এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • জেমস ক্যামেরুনের অবতার ঃ শুধুই কল্পবিজ্ঞান?

    বিপ্লব পাল লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৩ মার্চ ২০১০ | ৯৬০ বার পঠিত
  • (১)
    ক্রিসমাসের এবারের ছুটিতে আমেরিকা তথা বিশ্বে সবথেকে আলোচিত টাইটানিকের পরিচালক জেমস ক্যামেরুনের "অভতার' (বাংলা অবতার)। শুধু অত্যাধুনিক স্টিরিওগ্রাফিক ক্যামেরা বা থ্রি ডাইমেনশনার কম্পুটার গ্রাফিক্সের জন্যেই অবতার নিয়ে এত শোরগোল হচ্ছে তা ঠিক না। হলে গিয়ে মনে হল আমেরিকান বস্তুবাদী সভ্যতায় বিধ্বস্ত অনেকেই ফিরে যেতে চাইছে, ফিরিয়ে দাও সে অরণ্যের যুগে যেখানে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করেই বেঁচে থেকেছে মানুষ।

    অভতারের এমন দুরন্ত ক্রেজ আমার গত দশ বছরের আমেরিকান জীবনে বিরল অভিজ্ঞতা। আমার বাড়িথেকে ১৫ মিনিটি দূরে দুটো মাল্টিপ্লেক্স। কলম্বিয়ার আই-ম্যাক্সে আছে ১২টা আর আরুনডেলের সিনেম্যাক্সে আছে ২৪ টা থিয়েটার। আই ম্যাক্সের ৫ টাতে আর সিনেম্যাক্সের ১২টা থিয়েটারে চলছে অভতার। এত শো দেখানোর পরেও যা ভিড় দেখলাম, সেটা বহুদিন আগে হিন্দি সিনেমার ফার্স্ট ডে ফার্স্টশোতে ভারতে দেখেছি। এখানে সিনেমার জন্যে বিশাল লাইন, ধাক্কাধাক্কি কল্পনাতীত। সাধারণত শো শুরু হওয়ার ত্রিশ মিনিট আগে আমি যাত্রা শুরু করি। কাঁটার মতন হিসাব মেলে প্রতিবার। হলে পৌঁছাব ১৫ মিনিটে, পার্ক করে টিকিট কেটে ঢুকে যাব শো শুরু হওয়ার ৫ মিনিট আগে। এখানে কদাচিৎ হলগুলি ৪০% ভর্তি থাকে। শেষ স্ল্যামডগ মিলিয়নারের মতন সুপারহিট সিনেমাতেও দেখেছি ৩০-৪০% মতন সিট প্রাইম টাইমে ভর্তি ছিল। ফলে পার্ক করে, মেশিন থেকে টিকিট কেটে ঢুকে যেতে কোন সময়, লাইন, হ্যাপা কিছুই লাগে না। এবার যথারীতি আই ম্যাক্সের সামনে ২-৪০ নাগাদ পৌঁছালাম। তারপর দেখি গাড়ি ঠেলে ঢুকতেই পারছি না। শেষে ১৫ মিনিট ধরে গাড়ি যখন এগোল না, সোজা আবার বাড়ির দিকে চলে এলাম। এবার ঠিক করলাম ৬টার শো তে ৫টার সময়ে যাব।

    ও বাবা। সেখানেও বিধি বাম। এবার পার্ক করে পৌঁছলাম বটে, কিন্ত রাতের বাকি ১৪টা শোতে আই ম্যাক্সে টিকিট নেই। অবশেষে আরুনডেলের সিনেম্যাক্সে ছুটলাম। ওখানে অনেকগুলো থিয়েটারে চলছে বলে, প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর, অবতারের একটা নতুন শো শুরু হচ্ছে। সেখানে থ্রিডির শেষ শো-রাত দশটার টিকিট পেলাম। সাথে চার বছরের পুত্র সন্তান বলে প্রথমে রাজী হইনি। পরে দেখলাম, কালকেও এর থেকে ভাল কিছু হবে আশা নেই। ফলে চোখ কান বুঁজে ভাগ্যকে মেনে নিতেই হল।

    অভতার গোটা পৃথিবীতেই হাউসফুল। ৬১৫ মিলিয়ান ডলার তুলেছে এক সপ্তাহের বক্স অফিসে যা এক-কালীন রেকর্ড। কিন্তু কী ম্যাসেজ পাঠালেন ক্যামেরুন, যার জন্যে উত্তাল সারা পৃথিবী?

    (২)
    প্যান্ডোরা ২১৫৪ : নাভিদের সমাজ এবং মানুষের সাম্রাজ্যবাদ

    ক্যামেরুন তার সাক্ষাতকারে, কনফারেন্সে বারবার বলেছেন, অভতারের ম্যাজিক সিনেমার শিল্প বিপ্লবে না। দর্শক আসবে শুধু গল্পের জাদুতে। কিন্ত এ শুধু গল্প না-আমেরিকা তথা বস্তুবাদী সভ্যতার বিরুদ্ধে কিছু প্রশ্ন। যা আমরা ইদানিং করছি। কিন্ত অভতারের মতন এত শক্ত বক্তব্য একমাত্র শিল্পেই সম্ভব। শিল্পের দরকার ঠিক এই কারণেই - মানুষের নির্লিপ্ত স্তরকে অতিক্রম করে, চেতনার দরজায় ধাক্কা মারে।

    আলফা সেঞ্চুরির গ্রহ পলিফেমাসের উপগ্রহ প্যান্ডোরা। পৃথিবী সদৃশ জলবায়ু এবং বায়োস্ফিয়ার। ২১৫৪ সালে ঘটনার শুরু। মানুষ সেখানে পৌঁছে গেছে। পলিফেমাস নিয়ে মানুষের আগ্রহের কারণ এই গ্রহে আনাবাটিয়ামের খনি। আনাবাটিয়াম এন্টি গ্রাভিটি ম্যাটেরিয়াল-পৃথিবীতে এর খুব দাম। আর ডি এ কর্পরেশন, যা পৃথিবীর একটি পাবলিক কোম্পানি, এখানে এসেছে আনাবাটিয়ামের খনি বানাবে বলে। কিন্ত সেটা করতে গেলে প্যান্ডোরার আদিবাসী নভিদের তাড়াতে হয় তাদের আদিভূমি থেকে। প্রথমে তারা নভিদের লোভ দেখিয়েছে অন্য জায়গায় পুনর্বাসন দেবে বলে। নভিরা রাজি হয় নি। ফলে আর ডি এক্স কর্পরেশন নিয়ে সেছে এক বিরাট প্রাইভেট সেনা বাহিনী। কিন্ত এখনো আক্রমণ করছে না। হাজার হলেও মানুষ সভ্য! রেড ইন্ডিয়ানদের মতন নভিদের মেরে ফেললে "ব্যাড প্রেসের' জন্যে শেয়ার প্রাইসে ধ্বস নামবে। অনেকটা টাটা সেলিমদের নন্দীগ্রামে যেমন হয়েছিল আর কী। ওখানে সিপিএমের হার্মাদরা ছিল সেলিমদের প্রাইভেট আর্মি।

    তাই নাভিদের বুঝিয়ে পটিয়ে পুনর্বাসন দেওয়ার জন্যে তৈরী হয়েছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মার্ভেল অবতার। এদের ডি এন এ মানুষ আর নভিদের সংকর। অভতারের বায়োলজিক্যাল দেহটা নভিদের কিন্ত তাদের মাথাকে পরিচালনা করে মানুষ। আর ডি এ কর্পরেশনের বেস স্টেশন থেকে। তবে সেই মানবই নভি অবতারের পরিচালক হতে পারবে, যে মানুষটির ডি এন এর সাথে নভির সংকরটি বানানো হয়েছে। অনেকটা কৃষ্ণ যেমন ছিলেন মানুষের দেহে বিষ্ণু অবতার। ক্যামেরুন ঠিক এই সাদৃশ্যের জন্যেই এদের নাম দিয়েছেন অবতার, যা সংস্কৃতে অভতার। নাভিদের দেহে মানুষ অবতার। যাদের আসল কাজ নাভিদের সংস্কৃতিকে ভাল করে জেনে বুঝে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্যে রাজী করানো!

    প্যান্ডোরার নাভিরা বিবর্তনের প্যালিওলিথিক ধাপে আছে। কৃষিভিত্তিক সমাজে ঢোকার পূর্বে শিকারী মানুষেরা যেমন ছিল। প্যান্ডোরায় অভিকর্ষজ বল কম। তাই নাভিরা ১০ ফুট লম্বা। এখানকার উদ্ভিদ প্রজাতিও বিশাল লম্বা অভিকর্ষজ বলের অভাবে। আর সেই পরিবেশে বিবর্তনের জন্যে নাভিরা অনেকটাই বিড়াল মানুষ। ক্যাট ফ্যামিলির প্রিডেটরদের মতন ক্ষীপ্র তাদের গতি গাছ থেকে মাটিতে।

    কিন্ত গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে নাভিদের সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাস। নাভিরা প্যাগান। আরো নিঁখুত ভাবে লিখলে প্যান্থেওনিক প্যাগান। অর্থাৎ হিন্দুদের মতন এদেরও বিশ্বাস, আশেপাশের সব পশু, পাখী, গাছ-পালা সবকিছুই ঈশ্বর। যদিও এদের সংস্কৃতি আফ্রিকার প্যালিওলিথিক আদিবাসিদের মতন। নভিদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে হিন্দু ধর্মকে আরো প্রবল ভাবে রূপকের আকারে ঢুকিয়েছেন ক্যামেরুন সুপার কনসাসনেশ বা বিশ্বচেতনার মধ্যে দিয়ে। নাভিরা বিশ্বাস করে সমগ্র প্রকৃতির সাথে তারা অবিচ্ছেদ্য-মানসিক এবং দৈহিক ভাবে। এই সিনেমাতে সেটা এসেছে নানা ভাবে। অভতার প্রজেক্টের লিড বিজ্ঞানী ড: গ্রেস আগাস্টাইনের বিশ্বাস প্যান্ডোরার বৃহ্‌ৎতম বটবৃক্ষটির শিকড়গুলি আসলেই নিউরাল নেটওয়ার্ক। যার সাহায্যে সমস্ত নাভিরা একটি সামগ্রিক চেতনার যাথে যুক্ত। শুধু তাই না। নাভিদের ঘোড়া বা উড়ন্ত বিশাল পাখী তারুক সবার সাথেই তারা চুলের মাধ্যমে "চেতনার' বন্ডিং করে তাদেরকে ব্যবহার করে। এই সামগ্রিক বিশ্বচেতনা বা সুপার কনসাসনেস এর ধারনা শ্রী অরবিন্দের লেখাতে বারবার এসেছে-যাকে অরবিন্দ বলেছেন সুপার মাইন্ড।

    " To be in the being of all and to include all in one’s being, to be conscious of the consciousness of all, to be integrated in force with the universal force, to carry all action and experience in oneself and feel it as one’s own action and experience, to feel all selves as one’s own self, to feel all delight of being as one’s own delight of being is a necessary condition of the integral divine living.”

    - Sri Aurobindo, The Life Divine

    (৩)
    বস্তুবাদ বনাম প্যাগানিজম :

    প্যাগানিজম এই গল্পে প্রকৃতি মায়ের ধারক এবং বাহক। আধুনিক বস্তুবাদী তথা একেশ্বরবাদী চিন্তায় প্যাগানিজম হচ্ছে কুসংস্কার। প্যান্থেওনিক প্যাগান হিন্দুদের ইঁদুর বিড়াল গরু পূজা ইত্যাদি বস্তুবাদী বা একেশ্বরবাদী দৃষ্টিতে হাস্যকর। যার জন্যে ইতিহাসে আমরা দেখব হিন্দু বা মায়ান বা রেড ইন্ডিয়ান প্যাগান সভ্যতার ওপর উন্নত মিলিটারির অধিকারী খ্রীষ্ঠান বা ইসলামিক সভ্যতা বারবার আক্রমণ চালিয়েছে। খ্রীষ্ঠান বা ইসলামিক ইতিহাসে এই সব আক্রমণকে দেখা হয় অসভ্য প্যাগানদের সভ্য করার ইতিহাস। এখানেও মানুষ নভিদের সভ্য করতে চেয়েছে বলে দাবী করছে। কিন্ত এই দাবীর অন্ত:সারশূন্যতা প্রমাণ হয় প্যান্ডোরাতে আর ডি এ কর্পরেশনের হেড পার্কার সেলফ্রিজ এর কথাবার্তায়। কর্পরেট অফিসার পার্কার এই গল্পে ধনতন্ত্রের প্রতিনিধি এবং এন্টাগনিস্ট। সে এই ব্যাপারে খুবই পরিষ্কার যে আসল মোটিভেশন হচ্ছে "লাভ'। সভ্য করার কথাটা সুগারকোট। অথচ বাবরনামা থেকে লর্ড ক্লাইভ-সবার লেখাতেই পার্কারের বক্তব্য পাওয়া যাবে-সেটা হচ্ছে নেটিভ হিন্দু প্যাগানরা সাপ ব্যাঙ পূজা করা অসভ্য - তাদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা অনুন্নত। তাই এদের সভ্য করতে ঈশ্বর তাদের পাঠিয়েছেন। অথচ এদের সবার তলপেটেই ছিল পার্কারের মতন সম্পদের জন্যে লোভ।

    কিন্তু এই বস্তুবাদী বা একেশ্বরবাদী সভ্যতা যেটা বোঝে না-সেটা হচ্ছে প্যান্থেওনিক প্যাগানিজম কিন্ত একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো বা অধুনা বস্তুবাদী সভ্যতা থেকে আরো হাজার হাজার বছর পুরানো। হাজার হাজার বছরের বিবর্তন তাদের শিখিয়েছে প্রকৃতি বান্ধবতা। তারা জানে প্রকৃতিই তাদের ঈশ্বর। প্রকৃতি ধ্বংস হলে তারাও বাঁচবে না। অথচ আজকের বস্তুবাদী মানুষ, এত উন্নত মানুষ কোপেনগেহেনে যে তামাশা আর সার্কাস চালালো, তাতে এটা পরিষ্কার বস্তুবাদী মানুষ প্যাগানদের থেকে বেশী জানতে পারে, কিন্ত বিচক্ষণতায় অনেক পিছিয়ে। আমরা কী চাই? জ্ঞানী না বিচক্ষণ মানুষ?

    বহুদিন আগে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীর সাথে আলাপে আমি বলেছিলাম, বুদ্ধের আকাঙ্খামুক্ত জীবনাদেশ বস্তুবাদী উন্নতির পরিপন্থী। তিনি হেসে বলেছিলেন, আরো একশো বছর দেখ বাছা-এই রেকলেস গ্রীড বা সীমাহীন লোভ হচ্ছে বাঘ। যখন খাবার পাবে না, সে তোমাকেই খাবে। আধুনিক সভ্যতার বাঘ হচ্ছে বিজ্ঞান। আমি সেই সন্ন্যাসিনীকে দেখে হেঁসেছিলাম। আজ কোপেনহেগেন সম্মেলনের পরে সেই হাঁসি আমাকেই ঠাট্টা করছে।

    তবে ক্যামেরুনের গল্পে বিজ্ঞান মোটেও এন্টাগনিস্ট না। বরং সেও প্রকৃতি রক্ষার পক্ষে প্রটাগনিস্ট। কিন্ত ধনতন্ত্রের সেবাদাস যে বিজ্ঞান, সে এক অর্থে বন্দিনী! সেটাই আমরা দেখবে অভতার প্রকল্পের বিজ্ঞানী ড: গ্রেসের চরিত্রে। ড: গ্রেসের সাথে কর্পরেট অফিসার পার্কার সেলফ্রিজের কথাবার্তাই বিজ্ঞান বনাম ধনতন্ত্রের সংঘাত বারবার এসেছে। বিজ্ঞানী গ্রেস ও নভিদের দলে-তিনিও চাইছেন না কিছু খনিজের জন্যে এই উপগ্রহের সবুজকে ধ্বংস করতে। কিন্ত পার্কার তাকে মনে করাচ্ছেন, গ্রেসের স্যালারী তথা অভতার প্রজেক্টের টাকা আসছে শেয়ার হোল্ডারদের টাকায়। যাদের অভতার বা প্যান্ডোরার জৈব বৈচিত্র নিয়ে কোন উৎসাহ নেই। তারা চাইছে উনোবটিয়াম। তারা চাইছে বস্তুবাদী সভ্যতার জারজ সন্তান "লাভ'। অর্থাৎ অবতার গল্পে খুব পরিষ্কার ভাবে বলেছে বিজ্ঞান মোটেও অভিশাপ না। তাকে অভিশাপ বানিয়েছে মানব সভ্যতা। যদিও এই গল্পে বিজ্ঞানকে অভিশাপ বানানোর জন্যে ধনতন্ত্রকেই দোষারোপ করা হয়েছে, বাস্তব সত্য হচ্ছে বিংশ শতাব্দির কমিনিউস্ট দেশগুলিও বিজ্ঞানকে কম অভিশাপ বানায় নি। সেই অর্থে যেকোন বস্তুবাদী সভ্যতাই বিজ্ঞানকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করে তাকে মানব সভ্যতার অভিশাপ বানিয়েছে।

    তবে এই গল্পের ভিলেন অবশ্যই আমেরিকান মেরিন। আমেরিকান সেনাবাহিনীর সব ধরনের অসভ্যতাকেই ব্যাঙ্গ করেছে অভতার। দেখিয়ে দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদের সাথে ধনতন্ত্রের পার্টনারশিপ। ক্যামেরুন সাক্ষাৎকারে খুব পরিষ্কার করেই বলেছেন, এ হচ্ছে আমেরিকার হঠকারী বিদেশনীতির বিরুদ্ধে হলিউডের প্রতিবাদ। বৃহত্তর অর্থে অবশ্য আমার মনে হয়েছে সামগ্রিক বস্তুবাদী মানব সভ্যতাকেই দুষেছেন ক্যামেরুন।

    (৪)
    সভ্যতা বনাম সংস্কৃতি :

    সভ্যতা বনাম সংস্কৃতির লড়াই হলিঊডে এই প্রথম না। ক্যামেরুন নিজেই অভতারেও ওপর " Dancing with Wolves” এর প্রভাব স্বীকার করেছেন। যেখানে বস্তুবাদী সভ্যতায় উন্নত এক মানুষ আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে বুঝতে পারে, আদিবাসীরা সভ্যতার বিচারে পিছিয়ে থাকলে কী হবে, সংস্কৃতির বিচারে অনেক এগিয়ে।

    আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি বোঝাতে, স্বামী সূপর্ণানন্দর উদাহরনটি প্রণিধানযোগ্য। উনি বলতেন তাজমহলের ইমারতটা হচ্ছে সভ্যতা-আর তাজমহলে কবর দেওয়া শাহজাহানের মমতাজের প্রতি যে ভালোবাসা সেটা হচ্ছে সংস্কৃতি। একটা মাথার সম্পদ, অন্যটা হৃদয়ের।

    এখানেও নভি অভতার তথা গল্পের প্রটাগনিষ্ট জ্যাক সুলি নভিদের বাগে আনতে এসে, নিজেই নভি সভ্যতার প্রেমে পড়লেন। কারণ নভিরা বস্তুবাদী সভ্যতায় অনুন্নত হলে কি হবে, তাদের সংস্কৃতি অনেক উন্নত। সেই সংস্কৃতি হচ্ছে প্রকৃতি আর মানুষকে ভালবাসা। সেই জন্যে মানুষরা যখন নাভিদের শিক্ষিত করতে চাইল-নাভিরা বলে পাঠালো মানব সংস্কৃতি থেকে তাদের শেখার কিছু নেই। ঐ হানাহানি বা লোভের সংস্কৃতি থেকে কী শিখবে তারা?

    অবশ্য ক্যামেরুনের এই চিন্তা আবেগের দিক দিয়ে যতটা ঠিক, বিবর্তনের দিক দিয়ে ঠিক না। হিংসা এবং অহিংসা, লোভ এবং স্বার্থবিসর্জন, এই সব বৈপরীত্যের মিশ্রণই আমাদের রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস বাড়িয়ে থাকে। হিংসা আর লোভ আমাদের মধ্যে এমনি এমনি আসে নি। এসেছে বিবর্তনের পথে আমাদের টিকিয়ে রাখতেই। আবার সেই লোভই আমাদের ধ্বংসের পথ দেখাচ্ছে।

    থ্রিডিতে প্যান্ডোরাকে যেভাবে মূর্ত করেছেন পরিচালক, তা সত্যিই অনবদ্য। আমারত মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিল প্যান্ডোরাতে ঝর্ণার ধারে বসে আছি। অভতারের অভিজ্ঞতা আমার জীবনে সত্যই অভূতপূর্ব। পরিচালকের মতন আমিও চাই অরবিন্দর সুপার মাইন্ড মানব সভ্যতাতেও আসুক। তবে তা বোধ হয় বৈজ্ঞানিক দিয়ে খুব সঠিক চিন্তা না।

    ১৩ই মার্চ, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৩ মার্চ ২০১০ | ৯৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ♤♡♢♧ | 37.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:৫৮97281
  • সলিড  লেখা

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন