এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  সমাজ  শনিবারবেলা

  • লেবারের বিদেশ যাত্রা ১২

    মঞ্জীরা সাহা
    ধারাবাহিক | সমাজ | ০২ অক্টোবর ২০২২ | ১৩৪৯ বার পঠিত
  • অনেকদিন পর আবার শুরু হল এই ধারাবাহিকের পরের পর্ব...
    বড়বড়িয়া থেকে দুবাই



    ঘামছে ছেলেটা। যতবার কথা বলতে যাচ্ছে, ঠেকে গিয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। চেয়ারের সামান্য ছোট পায়াটা ঠক ঠক করে আওয়াজ করে চলেছে ওর নড়াচড়ার সঙ্গে সঙ্গে। ঘ্যারঘ্যারে ফ্যানের আওয়াজে সে শব্দ আসছে না কারুর কানে। যে শব্দগুলো কাঠের টেবিলের উল্টোদিকে বসে লোকগুলো শোনার ভাব করছে, সেগুলো ছেলেটার মুখের ইংরাজি শব্দ। ‘ইজ’-এর জায়গায় ‘ওয়াজ’, ‘দ্যাট’ এর জায়গায় ‘অ্যাম’, ‘ইজ’, ‘আর’ – কিছু একটা বলে ঘাম মুছতে মুছতে বলে চলেছে। গম্ভীর মুখে উলটো দিক থেকে ওরা প্রশ্ন করছে বাংলায়। নদীয়া জেলার ডানদিকের এ অঞ্চলগুলোর কথা বলার টানটা যারা চেনেন, তাঁরা এদের কথাগুলো একবার শুনলেই ধরে ফেলবেন এদের বাস কোথায়। চলছে চাকরির ইন্টারভিউ। চিলতে ঘরে টিনের চাল। পরপর চারটে ছেলের ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউ-এর ঘর থেকে বেরিয়ে আর কিছুটা গেলেই দেশের সীমান্ত। নদীয়ার সীমান্ত। উলাসির আগে নিমতায় এই ঘরখানা। চাকরিটা এদেশে নয়। বিদেশে।

    টেবিলের ওপাশে যারা গম্ভীর গম্ভীর মুখ করে ইন্টারভিউ নিচ্ছে, তাদের পাড়ার লোকে বলে দালাল। যারা একটু-আধটু ইংরাজি বলে, তারা বলে এজেন্ট। বিদেশে চাকরি দেওয়ার এজেন্ট। দালালদের মধ্যে প্রধানের নাম নাজবুল। বাড়ি উলাসি। আরেক এজেন্টের বাড়ি ছোট চুবিসারা। বাকিজনের বাড়ি নিমতা। এই চাকরিপ্রার্থীর নাম সামিম মণ্ডল। নাজিবুল, কুতুব, গণেশ – এজেন্টদের নামগুলো সামিম মনে করে করে বলছে ওদের বড়বড়িয়ার বাড়ির বারান্দায় বসে। এ বাড়ির একটা ইতিহাস আছে। দেশভাগের সময় সীমান্ত এলাকার যে গল্পগুলো আমাদের প্রায় চেনা – এদের বাড়ির গল্পটা তার থেকে আলাদা। এ এলাকারই তাই। দেশভাগের সময় দুই ভাগ থেকে কাতারে কাতারে মানুষ চলেছিল কেটে টুকরো হওয়া অন্য খণ্ডের দিকে একটুখানি থাকার জায়গা আর নিজের একখানা দেশের খোঁজে। এ ইতিহাস আমাদের প্রায় সকলেরই জানা। নদীয়া জেলার অন্য যে ইতিহাসটুকু আমিরুল মণ্ডলের মুখে শুনলাম, সেটা সেদিন দুপুরেই প্রথম শোনা। সে সময়ে নদীয়া জেলার ডি এম চেয়েছিলেন নদীয়ার মানুষ এ পারেই থেকে যাক। হাঁসখালি, বগুলা, দত্তফুলিয়া – এসব এলাকার বহু বৃদ্ধকে তাই গৃহবন্দি করা হয়েছিল। ছেলেছোকরাদের রাখা হয়েছিল থানায় বন্দি করে।

    এলাকার ইতিহাস বলতে বলতে উত্তেজনায় সামিমর বাবা আমিরুল মন্ডল দাঁড়িয়ে পড়েছেন চেয়ার ছেড়ে। বলছেন, তাঁর বাবা হাজি গোলাম মহম্মদ মণ্ডলের কথা। গলার স্বরটা উঠছে উপর দিকে, বাবা সে সময় ইয়ং ছেলে। বাবার নামডাক ছিল তখনই। এলাকায় প্রভাবশালী মানুষ ছিল। বাবাকে রেখেছিল রাণাঘাট থানায়। এলাকা-ছাড়া, দেশ-ছাড়া হতে দেয়নি প্রশাসনের বাবুরা। বাবাই তারপর এলাকার মানুষকে নিজেই বোঝাত। বলত, তোদের এইখানেই বাস। এটাই তোদের দেশ। দেশভাগের পর আশপাশের মুসলমান প্রতিবেশীকে যেতে দেয়নি আমার বাবাও।

    ওঁর কথায় বুঝলাম, এ এলাকার বহু মানুষকে নিজের দেশ ছেড়ে তাই চলে যেতে হয়নি কেটে টুকরো হওয়া সেই নতুন খণ্ড পূর্ব পাকিস্থানে। আর কখনও দেশ ছেড়ে যায়নি এ পরিবার।

    উনি বলে চলেছেন উত্তেজিত কন্ঠে, আবার ওপারে যে সব হিন্দু আটকে পড়ত ঝামেলায়, শরণার্থী হয়ে আসতে পারছে না – এমন জানলেই আমার বাবা সোজা ওইপারে গিয়ে তাদের এইপারে নিয়ে আসতেন। নিজে মুসলমান হয়েও বাবা এপার-ওপারের হিন্দু শরণার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। দেশভাগের আগে এইটা আমাদের বাড়ি ছিল না। ছিল অন্য বাড়ি।

    কোথায় সে বাড়ি?

    এইখানে না। এই এলাকাতেই। তবে এ বাড়ি না। এখান থেকে একটু দূরে। বাবা যখন জেলে সে সময় আমাদের আগের বাড়ি দখল হয়ে যায়। ফাঁকা বাড়িতে বহু শরণার্থী এসে ঢুকে পড়ে। বহু পরিবার ও বাড়িতেই বাস করত লাগল তখন। ক্যাম্পের মত। একটুখানি জায়গায় কত কত লোকের বাস। ও বাড়ি আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেল। বাবাও ছেড়ে দিল সে বাড়ি। যা জমিজমা ছিল সে সময় তাও হাতছাড়া হয়ে গেল। পরে প্রশাসনের বাবুরা সে জমি আবার উদ্ধার করে দিয়েছিল। বাড়ি আর ফিরিয়ে নেয়নি বাবা। এ বাড়ি বাবা পরে বানিয়েছিল। দেশভাগের পরের বছর। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এই নতুন বাড়িতে বহু মানুষ থাকত। মুক্তিযুদ্ধের সেনা তারা। আমার বাবাই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল তাদের থাকার। এই একতলায় সব থাকত। এই যে দিদি আপনি বসে আছেন, এই একতলাটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সেনা ছাউনির মত। এইখানে রাঁধা-বাড়া হত। ওদের প্র্যাক্টিস হত।

    পরিবারের এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটুকু বলতে বলতে অহংকারে চোখদুটো চকচক করে উঠছে ভদ্রলোকের। এই তরুণ চাকরিপ্রার্থীর বাবা আমিরুল মণ্ডলের কৃষক, দোকানদার ছাড়াও একটি অন্য পরিচয় আছে। সে কথায় পরে আসছি। ওদের সেই ‘নতুন বাড়ি’র কড়িকাঠের ছাতের তলায় শুনছি বসে তিন প্রজন্মের কথা। বারান্দায় আমার ডানে বাঁয়ে বস্তায় বস্তায় ধান। কাঠের সিঁড়ি উঠে গেছে উঠোনের মাঝ দিয়ে দোতলায়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়ানো ড্যাম্পধরা এই দোতলা বাড়ির সামনে দিয়ে চলে গেছে চওড়া রাণাঘাট-দত্তফুলিয়া রোড। যে রাস্তা দিয়ে সোজা যেতে থাকলেই এখন বাংলাদেশ। বেশি দূর না। এখন দত্তফুলিয়া নামটার সাথেই সীমান্ত শব্দটা জুড়ে আছে।

    ঠিক যে বয়সে ফর্মের পর ফর্ম জমা করে, মাথায় একগাদা দুশ্চিন্তা নিয়ে, হাতে ফাইল নিয়ে লাইনে গিয়ে দাঁড়ানোর কথা, সে বয়স এখন সামিম মণ্ডলের। কুড়ি-বাইশের স্বাস্থ্যবান ছেলে। আমিরুল মণ্ডলের মুখে মুক্তিযুদ্ধ, এ এলাকা, পরিবারের ইতিহাস বর্ণনার মাঝেই সামিম ওদের ২০১৭-র সেই বিদেশযাত্রার কথা বলতে শুরু করে দিল। ওর সঙ্গের সে’বারের বাকি চাকরিপ্রার্থীরাও সব বড়বড়িয়া-দত্তফুলিয়া-ধানতলারই ছেলে।

    সেই চিলতে ইন্টারভিউ-এর ঘরটাতে চাকরি-প্রার্থীরা কমপ্লেক্স সেন্টেন্স, কম্পাউন্ড সেন্টেন্স – কিছু ভুল কিছু কিছু ঠিক বলে বেরিয়ে এল বাইরে। এ ছেলের চাকরি পাকা। সঙ্গের আরও তিনজনও ইন্টারভিউতে পাশ। পাসপোর্ট-ভিসার খরচ ধরে দিতে হবে নব্বই হাজার করে। এ ছেলের কাজ হবে বিদেশের কোম্পানিতে ফুড প্যাকেজিং। থাকা-খাওয়া বাদে বেতন হবে ইন্ডিয়ার কারেন্সি হিসেবে আঠারো হাজার মত মাসে। বাকিদের কাজ অন্যকিছু। সবারই চাকরি হবে দুবাই। ব্যস! এটুকুই শুধু জানা গেল।

    বিদেশযাত্রা শুরু হয়েছিল টাকাপয়সা মিটিয়ে দেওয়ার পর মাসকয়েক পরে। দমদম থেকে লক্ষ্ণৌ। কিছু সময় ওয়েট। লক্ষ্ণৌ থেকে দিল্লি। দিল্লি গিয়ে বিদেশের ফ্লাইটের টিকিট, পাসপোর্ট, ভিসা হাতে পাওয়া যাবে। কোথায় কাজ, কী কাজ – সবকিছুর ডিটেল জানা যাবে দিল্লি গেলেই।

    ঝলমল করছে দিল্লি এয়ারপোর্ট। ওদের জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার কথা কোনো এক অচেনা লোকের। যাকে দেখতে পাওয়ার কথা এয়ারপোর্টের ঝকঝকে আলোতে বাইরে কোথাও দেখা গেল না তাকে। বারবার ফোন করে একখানা এড্রেস পাওয়া গেল কেবল। এক হোটেলের অ্যাড্রেস। একখানা ট্যাক্সি ধরে যেতে হবে সেই হোটেলে। বলল, সে হোটেলের রিসেপশন-এ পৌঁছোলেই জানা যাবে সব কিছু। পাওয়া যাবে ভিসা, পাসপোর্ট আর চাকরির কাগজপত্র। ফোনের ও’পাশ থেকে একটা অচেনা গলার স্বর বলেছিলও এ কথাগুলো।

    রিকশো, অটো, বাস ডানে-বাঁয়ে ফাঁক গলিয়ে চলেছে ট্যাক্সিখানা রাতের পুরোনো দিল্লির দিকে। যে রোড দিয়ে চলেছে ট্যাক্সিখানা, সেই দিক ঠিক না বেঠিক – বোঝা যাচ্ছে না কিছুই। নানারকম হর্ণের মাঝে শোনা যাচ্ছে বাইকের শপের বিজ্ঞাপন, ভিনরাজ্যের পলিটিকাল নেতার চ্যাঁচামেচি, কী কী সব চাহিয়ে চাহিয়ে বলে চিৎকার, রামলীলার হারমোনিয়াম তারসানাই, গাড়ির কাচের ফাঁক দিয়ে হকারের জিনিস বেচার তাগাদা। বড়বড়িয়া, ধানতলা, উলাসি থেকে আসা চোখগুলোর কাছে এ’রকম রাস্তাঘাট হাইরাইজ বিল্ডিং নতুন। চোখগুলো এতদিন রাণাঘাট-কৃষ্ণনগর-বারাসাত-জাগুলির ভিড়, হই-হট্টগোল দেখেছে সপ্তাহে বা মাসে দু’দিন কি একদিন। রোজ রোজ ওদের যাওয়ার দরকার পড়েনি কখনও রাণাঘাট শহরেও। বাড়ির কাছের বয়েজ অথবা কোনো এক কো-এড ইস্কুলে পড়াশোনা। মামাবাড়ি, মাসিপিসির বাড়ি বা কখনও কোনো এক কাজে আশপাশের মফঃস্বল শহরে। এই রাজধানী শহরের রাস্তাঘাট, শুকনো আবহাওয়া, উঁচু উঁচু শপিংমল, মুখগুলোর ভাষা – সবটাই নতুন। ঘামওয়ালা চামড়াগুলো শুকনো রসকসহীন হাওয়ার ধাক্কায় শুকিয়ে আসছে। মাঝেমাঝে ফাটা দাগ দেখা দিচ্ছে ঠোঁটের এপাশ-ওপাশ দিয়ে। চিলতে একখানা গলির জ্যাম পার হতে হতে একটা বিল্ডিং-এর পাশে বিরিয়ানির খোলা খোলা হাড়িগুলির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল ট্যাক্সিখানা। ড্রেনের পাশ থেকে পচা বিরিয়ানির গন্ধ আসছে। বেশ রাত। রাস্তার পাশে ফেলে রাখা এঁটোকাঁটা বেড়াল কুকুর পেরিয়ে হোটেলে ঢোকার গেট।

    ঢোক গিলতে গিলতে শুকনো জিভ দিয়ে অর্ধেক ঠিক, অর্ধেক ভুল উচ্চারণে বোঝানোর চেষ্টা করে গেল নিজেদের প্রশ্নগুলো – সেই বলে দেওয়া হোটেলের রিসেপশনে। প্রশ্নগুলোর শেষে কিছুই জানা গেল না – যা যা শুনবে আশা করেছিল। কোনও কাগজপত্রের তো কথাই নেই। উলটো দিক থেকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে কতগুলো মুখ ওদের দিকে। ফোন ধরছে না এজেন্টদের কেউ। এবার যাবে কোথায়? শেষমেষ এ হোটেলেই রুম বুক হল একখানা। টাকা নিজেদের পকেট থেকে।

    চিলতে হোটেল, ঘরের বাইরে দিয়ে দিন রাত গাড়ি যায়। সাইকেল যায়। মানুষ চেঁচায়। ঠিক সময়ে পৌঁছোতে না পারার আশঙ্কায় ঝগড়া করে। চিৎকার করে অন্যের থেকে জিতবে ভাবে। না জিতলে হেরে গিয়ে চিৎকার করে। সেসব ভাষার মানে বোঝা যায় না। বোঝার চেষ্টাও করে না। এই হোটেল ঘরের বাইরের মানুষগুলো কোথায় যায় ! কীসের এত ব্যস্ততা! এই ব্যস্ত শহরে এ ঘরের ভেতর কোনও ব্যস্ততা নেই। মোবাইলে গান বাজে। হাই ওঠে। একটা হাই শেষ হলে আবার হাই পায়। দেওয়ালের গায়ে টাঙানো হুকে সার্টের উপর আরেকখানা ময়লা শার্ট জমা হয়। ঘড় ঘড় আওয়াজ করে ফ্যান ঘোরে। দিল্লি শহরের লু ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে ঘুরপাক খায়। চার চাকরিপ্রার্থী চিৎকার করার কোনও সুযোগ পায় না। কার কাছে গিয়ে চ্যাঁচালে ওদের উত্তরগুলো পাওয়া যাবে বোঝে না। কে জানাবে কিছু, কবে, কোথায় পৌঁছতে হবে বোঝে না। কলার টিউন বেজে বেজে থেমে যায় উলাসি নিমতলার এজেন্টদের ফোনের। অপেক্ষা করতে হবে আর কতটা? নাকি যা যতটুকু টাকা আছে তা নিয়ে ফিরতে হবে বাড়ি? রাগ হয়। চিৎকার করতে ইচ্ছে হয়। তাতেও চিৎকার করে না কোনও। নিজেদের পকেটের টাকায় খাবার আসে হোটেল থেকে। হোটেলের রিসেপশনে টাকা জমা হয় ঘরভাড়ার। জানালার বাইরে অন্য ইমারতের প্লাস্টার ছাড়া ইট-বালি-সিমেন্টের ন্যাড়া দেওয়ালগুলি দেখা যায়। বাইরের আকাশ ঢেকে সে দেওয়ালগুলি হাঁ করে দাঁড়িযে আছে। অন্য বাড়ির এসির গরম হাওয়া ঢুকে পড়ে ঘরের ভেতর। টাকা ফুরায়। ক’দিন পর বোঝে – ওরা আছে আসলে কোথায়। যে আজানের শব্দ ওদের ঘরে ভেসে আসে, ওটা সেই দিল্লির জামা মসজিদের। এ মসজিদের নাম বড়বড়িয়া থাকতেই শোনা। এত অচেনা মানুষ বিল্ডিং, শপিংমল, অচেনা শহরের মাঝে একখানা মাত্র চেনা নাম। জামা মসজিদ।

    রিং বেজে উঠল হঠাৎ। তখন সকাল। আবার একটা অচেনা কন্ঠস্বর। আপ সামিম মণ্ডল হ্যায় কেয়া? – রুক্ষ গলার স্বর। খুব কম কথায় বক্তব্য শেষ। বোঝা গেল, শুধু একজনেরই ডাক এল। কেবল এ ছেলের ডাক। যেতে হবে একটু দূরে। হোটেল থেকে বেরিয়ে হাঁটা পথ। ডানে-বাঁয়ে গলি পেরিয়ে ডানের গলিতে। নামে একখানা অফিসঘর। ঘিঞ্জি গলিতে চিলতে একখানা ঘর। তিনজনর মধ্যে কেবল এ ছেলেরই বিদেশ যাওয়ার পাকাপাকি ডাক। যেতে হবে একা। দুবাই। ডেট টাইম ফ্লাইটের নাম সিট নম্বর ভিসা পাসপোর্ট। কোম্পানির নামও একখানা বলল। নদীয়ার সঙ্গীসাথীরা থেকে যাবে দিল্লিতেই। যেখানে ডাকা হয়েছে সেখানেও কেউ কথা বলে না বেশি। উত্তর দেয় না প্রশ্নের। বলে শুধু ওদের যতটা দরকার। বাকিদের যাওয়া কবে কোথায় কিছুই জানা গেল না।

    হোটেল ঘরে থেকে গেল পাখার ঘ্যারঘ্যারে শব্দ, জামা, চ্যাঁচামেচি, গাড়ির হর্ন, রিকশো-র প্যাঁকপ্যাঁক, মসজিদের আজান আর বাকি থাকা তিনখানা মাথার ভেতর একগাদা দুশ্চিন্তা।
    ছেলেটার ইন্ডিগো ফ্লাইটের সময়মত যেভাবে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল, ঠিক পৌঁছে দিল। আবু ধাবি এয়ারপোর্টে একা দাঁড়িয়ে। চোখদুটো খুঁজছে আবার। সঙ্গে ব্যাগে অনেক জিনিসপত্র। বছর খানেক বা বছর দুয়েক ভেবে যতটা পারা যায় ততটা ভরেছে। সঙ্গে ভিসাটা ট্যুরিস্ট ভিসা। চেকিং-এর সময় চোখগুলো তাই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে ওর দিকে। ব্যাগের আকার-আয়তন, চোখমুখ, হাবভাব – কোনোটাই বেড়াতে যাওয়ার মত নয়। দিল্লির সেই চিলতে অফিসের চাকরিদাতারা বলে দিয়েছিল, জিজ্ঞাসা করলে বলবি দাদার বাড়ি ট্যুরে যাচ্ছি। বলতে ওকে হয়নি। বেঁচে গেছে। বেরিয়ে এসেছে এয়ারপোর্টের বাইরে। আবার খুঁজছে চোখদুটো। খুঁজছে, খুঁজছে। এবার একা। নদীয়ার ছেলেরা থেকে গেছে দেশেই। এই দেশটা নিজের নয়। বিদেশ। ফ্লাইটে ওর মতই দু’-তিনজন দুবাইতে চাকরি করতে আসা ছেলের সাথে আলাপ হয়েছিল। তারা রওনা হয়ে গেছে যে যার গন্তব্যে। ফোনটা অচল হয়ে আছে। ইন্ডিয়ার সিম চলছে না আর এখানে ...


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০২ অক্টোবর ২০২২ | ১৩৪৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    অদ-ভূত!.. - Kasturi Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন