ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ দানীবাবুর শ্বাস উঠতে শুরু করল। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি। সাদা ফ্যাকাসে হয়ে আছে চরাচর। মেষলগ্নে চন্দ্র দুর্বল। শঙ্কু আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল, এবার গেলেই হয়।
ভাঙা জমিদারবাড়ির তেতলার এই ঘরখানাই যা একটু শক্তপোক্ত আছে। কড়ি বরগা খসে পড়েনি। ইলেকট্রিকের লাইন মাঝে মাঝে বিগড়ে গেলেও মোটের ওপর একটা পাখা ঘ্যাসঘ্যাঁস করে চলা অথবা একটা ষাট পাওয়ারের ছ্যাতলা পড়া টিউবলাইট জ্বালাবার জন্য বড়সড় কোনও ঝামেলা বাধায়নি। সবথেকে বড় কথা, দেওয়ালের ড্যাম্পও খুব বেশি নয়। দানীবাবুর দুর্বল ফুসফুসকে এতদিন তুতিয়ে পুতিয়ে পুষে রাখতে পারা যেত না যদি ছাদ বা দেওয়াল থেকে ড্যাম্প নামত। বড় বড় জানালা বন্ধ করে দাও, ব্যাস। রাক্ষুসে জোলো হাওয়া বাইরে দাঁড়িয়ে গজরাবে। পা আছড়াবে। কিন্তু ভেতরে ঢোকবার লাইসেন্স পাবে না। মোটা দেওয়ালের গায়ে জোরে জোরে লাথি মেরে হিংস্র রাগে পিছু হঠে যাবে আবার ।
কিন্তু আজ আর শেষরক্ষা হল না। দানীবাবুর গলা থেকে সাঁই সাঁই আওয়াজ উঠছে। চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। গ্যাঁ গ্যাঁ করে কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। পালঙ্কের একটা কাঠের ময়ূরের গলা শক্ত করে চেপে ধরলেন। শঙ্কু জল খাওয়াতে গেল, গলা দিয়ে নামল না। জলের গেলাস পাশের টেবিলে নামিয়ে রেখে শঙ্কু কর্তার মুখে ইনহেলারটা ধরল। প্রবল যন্ত্রণায় মাথা সরিয়ে নিলেন কর্তা। বোঝা গেল, নাকে লাগানোর ক্ষমতাটুকুও আর নেই।
শঙ্কু মোবাইল ফোন খুলল। দুর্বল সিগনাল দেখাচ্ছে। এই দুর্যোগ, তার মধ্যে আজকেই এমন বিপদে পড়তে হল?
রিং হয়েই চলেছে। এত ভোরে মানুষের জাগবার কথা নয়। তার ওপর বাদুলে প্রকৃতি গম গম করে ঘুম ডেকে আনে। মানুষ তখন মড়ার মত হয়ে যায়। হাঁ মুখ থেকে লালা গড়িয়ে বালিশ ভিজে যায়। নিঃশ্বাসের গতি ক্ষীণ হয়ে আসে। আধবোজা চোখে হরেক কিসিমের খোয়াব দেখে চলে রাতভোর। যে শিবু ডাক্তার রাত বারোটা পর্যন্ত নাকি রুগী দেখে ফেরে, তার পক্ষে এখন ওঠা আরোই অসম্ভব ব্যাপার।
কিন্তু কী ভাগ্যি, ফোন উঠিয়েছে ! ঘুমজলে ডুবে থাকা একটা গলা, আচ্ছন্নের মত বলল "হ্যালো"।
"আমি বলছি শিবুদাদা ! কর্তা তো গেল মনে হচ্ছে !" গলা নামিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বলল শঙ্কু।
ওপাশে একটু নীরব। সম্ভবত মাথা কাজ করতে সময় নিচ্ছে। তারপর শিবু ডাক্তার একটু সচেতন গলাতে বলে উঠল, "কেন রে? আবার কী হল?"
"শ্বাস উঠেছে। জল গড়াতে পারছে না। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরচ্ছে না। শেষ অবস্থা। তোমাকে আসতে হবে।"
"এই বুড়ো জ্বালিয়ে খেল !" বিরক্ত গলাতে বলল শিবু । "আমারও তো সত্তরের কাছে বয়েস গেল শোঙ্কে ! আমার কি শরীর স্বাস্থ্য বলে কিছু নেই? এই বাদলা ভোরে আসব কী করে ?"
"সে সব জানি না। এ তল্লাটে তুমি ছাড়া আর আছেটা কে ! হাসপাতালে আমি একা মানুষ কীভাবে নিয়ে যাব? আর যা অবস্থা, নিয়ে যেতে যেতেই তো মরে যাবে! তোমাকে আসতেই হবে শিবুদা !"
"আচ্ছা আচ্ছা, দেখছি। তুই রাখ এখন," খিটখিটানো স্বরে শিবু ডাক্তার ফোন রেখে দিল।
দানীবাবুর বাঁ পা-টা কাঁপছে। লাথি মারবেন নাকি? শঙ্কু পাছা এগিয়ে দিল। বরাবরের অভ্যেস বুড়োর। যখন খুব রেগে যান, বাঁ পা কাঁপতে থাকে। স্প্রিং-এর মত লাফিয়ে ওঠে মাঝে মাঝে। শঙ্কুকে তখন পাছা এগিয়ে দিতে হয়। দানী বাবু লাথি মারেন সপাটে । শঙ্কু গড়িয়ে পড়ে যায়। সেটা দেখে দানীবাবুর মেজাজ ঠিক হয়। যেদিন রাগ খুব বেশি থাকে, দুই তিনখানা লাথি শানাতে হয়।
আজকেও শঙ্কু এগিয়ে গেল এই আশায় যে হয়ত এতে কাজ দেবে। কিন্তু বুড়ো প্রায় অচৈতন্য। পা তোলবার মত জোরটুকুও নেই আর।
আর পারছে না শঙ্কু। গত তিনদিন সারা রাত জাগা। দানী বাবুর কখন ঘুম ভাঙে, কখন বাই ওঠে তার নেই ঠিক। হয়ত আকাশে ফটফটে জ্যোৎস্না, ঢেউ খেলানো হাওয়া আঁচড়ে নিলে ভেতর থেকে থকথকে আহ্লাদ উছলে উঠবে, ঠিক তখনই দানী বাবুর খেয়াল চাপল, তিনি রসময়ের পিঠে চেপে নদীর ধার ধরে ঘুরে আসবেন।
"যাবেন কী করে কর্তা? আপনার তো নিচে নামাই বারণ। হার্ট খারাপ, লাংসে জল--"
"আমার শরীর নিয়ে তোর কাছ থেকে জ্ঞান শুনব নাকি রে আবাগীর পুত? জিন চাপা শালা ! আজ রসময়কে ইছেমতির স্যাদলা বাতাস খাইয়ে আনব"।
"রসময় তো বললেই এক পায়ে খাড়া ! কিন্তু আপনি যেতে পারবেন না কর্তা । "
"চোপ !"
দরজা পর্যন্ত হেঁটেই বিরাশি বছরের দশাসই শরীরটায় হাঁফ ধরে যায়। হাপরের মত ওঠানামা করতে থাকে বুক। তার ওপর চোখেও প্রায় দেখতে পান না। হাতড়ে হাতড়ে শঙ্কুর কাঁধে ভর দিয়ে আবার পালঙ্কে ফিরে এসে শুয়ে পড়েন। হাঁফাতে হাঁফাতে বলেন "কুলোপানা চক্কর দিচ্ছে রে শোঙ্কে ! সব কিছু যেন দুলছে!" তারপর ছেলেমানুষের মত ভেউ ভেউ করে কাঁদেন, "আমার রসময়কে দেখা হল না আর ! যে দীঘি গুলো খুঁড়েছিলাম, আবাদগুলো বসালাম, সেগুলো সব শেয়াল কুকুরে লুটে খেল!"
দানীবাবুর বুকে হাত বুলোতে বুলোতে শঙ্কু সান্ত্বনা দেয়, "কিচ্ছু লোটেনি কর্তা। আমি আছি তো ! আমি থাকতে দীঘির জল এক ফোঁটাও কমবে না।"
"আর রসময়?"
"সে আস্তাবলের ভেতর দাপাচ্ছে, যেমন দাপায়। রোজ বিকেলে তার জন্য কাবলে ছোলা, জল আসে। মুনিষ এসে দলাই মলাই করে। আমি বিকেলবেলা তাকে নদীর পাশ ধরে হাঁটিয়ে আনি। রসময়ের গা কী কর্তা ! যেন মাখন। মাছি বসলে পিছলে যাবে। সে যখন টগবগ টগবগ করে, পায়ের পেশিগুলো লাফায়, দেখলে মনে হয় পাঁচ ছয় কেজি ওজনের কাতলা মাছ ঘাই মারছে।"
" যা, এখন গিয়ে দেখে আয় কী করছে। দেখে এসে আমাকে জানা"।
শঙ্কু আস্তাবলে আসে। ভাঙাচোরা ঘর, ডাই করে রাখা গোবরের স্তূপ, হুমড়ি খেয়ে পড়া দরজা আর বিনবিন মশার ঝাঁকের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিড়ি ধরায়। ধীরে সুস্থে টান মেরে শূন্য আস্তাবলে চক্কর কাটে। একটা ছেঁড়া কাঁথাকে ভাঁজ করে যত্নে একপাশে সরিয়ে রাখে। ছেঁড়া হলেও পুরনো দিনের দামী মাল। বাজারে এসবের কদর খুব।
ওপরে উঠে এসে বলে "দেখে এলাম। ঝিমোচ্ছিল। আমাকে দেখেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠল। নাক দিয়ে আওয়াজ বার করে গলাটা এগিয়ে দিল। আদর খেতে চায়। তবে আস্তাবলে বড্ড মশা। ওকে কামড়ায়, রক্ত খেয়ে নেয়। গরমও খুব। একটা ইলেকট্রিক লাইন টেনে ফ্যান চালিয়ে দিলে ভাল থাকবে। ব্যবস্থা করব নাকি?"
"হ্যাঁ কর। সিন্দুক টাকা নিয়ে নিস। তা হ্যাঁ রে, রসময় বেশি মোটা হয়ে যায়নি তো? তাহলে কিন্তু দৌড়তে পারবে না।"
"নাহ, মোটা কোথায় ! দিব্যি দীঘল ছিপছিপে আছে তো। কলকাতার ডাক্তারের ডায়েট মেনে খাওয়াচ্ছি। ছোলা, গুড়, বার্লি, খড়, সবজি সেদ্ধ--একদম নিক্তিতে মেপে।"
"কই, আজ একবারও তো ডাকল না !"
ঐ যাহ, শঙ্কু মনে মনে জিভ কাটে। টেপ রেকর্ডারটা আজ চালানো হয়নি। কয়েকটা ডাক আর খুরের আওয়াজ একটু বাদে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শোনাতে হবে। মুখে বলে, "ডাকবে কী করে ! ঝিমোচ্ছিল তো ! কাবলে ছোলাটার কোয়ালিটি ভাল নয় । ঝিমুনি ধরিয়ে দেয়। সামনের সপ্তাহে হাট থেকে এক নম্বরের ভাল ছোলা নিয়ে আসব। দাম একটু বেশি পড়বে কিন্তু ।"
"আনিস। যা টাকা লাগবে নিয়ে যাস।"
"তবে কর্তা, আপনার ঘোড়ার পেছনে বড্ড বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে এবার !"
"আমাকে খরচ দেখাতে আসবি না হারামজাদা ! চাকর চাকরের মত থাক। আমাদের বংশ কারা ছিল জানিস? এই বিশ্বাসপুর মৌজা, আর আশেপাশের কয়েক হাজার বিঘে জমি আমাদের ছিল। বারভূঁইয়াদের থেকে জমি আর খেতাব পেয়েছিল আমাদের পূর্বপুরুষ। আমার দাদুর পোষা বাঘ ছিল রে আবাগীর পুত ! তুই ছোটলোক চাকরের জাত, তুই কী বুঝবি এসবের ! একবার শরীরটা জুতের হোক," বলতে বলতে দানীবাবুর চোখ স্বপ্নময় হয়ে এল, মুখ হাসি হাসি, ধরা গলায় বললেন, "তখন রসময়ের পিঠে চড়ে বেরব। দেখবি, প্রজারা গড় হচ্ছে। চালকলা দিয়ে রসময়ের পায়ে সিঁদুর একে দিচ্ছে মেয়েছেলেরা। তখন গ্রাম কে গ্রাম আমার নামে, এই দানী কায়েতের নামে গড় করবে। যেখান যেখান দিয়ে রসময় হাঁটবে, সেখানে বাগান, পুকুর, মন্দির পত্তন হবে। মন্দিরের গায়ে লেখা থাকবে, দানসাগর মহীন বিশ্বেস। তখন হাতির কানের সাইজের আমে গাছ ভরে যাবে। মাছেদের পেটে ডিম আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে। তারাদের ভারে ঝুলে থাকবে আকাশ।" ঘুম ঘুম চোখে মন্ত্রের মত উচ্চারণ করে চলেন দানীবাবু,"রাজা, বুঝলি? আমরা হলাম রাজা। গরীব গুর্বোদের যে বুক দিয়ে আগলায় না, সে আবার রাজা কীসের!" শেষ কথাগুলো আর বোঝা যায় না। বিড়বিড় করে বকতে বকতে ঘুমের মধ্যে ঢলে পড়েন কর্তামশাই।
কড় কড় কড়াৎ শব্দে বাজ পড়ল একটা। হুড়মুড় করে পুরনো নারকোল পাতা খসে গেল। নির্জন বাড়ির পেছনের দিঘীর জল এখন উথালপাথাল। যদি বান এসে যায়, তাহলে দিঘীর তলায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা কুমীরটা এবার সোজা জমিদারবাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়বে। বহু বছর ধরে এই অঞ্চলে প্রবাদ, দিঘীতে নাকি একটা কুমীর আছে। কেউ তাকে দেখেনি, তবুও আছে। সে থাকুক। কথাটা হচ্ছে, এই অবিশ্রান্ত ঝড়-বৃষ্টিতে যদি বাড়ির কোনও ছাদ বা দালানের থাম আবার ভেঙে পড়ে, তাহলে বিপদ আরো বাড়বে।
শঙ্কু দানীবাবুর বুকে ম্যাসেজ করতে লাগল, আর বিড়বিড় করে বলল, "আর একটু সবুর করুন কর্তা। শিবু ডাক্তার চলে এল বলে"।
আর সবুর ! দানীবাবুর শেষ লগ্ন উপস্থিত, এটা একটা বাচ্চা ছেলেও এখন বুঝতে পারবে। সাড়া শব্দও আর দিচ্ছেন না। শুধু বুকের ভেতর থেকে মাঝে মাঝে একটা যান্ত্রিক গোঁ গোঁ আওয়াজ উঠছে। মেষলগ্ন। দুর্বল চন্দ্র। বাবা মহাদেব এলেও কর্তাকে এখন বাঁচানো কঠিন।
বস্তুত দানীবাবু যে তার নিজের বাবাও হতে পারত, সেই সম্ভাবনা অনেকবার মনে মনে খতিয়ে দেখেছে শঙ্কু। তার আসল বাবাকে মনেও পড়ে না। সে যখন তিন বছরের শিশু, তার জন্মদাতা বাপ দানীবাবুদের লেঠেল হিসেবে জমি দখলের দাঙ্গায় অংশ নিয়ে খুন হয়েছিল। বিশ্বস্ত লেঠেল খুন হবার পরেও কোথাও কোনও হেলদোল হয়নি। বরং তাদের সামান্য জমিটুকু সেই সময়ে দানীবাবু গাপ করে নেন । সেটা নাকি বাঁধা পড়ে ছিল বহু বছর। তাই বলে শঙ্কুরা যে না খেয়ে মরেছিল এমন নয়। শঙ্কুর বিধবা মা ছেলেকে নিয়ে এসে হত্যা দিয়ে পড়েছিল ঠাকুরদালানের সিঁড়িতে । দানীবাবু তখন ছাব্বিশ বছরের ভরন্ত জোয়ান পুরুষ। কী তাঁর স্বাস্থ্য! যেন ফেটে পড়ছে!। ধুতির ওপর পাতলা স্যান্ডো গেঞ্জি চাপিয়ে যখন বড় জামবাটি থেকে আম দুধ খেতে বসতেন, ঠাওর করা যেত না আম নাকি দানীবাবু, কার গায়ের রঙ বেশি জমকালো। মোটা গোঁফ। ঘরের দেওয়াল থেকে তখন হরিণের শিং, মরা বাঘের মাথা, তীরবিদ্ধ মোষেদের সার সার নিষ্পলক পাহারা।
কিন্তু তিন বছর বয়েস থেকেই জমিদারবাড়ির অন্দরে ভবিষ্যতের বিশ্বস্ত ভৃত্য হিসেবে অবাধ যাতায়াতটাই কারণ নয়। এমনকি শঙ্কুর বাবা মারা যাবার পর তার মা যে পরের বেশ কিছু বছর দানীবাবুর জলপাত্তর হিসেবে থেকে গেল, এবং সেই সুবাদে শঙ্কুকে দানীবাবু বেশ কিছুটা প্রশ্রয়ের চোখেই দেখতে শুরু করলেন, সেটাও বড় ব্যাপার নয়। তার মা নিজেও তখন ভরভরন্ত যুবতী। দানীবাবু নিজের পালঙ্কে আশ্রয় না দিলে শেয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খেত। শঙ্কুকে বড় হয়েও গ্রামের মধ্যে আওয়াজ শুনতে হয়েছে 'জলপাত্তরের ব্যাটা' বলে। তেমন কিছু খারাপ লাগে নি, কারণ ততদিনে তার পাছায় দানীবাবুর লাথির সম্মানচিহ্নের বঁড়শি পাকাপাকি বিঁধে যেতে শুরু করেছে। তার ওপর তখন জমিদারবাড়ি গমগম করছে। হাতিশালে শুধু হাতিটাই নেই। হ্যাঁ, জমিদারী প্রথাটা খাতায় কলমে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বটে । কিন্তু দানীবাবুর প্রতাপ কি তাই বলে নিভে যাবে? নামে বেনামে হাজার হাজার বিঘে জমি, সম্পত্তি, পুকুর, নারকেল গাছের গরিমাকে সামান্য কাগজ কলমের আইন মুছে দিতে পারে, এমন সাধ্য পৃথিবীর কোনও আদালতের আছে বলে শঙ্কুর মনে হয় না। সে অনায়াসে এই জমকালো প্রাসাদের দুর্গাপুজোয় দানী কায়েতের মা মা ডাক ছেড়ে জলভরা চোখে হুংকার, প্রজাপীড়ন, গ্রাম সংস্কার ও পরবর্তীকালে পঞ্চায়েত নামক ব্যবস্থাটিকে দুই আঙুলের ডগায় নৃত্যক্ষম করে তোলবার মায়ার ভেতর মায়া হয়ে মিশে গেল। কিন্তু সেটুকুও বড় কথা নয়।
বড় কথা হল, শঙ্কু দানী কায়েতকে ভালবেসেছে। যেদিন থেকে তার জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হয়েছে, সেদিন থেকেই দানী কায়েতের প্রতি এক প্রগাঢ় ভালবাসায় ডুবে আছে সে। এক সময়ে দানীবাবুকে নিজের বাবা ভাবত। এখন ষাট ছুঁই ছুঁই বয়েসে এসে দানী কায়েতকে নিজের সন্তান বলে মনে হয় তার।
মহীন বিশ্বাস নামটা বহুদিন হল কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। উদার হাতের জন্য, দান ধ্যান করা, ঋণ মকুব ইত্যাদির কারণে দানী কায়স্থ উপাধিটাই এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ। তা, উপযুক্ত নাম বটে ! কোন ভাগচাষীর মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, সে উপুড় হয়ে দালানে পড়ল। ব্যাস, তিরিশ হাজার টাকা করে দাও বরাদ্দ। বাসরাস্তায় বড় রোদ। চিন্তা কী? দানী কায়েতকে বললেই শেড আর বসার বেদী এসে হাজির। এরপর গরীব গুর্বোরা যদি দানী কায়েতের বুড়ো আঙুলের ধুলো তুলে নিয়ে এসে জিভে ঠেকায়, তার জন্য মহীন বিশ্বাসকে তুমি দোষ দিতে পারবে না।
আর ছোটলোকদের জন্য দানীবাবুর এক বুক ভালবাসাটাও দেখার মত। জমিদারী নেই তো কী ! অপারেশন বর্গার পর জমি গিয়েছে তো পরোয়া নেই। এরা তবুও তাঁর প্রজাই। বেয়াদপি করলে যেমন চাবুক মারা বা ঘর জ্বালিয়ে দেবার মত কাজে তিনি পিছ পা হবেন না, তা সেরকমও করেছেন অনেক, ঠিক তেমনই বিপদে তাঁর পায়ের তলায় জায়গা মিলবে না এমন তো নয় ! দানীবাবু স্বপ্ন দেখেন যে একদিন তাঁর সাম্রাজ্য রসময়ের পিঠে চড়ে ফেরত আসবে। আর তখন টগবগ টগবগ! মৌজা থেকে মৌজায়, সমস্ত পরগণা জুড়ে তখন রক্ষা কর্তা কে? কার নামে গভর্নমেন্ট থেকে বিডিও, দাগী ডাকাত থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, কার নাম শুনে কপালে হাত ঠেকাবে?
"কে যায়? কার ঘোড়া?"
"জানো না? দানী কায়েতের পক্ষীরাজ। নাম রসময়!"
"ওহ, দাঁড়াও দাঁড়াও। পায়ে তেল সিঁদুর পরিয়ে আসি। ধুলো নিয়ে মাথায় ঠেকালেও পুণ্যি!"
ঘরের মধ্যে অন্ধকার আর একটু জমাট বেধে আসল। ছাই রঙের মেঘের ভারে আকাশ ঝুলে পড়েছে। শঙ্কু জানালা অল্প খুলে বাইরে তাকাল। মহাপ্রলয় রে বাবা ! আজকেই সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাক। দানীবাবু আর নড়াচড়া করছে না।
শঙ্কু এই ছেলেমানুষ বুড়োকে ভালবাসে। ভালবাসে, কারণ প্রবল প্রতাপ এবং রাশি রাশি অর্থের মালিক হয়েও দানীবাবুর বাস্তব বোধ এতই কম যে সমস্ত কিছু খুইয়ে এখন নিঃস্ব হবার পথে। তাঁকে সারাজীবন ঠকিয়ে নিয়ে শঙ্কু গুছিয়ে বসল। তার সুদের কারবার ফুলে ফেঁপে উঠেছে। দুই ছেলের চালের আড়ত এবং মণিহারী দোকান। দোকানের নাম শঙ্কু পাঁজা প্রাইভেট লিমিটেড। প্রাইভেট লিমিটেড নামটা তার বড় পছন্দ, অর্থ না জানলেও। তাই ব্যবসার পেছনে গুঁজে দিয়েছে। পাশের গ্রামে দোতলা বাড়ি, ছেলেদের জন্য সেকেন্ড হ্যান্ড মোপেড। তার সুদের টাকা কলকাতাতেও খাটে। আর এই সবটুকুই হয়েছে দানী কায়েতকে দুয়ে। উঠতি বড়লোক হওয়া সত্বেও শঙ্কু এখনো দানী বিশ্বাসের চাকরের কাজ করে। অম্লান বদনে দানী বাবুর লাথি খায়। মাজা টনটন করে উঠলেও মুখ ফুটে বলে না কিছু।
"কর্তাবাবু, বহরমপুরের কাছে ঘোড়ার হাট বসেছে। নিয়ে আসি একটা ভাল দেখে শুনে? আপনাকে তো জিন চাপিয়ে বেরতে হবে আবার। বেতো ঘোড়াতে কি আর মানীর মান ইজ্জত থাকে?"
উত্তেজনায় জ্বলজ্বল চোখে বিছানায় উঠে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে কর্তাবাবু বলেন, " কালকেই বেলাবেলি রওনা দে। টাকার চিন্তা করিস না। তোর গিন্নিমার রূপোর বাসনগুলো গিয়ে বেচে আন। ছাতার মাথা পড়ে পড়ে নষ্টও হচ্ছে, কাজেও লাগছে না। আবার যখন পুজোতে নহবত লাগাব, নতুন করে কিনে নেব"।
"কিন্তু বাসন বেচতে বেচতে তো প্রায় শেষের মুখে। অত টাকা তো পাওয়া যাবে না"।
অবহেলায় দানীবাবু পাশ থেকে চেকবইটা ছুঁড়ে দেন। " যা লাগবে বসিয়ে নিস। সই করা আছে"।
"নাম কী রাখবেন কর্তা? বেশ জাঁকালো একটা নাম দিন।"
কর্তা মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলেন, "তোর ভরসায় কিবসে থেকেছি না কি রে বান্দার বাচ্চা? নাম অনেক আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। রসময়। "
"রসময়?"
"হ্যাঁ," আহ্লাদের ভঙ্গীতে কর্তা বিছানায় দোল খান, “কাকদ্বীপে সেই যেবার আমাদের জমিতে ১৩৫৩ সনে ধানলুঠ হল, আমার বাবা তাঁর সেরা লেঠেল পাঠিয়েছিলেন। সে একাই সাত জোয়ানের পাল্লা নিয়ে তাদের ভুঁয়ে লুটিয়ে দিয়েছিল। আয় শালা, কে নিবি দুই ভাগ ধান ! তার নাম ছিল রসময়। বুঝলি?"
কর্তাবাবু বোঝেন নি। কিছুই বোঝেন না। তিনি যখন বাদার জমিতে বসতি স্থাপনের স্বপ্নে মশগুল, ততদিনে এক এক করে সমস্ত জমি বিক্রি করে দিয়ে শঙ্কু নিজের ঘরের সিন্দুক ভর্তি করেছে। তিনি যখন সহিস মুনিষ মালী দারোয়ান সৈন্য অধ্যুষিত হয়ে সাম্রাজ্য নির্মাণ করছেন নিজের বিছানাতে, ভুতুড়ে জমিদারবাড়ি ছেড়ে সকলে চলে গিয়েছে। জনপ্রাণীও নেই। শুধু মাটি কামড়ে পড়ে আছে শঙ্কু। কারণ কর্তাবাবুর প্রতি তার প্রাণের টান।
"শঙ্কু, আজ তো লক্ষীবার। ঠাকুরঘর থেকে তো শাঁখ বাজল না?"
"শাঁখ বেজে গিয়েছে তো। আপনি শুনতে পান নি।"
"বললেই হল শুনি নি? নিচের দপ্তরে নায়েব বাবু বসবেন শাঁখ বাজলে তবেই। ঝি তখন চা দিয়ে যাবে"।
"নিচের ঝি পালিয়ে গেছে"।
কর্তার জীবন থেকে একটা লক্ষীবার ঝরে যায়।
তেল মশলা বিহীন খিচুড়ি রান্না করে দানীবাবুকে খাইয়ে নিজেও ওই ঘ্যাঁট একটু খেয়ে নেয় শঙ্কু প্রতিদিন। তারপর মেঝেতে শুয়ে পড়ে। তার ছেলেরা রাগারাগি করে। আড়ত, দোকানের হিসেবপত্র না সামলে এত মানী একটা লোক সারাজীবন ধরে এক ফোতো জমিদারের পেছন পেছন ঘুরল। শঙ্কু আমল দেয় না। ছেলেরা তো আর জানবে না, কত ধানে কত চাল হয় ! বৃষ্টিতে পুকুরপাড় যখন কাদা হয়ে থাকত, শঙ্কু শুয়ে পড়ত সটান। দানীবাবু তার পিঠের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতেন। আজ শঙ্কুর আড়তে আটজন জোয়ান মদ্দ কাজ করে। শঙ্কু জানেও না তাদের বাড়ি কোথায়। কাজ করো পয়সা নাও, ব্যাস। তবে অন্যায্য কাজ, অধর্মের সুবিধা শঙ্কু কখনো নেবে না। ওভারটাইম হলেই এক্সট্রা পয়সা। পুজোতে বোনাস। ছেলেরা কী করে জানবে, দানীবাবুর সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন !
বাইকের আওয়াজ কানে আসছে । শঙ্কু জানালা খুলল। শিবু ডাক্তার। কারোর একটা বাইক চেপে চলে এসেছে এই দুর্যোগেও। জয় মা !
দানীবাবুর দিকে ফিরে শঙ্কু বলল, "ডাক্তার এসেছে কর্তা। আর ভয় নেই। এবার সেরে উঠবেন।" দানীবাবু উত্তর দিলেন না। শঙ্কু ছুটে নিচে নেমে গেল।
শিবু ডাক্তার ঘরে ঢুকে কয়েক মুহূর্ত দানীবাবুর দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর হাতের নাড়ি তুলে আবার রেখে দিল। শঙ্কুর দিকে ফিরে বলল "এ তো মারা গেছে রে !"
"অ্যাঁ?"
"কতবার বললাম, নার্সিংহোমে দে। বুড়ো কথা শুনলে তো ! যাক, এখন দেখ কী করবি।"
ব্যাপারটা যদিও প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু শঙ্কু সম্ভবত ভেতরে ভেতরে বিশ্বাস করতে পারেনি দানীবাবু মারা যাবেন। আকস্মিকতার অভিঘাতে সে হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
শিবু ডাক্তার শঙ্কুর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, "আর কেঁদে কী করবি ! তোর তো বাবার থেকে কোনও অংশে কম ছিল না রে ! জানি সবই। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। মানী মানুষ বটে একখানা।"
কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল শঙ্কু, "মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে গেল গো শিবুদাদা ! আমি এখন বাঁচব কী নিয়ে?"
শিবু দীর্ঘশ্বাস ফেলল, "যেতে তো সকলকেই হবে রে ! আমি ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিচ্ছি। দেখ, শরিকদের কাউকে খবর দিয়ে আনাতে পারিস কি না। বুড়োর দিকে তো আর কেউ নেই, তাই না? নিঃসন্তান হওয়া যে কত বড় অভিশাপ রে শোঙ্কে, কী আর বলব ! শেষ সময়ে মুখে জল দেবার কেউ থাকবে না। তবু তুই ছেলের দায়িত্ব পালন করেছিস। শেষ জলটুকু তোর হাত দিয়েই গেল। বুড়ো তোকে আশির্বাদ করবে। নে, ওঠ। সৎকারের তো ব্যবস্থা করতে হয়, না কি? "
শঙ্কু ফোঁপাতে লাগল, "এ বাড়িতে কারোর বাইরে সৎকার হয়নি। বড় বাগানের পেছনে নিজেদের শ্মশান আছে। সেখানেই হবে।"
দানী বাবু মারা যাবার পরেও কয়েকদিন নিঝুম জমিদারবাড়িতেই থেকে গেল শংকু। মন ভাল নেই। তার ওপর এই বাড়ির একটা বিলি বন্দোবস্ত করতে হয়। স্টুডিও কোম্পানিকে বলা আছে, তারা এসে শুটিং করে যাবে। এছাড়া পিকনিকের জন্য ভাড়া দেওয়া যেতে পারে। সব শরিকই হয় কলকাতায়, না হয় বিদেশে। তারা কেউ বাড়ি নিয়ে চিন্তিত নয়। নিজের ভাগের টাকা পেলেই খুশি। শঙ্কু সকলের সঙ্গে কথাবলে একটা মধ্যস্থতার চেষ্টায় ছিল। সিনেমার জন্য ভাড়া দেবার প্রস্তাবে কেউ অরাজী
নয়। দানীবাবুকে এসব কথা বলা ভাবাও যেত না। হয়ত আদ্যিকালের দোনলা বন্দুকটা বার করে খুনই করে ফেলতেন। মানুষের মত মানুষ ছিলেন বটে ! তার মা যে এমন দেবতুল্য মানুষের জলপাত্র ছিল, এটা ভাবলেই শঙ্কুর বুকটা দেমাকে অল্প অল্প কেঁপে ওঠে এখনো।
স্টুডিও কোম্পানির সঙ্গে বোঝাপড়াতে নিজের কমিশন কত রাখবে, সে সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে শঙ্কু কর্তাবাবুর বিছানা পরিষ্কার করছিল। তিন দিন বাদে কাজ। কলকাতা থেকে কাল শরিক আসবে। কিন্তু সব দায়িত্ব শঙ্কুকেই নিতে হবে, যা দেখা যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন বৃষ্টির পর মেঘ কেটে গিয়ে ফটফটে জ্যোৎস্না বেরিয়েছে আজ। গাছের পাতা, ঝোপঝাড়, ভাঙা প্রাসাদ দুধেল আলোতে স্নান করে নিচ্ছিল। শঙ্কুর মনে পড়ল, এই রকম জ্যোৎস্নার রাত্রিগুলোতে কর্তাবাবুর সাধ জাগত, তিনি পায়ে হেঁটে বাদা অঞ্চলের হাল হকিকত খোঁজ খবর নিয়ে আসবেন। ইছেমতির পার ধরে হাঁটতে হাঁটতে দূরে নিজের গ্রামের দিকে তাকাবেন। খোঁড়া দীঘিগুলোকে দেখবেন। মন্দিরের মাথায় পিছলে পরা চাঁদকে দুই হাতে ধরবেন।
কীসের একটা শব্দ হচ্ছে না? নিঝুম রাত বলে কানে বেশি লাগছে।
দক্ষিণের জানালাটা খুলে দিল শঙ্কু। এখান থেকে বড়বাগান ছাড়িয়ে স্পষ্ট ইছেমতির চর অবধি বহুদূর দেখা যায়।
মুখ বাড়িয়ে শঙ্কু দেখতে গেল, কোথায় শব্দ হচ্ছে। পাখপাখালি দেয়ালা করছে নাকি? পাশের ভাঙা ঘরগুলোতে বড্ড চড়াইয়ের উৎপাত। স্টুডিও পার্টি আসবার আগে সাফ করতে হবে।
সঙ্গে সঙ্গে তার নাক ভরে উঠল দুধেল ধানের নরম শিষের গন্ধে। শঙ্কু চমকে উঠল। এই রাত্রে ভুতুড়ে গন্ধ আসে কোথা থেকে?
আর ঠিক তখনই তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। হতভম্ব মুর্তির মত জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রইল সে।
বড়বাগানের ধার ঘেঁসে, যেখানে কর্তাবাবুকে পোড়ানো হয়েছিল, তার ঝোপঝাড়ের সামনে ঘাস খাচ্ছে একটা ঘোড়া ।
শঙ্কু চোখ কচলে আবার তাকাল।
কুয়াশায় ঝকমক করছে ঘোড়াটার গা। পেষল শরীর থেকে ছিটকে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। পায়ের ভঙ্গী স্থির, কিন্তু সচকিত। যেন ছিলায় টান পড়লেই ছুটে যাবে তীরের বেগে।
দানী কায়েতের অস্থিভস্মের কাছে দাঁড়িয়ে সে ঘাস খাচ্ছে। অপেক্ষায়, কখন তার পিঠে এসে বসবেন সম্রাট।
থরথর করে কাঁপতে থাকা শঙ্কুর চোখের সামনে দিয়ে মুহূর্তরা ঝরে গেল। পার্শে মাছের পেটের মত সাদা জ্যোৎস্না বড় বাগানে ছড়ানো শেয়াল, বেড়াল আর মাটির নিচে নিহত রাখালদের লাশের সাদা ফকফকে মুণ্ডুর ভেতর দিয়ে চলাচল করছিল। শঙ্কু পাঁজা বুঝছিল না অফলা আকাশ থেকে গর্ভথোড়ের ম ম করা বিয়োনো ধানের গন্ধ নেমে আসছে কেন। রসময়ের এখন লাফিয়ে উঠতে আর কোনও বাধাই নেই।