দল সমর্থকেরা তাদের পুরো আলোচনার কেন্দ্রে রাখছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিএনপি- জামায়াতের হামলা, যদিও যশোরের অভয়নগরের বিজয়ী সরকার দলীয় সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন ওই হামলায় পূর্বতন সংসদ সদস্য ইন্ধন জুগিয়েছেন, যিনি ছিলেন আওয়ামী লীগেরই হুইপ। রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় একই দৃশ্য আমরা দেখছি, আমরা দেখেছি সাঁথিয়াতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপমন্ত্রীটির পাশে প্রধান হামলাকরীদের ভীড়। কিন্তু সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে অনলাইন প্রচারণার প্রায় পুরোটা এবার গরম ছিল প্রথম আলোর কথিত 'ছবি জালিয়াতি' নিয়ে। এই প্রপাগাণ্ডার ডামাডোলটা বাজানো হয়েছে একটা ভয়ঙ্কর সত্যকে আড়াল করা হয়েছে, সেটা এই ঘটনারই অন্যপিঠঃ এই হামলা ঠেকাবার দায়িত্ব কার ছিল? কেন থানা থেকে অল্প মিনিটের রাস্তায় শত শত ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়? টিভিতে তা প্রায় লাইভ দেখানো হয় অথচ পুলিশ খবর পায় না! কে শপথবদ্ধ ছিল এই মানুষগুলোকে রায়? কে? কারা?
নির্বাচন কমিশনের শপথ নিয়েছিলো ভোটারদের রার এবং আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল নাগরিকদের রা করা। সেটা তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, এই সত্যটা এনারা ভুলিয়ে দেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। এই অর্ধসত্যের কারবারিরা সাম্প্রদায়িক হামলার সাংস্কৃতিক পরিবেশটা টিকিয়ে রেখে এর রাজনৈতিক ফলটা হজম করতে চায়, পুরো প্রক্রিয়ার তারা একটামাত্র উইংমাত্র, আর অল্পকিছু সরল বিশ্বাসে সেই ডামাডোলে যোগ দেন। সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হয় না, বিচার হয় না, তদন্তও হয় না, ব্যর্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের শাস্তিও হয় না; কিন্তু সেটাকে ব্যবহার করা হয় নিজেদের টিকে থাকাকে বৈধ করার জন্য। নব্য কিংবা ঝানু আওয়ামী সমর্থকেরা ক'জন সরকারের দায় নিয়ে কথা বলেছেন? প্রায় কেউ-ই না।
সাঈদীর ফাঁসির রায়ের ঘটনায় সাম্প্রদায়িক হামলা পরিচালনা করা হয়েছে গোটা হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিকভাবে জিম্মি করার জন্য, যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে বানচাল করতে নিরপরাধ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা। রামুতে জমির লোভই প্রধান ভূমিকা রেখেছে। অভয়নগরে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীক ভোট দেয়ার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে। উল্টোদিকে, রামপালে ভারতীয় পুঁজির সহায়াতায় সুন্দরবনধ্বংসী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে যাদের জমি অধিগ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ, সেই বসতভিটা-আবাদী জমিহারারা প্রায় সর্বাংশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রকল্পের স্থান নির্বাচনে এই সাম্প্রদায়িক হিসাব নিকাশ খুব গূরুত্বপূর্ণ, এবং কেবল 'নোমো'রাই উচ্ছেদ হবে, কাজেই মুসলমানদের আপত্তি করার কিছু নাই, এমন প্রচার স্থানীয লীগ নেতারা অকাতরেই চালাচ্ছে।
বাংলাদেশের লুটেরা রাজনীতির দুটো দিক এ থেকে স্পষ্ট, এই ডাকাতরা কেউ জনসমর্থন আদায় করে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ঘড়বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে; কেউ সেই পোড়া ঘড়বাড়ি দেখিয়ে নিজের দলে ভোট টানায়। ফলে সাম্প্রদায়িকতা বন্ধে বাস্তব আগ্রহ দুই জোটের কারোরই নেই। আইনবিদ ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার ভাষায়: "জামাত-শিবির-বিএনপি এলে দেশে অরাজকতা হবে, তাই আগামী পনের বছর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে– তবে আমরাও বুঝতে চাই সেটি তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়েই করতে চান কিনা!"
ঙ. মালোপাড়ার বাংলাদেশ
যশোরের অভয়নগরের মালোপাড়ার সকলেই জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। পুরো পাড়ায় নাকি চাকরি করেন মাত্র দু'জন, একজন বিমান বাহিনীতে ছোটখাট একটা পদে, অন্যজন একটা স্থানীয় বিদ্যালয়ে। বিদ্যুৎ নেই, পাশের 'মুসলমান পাড়া' থেকে লাইন টেনে আলো জ্বালান। অবিশ্বাস্য হারে তাদের বিল দিতে হয় মূল গ্রাহককেঃ পাঁচটি বাতির জন্য ১৮শ' থেকে ২২ শ' টাকা। নিকটতম পাঠশালা তিন কিলোমিটার দূরে। ছোট্ট মালোপাড়াকে এক লহমায় বোঝার জন্য আর খুব বেশি লাগে না, এই মূহুর্তে যে মালোপাড়া আগুনে পোড়া, লুটপাটের শিকার হওয়া এক বিধ্বস্ত আতঙ্কিত জনপদ।
নির্বাচনের দিন সেখানে হামলা একবার না, তিন তিন দফায় ঘটে। প্রথম দু'বার তারা প্রতিহত করেছিলেন দুর্বৃত্তচক্রকে। একইসাথে বারংবার আবেদন জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য। কর্ণপাত করা হয়নি। এলাকাবাসী বরং অভিযোগ করেছেন ফায়ারব্রিগেড আর নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক গাড়ি তাদের গ্রামের কাছাকাছি এসেও থেমে গিয়েছে, ফিরে গিয়েছে। বৈদ্যুতিক আলোর উৎসটির মালিক সাম্প্রদায়িক সহমর্মিতার বশেই নাকি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন রাতেরবেলা শেষবারের হামলার সময়। ফলে প্রতিবার শত্রু আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে আসায় অন্ধকার সেই রাতে তারা তৃতীয় বারের মত মোকাবিলার ঝুঁকি নেননি।
কেটে ফালা ফালা করে হয়েছে চাঁপাতলার টিনের চাল ও বেড়া। দরজা ভেঙে তছনছ করা হয়েছে আসবাব, সিন্দুক ভেঙে লুট করা হযেছে টাকা পয়সা আর অলঙ্কার। বিশেষ ক্ষোভ ছিল মাছ ধরার জালগুলোর ওপর। ছাই বানিয়ে দেয়া হয়েছে বইপত্র। নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর পোড়া বইপত্রের মাঝে দেখলাম "শ্রী কৃষ্ণঃ তিনি কে ছিলেন, কি তাঁর উপদেশ" নামের একটা সম্পূর্ণ অক্ষত বই।
জামায়াতের ক্যাডাররা যে এই হামলায় প্রধান ভূমিকা রেখেছে, সেটা নিয়ে এলাকাবাসী সংশয় নেই কোন। কিন্তু শত শত মানুষ আকাশ থেকে এই হামলা চালাতে পারে না, তাদের সংগঠিত হতে হয়েছে, দলবদ্ধভাবে চাঁপাতলার মালোপাড়ায় আসতে হয়েছে। তাদের হাতে ছিল দা, বোমা আর রেললাইনের পাথর ভর্তি সিমেন্টের ব্যাগ-- এগুলো তারা ছুঁড়ে মেরে আহত করেছে নদীপথে পলায়নপর মানুষজনকে।
কিন্তু প্রশাসন কেন নীরব ছিল? কেন তারা আক্রান্ত মানুষজনকে সাহায্য করতে যায়নি? ভোটকেন্দ্র রক্ষা করছিলেন তাঁরা! গণতন্ত্র রক্ষা করছিলেন তাঁরা! প্রশ্নের এই উত্তর। সাম্প্রদায়িক হামলাকে পুঁজি করে রাজনীতির ফায়দা হাসিল করা চলছে ষোল আনা, কিন্তু আক্রান্ত মানুষগুলোকে রক্ষা করতে তৎপরতা দেখাবার একটা মাত্র নিদর্শনও নেই। এলাকাবাসী কারও নাম প্রকাশে আগ্রহী না, যদিও অনেকেই তাদের 'মুখচেনা'।
এই আতঙ্কের কারণ সহজেই অনুমেয়। জামাত হোক, বিএনপি হোক, আওয়ামী লীগেরই কেউ হোক, মালোপাড়ার মানুষেরা তাদের হিংস্র প্রতিবেশীকে চটাতে চান না। ফলে প্রতিবারই আরও কিছু মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া হন, কেউ কেউ হয়তো গঞ্জনাময় এই মাতৃভূমির মায়াই ত্যাগ করেন। বাকিরা বাধ্য হন সাংস্কৃতিক একটা অভিযোজনে, নিত্য অপমান-নিরাপত্তাহীনতা আর অধিকারহীনতায় টিকে থাকার কায়দা রপ্ত করে ফেলেন।
সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির একটা পাটাতন শক্তিশালীভাবে কায়েম আছে বলেই সরকার হোক, বিরোধী দল হোক, প্রতিবশী হোক, ভূমিদস্যু হোক, প্রশাসন হোক—সকলেই ধর্মীয় পরিচয়কে এত সহজে ব্যবহার করার সুযোগটি নিতে পারে। মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার কলুষ থেকে মুক্ত করার চেষ্টাটা জরুরি, কিন্তু সেই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটা না ঘটে যাবার আগে কি আমাদের কিছু করার নেই? একটা দাবি এই মূহুর্তে তাই হওয়া উচিত সাম্প্রদায়িকতাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে আইন প্রণয়ন, যেখানে সাধারণ অপরাধ থেকে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা, সংস্কৃতি, আচরণকে চিহ্নিত করা যাবে। প্রয়োজন একটি স্থায়ী সংস্থার যারা সাম্প্রদায়িক বৈষম্য এবং বিষবাষ্প নিরসনে কাজ করবে, সাম্প্রদায়িক আইনকানুনকে চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক আর সব ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা। প্রয়োজন যে কোন সাম্প্রদায়িক ঘটনা রোধে ব্যর্থতার দায়ে প্রশাসনকি কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা, আরও প্রয়োজন এ যাবত ঘটে যাওয়া সকল সাম্প্রদায়িক হামলার তদন্ত ও বিচার। সেটা করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে হামলাকারীরা যেমন সাহস হারাবে, তেমনি প্রশাসনও তৎপর থাকবে আক্রান্ত মানুষকে রক্ষায়।
ক্ষমতার স্বার্থে উচ্চস্তর থেকে ঘটানো হামলা হোক আর স্থানীয় পর্যায়ের সাম্প্রদায়িক দুরভিসন্ধি হোক, কোনও ক্ষেত্রেই জনগণের দুর্বলতর অংশকে রায় রাষ্ট্রের কোনও ভূমিকা দৃশ্যমান হয় না। আমাদের সমাজে আপাতঅসংঘবদ্ধ অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ও সংগঠনসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করা, মাঠের লড়াইয়ে নামাই রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হতে বাধ্য করার পথ। সে রকমের একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রয়াস এই মূহুর্তের দাবি, যারা যে কোনও সাম্প্রদায়িক হামলার সময়ে অনতিবিলম্বে ঘটনাস্থলে হাজির হবে, প্রতিহত করবে, ঘটনার তদন্ত করবে, জনগণের সামনে তার পর্যালোচনা হাজির করবে; এমন একটি সঙ্ঘ যার অস্তিত্ব ও কর্মকাণ্ডই যেমন একাধারে রাষ্ট্রকে দায়বদ্ধ হতে বাধ্য করবে, জনগণের অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চেতনাকেও শক্তিশালী করবে, যূথবদ্ধ করবে। রাষ্ট্রের কাছ থেকে কার্যকর কিছু তখনই আশা করা যায় যখন বিচার আদায়ের মতো শক্তিও ফরিয়াদী অর্জন করে।
বিপ্লব রহমান | unkwn.***.*** | ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৭:১২88767
I | unkwn.***.*** | ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৬:৪৩88769
Irfan Khan | unkwn.***.*** | ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৫৭88768
santosh banerjee | ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:০২101100ইরফান খান সাহেব , পরিবর্তন আসবেই ।...আসতেই হবে!!! আজ আমার ছেলে মেয়ে যখন তার মুসলিম বন্ধুর সাথে মেলামেশা বা কথা বার্তা বলে সেখানে হিঁদু মুসলিম সংঘাত নেই ।..না শহরে , না গ্রামে ।.না মফস্বলে ...তখন তারা কিন্তু এই ভেদাভেদ নিয়ে কথা বলে না ।..বলে ।..চাকরির বাজার নিয়ে।.. দেশের রাজনৈতিক ধাষ্টামো নিয়ে।..বলে সারা দুনিয়ার কথা ।..বলিভিয়ার কথা।.. মিশরের ।।.যে যেখানে লড়ছে ...।...ইথিওপিয়া তে কি হচ্ছে তা নিয়ে।.. অর্থনৈতিক জুয়াচুরি নিয়ে।..আর দিল্লী তে , আমু ।..জেনু ।..ওখানে ঘটে চলে নিঃশব্দ বিপ্লব !আশার আলো তো এইখানেই !!তাই না ??