এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক

  • লং মার্চের ডায়েরি - নবম কিস্তি

    নাসরিন সিরাজ লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ১৯ নভেম্বর ২০১১ | ৮৩১ বার পঠিত
  • তারিখ ২৫/১০/২০১০। ঘড়িতে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা। জাতীয় কমিটির লং মার্চের সমাবেশ চলছে সিরাজগঞ্জ জেলা শহরে। জায়গাটার নাম স্বাধীনতা স্কয়ার। জাতীয় কমিটির আহবায়ক শহীদুল্লাহ ভাইয়ের নিজস্ব অফিস সহকারী খোরশেদ আলমের তথ্য অনুযায়ী সিরাজগঞ্জের "এল জি ই ডি গোডাউনের মোড়' বলে পরিচিত একটি জায়গায় মার্চাররা বাস থেকে নেমে মিছিল করতে করতে এখানে এসেছে। আমি মিছিলকারীদের সাথে যোগ না দিয়ে সোজা বাস স্টপেজে চলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে রিক্সা করে সবেমাত্র সমাবেশ স্থলে এসেছি ।

    দুপুরের আহারের পর সেই যে প্রেস রিলিজ নিয়ে পড়েছিলাম, লং মার্চের দিকে তাকানোর আর সময় পাইনি। এখন, আমি দাঁড়িয়ে আছি স্বাধীনতা স্কয়ারের একটি ত্রিকোনাকৃতির মাটির ঢিঁপির উপরে। ঢিঁপিটা বানানো হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের জন্য। এটা রাস্তা থেকে প্রায় ৩ ফুট উঁচু দেয়াল তুলে বাঁধাই করা, তার মাঝ বরাবর একটা রাবার গাছ বেশ ডাল, পাতা মেলেছে। গাছের নীচে আছে বেশ কয়েকটা চায়ের দোকান, তাদের সামনে বসার জন্য কাঠের লম্বা বেঞ্চ আর প্লাস্টিকের চেয়ার পাতা। চায়ের দোকানগুলোতে বেশ ভীড়। চায়ের দোকানগুলো থেকে একটু দূরে গণসংহতি আন্দোলন তাদের স্টল বসিয়েছে, সেটা ঘিরেও একটা ভীড় স্টলের বই, ম্যাগাজিন আর টি-শার্ট দেখছে। তবে দুটো ভীড়ের মধ্যেই স্থানীয় লোকজনের চেয়ে মার্চারদের সংখ্যা বেশী।

    এই ঢিঁপিটায় দাঁড়িয়ে জাতীয় কমিটির পুরো সমাবেশটা দেখা যাচ্ছে। স্টেজটা ঠিক আমার নাক বরাবর। বক্তারা সার বেঁধে চেয়ারে বসেছেন। তাঁদের সামনে সাদা কাপড় দিয়ে টেবিল সাজানো। স্টেজটা দৈর্ঘ্যে বেশ লম্বা। প্রায় ৯-১০ জন বক্তা বসেছেন প্রথম সারিতে। পেছনের সারিতেও ৩-৪ জন বসে আছেন। স্টেজের এক পাশে বক্তার জন্য একটা কাঠের ডায়াস। স্টেজের সামনে দর্শকদের জন্য সারিবদ্ধভাবে চেয়ার পাতা রয়েছে। আন্দাজ হল প্রায় এক হাজার লোক আছে এই সমাবেশে।

    স্টেজের বক্তাদের দিকে আমার আগ্রহ কম। আশেপাশের মানুষজন দেখতে শুরু করেছি মাত্র, এমন সময় দুই তরুন আমার দিকে আলাপ করতে এগিয়ে এল। ওরা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর ছাত্র সংগঠন (ছাত্র ফন্ট) -এর নেতা। দু'জনেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। যদিও তারা দু'জনেই চট্টগ্রাম থেকে এসেছে এবং তারা একই সংগঠনের কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে লং মার্চের সূত্রেই। দু'জনের নামও এক। একজনের নাম স্বাগতম চাকমা। আরেকজনের নাম স্বাগতম কুমার দে। আমরা বেশ কিছুক্ষণ আমাদের পরিবার পরিজনের পরিচয়, তারা কে কোথায় থাকে এবং কী করে এসব নিয়ে আলাপ করলাম। নৃবিজ্ঞান শব্দটির বাংলা ও ইংরেজী এবং আমার নাম তাদের খাতায় লিখে দেখালাম। উচ্চারণ পরিষ্কার করে বোঝানোর জন্য। তারপর আমরা একসাথে চা খেলাম।

    এরপর আলাপ হল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী এবং তৈরী পোষাকের কারখানার শ্রমিক পারভীন আখতারের সাথে। আমার সাথে তার গতরাতে পরিচয় হয়েছিল। আমরা একসাথে পিকআপ ভ্যান গাড়ীতে ভ্রমন করে ভাওয়াল স্কুল থেকে ধান গবেষণা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। তিনি সমাবেশ স্থলের আশেপাশে পথিকদের মধ্যে জাতীয় কমিটির লং মার্চ উপলক্ষ্যে ছাপানো "প্রশ্ন উত্তর' বুকলেটটি বিক্রি করছিলেন। তিনি জানালেন আগেরদিন তিনি মোট ৭৪ টা বুকলেট বিক্রি করেছিলেন আর আজ করেছেন ৯৫ টা। হেসে বললেন, "ফার্স্ট হতেই হবে।' আর জানালেন এরই মধ্যে পুরষ্কার স্বরূপ সহকর্মীরা খাইয়েছেন চা, দই এবং কেক। সহকর্মীদের মধ্যে সিপিবির প্রেসিডেন্ট মঞ্জুরুল আহসান খানও ছিলেন। মাইকে উঁচু স্বরে বাজছে জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের বক্তব্য আর তার নীচেই ছোট ছোট এই আলাপ সালাপগুলো চলছিল।

    কিছুক্ষণ পর মেহেদী আমার কাছে আসলো। উদ্দেশ্য একসাথে চা খাওয়া। এতোক্ষণ আমি ছিলাম সমাবেশের লেজের কাছটায় আর ও ছিল মঞ্চে। নিরিবিলি একটা চায়ের দোকানের সন্ধানে আমরা সমাবেশস্থল ছেড়ে রেল স্টেশনে চলে আসলাম। সিরাজগঞ্জের রেল স্টেশনটা দিয়ে নাকি মাত্র একটাই রেলগাড়ী চলাচল করে। বাকী সময়টা স্টেশনটার আর কোন কাজ নেই। শুধু প্ল্যাটফর্মে গড়ে ওঠা মাছ বাজারটা জমজমাট থাকে। স্বাধীনতা চত্বর থেকে রেলস্টেশনে আসতে আমাদের মিনিট তিনেক রিক্সায় চড়তে হল। আসলে আমরা পায়ে হেঁটেই পথটা আসতে পারতাম। মেহেদী তার পায়ে ব্যাথার কথা বলে রিক্সায় চড়ে বসল।

    যে দোকানটায় ঢুকলাম সেটা ঠিক যে রকম দোকান খুঁজছিলাম সেরকম একটা দোকান। স্টেশনের বাউন্ডারী ওয়াল থেকে গজিয়েছে এই অস্থায়ী দোকানটা। স্টেশনের বাউন্ডারী ওয়াল বাদ দিলে দোকানটার আর তিনটা দেয়াল বাঁশের তৈরী বেড়ার। উপরের ছাউনিটা টিনের। দোকানের ভেতরে একটা টিউবওয়েল আছে। চায়ের কাপ, কেটলী, চিনি আর বিস্কুটের বয়াম, ক্যাশ বাক্স নিয়ে দোকানটায় ঢোকার মুখে পসরা সাজিয়েছে মূল দোকানী। ১০-১২ বছরের একটা ছেলে দৌড়াদৌড়ির কাজগুলো করছে। যেমন, আমরা বসার পরপরই সে দৌড়ে গিয়ে টিউবওয়েল চেপে মেহেদীকে দুই গ্লাস পানি খাওয়ালো। চা খাবার পর পাশের দোকানে দৌড়ে গিয়ে মেহেদীর জন্য সিগারেট নিয়ে এলো।

    আমাদের মাথার উপরে টিম টিম করে অল্প পাওয়ারের একটা বাল্ব জ্বলছিল। দোকানের সামনের খোলা জায়গাটার দিকে মুখ করে বসেছিলাম আমি। আমার সমুখের বেড়াটা আসলে হাঁটু পর্যন্ত ফিক্স করা আর তার উপরের অংশটা আলগা আর সেটা বাঁশ দিয়ে তুলে রাখা। ফলে দেয়ালটা নিরেট না হয়ে, হয়েছে জানালা। আবার যারা দোকানের বাইরে দাঁড়াচ্ছে তাদের মাথার উপর হয়েছে একটা ছাউনি। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি রেল স্টেশনের জায়গাটা বেশ বড়। দোকানের কাছেই একটা গাছ শুকিয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে অসংখ্য তারা খচিত আকাশ। এই চায়ের দোকানের মতই অসংখ্য ছাপড়া দোকান রেল স্টেশনের বাউন্ডারী থেকে গজিয়েছে। যতদূর চোখ গেল সেরকম ছাপড়া আর তাদের ছাউনীর টিনে চাঁদের আলোর ঝলকানি দেখতে পেলাম।

    সমাবেশ শেষ হতে হতে প্রায় রাত দশটা বাজলো। আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সিরাজগঞ্জের হৈমবালা স্কুলে। গোসলের জন্য আছে স্কুলের পাশের পুকুর আর প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য আছে গণ শৌচাগার। সমাবেশ শেষে হৈমবালা স্কুলে পৌঁছানোর পর মাইকে এই ঘোষণাগুলো শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি স্কুলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকের গোসল পর্ব শেষ, খাবার নেবার লাইনেও দাঁড়িয়ে গেছে অনেকে, স্কুল ঘরগুলোর বেঞ্চ জড়ো করে শোয়ার ব্যবস্থাও করে ফেলেছে কেউ কেউ। আমি টয়লেটের দিকে এগিয়ে গেলাম। হাতে টর্চ লাইট। লাইটটা আমাকে গতকালই উপহার দিয়েছিলেন জাতীয় কমিটির সমুদ্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সদস্য নূর মোহাম্মদ ভাই।

    লাইটের আলো ফেলতেই সার বাঁধা চার-পাঁচটা ছোট ছোট ঘর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। প্রায় সবগুলোরই দরজা বন্ধ। টয়লেটের বাইরেও অনেকে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করছেন। আমি এগুনোর সুযোগ পেলামনা। একজন টয়লেট থেকে ছিটকে বের হয়ে আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলে গেলেন, "আপা আপনি এখানে যেতে পারবেন না।' আমি উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটা পথ ধরলাম। স্কুলের মাঠের কোণে একটা টিউবওয়েল আছে। সেখানে গিয়ে ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে সারাদিনের ধুলো পরিষ্কার করে তারপর খাবার নেবার লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

    খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় গণসংহতি আন্দোলনের নেতা তাসলিমা আখতার এসে প্রস্তাব করল ওদের সাথে রাতে থাকার জন্য। সারাদিনে ওর সাথে টুকটাক আলাপে জেনেছিলাম যে গতরাত ওরা কাটিয়েছিল স্থানীয় এক কমরেডের বাসায়। সেখানে ওরা ঘুমানোর জন্য আলাদা ঘর আর বিছানা পেয়েছিল। ওদের জন্য রকমারী খাবারের ব্যবস্থাও ছিল। আমি ওদের সাথে যোগ দিলে রাতে স্কুল ঘরের চেয়ে ভাল পরিবেশে ঘুমাতে পারি এরকম একটা হাতছানি ছিল ওর কথায়। রাজী হয়ে গেলাম।

    খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাস স্টপেজে চললাম কাপড়ের ব্যাগ আনতে। তখন মধ্যরাত প্রায়। মেহেদী একজন সঙ্গীর ব্যবস্থা করে দিল। সেও ব্যাগ আনতে যাচ্ছে নইলে এই সময়ে বাংলাদেশের মেয়েদের একা বেড়ানোর প্রশ্নই উঠতোনা। রাস্তায় বের হয়ে দেখি মার্চারদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা তখনও রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে। কেউ আমাদের মত বাস থেকে ব্যাগ আনতে যাচ্ছে বা নিয়ে ফিরেছে। যাদের স্কুল ঘরের বিকল্প জায়গায় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে তারা সেই উদ্দেশ্যে রওনা দেবার জন্য রিক্সা খুঁজছে। এদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই বেশী। তাদের বিদায় দিতে বা পৌঁছে দেয়ার সঙ্গী আছে কয়েকজন। একটু এগুতেই এক দল তরুনকে দেখলাম অলস ভঙ্গীতে রাস্তায় হাঁটছে। তাদের মধ্যে একজন উঁচুস্বরে গান করছে। এরা বোধহয় ঠিক করেছে স্কুল ঘরের মেঝেতে শুয়ে মশার কামড় খেয়ে রাত কাটানোর চেয়ে রাস্তায় গান গেয়ে ঘুরে ফিরে রাতটা কাটিয়ে দেবে।

    বাস স্টপেজে পৌঁছে আমাদের বাসটা খুঁজে পেতে বেশী সময় লাগলোনা। বাসগুলো সার বেঁধেই রাখা ছিল। আর তাছাড়া ১০ নং লেখা স্টিকারটা তখনও অক্ষত আছে। বাসের ড্রাইভার আর তার হেল্পার বাসের ভেতরে মশার কয়েল জ্বেলে ধে?ঁয়ার একটা অন্ধকার তৈরী করে তার মধ্যে ঘুমাচ্ছিল। বাসের ড্রাইভার বাসের মেঝেতে আলগা একটা সিট লম্বালম্বি করে পেতে শুয়েছে আর হেল্পার শুয়েছে ইঞ্জিনের উপর গদিতে। আমরা ডাকাডাকি করে তাদের জাগিয়ে দিলাম। ব্যাগ নিতে এসেছি বলায় তারা দরজা খুলে দিল। ঘুমের ব্যঘাত ঘটানোর জন্য তারা বিরক্ত গলায় অভিযোগ করতে থাকলো আর তারই মধ্যে ব্যাগ নিয়ে আমরা হৈমবালা স্কুলের দিকে আবার রওনা দিলাম।

    হৈমবালা স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ আমি মানুষের আনাগোনা দেখে পার করলাম। এরপর গণসংহতির মেয়েদের সাথে আসলাম একটি বাড়িতে যার খালি পড়ে থাকা নীচতলার একটি ফ্ল্যাটে আমাদের রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফ্ল্যাটটির দুটি ঘর। একটি ঘর পুরো খালি করে পাটের তৈরী মাদুর পেতে আমাদের শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরেকটি ঘরে প্লাস্টিকের চেয়ার জড়ো করে রাখা হয়েছে যার পাশেই রয়েছে গোসলখানা। এই গোসলখানাটি বেশ অদ্ভূত। আসলে এটা সিঁড়ির নীচের ছোট একটু জায়গা যেখানে সাধারনত: পানির পাম্প রাখা হয়। এই পুরো জায়গাটিকেই দেয়াল দিয়ে ঘিরে গোসলখানা বানানো হয়েছে। একটু লম্বা মানুষ এখানে মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। তবে গোসলখানায় আছে ঝরনা, কলের নীচে আছে একটা মগসহ বালতি। টয়লেটের প্যানও পরিষ্কার। দেখে মনে হল আমাদেও আসা উপলক্ষেই জায়গাটা পরিষ্কার করা হয়েছে।

    আমি মাদুরপাতা ঘরটিতে আমার চাদর বিছিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে ফেললাম। গোসল করার যে বিশাল লাইন দেখতে পেলাম তাতে আমি রাতে গোসল করার পরিকল্পনা বাদ দিলাম। যতটুকু ফ্রেশ হওয়া সম্ভব সেটা করে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লাম। আমার সাথে আরও ১০-১১ জন ছিলেন। এদের মধ্যে কেউ ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী, কেউ গণসংহতির কৃষক সংগঠনের কর্মী, কেউ তৈরী পোশাক কারখানার শ্রমিক। লিমা আমাদের এই জায়গায় পে?ঁছে দিয়ে আবার হৈমবালা স্কুলে চলে গেছে সেখানে তাদের স্থানীয় কর্মীদের সাথে বৈঠক আছে। এখানে যাদের স্থান সংকুলান হচ্ছেনা তাদের জন্য আরেকটি বাসায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে বাসায় কে যাবে সেটা নিয়ে ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা বেশ কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে আলাপ করল। তারপর আমরা যারা এখানে আছি তাদের জন্য মশার কয়েলের ব্যবস্থা করে দরজায় আলগা করে তালা মেরে তারা চলে গেল। এরই মধ্যে জানা গেল গোসলের পানি শেষ। অতএব সকালে পানি সরবরাহের অপেক্ষায় সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। অনেক রাতে ঘুমের ঘোরে আমি লিমাকে ঘরে ঢুকতে দেখলাম।

    সকালে ঘুম ভাঙ্গলো পানির পাম্প ছাড়ার জন্য আমার সঙ্গীদের তৎপরতায়। পাম্পের চাবি যার কাছে তাকে খুঁজে ঘুম থেকে তোলা হল। এরপর রাতে যারা গোসল করতে পারেননি তারা একে একে গোসল করতে লাগলো। লিমা ঘুম থেকে উঠে তার মোবাইল আর ল্যাপটপ চার্জে দিলো এরপর ইন্টারনেটে লগইন করে ফেসবুকে লংমার্চের ছবি আপলোড করতে শুরু করলো।

    আমি যতক্ষনে গোসল করার সুযোগ পেলাম ততক্ষনে বাথরুমের কলের পানি সরবরাহ বন্ধ। বিদ্যুৎও চলে গেছে। তবে বাসার সামনে একটি টিউবওয়েল আছে। সেটা থেকে বালতি করে পানি ভরে আমি আর লিমা বাথরুমে টেনে আনলাম। আমরাই শুধু বাকী তখন গোসলের। ঐ বাড়ির সকালের খবরের কাগজ এসে পড়েছে। আমাদের ঘরের সামনেই একটা টেবিল রাখা। সেখানেই সেদিনের দৈনিক প্রথম আলো পেপারটা আবিষ্কার করলাম। উল্লেখ্য সেদিন আমার একটা লেখা প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটির শিরোনাম ছিল "ফুলবাড়ী: উন্মুক্ত কয়লা খনি ও মানুষের নিরাপত্তা'

    লেখাটা প্রথমে নিজে পড়লাম তারপর আশেপাশে আর যারা দাঁড়িয়ে আছে তাদেরও লেখাটা দেখালাম। লেখাটা প্রকাশের জন্য প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক একেএম জাকারিয়াকে একটি ধন্যবাদমূলক এসএমএস পাঠালাম। লিমা তখনও ইন্টারনেটে ছবি আপলোড করা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ওর হাতে পেপারটা দিয়ে আমি গোসলে ঢুকলাম। সারাদিনের জন্য তৈরী হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বের হলাম আমরা। বের হবার আগে ঘরের চাবি বাড়ির কেয়ারটেকারকে বুঝিয়ে দিয়ে এলো লিমা। আমাদের এর পরের কাজ সকালের নাস্তা খাওয়া। আজকের মেন্যু খিচুড়ি।

    গাজীপুরে যেমন ছিল এখানেও তেমন। অর্থাৎ সকালের খাবার পর্ব শেষ করে দশটার আগেই স্কুল ছেড়ে দিতে হবে। তাই সকাল সকালই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই প্রায় সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ। আমি আর লিমা খাওয়া পর্ব শেষ করে আবার বাস স্টপেজে চললাম। উদ্দেশ্য গণসংহতির বাস থেকে লিমার দ্বিতীয় আরেকটা ব্যাগ খে?ঁজা এবং লিমার স্বামী জোনায়েদ সাকীর জন্য পরিষ্কার একসেট কাপড় নেয়া। সাকী সম্ভবত স্থানীয় কোন হোটেলে রাতে ঘুমিয়েছিল। সাকীর ফ্রেশ কাপড় পে?ঁছে দিতে লিমা সেই দিকে রওনা দিল। যাবার সময় আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেল স্বাধীনতা স্কয়ারে।

    স্বাধীনতা স্কয়ারে ততক্ষনে নেতৃবৃন্দ এসে হাজির। আহবায়কের মাইক্রোবাসে আজকের দিনের পত্রিকাগুলো রাখা। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ কেউ সেই পত্রিকা পড়ছেন, কেউ চা খাচ্ছেন। এর মধ্যে স্থানীয় একজন লোক আমাদের কাছাকাছি এসে কি বলে যেন হৈ চৈ করতে থাকলো। আমরা যেদিকটায় দাঁড়ানো সেদিকটায় গায়ে গায়ে লাগানো মিষ্টির দোকান, নাপিতের দোকান আর ধোপার দোকান। দোকানগুলো খোলা ছিল। সিরাজগঞ্জবাসী যারা দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা হৈ চৈ করা লোকটিকে মাতাল বলে তাড়িয়ে দিলেন। এদিকে, আনু স্যার আমাকে দেখে নূর মোহাম্মদ ভাইকে আমার লেখা প্রকাশের কথাটা বললেন। সত্যি বলতে কি খসড়া তৈরী থেকে শুরু করে প্রকাশিত হবার আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই আনু স্যার আমাকে লেখাটার অগ্রগতি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন। নূর মোহাম্মদ ভাই সাথে সাথে পড়ে ফেললেন লেখাটা। তারপর আমার সাথে গল্প জুড়ে দিলেন যে আমি ফুলবাড়ীর খনি বিরোধী আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের কার্যকারণ বুঝতে ঐধরণের প্রত্যয় ব্যবহার করেছি কি না। কথার ফাঁকে ফাঁকে আমরা দুজনেই অন্যান্য পত্রিকাগুলোর উপর চোখ বুলাচ্ছিলাম। সিরাজগঞ্জের স্থানীয় একটি প্রত্রিকায় গতরাতের সমাবেশের খবর ছেপেছে কিন্তু ঢাকাবাসী এলিটরা যে পত্রিকাগুলো পড়েন অর্থাৎ প্রথম আলো ও ডেইলী স্টার সেগুলোতে লংমার্চের খবর আসেনি। নিউ এইজ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক আমাদের সাথে ভ্রমন করছেন তাই নিশ্চিত হয়েই বলা যায় যে তারা লংমার্চের দৈনিক খবরাখবর ছাপাচ্ছে। কিন্তু সেই কাগজ দেখার আগেই স্বাধীনতা স্কয়ারে মিছিল শুরু হয়।

    সিরাজগঞ্জের স্বাধীনতা স্কয়ার থেকে ৯:১০ এ মিছিল শুরু হয়ে ১০:৪৫ এ সিরাজগঞ্জের গাজীপুরে শেষ হয়। এরপর মিছিল ও পথসভার জন্য ১১:২০ এ বাস থামে সিরাজগঞ্জ রোডের সলংগায়। এরপরে হাটিকুমড়–লে। দুটি জায়গায়ই বাস স্টপেজ ও স্থানীয় হাট-বাজারের জন্য ব্যস্ত এলাকা। তাই অনেক লোকের মধ্যে লিফলেট বিলি করা গেল। জাতীয় কমিটির সদস্য বাম রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্থানীয় সমর্থকদেরও সমাবেশে উপস্থিত করিয়েছিল। ১২:১৫ তে আমরা আসি ঘুড়কাবেলতলায় এবং ১:০০ টায় পথসভা হয় চান্দাইকোনা। আমরা খাবারের বিরতি নেই শেরপুরে দুপুর ২:০০ টায়। এরপরে প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখা হয়। বিজ্ঞপ্তিটি নিম্নরূপ:

    প্রেস বিজ্ঞপ্তি

    জাতীয় কমিটির লং মার্চের তৃতীয় দিনে নেতৃবৃন্দ
    দেশীয় শিল্প খাতের সংকটে বেকারত্ব দারিদ্র বাড়ছে।

    ২৬/১০/২০১০: গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে ৭ দফা দাবীতে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ৪৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ লং মার্চ আজ বগুড়া পৌঁছেছে। সকাল ৯ টায় সিরাজগঞ্জ শহর থেকে শুরু হয়ে এই লং মার্চ কাজীপুর মোড়, হাটি কুমড়াল, ঘুরকা বেলতলা, ভূঞাগাতি, চান্দাইকোনা, শেরোয়া বটতলা, শেরপুর বনানীমোড় হয়ে বগুড়ায় পৌঁছেছে। এসব অঞ্চলে আয়োজিত সমাবেশ ও মতবিনিময়ে নেতৃবৃন্দ বলেছে, উন্নয়নের নামে বিদেশী কোম্পানীর দখলে গ্যাস, বিদ্যুৎ কয়লা খাত দিয়ে দেয়ার অপতৎপরতায় বাংলাদেশের শিল্প ও কৃষিখাত ভয়াবহ সংকটে পতিত হয়েছে। এই সংকটে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। দারিদ্র বেড়েছে। বাংলাদেশের শিল্প ও কৃষি তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য জ্বালানী সম্পদের উপর শতভাগ মালিকানা ও রপ্তানী নিষিদ্ধ আইন প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বিদ্যুৎ, শিল্প ও কৃষি সহ দেশের প্রয়োজনে গ্যাস ও কয়লা সম্পদের প্রতিটি বিন্দু সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে গ্যাস কয়লা লুটপাটের বিরুদ্ধে জনগনের ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।

    এসব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মঞ্জুরুল আহসান খান, বিমল বিশ্বাস, খালেকুজ্জামান, নূর মোহাম্মদ, টিপু বিশ্বাস, সাইফুল হক, মোশরেফা মিশু, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাগীব হাসান মুন্না, জোনায়েদ সাকী, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বীরেণ সিংহ, সুবল সরকার, নজরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, নারী নেত্রী লক্ষী চক্রবর্তী, বহ্নি শিখা জামালী, জান্নাত ফেরদৌস পপি, তাসলিমা আখতার, ছাত্র নেতা মানবেন্দ্র নাথ দেব, সাইফুজ্জামান সাকন, আরিফুর রহমান, তানভীর রুস্তম, আব্দুর রউফ সহ স্থানীয় নেতা ইসমাইল হোসেন, নবকুমার কর্মকার, ভাষা সৈনিক চুনী লাল কুণ্ডু, আব্দুর রাজ্জাক সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। লং মার্চ কর্মসূচীতে উদীচি, চারণ, সমগীত সহ বিভিন্ন সংস্কৃতি দলের কর্মীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

    লং মার্চ শেরপুর এলাকায় পৌঁছালে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জনগণ ঢোল ডগর নিয়ে নেচে গেয়ে লংমার্চের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করেন। ৪৫০ কি.মি লং মার্চের ৪র্থ দিনে আগামীকাল (২৭/১০/১০) বগুড়া থেকে মহাস্থানগড়, মোকামতলা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী হয়ে গাইবান্ধা পৌঁছাবে।


    (চলবে..)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৯ নভেম্বর ২০১১ | ৮৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন