এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ড্রাকুলার গার্লফ্রেন্ড 

    Debmalya Mukherjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ মে ২০২৫ | ৩৮ বার পঠিত
  • ড্রাকুলার গার্লফ্রেন্ড

    পর্ব ১: অন্ধকারের কন্যারা

    রাত গভীর হতে না হতেই ট্রান্সিলভানিয়ার দুর্গের অন্ধকার আরো ঘনিয়ে আসে। চাঁদের আলো ধীরে ধীরে পাথরের দেয়ালে ছায়া ফেলে, আর বাতাসে ভেসে বেড়ায় শীতল এক গন্ধ।

    দুর্গের অভ্যন্তরে, ধূসর পাথরের মেঝেতে নরম পায়ে চলাফেরা করছে তিন নারী। ওরা যেন ছায়া, আবার যেন প্রাণবন্ত। দীর্ঘ পোশাকের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা তাদের মুখে খেলা করে রহস্যের হাসি। তাদের চোখ দু’টি যেন অমাবস্যার রাতের মতো গভীর, ঠোঁট রক্তলাল, আর কণ্ঠস্বর মধুর বিষের মতো।

    লুসি ওয়েস্টেনরা দুরু দুরু বুকে দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীরে ভয় আর আকর্ষণের এক অদ্ভুত মিশ্রণ খেলা করছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিন নারীর চোখে এক অমোঘ টান, যা থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না।

    তাদের মধ্যে একজন এগিয়ে এসে তার মুখের দিকে তাকাল। কপালে আলতো ছোঁয়া দিয়ে সে বলল, “ভয় পাচ্ছো, না লুসি? কিন্তু কেন? আমরা তো শুধু তোমাকে আপন করে নিতে চাই।”

    লুসি ফিসফিস করে বলল, “তোমরা কে?”

    তিন নারীর একজন হাসল, কাঁপন ধরানো সেই হাসিতে শোনা গেল অন্ধকারের ছোঁয়া। “আমরা তার সন্তান, যিনি চিরন্তন—আমরা ড্রাকুলার কন্যারা।”

    অন্ধকারে প্রতিধ্বনিত হলো লুসির মৃদু চিৎকার, আর দুর্গের বাইরে শোনা গেল উলুকণ্ঠের বিষাদময় গান।
    পর্ব ২: রক্তের আমন্ত্রণ

    লুসির শ্বাস দ্রুত হয়ে আসে। তার পায়ের নিচে যেন পৃথিবী গলে যাচ্ছে। সে পালাতে চায়, কিন্তু শরীর যেন অবশ হয়ে গেছে। তিন নারীর চোখ তার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আছে—তৃষ্ণার্ত, অপ্রতিরোধ্য।

    একজন সামনে এসে দাঁড়াল। তার লম্বা স্বর্ণাভ চুল চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে। ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি।

    "তুমি কি জানো, লুসি?" মোলায়েম অথচ ভয়ানক কণ্ঠস্বর বাতাসে ঝংকার তোলে, "তোমার হৃদয়ের রক্ত আমাদের জন্য কত মূল্যবান?"

    লুসির ঠোঁট শুকিয়ে আসে, কিন্তু সে পালানোর শক্তি খুঁজে পায় না।

    আরেকজন এগিয়ে আসে, যার চুল গভীর রাতের মতো কালো। সে আলতো করে লুসির কাঁধে হাত রাখে। শীতল সেই স্পর্শে লুসির গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    "আমরা তোমার মৃত্যু চাই না, লুসি। আমরা চাই তোমার নতুন জন্ম—অমরত্বের জন্ম।"

    লুসির চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়। "তোমরা...আমাকে কী করবে?"

    তিন নারীর একজন মিষ্টি হেসে বলে, "তোমাকে গ্রহণ করব। তোমাকে আমাদের বানাবো। আমাদের রক্ত তোমার ধমনীতে প্রবাহিত হবে, আমাদের মতো শক্তিশালী হয়ে উঠবে তুমি।"

    হঠাৎ দুর্গের বাইরে বজ্রপাতের শব্দে সমস্ত দুর্গ কেঁপে ওঠে। দূর থেকে শোনা যায় ঘোড়ার খুরের শব্দ।

    ড্রাকুলার সঙ্গিনীরা একে অপরের দিকে তাকায়। "সে আসছে," একজন ফিসফিস করে বলে।

    লুসি অবাক হয়ে তাকায়, "কে আসছে?"

    তিন নারীর চোখে একসঙ্গে বিদ্যুতের ঝলক খেলে যায়। "আমাদের প্রভু," তারা একসঙ্গে বলে ওঠে, "ড্রাকুলা!"

    পর্ব ৩: প্রভুর প্রত্যাবর্তন

    দুর্গের পাথরের দেয়ালে বজ্রপাতের আলো ঝলসে ওঠে। এক মুহূর্তের জন্য লুসি দেখতে পেল তিন নারীর মুখ—তাদের চোখে জ্বলছে এক অভূতপূর্ব আগুন, ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক তৃপ্তির ছায়া।

    ঘোড়ার খুরের শব্দ ধীরে ধীরে কাছাকাছি আসছে। বাতাসের মধ্যে ভেসে উঠছে এক অব্যক্ত শীতলতা, যা মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে যায়। লুসি অনুভব করে, তার চারপাশের বাতাস যেন ঘনিয়ে আসছে, শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে উঠছে।

    "তিনি এসেছেন!" স্বর্ণকেশী নারী মৃদুস্বরে বলে। তার চোখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

    দূরের বিশাল দরজাটি ধীরে ধীরে খুলে যায়। প্রবল বাতাসের সঙ্গে কালো এক ছায়া প্রবেশ করে। দীর্ঘ কালো আলখাল্লা, উজ্জ্বল লাল চোখ, তীক্ষ্ণ এক গম্ভীর উপস্থিতি—তিনি ভ্লাদ ড্রাকুলা।

    লুসি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার শরীরে প্রবল ভয়ের ঢেউ বয়ে যায়, কিন্তু একই সঙ্গে এক দুর্বার আকর্ষণ তাকে শেকলবন্দি করে রাখে।

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসে। তিন নারী শ্রদ্ধার সঙ্গে এক পাশে সরে দাঁড়ায়।

    "স্বাগতম, লুসি," ড্রাকুলার কণ্ঠস্বর গভীর, মন্ত্রমুগ্ধকারী। "আমার রাজ্যে তোমাকে গ্রহণ করার সময় এসেছে।"

    লুসির ঠোঁট কাঁপতে থাকে। "আমি... আমি এখানে কী করছি?"

    ড্রাকুলার ঠোঁটে এক সামান্য হাসি খেলে যায়। "তুমি এখানে আছো কারণ আমি চাই তুমি এখানে থাকো।"

    লুসির হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হতে থাকে। তিন নারী আবারও তার চারপাশে ঘিরে দাঁড়ায়। ড্রাকুলা তার দীর্ঘ শীতল আঙুল বাড়িয়ে দেয় লুসির চিবুকের নিচে, আলতো করে উপরে তোলে।

    "তুমি কি প্রস্তুত, লুসি?"

    তার ঠোঁটের কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে ড্রাকুলার মুখ...

    পর্ব ৪: লুসির পরিণতি

    লুসির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ড্রাকুলার হাতের স্পর্শ তার শরীরের ভেতর এক অদ্ভুত শিহরণ বইয়ে দিচ্ছে—ভয় নাকি আকর্ষণ, সে বুঝতে পারছে না। তিন নারী তাকে ঘিরে রেখেছে, তাদের চোখে যেন রক্তের নেশা।

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এল। তার ঠোঁটে সেই রহস্যময় হাসি, যা ভয়ঙ্কর অথচ মোহময়।

    "তুমি কি অমরত্বের স্বাদ নিতে চাও, লুসি?"

    লুসির ঠোঁট কাঁপতে থাকে। "আমি… আমি জানি না…"

    ড্রাকুলা এক পা এগিয়ে এসে তার চিবুকটি আলতো করে ধরল। "ভয় পেয়ো না। অন্ধকার তোমাকে গ্রহণ করতে চায়, আর তুমি জানো… তুমিও সেটাই চাও।"

    লুসির দৃষ্টি তিন নারীর দিকে চলে যায়। তারা শান্ত, প্রতীক্ষায়। যেন জানে, কী ঘটতে চলেছে।

    এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু থমকে গেল। তারপর লুসি অনুভব করল—ড্রাকুলার ঠোঁট তার গলার কাছে নেমে যাচ্ছে, শীতল নিঃশ্বাস তার ত্বকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তীব্র যন্ত্রণায় সে চোখ বন্ধ করে ফেলল!

    তীক্ষ্ণ দংশন… গরম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে…

    কিন্তু পরক্ষণেই যন্ত্রণা মিলিয়ে গেল। তার পরিবর্তে এক অদ্ভুত আনন্দ, এক রক্তিম সুখের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল তার সারা শরীরে। লুসি অনুভব করল, সে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে…

    তিন নারী এবার একসঙ্গে হাসল। তাদের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

    "তুমি এখন আমাদের বোন, লুসি," স্বর্ণকেশী নারী বলল।

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে পিছিয়ে এল, তার ঠোঁটের কোণে এক বিন্দু লালচে আলো। "শুভেচ্ছা, লুসি। এখন থেকে তুমি চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে।"

    লুসির চোখ খুলে গেল। তার চোখের মণি এবার রক্তের মতো লাল…

    পর্ব ৫: নতুন জন্ম

    লুসি ধীরে ধীরে চোখ খুলল। তার চারপাশে এক অন্যরকম অনুভূতি। সবকিছু আগের মতো, অথচ অচেনা। দূরের মোমবাতির আলো তার চোখে তীক্ষ্ণ হয়ে ধরা পড়ল, বাতাসের ক্ষীণতম কাঁপনও যেন সে অনুভব করতে পারছে। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত লাগছে তার নিজের শরীরকে—এটা যেন তার পরিচিত দেহ নয়, বরং এক নতুন কিছু।

    সে হাত বাড়িয়ে নিজের মুখ স্পর্শ করল। ঠোঁট এখনও উষ্ণ, কিন্তু গলায় এক ক্ষীণ ব্যথার অনুভূতি রয়ে গেছে—সেই দংশনের চিহ্ন!

    তিন নারী তাকে ঘিরে আছে, তাদের চোখ আনন্দে দীপ্ত।

    "কেমন লাগছে, লুসি?" কালো কেশী নারী ফিসফিস করে বলল।

    লুসি বিভ্রান্ত চোখে তাকাল, তার ঠোঁটের কোণে এক অজানা হাসির রেখা। "আমি... আমি আলাদা কিছু অনুভব করছি।"

    ড্রাকুলা সামনে এসে দাঁড়াল, তার চোখে গভীর সন্তুষ্টি।

    "তুমি বদলে গেছ, লুসি। এখন তুমি আমাদেরই একজন।"

    লুসির শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। ভয়, উত্তেজনা, একসঙ্গে মিশে গেছে। তার রক্ত যেন নতুনভাবে বইছে ধমনিতে।

    "আমি... আমি কি এখন..." তার গলা কাঁপল, কিন্তু সে জানত, উত্তর সে নিজেই বুঝে গেছে।

    স্বর্ণকেশী নারী হাসল, "হ্যাঁ, তুমি এখন আমাদের মতোই—রাতের সন্তান, রক্তের তৃষ্ণায় ধ্বংস আর আনন্দের মধ্যে বসবাস করা এক আত্মা।"

    লুসি হঠাৎ অনুভব করল, তার ভেতরে এক অদ্ভুত ক্ষুধা। এক ভয়ংকর আকাঙ্ক্ষা।

    ড্রাকুলা তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। "শীঘ্রই তুমি বুঝবে, এই নতুন জীবন কত সুন্দর। কিন্তু প্রথমেই… তোমাকে তৃষ্ণা মেটাতে হবে।"

    সে তার হাতে আঙুল ছুঁইয়ে লাল রক্তের এক ফোঁটা তুলল।

    লুসির চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল, তার শ্বাস দ্রুত হয়ে এল।

    ড্রাকুলার কণ্ঠস্বর ধীর, মায়াময়। "গ্রহণ করো, লুসি। তোমার নতুন জীবনের প্রথম অর্ঘ্য।"

    লুসির ঠোঁট কাঁপল… তারপর ধীরে ধীরে, সে এগিয়ে এল…

    পর্ব ৬: প্রথম শিকার

    লুসি ড্রাকুলার হাতে জমে থাকা সেই লাল ফোঁটার দিকে তাকিয়ে থাকল। রক্ত—উষ্ণ, মোহনীয়, এক অদ্ভুত আকর্ষণে তার সমস্ত অস্তিত্ব যেন কেঁপে উঠল।

    তিন নারী আগ্রহভরে তাকিয়ে আছে, তাদের চোখে প্রত্যাশা।

    "গ্রহণ করো, লুসি," ড্রাকুলা মৃদুস্বরে বলল, "এটাই তোমার নতুন জীবনের প্রথম ধাপ।"

    লুসি ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দিল। তার আঙুল রক্তের ফোঁটায় ছুঁইয়ে দিল, তারপর অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেটা ঠোঁটের কাছে আনল।

    রক্ত ঠোঁটে লাগতেই এক শীতল অথচ উত্তেজক স্রোত তার শরীর বেয়ে নেমে গেল। সে চোখ বন্ধ করল, এক নতুন স্বাদের সন্ধান পেল—কিছুটা মিষ্টি, কিছুটা ধাতব, কিন্তু সবচেয়ে বেশি যা অনুভূত হল, তা হলো শক্তি।

    সে চোখ খুলল। তিন নারীর ঠোঁটে হাসি।

    "তুমি এখন সত্যিই আমাদের বোন হয়ে উঠলে," স্বর্ণকেশী নারী বলল।

    ড্রাকুলা মৃদু হাসল, তারপর ছায়ার মধ্যে পা বাড়াল। "কিন্তু কেবল এক ফোঁটা রক্ত তোমার তৃষ্ণা মেটাবে না, লুসি। তোমার এখন প্রকৃত রক্তের স্বাদ নেওয়া প্রয়োজন।"

    লুসি বিভ্রান্ত চোখে তাকাল। "প্রকৃত রক্ত?"

    ড্রাকুলা ইশারা করল, "চলো, আজ রাতেই তোমার প্রথম শিকার হবে।"

    রাত্রির শহরে

    ড্রাকুলার দুর্গ থেকে বেরিয়ে তারা গভীর অরণ্যের পথে নামল। চাঁদের আলোয় রাস্তার ধুলোয় ছায়া পড়ে। সামনে ছোট্ট এক গ্রাম—ঘুমন্ত, নিশ্চিন্ত।

    লুসির গলা শুকিয়ে এল। তার বুকের ভেতর এক অভূতপূর্ব উত্তেজনা।

    "আমি… আমি কি সত্যিই…"

    ড্রাকুলা পাশে দাঁড়িয়ে বলল, "এটাই তোমার নতুন জীবন, লুসি। এখন তুমি শিকারি, আর তারা শিকার।"

    লুসির পায়ের তলায় মাটি যেন কেঁপে উঠল। সে অনুভব করল, তার দাঁতে এক অদ্ভুত শিরশিরানি… যেন তারা কিছু খুঁজছে।

    ড্রাকুলা হাত বাড়িয়ে গ্রামটির দিকে ইশারা করল। "তোমার প্রথম শিকার বেছে নাও।"

    লুসি এক পা এগিয়ে গেল। তার সামনে অন্ধকারে এক কুঁড়েঘর। জানালার ফাঁক দিয়ে মোমবাতির আলো দেখা যাচ্ছে।

    ভেতরে কেউ ঘুমিয়ে আছে…

    তার তৃষ্ণা আর অপেক্ষা করতে চাইছে না।

    লুসি নিঃশব্দে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

    পর্ব ৭: শিকারীর জন্ম

    লুসি নিঃশব্দে কুঁড়েঘরের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তার নিঃশ্বাস দ্রুত হচ্ছে না, কারণ এখন তার ফুসফুস আর মানুষের মতো শ্বাস নেয় না। কিন্তু হৃদয়ের কোথাও যেন এক তীব্র উত্তেজনা দোল খাচ্ছে—প্রথম শিকার, প্রথম রক্ত!

    সে জানালার ফাঁক দিয়ে তাকাল। ভেতরে এক বৃদ্ধ শুয়ে আছে, নিঃশব্দ নিঃশ্বাস ফেলে। তার পাশেই কাঠের চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে এক যুবতী, হয়তো তার মেয়ে।

    লুসি অনুভব করল, তার দেহ শিকারের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। তার দাঁত শিরশির করছে, গলার মধ্যে তৃষ্ণার আগুন জ্বলছে।

    প্রথম রক্ত

    এক লাফে সে জানালা টপকে ভেতরে প্রবেশ করল। বাতাসে সামান্য শব্দ হলো, কিন্তু ঘরের মানুষরা টের পেল না।

    সে ধীরে ধীরে বৃদ্ধের দিকে এগোল, কিন্তু ঠিক তখনই যুবতী একপাশে নড়ে উঠল।

    লুসি থমকে গেল।

    যুবতী ঘুমের মধ্যেই ফিসফিস করে বলল, “বাবা… তুমি ভালো আছো তো?”

    বৃদ্ধ কিছু বলল না, তার নিঃশ্বাস ধীরে চলছে।

    লুসির ভেতরে যেন কিছু চিৎকার করে উঠল। সে কি সত্যিই এই বৃদ্ধকে শিকার করবে? এক নিরীহ মানুষ, যে কিছু জানেই না?

    কিন্তু গলার ক্ষুধা ধীরে ধীরে তার সমস্ত যুক্তি গ্রাস করতে লাগল।

    সে সামনে ঝুঁকল… ঠোঁট বৃদ্ধের গলার কাছে নামিয়ে আনল…

    এক আকস্মিক বাধা

    ঠিক তখনই দরজার বাইরে একটা শব্দ হলো।

    লুসি চমকে তাকাল।

    কেউ আসছে!

    সে পেছনে সরে গেল, দ্রুত জানালা দিয়ে বেরিয়ে এলো। অন্ধকারে তিন নারী আর ড্রাকুলা অপেক্ষা করছিল।

    "তুমি কি তাকে মেরেছো?" কালো কেশী নারী আগ্রহভরে জানতে চাইল।

    লুসি মুখ খুলল, কিন্তু কিছু বলল না।

    ড্রাকুলা গভীরভাবে তাকিয়ে বলল, "তুমি দ্বিধাগ্রস্ত হলে, লুসি। তোমার রক্তের তৃষ্ণা কি এখনও পূর্ণ হয়নি?"

    লুসি ফিসফিস করে বলল, "আমি… আমি পারিনি।"

    তিন নারী একে অপরের দিকে তাকাল।

    ড্রাকুলার ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল। "দ্বিধা করার সময় তোমার নেই, লুসি। তুমি এখন আমাদের মতোই—রাতের শিকারী। যদি তুমি শিকার না করো, তবে শিকার হয়ে যাবে।"

    তার চোখ ধীরে ধীরে লাল হয়ে উঠল।

    "আগামীকাল রাতের আগে, তুমি যদি শিকার না করো, তবে আমি নিজেই তোমাকে শাস্তি দেব।"

    লুসির গলা শুকিয়ে গেল।

    তাহলে কি সত্যিই তার মানবজীবন চিরতরে শেষ হয়ে গেল?

    পর্ব ৮: প্রাণের বিনিময়ে রক্ত

    রাত গভীর হয়ে এসেছে। দূরের বন থেকে কোনো নাম না জানা পাখির ডাক ভেসে আসছে। ঠান্ডা বাতাস লুসির চুল উড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু সে অনুভব করতে পারছে না।

    সে ধীরে ধীরে দুর্গের দিকে ফিরে যাচ্ছে, কিন্তু তার মনের মধ্যে তোলপাড় চলছে।

    সে কি সত্যিই শিকার করতে পারবে?

    ড্রাকুলার কথাগুলো এখনো তার কানে বাজছে—
    "আগামীকাল রাতের আগে, তুমি যদি শিকার না করো, তবে আমি নিজেই তোমাকে শাস্তি দেব।"

    ড্রাকুলার শাস্তি কী হতে পারে, সে জানে না। কিন্তু তার চোখের সেই দৃষ্টি… ভয়ংকর, তীক্ষ্ণ… যেন লুসিকে ভেতর থেকে বিদীর্ণ করে দিয়েছিল।

    তিন নারীর প্রস্তাব

    দুর্গের প্রবেশদ্বারের কাছে তিন নারী অপেক্ষা করছিল।

    স্বর্ণকেশী নারী হাসল, "তুমি কি এবার শিকার করবে, নাকি আমাদের দয়ায় বাঁচতে চাও?"

    "দয়া?" লুসি চমকে উঠল।

    কালো কেশী নারী বলল, "হ্যাঁ, ড্রাকুলা তোমাকে শাস্তি দেবে। কিন্তু আমরা চাই না, তুমি হারিয়ে যাও।"

    তৃতীয় নারী, যে সবসময় নীরব থাকে, এবার মুখ খুলল, "আমরা যদি চাই, তবে তোমার জন্য আমরা শিকার আনতে পারি। তুমি নিজে না মেরেও প্রথম রক্তের স্বাদ পেতে পারবে।"

    লুসি দ্বিধায় পড়ে গেল।

    শিকার আসছে…

    সে কি শিকারের জন্য অপেক্ষা করবে?

    নাকি নিজেই শিকার করবে?

    হঠাৎ দুর্গের গেটের বাইরে এক ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনা গেল।

    কেউ আসছে!

    তিন নারী একসঙ্গে মুখোমুখি তাকাল।

    কালো কেশী নারী মৃদুস্বরে বলল, "দেখো, ভাগ্য নিজেই তোমার জন্য শিকার পাঠিয়ে দিয়েছে!"

    দুর্গের গেট খুলে গেল।

    ভেতরে ঢুকল এক যুবক—ভালো পোশাক পরা, দৃঢ় চেহারা, কিন্তু ক্লান্ত চোখ।

    লুসির চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল।

    এই মানুষটিকে সে চেনে…

    জনাথন হারকার!

    পর্ব ৯: প্রিয়জন, না শিকার?

    লুসির দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল।

    জনাথন হারকার!

    সে কি স্বপ্ন দেখছে? নাকি এই রাতের অন্ধকারে সত্যিই জনাথন তার সামনে দাঁড়িয়ে?

    কিন্তু জনাথনের চোখে কোনো উষ্ণতা নেই। তার চাহনিতে ক্লান্তি, সন্দেহ, আর ভয়।

    ড্রাকুলা ধীর পায়ে এগিয়ে এল। "ওহ, জনাথন হারকার… তুমি আবার ফিরে এলে?"

    জনাথন মুহূর্তে সতর্ক হয়ে উঠল। "আমি এসেছি মিনাকে বাঁচাতে!"

    মিনা! লুসির হৃদয়ে ঝড় উঠল। মিনা কি এখনও বেঁচে আছে?

    তিন নারী মৃদু হাসল। কালো কেশী নারী ফিসফিস করে বলল, "তোমার প্রথম শিকার এসে গেছে, লুসি। তুমি কি জনাথনের রক্ত পান করবে?"

    লুসি বিস্ময়ে পিছিয়ে গেল। "না! আমি এটা পারব না!"

    ড্রাকুলা এক পা এগিয়ে এসে বলল, "তাহলে তুমি কি করবে? সে এখানে এসেছে তোমার বিরুদ্ধে। তুমি কি তাকে বাঁচিয়ে রেখে নিজের মৃত্যুকে ডেকে আনবে?"

    জনাথন এবার প্রথমবারের মতো লুসির দিকে ভালো করে তাকাল। তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল।

    "লুসি? না, এটা সম্ভব নয়! তুমি তো…"

    সে থেমে গেল, যেন সত্যিটা বুঝতে পারছে না।

    লুসি ফিসফিস করে বলল, "জনাথন, তুমি চলে যাও… এখান থেকে চলে যাও!"

    কিন্তু জনাথন ইতিমধ্যে তার রূপান্তর দেখে ফেলেছে। তার চোখ লুসির তীক্ষ্ণ দাঁতে, রক্তাভ চোখে স্থির হয়ে আছে।

    "না…" সে ধীরে ধীরে বলল, "তুমি… তুমি এখন আর মানুষ নেই!"

    লুসির গলা শুকিয়ে গেল।

    ড্রাকুলা মৃদু হেসে বলল, "তাহলে লুসি, সিদ্ধান্ত নাও। তুমি কি তার রক্ত পান করবে, নাকি আমি?"

    জনাথন ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছিল, তার হাতে রুপোর ছুরি।

    লুসির সামনে দুটি পথ—

    ১) সে জনাথনের রক্ত পান করবে, শিকারীর পথ বেছে নেবে।
    ২) সে জনাথনকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে, যার মানে ড্রাকুলার বিরুদ্ধে যাওয়া।

    সে কী করবে?

    পর্ব ১০: লুসির সিদ্ধান্ত

    লুসির শরীর থরথর করে কাঁপছিল। একদিকে ড্রাকুলার দৃষ্টির কঠোর আদেশ, অন্যদিকে জনাথনের আতঙ্কিত চোখ।

    সে কি শিকার করবে?

    না কি সে এখনও মানুষ থাকার শেষ চেষ্টা করবে?

    জনাথন ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছিল, তার হাতে রুপোর ছুরির ঝলক। ড্রাকুলা স্থির দাঁড়িয়ে ছিল, অপেক্ষা করছিল লুসির সিদ্ধান্তের জন্য।

    তিন নারী কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল, যেন তারা একটা খেলা দেখছে।

    লুসির রক্তের তৃষ্ণা তীব্র হয়ে উঠছিল। গলার শুষ্কতা সহ্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার হৃদয়ের গভীরে… কিছু একটা এখনও বলে যাচ্ছিল—"না, এটা ঠিক নয়!"

    সে দু'পা পিছিয়ে গেল।

    "আমি… আমি এটা পারব না।"

    ড্রাকুলার ঠোঁটে ধীর হাসি ফুটে উঠল। "তাহলে তুমি নিজের ধ্বংস ডাকছ, লুসি। তুমি না শিকার করলে, তুমি নিজেই শিকার হবে!"

    জনাথন তখনই সুযোগ বুঝে ছুরিটা তুলে ধরল।

    "লুসি, তুমি যদি এখনও নিজের ভেতরের মানুষটাকে খুঁজে পাও, তাহলে দয়া করে আমাকে সাহায্য করো!"

    লুসির চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল। একদিকে তীব্র ক্ষুধা, অন্যদিকে মানবিকতা।

    ড্রাকুলার গলা শীতল হয়ে উঠল, "শেষবারের মতো বলছি, লুসি—তুমি কি আমাদের মতো হবে, নাকি…"

    সে আর বাক্য শেষ করল না।

    লুসির সামনে তখন দুটি পথ খোলা—

    ১) সে জনাথনকে আক্রমণ করে শিকারীর পথ বেছে নেবে।
    ২) সে ড্রাকুলার বিরুদ্ধে যাবে, নিজের মানবিকতা রক্ষা করবে।

    সে চরম সিদ্ধান্ত নিল…

    লুসি ফিসফিস করে বলল, "আমি তোমার মতো নই, ড্রাকুলা!"

    তারপর এক লাফে জনাথনের পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

    ড্রাকুলার চোখ ক্ষণিকের জন্য বিস্ময়ে সংকুচিত হয়ে গেল।

    "তুমি আমাকে ঠকালে, লুসি?"

    "না," লুসি ফিসফিস করে বলল, "আমি নিজেকে বাঁচালাম!"

    তিন নারী এবার আর হাসল না। তাদের চোখে ঝলসে উঠল রক্তপিপাসা।

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে এগিয়ে এল।

    "তাহলে তুমি শিকারী নও, লুসি। তুমি শিকার!"

    পর্ব ১১: ড্রাকুলার ক্রোধ

    দুর্গের অন্ধকার সিংহদুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাকুলা। তার চোখ দুটি জ্বলছে আগুনের মতো। তিন নারী ধীরে ধীরে তার পাশে এসে দাঁড়াল, তাদের ঠোঁটে কুটিল হাসি।

    লুসি আর জনাথন পেছনে সরে এল।

    "তাহলে তুমি সত্যিই আমাদের বিরোধিতা করছ, লুসি?" ড্রাকুলার কণ্ঠস্বর শান্ত, কিন্তু তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর ক্রোধ স্পষ্ট।

    লুসির হৃদয়ের কোথাও এক টুকরো ভয় খেলা করল, কিন্তু সে শক্ত হয়ে দাঁড়াল।

    "আমি মানুষ ছিলাম, এবং এখনও আমার মধ্যে কিছুটা মানবিকতা আছে," সে বলল, "আমি তোমার মতো দানব হতে চাই না!"

    ড্রাকুলার ঠোঁটে এক বিদ্রূপের হাসি ফুটে উঠল। "মানবিকতা?"

    সে ধীরে ধীরে তার হাত তুলল, বাতাসে অদৃশ্য শক্তির স্রোত বয়ে গেল। দুর্গের মেঝে কেঁপে উঠল।

    "তুমি কি জানো, লুসি? আমি তোমাকে মানবিকতার সুযোগ দিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তুমি শক্তিশালী হও, অমর হও। কিন্তু তুমি আমার দেওয়া শক্তি প্রত্যাখ্যান করলে।"

    তিন নারী এবার ধীরে ধীরে লুসির চারপাশে ঘিরে ধরল। তাদের চোখ জ্বলজ্বল করছে, দাঁত বেরিয়ে এসেছে।

    জনাথন তার রুপোর ছুরিটা শক্ত করে ধরল।

    ড্রাকুলা ঠান্ডা গলায় বলল, "এখন তুমি শুধু আমার শত্রু নও, লুসি। তুমি বিশ্বাসঘাতক!"

    মৃত্যুর ছায়া

    এক মুহূর্তের জন্য চারপাশ নীরব হয়ে গেল।

    তারপর…

    ড্রাকুলা এক ঝটকায় সামনে এসে দাঁড়াল, এত দ্রুত যে জনাথন ছুরিটি তুলতে পারল না।

    লুসি কিছু বোঝার আগেই এক তীব্র ধাক্কা তার বুকের মধ্যে আঘাত করল।

    সে ছিটকে গিয়ে মেঝেতে পড়ল।

    জনাথন চিৎকার করে উঠল, "লুসি!"

    তিন নারী এবার একসঙ্গে সামনে এল। তাদের চোখে শিকারীর ক্ষুধা।

    লুসি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু তার দেহ যেন দুর্বল হয়ে আসছে। ড্রাকুলার আঘাতে তার শক্তি কমে গেছে।

    "তোমার কাছে একটা শেষ সুযোগ আছে, লুসি," ড্রাকুলা ফিসফিস করে বলল, "তুমি যদি এখনই আমাদের দলে ফিরে আসো, আমি তোমাকে ক্ষমা করব।"

    জনাথন আবার লুসির পাশে এসে দাঁড়াল।

    লুসি চোখ তুলে ড্রাকুলার দিকে তাকাল।

    "আমি কখনোই তোমার মতো হব না!"

    ড্রাকুলার চোখ ধীরে ধীরে আরও লাল হয়ে উঠল।

    "তাহলে, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও!"

    পর্ব ১২: রক্তাক্ত লড়াই

    ড্রাকুলার চোখে জ্বলজ্বল করছে অগ্নিশিখা। বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে, যেন রাতের অন্ধকারই তার শ্বাসরোধ করে দেবে।

    জনাথন লুসির সামনে দাঁড়িয়ে গেল, হাতে রুপোর ছুরি। তার চোখে ভয় থাকলেও, সে পিছু হটবে না।

    তিন নারী ধীরে ধীরে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে।

    ড্রাকুলা শীতল গলায় বলল, "তোমরা মরতে চাও?"

    প্রথম আঘাত

    জনাথন প্রথমে আক্রমণ করল।

    সে ডান হাতে ছুরিটা ধরে ড্রাকুলার দিকে ছুড়ে দিল।

    কিন্তু ড্রাকুলা এত দ্রুত সরে গেল যে ছুরিটা শুধু বাতাস কাটল!

    এক মুহূর্তের মধ্যে ড্রাকুলা সামনে এসে জনাথনের হাত মুচড়ে ধরল।

    জনাথন কষ্টে চিৎকার করে উঠল।

    লুসির রক্তের মধ্যে যেন বিস্ফোরণ হলো!

    সে ড্রাকুলার হাত আঁকড়ে ধরল, কিন্তু ড্রাকুলার শক্তি ছিল অতিমানবীয়।

    ড্রাকুলা তার এক ধাক্কায় লুসিকে ছিটকে দিল।

    লুসির রূপান্তর

    লুসি মেঝেতে পড়ে গেল, কিন্তু এবার সে সহজে হার মানবে না।

    তার শরীরের রক্তপিপাসা জেগে উঠল।

    সে অনুভব করল তার ভেতরে থাকা প্রাণঘাতী শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে।

    তার চোখ রক্তাভ হয়ে উঠল। দাঁত বেরিয়ে এল।

    ড্রাকুলা তার দিকেই তাকিয়ে ছিল, যেন সে কিছু অনুমান করতে পারছে।

    লুসি এবার সত্যিকারের শিকারীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল!

    প্রাণের যুদ্ধ

    ড্রাকুলা এবার সত্যিই বিস্মিত হলো।

    লুসি তার পুরো শক্তি দিয়ে ড্রাকুলার ওপর আঘাত করল, তাদের সংঘর্ষে বাতাস কেঁপে উঠল!

    জনাথন মেঝেতে পড়ে ছিল, ব্যথায় কাতরাচ্ছিল, কিন্তু সে দেখল—লুসি আর ড্রাকুলা এক ভয়ংকর লড়াইয়ে নেমেছে!

    তিন নারী এবার জনাথনের দিকে এগিয়ে এল।

    জনাথন উঠে দাঁড়াল, হাতে শেষ অস্ত্র—রুপোর ক্রুশ!

    ড্রাকুলা চিৎকার করে উঠল, "ওইটা ফেলে দাও!"

    কিন্তু জনাথন ক্রুশ উঁচিয়ে বলল, "আমার আত্মা বিক্রি করিনি আমি!"

    ড্রাকুলার পতন?

    ড্রাকুলার এক মুহূর্তের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে লুসি এক লাফে তার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল!

    সে ড্রাকুলার গলায় দাঁত বসিয়ে দিল!

    ড্রাকুলা বিকট চিৎকার করে উঠল!

    রাতের আকাশ কেঁপে উঠল!

    তিন নারী আতঙ্কিত হয়ে পিছু হটল।

    জনাথন হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল—লুসি কি সত্যিই ড্রাকুলাকে পরাজিত করতে চলেছে?

    পর্ব ১৩: শেষ রাতের রক্ত

    ড্রাকুলার আর্তনাদে গোটা দুর্গ কেঁপে উঠল। তার গলা থেকে কালো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, লুসির ধারালো দাঁত গভীরভাবে বসে গেছে সেখানে।

    কিন্তু…

    ড্রাকুলা কি এত সহজে হার মানবে?

    অমর দানবের প্রতিশোধ

    ড্রাকুলার দেহ ঝটকা দিয়ে শক্ত হয়ে গেল।

    তার হাত লুসির গলায় চেপে ধরল, এমন শক্তিতে যে লুসি অনুভব করল তার হাড় চূর্ণ হয়ে যাবে!

    ড্রাকুলা ফিসফিস করে বলল, "তুমি ভাবছ আমি মরছি? আমি ড্রাকুলা! মৃত্যুকে বহুবার পরাস্ত করেছি!"

    সে লুসিকে এক ধাক্কায় দূরে ছিটকে দিল।

    লুসি মেঝেতে আছড়ে পড়ল, তার মুখ কালো রক্তে ভরে গেল।

    ড্রাকুলা গলাটা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইল, কিন্তু তার চোখে এখনো আগুন জ্বলছে।

    জনাথনের শেষ চেষ্টা

    জনাথন এক মুহূর্ত দেরি করল না।

    সে রুপোর ছুরিটা তুলে ড্রাকুলার দিকে দৌড়ে গেল।

    তিন নারী এবার চিৎকার করে উঠল, "না! থামাও ওকে!"

    কিন্তু জনাথন দৌড়ে এসে ড্রাকুলার বুকে ছুরিটা বসিয়ে দিল!

    ড্রাকুলার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল।

    তার মুখ দিয়ে একটা বিকট শব্দ বেরিয়ে এলো, যেন শত বছরের যন্ত্রণা তার দেহের ভেতর ছটফট করছে।

    সে এক পা পিছিয়ে গেল।

    তার দেহ কাঁপতে লাগল…

    ড্রাকুলার পতন

    ড্রাকুলা এবার সত্যিই নড়বড়ে হয়ে পড়ল।

    তার হাত ছুরিটা ধরে টানতে লাগল, কিন্তু শক্তি যেন দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

    লুসি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, তার মুখে রক্তের হাসি।

    "তোমার সময় শেষ, ড্রাকুলা।"

    ড্রাকুলার ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি ফুটল।

    "তুমি ভুল করছ, লুসি…"

    তারপর…

    সে এক বিকট অন্ধকার ধোঁয়ার মতো বিস্ফোরিত হলো!

    গোটা দুর্গ কেঁপে উঠল, বাতাসে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল পোড়া মাংসের।

    ড্রাকুলা… হারিয়ে গেল!

    শেষ রক্তের স্বাদ

    তিন নারী চিৎকার করে উঠল, তারা একসঙ্গে পিছু হটল।

    ড্রাকুলার বিনাশ মানেই তাদের শক্তির পতন।

    লুসি ধীরে ধীরে জনাথনের দিকে তাকাল।

    জনাথন হাঁপাচ্ছে, তার মুখে ক্লান্তি।

    "আমরা… কি জিতেছি?" সে ফিসফিস করে বলল।

    লুসি কোনো উত্তর দিল না।

    সে শুধু অনুভব করল… তার গলার শুষ্কতা আবার ফিরে এসেছে।

    তার দাঁত ধারালো হয়ে উঠছে।

    ড্রাকুলা মারা গেলেও… লুসি তো এখনও এক অর্ধেক-ভ্যাম্পায়ার!

    তবে কি সে আসলেই মুক্তি পেয়েছে?

    নাকি… এই রক্তের খেলা কখনোই শেষ হবে না?

    পর্ব ১৪: লুসির অভিশাপ

    ড্রাকুলার ধ্বংসের পর দুর্গে এক অস্বাভাবিক নীরবতা নেমে এল। বাতাস থমকে গেছে, যেন রাতও স্তব্ধ হয়ে গেছে এই ঘটনার পর।

    জনাথন মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল, নিঃশেষ হয়ে গেছে সে।

    কিন্তু লুসি…

    সে স্থির দাঁড়িয়ে ছিল, তার চোখ ধীরে ধীরে আবার সেই রক্তলাল আভায় ছেয়ে গেল।

    তিন নারীর প্রতিজ্ঞা

    ড্রাকুলার তিন সঙ্গিনী পেছনে সরে দাঁড়াল, তাদের চোখে ছিল ভয় আর দ্বিধা।

    "ড্রাকুলা নেই… কিন্তু আমরা এখনও আছি," মারিশা ফিসফিস করে বলল।

    "তাহলে এখন আমাদের রানী কে?" ক্যামিলার গলায় অদ্ভুত সুর কাঁপছিল।

    তারা ধীরে ধীরে লুসির দিকে তাকাল।

    লুসি আঁতকে উঠল, "না! আমি তোমাদের মতো নই!"

    তিনজন একসঙ্গে হাসল।

    "তুমি আমাদের মতোই, লুসি," ভেরোনিকা ফিসফিস করল, "তুমি আমাদের নতুন রানী!"

    জনাথনের আতঙ্ক

    জনাথন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, সে বুঝতে পারল, কিছু একটা ঠিক নেই।

    "লুসি! আমাদের ফিরে যেতে হবে! আমরা জিতেছি!"

    কিন্তু লুসির দৃষ্টি পাল্টে গেছে।

    তার ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল।

    "তুমি কি জানো, জনাথন?"

    সে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল, জনাথন তার চোখে দেখল সেই চিরন্তন রক্তপিপাসা।

    "আমি এখনও তৃষ্ণার্ত…"

    জনাথনের শরীরে শীতল স্রোত বয়ে গেল।

    তবে কি সে এক ভুলের মধ্যে ছিল?

    ড্রাকুলা মরে গেছে, কিন্তু…

    লুসি কি নতুন দানব হয়ে উঠছে?

    নতুন অধ্যায়ের শুরু?

    তিন নারী এবার লুসির চারপাশে দাঁড়াল।

    তারা একসঙ্গে ফিসফিস করল, "আমাদের নবজন্ম শুরু হলো!"

    লুসি আর্তনাদ করে উঠল, "না!!!"

    কিন্তু…

    তার দাঁত চকচক করছিল।

    রাতের অন্ধকারে, দুর্গের ধ্বংসস্তূপের মাঝে, নতুন এক অভিশাপের জন্ম হলো।

    ড্রাকুলার সমাপ্তি…

    কিন্তু এক নতুন "ড্রাকুলার গার্লফ্রেন্ড" এর উত্থান!

    পর্ব ১৫: লুসির রক্তের রাজত্ব

    লুসির মাথার ভেতর অদ্ভুত এক গুঞ্জন বাজছিল।

    ড্রাকুলার ধ্বংসের পরও তার হৃদয়ের গহীনে এক পিপাসা থেকে গেছে। রক্তের জন্য তৃষ্ণা।

    কিন্তু সে কী সত্যিই নতুন ড্রাকুলা হতে চায়?

    জনাথনের ভয়

    জনাথন এক ধাপ পেছনে সরল।

    তার চোখে ভয়।

    সে ফিসফিস করে বলল, "লুসি… তুমি তো আমাদের বাঁচাতে চেয়েছিলে। তুমি কি এখন তাদের মতো হয়ে যাবে?"

    লুসি চুপ করে রইল।

    তার মুখ শুকিয়ে গেছে, বুকের ভেতর অস্থিরতা।

    সে জানত, সে চাইলে এখনই তিন নারীকে হত্যা করে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

    কিন্তু…

    সে কি তা করতে পারবে?

    তিন নারীর ডাক

    মারিশা, ক্যামিলা, আর ভেরোনিকা ধীরে ধীরে এগিয়ে এল।

    তাদের ঠোঁটে কুটিল হাসি।

    "লুসি, তুমি আমাদের রানী। এই রাত তোমার। এই পৃথিবী তোমার।"

    তারা একসঙ্গে ফিসফিস করল, "এবার শাসন শুরু করো!"

    লুসি চোখ বন্ধ করল।

    তার রক্তের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল।

    সে কি জনাথনকে বাঁচিয়ে রেখে নিজেকে শুদ্ধ করবে?

    নাকি সে সত্যিই…

    ড্রাকুলার উত্তরসূরি হবে?

    শেষ সিদ্ধান্ত

    হঠাৎ…

    লুসি চোখ খুলল।

    তার চোখের রক্তাভ আভা মিলিয়ে গেছে।

    সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, "আমি তোমাদের মতো হব না!"

    তারপর…

    সে জনাথনের হাত ধরে দৌড় দিল!

    তিন নারী চমকে উঠল!

    "না! তুমি আমাদের ছেড়ে যেতে পারবে না!"

    তারা ধেয়ে এল, কিন্তু লুসি আর জনাথন তাদের আগে দরজা পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল!

    বাতাসে তখন প্রথম সূর্যের আলো ফুটছে।

    নতুন ভোর

    লুসি আর জনাথন দুর্গ থেকে বেরিয়ে এলো।

    তারা পেছনে তাকাল—অন্ধকার দুর্গের ভেতর তিন নারীর আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।

    সূর্যোদয়ের আলো তাদের ত্বকে লাগতেই তিনজন পেছনে সরে গেল।

    তারা জানে, রাত শেষ হয়ে গেছে।

    লুসি হাঁপাতে হাঁপাতে জনাথনের দিকে তাকাল।

    তার চোখে এখন আর রক্তপিপাসা নেই।

    সে হাসল।

    "আমি জিতেছি, জনাথন। আমি মুক্ত!"

    জনাথন তার হাত শক্ত করে ধরল।

    "হ্যাঁ, লুসি। আমরা দুজনেই মুক্ত।"

    শেষ… নাকি নতুন শুরু?

    ড্রাকুলার মৃত্যু হয়েছে।

    লুসি তার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে।

    কিন্তু…

    পৃথিবীতে কি সত্যিই অন্ধকার শেষ হয়ে গেছে?

    নাকি এই রাত আবার ফিরবে, অন্য কোনো রূপে?

    পর্ব ১৬: অভিশাপ কি সত্যিই শেষ?

    সূর্যের আলো পাহাড়ের চূড়ায় লেগেছে। জনাথন আর লুসি দাঁড়িয়ে আছে এক উঁচু প্রান্তরে, পেছনে ড্রাকুলার দুর্গ—যেখানে একসময় রক্তের রাজত্ব ছিল।

    লুসি ধীরে ধীরে শ্বাস ফেলল।

    "আমি কি সত্যিই মুক্ত, জনাথন?"

    জনাথন তার হাত শক্ত করে ধরল।

    "তুমি নিজেই তো বললে, তুমি জিতেছ। এখন আমরা নতুন জীবন শুরু করতে পারি!"

    কিন্তু…

    লুসির বুকের গভীরে এক কুয়াশার মতো অস্বস্তি রয়ে গেছে।

    অন্ধকারের ছায়া

    ড্রাকুলার তিন সঙ্গিনী এখনও দুর্গের ভেতরে রয়ে গেছে।

    তারা এখনো জীবিত।

    রাত আসবে আবার।

    তবে কি সত্যিই ড্রাকুলার রাজত্ব শেষ হয়েছে?

    মারিশা, ক্যামিলা, আর ভেরোনিকা দাঁড়িয়ে একসঙ্গে রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল।

    তাদের চোখে নতুন এক ষড়যন্ত্রের ছায়া।

    ভেরোনিকা ফিসফিস করে বলল, "ড্রাকুলা আমাদের শেষ শক্তি ছিল না।"

    মারিশা হাসল, "রক্তের তৃষ্ণা কখনো শেষ হয় না, বোন।"

    ক্যামিলা পেছনের ছায়ার দিকে তাকিয়ে বলল, "নতুন এক শক্তি আসছে… আরও ভয়ংকর।"

    লুসির ভয়ের কারণ

    লুসি হঠাৎ শিউরে উঠল।

    তার শরীরের ভেতর কিছু একটা যেন দপদপ করছে।

    তার দাঁত… এখনও স্বাভাবিক হয়নি!

    সে আয়নায় নিজের মুখ দেখল।

    তার চোখের ভেতরে লুকিয়ে আছে সেই লাল আভা… খুব হালকা, কিন্তু স্পষ্ট!

    জনাথন কিছু বুঝতে পারল না।

    সে লুসির কাঁধে হাত রাখল।

    "চলো, বাড়ি ফিরে যাই।"

    লুসি আস্তে আস্তে মাথা নড়াল।

    কিন্তু তার মন একটাই প্রশ্ন করছে—

    সে কি সত্যিই মুক্ত?

    নাকি এই অভিশাপ… আজীবন তার রক্তে বয়ে চলবে?

    পর্ব ১৭: নতুন ড্রাকুলা—ড্যানিয়েলের জন্ম

    অন্ধকার দুর্গের গভীরে, যেখানে ড্রাকুলা একদিন রক্তের রাজত্ব করেছিল, সেখানে এক নতুন শক্তির জন্ম হতে চলেছে।

    ড্রাকুলার তিন সঙ্গিনী—মারিশা, ক্যামিলা, আর ভেরোনিকা—তাদের চুল এলোমেলো হয়ে গেছে, চোখে আগুনের মতো অদ্ভুত জ্বলন।

    তারা দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন পাথরের কফিনের সামনে।

    এটি কোনো সাধারণ কফিন নয়…

    এটি সেই কফিন, যেখানে জন্ম নিতে চলেছে নতুন ড্রাকুলা।

    ড্যানিয়েলের পুনর্জন্ম

    ক্যামিলা ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এলো।

    তার হাতে এক রূপার পাত্র, যার ভেতর কালো রঙের গাঢ় রক্ত।

    সে পাত্র থেকে কয়েক ফোঁটা রক্ত ছিটিয়ে দিল কফিনের ওপরে।

    আর সেই মুহূর্তেই…

    পুরো দুর্গ কেঁপে উঠল!

    কফিনের ঢাকনা ধীরে ধীরে সরতে লাগল।

    ভেতর থেকে একটা শ্বাস ফেলার শব্দ এল—গভীর, ভারী, আর অদ্ভুতভাবে অশুভ।

    কফিনের ভেতর শুয়ে আছে এক যুবক, যার ত্বক বরফের মতো সাদা, আর চোখ দুটি গভীর, লালচে কালো।

    সে ধীরে ধীরে উঠে বসল।

    ড্যানিয়েলের পরিচয়

    ভেরোনিকা ফিসফিস করে বলল, "আমাদের প্রভু ফিরে এসেছেন!"

    মারিশা মাথা নিচু করে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে বলল, "আপনাকে স্বাগতম, ড্যানিয়েল… আপনি এখন ড্রাকুলার উত্তরসূরি।"

    ড্যানিয়েল তার হাতের দিকে তাকাল।

    তার হাত শক্তিশালী, নখগুলো তীক্ষ্ণ, তার ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি।

    সে ধীরে ধীরে বলল, "আমি… ড্রাকুলা?"

    ক্যামিলা এগিয়ে এসে মাথা নত করল, "আপনি আমাদের রাজা।"

    ড্যানিয়েল হাসল, কিন্তু সেই হাসিতে ছিল ভয়ানক কিছু একটা।

    "তাহলে… আমার প্রথম শিকার কে?"

    লুসির নতুন বিপদ

    এই সময়…

    অনেক দূরে, জনাথন আর লুসি লন্ডনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

    কিন্তু হঠাৎ করেই লুসির বুক ধক করে উঠল।

    তার মনে হলো, কোথাও কোনো নতুন অন্ধকার জন্ম নিচ্ছে।

    সে জনাথনের দিকে তাকাল।

    "আমাদের সমস্যা শেষ হয়নি, জনাথন। আমি অনুভব করতে পারছি… কিছু একটা ভয়ংকর আসছে!"

    নতুন দানবের উত্থান

    ড্যানিয়েল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।

    তার মুখে এক ঠাণ্ডা, নিষ্ঠুর হাসি।

    সে সামনে এগিয়ে এল, তার চারপাশে তিন নারী চুপচাপ দাঁড়িয়ে।

    ড্যানিয়েল ফিসফিস করে বলল,

    "ড্রাকুলা চলে গেছে… কিন্তু আমি এসেছি।"

    "এবার… রাত আবার আমার হবে!"

    পর্ব ১৮: ড্যানিয়েলের প্রথম শিকার

    ড্যানিয়েল দাঁড়িয়ে আছে দুর্গের অন্ধকার চত্বরে, তার চোখ দুটি জ্বলছে গভীর লাল আলোয়। তার ঠোঁটের কোণে এক ঠাণ্ডা, হিমশীতল হাসি।

    মারিশা, ক্যামিলা, আর ভেরোনিকা একসঙ্গে এগিয়ে এলো।

    "আপনি প্রস্তুত, প্রভু?" মারিশা ফিসফিস করে বলল।

    ড্যানিয়েল তার দীর্ঘ, তীক্ষ্ণ নখগুলোর দিকে তাকাল।

    তার কণ্ঠস্বর গভীর ও ভারী, "আমি তৃষ্ণার্ত। সময় হয়েছে আমার প্রথম শিকারের।"

    লন্ডনের রাত

    লন্ডনের রাস্তায় তখন গভীর রাত।

    বাইরে কুয়াশা, বাতাসে একটা অদ্ভুত ঠান্ডা শিহরণ।

    একজন তরুণী ধীর পায়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল।

    তার নাম এলিনা ওয়েস্টউড।

    সে জানত না, তার পেছনে একটা ছায়া নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে।

    ড্যানিয়েলের আক্রমণ

    এলিনা হঠাৎ থমকে দাঁড়াল।

    তার মনে হলো, কেউ যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে।

    সে ঘুরে তাকাল… কিন্তু কিছু দেখল না।

    কিন্তু পরের মুহূর্তেই…

    একটা কালো ঝড়ের মতো কিছু তার সামনে নেমে এলো!

    ড্যানিয়েল!

    তার চোখ দুটি রক্তের মতো লাল, মুখে শিকার ধরার উন্মাদনা।

    এলিনা চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু কিছুই বেরোল না।

    ড্যানিয়েলের ঠান্ডা হাত তার গলায় স্পর্শ করল।

    সে আস্তে আস্তে ফিসফিস করে বলল, "চুপ করো… এটা বেশি সময় লাগবে না।"

    তার ধারালো দাঁত চকচক করল…

    লুসির ভয়ানক স্বপ্ন

    এই সময়…

    লুসি হঠাৎ কেঁপে উঠে জেগে উঠল!

    তার হৃদয় ধকধক করছে।

    সে জানত না কেন, কিন্তু মনে হচ্ছিল, কোথাও কেউ ভয়ানক কিছু ঘটাচ্ছে।

    তার চোখ বন্ধ করতেই এক মুহূর্তের জন্য সে দেখতে পেল…

    এক অন্ধকার চোখ, এক রক্তাক্ত হাসি, আর এক তরুণীর চিৎকার।

    সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, "ড্রাকুলা ফিরে এসেছে!"

    জনাথন চমকে উঠল।

    "কী বললে, লুসি?"

    নতুন দানবের রাজত্ব শুরু

    লন্ডনের রাত কাঁপছে।

    এলিনার নিথর দেহ পড়ে আছে রাস্তায়।

    তার গলায় দুটো গভীর ছিদ্র—রক্ত শুষে নেওয়া হয়েছে।

    একটা কালো ছায়া ছাদের ওপরে উঠে দাঁড়াল।

    ড্যানিয়েল।

    তার ঠোঁটে লেগে আছে তাজা রক্তের স্বাদ।

    সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

    "এটাই আমার শুরু… রক্তের রাত আবার ফিরে এসেছে! 

    পর্ব ১৯: লুসির প্রতিশোধের শপথ

    লুসি দরজার সামনে থমকে দাঁড়াল।

    তার পুরো শরীর কাঁপছে।

    সে চোখ বন্ধ করল, আর তখনই সেই ভয়ানক দৃশ্য আবার দেখতে পেল—

    একজন তরুণীর নিথর দেহ, রক্তশূন্য, ফ্যাকাশে… আর তার ওপরে দাঁড়িয়ে এক কালো চোখের দানব।

    ড্যানিয়েল!

    ড্রাকুলা সত্যিই ফিরে এসেছে!

    জনাথনের দ্বিধা

    জনাথন এগিয়ে এলো, তার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।

    "লুসি, তুমি কি ঠিক আছো?"

    লুসি মাথা নাড়ল।

    "না, আমি ঠিক নেই। আমি অনুভব করতে পারছি, জনাথন… নতুন ড্রাকুলা জন্ম নিয়েছে। আর সে শিকার শুরু করেছে!"

    জনাথন চুপ করে রইল।

    ড্রাকুলাকে পরাজিত করার পর তারা ভেবেছিল, সব শেষ হয়ে গেছে।

    কিন্তু না।

    অন্ধকার কখনোই সত্যিকারের শেষ হয় না।

    প্রথম পদক্ষেপ

    "আমাদের আবার লড়াই করতে হবে," লুসি বলল।

    জনাথন দ্বিধায় পড়ে গেল।

    "কিন্তু কিভাবে? ড্যানিয়েল সম্পর্কে তো আমরা কিছুই জানি না!"

    লুসির চোখে আগুন জ্বলে উঠল।

    "আমি জানি কোথায় যেতে হবে।"

    ভ্যান হেলসিং-এর পুরোনো বন্ধু

    লুসি আর জনাথন রওনা দিলেন এক গোপন জায়গায়—

    ড. রিচার্ড আব্রামস-এর কাছে।

    সে একসময় প্রফেসর ভ্যান হেলসিং-এর সহকারী ছিল এবং এখনো রহস্যময় শক্তির বিরুদ্ধে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

    রাত গভীর হওয়ার আগে তারা পৌঁছালেন এক পুরোনো লাইব্রেরিতে, যেখানে রিচার্ড আব্রামস তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।

    "তোমরা এসে গেছো," আব্রামস বলল।

    জনাথন বিস্মিত হয়ে বলল, "আপনি জানলেন কিভাবে?"

    রিচার্ড গম্ভীর স্বরে বলল, "কারণ আমি অনুভব করতে পারছি, অন্ধকার আবার জেগে উঠেছে।"

    ড্যানিয়েলের গোপন ইতিহাস

    আব্রামস তাদের সামনে এক পুরোনো বই খুলল।

    "ড্যানিয়েল শুধু ড্রাকুলার উত্তরসূরি নয়… সে আরও বেশি শক্তিশালী।"

    লুসি হতবাক হয়ে বলল, "মানে?"

    "ড্রাকুলার মৃত্যুর আগে, সে এক বিশেষ রক্তের অভিশাপ দিয়েছিল," আব্রামস বলল।

    "এই অভিশাপ শুধু একজনকে দিতে পারে—যে তার থেকেও ভয়ানক হবে।"

    জনাথন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, "তাহলে কি ড্যানিয়েল ড্রাকুলার থেকেও শক্তিশালী?"

    আব্রামস ধীরে মাথা নাড়ল।

    "হ্যাঁ। এবং সে শুধু রক্ত পান করে না… সে আত্মা শুষে নেয়!"

    প্রতিশোধের শপথ

    লুসির হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল।

    "তাহলে আমাদের তাকে থামাতেই হবে!"

    আব্রামস বলল, "তুমি কি সত্যিই প্রস্তুত?"

    লুসি চোখ বন্ধ করল, এক মুহূর্ত ভেবে নিল… তারপর তার চোখ খুলল।

    তার চোখে ভয় নেই, আছে শুধু প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা।

    "আমি একবার অভিশাপের মুখ থেকে ফিরেছি। কিন্তু এবার আমি ভয় পাব না।"

    "ড্যানিয়েল… আমি আসছি!"
    পর্ব ২০: রক্তপিশাচের ফাঁদ

    লন্ডনের এক অন্ধকার অলিগলি।

    পথচারীরা একে একে হারিয়ে যাচ্ছে।

    কেউ একজন নিঃশব্দে শিকারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে…

    ড্যানিয়েল।

    তার চোখ দুটি গভীর অন্ধকারে জ্বলছে।

    তার ঠোঁটের কোণে এক তৃষ্ণার্ত হাসি।

    হঠাৎ করেই সে বাতাসে একটা পরিচিত গন্ধ পেল—

    রক্ত!

    কিন্তু এই গন্ধ সাধারণ মানুষের নয়…

    এটা আলাদা, অদ্ভুতভাবে শক্তিশালী।

    ড্যানিয়েলের ভ্রু কুঁচকে গেল।

    "এটা কিসের গন্ধ?"

    লুসির পরিকল্পনা

    অন্যদিকে, লুসি, জনাথন, আর ড. রিচার্ড আব্রামস একটা পুরোনো গির্জার ভেতরে দাঁড়িয়ে।

    তাদের সামনে একটা ছোট্ট সোনার শিশি।

    ড. আব্রামস বললেন, "এটা পবিত্র রক্ত। শুধু সাধারণ রক্ত নয়, এই রক্তে অভিশাপ আছে। যদি ড্যানিয়েল একবার এটা পান করে, তাহলে তার শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে।"

    জনাথন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, "কিন্তু আমরা তাকে কিভাবে এই ফাঁদে ফেলবো?"

    লুসির ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল।

    "আমি জানি কিভাবে।"

    শিকারের সন্ধানে ড্যানিয়েল

    ড্যানিয়েল অলিগলি ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল, যখন সে এক তরুণীকে দেখতে পেল।

    সে একা দাঁড়িয়ে আছে এক গ্যাসলাইটের নিচে।

    তার লম্বা, ঢেউ খেলানো চুল বাতাসে উড়ছে।

    সে নিঃসঙ্গ দেখাচ্ছে…

    কিন্তু তার গন্ধ!

    ড্যানিয়েলের চোখ চকচক করে উঠল।

    এত আকর্ষণীয় রক্তের গন্ধ সে আগে কখনো পায়নি।

    সে এগিয়ে এলো, নিঃশব্দে।

    তরুণী ধীরে ধীরে মুখ তুলল…

    লুসি!

    ড্যানিয়েলের মুখে এক শয়তানি হাসি ফুটল।

    "তুমি আবার এসেছো? এবার পালাবে না?"

    লুসি ঠান্ডা কণ্ঠে বলল, "আমি পালাব না। বরং এবার আমি এসেছি তোমাকে শেষ করতে!"

    ফাঁদ সক্রিয় হয়

    ড্যানিয়েল হেসে উঠল।

    "তুমি আমাকে শেষ করবে? হাস্যকর! আমি ড্রাকুলার উত্তরসূরি! তোমার মৃত্যু এখন অবধারিত!"

    সে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল…

    ঠিক তখনই, লুসি তার হাত তুলল, আর একটা ছোট শিশি ছুঁড়ে মারল ড্যানিয়েলের দিকে!

    শিশিটা ভেঙে গেল, আর সেই পবিত্র রক্ত ড্যানিয়েলের মুখে ছিটকে পড়ল!

    ড্যানিয়েল চিৎকার করে উঠল!

    তার শরীরের ত্বক ফেটে যেতে লাগল, ধোঁয়া বেরোতে লাগল, যেন আগুনে পুড়ছে!

    ড্যানিয়েলের ধ্বংস নাকি নতুন শক্তি?

    ড্যানিয়েল মাটিতে পড়ে গেল, তার হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।

    "এই কী করলে তুমি?! এটা কী?"

    ড. আব্রামস ছায়া থেকে বেরিয়ে এলো।

    "এটা তোমার জন্য তৈরি করা হয়েছে, ড্যানিয়েল। পবিত্র রক্তের অভিশাপ। এবার তোমার শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে!"

    ড্যানিয়েলের শরীর কাঁপছে।

    কিন্তু…

    হঠাৎ করেই কিছু একটা পরিবর্তন হতে থাকল!

    তার শরীর পুড়ছে, কিন্তু সাথে সাথে সে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে!

    তার চোখ পুরোপুরি কালো হয়ে গেল!

    তার নখ আরও লম্বা হলো!

    সে উঠে দাঁড়াল।

    তার মুখে এক বিকৃত হাসি।

    "তোমরা ভেবেছিলে, এই অভিশাপে আমি শেষ হয়ে যাবো?"

    "না! বরং এটা আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে!"

    লুসি আতঙ্কিত হয়ে পিছিয়ে গেল!

    জনাথন হতবাক!

    ড. আব্রামস ফিসফিস করে বললেন, "আমরা ভুল করেছি… আমরা তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছি!"

    ড্যানিয়েল হেসে উঠল।

    তার কণ্ঠস্বর এখন আরও গভীর, আরও ভয়ংকর।

    "এবার আমি আসল খেলাটা শুরু করবো!"

    পর্ব ২১: ড্যানিয়েলের পুনর্জন্ম

    গভীর রাত।

    লন্ডনের আকাশে কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে।

    শূন্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, যেন প্রকৃতি নিজেই আতঙ্কিত!

    বাতাসে একটা অদ্ভুত শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে…

    ড্যানিয়েল মারা গেছে।

    কিন্তু…

    সে কি সত্যিই শেষ হয়ে গেছে?

    ভেরোনিকা, ক্যামিলা, আর মারিশার পরিকল্পনা

    ড্রাকুলার তিন সঙ্গিনী—ভেরোনিকা, ক্যামিলা, আর মারিশা—এক অদ্ভুত পুরোনো গুহায় দাঁড়িয়ে।

    তারা তিনজনেই কালো পোশাকে ঢাকা, হাতে লাল রঙের একটা প্রাচীন গ্রন্থ।

    ভেরোনিকা বইয়ের পাতাগুলো উল্টে বলল, "ড্যানিয়েল মারা গেছে… কিন্তু আমরা তাকে ফিরিয়ে আনবো!"

    ক্যামিলা ফিসফিস করে বলল, "আমরা যদি এই অভিশপ্ত মন্ত্র পড়ি, তবে সে ফিরে আসবে, আগের থেকেও ভয়ংকর হয়ে!"

    মারিশা ধীরে ধীরে হাসল।

    "তাহলে দেরি কেন? শুরু করা যাক!"

    অন্ধকারের মন্ত্র

    তারা তিনজন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে প্রাচীন মন্ত্র পাঠ করতে লাগল।

    "রক্ত থেকে জন্ম, রক্তে মৃত্যু, রক্ত দিয়েই পুনর্জন্ম…
    অন্ধকারের সন্তান, ফিরে এসো!
    ড্রাকুলার উত্তরসূরি, আবার জাগো!"

    মাটির নিচ থেকে অদ্ভুত কম্পন শুরু হলো।

    চারপাশে বাতাসের গতি বাড়তে লাগল।

    হঠাৎ…

    গুহার মাঝখানে একটা কালো আলো বিস্ফোরিত হলো!

    চারপাশের সব কিছু কেঁপে উঠল!

    ড্যানিয়েলের প্রত্যাবর্তন

    ধোঁয়ার ভেতর থেকে একটা অবয়ব দেখা দিল।

    একটি পুরুষ…

    তার গায়ের চামড়া বরফের মতো ঠান্ডা, চোখ দুটি অন্ধকারে জ্বলছে।

    সে ধীরে ধীরে মাথা তুলল।

    তার ঠোঁটে এক শয়তানি হাসি।

    ড্যানিয়েল ফিরে এসেছে!

    কিন্তু এবার সে আর আগের মতো নেই।

    সে আরও শক্তিশালী।

    আরও ভয়ংকর!

    সে ধীরে ধীরে বলল, "আমি ফিরে এসেছি… এবং এবার আমাকে কেউ থামাতে পারবে না!"

    পর্ব ২২: লন্ডনের আকাশে ড্যানিয়েলের আতঙ্ক

    লন্ডন, রাত ৩টে।

    শহর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

    কিন্তু বাতাসের ভেতর একটা অদ্ভুত অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ছে।

    ঠান্ডা হাওয়া বইছে… যেন কোনো শীতল মৃত্যুপুরীর দরজা খুলে গেছে।

    অদ্ভুত অন্ধকার

    হঠাৎ করেই লন্ডনের আকাশ কালো হয়ে গেল!

    চাঁদের আলো মুছে গেল, তারার ঝলকানি হারিয়ে গেল।

    চারপাশ অন্ধকারে ঢেকে গেল।

    শুধু একটা শব্দ শোনা গেল—

    পাখার ঝাপটানি!

    শত শত বাদুড় একসঙ্গে উড়ে যাচ্ছে শহরের দিকে!

    কিন্তু…

    এগুলো সাধারণ বাদুড় নয়।

    এগুলো ড্যানিয়েলের দূত!

    ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটে রক্তপাত

    ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটের এক গলিতে এক যুবক দাঁড়িয়ে ছিল।

    তার নাম জেমস কার্টার।

    সে রাতের ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছিল।

    হঠাৎ করেই তার কাঁধে কিছু একটা এসে পড়ল।

    সে চমকে উঠে দেখল…

    একটা কালো বাদুড়!

    তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে লাল আলোয়।

    তারপর…

    বাদুড়টা বদলে গেল!

    একটা দীর্ঘ ছায়া জন্ম নিল!

    একটা পুরুষ অবয়ব!

    ড্যানিয়েল!

    ড্যানিয়েলের শিকার

    জেমসের মুখ দিয়ে একটা শব্দও বেরোলো না।

    ড্যানিয়েল ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এলো।

    তার ঠোঁটে এক রক্তপিপাসু হাসি।

    "ভয় পেয়ো না…" ড্যানিয়েল ফিসফিস করে বলল।

    "এটা কেবল শুরু!"

    তার ঠান্ডা আঙুল জেমসের গলায় স্পর্শ করল…

    তারপর…

    এক মুহূর্তের মধ্যেই জেমসের নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

    তার গলা থেকে রক্ত ঝরছে!

    শহরের আতঙ্ক

    এক রাতের মধ্যেই পাঁচজন মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেল!

    রাস্তায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল!

    "লন্ডনের আকাশে মৃত্যু নেমে এসেছে!"

    পত্রিকাগুলো এই খবর ছাপতে লাগল।

    কিন্তু কেউ জানত না, এটা কার কাজ।

    লুসির ভয়

    লুসি আর জনাথন খবর শুনেই বুঝতে পারল…

    ড্যানিয়েল ফিরে এসেছে!

    আর এবার সে আগের চেয়ে আরও ভয়ংকর!

    জনাথন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, "আমরা কি এবারও তাকে থামাতে পারবো?"

    লুসি ধীরে ধীরে বলল, "আমাদের থামাতেই হবে… নইলে পুরো লন্ডন ধ্বংস হয়ে যাবে!"

    কিন্তু…

    তারা কি জানে, ড্যানিয়েল এবার আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে?

    পর্ব ২৩: ড্যানিয়েলের রক্তের রাজত্ব

    লন্ডন, রাত ১২টা।

    টেমস নদীর ধারে এক ভয়ংকর দৃশ্য।

    শহরের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক কালো অবয়ব।

    তার দীর্ঘ চুল বাতাসে উড়ছে।

    তার চোখ দুটি অন্ধকারের মতো গভীর, লাল আগুনে জ্বলছে।

    ড্যানিয়েল।

    সে একে একে শহরের দিকে তাকাল।

    তার ঠোঁটে এক শয়তানি হাসি।

    "এবার এই শহর আমার!"

    ভিক্টোরিয়া স্টেশনের রক্তক্ষয়ী রাত

    এক দম্পতি ট্রেন ধরার অপেক্ষায় ছিল।

    চারপাশ ফাঁকা, শুধু হলুদ লাইটের ম্রিয়মাণ আলো জ্বলছিল।

    হঠাৎ বাতাস ভারী হয়ে গেল।

    ঠান্ডা অনুভব করল তারা।

    "তোমারও কি ঠান্ডা লাগছে?" যুবকটি তার সঙ্গিনীর দিকে তাকিয়ে বলল।

    কিন্তু…

    তার সঙ্গিনী আর সেখানে নেই!

    সে মুহূর্তে পেছনে তাকাতেই দেখল—

    ড্যানিয়েল তার সঙ্গিনীর গলা চেপে ধরে রেখেছে!

    তার চোখ বিস্ফারিত!

    যুবকটি দৌড়াতে চাইল, কিন্তু তার পা জমে গেল।

    ড্যানিয়েল শুধু হাসল।

    তারপর…

    চোয়াল খুলে দিল এক কামড়!

    এক মুহূর্তের মধ্যেই মেয়েটির নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল!

    যুবকটি আর চিৎকার করতে পারল না।

    কারণ…

    ড্যানিয়েল এবার তার দিকে তাকিয়েছে।

    "এখন তোমার পালা!"

    শহরের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে

    পরের দিন সকালে পত্রিকার শিরোনাম—

    "লন্ডনে আতঙ্ক! এক রাতেই ৭ জনের মৃত্যু! প্রত্যেকের শরীর রক্তশূন্য!"

    জনগণ আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে।

    পুলিশ বুঝতে পারছে না, কারা এই হত্যাকাণ্ড করছে!

    কিন্তু…

    লুসি আর জনাথন জানত।

    তারা জানত, এটা ড্যানিয়েলের কাজ।

    ড্যানিয়েল কী চায়?

    ড্যানিয়েল দাঁড়িয়ে ছিল এক অন্ধকার ছাদের ওপর।

    শহরের আলো তার নিচে ঝলমল করছিল।

    কিন্তু সে শুধু একটাই জিনিস চাইছিল—

    আরও রক্ত!

    আরও শক্তি!

    এই শহর তার শাসন করবে।

    এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা…

    পর্ব ২৪: ড্যানিয়েলের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ও কাউন্ট ড্রাকুলার প্রত্যাবর্তন

    লন্ডন, গভীর রাত।

    এক নির্জন গির্জার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে ড্যানিয়েল।

    তার চোখ দুটো গভীর লাল আলোয় জ্বলছে।

    চারপাশ নিস্তব্ধ।

    শুধু বাতাসের মাঝে অদ্ভুত এক গুঞ্জন…

    ড্যানিয়েলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভেরোনিকা, ক্যামিলা, ও মারিশা।

    তিন রক্তপিশাচী, ড্রাকুলার অনুগত সঙ্গিনী।

    তারা জানে, ড্যানিয়েল এবার কিছু পরিকল্পনা করছে—একটা ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা!

    ড্যানিয়েলের ঘোষণা

    ড্যানিয়েল ধীরে ধীরে বলল,

    "এই শহর আমাদের! কিন্তু শুধু লন্ডন যথেষ্ট নয়!"

    "আমরা গোটা ইউরোপের নিয়ন্ত্রক হবো! মানুষের রক্ত আমাদের শক্তি বাড়াবে!"

    ভেরোনিকা হেসে বলল, "আমরা কাকে প্রথম আক্রমণ করবো?"

    ড্যানিয়েল এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল—

    "আমরা কাউন্ট ড্রাকুলাকে ফিরিয়ে আনবো!"

    ক্যামিলা বিস্মিত হয়ে বলল, "কিন্তু ড্রাকুলা তো ধ্বংস হয়ে গেছে!"

    ড্যানিয়েলের ঠোঁটের কোণে এক শয়তানি হাসি ফুটে উঠল।

    "ড্রাকুলা অমর। আমি জানি, তাকে কিভাবে ফিরিয়ে আনতে হয়!"

    ড্রাকুলার কবরের সন্ধান

    ড্যানিয়েল জানত, কাউন্ট ড্রাকুলার শেষ চিহ্ন কোথায় আছে।

    ট্রান্সিলভানিয়ার এক প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসস্তূপের নিচে ড্রাকুলার শেষ রক্তের ফোঁটা রয়ে গেছে!

    সে যদি সেই রক্ত সংগ্রহ করতে পারে, তবে এক অশুভ মন্ত্রের মাধ্যমে ড্রাকুলাকে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব!

    ভ্রমণ ট্রান্সিলভানিয়ায়

    ড্যানিয়েল আর তার তিন সঙ্গিনী যাত্রা করল ট্রান্সিলভানিয়ার দিকে।

    পুরোনো দুর্গের ভেতর ঢুকতেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি তাদের গ্রাস করল।

    চারপাশ অন্ধকার, বাতাস ভারী, আর মাটির নিচ থেকে যেন কারো শ্বাস-প্রশ্বাস শোনা যাচ্ছে!

    ড্যানিয়েল ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে পাথরের মেঝে খুঁড়তে লাগল…

    ড্রাকুলার রক্ত

    একটা পুরোনো কফিনের ভেতর কিছু শুকনো ধুলো আর একটা ছোট শিশি পড়ে আছে!

    ড্যানিয়েল শিশিটা তুলে আনল।

    ভেতরে রক্ত!

    কাউন্ট ড্রাকুলার রক্ত!

    ড্যানিয়েলের চোখ জ্বলে উঠল।

    সে ফিসফিস করে বলল, "ড্রাকুলা… এবার ফিরে এসো!"

    অন্ধকারের জন্ম

    ড্যানিয়েল মন্ত্রপাঠ শুরু করল—

    "অন্ধকারের অধিপতি, মৃত্যুর রাজা, রক্তের সম্রাট—তোমার অনুগত সন্তান তোমাকে আহ্বান করছে!
    তোমার রক্ত আবার জাগুক, তোমার শক্তি আবার ফিরে আসুক!"

    আকাশ কালো হয়ে গেল!

    বাতাসে বিদ্যুৎ চমকাল!

    ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠল পুরো দুর্গ!

    কাউন্ট ড্রাকুলার প্রত্যাবর্তন

    কফিনের ভেতর থেকে এক লম্বা, কালো পোশাক পরা অবয়ব ধীরে ধীরে উঠে এল।

    তার চোখ জ্বলছে ভয়ংকর রক্তিম আলোয়!

    তার মুখে তীক্ষ্ণ দাঁত চকচক করছে!

    ড্যানিয়েল শ্বাস আটকে তাকিয়ে আছে।

    কাউন্ট ড্রাকুলা ফিরে এসেছে!

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে বলল,

    "কে আমাকে জাগালো?"

    ড্যানিয়েল এক হাঁটু গেড়ে বলল, "আমি, ড্যানিয়েল। আমি চাই, আমরা একসঙ্গে পুরো বিশ্ব শাসন করি!"

    ড্রাকুলা হেসে উঠল।

    "তবে এবার সত্যিই রক্তের রাজত্ব শুরু হবে।

    পর্ব ২৫: ড্রাকুলা ও ড্যানিয়েলের শাসন

    ট্রান্সিলভানিয়া, মধ্যরাত।

    ড্রাকুলা তার বিশাল দুর্গের উঁচু টাওয়ারে দাঁড়িয়ে আছে।

    তার লম্বা কালো চুল বাতাসে উড়ছে, রক্তলাল চোখ দুটো গভীর অন্ধকারে জ্বলছে।

    তার পাশে দাঁড়িয়ে ড্যানিয়েল।

    নিচে দাঁড়িয়ে ভেরোনিকা, ক্যামিলা, মারিশা—ড্রাকুলার তিন অনুগত সঙ্গিনী।

    ড্রাকুলার ঘোষণা

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে বলল,

    "বহু বছর আমি ঘুমিয়ে ছিলাম… কিন্তু এবার সময় এসেছে।"

    ড্যানিয়েল হেসে বলল, "আমরা একসঙ্গে পুরো ইউরোপের শাসন নেব!"

    ড্রাকুলা তাকিয়ে বলল, "শুধু ইউরোপ কেন? পুরো পৃথিবী আমাদের হবে!"

    তারা একে একে নিজেদের পরিকল্পনা সাজাতে লাগল।

    প্রথম টার্গেট: লন্ডন

    ড্যানিয়েল জানত, লন্ডনকে জয় করাই প্রথম ধাপ।

    কেননা লন্ডনেই ড্রাকুলাকে শেষবার পরাজিত করা হয়েছিল।

    "আমরা যদি লন্ডন দখল করতে পারি, তাহলে মানুষ জানবে—ড্রাকুলা ফিরে এসেছে!"

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে বলল, "লন্ডনকে রক্তে ভাসিয়ে দাও!"

    ভয়ের রাতের শুরু

    লন্ডনের আকাশে এক ঝাঁক বাদুড় উড়ে গেল।

    শহরটা অদ্ভুতভাবে ঠান্ডা হয়ে উঠল।

    জনাথন আর লুসি বুঝতে পারল, কিছু একটা খুব ভয়ঙ্কর আসতে চলেছে।

    গির্জায় গোপন সভা

    লুসি, জনাথন, আর ভ্যান হেলসিং একটি গির্জায় গোপন সভায় বসেছে।

    ভ্যান হেলসিং বলল, "ড্রাকুলা ফিরে এসেছে, এটা নিশ্চিত।"

    জনাথন বলল, "আমরা কিভাবে ওদের থামাবো?"

    ভ্যান হেলসিং গভীরভাবে চিন্তা করে বলল,

    "ড্রাকুলাকে শেষ করতে হলে তার হৃদয়ে বিশুদ্ধ রূপোর ছুরি ঢোকাতে হবে!"

    লুসি ধীরে ধীরে বলল,

    "তবে এবার শুধু ড্রাকুলা নয়, ড্যানিয়েলও আমাদের বিরুদ্ধে!"

    ড্রাকুলার প্রথম হামলা

    লন্ডনের রাস্তায় রাতের বেলা অদ্ভুত কিছু ঘটতে শুরু করল।

    মানুষ একে একে নিখোঁজ হতে লাগল।

    রাতের বেলা কেউ রাস্তায় নামলেই সকালে তার রক্তশূন্য দেহ পাওয়া যাচ্ছে!

    পুলিশ কিছুই বুঝতে পারছে না।

    রাজপ্রাসাদে ভয়ঙ্কর আক্রমণ

    এক রাতে ড্রাকুলা আর ড্যানিয়েল লন্ডনের রাজপ্রাসাদ-এর দিকে এগিয়ে গেল।

    ড্রাকুলা হেসে বলল, "এই শহরের অধিপতি এখন আমি!"

    ড্যানিয়েল তার বাদুড়ের বাহিনী ছেড়ে দিল!

    গোটা শহর আতঙ্কে কাঁপতে লাগল।

    জনাথন বনাম ড্যানিয়েল

    জনাথন আর লুসি রাজপ্রাসাদে পৌঁছাল।

    ড্যানিয়েল সামনে এসে দাঁড়াল।

    তার ঠোঁটে শয়তানি হাসি।

    "তুমি কি আমাকে আবার হারানোর স্বপ্ন দেখছো, জনাথন?"

    জনাথন তলোয়ার উঁচিয়ে বলল, "তোমাকে এবার শেষ করবো!"

    ড্যানিয়েল হেসে উঠল,

    "এইবার তোমাদের কারও পক্ষে আমাকে থামানো সম্ভব নয়!"

    ড্রাকুলার রাজত্ব কি শুরু হবে?

    ড্রাকুলা এবার নিজেই সামনে এসে দাঁড়াল।

    তার রক্তিম চোখে অদ্ভুত এক শক্তি খেলে গেল।

    "মানুষের যুগ শেষ। এবার রাতের রাজারা শাসন করবে!"

    তবে কি সত্যিই ড্রাকুলা ও ড্যানিয়েল লন্ডন দখল করতে পারবে?

    জনাথন, লুসি, আর ভ্যান হেলসিং কি পারবে তাদের থামাতে?

    পর্ব ২৬: ড্যানিয়েলের বিশ্বাসঘাতকতা!

    লন্ডন, মধ্যরাত।

    শহরটা এখন প্রায় ড্রাকুলার দখলে।

    মানুষজন আতঙ্কে ঘরবন্দি।

    গির্জাগুলো বন্ধ, আর রাতের বেলা রাস্তায় নামলেই… নিখোঁজ!

    ড্যানিয়েল ও ড্রাকুলার শাসন শুরু হতে চলেছে।

    কিন্তু…

    ড্যানিয়েলের মনে অন্য কিছু চলছে।

    ড্যানিয়েলের লুকানো উচ্চাকাঙ্ক্ষা

    সে জানে, ড্রাকুলা শক্তিশালী, কিন্তু সে অমর নয়।

    তার একটা দুর্বলতা আছে—বিশুদ্ধ রূপোর অস্ত্র!

    ড্যানিয়েলের ইচ্ছে শুধু লন্ডন নয়, পুরো পৃথিবী দখল করা!

    কিন্তু ড্রাকুলা থাকলে, সে কখনও সত্যিকারের রাজা হতে পারবে না।

    তাই ড্যানিয়েলের মনে একটা নতুন পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে…

    ভেরোনিকার সন্দেহ

    ভেরোনিকা একদিন গভীর রাতে ড্যানিয়েলকে একা দেখতে পেল।

    সে কাউন্ট ড্রাকুলার বিশ্রামের কক্ষে ঢুকছিল।

    ভেরোনিকা চুপচাপ তাকে অনুসরণ করল।

    ড্যানিয়েল ড্রাকুলার কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।

    তার হাতে একটা রূপোর ছুরি!

    ভেরোনিকা চোখ কপালে তুলল!

    "তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাও?"

    ড্যানিয়েল ধরা পড়ে গেল।

    কিন্তু সে ভয় পেল না।

    বরং হেসে বলল,

    "হ্যাঁ! কারণ ড্রাকুলা থাকলে, আমরা শুধু তার দাস হয়েই থাকবো! কিন্তু আমি চাই, আমি হই রাতের রাজা!"

    ভেরোনিকা ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে গেল।

    "তুমি জানো না, ড্রাকুলাকে ধোঁকা দিলে তার পরিণতি কী হতে পারে!"

    কিন্তু ড্যানিয়েল নির্ভয়ে বলল,

    "এবার আমার সময়। আর কাউকে আমি ভয় পাই না!"

    ড্যানিয়েল বনাম ভেরোনিকা

    ভেরোনিকা রাগে ফুঁসে উঠল।

    সে ড্যানিয়েলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল!

    কিন্তু ড্যানিয়েল তৈরি ছিল।

    সে এক হাতে ভেরোনিকার গলা চেপে ধরল।

    তার চোখ রক্তলাল হয়ে উঠল।

    "তুমি এখন আমার পথে বাধা দিচ্ছো? তবে মরতে হবে!"

    ড্যানিয়েল এক ধাক্কায় ভেরোনিকাকে দূরে ছুড়ে দিল।

    সে দেওয়ালের সঙ্গে আছড়ে পড়ে নিস্তেজ হয়ে গেল!

    ড্যানিয়েলের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা

    এবার ড্যানিয়েল জানে, সে খুব বেশি সময় পাবে না।

    ড্রাকুলা জেগে ওঠার আগেই তাকে শেষ করতে হবে!

    সে ধীরে ধীরে কফিনের কাছে এগিয়ে গেল…

    তার হাতে চকচক করছে রূপোর ছুরি!

    সে কফিনের ঢাকনা খুলল…

    কিন্তু…

    হঠাৎ একটা হিমশীতল কণ্ঠ ভেসে এল—

    "তুমি কি ভেবেছো, আমি ঘুমিয়ে আছি?"

    ড্যানিয়েল হতভম্ব!

    ড্রাকুলার চোখ খুলে গেছে!

    সে ধীরে ধীরে উঠে বসেছে!

    তার ঠোঁটে এক ভয়ংকর হাসি।

    "তোমার মতো বেইমানদের আমি অনেক দেখেছি, ড্যানিয়েল!"

    ড্যানিয়েলের মুখ শুকিয়ে গেল।

    ড্রাকুলা এবার কী করবে?

    ড্যানিয়েল কি বাঁচতে পারবে

    পর্ব ২৭: ড্রাকুলার প্রতিশোধ!

    ড্যানিয়েলের শরীর জমে গেল।

    তার হাতে রূপোর ছুরি, কিন্তু সে নড়তে পারছে না।

    ড্রাকুলা উঠে দাঁড়িয়েছে, তার রক্তলাল চোখ জ্বলছে ক্রোধে।

    ড্রাকুলার ক্রোধ

    "তুমি কি সত্যিই ভেবেছিলে, আমাকে হত্যা করতে পারবে?"

    ড্রাকুলার কণ্ঠ গভীর, শীতল, অথচ আগ্নেয়গিরির মতো ভয়ানক।

    ড্যানিয়েল দ্রুত ছুরিটা চালাতে চাইল, কিন্তু ড্রাকুলা হাত বাড়াতেই…

    সে এক ঝটকায় ড্যানিয়েলের হাত থেকে ছুরি ছুঁড়ে দিল!

    ড্যানিয়েলের মনে ভয় ঢুকে গেল।

    ড্রাকুলার সামনে সে এখনও শিশু মাত্র!

    ভেরোনিকার প্রতিশোধ

    হঠাৎ পেছন থেকে একটা বিকট গর্জন শোনা গেল।

    ভেরোনিকা উঠে দাঁড়িয়েছে!

    তার চোখেও জ্বলছে রাগ!

    "তুমি বিশ্বাসঘাতক, ড্যানিয়েল! এবার তোমার শাস্তি হবে!"

    সে বজ্রের গতিতে ড্যানিয়েলের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

    ড্যানিয়েল নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করল, কিন্তু ভেরোনিকা তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল।

    তার লম্বা নখ ড্যানিয়েলের গলায় বসিয়ে দিল!

    ড্যানিয়েলের শেষ মুহূর্ত?

    ড্যানিয়েল বুঝতে পারল, এবার তার শেষ।

    সে ছটফট করছে, কিন্তু কিছুতেই মুক্ত হতে পারছে না।

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এলো।

    তার ঠোঁটে সেই শয়তানি হাসি—

    "তুমি চেয়েছিলে রাতের রাজা হতে? এখন দেখো, যারা আমাকে ধোঁকা দেয়, তাদের কী পরিণতি হয়!"

    ড্রাকুলার হাত বাড়িয়ে দিল…

    সে ড্যানিয়েলের কপালে আঙুল রাখতেই…

    ড্যানিয়েলের পুরো শরীর ভয়ংকর ব্যথায় কুঁকড়ে গেল!

    ভয়ংকর শাস্তি!

    ড্রাকুলা ধীরে ধীরে মন্ত্রপাঠ করল।

    ড্যানিয়েল আর্তনাদ করে উঠল!

    তার শরীর থেকে সমস্ত শক্তি বেরিয়ে যেতে লাগল।

    তার রক্ত শুকিয়ে যেতে লাগল!

    সে অনুভব করল, তার অমরত্ব হারিয়ে যাচ্ছে!

    সে ধীরে ধীরে এক সাধারণ মানুষের মতো হয়ে গেল!

    ড্রাকুলার ঘোষণা

    ড্যানিয়েল এবার নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।

    ড্রাকুলা তার দিকে তাকিয়ে বলল,

    "আমি তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দিলাম না। কারণ মৃত্যুই তোমার জন্য সহজ পথ।"

    "তুমি এখন এক সাধারণ মানুষ! কোনো ক্ষমতা নেই, কোনো শক্তি নেই! আর কখনোই রাতের শাসক হতে পারবে না!"

    ড্যানিয়েল শ্বাসকষ্টে কাঁপতে লাগল।

    ড্যানিয়েলের নির্বাসন

    ড্রাকুলা তার দিকে তাকিয়ে বলল,

    "এবার চলে যাও, এবং মানুষের মতো মরার জন্য প্রস্তুত হও!"

    ড্যানিয়েল তার নিঃশেষিত শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।

    সে জানে, এবার তার এখানে থাকার অধিকার নেই।

    সে অন্ধকার রাস্তায় একা রয়ে গেল…

    আর ড্রাকুলা আবার তার সিংহাসনে বসে পড়ল।

    "রাতের রাজত্ব এখন কেবল আমার 

    পর্ব ২৮: ইবলিসের অভিষেক!

    লন্ডন, ভোরবেলা।

    ড্যানিয়েলের নিথর দেহ অন্ধকার গলির একপাশে পড়ে ছিল।

    কোনো প্রাণ নেই, কোনো শক্তি নেই।

    শুধু নিস্তব্ধতা।

    কিন্তু…

    দূর থেকে দুটো ছায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে এল।

    স্যামুয়েল ও গ্যামুয়েল।

    ড্যানিয়েলের দুই ভাই।

    তারা সব দেখেছে।

    ড্রাকুলার নিষ্ঠুরতা।

    ড্যানিয়েলের অপমান।

    এবং এখন তারা প্রতিশোধ চাইছে!

    ড্যানিয়েলের দেহ নিয়ে যাত্রা

    দুই ভাই ড্যানিয়েলের দেহ কাঁধে তুলে নিল।

    শহরের নিঃশব্দ গলিপথ দিয়ে তারা অন্ধকার এক গুহার দিকে হাঁটতে লাগল।

    গুহাটার নাম "কালো দরজা"।

    এখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শয়তানের উপাসনা হয়ে আসছে।

    এখানেই তারা ডাকবে… ইবলিসকে!

    ইবলিসের ডাক

    গুহার ভেতরে ছিল এক প্রাচীন বেদি।

    চারপাশে পাথরের মূর্তি—শিংওয়ালা অদ্ভুত দানবের।

    স্যামুয়েল বলল, "সময় এসেছে। আমাদের রাজা জন্ম নেবে।"

    গ্যামুয়েল ছুরি বের করল।

    তারা তিনজন নিজেদের হাত কেটে রক্ত ছড়িয়ে দিল বেদির ওপর।

    শয়তানের জাগরণ

    এক মুহূর্ত নিস্তব্ধতা।

    তারপর…

    গোটা গুহা কেঁপে উঠল!

    বেদি থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে লাগল!

    একটা ভয়ানক গর্জন শোনা গেল!

    বাতাস ভারী হয়ে উঠল, যেন নরকের দরজা খুলে যাচ্ছে!

    "তোমরা আমায় ডাকছো?"

    এক গভীর, ভয়ংকর কণ্ঠস্বর বেজে উঠল।

    গুহার ধোঁয়ার ভেতর থেকে…

    ইবলিস!

    তার চোখ আগুনের মতো জ্বলছে।

    শরীর বিশাল, কালো, শিংওয়ালা, আর তার মুখে এক ভয়াবহ হাসি।

    ড্যানিয়েলের পুনর্জন্ম!

    স্যামুয়েল বলল, "আমাদের ভাইকে ফিরিয়ে দাও! কিন্তু এইবার সে হবে অজেয়!"

    গ্যামুয়েল যোগ করল, "আমরা তিনজন একসঙ্গে রাজত্ব করবো!"

    ইবলিস হেসে উঠল।

    "তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করা হলো… কিন্তু বিনিময়ে?"

    স্যামুয়েল চোখ বন্ধ করল, তারপর বলল, "আমাদের আত্মা নাও!"

    ইবলিস আরও জোরে হাসল।

    তার বিশাল হাত এগিয়ে এল…

    সে তিন ভাইয়ের রক্ত মিশিয়ে নিজের শরীরে স্পর্শ করল।

    এক বিশাল বিস্ফোরণ!

    ড্যানিয়েল ফিরে এলো!

    ড্যানিয়েলের চোখ খুলে গেল।

    কিন্তু এবার তার চোখ লাল নয়…

    নরকের আগুনের মতো সোনালি রঙের!

    সে উঠে বসলো।

    তার শরীর আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী!

    তার হাতের নখ শিকলের মতো লম্বা!

    তার মুখ থেকে বের হলো এক ভয়ানক গর্জন!

    স্যামুয়েল ও গ্যামুয়েল হাঁটু গেড়ে বলল,

    "স্বাগতম, রক্তের রাজা!"

    ড্রাকুলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ!

    ড্যানিয়েল এবার বলল,

    "ড্রাকুলা আমাকে অপমান করেছে… এবার আমি তার সম্রাজ্য পুড়িয়ে দেব!"

    সেই রাতেই, তিন ভাই বের হলো…

    তাদের সামনে অন্ধকার সাম্রাজ্য।

    তাদের পেছনে ইবলিসের অভিশাপ

    পর্ব ২৯: ড্রাকুলার দুর্গে রক্তের বন্যা!

    কার্পাথিয়ান পর্বতমালা, ড্রাকুলার দুর্গ।

    রাত গভীর।

    ড্রাকুলা তার সিংহাসনে বসে আছে।

    ভেরোনিকা পাশে দাঁড়িয়ে।

    ড্যানিয়েলকে পরাজিত করে সে নিশ্চিন্ত ছিল, কিন্তু হঠাৎ…

    অন্ধকারে তিন ছায়া

    গভীর রাতে দুর্গের দরজার সামনে দাঁড়ালো তিনটি ছায়ামূর্তি।

    ড্যানিয়েল, স্যামুয়েল, গ্যামুয়েল।

    তিনজনের চোখে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।

    তাদের শরীর থেকে বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া।

    ভেরোনিকা দুর্গের মিনার থেকে তাদের দেখেই চমকে উঠল!

    "এটা কীভাবে সম্ভব?"

    ড্যানিয়েল যে মারা গেছে, এ তো নিশ্চিত!

    তাহলে সে ফিরে এলো কীভাবে?

    ভেরোনিকা দ্রুত ড্রাকুলার দিকে তাকাল।

    "প্রভু, ড্যানিয়েল ফিরে এসেছে! এবং সে এখন আগের চেয়ে ভয়ঙ্কর!"

    ড্রাকুলা ধীর অথচ গম্ভীর স্বরে বলল,

    "আমি জানতাম, সে সহজে হার মানবে না।"

    যুদ্ধের ডাক!

    ড্যানিয়েল নিচ থেকে চিৎকার করে উঠল,

    "ড্রাকুলা! বেরিয়ে এসো! এবার তোমার শেষ সময় এসেছে!"

    ড্রাকুলার ঠোঁটের কোণে এক শয়তানি হাসি ফুটল।

    সে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল।

    দুর্গের দরজা খুলে গেল!

    ভেতর থেকে বেরিয়ে এল শত শত রাতের দানব!

    ভ্যাম্পায়ার সৈন্য, ছায়ামূর্তি, নেকড়ে মানব!

    ড্রাকুলার বাহিনী প্রস্তুত!

    ড্যানিয়েলও এক পা এগিয়ে এলো।

    তার পেছনে স্যামুয়েল আর গ্যামুয়েল দাঁড়িয়ে।

    তারা ইবলিসের অভিশাপ বয়ে নিয়ে এসেছে!

    প্রথম আঘাত!

    গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ল দুই পক্ষ!

    ড্যানিয়েল এক আঘাতে পাঁচজন ভ্যাম্পায়ার ছিন্নভিন্ন করল!

    গ্যামুয়েল এক লাফে দুর্গের প্রাচীরে উঠে গেল!

    স্যামুয়েল কালো আগুন ছুড়ে বিশাল একদল দানবকে পুড়িয়ে দিল!

    ড্রাকুলার প্রবল প্রতিরোধ

    কিন্তু ড্রাকুলাও চুপ করে নেই।

    সে নিজেই আকাশে উঠে দাঁড়াল।

    তার দুই হাত প্রসারিত হতেই…

    বিদ্যুৎ চমকাল!

    ভূমি কাঁপতে লাগল!

    মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে এলো মৃত ভ্যাম্পায়ার যোদ্ধাদের সেনাবাহিনী!

    ভেরোনিকার প্রতিশোধ

    ভেরোনিকা ছুটে এল ড্যানিয়েলের দিকে!

    তার হাতে বিশাল রূপোর তলোয়ার!

    "তোমাকে আমি শেষ করব, বিশ্বাসঘাতক!"

    ড্যানিয়েলও একপাশ থেকে তার কালো ছুরি বের করল।

    দুজনের মাঝে শুরু হল ভয়ংকর লড়াই!

    তলোয়ার ও ছুরির সংঘর্ষে আগুনের ফুলকি উড়তে লাগল!

    যুদ্ধ জমে উঠল!

    ড্রাকুলা বনাম ড্যানিয়েল।

    ভেরোনিকা বনাম গ্যামুয়েল।

    স্যামুয়েল বনাম একদল নেকড়ে মানব!

    রাতজুড়ে চলল রক্তের বন্যা!

    কে জিতবে?

    ড্রাকুলার শতাব্দীপ্রাচীন শক্তি, নাকি ইবলিসের অভিশাপ?

    পর্ব ৩০: রক্তের শেষ অধ্যায়

    কার্পাথিয়ান পর্বতমালা, ড্রাকুলার দুর্গ

    যুদ্ধ চলছে তীব্রতর।

    রাতের আকাশ কালো মেঘে ঢাকা, যেন প্রকৃতি নিজেই থমকে গেছে।

    ড্রাকুলার ভ্যাম্পায়ার সৈন্যরা একের পর এক পড়ছে ড্যানিয়েলের বাহিনীর হাতে।

    ড্যানিয়েলের শরীর জ্বলছে শয়তানের শক্তিতে, কিন্তু ড্রাকুলা সহজ প্রতিপক্ষ নয়।

    ড্যানিয়েল ও ড্রাকুলার চূড়ান্ত সংঘর্ষ

    ড্যানিয়েল বিশাল এক লাফে ড্রাকুলার সামনে এসে দাঁড়াল।

    তার হাতে কালো আগুনের ছুরি, যা ইবলিস তাকে দিয়েছে।

    ড্রাকুলা হাসল।

    "তুমি সত্যিই ভাবছো, আমাকে হত্যা করতে পারবে?"

    ড্যানিয়েল গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ল!

    ড্রাকুলাও বিদ্যুৎগতিতে আক্রমণ করল।

    তলোয়ার ও ছুরির সংঘর্ষে বজ্রপাতের মতো শব্দ হল!

    দুই অমর শক্তির লড়াইয়ে দুর্গের অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেল।

    ড্যানিয়েল ড্রাকুলার বুকে ছুরি বসিয়ে দিল!

    ড্রাকুলা চিৎকার করল!

    কিন্তু…

    ড্রাকুলাও ড্যানিয়েলের গলায় কামড়ে ধরল!

    মৃত্যুর পরিণতি

    ড্যানিয়েলের শরীর থেকে সমস্ত শক্তি বেরিয়ে যেতে লাগল।

    ড্রাকুলার বুকের ভেতর আগুন জ্বলে উঠল।

    দুজনেই বুঝল, তারা শেষ!

    ড্যানিয়েল ও ড্রাকুলা দুজনই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

    চারপাশে রক্তে ভেসে গেল দুর্গের ভেতর।

    ড্যানিয়েলের শেষ কথা

    স্যামুয়েল ও গ্যামুয়েল ছুটে এলো, কিন্তু তারা দেখল, ড্যানিয়েল নিথর হয়ে গেছে।

    ড্যানিয়েল শেষবারের মতো ফিসফিস করে বলল,

    "আমরা সবাই দানব... আমাদের পরিণতি এমনই হয়!"

    তারপর সে স্থির হয়ে গেল।

    ড্রাকুলার শরীর ধীরে ধীরে ধুলো হয়ে বাতাসে মিশে গেল।

    রাতের রাজা চিরতরে শেষ হয়ে গেল।

    যুদ্ধের সমাপ্তি

    ড্রাকুলা নেই।

    ড্যানিয়েলও নেই।

    গ্যামুয়েল আহত হয়ে বসে পড়ল।

    স্যামুয়েল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

    "আমরা যা হতে চেয়েছিলাম, সেটাই আমাদের ধ্বংস করল!"

    অন্ধকারের সমাপ্তি?

    ড্রাকুলার দুর্গ আগুনে পুড়তে লাগল।

    স্যামুয়েল ও গ্যামুয়েল চলে গেল অজানার উদ্দেশ্যে।

    তারা জানে, শয়তানের সঙ্গে চুক্তি করলে কেউই বেঁচে থাকতে পারে না।

    রাতের অন্ধকার আরেকবার শান্ত হল।

    তথ্যসূত্র:

    ১. ব্রাম স্টোকারের "Dracula" উপন্যাস, ১৮৯৭ – ড্রাকুলা চরিত্রের মূল উৎস।
    ২. মধ্যযুগীয় লোককাহিনি – ভ্যাম্পায়ার কিংবদন্তির উপর ভিত্তি করে চরিত্র ও কাহিনি নির্মাণ।
    3. ইসলামিক ও খ্রিস্টীয় শয়তানবিদ্যা – ইবলিসের অভিশাপের ধারণা।
    4. ইউরোপীয় ভ্যাম্পায়ার মিথ – ড্রাকুলার প্রতিশোধ ও রাতের রাজত্বের ধারণা।

    গল্প শেষ।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন