এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  সমাজ  শনিবারবেলা

  • লেবারের বিদেশ যাত্রা ১৬

    মঞ্জীরা সাহা
    ধারাবাহিক | সমাজ | ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ১১০১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)

  • বিদেশের ড্রাইভার
    পর্ব ৩


    -কাফিল আসবে। আটকে রাখবে ততক্ষণ। কাফিল আবার নিজের জিম্মায় নিয়ে নেবে। ফের ফিরিয়ে আনবে নিজের জায়গায়। তারপর খুব পেটাবে। চড়-থাপ্পড়-লাথি মারবে। লাঠি-রড-বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটাবে। পেটাবে, আবার ডিউটিও করাবে। আরও বেশি উট চরাতে দিয়ে দেবে। যা চরাতাম, তার চেয়ে ডাবল। ডিউটির টাইমও বাড়িয়ে দেবে। প্লাস খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট দেবে। আর ডাইরেক্ট কাফিলের হাতে যদি ধরা পড়ি, তাহলে আরও শাস্তি। আমার কাজ করতে কষ্ট, পালিয়ে যাচ্ছিলাম – এসব জেনে কাফিল কি আর দেশে ফিরে যেতে দেবে?

    যে ভাষায় আমি কথাগুলো লিখে গেলাম, আনিকুল আলমের উচ্চারণগুলো ঠিক এরকম ছিল না। মাঝে মাঝে অহেতুক কিছু চন্দ্রবিন্দু, আকার, ইকার এসে বসছিল শব্দের সঙ্গে। মাত্র এক দুপুরের আলাপে, আরবে উট চালিয়ে আসা ওই লেবারের মুখে উচ্চারিত, কীরকম একটা আরবি সুর মেশানো বাংলাটা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব হল না।

    -উট চালানো ছাড়া আর অন্য কিছু কাজ ছিল?
    -না! উট চালানোই কাজ ছিল। তা বাদে রোজার টাইমে উৎসবে পরবে ঘরের কাজ করাতো।
    -ঘরের কাজ কীরকম?
    -ওদের বাসন মাজা, ঘর মোছা। ‘কচরা’ ফেলা। এসব। সারা বছর না। শুধু রোজার টাইমে। ওসব সোজা কাজ।

    উট চালানোর সময়কাল আনিকুল আলমের জন্য যা বরাদ্দ হয়েছিল, তা বেড়ে গিয়ে দুই বছরের জায়গায় তিন বছর হয়ে গেল। সেটা অবশ্য কাফিলের দোষে নয়। যার কারণ কোনও এক ভাইরাস। বা হয়তো ভাইরাসের দোহাই দিয়ে, এরকম লাখ লাখ মাইগ্রান্ট লেবার যে দেশের নানা প্রান্তে গিয়ে রুজিরুটি চালায়—সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিনা বিবেচনায় হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা। ২০২০-র মার্চ-এর শেষের দিক থেকে, ভারতের বড় বড় শহরে, বড় বড় হাইরোডে, স্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে, রেললাইনে—কাতারে কাতারে মানুষকে বাক্স-প্যাটরা-বৌ-বাচ্চা-গ্যাস সিলিন্ডার-কোদাল-বালতি-হাঁড়িকুড়ি নিয়ে অসহায়ভাবে জমা হতে দেখা গেছে। শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। হাজার হাজার কিলোমিটার হাঁটতে দেখা গেছে। বেঘোরে মরতে দেখা গেছে। মাঝদুপুরের চড়া রোদে, ভোরের অন্ধকারে বা মাঝরাতে – দিনে, রাতে যখন তখন। জানা যায়নি সব খবর। ওরা দেশের অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া লেবার ছিল। যারা মরেছে, বেঁচেছে, আটকে পড়েছে, কোনওরকমে অসহ্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরেছে নিজের জায়গায়। বা আর কোনওদিন ফেরেনি। সেই দেখা যাওয়া মানুষগুলোর সংখ্যাটা এতই বেশি ছিল—যেন দেশ জুড়ে এই প্রথম জানা গেল এত এত মানুষ আসলে ভিটেবাড়ি ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে কাজে যায় লেবার হয়ে—চলে যায় বাঁচতে। সে সংখ্যাটাই বা কত? নথি থেকে স্পষ্ট সেদিন জানা যায়নি। জানা যায় না আজও। তখন প্রতিদিন হেডলাইনে ছিল নতুন নামকরণ হওয়া ‘পরিযায়ী শ্রমিক’। এ দৃশ্যগুলির বাইরে—এ দেশ থেকে বহুদূরে—অন্য দেশে, সিমেন্ট বালির কাজ করতে, পাইপ লাইনের কাজে, বড় বড় জ্বলন্ত উনুনের সামনে রান্না করতে, সোনার কাজে, হাড় কাঁপানো শীতে ভিক্ষে করতে, ধূ ধূ মরুভূমিতে উট চালাতে গিয়ে – আর কত কত কীসব কাজে গিয়েছিল, কী হল তাদের? জানা যায়নি। আনিকুল আলম সেরকমই হাজারে হাজারে বিদেশ যাওয়া লেবারের মধ্যে একজন। যাদের বেশিরভাগ গিয়েছিল ট্যুরিস্ট ভিসায়। যারা কেউ গিয়েছিল পাড়া-বেপাড়ার ঠিকাদার, এজেন্ট, ভাই, জামাই, কাছের দূরের আত্মীয় বা অন্য কারুর কথায়। তাই দেশের সরকারের কাছে খবর ছিল না। বা খবর নেওয়ার সদিচ্ছাও ছিল না। মুর্শিদাবাদ, মালদা লেবার কমিশন অফিসে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যায় না—ঠিক কতজন বিদেশে লেবারের কাজ করতে গেছ। বা সেই যখন লকডাউন চলছিল, তখন সংখ্যাটা কত ছিল! যারা এখন বিদেশে লেবারের কাজে গেছে, তাদের কবে কবে ফেরার কথা!

    আনিকুল আটকে গেল। প্রথম বছর যখন সেই মরুভূমিতে নিদারুণ অভিজ্ঞতার ভেতর আনিকুলের সারাক্ষণ মনে হচ্ছিল পালাই পালাই—সেই এক বছর বাড়তে বাড়তে সাড়ে তিন বছরে গিয়ে দাঁড়াল। আনিকুল চোখ-মুখ-নাক-কান-সারা শরীরে বালি মেখে উট চালিয়ে গেল। সারা বিশ্বে ভাইরাস চরে বেড়ালেও বোধহয় উটের মরুভূমিতে চরতে কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তাই সেই দু-হাজার কুড়ির মার্চ থেকে দু-হাজার একুশের আগস্ট মাস অবধি লকডাউনে আটকে থেকে আনিকুল আলমও মরুভূমির বালির উপর চরে বেড়ালো। চড়া রোদ উঠেছে, বালি-ঝড় বয়ে গেছে। হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। আনিকুল উট চরিয়ে গেছে। রাতের বেলা মালিকের দেওয়া চাল-ডাল ফুটিয়ে খেয়েছে। পরবের দিনে বাসন মেজেছে। আবর্জনা ফেলেছে। আর ভয় পেয়েছে। মরতে পারতো ওই তীব্র তাপে। মরেনি। দীর্ঘ বন্দিজীবন কাটিয়ে ফেরার দিনে দান পেয়ে খুশি হয়েছে। ওদেশের মালিক পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। নিজের দেশের সরকার ফিরিয়ে আনার বন্দোবস্ত করেনি বলেও দোষারোপ করেনি। ফিরে এসে বলেছে—কাফিলটা ভালো ছিল। সাড়ে তিন বছর মরুভূমির উট চালানোর কাজ সেরে ফিরে মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকু ভাঙনে চলে গেছে আবার। আবার থাকতে শুরু করেছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের মানুষগুলোর সাথে ইস্কুল বাড়ির গাদাগাদি করা মানুষের ভিড়ে। আবার ঠকেছে ত্রিপল না পেয়ে। নতুন জমির পর্চা না পেয়ে। পর্চা ছাড়া জমির উপর তিন নম্বর ইট দিয়ে বানানো ঘরে এসে উঠেছে। নিজে কখনও হয়েছে ত্রাণ না পাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে একজন। কখনও হয়েছে পলিটিকাল নেতার ভাষণের টপিক। কখনও ভোট পাওয়ার টুল। আবার অন্যের জমিতে কাদামাটি মেখে লেবার হয়ে খাটতে গেছে। পালন করে গেছে এদেশের মালিকের আদেশ।

    ওদেশে মরুভূমিতে উট চালানোর মতো শাস্তি, পালানোর শাস্তি, থাকতে বাধ্য করার শাস্তি বাদে আরও এক কাজ ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভালো কাফিলটি তার পোষ্য এই দাসটির জন্য যে আরেকটি অপরাধের কারণে শাস্তি বরাদ্দ করে রেখেছিল—সে কারণটা শুনে সেই শীতের দুপুরে ভিড়ের ভেতর বসেও কেমন গা ছমছম করে উঠেছিল।

    মালিকের কড়া হুকুম ছিল কারুর সাথে কথা বলা যাবে না। কারুর সাথে কথা বলাটা ছিল সেখানে বড় ধরনের অপরাধ। অবাধ্য উটকে ফিরিয়ে আনতে বা চাল-ডাল-আটার দরকারে, হুকুম তামিল করতে কেবল যা যতটুকু কথা। আনিকুল কীরকম একটা ভীত মুখ করে শুরু করেছিল সে অপরাধের বিবরণ।

    -মানে অন্য রাখালের সাথেও কথা বলা যাবে না। আপনি ধরেন উট চালাচ্ছেন, আরও এরকম কারুকে দেখেলেন উট চালাতে, তার সাথে দুটো কথা বলা যাবে না। দেখেন, কারুকে দেখলে তো মানুষের সাধ জাগে—দুটো কথা কই। আরও যে নাকি আমারই মতো বিদেশে রাখালি করছে সেই ফাঁকা মরুভূমিতে। মালিকের পছন্দ ছিল না কথা বলা। ওখানে ওরকমই। ওখানে কাজ করতে গেলে কথা বলা যাবে না। কাজে ঢোকার দিনেই কাফিল বলে দিয়েছিল, একদম কথা বলবি না কারুর সাথে।

    যদি একবার দেখে ফেলে কথা বলতে—ব্যস! প্রথমে আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করবে—সেই রাখালের সাথে কী কথা বলছিলাম? একটু পরে আবার ধরবে সেই রাখালকে। তাকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে যাবে অন্য জায়গায়। জেরা করবে। কী কথা বলছিলাম জানবে ভাল করে। ধরেন আমি একরকম জবাব দিলাম। আর সে আলাদা। এইরকম দুইজনের কথায় যদি না মেলে আমার ঘেঁটি চেপে ধরবে। রাগ দেখিয়ে বলবে…

    কথাটা বলতে গিয়ে আনিকুলম আলমের চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেল। চোখ থেকে ভয়-ভীতি উড়ে গিয়ে একটা রাগী রাগী মুখ তখন। ডান হাতের তর্জনীটা উঁচিয়ে ধরেছে কীরকম একটা কোণ করে। যেন পায়ের নীচে বসে আছে কেউ। তাকে লক্ষ্য করে বলে চলেছে, ঠিক করে বল! সত্য করে বল, কী বলছিলি! এখানে কথা বলা বারণ বলেছি না!

    কাফিলের আরবি শব্দের অর্থগুলো সেই প্রথম প্রথম সবটা না বুঝতে পারলেও বারবার শুনে এখন সে বুঝে গেছে। হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছে অর্থ আসলে কী! মালিকের মুখের আরবি কথাগুলি গড়গড় করে বলে চলেছে সেই অদ্ভুত একটা বাংলায়। যেন রাগ দেখাচ্ছে সেই কাফিল। চোখ-মুখের ভাবে মনে হচ্ছে পারলে মেরেই দেবে তার কোনও এক পোষ্য দাসকে। লাল সিংহাসনের মতো ডিজাইন করা এম্বস করে সেলো কোম্পানির নাম লেখা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আনিকুল সেই মুহুর্তে যেন আরব দেশের কোন এক বড়লোক কাফিল। যার আছে অসংখ্য উট। আছে টাকা দিয়ে কেনা গাদা গাদা মানুষ। যারা মুখ বুজে ধূ ধূ মরুভূমির ভেতর উট চরিয়ে বেড়ায়। যা খেতে দেয়, তা-ই খায়। তাদের শরীর বলে কিছু নেই। চামড়া বলে কিছু নেই। যাদের মালিকের কাছে এসে অভিযোগ জানানোর অধিকার নেই। যাদের নিজের দেশে বাড়ি ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। কাফিল যা দেবে, নিতে বাধ্য তারা। নিজের পুণ্যে দান দিলে খুশি হয়ে গ্রহণ করবে তারা। কথা বলা নিষেধ করলে মেনে নেবে চুপচাপ।

    এখন ২০২২ শেষ হয়ে ২০২৩। মাল্টিন্যাশনাল ফোনের কোম্পানি ফোনে কথা বলার ফ্রিডম প্ল্যানের বড় বড় ফ্লেক্স হোর্ডিং করে। শহর মুড়ে দেয় ফ্রিডম প্ল্যানের বিজ্ঞাপনে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ঘোষণা করে। সেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া থেকে লেবার হয়ে চলে যায় অসংখ্য মানুষ দেশ ছেড়ে। কী কাজে যাচ্ছে—বেশিরভাগের জানা থাকে না। যাদের কথা বলা নিষেধ হয়। যাদের বাড়ি ফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। যাদের ইচ্ছেমতো মারা যায়। ইচ্ছেমতো শাস্তি দেওয়া যায়। দেশ থেকে যাদের খোঁজ রাখা হয় না। ভোটার লিস্টে নাম থাকা এই মানুষগুলোর নামের পাশে ভোট পড়ে যায়।

    এরপরের কথাটায় আরও চমকে উঠলাম। মাটির দিকে তাক করা হাতের আঙুলটা হঠাৎ তুলে নিল সোজা সামনের দিকে। তাক করে নিল চোখ বরাবর সোজাসুজি। গলার স্বরটা উঠে গেছে উঁচুতে।

    -রাগ করে গুলি মেরে দিত একদম!
    -সে কী!
    -হ্যাঁ। গুলি করে মেরে দিত। ওই বালির মধ্যে মরুভূমির মধ্যেই গুলি করে মেরে ফেলে দিত।
    -আপনি দেখেছেন এরকম?
    -হ্যাঁ। চোখের সামনে দেখিনি। কিন্তু শুনেছি। জানি। একদম সঠিক। এরকম কত মার্ডার হয়ে যায় ওখানে কাজ করতে গিয়ে। আমার আগেই তো সুদানের একটা রাখালকে গুলি মেরে দিয়েছিল আমার কাফিল। কারুর সাথে কথা বলতে দেখলে, অবাধ্য হতে দেখলে কাফিলরা এরকম মেরে দেয়।
    -কোনও কেস হয় না?
    -না না! কোন কেস! কে কেস করতে যাবে ওই বিদেশে! কার বাড়ির লোকে টাকা পয়সা খরচা করে যাবে বলেন তো। লোকের কাছে পাসপোর্ট আছে না টাকা আছে? দুই দিন ফোন করবে। বাড়ির মানুষকে ফোন করে না পেলে যদি নম্বর থাকে হয়তো কাফিলকে ফোন করবে। কাফিল বলবে, হ্যালো হ্যালো। তোর ঘরের লোক পালিয়েছে। তারপর আবার যদি ফোন করে ফোন কেটে দেবে। আর পাবেই না ফোনে। কী হবে! ওই লাশ বালুর মধ্যে চাপা পড়ে থেকে যাবে। কার কেস ?

    আনিকুল বলে চলেছে। এবার গলার স্বরটা আবার নীচুর দিকে নেমে এসেছে। হাতদুটো নীচে নেমে এসে দু-হাঁটুর মাঝে। এক হাতের আঙুলগুলো অন্য হাতের আঙুলগুলোকে আকড়ে নিয়েছে।

    আমি কথা বলতাম না কারুর সাথে। ওই কাফিলকে যা যতটুকু বলতাম দরকার লাগলে। চুপচাপ সাড়ে তিন বছর কাজ করে গেছি। মালিক যা বলেছে সব মেনে নিয়েছি। তাই তো কাফিল ফেরার সময় দান দিয়েছিল। ভালোই ছিল আমার কাফিলটা।

    যে জীবিত মানুষটি আমার সামনে বসে আছে এই মানুষটিই কয়েকমাস আগে দূর কোন মরুভূমিতে লাশ হয়ে বালির নীচে চাপা পড়ে থাকতে পারত। এই ভাঙনে ডুবে যাওয়া ঘর বাড়ির অবশিষ্ট মানুষগুলোর ফোন থেকে ডায়াল করা নম্বরে রিং বাজত আরবের মরুভূমিতে। ঢেউ খেলানো বালির নীচে কাঠ হয়ে থাকত হয়তো ষাট বাষট্টির আনিকুল। শরীরখানা পচে উঠত ওই স্তরে স্তরে বালির নিচে।

    বা আজ, এক্ষুনি এই দুপুরবেলা। সেই আরবের খাঁ খাঁ মরুভূমি। ডাক শোনা যাচ্ছে—ইকবাল, আমিন, আলম, ইরফা … ন। সামনে, পেছনে, ডানে, বাঁয়ে ধূ ধূ মরুভূমি। বালি … বালি। হাওয়ায় উড়ছে বালি। বালির ঝড়ে চারপাশ আবছা। হোঁচট খেয়ে পড়ছে কেউ সামনে। নাকে দাঁতে ঠোঁটে জিবে ভরে যাচ্ছে বালি। সামনে ঢেউ ঢেউ বালি। তার ভেতর আঁকাবাঁকা সামান্য উঁচু-নীচু-উঁচু। বালি আসছে উড়ে। ওই সামান্য উঁচু-নীচু ঢেউগুলো মিশে যাচ্ছে অন্য বড় ঢেউয়ে। আনিকুলের কোনও ভাই-দাদা-আত্মীয়-অনাত্মীয় ওই উঁচু-নীচু জায়গাটার নীচে শুয়ে আছে। শক্ত কাঠ হওয়া একখানা শরীর। মাথা-পিঠ-কোমরে উঁচু-নীচু হয়ে আছে বালি। ঢেকে আসছে ক্রমশ ওই খাঁজ। ওই ওখানে এই মালদা-মুর্শিদাবাদ-নদীয়া-উত্তর দিনাজপুর থেকে লেবার হয়ে যাওয়া কেউ। ভারত বা বাংলাদেশ-ওমান-সুদান থেকে যাওয়া কেউ। ষাট-বাষট্টির কিংবা কুড়ি-বাইশের।

    ইমরান, ইকবা … ল, আল … ম, ক্রিং … ক্রিং … ক্রিং … ক্রিং …। ওই যে শুয়ে আছে ওর ফোনে রিং বাজছে …। চুপ। কোনও আওয়াজ নেই। রিং বাজছে। রিং বাজছে। কেউ বলছে না, হ্যালো… হ্যালো… হ্যালো…



    কৃতজ্ঞতা স্বীকার
    ফিরোজ শেখ
    সিটু নেতৃত্ব
    মালদা জেলা
    মোল্লাটোলা গ্রামের অধিবাসী বৃন্দ




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ১১০১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    অদ-ভূত!.. - Kasturi Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৫৭518120
  • এটা গুরুর অন্যতম সেরা সিরিজগুলোর মধ্যে একটা। একটা কিরকম বীভৎস দম বন্ধকর বাস্তবকে খুব ক্যাজুয়ালি দেখিয়ে দেয় চোখে আঙুল দিয়ে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন