এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপর বাংলা

  • লং মার্চের ডায়েরি - দ্বিতীয় কিস্তি

    নাসরিন সিরাজ লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ২৮ নভেম্বর ২০১০ | ৮৩০ বার পঠিত

  • প্রেস ব্রিফিং এর পরের দিন, অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় কমিটি একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। প্রতিবাদের কারণ হচ্ছে, সরকারের সাথে বহুজাতিক তেল কোম্পানীগুলোর সাথে যে উৎপাদন-বন্টন চুক্তি (পিএসসি-২০০৮) আছে সেটা সরকার বাতিল তো করছেই না, বরং এর মধ্যে তারা তৃতীয় পক্ষের কাছে (কেয়ার্ন এনার্জি-হেলিবার্টনকে) বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া জ্বালানী মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহিতা ও আইনের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) বিল ২০১০ উত্থাপন করা হয়েছে।

    বরাবরের মত এবারও জাতীয় কমিটির সমাবেশের আয়োজন করা হয় পল্টনের মুক্তাঙ্গনে। মুক্তাঙ্গন হল লন্ডনের হাইড পার্ক। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের অন্যতম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-৭৭ সালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পল্টন ময়দান বন্ধ করে এই খোলা জায়গাটি বরাদ্দ করেন। ঢাকার জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি, জেনারেল পোস্ট অফিসের পেছনে, গণ শৌচাগারের ধার ঘেঁষে মোটামুটিভাবে পাঁচ কাঠার মত এক টুকরো জায়গা -- মুক্তাঙ্গন। এর এক পাশে সচিবালয়, আরেক পাশে বায়তুল মোকাররম মসজিদ। ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ ও মার্কিন পতাকা পোড়াতে আমি একদল বামপন্থী সংগঠকের সাথে যুক্ত হই। এর আগে এই প্রাঙ্গণটি নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়নি। নামের সৌন্দর্যের কারণেই বোধহয় মুক্তাঙ্গনে গিয়ে আমি খোলামেলা একটা জায়গা দেখবো বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে মুক্তাঙ্গন হল যে সব পুরুষেরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নন, তাদের মূত্রত্যাগের ও রেন্ট-এ-কারের দোকানদারদের গাড়ি পার্কিং-এর জায়গা। জায়গাটার সীমানা ঘেঁষে কিছু গাছ আছে, যেগুলো সবুজ ছায়া তৈরী করেছে। নিয়মিত রাজনৈতিক সমাবেশ হয় বলে মুক্তাঙ্গনে নিরাপত্তা বিধানের জন্য সবসময় এক দল পুলিশ থাকেন। তাদের জিরানোর জন্য একটা পাকা ছাউনীও আছে সেখানে।

    মুক্তাঙ্গনের প্রবেশ পথের ধারে গাছের ছায়ায় নীচু রেলিং-এ বসে চা খাওয়া যায়। চা ছাড়াও স্টলটিতে বিস্কুট, সিগারেট ও পান পাওয়া যায়। স্টলটির ধার ঘেঁষে রয়েছে একজন 'পাপকর্নঞ্চ দোকানদার। ক্রমাগত চুল্লি জ্বালিয়ে সেই তরুণ দোকানদার ভেজে যাচ্ছেন ভুট্টার খই। আর পাঁচটা দিনের মত সমাবেশ শুরুর আগে চা পান, ধুমপান, পারষ্পরিক কুশল বিনিময়, সাংগঠনিক খবরাখবর বা মোবাইল টেলিফোন নম্বর আদান-প্রদানে সময় কাটে নেতা-কর্মীদের।

    'যারা আসার, তারা সবাই চলে এসেছে' এ রকম একটা পরিস্থিতি হলে সমাবেশের কাজ শুরু হয় সেদিন। সমাবেশের ব্যপারটা বেশ সাদামাটা বলা চলে। সমাবেশের জন্য বানানো ব্যনারটা ধরে নেতৃবৃন্দ দাঁড়িয়ে পড়েন মুক্তাঙ্গন সংলগ্ন ফুটপাথের ওপর। আর আমরা যারা কর্মী ও শ্রোতা, তারা দাঁড়াই রাস্তায়। বক্তারা মাইকে বক্তৃতা শুরু করেন। এর মধ্যে সিপিবি'র এক দল কর্মী মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়ে সমাবেশের আকারটা বড় করে করেন। সম্ভবত: তাঁরা প্রথমে সিপিবি অফিসে জমায়েত হয়েছিলেন। তাদের অফিস মুক্তাঙ্গনের কাছেই, খুব বেশী হলে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ দূরত্ব।

    সমাবেশে কে কি বক্তব্য দিলেন আমি সেদিন সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছিলাম না। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন পূর্ব পরিচিতর সাথে দেখা হলে আমি তাদের সাথেই গল্প জুড়ে দিই। ১৯৯০ এর শেষের দিকে 'যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ মঞ্চ' নামে একটি মোর্চার সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে এদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা। এদের মধ্যে অনেক মেয়ে আবার 'বিপ্লবী নারী সংহতি' নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এদের ওপর জাতীয় কমিটি দায়িত্ব দিয়েছে অন্যান্য নারী সংগঠনের নেত্রীদের সাথে যোগাযোগ করার। কারণ এর কিছুদিন পরেই লং মার্চ-এর প্রস্তুতি নিয়ে নারী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা রয়েছে।

    শ্যামলী শীল এইসব মেয়েদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বিভিন্ন নারী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করছিলেন। বলা ভাল যে, 'নারী সংগঠনগুলো এনজিও হয়ে গেছে' এ রকম একটা মূল্যায়ন থাকার কারণে জাতীয় কমিটির শরীক দল হিসেবে বাংলাদেশের 'নাম-ডাক ওয়ালা' নারী সংগঠনগুলো (বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সম্মিলিত নারী সমাজ, কর্মজীবি নারী, নারী প্রগতি -- ইত্যাদি) গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

    শ্যামলী তার সদ্য ফোনালাপ প্রসঙ্গে একজন নেত্রীর সাথে আলাপ করছিলেন। তার কাছে সেই নেত্রী অভিযোগ করেছেন যে, একদিকে জাতীয় কমিটি তাদের আন্দোলনে সকলের অংশগ্রহণ চাইছে, আবার অন্যদিকে শরীক দলের বাইরে থেকে যারা আসছেন, কমিটি তাদেরকে যথাযথ সম্মান দিচ্ছে না। যেমন, জাতীয় কমিটির সর্বশেষ কনভেনশনে এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও তাদের মূল মঞ্চে ডাকা হয়নি; তাদের সংগঠন যে কনভেশনে উপস্থিত রয়েছে সেকথাটুকুও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। ফলে নারী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে যে মতবিনিময় সভা হতে যাচ্ছে, সেখানে 'বড়' নারী নেত্রীরা আসবেন কি না-- এ নিয়ে শ্যামলী শঙ্কিত।

    তবে এতে শ্যামলীর দন্ত বিকশিত হাসি একটু কমেনি। সে হচ্ছে নাছোড়বান্দা ধরণের মেয়ে। দায়িত্ব দেওয়া হলে সর্বোচ্চ করণীয় কাজগুলো সে করেই। আমাদের আলাপচারিতার মাঝখানে শ্যামলীর স্বামী এসে যোগ দেন। ওরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, তখন ছেলেটির গান আমাদের অনেক ভালো লাগতো। তারা দুজনে একই ছাত্র সংগঠনের কর্মী ছিল। এখন শ্যামলী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আর মুকুল কলেজের।

    সমাবেশ শেষে মিছিল শুরু হয়। এর মধ্যে মাইক উঠে গেছে রিক্সায়; তা দিয়ে মিছিলের শ্লোগানের নের্তৃত্ব দেন তরুণ কর্মীরা। মিছিলটা আর দশটা মিছিলের মতই। অংশগ্রহণকারীরা সারিবদ্ধ হন বয়স, অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক সংগঠনের আকার, সংগঠনে তার পদ, লিঙ্গ এসব বিষয় বিবেচনায়। আমি মিছিলের লেজের দিকেই থাকি। লং মার্চের প্রচারণা চালিয়ে মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে জিরো পয়েন্ট পেরিয়ে, গোলাপ শাহ মাজারে গিয়ে গুলিস্তান আন্ডারপাসের দিকে মোড় নেয়। এরপর তা স্টেডিয়ামের নীচ দিয়ে, জাতীয় মসজিদের দেওয়াল ঘেঁষে ঘুরে এসে পল্টনের মোড়ে শেষ হয়।

    লং মার্চ নিয়ে প্রস্তুতি সভাগুলো অনুষ্ঠিত হয় ১ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে। সভাগুলোতে অংশ নিয়ে আমি দেখেছি, এগুলোতে শরীক সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও সংগঠনের বাইরের কয়েক জন সাংবাদিক, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশজন নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। আমি বাদে নারীদের উপস্থিতি বেশীরভাগ সভাতেই থাকতো না। নারী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়ের দিনে মেয়েদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশী। তাদের অংশগ্রহণও ছিল প্রাণবন্ত।

    প্রস্তুতি সভাগুলোতে সাধারণত: জাতীয় কমিটির আহবায়ক এবং সদস্য সচিব লং মার্চের প্রস্তাবনা পেশ করতেন। লং মার্চের মূল লক্ষ্য ও কর্মসূচী নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কোন সভাতেই কোন দ্বিমত হয়নি। বরং আলোচনায় হয়েছে লং মার্চের জন্য অর্থকড়ি সংগ্রহ, লোক জমায়েতের ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় মানুষদের অংশগ্রহণ, যাত্রীদের পরিবহন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা-- এই সব বিষয়ে।

    উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এ সব সভায় ছাত্র ও যুব সংগঠনের প্রতিনিধিদের জন্য বরাদ্দ চাঁদার হার কমানোর সুপারিশ করা হয়। উল্লেখ্য, লং মার্চে অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় কমিটির শরীক সংগঠনের সদস্যদের চাঁদা ছিল ৭০০ টাকা। রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য নয়, এমন অংশগ্রহণকারীর জন্য চাঁদা ছিল ১০০০ টাকা। আর ছাত্রদের জন্য চাঁদা ছিল ৪০০ টাকা। এছাড়া আগের তিনটি লং মার্চের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিক্ষনীয় বিষয়ও আলোচনা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে লং মার্চ এর শৃংখলা বিষয়ক নীতিমালা তৈরী করা হয়। নীতিমালাগুলো মূলত: মিছিলে অংশগ্রহণ ও প্রচার কাজকে শৃংখলাবদ্ধ করার জন্য তৈরি।

    ২১ অক্টোবর জাতীয় কমিটি লং মার্চ পরিচালনার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের দলে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি ছিল কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে দেওয়া দারুণ এক চমক উপহার। শরীক দলগুলোর ভেতর থেকে বাছাই করা কর্মী নিয়ে প্রায় ৫০ জন সদস্যের এই স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরী হয়। মেহেদী এই দলের নেতার দায়িত্ব পান। এই দলটিকে মিছিলের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা, খাবার পরিবেশন, পরিবহন বন্টন, লিফলেট বিতরণ, চিকিৎসা সেবা, গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ-- এ রকম দায়িত্ব দিয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত করা হয়। তিন সদস্য নিয়ে মিডিয়া সেল-এর দল নেতার দায়িত্ব পাই আমি।

    ২২ অক্টোবর লং মার্চ এর প্রস্তুতির সর্বশেষ খবরা খবর জানতে আনু মুহম্মাদ স্যার (অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন। তাঁকে টেলিফোন অপারেট করতে সাহায্য করতে গিয়ে জানতে পারলাম যে, বাগেরহাটে লং মার্চের পোস্টার লাগাতে গিয়ে জাতীয় কমিটির কয়েকজন কর্মীকে গোয়েন্দা সংস্থা আটক করে। পরে গোয়েন্দা সংস্থার দপ্তর থেকে জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দর কাছে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হয়, এটা কিসের আন্দোলন?

    নেতারা পাল্টা জবাব দেন, আপনি কী এর মধ্যে দেশের বাইরে ছিলেন? জানেন না, তেল-গ্যাস নিয়ে বাংলাদেশে এখন সবচাইতে শক্তিশালী আন্দোলন জাতীয় কমিটির?

    - আপনাদের বাসার ঠিকানা বলেন।

    -- আমরা বহু বছর ধরে রাজনীতি করছি। থানায় আমাদের সকলের ঠিকানা আছে। প্রয়োজন হলে থানাতে যোগাযোগ করলেই পেয়ে যাবেন।

    ফোনে এই আলাপের পর আটক করা কর্মীদের সকালকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পোস্টারগুলো করা হয় বাজেয়াপ্ত। একই ধরণের আরেকটি ঘটনা ঘটে ঢাকার উত্তরা থানায়। সেখানেও তিনজন ছাত্রকে পোস্টার লাগানোর সময় আটক করা হয়। সারারাত তাদের থানায় রেথে ভোর বেলা ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানেও পোস্টারগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

    পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার এরকম ত্‌ৎপরতার কথা শুনে পদযাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমার সামান্য ভয় হয়। কারণ, বাংলাদেশে পুলিশ হেফাজতে নিযার্তন, ধর্ষণ, খুন, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার, তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার নামে বিচার বহির্ভূত হত্যা (এটি 'ক্রস ফায়ার' নামে মিডিয়াতে প্রচারিত) -- এধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ঘটনা অহরহ ঘটছে। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, জাতীয় কমিটির কর্মীদের হেনস্তা করার এসব ঘটনা কিসের আলামত? সরকার কি রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে লং মার্চ ঠেকাতে চায়?

    ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বরে আনু স্যার যখন পুলিশী হামলার শিকার হন, তখনও কী এরকম আলামত দেখা গিয়েছিল? আনু স্যারের মতে, পুলিশের ওপর শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এরকম অনুমান করলে চলবে না। যেমন: পেট্রোবাংলার অফিসের সামনে জাতীয় কমিটির মিছিলের ওপর পুলিশী হামলা তৌফিক এলাহী (বর্তমান জ্বালানী উপদেষ্টা) নিজেই করিয়ে থাকতে পারেন-- এমনটি মনে করেন তিনি। তার মতে, রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবিলা করতে এই মহলটি মনে করে, 'এদের মাইর দাও, এরা শান্ত হয়ে যাবে' ।

    লং মার্চের আগের রাতে (২৩ অক্টোবর) ব্যাগ গুছাতে গুছাতে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল। একদিকে জাতীয় কমিটির প্রস্তুতি দেখে বুঝতে পারছিলাম মিছিল, সমাবেশ ও গান-বাজনা নিয়ে লং মার্চ হবে জমজমাট। শহীদুল্লাহ ভাই (জাতীয় কমিটির আহবায়ক) তার স্বভাবসুলভ বকা ঝকা দিয়ে শরীক দলগুলোর কর্মীদের ঠেকিয়ে রেখেছেন। কারণ হাজার হাজার লোক ঢাকা থেকেই লং মার্চে যাওয়ার জন্য জোরাজোরি করছিলেন। লং মার্চের তহবিল সঙ্কটের কারণেই ঢাকা থেকে এক যোগে সবাই রওনা না দিয়ে পথে পথে স্থানীয়ভাবে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে খরচটা কমে আসে। তাই ঢাকা থেকে মাত্র সাড়ে ৮০০ জনকে পদযাত্রী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। প্রস্তুতি সভায় এ সংক্রান্ত টুকরো আলোচনা শুনে বুঝে গিয়েছিলাম, লং মার্চ নিয়ে সারা দেশেই জাতীয় কমিটির কর্মীদের মধ্যে সাজ সাজ রব চলছে। কিন্তু মনে হচ্ছিল, সরকার সহিংস আচরণ করলে সব প্রস্তুতিই মাঠে মারা যাবে। আর পুলিশী হামলা হলে বিকল্প কোন প্রস্তুতি জাতীয় কমিটির নেই।

    লং মার্চ-এর শুরুর দিন ২৪ অক্টোবর সকালে সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ স্যারের নিরাপত্তা বিবেচনা করে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তার সাথে সাথে থাকা। এ জন্য সকালেই আমার আনু স্যারের বাসায় চলে যাওয়ার কথা। পরিকল্পনা অনুযায়ী লং মার্চ এর জমায়েত শুরু হবে সকাল ১০ টায়; ১১ টায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে যাত্রা শুরু হবে। ঠিক কখন আনু স্যার রওনা হবেন, তা জানতে আগের দিন রাত ৯টার দিকে ওনাকে ফোন করি। তিনি তখন জাতীয় কমিটির মিটিং-এ। টেলিফোনে শুনতে পাই বেশ হৈ চৈ হচ্ছে মিটিং-এ। এতে আমার শঙ্কা বাড়ে, শেষ মুহূর্তে ভেজাল লেগে গেল না তো! আনু স্যার আমাকে সকাল ৯টার মধ্যে তার বাসায় পৌঁছে যেতে বলে ফোন ছেড়ে দেন।

    (চলবে)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপর বাংলা | ২৮ নভেম্বর ২০১০ | ৮৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন