একটি ভাষার জন্ম
আমার ছোটবেলা কেটেছে বিহারের (অধুনা ঝাড়খণ্ড) ঝরিয়া শহরে। বাবা মায়ের সঙ্গে বিহার টকিজ সিনেমা হলে (সে আমলে গোটা প্রদেশের একমাত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হল) একটি ছবি দেখার আবছা স্মৃতি আছে। সিনেমা হলের বাইরে একটা নিচু হলদেটে রঙের দেয়ালে চলতি এবং আগামী আকর্ষণের ইস্তেহার লাগানো থাকতো। সেখানে লেখা পরবর্তী আকর্ষণের নাম:
ইহুদি কে? কারাই বা নতুন ইহুদি? বাইবেলের সঙ্গে পরিচয় হয়নি তখনো। বাবার কাছে জানলাম এরা একটি ছিন্নমূল জাতি। দেশ থেকে দেশান্তরে ঘর বাঁধে। উৎখাত হয়। আবার ঘর খোঁজে। হাজার বছর ধরে এমনি চলছে। নতুন ইহুদি কারা? বাবা বললেন এবারে সিনেমাটা দেখো। তাহলে কিছুটা বুঝবে। ভারত ভাগের পরে পূর্ব বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘর হারিয়ে আবার ঘরের সন্ধানে পথে নেমেছেন, সেই ইহুদিদের মতন। এরাই নতুন ইহুদি। আজকের ছিন্নমূল বাস্তুহারা মানুষ।
দেশটা ভাগ হয়েছে জানি কিন্তু আট বছর বয়সে ছিন্নমূল কথাটার অর্থ বোঝা শক্ত ছিল। মূল মানে কী? বহু বছর আগে বীরভূম জেলার একটি নিতান্ত গণ্ডগ্রামে কোন অজানা কারণে আমাদের পূর্বপুরুষেরা বাসা বেঁধেছিলেন। জ্ঞান হয়ে থেকে সেই আমতলা জামতলা মোড়ল পুকুর খিড়কি আটচালা চিনেছি। বিহারের শহর বা কলকাতা যেখানেই থাকি না কেন গরমের ছুটিতে, পুজোতে, শীতে ধান কাটানোর সময়ে যাবার একটাই ঠিকানা। এই ছবি দেখে এবার জানলাম নতুন ইহুদিদের কথা (কানু এবং ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসামান্য চরিত্রচিত্রণ)। এঁরা সেই মানুষ যারা তাঁদের আমতলা জামতলা রাসের মেলা দিঘির পাড় ফেলে আসতে বাধ্য হয়ে এসেছেন অন্য দেশে ঘরের খোঁজে।
ঠিক যেমন একদিন জুডিয়া থেকে ইহুদিরা বহিষ্কৃত হন।
ইহুদিদের পথচলার ইতিহাস অনেক পুরনো। লোহিত সাগর ভাগ করে তার শুকনো ডাঙা দিয়ে মোজেস তাঁদের পৌঁছে দিয়েছিলেন অপর পারে। সেখান থেকে সিনাই পর্বতে পেলেন ঈশ্বরের দশ আদেশ। মরুভূমিতে চল্লিশ বছরের পদক্রমা শেষে তাঁদের নিয়ে এলেন হিব্রু বাইবেলের সেই প্রতিশ্রুত দেশের দোরগোড়ায়। তার নাম কানান, আজকের জর্ডান, ইজরায়েল, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর। দুগ্ধ মধু বয়ে যায় সে দেশে। কয়েকশ বছর সুখে কাটল, তৈরি হল সলমনের মন্দির। কপালে শান্তি নেই, মন্দির ভাঙলেন নতুন রাজা, ইহুদিরা নির্বাসিত হলেন ব্যাবিলনে (আজকের ইরাক)। ঘরে ফেরার অনুমতি পেলেন আরেক সহৃদয় পারসিক রাজার কাছ থেকে। আবার গড়লেন দ্বিতীয় মন্দির। তারপরে জুডিয়াতে রোমান রাজত্ব, বিদ্রোহ। পুনর্বার বিধ্বস্ত হল মন্দির যার পশ্চিম দেয়ালটুকু এখনো দাঁড়িয়ে আছে, যার নাম ক্রন্দনের প্রাচীর (ওয়েলিং ওয়াল / ক্লাগে মাউয়ার)। জেরুসালেমে ইহুদির প্রবেশ নিষিদ্ধ। অতএব আবার পোঁটলা বাঁধো। পথে এবার নামো সাথী।
বিতাড়িত ইহুদি ছড়িয়ে পড়লেন নানান দিকে। যেমন আজকের তাজিকিস্তান। কেরালার মত প্রত্যন্ত দিগন্তে (সেখানে প্রাচীনতম ইহুদি সংস্কৃতির খোঁজ পাওয়া যায়- হিব্রু -মালায়ালাম নামের এক ভাষার সন্ধান পাওয়া গেছে)। সরাসরি পুব দিকে বা আরব অঞ্চলে যারা এলেন, তাঁদের নাম মিজরাহি (হিব্রুতে পূর্ব) বা পূর্বের ইহুদি। ভূমধ্যসাগরের তীর ধরে একদিন স্পেনের উপকুলে যারা হাজির হলেন তাঁরা সেফারদিম নামে পরিচিত। হিব্রুতে স্পেনের নাম সেফারদা। সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় এলেন মধ্য ইউরোপে। যে অঞ্চলকে আমরা জার্মান ইউরোপ বলে চিনি তার হিব্রু নাম আশকেনাজ। সেখান থেকে তাঁরা ছড়িয়ে পড়লেন আজকের পোল্যান্ড ইউক্রেন লিথুয়ানিয়া রাশিয়াতে। তাদের নাম হল আশকেনাজি (আজকের ইসরায়েলে তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি)।
বাইবেল (পুরনো) লেখা হয়েছে হিব্রুতে। কিন্তু জিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেন আরামাইক ভাষাতে। সেটি জুডিয়াতে হিব্রুর পাশাপাশি মানুষের মুখের ভাষা হিসেবে সম্যক পরিগণিত। গ্যালিলির পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ‘আজ আমাদের দৈনিক রুটি দাও’, এ কথাটি তিনি হিব্রুতে নয়, আরামাইকে বলেছিলেন। এ ভাষার জন্ম আজকের ইরাকে, যেখান থেকে এসেছে আমাদের অ্যালফাবেট। তিন হাজার বছরের পুরনো আরামাইক হিব্রু এবং আরবির পিতামহ। হিব্রু আজ পুনর্জীবিত হয়েছে কিন্তু আরামাইক বলার মানুষ হাতে গোনা যায়।
ইহুদিরা যখন জুডিয়া থেকে বিভিন্ন দেশের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন, তাঁদের মুখের ও ধর্ম কর্মের ভাষা হিব্রু। আরামাইক বেঁচে থাকল কেবল পূব দিকে, আজকের সিরিয়া ইরাকে। ইউরোপে ইহুদি এলেন একটিমাত্র ভাষার সম্বল নিয়ে। বাংলার ভরসায় ইংল্যান্ডে পৌঁছুনর মত! সেটা স্পেনে কারো বোধগম্য হয় না। জীবন যাত্রার কারণে শিখলেন ল্যাটিন অক্ষর। স্থানীয় ভাষা, নিজেদের মত করে, কানে শুনে। সে আমলে আরবদের শাসন স্পেনে। অতএব আরবি শিখলেন। স্কুলে গিয়ে নয়। স্কুলে যাওয়ার অধিকার ছিল না। ফলে স্প্যানিশ ও আরবির সংমিশ্রণে একটি ভাষার জন্ম হল, তার নাম লাদিনো (ল্যাটিন থেকে)। আরেক দল চলেছেন মধ্য ইউরোপ পানে, তুরস্ক গ্রিস পেরিয়ে। এক হাজার শতাব্দী নাগাদ তাঁরা ফ্রান্সে রাইন নদী ধরে ক্রমশ উত্তরে গেলেন।
রাইন নদী ধরে উত্তরে যাবার সময় তারা কানে যে ভাষাটি শুনলেন সেটি আজকের জার্মান ভাষার পুরনো রূপ। সেটাই যেমন বুঝলেন তেমনি নিজের মত করে হিব্রু হরফে লিখতে শুরু করলেন, ব্যাকরণের তোয়াক্কা না রেখেই। যখন সেই ভাষাতে জার্মানদের সঙ্গে কথা বললেন, জার্মানরা প্রথমে মৃদু হাস্য করলেও কথার মানেটা বুঝলেন। মনে ভাবলেন এরা ঠিকমত জার্মান না শিখলেও কাজটা চালিয়ে নিচ্ছে!
ভাবুন আমরা সিলেটি বা বরিশালের কথ্য ভাষাটিকে বাংলা হরফে লিখছি। ইদিশের সঙ্গে জার্মানের তুলনা অনেকটা তাই। বাংলা ভাষার চেয়ে বয়সে নবীন। ইদিশ হল ইউরোপিয় ইহুদিদের মামা লশেন বা মাতৃ ভাষা। হিব্রু রইল পবিত্র ভাষা (কাদেশ)।
কেতাবি তথ্য অনুযায়ী ইদিশ ভাষার প্রথম পরিচয় মেলে ১০০০ সালে। ১২৭২ সালে জার্মানির ওয়রমস শহরে (যেখানে ১৫২১ সালের এক বিশাল ধর্ম সভায় মারটিন লুথার নামের এক ধর্ম যাজককে খ্রিস্ট ধর্মে অবিশ্বাসী ঘোষণা করে বধের যোগ্য সাব্যস্ত করা হবে)-র সিনাগগে প্রথম লিখিত ইদিশ ভাষার নমুনা পাওয়া যায়। লিখিত ইংরেজির প্রথম প্রমাণ চসারের ক্যানটারবেরি টেলস লেখা হবে আরও ১২০ বছর বাদে। সঠিকভাবে বলতে গেলে সাতশ বছর ধরে তামাম ইউরোপে এই ভাষাটি “ইহুদি জার্মান” ভাষা নামে পরিচিত ছিল।
ইহুদির জার্মান প্রতিশব্দ ইয়ুডে। তাই তাঁরা যে ভাষায় কথা বলেন তার নাম হল ইয়ুদিশ বা ইদিশ অর্থাৎ ইহুদির ভাষা আবার অন্য অর্থে জার্মানে ইদিশ বলতে ইহুদি ধর্মের মানুষও বোঝায়। জার্মান ভাষার একটি আদত আছে যে কোনও দেশের নামের সঙ্গে ইশ যোগ করে সে দেশের ভাষাটির নামকরণ করা। যেমন তাদের মতে হল্যান্ডের লোকে বলে হলান্দিশ (যাকে আমরা বলি ডাচ), রাশিয়া থেকে রুশিশ, তুরকি থেকে তুরকিশ। যেমন হল্যান্ড থেকে হলানডিশ, জার্মানি প্রবাসের সময় আমাকে অনেকবার প্রতিবাদ করতে হয়েছিল, বলতে হয়েছে আমার দেশটার নাম ইনডিয়েন হলেও ইনডিশ বলে কোনও ভাষা নেই। আমাদের আছে অনেক ভাষা। প্রতিপন্ন করতে আমাদের দেশের ব্যাঙ্ক নোট দেখিয়েছি – সে সময়ে ১৫টা ভাষায় তার মূল্য ঘোষিত করা হত। ওই জার্মান ইশ জুড়ে ভাষার নাম করার লজিক সেখানে খাটে না।
ইহুদিদের দেখেই ক্রিশ্চিয়ান ইউরোপের মানুষ উদ্বাহু হয়ে আসুন বসুন একটু জিরিয়ে নিন বলে আপন বৈঠকখানার ঘরের দরোজাটি খুলে দিলেন না। অভিবাসী মানুষদের কেউ তা দেয় না। বরং অত্যন্ত সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে দেখলেন, দূরে রাখলেন।
১৬শ শতকে সালে পোপ নির্দেশ দিলেন ইহুদিরা যেন কোনমতেই ক্রিশ্চিয়ানদের সঙ্গে বা কাছাকাছি বাস না করেন। তাহলে জনজীবন কলুষিত হবে। ক্রমশ গড়ে উঠল ঘেটো যার প্রাথমিক নাম ছিল ইউডেরিয়া। সেখানকার লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হল ইদিশ। সিনাগগে হিব্রু চলে। সেটি দেব ভাষা, কাদিশ। কিন্তু বাড়ির ভাষা ইদিশ। এটি সে ভাষার প্রথম স্তর, এতে প্রায় আশি শতাংশ জার্মান ( উচ্চ, নিচু, পাড়ার, মেছুড়ের), পুরনো ফরাসী, ইতালিয়ান ও হিব্রুর বিচিত্র সংমিশ্রণ।
ইদিশের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হল যখন ইহুদিরা আরও পুব দিকে গেলেন। আশকেনাজিরা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন পোল্যান্ড লিথুয়ানিয়ান রাজত্বে (ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়ো সাম্রাজ্য)। সেখানে দৈনন্দিন জীবনে মেলামেশা করলেন স্লাভিক, রাশিয়ান মানুষের সঙ্গে। এতদিনের জার্মান ভিত্তিক ভাষায় ঢুকে পড়লো স্থানীয় স্লাভিক। রাশিয়ান শব্দ। পরের পাঁচশ বছর পোল্যান্ড রাশিয়া রুমানিয়া হাঙ্গেরিতে ইহুদি সমাজ গড়ে উঠল। ফলে জার্মান ভাষার প্রাধান্য থাকল বটে কিন্তু ইদিশ ভাষায় হিব্রু ছাড়াও একাধিক ভাষার অবদান যুক্ত হতে আরম্ভ করল, যথা পোলিশ, ইউক্রেনিয়ান, রাশিয়ান। ১৫শ শতকে স্পেনের রাজারা ইহুদি বিতাড়ন পালা শুরু করলে। যে ইহুদি শাখাটি স্পেনে বা আইবেরিয়া উপদ্বীপে গিয়েছিল তারা এবার আপন রাস্তা দেখতে বাধ্য হল। তাঁদের মুখের ভাষা লাদিনো। সেখানে মিশেছে স্প্যানিশ, আরবি, পুরনো ফরাসি ইতালিয়ান। এবার কালক্রমে এঁরা যখন উত্তরে এসে ভাই বেরাদরের সঙ্গে মিললেন, লাদিনো তার ছাপ রাখল ইদিশ ভাষায়।
ইদিশ মুখের ভাষা। মায়ের ভাষা। সেখানে সমাস বিভক্তি কর্তা কর্ম করণের চোখ রাঙ্গানি নেই। শিশুর সঙ্গে মায়ের বাক্যালাপ ব্যাকরণ মেনে হয় না। দুজনে দুজনের কথা বোঝে কারণ সে হৃদয়ের ভাষা। ১৭৮৭ সালে হ্যালহেড সাহেব ব্যাকরণের বই ছাপা হবার বহু বছর আগেই বাঙালি সে ভাষায় কথা বলেছে, গান বেঁধেছে। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর সে ব্যাকরণ পাঠ করার সুযোগ পান নি। অন্নদামঙ্গল লেখা হয়েছে তার পঁচিশ বছর আগে।
প্রায় পাঁচশ বছরে অনেক গল্প গুজব গুলতানি হওয়ার পরে প্রথম ইদিশ বই ছাপা হয়েছে মাত্র ১৬০২ সালে! ১৬৮৬/৮৭ তে আমস্টারডামে প্রথম দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা। কিন্তু এই ভাষায় প্রথম প্রামাণ্য ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে!
উনবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকায় ইহুদি আগমন বাড়ল। নিউ ইয়র্কের এলিস দ্বীপে জাহাজ থেকে তাঁরা যখন নামলেন, আমেরিকান অফিসার আগতদের নাম পতা দেশ পরিচয় জানতে চাইলেন। আপনার ভাষা কী? তার উত্তরে অনেকে বললেন ইদিশ। সেখানে আর একটু ব্যাখ্যা করে বোঝানোর চেষ্টা করলে সরকারি আমলার আক্কেল গুড়ুম হবার সম্ভাবনা ছিল। আমেরিকায় এসে ইহুদিরা দেখলেন ইংরেজি প্রায় সবাই বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু আপন স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে নিউ ইয়র্কের লিটল ইতালিতে ইতালিয়ান বলছে। মিলওয়াকিতে জার্মান। শিকাগোতে পোলিশ। এবার তাঁদের মুখের ভাষা ইদিশ আখ্যা দিয়ে বাজারে চালু করলেন। পুরনো ইউরোপের দাগ মেরে দেওয়া ইহুদি জার্মান নয়। এটা তাঁদের নিজেদের ভাষা। লেখেন হিব্রু হরফে ।
হিব্রু ভাষাটি ইতিমধ্যে প্রায় মৃত। সিনাগগে, বিয়েতে, শ্মশানে শোনা যায় বটে কিন্তু খুব কম লোক বোঝে। আমাদের সংস্কৃতের মত। সে ভাষায় কেউ কথা বলবে না আরও একশ বছর। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরি হবার পর ইহুদিরা উঠে পড়ে লাগল হিব্রু ভাষাটিকে পুনর্জীবন দেবার জন্য। লাতিন বা সংস্কৃতের মত যেন তার ঊর্ধ্বগতি না হয়।
ইসরায়েলে একজন ভারতীয় ইহুদি আমাকে বলেছিলেন এদেশে আর সব ভাল, বুঝলেন। কিন্তু এই ভাষাটা লেখা ও শেখা বেজায় শক্ত ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মারা গেছেন অন্তত পঞ্চাশ লক্ষ ইদিশ ভাষী ইহুদি। আজকের ইসরায়েলে ইদিশের কোন সম্মান নেই। নবীন ইসরায়েলিদের কাছে অসেমিতিক জার্মান ভাষার ছোঁয়ায় কলুষিত। সিটি ব্যাঙ্কের কর্ম কালে এ কথা একাধিকবার শুনেছি ইসরায়েলে।
পুরনো হিব্রু ভাষা কণ্ঠে নিয়ে ইহুদি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। সে ভাষা একদিন আবদ্ধ হয়ে গেল সিনাগগের গণ্ডিতে, ধর্ম আলোচনায়। হাজার বছরের যাযাবর জীবনে ইহুদিদের কাছে ধম্মের ভাষা, তালমুদ। তোরার ভাষা ছিল হিব্রু। কিন্তু হৃদয়ের ভাষা ইদিশ। ইউরোপের পথে ঘাটে নগরে বন্দরে সাহিত্যে বিপ্লবে (সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম পর্যায়ে লেনিন ইদিশভাষী ইহুদিদের সমর্থন চেয়েছিলেন) ধ্বনিত হল ইদিশ। সব দুঃখ, বারে বারে গৃহহীন হবার যন্ত্রণা, এ সবের মধ্যেও তাঁরা হাস্য মুখে অদৃষ্টকে পরিহাস করেছেন। দুর্বার সেই অট্টহাসির প্রতিফলন ইদিশ রসিকতার গোপন গভীরে।
আমারে পাছে সহজে বোঝ তাই তো এত লীলার ছল
বাহিরে যার হাসির ছটা ভিতরে তার চোখের জল
তারপর একদিন সেই জাতি খুঁজে নিলো তার পুরনো ঐতিহ্য। পূর্বপুরুষের শব্দ। আজকের ইসরায়েলে হিব্রুর পুনর্জন্ম হল আর মাঝখানের হাজার বছরের মায়ের ভাষা (মামা লশেন) ইদিশ আজ অবলুপ্তির পথে। এমনি করেই ইতিহাসের চাকা ঘুরে যায়।
সীমিত পরিচয়ে ইদিশকে এক অসম্ভব শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে চিনেছি। শব্দের সঞ্চয় কম তাই শব্দাবলীর ব্যবহার অত্যন্ত চতুর !
উত্তেজিত বাঙালি বা ইংরেজ বা জার্মান মা বলতেই পারেন “কী আস্পর্ধা ঐ ছেলের! আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চায়!” ইহুদি মাতা বলবেন, “আহ্লাদ! সে ছেলে জামাই হতে চায় আমার!”
বাঃ, দারুন লাগল।
খুবভালো লাগলো I অনেক কিছু জানা গেল I
হীরেনের লেখায় বিষয়বস্তুর গভীরতা খুব স্বাভাবিকভাবে এক অন্য মাত্রা পায়, ... সমৃদ্ধ হয় আমাদের মনন।
খুব ভালো লাগল ... অনেক কিছু জানতে পারলাম ... পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ...
হীরেনের লেখাতে আর মুজতবা আলীর লেখার সুগন্ধ পাই।
এইরকম ঝরঝরে লেখা পড়ার আনন্দই আলাদা l
বাহ!! সমৃদ্ধ হচ্ছি!!
ভালো লাগলো