
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই খোলসা করে দিয়েছেন যে রাজ্যে সরকারি ত্রাণের আওতায় থাকবে প্রত্যেকটি মানুষ। রেশনও পাবে সবাই, সে তাদের রেশন কার্ড থাক বা নাই থাক। কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও বাস্তবে প্রচুর হাহাকার শোনা যাচ্ছে। রেশন কার্ড না থাকলে তো কথাই নেই, যাদের আছে,হয়তো কাজের জন্য তারা শহরবাসী, রেশন কার্ড রয়ে গেছে গ্রামের বাড়িতে,তাদেরও রেশন পেতে অসুবিধের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে হালে বিডিও এবং পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কুপন বিলি করে ত্রাণ দেবার চেষ্টা হলেও সেখানে থেকে যাচ্ছে নানা অসঙ্গতি। শুধু তো গ্রামবাসীই নয়, শহর ,আধা শহরে অনেক দিন আনি দিন খাই মানুষ রয়েছে। লক ডাউনে তাদের আয়ের পথ পুরোপুরি বন্ধ। রয়েছে গৃহহীনরা, মানসিক প্রতিবন্ধী এবং ভবঘুরেরা, ফুটপাথে ছাউনি খাটানো মানুষজন। রয়েছে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক, ভিন রাজ্য থেকে চিকিৎসা ,তীর্থদর্শন অথবা অন্য কাজে এসে আটকে পড়া মানুষজন। আছে ঘেটোবাসিনী যৌনকর্মীরা। এদের কী হবে ? সরকারী সাহায্য কী তাদের কাছে পৌঁছচ্ছে ? নাকি তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে অন্যান্য সংস্থা ,এনজিও ,এমনকি সোশাল মিডিয়ার গ্রুপগুলির ওপর, যারা কালক্ষেপ না করে আর্তের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেবার কাজে নেমে পড়েছে?
এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে এ রাজ্যের ত্রাণ ও রেশন ব্যবস্থার হাল হকিকত খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তবে সব শুরুর যেমন একটি শুরু থাকে, তেমনি আগে গোটা দেশের খাদ্য বন্টনের ব্যবস্থা অথবা অব্যবস্থার দিকে খানিক তাকিয়ে নেওয়া যাক । কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমশাই ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন ন মাস দেশের সবাইকে খাওয়াবার মতো রসদ মজুত আছে। কিন্তু খাবারের অভাবে আত্মহত্যা, সন্তানহত্যার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। সারা দেশ জুড়ে শ্রমজীবী মানুষের হাহাকারে কান পাতা দায়।
ঠিকই, লক ডাউন ছাড়া প্রাথমিকভাবে কোনো উপায় নেই, আবার অপরিকল্পিত লক ডাউনের জন্য এফ সি আই থেকে রেশন ডিলার অবদি খাদ্যশস্য পৌঁছে দেবার চেইনটিই নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষের জীবনের প্রশ্ন যেখানে, সেখানে কর্তাব্যক্তিরা কোনো দ্বিতীয় রাস্তার কথা না ভেবেই টোটাল লক ডাউন ডেকে দিলেন, কোনো ছাড় বা অন্য কোনো উপায়ের সংস্থান রাখলেন না,এ বড় বিস্ময় ! নয়া উদারবাদ খাদ্যশস্যের দাম সকলের জন্য কমে যাবে তা চায় না বলে গুদামে খাদ্যশস্য মজুত করে রাখবে,বাফার স্টক উপচে পড়বে আর অতিমারিতে অবরোধে থাকা মানুষ সেই জ্ঞান মাথায় নিয়ে ভুখা পেটে মারা যাবে, এ কোন রামরাজ্যে আমরা বাস করছি !
লক ডাউন জারি করবার ব্যাপারে রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে সমণ্বয় ছিল না। ফেডেরাল সিস্টেমেও বোঝাপড়ার অভাবে রাজ্য একবার লক ডাউন ডেকে দিচ্ছে, ফলে আগে থেকেই সে রাজ্যের মানুষজন অসুবিধেয় পড়ে যাচ্ছে, আবার অতি অল্প হইল বলে কেন্দ্রীয় ঘোষণায় সে সময়সীমা সারা দেশে হঠাত বেড়ে যাচ্ছে । মূলত এই ফাঁদে পড়েই আজ পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দুরবস্থা। দুই লক ডাউনের মাঝে যদি তিন চার দিনেরও বিরতি থাকতো তাহলে তার মধ্যেই অনেকটা গুছিয়ে নেওয়া একেবারে অসম্ভব হতো না। এবারও যখন প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ বাড়িয়ে দিলেন, তখনও যদি কিছুটা গ্যাপ থাকতো তাহলে দিল্লি, সুরাত ,বান্দ্রার মতো ঘটনা নাও ঘটতে পারত।
এইবার যারা বলবে,পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে ফিরতে দিলে করোনা ছড়িয়ে পড়বে, তাদের কাছে জিজ্ঞাসা থাকবে, এখন যে পরিস্থিতিতে তাদের আটকে রাখা হয়েছে, সেটা কী খুব আদর্শ পরিস্থিতি ? নানা অসুবিধে নিয়ে যারা ত্রাণ শিবিরে রয়েছে, খাবার বলতে জোলো খিচুরি বা লপসি, তাদের ইমুনিটি কী এমন জোরদার যে ঐ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে করোনা তাদের রেয়াত করবে ? দেশের নানা জায়গায় এখনো ছ কোটি শ্রমিক আটকে রয়েছে। যদি অনাদরে অবহেলায় এদের অর্ধেকেরও করোনা হয় তাহলে আমরা নিজেরা বাঁচব তো?
আটকে পড়া শ্রমিক ভুখা পেটে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। SWAN (The Stranded Workers Action Network) নামে গবেষণাকর্মীদের জোটটি তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলে পরিষ্কার দেখিয়ে দিয়েছে ৯৬% পরিযায়ী কোন খাদ্যশস্য (dry ration) পায়নি। আর ৭০% এর বেশি শ্রমিক জানেই না স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোথায় রান্না করা খাদ্য বন্টনের ব্যবস্থা করেছে। শুকনো খাদ্যশস্য না পাবার কারণ যেখানে শ্রমিক আটকে আছে সেখানকার কোনো ডেটাবেসে তার নাম নিবন্ধিভুক্ত (registered) নয়। রান্না করা খাবার কোথায় দেওয়া হচ্ছে, গবেষকরাই বলছেন, এটা শ্রমিককে জানাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবুও খোঁজখবর করে সেখানে পৌঁছলে দেখা যাচ্ছে প্রচন্ড ভিড়ে রোজ সবার খাদ্য জোটানো দুষ্কর। কেরালা ছাড়া দেশের সর্বত্র এই অবস্থা।
সারা বছর পরিযায়ীরা কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়ায়। যে রাজ্যে কাজে যায় তাদের নাম সেখানেই তথ্যকেন্দ্রে নথিভুক্ত করবার আশু ব্যবস্থা হোক। মানুষগুলি এখন শুধু খিদেয় নয়, মৃত্যুভয়েও কাতর। তাই ঘরে ফেরার জন্য অমন উতলা। প্রত্যেকের মুখে একই কথা, আমার কিছু হয়ে গেলে কে দেখবে। শুধু নিজের জন্য নয়,গ্রামে ফেলে আসা পরিজন বা সঙ্গে থাকা স্ত্রী সন্তানের জন্য তারা যারপরনাই উদবিগ্ন। নাহলে এতো কষ্ট করে শত শত মাইল পথ কেউ অকারণে পাড়ি দেয় না। পথে পুলিশের অত্যাচার তো সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন সবারই দেখা। এমনও হয়েছে যে হাটঁতে হাঁটতে হয়তো উত্তরপ্রদেশের সীমানায় পৌঁছে গেছে, সেখান থেকে লাঠি চার্জ করে পুলিশ আবার দিল্লিমুখী করে দিয়েছে। মানসিক কষ্ট অনেককে এমন উতলা করে দিয়েছে যে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হবার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অনেকে সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি দেখাচ্ছে, কেউ বিক্ষোভে ফেটে পড়তে চাইছে । পুলিশের লাঠি অব্যবস্থা আর খাদ্যাভাবকে চাপা দিয়ে রাখতে পারছে না। দিল্লিতে আশ্রয় শিবিরে আগুন লেগেছে, চারজন মার এড়াতে যমুনায় ঝাপ দিতে বাধ্য হয়েছে। একজন মৃত।
বাংলা ১লা বৈশাখের দিন মুম্বাইতে যা হলো তাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফেরার জন্য কতটা মরীয়া তা বোঝা যায়। প্রথমে শোনা গেল হোয়াটসএপ ঘটিত গুজব ও কিছু মানুষের কথার ওপর ভিত্তি করে হাজার হাজার আটক শ্রমিক বান্দ্রা স্টেশনে চলে এসেছে ট্রেণ ও বাস চলবে এই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে। ভুল ধারণা বলা ঠিক হচ্ছে কিনা জানিনা। কারণ আইআরসিটিসি ১৫ই এপ্রিলের ট্রেন চলাচলের টিকেট দিয়েছে,আর সে একটি দুটি টিকিট নয়, মোদির ঘোষণার পর পুরো ৩৯ লক্ষ টিকিট বাতিল হয়েছে। ভারতীয় রেল মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা করছে নাকি ? ট্রেন চলবে কিনা না জেনেই ৩৯ লক্ষ টিকিট বিক্রি ? নাকি দুর্জনের কথাই ঠিক যে যাত্রীপিছু ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা লাভ হচ্ছে রেলের “সুবিধা শুল্ক” বাবদ ? তার মানে রোজকার লাভ ২২ লাখের কাছে। কারণ ভাড়া ফেরত পাওয়া যাবে ,কিন্তু এই সুবিধা শুল্ক নয়।
ক্রমশ জানা যাচ্ছে কোনো অপপ্রচার নয়, দক্ষিণ- মধ্য রেলের একটি চিঠিতেই বলা হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যাবার জন্য স্পেশাল ট্রেন চালাবার ব্যবস্থা হতে পারে। এই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই ঘরছাড়াদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
অথচ বান্দ্রায় অসহায় মানুষগুলিকে পুলিশ অকথ্য পেটালো তাদের ছত্রভঙ্গ করতে। বিভিন্ন মিডিয়ায় সামনে এলো এই তথ্য যে শিবিরে তারা প্রায় অভুক্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছে, তাও যেটুকু খাবার পাওয়া যাচ্ছে তা কেন্দ্রীয় বা মহারাষ্ট্র সরকারের দেওয়া নয়, এনজিও এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির চেষ্টার ফল। নন স্টপ ট্রেন চালিয়ে বা দূরপাল্লার বাসে এদেরকে ঘরের কাছে পৌঁছে দেওয়া কি একেবারেই অসম্ভব? সেখানে নাহয় ১৪ দিন তারা কোয়ারিন্টিনে থাকবে। লক ডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও রাজ্যগুলির সীমান্ত খুলে দেওয়া যায় না? নাকি এদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় কর্তাব্যক্তিদের নেই?
(২)
সারাদেশে যখন চলছে এই বিশৃঙ্খলা, তখন পশ্চিমবঙ্গে আটক পরিযায়ী শ্রমিকের অবস্থা কী?
এখানে আটক শ্রমিক অন্যত্র আটক শ্রমিকের তুলনায় অনেক কম, কারণ এখানকার মানুষ যতো সংখ্যায় বাইরে কাজ খুঁজতে যায়, এখানে বাইরে থেকে আসে তার থেকে অনেক কম। তবু তো তার সংখ্যাটা একেবারে শূন্য নয়। সল্ট লেকেই অনেক বাড়ির নীচে বিহার, ঝাড়খন্ড থেকে আসা অনেক পরিযায়ী শ্রমিক আটকে রয়েছে। এছাড়া বাইরে কাজ খুঁজতে যাওয়াদের পরিবার পরিজন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে। এদের ত্রাণের কী ব্যবস্থা হয়েছে এখানে? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটি ঘটনা তুলে ধরে অসম্ভব বিচিত্র পরিযায়ী সমস্যার একটি ধারণা দেবার চেষ্টা করলাম, কী পরিমাণ ব্যাপ্তি মূল সমস্যার সেটা বোঝাবার জন্য।
নর্থ ২৪ পরগণার হাড়োয়া ব্লকে আটকে রয়েছে বহু প্রাচীন এম্পায়ার সার্কাস, যারা মুক্ত বাজারি আমোদপ্রমোদের মধ্যেও বিনোদনের এই ধারাটি ধরে রেখেছে। পড়তির দিকে হলেও লক ডাউন কালের মতো দুঃসময় এর কলাকুশলীদের জীবনে আর কখনোই আসেনি। টেন্ট খাটানো হয়েছিল, এখন খুলে ফেলা হয়েছে। মালিক কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে। রোদে ঝড়ে বৃষ্টিতে এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো খোলা মাঠেই বাস করছে। অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে চোখে জল চলে আসছে ৬৫ বছর বয়সী প্রবীণ অথচ দেহে খর্ব জোকার মধুসূদন ঘোষের চোখে।
মেয়েরাও আছে এদের সঙ্গে। উত্তরপ্রদেশের কুশিনগর থেকে আসা ছ জন মহিলা কলাকুশলী টয়লেট ,স্নানের বন্দোবস্তহীন খোলা মাঠে। প্রানপণে বাড়ি ফিরতে চাইছে তারা। কিন্তু ফেরাবে কে? কেরালা বিহারের মানুষও আছে। এই সার্কাস শ্রমিকদের আয় গড়ে ১০০০০ থেকে ২০০০০ টাকা। বাড়িতে টাকা যাচ্ছে না, কারণ হাতে টাকা নেই, সে চিন্তায় এরা জর্জরিত হয়ে আছে।তবু স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান এবং বিডিও-র চেষ্টায় দুবেলা খাবার জুটছে মানুষগুলোর। কিন্তু করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিজের ঘরের নিরাপদ জীবন এদের কাছে এখন স্বপ্ন। তাই তিনদিনের জন্য লকডাউন ঢিলে দেবার প্রার্থনা এদের সবার।
অথচ এই তো গত ১৫ ই এপ্রিল দার্জিলিং পাহাড়ে এদিক ওদিক আটকে পড়া ১৭ জন বিদেশী গবেষককে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় স্থানান্তরিত করা হলো। কাজটি খুবই ভালো হয়েছে, কারণ পাহাড়ি জনজাতির ওপর গবেষণা করতে এসে তারা দীর্ঘদিন আটকে ছিলেন। দলে নারী পুরুষ সবাই ছিলেন। সরকার যৌথ প্রচেষ্টায় তাদের পাহাড় থেকে নামিয়ে এনেছে, এর থেকে ভালো আর কী ! উত্তরাখন্ডেও ১৮০০ গুজরাতি শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও সে রাজ্যের কর্তারা দরাজদিল হয়ে ২৮ টি বাসে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিয়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের পকেটমানি না দিয়ে শুধু এই মডেলটি আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যাপক হারে চর্চা করলে অনেক মানুষের উপকার হতো। অনেক ঝামেলা ঝঞ্জাটের নিরসন হতো।
এমন নয় যে ২০শে এপ্রিলের পর থেকে ছাড় ঘোষণা হয়েছে বলে এ প্রসঙ্গ অবান্তর হয়ে যাবে। ছাড় ঘোষণা হয়েছে মূলত গ্রামীণ ক্ষেত্রে। সঙ্গে আছে তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাঙ্ক, বিমা ও বিশেষ সরকারি দফতর। হটস্পট ঘোষিত দেশের ১৭০ টি জেলায় কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। কৃষি ক্ষেত্রে আবার ৫০% কর্মীর বেশি কাজ করা যাবে না। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকের এখুনি কাজ ফিরে পাবার আশা দুরাশা, ফলে তাদের ঘরে ফেরানোর দাবী বহাল রইবে।
পশ্চিমবঙ্গে, আগেই বলা হয়েছে, প্রশাসনিক সদিচ্ছা সত্ত্বেও ত্রাণচিত্র খুব উজ্জ্বল নয়। লকডাউনের বাজারে বন্ধ ঘরে থেকে বিভিন্ন মিডিয়া ও বেসরকারি ত্রাণ সমিতির রিপোর্ট ও অসংখ্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে যে চিত্র পাওয়া গেল, তা নীচে লিপিবদ্ধ করা হল।
ত্রানের অপ্রতুলতার প্রথম কারণটি নিয়ে নাড়াচাড়া করলে আবার কেন্দ্রীয় নীতির কথাতেই ফিরে যেতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে যে গণ বন্টন ব্যবস্থায় নাম নথিভুক্ত আছে এমন প্রত্যেকজন তিনমাস ধরে ৫ কেজি বাড়তি খাদ্যশস্য এবং ১ কেজি বাড়তি দানাশস্য বিনামূল্যে পাবে। কিন্তু ১০ কোটির বেশি মানুষের নাম গণবন্টন ব্যবস্থায় নথিভুক্ত নেই, কারণ সরকার ২০১১ সালের জনগণনাকেই ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি এক্টের ভিত্তিবর্ষ ধরবে ঠিক করে ফেলেছে । ২০২১ সালে পরে্র সেন্সাস। এই দশবছরে লোকসংখ্যা মোটামুটি কী হারে বেড়েছে তার কোনো হিসাবই কি সরকার বাহাদুরের কাছে নেই ? রাজ্যগুলির পৌনঃপুনিক আবেদনে কান দেওয়া হচ্ছে না ,ফলে সঠিক জনসংখ্যাও প্রতিফলিত হচ্ছে না । তা হলে পশ্চিমবঙ্গসহ অন্য রাজ্যগুলি কেন্দ্র থেকে অনেক বেশি পরিমাণে সাবসিডাইজড খাদ্যশস্য পেতো।এই একটি কারণ যার জন্য রাজ্যে নতুন রেশন কার্ড ইস্যু করে আরো লোককে গণবন্টন ব্যবস্থায় নিয়ে আসবার ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে।
যাহোক, এখন তো মুখ্যমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন আগামি ছ মাস সবাইকে রেশন দেওয়া হবে, সে কার্ড থাকুক চাই না থাকুক। সে সব তো পরের কথা, অভিযোগ উঠে আসছে যে রেশনই সর্বত্র পৌঁছচ্ছে না। লক ডাউনের এতো দিন হয়ে গেল,ঘোষিত খাবার মানুষের হাতে পৌঁছলো না, মানুষ কি পেটে কিল মেরে বসে থাকবে ? যে সব জায়গায় রেশন পৌঁছচ্ছে সেখানে সবচেয়ে বড় বিপদ দলীয় দুর্নীতি। নেতারা থাবা বসাচ্ছেন এই অভিযোগ ক'রে কোচবিহারের ট্যাঙ্গরমারি, মহিষ বাথান পঞ্চায়েত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ জানাচ্ছেন পাওনা রেশন সবটা গ্রাহককে না দিয়ে তার কিছুটা ডিলারের কাছ থেকেই নিয়ে নিচ্ছে দলীয় কর্মীরা। সেটাই আবার কোথাও দলের পক্ষ থেকে পরে ত্রাণ বিলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, না হলে ক্ষমতাবানের সেবায় লেগে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে যেখানে আদিবাসী গ্রামে অভিযোগ উঠছে যে জনধনযোজনায় আসা ৫০০ টাকাতেও কোপ বসানো হচ্ছে।
অথচ লোকের হাতে কিন্তু একেবারে টাকা নেই। কোচবিহার থেকে কান্দি ,সর্বত্র ব্যাঙ্কে প্রায় ভোর থেকে দীর্ঘ লাইন। সেখানে কোনো ডিস্ট্যান্সিং মানা হচ্ছে এইরকম মনে হবার কোনো কারণ নেই। জনধনযোজনাসহ এক একটি লাইনে ৩০০/৪০০ করে লোকের ভিড়। স্বাভাবিক, কারণ এতোদিন লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক তাদের আয়ের অর্ধেক টাকা ঘরে পাঠাতো। এখন সেসব সম্পূর্ণ বন্ধ।
সবচেয়ে বেশি যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে তা হল রেশনকার্ড নেই যাদের তাদের কুপন দেওয়া নিয়ে, যে কুপন দেখিয়ে তারা ত্রাণসামগ্রী পেতে পারে। একে তো এই কুপন বিলি শুরু হয়েছে অনেক পরে। আগামি ২৮ শে এপ্রিলের আগে কুপনে তার এলাকায় কিছু মিলবে না, জানালো কলকাতার উপকন্ঠের এক খেটে খাওয়া মানুষ। পঞ্চায়েত প্রধানের কুপন সই করা নিয়েও বা তার নির্দেশে ডিলারের কুপন বিলি নিয়ে অনেক সমস্যার কথা কানে আসছে। এখনও মুখ দেখে বা রঙ দেখে কুপন ইস্যু করা হলে সে বড় অনাচার হবে। মানুষ এখন দাঁড়িয়ে আছে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ,যেখানে হাঁমুখ ব্যাদান ক'রে দাঁড়িয়ে এক ভয়াবহ অতিমারি। কে যাবে, কে থাকবে তার কোনো ঠিক নেই। এখনও এইসব দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠতে না পারলে, আর কবে!
রেশন সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ থাকলে সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিসম্বলিত দুখানা ফোন নম্বর সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হলো--১৮০০-৩৪৫-৫৫০৫ অথবা ১৯৬৭। দু একবার ছাড়া নম্বরগুলো বাজলো না এবং বেশিরভাগ সময়ে বলা হতে লাগলো এগুলি ইনভ্যালিড। ইনভ্যালিডই যদি হবে তবে এগুলি ছড়িয়ে সরকারকে হাস্যাস্পদ করছে কে বা কারা ? অথচ এই পরিস্থিতিতে এইরকম প্রত্যক্ষ যোগাযোগ খুবই ফলপ্রসূ হতো। দুর্নীতি কমতো।
আবার ভালো কাজ হচ্ছে কোথাও কোথাও। যেমন মেমারি ১ ব্লকে আটকে থাকা ১১০০ শ্রমিকদের জন্য পঞ্চায়েত সমিতি ৩ কুইন্টাল চাল ও ৩৫০ কেজি ডাল বিলি করেছে।কালনা ২ ব্লকে শ্রমিকদের জন্য লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যানার না থাকলেও শোনা যাচ্ছে এর পেছনে তৃণমূল ব্লক কমিটি রয়েছে।
তবে অভিযোগের তুলনায় এই ধরণের ভালো কাজের সংখ্যা নিতান্ত কম দেখা যাচ্ছে। জঙ্গলমহলের থেকে আসা খবর, সরকারি ঘোষণা মতো বিনামূল্যের চাল না আসায় লোধা শবর আদিবাসীরা গাছের পাতা, ঘাস সেদ্ধ খেতে বাধ্য হচ্ছে। এই অভিযোগও আছে যে পুখুরিয়া, মাসাংডিহি, কেশিয়ারি, ডেবরা এবং আরো অনেক ব্লকে স্থানীয় নেতারা বিনামূল্যের চালের কুপন বেআইনি ভাবে তুলে বিক্রি করে দিয়েছে অথবা সেই কুপনে খাদ্যদ্রব্য তুলে নিয়েছে। শবর সম্প্রদায়ের নেতা তারাপদ মল্লিকের বক্তব্য অনুযায়ী ২০০ পরিবারের জন্য বরাদ্দ চালগমের কুপন খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় মহকুমা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
রেশন বন্টনে চূড়ান্ত বেনিয়ম রুখতে বিরোধীরা নজরদারি দাবি করেছেন। কুপন মারফত রেশন প্রাপকদের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আনা উচিত বলে তারা জানান। অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ সত্য কিনা যাচাই করবার সুযোগ না থাকলেও একথা সত্যি যে উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র রেশন-বিক্ষোভে ছেয়ে গেছে। এই বিক্ষোভে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া ডাবগ্রাম থেকে শুরু করে দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগরও আছে। রেশন ডিলার এবং নেতাদের বোঝাপড়ায় রেশন- দ্রব্য কম পাওয়া বা না পাওয়াই মূল অভিযোগ। এই ঢিলেমি কোন সর্বনাশ ডেকে আনছে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি বেসরকারি ত্রাণ প্রচেষ্টার ফলে। অসংখ্য সংগঠন, এনজিও, ক্লাব, এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চাঁদা তুলে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। যদি শক্তপোক্ত সরকারি ত্রাণ ব্যবস্থা গড়ে উঠতো তাহলে এই সমস্ত টাকাই মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা পড়তো এবং কেন্দ্রীয় ভাবে সুষ্ঠু পদ্ধতিতে খরচ হতে পারতো।
(৩)
আসলে গণতান্ত্রিকতার ভিত্তিভূমি স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থাগুলি দুর্বল অথবা দলদাস হয়ে পড়লে আপৎকালীন লড়াই ভালোমতো লড়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। শুরুতে কেরল ও মহারাষ্ট্রে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। আজ কেরল মরণজয়ী। আর সেখানে এই সাফল্য এসেছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে বিপুল বোঝাপড়ার মাধ্যমে। রোগের বিরুদ্ধে তার অসমসাহসিক লড়াইয়ের কথা এখানে বিস্তারিত নয়, কারণ এ লেখায় ত্রাণ বন্টনে সাফল্যই বিবেচ্য।
ত্রাণ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার ব্যাপারে সাফল্য এসেছে বিকেন্দ্রীভূত শাসন পরিচালনা, তাতে জনগণের অংশগ্রহণ এবং ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলি স্ফূর্ত হয় এমন দৃষ্টিভঙ্গী চর্চার মাধ্যমে। গ্রামপঞ্চায়েতের মতো আরো স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসন প্রক্রিয়াকে অক্সিজেন যুগিয়ে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি ও প্রোটোকলকে তার ক্ষমতার চৌহদ্দিতে এনে ফেলা খুব বড় ব্যাপার।
২ লক্ষ ৬০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের সমস্যা কেরল এতো ভালোভাবে মেটালো কী করে ? প্রথমেই এদেরকে "অতিথি শ্রমিক" ঘোষণা করা অত্যন্ত সদর্থক মনোভাবের পরিচায়ক। লকডাউনের পর ঘরে ফেরার জন্য ব্যগ্র এদেরকে রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ১২০০ শিবিরে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটি শিবিরের দায়িত্বে আছেন এক একজন অভিজ্ঞ আইএএস অফিসার। ভালো ব্যবহার, হিন্দি ভাষায় সংকটের কথা ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বলা, খাবারের স্বাদ মনমতো না হওয়ায় ড্রাই রেশন দেওয়া, পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করা, সর্বোপরি মানুষের মতো ব্যবহার, এইসব ছোট ছোট অথচ সদর্থক পদক্ষেপের কারণে পরিযায়ীদের বিশ্বাস অর্জন করা সহজ হয়েছে।
আর্থিক পরিস্থিতির বিচারে কেরল একেবারেই ভালো জায়গায় নেই। কেন্দ্রীয় সরকার অতিমারির মোকাবিলায় দিয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি টাকা। তবু হতোদ্যম না হয়ে অতিমারির মোকাবিলায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষ্য হল যেন একটি লোকও ভুখা না থাকে। সেজন্য দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে রেশন, খাবারের প্যাকেট, কুদুম্বশ্রীর আওতায় থাকা পরিবারগুলিকে ঋণ ও এপ্রিল মে মাসের পেনশন দেওয়া হচ্ছে একবারে। স্বায়ত্ত্বশাসন সংস্থা ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতা এই দুই অবলম্বনে ভর দিয়ে চমৎকার লড়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকার।
পঞ্চায়েত সূত্রে আশা ও কুদুম্বশ্রী কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্ব স্ব এলাকায় বিদেশ প্রত্যাগতদের খুঁজে বার করার। প্রতিটি পঞ্চায়েত থেকে স্বেচ্ছাসেবীদের তালিকা তৈরি হয়েছে কোয়ারেন্টিন পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যদপ্তরকে সাহায্য করবার জন্য। স্বেচ্ছাসেবী তালিকায় নাম নথিভুক্ত করবার জন্য প্রবল আগ্রহ দেখা গেছে। প্রতিটি পঞ্চায়েতে কমিউনিটি কিচেন একটি অভিনব কর্মসূচি। প্রায় ২৩ বছর ধরে এগুলি চালিয়ে আসছে কুদুম্বশ্রীদের একটি নেটওয়ার্ক। পরিযায়ী শ্রমিক, গৃহহীন এবং আরো যাদের খাবার দরকার, তাদের খাবারের ব্যবস্থা এখানেই হয়।
মোদ্দা কথা হচ্ছে কেরল শিখিয়ে দিল যে দুর্যোগের সময় স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হয় ও সেই ব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখতে হয়। দুর্যোগের মোকাবিলায় একেবারে সামনের সারিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কাজটা স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসনের সঙ্গে জড়িতদের ওপরেই ছেড়ে দিতে হবে, কারণ এ কাজটা সবচেয়ে ভালো তারাই পারে। ফোঁপরদালালরা নাক গলিয়ে যাতে কাজটা চৌপাট করে না দেয় সেদিকে নজর রাখার নামই রাজনৈতিক বিচক্ষণতা।
কোভিড১৯ বা অন্য কোনো দুর্যোগের সঙ্গে লড়ার সময় এই শিক্ষা আমরা যেন কোনো রাজ্যেই না ভুলি।
সূত্র:
কোভিড ১৯ সংক্রমণ কীভাবে মোকাবিলা করছে কেরল - আনন্দ ম্যাথু
Advisory for Quarantine of Migrant Workers pdf
টেলিগ্রাফ, ১৬ই এপ্রিল
হিন্দু, ১৩ই, ১৬ই এপ্রিল
আনন্দবাজার, ১৬ই এপ্রিল
ইন্ডিয়া টুডে ২৮ শে মার্চ
এইসময় ১৭ই এপ্রিল
are | 162.158.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১১:৪৬92441কোটার ঘটনা দেখলেন তো। বিদেশীদের জন্য ব্যবস্থা হবে, কোটার ছাত্রছাত্রী কি তীর্থ করতে যাওয়া লোকজনের জন্যেও হবে। কিন্তু এসব গরীব মানুষ ভারতে মনুষ্যপদবাচ্যই নয়।
এই লকডাউনের ফলে এত লোক না খেতে পাওয়া, আধপেটা খাওয়া, শখানেক মাইল হাঁটা, এসব আর কোন সভ্য দেশে হয়না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ টান দিয়ে কতটূকু বা কতদিন? খুব দরকারি লেখা, একদম ঠিক বলেছেন, সরকারের দায়, আদায়ও তাদের থেকেই করতে হবে। কেরালা তামিলনাড়ু দেখিয়েছে, করা যায়। কিন্তু এসব করার চেয়ে লোকে হয় অন্যের কথা ভাববে না, ভাবলেও ওই ব্যক্তিগত রিলিফ মোডটুকুই কেবল।
ট্রাম্পের মত সরকার ও এতগুলো লোককে এত বেকার ভাতা দিয়ে দিল। নাহয় বার্নির কেরামতিতেই। ইন্ডিয়ায় তেমন চাপ দেওয়ার মত বিরোধীও তো নেই। এই সুযোগে বেকার নথিভুক্ত করা বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ বেকার ভাতাটুকু পিএমকেয়ার ফান্ড থেকে দেবার চাপও তো দেওয়া যেত।
এমনিতেও অবশ্য ইন্ডিয়ায় অর্ধেক মানুষ পোকামাকড়ের মতই থাকে আর মরে। বস্তিগুলো কি এমনি সময়েই মানুষের থাকা বাঁচার যোগ্য? গ্রামে রোজগারের সুযোগ না কমলে অনেক মানুষের মত জীবন কাটাতেন গ্রামে। গ্রামে ফিরে গেলেন যাঁরা, আর ফিরতে না হলেই ভাল। গ্রামে রোজগারের বন্দোবস্ত বাড়ানোর চাপও কোন দল টল দেয়না।
দুর্ভাগা দেশ।
শামীম আহমেদ | 172.69.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৩:০৭92443খুবই জরুরি লেখা।
শুরুতেই সদিচ্ছে ছিল না কারুরই। আমরা ভাবিও নি লকডাউনে কী কী হতে পারে। করোনায় ভয় দেখানোয় মেনে নিয়েছিলাম সার্বিক লকডাউন। তীর্থযাত্রী থেকে শুরু করে ক্ষমতার পাশে থাকা লোকজন সুবিধে/ছাড় পেয়েছেন লকডাউনে। সর্বহারারা পিলপিল করে বাড়িমুখো হতেই চমক ভাঙল দেশের। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে তেমন স্পষ্টা ডেটা কোথাও নেই, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই কাগজে-কলমে এদের অস্তিত্ব নেই। এরা 'দিন আনি দিন খাই' ভুক্ত, তাই। এদের বাড়ি পাঠাতে তোড়জোড় নেই কারোর। কোটায় পড়তে যাওয়া ভবিষ্যতের প্রকৌশলীদের বাড়ি পাঠাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার, এমনও শুনলাম। আরও শুনলাম সরকার নাকি এই সুযোগে শ্রমিকদের কারখানায় ১২ ঘন্টা এবং তারচেয়েও বেশী খাটানোর জন্য আইনে কর্পোরেট-বান্ধব পরিবর্তন আনছে! বাড়ি পাঠানোর কোনও গল্পই নেই! আমরা যেন সরকারের এইসব অপপ্রয়াস আটকে গণ-বান্ধব, মানবিক শ্রমনীতি প্রণয়ন এবং প্রতিষ্টায় চাপ সৃষ্টি করি।
পুনশ্চ
এসব মানুষদের কাগজ দেখতে চাইছিল সরকার, যা শতাব্দীর সবচেয়ে নির্মম জোক।
হখগ | 172.69.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৩:২১92444
Amod Boshtumi | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৫৮92446খুব দরকারি লেখা।
dc | 172.69.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৫৯92447
dc | 172.69.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৪:০৬92448হ্যাঁ,তামিলনাড়ুতেও খুব ভালো কাজ হচ্ছে। ঠিকই, বন্যার পরও হয়েছিল। আসলে মনে হয় করোনা যুদ্ধে পথ প্রদর্শক হিসেবে কেরলের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়ে যাবে। সংক্রমণেও ফার্স্ট, রোগমুক্তিতেও ফার্সট।
আর আমি টুপি খুলি লাগাতার দুর্যোগের মুখে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে এই লড়াইয়ের জন্য। বিধ্বংসী বন্যা, ভূমিক্ষয়, নীপা ভাইরাস, করোনা, কেরলকে একের পর এক লড়তে হচ্ছে। সবেতে বিজয়ী। অজান্তেই কোথায় যেন তাই কেরলকে একটু এগিয়ে রাখতেই হয়।
dc | 108.162.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৫92452শ্রমিকদের নিয়ে, নিরন্ন মানুষ নিয়ে এই বিশৃঙ্খলা এপারেও ব্যপক। লকডাউন উপেক্ষা করে বেতনের দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক বিক্ষোভ হচ্ছে, শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে হচ্ছে খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিল।
আর বেতের বাড়িতে সরকারের করোনা নাশ কর্মসূচি চলছেই। " ঘরে ঘরে খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার" সুখচিত্র শুধু টিভির পর্দায়।
আর লাখ লাখ ঘরহীন মানুষের জন্য ঘরে থাকার নিদর্শনা কি প্রহসন!
"যাদের ঘর নাই, তাদের ঘরে ফেরার কোন
তাড়া নাই। তবু না ফেরারাও আজ ফিরে
যাবে ফের, না থাকা গ্রামের ঘরে। যার না
থাকা উঠোনে প্রতীক্ষায় আছেন, না থাকা
এক মা। খুবই সাধাসিধে। না জ্বলা চুলায়
সেমাই রাঁধবেন তিনি, না ফেরাদের ঈদে।"
(ইমতিয়াজ)
তনয় রায় | 162.158.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ২১:২৭92478এই লেখাটি করোনা নিয়ে হাজার খানেক লেখার মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছ । এখানে সমাজের নীচের তলার মানুষরা, যারা পিলসুজের মতো ঘাড়ে করে ভারতের যা কিছু উন্নতি এবং অগ্রগতি তা বয়ে বেড়ায়, তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছে। তাদের ত্রাণ নিয়ে যে অসংবেদনশীলতা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার উভয়েই প্রদর্শন করছেন তার এক জ্বলন্ত আখ্যান।শুধু একটি অনুযোগ - ঘোষণাসর্বস্ব আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে চিনতে লেখকের এখনো কিছু বাকি আছে মনে হয়। করোনা সংক্রমণ, লক ডাউন এবং ত্রাণ বিষয়ে তার যাবতীয় ঘোষণাই ঘোষণামাত্রই থেকে গেছে। রাজ্যের মানুষের কপাল এখনো পর্যন্ত ভালো বলতে হবে যে আমরা এখনো স্পেন ইতালি অথবা আমেরিকার মতো অবস্থায় পড়িনি। কিন্তু আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহারে দেশের মধ্যে আমরাই সম্ভবত প্রথম।
দেবদূত বাসু | 172.69.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ২১:৩০92480অত্যন্ত জরুরী প্রসঙ্গ। সবকিছুর থেকে রাজনীতি দূরে সরিয়ে রাখতে পারলে একটু হলেও সুরাহা হয়।
আমার ভুল হতে পারে তবে আমার মনে হয় এদেশের সবচেয়ে বেশী বাইরের রাজ্যের মানুষের ভিড় যেই রাজ্যে তার নাম দিল্লি।
বলছিনা সরকার করছে না, যথেষ্ট করছে কিন্তু রেশন সিস্টেম বা টেম্পোরারি যে কার্ড ইস্যু করার কথা সেই ওয়েবসাইট টি 24এপ্রিল থেকে ডাউন।
70% ভিন রাজ্যের মানুষের 50% এর কাছে দিল্লি র রেশন কার্ড নেই, তাদের লোকাল স্কুলের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে শুধু ডাল আর ভাত এর জন্য, কয়েকশো মানুষের লাইনে কয়েক ঘন্টা ধরে দিনে 2 বার।
দিল্লি পশ্চিম এ ইসকন ও দিনে একবার গাড়ি করে দিয়ে যাচ্ছে জনা 300 লোক কে খাবার কিন্তু এর কোন শেষ নেই।
আমার বাড়ির পিছনের অঞ্চল টা মূলত গ্রাম আর ফ্যাক্টরি যেগুলো সব বন্ধ।
আর মূলত সরকারি স্কুল আর কমিউনিটি সেন্টার গুলো থেকে দিল্লির গ্রাম গুলো পিছিয়ে।
এবার এরা কিভাবে রোজ এক কিমি দূরে সাড়ে 9 টায় লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর 2 টায় খেতে পাবে আবার বিকেলে সেই একই অবস্থা ।
এদের কি হবে, ব্যক্তিগত ভাবে কতজন কে খাওয়ানো সম্ভব ?
এর সদুত্তর কে দেবে ?
প্রতিভা | 108.162.***.*** | ১৯ এপ্রিল ২০২০ ২৩:১৩92546ঘন্টা সুমন!!
| 162.158.***.*** | ২১ এপ্রিল ২০২০ ০৯:২৭92582
| 162.158.***.*** | ২১ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৪২92583এই দাবিগুলো কেউ তুলছেনা কেন,সরকারি রেশন যদি পায়ও, চাল, ডাল বা শুধু চাল কি চিনিতে লোকের খাওয়া হয়? একদিকে মোদীজি বলছেন সুষম খাদ্য খেয়ে ইম্যুনিটি বাড়াতে, অন্যদিকে শুধু চাল ডাল!
যাদের কোন আয় নেই, তাঁরা এসব কীকরে কিনবেন?
আর এই লকডাউনের চোটে কোন সব্জি ফল না খেয়েও তো লোকের স্বাস্থ্য খারাপ হবে, সেসবের হিসেব কে রাখে!
আমায় ঈপ্সিতা দি জিজ্ঞেস করলো দিল্লি পুলিশের কি ভূমিকা তারা কেন দিচ্ছে না খাবার বা রেশন কুপন।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব ভালো, দিল্লি পুলিশ আমায় খুব হেল্প করছে কিন্তু যখন আমি রেশন পাস এর কথা বলছি ওরা কনফিউজড হয়ে যাচ্চে।
আসলে হয়েছে কি দিল্লি মিউনিসিপ্যাল ভোটে জিতেছে বিজেপি আর লোকসভা তেও, কিন্তু বিধানসভা আপ এর, এবার এখানকার লোকাল পকেট গুলোয় বিজেপির ভলান্টিয়ার বেশি।
রেশন পাসের কথা বললে তারা বলছে আপ দিচ্ছে না এদিকে আপ ও সেন্ট্রাল এর বিরোধিতা করছে, মাঝখানে ফেঁসে গেছে মূলত পরিযায়ী অন্য রাজ্যের শ্রমিক রা।
আমার নিজের কাছে এই মুহূর্তে 97 টি বাঙালি পরিবারের লিষ্ট আছে যাদের খাবারের দরকার, আমাদের রান্নাঘরে তারা খাচ্ছেন তোবুও...
| 162.158.***.*** | ২১ এপ্রিল ২০২০ ১০:০০92585
| 162.158.***.*** | ২১ এপ্রিল ২০২০ ১০:০৫92586
গরীব কল্যাণ | 162.158.***.*** | ০৭ মে ২০২০ ১৭:৫৫93099