এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সংশোধন ও ধ্বংস - বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে কিছু কথা

    স্বাতী মৈত্র লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১১ এপ্রিল ২০১৯ | ১৪৮৩ বার পঠিত
  • দিল্লী। পাঞ্জাব। মনিপুর। কেরালা। এলাহাবাদ। মুম্বই। কলকাতা। রায়পুর। কালিকট। হায়দ্রাবাদ। আলীগড়। বেনারস। পুনে। চেন্নাই। শ্রীনগর।

    গত পাঁচ বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে উঠেছে। কখনো বা ছাত্র সঙ্ঘের অধ্যক্ষ গ্রেফতার, কখনো বা দলিত ছাত্রের আত্মহত্যা। কখনো স্টাডি সার্কেল ঘিরে বচসা, কখনো 'দেশদ্রোহ' নিয়ে বিতর্ক। স্বাভাবিক ভাবেই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, এর দায় কি ছাত্র রাজনীতির? নাকি এর দায় শাসক দল ও তাঁদের ছাত্রকর্মীদের? এরই মাঝে কখনো কখনো শিক্ষক নিগৃহীত হয়েছেন দেশদ্রোহের দায়ে, কখনো বা অধ্যাপক গ্রেফতার হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করবার দায়ে। আলোচনার ঝড় উঠেছে বাকস্বাধীনতার প্রসঙ্গে। গেরুয়াকরণের পুরনো অভিযোগ আবারও নতুন করে ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চে উঠে গণেশের প্লাস্টিক সার্জারির বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন, মহাভারত যুগে ইন্টারনেট থেকে হলদিঘাটির যুদ্ধে রাণা প্রতাপের জয়, এরকম অনেক বিষয়ের চর্চা হয়েছে।

    এরকম সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হতেই পারে যে ভারতবর্ষের শিক্ষাক্ষেত্রে মূল সমস্যা অযুক্তির চাষ ও গেরুয়াকরণের উপদ্রব, মূল দ্বন্দ্ব বাক্‌স্বাধীনতা বনাম স্বৈরাচার। এই অতিসরলীকরণের প্রেক্ষিতে কিছু আলোচনা হওয়া প্রয়োজন, সেই উদ্দেশ্যেই এই লেখা।


    ২৪ এপ্রিল, ২০০০ সাল। প্রাইম মিনিস্টার্স কাউন্সিল অন ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কাছে একটি রিপোর্ট জমা পড়লো। বিখ্যাত শিক্ষাবিদ শ্রী মুকেশ আম্বানি ও শ্রী কুমারমঙ্গলম বিড়লার তৈরি এই রিপোর্টের নাম 'এ পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক ফর রিফর্মস ইন এডুকেশন'।

    সেখানে এই দুই শিক্ষাবিদ জানালেন যে ভারতবর্ষে শিক্ষাক্ষেত্র সম্ভবত সব থেকে বেশি নিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্র, এবং এতে তাঁরা খুবই অখুশি। তাঁরা চান, ভারতীয়রা তাঁদের 'মানসিকতার আমূল পরিবর্তন করুন' এবং 'শিক্ষাকে সামাজিক উন্নয়নের একটি অংশ হিসেবে দেখা বন্ধ করুন'। তাঁরা বলেন, ভারতবর্ষে শিক্ষাক্ষেত্রের একটাই কাজ হতে পারে - তা হচ্ছে এমন কিছু 'নমনীয়, প্রতিযোগিতা-উন্মুখ কর্মী তৈরি করা যারা খুব সহজে নতুন স্কিল নিজেদের দখলে আনতে পারে এবং নতুনত্ব দেখাতে (innovate) পারে’।

    শিক্ষাবিদ কথাটা টাইপো ভাববেন না। প্রধানমন্ত্রী বাজপায়ির অফিস থেকে যখন এঁদের কাছেই বরাত গিয়েছিল, তখন এঁরাই শিক্ষাবিদ নিশ্চয়। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে এঁদের থেকে যোগ্য মত কেই বা দিতে পারতেন সে সময়ে? তাছাড়া যেই রিপোর্টের শুরুতেই বিড়লা ও আম্বানি বেশ কিছু শিক্ষাবিদ (এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম), গবেষক মায় রিলায়েন্স পাওয়ারের চেয়ারম্যানকে পর্যন্ত ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁদের 'ইনসাইটের' জন্য, সেই রিপোর্টের গুরুত্ব অস্বীকার করে কোন অর্বাচীন?

    ১৯ বছর বাদে আজ ফিরে তাকালে এই ধরণের ম্যানেজমেন্ট বাজওয়ার্ডে ভরা রিপোর্ট অবশ্য অন্তঃসারশূন্য মনে হতেই পারে। প্রশ্ন জাগতে পারে - ইনোভেট মানে কী? যেই শিক্ষার্থী সমাজ-বিচ্ছিন্ন আদর্শ কর্মী হিসেবে ফ্যাক্টরিতে ঢালাই হচ্ছে, সে কি ইনোভেট করবে - মালিকের পদলেহন করবার ১০১তম উপায়? স্কিল কি গাছে ফলে? গ্রোথ মানে কী, মুকেশভাইয়ের সম্পত্তির বৃদ্ধি?

    এরকম আরও চমৎকার একেকটি নিদানে এই রিপোর্ট ভরা। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট বাজওয়ার্ডে ভরা ('ইনোভেট'; 'নলেজ ইকনমি'; 'ফাস্ট ট্র্যাক টু নলেজ-বেসড গ্রোথ') এই অন্তঃসারশূন্য রিপোর্টের ভাষা ও যুক্তি ('সামাজিক উন্নয়নের সাথে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নেই') আজকে আমাদের চারিপাশে সর্বত্র। শিক্ষানীতি থেকে শুরু করে পাড়ার ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিউট (সুলভে বিবিএ ডিগ্রী বেচা হয়), মন্ত্রী থেকে শুরু করে বহুজাতিকের কর্মচারী, সবার মুখেই এই ধরণের কথা শুনতে পাবেন।

    সেই নিদান মেনে আস্তে আস্তে শুরু হল রিফর্ম, অর্থাৎ সংশোধন। শিক্ষাক্ষেত্রের অর্থের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হল, কারণ মুকেশভাই ও বিড়লাভাই তো বলেই দিয়েছেন, ইউজিসির দরকার নেই, ক্রেডিট দেওয়া হোক না হয়। আদর্শ কর্মী পরে লোন শোধ করে দেবে (লোন যদি শোধ করতে না পারে, তাহলে নিশ্চয় সে আদর্শ কর্মী নহে - এনপিএ মাফের সুবিধাটা অবশ্য সে পাবেনা, কারণ সে মুকেশভাই নয়)। শিক্ষার চাহিদা মেটাতে বেসরকারি পুঁজির সাথে সাথে শিক্ষার মতন সংবেদনশীল ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কেন কমাতে হবে, এর উত্তর তাঁদের রিপোর্টে পাওয়া যায়নি, কিন্তু সেই কথাকে বেদবাক্য মনে করে একের পর এক ডিমড্‌ বিশ্ববিদ্যালয়কে খোলবার অনুমতি দিলো এনডিএ সরকার। উত্তর প্রদেশের মাঠেঘাটে আখের খেতের মধ্যে এরকম অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের ধ্বংসস্তূপ আজও খুঁজে পাওয়া যায়।

    ২০০৫ সাল। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসেস (ডাব্লুটিও-গ্যাটস) আলোচনার দোহা রাউণ্ডে উচ্চশিক্ষাকে পণ্য হিসেবে 'অফার' করে বসলো ইউপিএ ১-পরিচালিত ভারত সরকার। বলা হল, এটা কেবলমাত্র 'অফার' - 'কমিটমেন্ট' নয়, এবং দোহা ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা-কেন্দ্রিক আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে সেটা কেবলমাত্র প্রস্তাবের স্তরেই থাকবে। মিড ডে মিল ও রাইট টু এডুকেশনের সরকার, পিএইচডিধারী প্রধানমন্ত্রীর সরকার এ হেন হঠকারী প্রস্তাব কেমন করে পেশ করলো? শিক্ষা সংগঠনগুলো বার বার এই প্রশ্ন করেও সরাসরি উত্তর পায়নি।

    মুকেশভাই ও বিড়লাভাইয়ের যুগান্তকারী রিপোর্ট পড়লেই কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা আর বলে দেওয়ার দরকার হয়না। তাঁরা তো বলেই দিয়েছেন, প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি স্তরে সরকার চাইলে খরচ করুন, বাকিটা পুঁজিপতিরা দেখে নেবেন। প্রাথমিক ও সেকেন্ডারি স্তরের শিক্ষা যে উচ্চশিক্ষার সাথে প্রতিযোগিতায় নামেনি, শিক্ষাক্ষেত্রে যে ব্যালেন্স শিটের দুই দিক মিলিয়ে চলা যায়না, সেসবের ধার ধারেননি তাঁরা। ধার ধারেনি সরকারও।

    আস্তে আস্তে জনপরিসরের আলোচনা থেকে হারিয়ে যায় এই সর্বনাশা প্রস্তাব। ২০১৫ সালে ডাব্লুটিও-গ্যাটস আলোচোনার নাইরোবি রাউণ্ডের আগে কেউ কেউ এনডিএ সরকারের কাছে জানতে চান, সরকার কি এই প্রস্তাব নাইরোবি গিয়ে ফিরিয়ে নেবে, দেশের যুবসমাজকে বাঁচাবে এই ভয়াবহ 'কমিটমেন্টের' হাত থেকে? আশ্চর্যভাবে, নাইরোবি রাউণ্ডের পরে এই নিয়ে টুঁ শব্দটিও শোনা যায়নি!

    এনডিএ ২-এর আমলে অবশ্য এ ধরণের কিছু জনপরিসরে আলোচনা হবে, এ আশা করাও বৃথা। শেষমেশ অল ইন্ডিয়া ফোরাম ফর রাইট টু এডুকেশনের (এআইএফআরটিই, ৭০টি শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন-দ্বারা তৈরি একটি ফোরাম) তরফে পাঠানো একটি মেমোরান্ডামের উত্তরে সরকার জানায় যে নাইরোবিতে এই বিষয়ে কোন নিষ্পত্তি হয়নি। সকালে ঘুম থেকে উঠে জল খাওয়ার আগেও যে সরকারের প্রতিনিধিরা একবার করে "কংগ্রেস আমলের সব কিছু খারাপ" মন্ত্র জপ করে নেন, সেই সরকারেরই কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মন্ত্রক জানায় যে এ হেন প্রস্তাবের পিছনে একটি 'ফিলজফি' আছে, এবং তা হচ্ছে বিদেশি পুঁজি টানা। অলিখিত থেকে যায় সেই পুরনো যুক্তিঃ সামাজিক উন্নয়নের সাথে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নেই, আদর্শ কর্মী প্রস্তুত করার জন্য পুঁজিপতিরা যা করবার করে নেবেন।

    সেই আদর্শেই যে নরেন্দ্র মোদীর এনডিএ ২ সরকার একের পর এক যুগান্তকারী সংশোধন এনেছেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। শিক্ষা বাজেট কমেছে। কখনো সিএসআইআরের ল্যাবগুলো অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে (সরকার বলেছেন "চরে খাও"), কখনো বা টিআইএফআরে আধা মাইনে এসেছে। একদিক দিয়ে সিট যেমন কমে গেছে, আরেকদিক দিয়ে সেইরকম কমে গেছে শিক্ষক নিয়োগ, বাড়ছে চাকরির অনিশ্চয়তা ও আমেরিকান মডেলে 'অ্যাডজাঙ্কটিফিকেশন'। হিফা (হাইয়ার এডুকেশন ফাইনান্সিং এজেন্সি) নামক একটি সংস্থানের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লোন নিতে হয়েছে, যা পরিশোধ করতে মাইনে বাড়াতে হবে কারণ মুকেশভাইয়ের মতন এঁদেরও এনপিএ মাফ হওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষা লোনের বোঝা বাড়লে একটি দেশের যুবসমাজের কী অবস্থা হতে পারে তা আমরা আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে শিখতেই পারি। অথবা বাড়ির আরো কাছে, এই ভারতবর্ষেই, ঋণ জর্জরিত কৃষকদের কথা মনে করে চিন্তা করতে পারি - সত্যিই কি আমরা দেশের ভবিষ্যতের নাগরিকদের এই পথে ঠেলে দিতে চাই? এনপিএর বাদশাদের রিপোর্টে এর উত্তর পাবেন না কিন্তু!

    অবশ্য এ কথা উঠতেই পারে যে এত সংশোধন করেও যখন লাভের লাভ হয়নি, যখন দেখা যাচ্ছে যে বৃহৎ সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট হয় চাকরি আদৌ পাচ্ছেন না অথবা বাজারের হিসেবে আনএমপ্লয়েবল অর্থাৎ বাতিল হয়ে যাচ্ছেন, তখন আরও আরও সংশোধনের প্রয়োজন, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, আচ্ছে দিন ব্যাস রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ম্যানেজমেন্ট স্পিকের ভাষার জাদুকরীটাই অনেকটা এইরকম - বেসরকারিকরণকে বলা হয় উদারিকরণ, আর ধ্বংসকে বলা হয় সংশোধন।

    অথবা - যদিও এ কথা বললে আজকে বাতিলের খাতাতে ধরা হয়! - এ কথাও বলা যেতে পারে যে ১৯ বছর আগে তৈরি করা দুই মহান শিক্ষাবিদদের এই সর্বৈবভাবে ব্যর্থ শিক্ষানীতিকে আবর্জনা মনে করে জ্বালিয়ে দেওয়াই কাম্য।

    যে পথে চলে কিছু শিক্ষা ব্যবসায়ী ছাড়া কারো উপকার হয়নি, সেই পথে ভারতবর্ষের আগামীদিনের নাগরিকদের কেন হাঁটতে বলা হবে, এই প্রশ্ন গণপরিসরে ফিরে আসা জরুরি।

    --------

    এনডিএ সরকার যেখানেই ক্ষমতায় আসে, সেখানেই সাধারণত অভিযোগ ওঠে শিক্ষার গেরুয়াকরণের। সঙ্ঘের আদর্শের প্রচার, সঙ্ঘপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর রমরমা, সঙ্ঘপন্থী শিক্ষক নিয়োগ, সঙ্ঘ সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর বিচিত্র ইতিহাস ও বিজ্ঞান চর্চা - এই সকল বিষয়কে গেরুয়াকরণের অঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসা এনডিএ ২-ও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা চালানো, 'দেশদ্রোহী'-দের চিহ্নিত করে সঙ্ঘপন্থী ছাত্র সংগঠনদের তাণ্ডব, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বাবাজি-সাধুজিদের উপদ্রব, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দেশপ্রেমের বন্যা, ইত্যাদি ইত্যাদি, এ সমস্ত ঘটনাই খুব নিয়মিত ভাবে ঘটে এসেছে গত পাঁচ বছরে।

    সমস্যা হচ্ছে, শিক্ষায় গেরুয়াকরণের বিরোধী অনেকেও যেহেতু উদারিকরণ-বেসরকারিকরণ এবং সংশোধন-ধ্বংস নীতির সাথে জড়িত সমস্ত যুক্তি আত্মস্থ করে ফেলেছেন, অতএব একেকবার একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তাল দৃশ্য দেখে তাঁরা কেবল গেরুয়া বনাম লাল অথবা গেরুয়া বনাম নীলের একমাত্রিক চিত্র অনুধাবন করতে সক্ষম হন। যারা ছাত্র রাজনীতির পক্ষে, তাঁরা মনে করেন সঙ্ঘের গেরুয়াকরণ রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হলেই ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তরতর করে সংশোধনের পথে এগিয়ে যাবে। যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে, তাঁরা মনে করেন ছাত্র রাজনীতির কাঁটা (সব রঙের) সরলেই ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তরতর করে সংশোধনের পথে এগিয়ে যাবে।

    লাল/নীল বনাম গেরুয়ার একমাত্রিক যুক্তিতে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জগতের মূল দ্বন্দ্ব আদৌ ধরা পড়েনা। মূলধারার সংবাদমাধ্যম ও জনপরিসরের নানা কণ্ঠস্বর এই দ্বন্দ্বকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন কিছু বাইনারির মাধ্যমে - যেমন বাকস্বাধীনতা বনাম স্বৈরাচার, যেমন যুক্তি বনাম অযুক্তি - যা আদপে অতিসরলীকরণ। এ কথা সত্যি যে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন, এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও, একে অপরের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাত্র আন্দোলন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ইস্যু নিয়ে হয়ে থাকে। এ সত্ত্বেও দেশের নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসা বিচ্ছিন্ন, অসম্বদ্ধ ছাত্র-কণ্ঠস্বর শুনতে শেখা প্রয়োজন, কারণ সেই কণ্ঠস্বর শুনতে না শিখলে শিক্ষা জগতের মর্মবেদনা আদৌ বোঝা সম্ভব না।

    ২০১৪-২০১৯ সালের মধ্যে নানা ছাত্র আন্দোলনের একটা খণ্ডচিত্র দেখলে ব্যাপারটা হয়তো পরিষ্কার হবেঃ

    ●পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সঙ্ঘের ২০১৮ সালের আন্দোলন হয় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরীক্ষার ফী এক লাফে বেড়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে।
    ●লোকসভা ভোটে প্রার্থী হিসেবে সদ্য মনোনয়নপত্র পেশ করা কানহাইয়া কুমারের নেতৃত্বে জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সঙ্ঘের ২০১৫ সালের আন্দোলন (পোশাকি নাম, #অকুপাইইউজিসি) হয় এম.ফিল ও পিএইচডি স্কলারদের রিসার্চ স্টাইপেন্ড (নেট-জেআরএফ বহির্ভূত) বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে। তারপরে জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেছে একের পর এক (কিছু সফল, কিছু অসফল) আন্দোলন, কোনটা এক ঝটকায় গবেষণার সিট কমে যাওয়ার বিরুদ্ধে, কোনটা প্রসপেক্টাসের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে।
    ●দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, হিদায়েতউল্লা জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় - সর্বত্র মেয়েরা রাস্তায় নেমে হস্টেল থেকে ঢোকা-বেরোনোর স্বাধীনতা, লাইব্রেরীতে পড়াশোনার স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের #হোককলরব আন্দোলন একটি যৌন হেনস্থার ঘটনার সঠিক বিচারের দাবিতে শুরু হয়।
    ●টিসের ছাত্র আন্দোলন ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এসসি-এসটি-ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের ফেলোশিপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে।
    ●সাধারণত ভাবে ‘রাজনীতি বিমুখ’ বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলোতে রিসার্চ স্কলাররা ফেলোশিপ বৃদ্ধির দাবিতে এখনো দেশব্যাপী আন্দোলন চালাচ্ছেন; ‘অরাজনৈতিক’ আইআইটি ছাত্র-শিক্ষকদের নেতৃত্বে হয়েছে মার্চ ফর সায়েন্স।

    রিসার্চ স্টাইপেন্ড ও স্কলারশিপ, ফী বৃদ্ধি, সিট কাটের বিরোধিতা; মেয়েদের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং যৌন হেনস্থামুক্ত প্রতিষ্ঠান তৈরি করা; এসসি-এসটি-ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা উন্মুক্ত করা - ভারতবর্ষের নানা প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রসমাজের বিচ্ছিন্ন কণ্ঠস্বরের চাহিদাগুলো কিন্তু খুব বিচ্ছিন্ন নয়।

    এর সাথে যদি শিক্ষক সংগঠনগুলোর বা ছাত্র-শিক্ষক সংগঠনগুলোর যুগ্ম আন্দোলন যোগ করা যায় - যেমন স্থায়ী শিক্ষাকর্মী নিয়োগের দাবিতে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন, অথবা কিছুদিন আগেই ঘটে যাওয়া নিয়োগে ২০০ পয়েন্ট রোস্টারের ব্যবহার বিষয়ে সফল আন্দোলন - তাহলে কিন্তু গেরুয়াকরণের যুগে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ও তার মূল দ্বন্দ্বের একটা পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। লাল/নীল বনাম গেরুয়া জাতীয় তরল, একমাত্রিক বিশ্লেষণের বাইরে বেরিয়ে পর্যালোচনা করলে খুব পরিষ্কার হয়ে যায় যে ছাত্র এবং শিক্ষাকর্মীদের থেকে যে কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে বারবার, সেই কণ্ঠস্বর ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রের গ্যাটসিফিকেশন (নন্দিনী চন্দ্রর ভাষায়) অথবা বিড়লা-আম্বানিকরণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, উন্মুক্ত এবং সার্বজনিক শিক্ষার পক্ষে।

    শাসকের ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরেরা এই কন্ঠস্বর শুনতে পাননা, বা শুনেও শুনতে চাননা। ন্যাক-নির্ফ-ইনস্টিটিউট অফ এমিনেন্স জাতীয় নানাবিধ ইঁদুর দৌড়ের পথ আটকে যদি ছাত্র বা শিক্ষকবৃন্দ, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডাররা, দাঁড়ান, তাহলে তাঁদের যে ভাবেই হোক সরিয়ে দেওয়াই কাম্য। অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদার সবথেকে বড় জায়গা যেটা, অর্থাৎ শিক্ষার আর্থিক বোঝা কমানো, সেই জায়গাতে আঘাত হেনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কন্ঠরোধ করবার চেষ্টা করে থাকেন। সাম্প্রতিক কালে এর নিষ্ঠুরতম উদাহরণ রোহিত ভেমুলা, যার ফেলোশিপ “পেপারওয়ার্কের” অজুহাতে আটকে দেওয়া হয়েছিল এবং যাকে শাসকপন্থী ছাত্র দলের সাথে বচসার অজুহাতে হস্টেল ছাড়া করা হয়েছিল। রোহিত ও তার চার সঙ্গীর আশ্রয় হয়েছিল ত্রিপলের তলায়, “ভেলিওয়ারায়” (দলিত বস্তি)। তারপরের ঘটনা আমরা সকলেই জানি।

    ----------

    এতটা পড়বার পরে যদি কেউ বলেন, এর অর্থ কি ভারতীয় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মানের উন্নতি হওয়ার প্রয়োজন নেই? তার উত্তর হ্যাঁ, অবশ্যই আছে।

    ভারতবর্ষের জিডিপির ৩.৮৩% শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ করা হয়। এর মধ্যে গবেষণার বরাদ্দ ০.৩%। অস্থায়ীকরণের ফলে এক সন্ত্রস্ত, সদা আশঙ্কিত শিক্ষক শ্রেণী তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষা এবং গবেষণার মানের সরাসরি ক্ষতি করতে বাধ্য। সরকারি তথ্য অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও জনসংখ্যার ২৫%, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৩৫%র থেকে ১০% কম। এই এনরোলড ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কতজন শেষ পর্যন্ত ডিগ্রী লাভ করেন, এবং কতজন কলেজ-ছুট হন, তার কোন তথ্য নেই। বিড়লা-আম্বানির পরামর্শ মেনে খোলা বেসরকারি ইঞ্জনিয়ারিং কলেজগুলোতে আস্তে আস্তে তালা ঝুলছে, এআইসিটিইর নির্দেশে ২০২০ সাল থেকে আর কোন নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলবার অনুমতি দেওয়া হবেনা। বাজারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২৫% ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট সঠিক শিক্ষা পেয়ে পাশ করছেন। এরই মধ্যে গত তিন বছরে অনাদায়ী শিক্ষা লোন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ২০১৮ অর্থবর্ষে সেটা ৯%তে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্বের হার যেহেতু ৬%, ৪০ বছরে সব থেকে বেশি, অতএব এই অনাদায়ী লোনের পরিমাণ যে আরও বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। এ কথাও বলা বাহুল্য যে এঁদের মধ্যে কেউই 'রাইট অফ' পাবেন না - সেটা কেবল বৃহৎ পুঁজিপতিরা পেয়ে থাকেন।

    উন্নত বিশ্বের নানা দেশে শিক্ষার উদারিকরণ-সংশোধনের অভিজ্ঞতা এবং দেশে গত ১৯ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও যদি সেই একই পথে এগিয়ে চলা হয়, তাহলে লাভ কার? জিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক যদি শিক্ষানীতির পথপ্রদর্শক হন, তাহলে জিত কার, আর হার কার? গ্যাটস চুক্তির 'অফার' যদি 'কমিটমেন্টে' গিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তার মূল্য কাকে চোকাতে হবে? বিড়লা-আম্বানির ম্যানেজমেন্ট বাজওয়ার্ডে ভরা অন্তঃসারশূন্য রিপোর্টের ভাষা ও যুক্তি আত্মস্থ করা ছাড়া কি আর কোন রাস্তা নেই?

    গত কয়েক বছরের ছাত্র ও শিক্ষক আন্দোলন কিন্তু পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে তাঁরা এই ছেঁদো যুক্তি মেনে নিতে আর রাজি নন। হয়তো সময় হয়েছে এই কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করবার।


    বিড়লা-আম্বানি রিপোর্ট »


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১১ এপ্রিল ২০১৯ | ১৪৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • T | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:৩৮78093
  • এই ব্যাপারটা জানতে না? এই নাইরোবি চুক্তি অনুসারে সরকার বাহাদুর গত বছর না তার আগের বছর জিও ইউনিভার্সিটিকে অনুদান দিতে গেশল। এই গেম অনেকদিন ধরে খেলা হচ্ছে।
  • Ekak | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:২৬78094
  • কাজের লেখা এটা । চুক্তির ব্যাপারে জানতুম । কিন্তু একসঙ্গে গোটা চিত্রটা পড়তে পেয়ে ভালো হলো ।
  • | ***:*** | ১১ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৩৪78092
  • এইটা পড়েই কি রেগে গেলাম।
  • | ***:*** | ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:৪৪78095
  • নারে। শুরু থেকে পুরো ডিটেলোস জানতাম না। আশ্চর্য্য কোন মিডিয়ও এই নিয়ে টুঁ শব্দ করে না।
  • S | ***:*** | ১২ এপ্রিল ২০১৯ ১০:২৯78096
  • আমি গুগলে সার্চ করে একটি পাতা ৬ এর রিপোর্ট পেলাম ঐ নামে ঐ সময়ে। জানিনা সেটাই পুরো রিপোর্ট কিনা। খুব বেশি বাজওয়ার্ড তো পেলাম না। এই ধরনের ধান্দাবাজির রিপোর্টে যা লেখা থাকে এখানেও সেইটাই রয়েছে। প্রচুর ভালো কথার মধ্যে দুয়েকটা বিষ লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

    যেমন বলেছে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেভেলের এডুকেশন বাধ্যতামুলক করতে এবং বিনামুল্যে দিতে। কিন্তু এটা লেখা হয়নি যে বাধ্যতামুলক কি করে করা হবে। সরকারি ইস্কুল তো এখনো ফ্রি। যেসব প্রাইভেট ইস্কুল রয়েছে, সেগুলো কি বন্ধ করে দেওয়া হবে? তা এইযে এতো কর্মকান্ড হবে তার খরচ কোথা থেকে আসবে? লিখেছে এডুকেশন ডেভালাপমেন্ট ফান্ডের কথা। তারপরে লিখেছে "Exempt donations to this fund from income tax"। এই কথার মানে আমি যেটুকু বুঝেছি, তা হলো ট্যাক্সো বাড়িয়ো না। কিন্তু তাহলে পয়সাটা আসবে কোথা থেকে? সেটা স্পষ্ট নয়।

    আরেকটা বলেছে হায়ার এডুকেশনে স্টুডেন্ট লোনের ক্রেডিট মার্কেট তৈরী করতে। সেটা এখন তৈরী হয়েই গেছে। যেকোনও ব্যান্ক লোন দেয়। আম্বানি-বিড়লারা সেই গুড় খেতে পারেনি। আরো বলেছে যে সরকারকে লোনের গ্যারান্টার হতে হবে। খুব ভালো কথা। তাছাড়া রেটিং সিস্টেমও তৈরী হয়ে গেছে। ফলে আপাত দৃষ্টিতে অন্যরকম মনে হলেও বেশ কিছু রেকোমেন্ডেশান বাস্তবায়িত করা হয়েছে।

    আরো লিখেছে Leverage our vast and growing resources in information technology to bring about smart schools that integrate computers, networks and content.। ২০০০ এর বসে এইধরনের কথা লেখা রীতিমত সাহসী ব্যাপার। তখন তো ইনফোসিসও পুঁচকে।

    কিন্তু আসল সমস্যা হলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নিয়ে। এই নিয়ে কৌশিক বসুর একটা ইন্টারভিউও শুনেছিলাম। প্রাইভেট স্কুল, কলেজ তো আছেই। এখানে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি মানে আসলে প্রফিট মেকিঙ্গের কথা বলা হচ্ছে। আম্রিগাতেও আছে, কিন্তু তেমন সুনাম নেই। আম্রিগার প্রথম সারির বেশিরভাগ ইউনিই প্রাইভেট, কিন্তু প্রফিট মেকিঙ্গ নয়।

    এখন ভারতে যেসব প্রাইভেট কলেজ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনকেগুলো বেশ নামকরা (জেভিয়ার্স, সেন্ট স্টিফেন্স, মনিপাল)। কিন্তু গ্যাঁটের তেমন জোড় নেই। জিও ইউনিভার্সিটি কিন্তু আম্বানী ব্যাক্ড। ফলে খুব কম সময়ের মধ্যেই ভালো ইনফ্রা-শিক্ষক লাগিয়ে ভালো রেটিঙ্গের বন্দোবস্ত করে শাখা প্রশাখা ছড়াতে শুরু করবে। প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্টের পরে টিউশান বাড়িয়ে শুধু লাভই লাভ। সরকার গ্যারান্টেড স্টুডেন্ট লোন তো আছেই।

    তাছাড়া রিপোর্টে আছে যে বিশেষ কিছু হায়ার এডুকেশন ইনস্টিতে সরকার পয়সা ঢালতে পারবে। এর মানে হলো এতো কিছু করার পরেও যদি জিও না চলে তখন যেন সরকার পয়সা দিয়ে সেটিকে চালায়। কারণ কে না জানে যে ভারতের সেরা ইনস্টিগুলো প্রায় প্রত্যেকটাই সরকারি।

    এছাড়া রিপোর্টটিতে কিছু আনসাবস্ট্যানটিভ কথা রয়েছে (পুরো রিপোর্ট দেখলে বোঝা যেতো)। যাকে আমরা হাওয়ায় কথা বলি। তাছাড়া বেশ কিছু ফিল গুড কথাও লেখা আছে। যেগুলোকে আমরা "হ্যাপি টকিং বিএস" বলে থাকি। সেতো থাকবেই, বাজপেয়ির আমল।
  • de | ***:*** | ১২ এপ্রিল ২০১৯ ১১:০০78097
  • বড়েস আর স্বাতী - ওই রিপোর্টটার একটা লিংক বা কপি পাওয়া যেতে পারে?

    এইসব রিপোর্টগুলোর কি মানে হয়, সেটাই যদিও জানা নেই। এইসব রিপোর্ট তৈরীর কেপেবিলিটি বা ক্রেডিবিলিটি আম্বানী বা বিড়লা কারোরই আছে বলে মনে হয় না। সুতরাং বাজার থেকে পয়সা দিয়ে লোক হায়ার করেই এইসব সার্ভে আর রিপোর্ট লেখানো। যাকে দিয়ে করিয়েছে, সে কিছু ধরাবাঁধা কথা লিখে দিয়েছে, যাতে প্রচুর লুপহোলস।

    সবচে' বড়ো কথা আম্বানী বা বিড়লাকে এডুকেশন সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরীর দায়িত্বই বা দেওয়া হবে কেন? সুরঞ্জন দাস বা সি এন আর রাওকে কি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিফর্মের রিপোর্ট তৈরী করতে বলা হবে, না সেটা উচিত হবে? নাঃ, যত দিন যাচ্ছে, শিক্ষিত পলিটিশিয়ানদের অভাব আরো বেশী করে টের পাচ্ছি।
  • S | ***:*** | ১২ এপ্রিল ২০১৯ ১১:০৫78098
  • "আম্বানী বা বিড়লাকে এডুকেশন সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরীর দায়িত্বই বা দেওয়া হবে কেন?"

    আপনি ইলেক্শনে তেমন তেমন পয়সা ঢাললে আপনাকেও আপনার পছন্দসই যেকোনো বিষয়ে পলিসি পেপার লিখতে দেওয়া হবে।

    http://ispepune.org.in/PDF%20ISSUE/2003/JISPE403/2038DOCU-3.PDF
  • | ***:*** | ১২ এপ্রিল ২০১৯ ১১:১২78099
  • লেখার নীচে 'বিড়লা আম্বানি রিপোর্ট' বলে এক্লটা লিঙ্ক দেওয়া আছে। অমি খুলে দেখি নি। সেটায় কি রিপোর্ট নেই?
  • Swati | ***:*** | ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:১৬78100
  • আসল রিপোর্টের পিডিএফ আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই, তবে যাঁরা এই নিয়ে চর্চা করেন, তাঁদের কাছে খোঁজ করলেই কপি পেয়ে যাবো। প্রায় ১৫০ পাতার রিপোর্ট। উপরে যে লিংক দিয়েছি সেটা সামারি।
  • Swati | ***:*** | ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:১৯78101
  • প্রাথমিক ও সেকেন্ডারিতে ফ্রি ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার প্রপোজাল তো প্রথম শিক্ষা পলিসি থেকেই আছে। সেটার ইমপ্লিমেন্টেশনের প্রথম ধাপ, অর্থাৎ রাইট টু এডুকেশন, আসে ২০০৫ সালে সম্ভবত। সেটা আজকেও টুথ এন্ড নেইল ফাইট করছে এই বেওসায়ীরাই।
  • Anjan Majumder | ***:*** | ০৪ মে ২০১৯ ০৫:১২78102
  • উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এদেশে যা চলছে, তা নিয়ে দুজন শিক্ষকের লেখা একটা কমেন্টারি ( যা The Hindu পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ), তারই বাংলা অনুবাদ করেছি। অনুদিত লেখাটির নাম “বিকল্প ভবিষ্যতের স্বপ্নসন্ধান”। অনুবাদটি “ আরেকরকম” পত্রিকায় প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তা মনোনীত হয়নি। তাই আগ্রহী পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘টই’ হিসেবে লেখাটি প্রকাশ করেছি ( নীচে URL দেখুন )। ‘টই’ টা পড়ে আপনাদের মতামত জানতে পারলে অনুবাদ কর্মটি সার্থক হবে।
    http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1556554613897
  • Anjan Majumder | ***:*** | ১৪ মে ২০১৯ ০৪:৫৯78103
  • উচ্চশিক্ষা আজ বড়োই বিপন্ন - একথা চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে। মুখ দিয়ে কেবল গোঙানি বেরোয়। অন্যদের ভাষা,চিন্তা ব্যবহার করে - তাকে অনুবাদ করে মনের আবেগ প্রশমিত করবার চেষ্টা করছি। আবার একটি অনুবাদ প্রকাশ করলাম। পড়ুন আর মতামতে ভরিয়ে ফেলুন। নীচে দেওয়া রইলো URL।

    http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1557806368758
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন