ছবি - র২হ
উকিলে মোক্তারে
পুরাকালে রাজার কথাই ছিল আইন। বিচারের কাজটাও রাজারা করতেন। আইন প্রণয়ন, তার প্রয়োগ এবং এবং সেই আইন অনুযায়ী বিচারের ব্যবস্থা এই তিন প্রক্রিয়াকে আলাদা করার ইতিহাস মাত্র আড়াইশ বছরের পুরনো (সেপারেশন অফ পাওয়ারস )।
বাদী ও বিবাদী পক্ষ রাজা বা শাসকের সামনে নিজের নিজের বয়ানটি পেশ করতেন।
একদিন ইহুদি রাজা সলোমনের দরবারে একটি শিশুকে নিয়ে হাজির হলেন দুই রোরুদ্যমানা নারী। দুজনেরই দাবি সেই সন্তানের মাতা তিনি। জুরিসপ্রুডেনসের বই ছিল না। সলোমন বললেন শিশুটিকে না হয় কেটে দু ভাগ করা হোক। আসল মাতা কেঁদে বললেন, চাইনে। দিয়ে দাও অন্য নারীকে। সলোমন বুঝলেন তিনিই সেই শিশুর মাতা। এখানে কালো কোট ও পরচুলা পরা অপর পক্ষের উকিল নাটকীয় ভাবে রাজাকে বলেন নি ‘মহারাজ, হে ধর্মের অবতার, একবার চেয়ে দেখুন এই মমতাময়ী মাতার প্রতি! আপনার হৃদয় কি বিচলিত হয় না, সন্দেহের কি কোনো অবকাশ আছে যে এই নারী সন্তানের প্রকৃত মাতা ‘?
প্রাচীন গ্রিসের বিচার ব্যবস্থায় ছিল সেই একই প্রথা। যেমন ভাবে পারেন, আপনার গল্প আপনি শোনান। বিচারকের কাজ তিনি করবেন। সিরাকুসের (আজকের ইতালি, এককালের গ্রিক উপনিবেশ, যেখানে দাঁড়িয়ে আরকিমিদিস একদিন বলেছিলেন ইউরেকা) গরগিয়াস প্রথম মানুষ যিনি সিসিলি থেকে গ্রিসে এসে বক্তৃতা দেওয়ার আর্টকে জনপ্রিয় করে তোলেন। অলিম্পিয়া এবং ডেলফি ছিল তাঁর স্টেজ। দলে দলে মানুষ টিকিট কেটে তাঁর ভাষণ শুনতে আসতেন। ক্রমশ প্রচুর বাগ্মীর আবির্ভাব হলো। তাঁরা আক্রোপোলিসের নিচের বাজারে বা আগোরায় নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে দার্শনিক আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত থাকতেন। পিনিক্স নামক একটি পাথরের ওপরে উঠে কখনো বা জগত, জীবন, মানুষের অন্যায় আচরণ, নৌ যুদ্ধের প্রয়োজন ইত্যাদি বিচিত্র বিষয়ে আপন অভিমত প্রকাশ করতেন, তা কেউ শুনুক না শুনুক। এই খানিকটা হাইড পার্কের স্পিকারস কর্নারের মতন! এই পাথরটিকে আজকের গণতন্ত্রের প্রথম প্লাটফরম বলে মানা হয়। পরে সক্রাতিস প্লেটো অ্যারিস্টটল সেখানে দাঁড়িয়েছেন।
ক্রমশ এই বক্তিয়াররা আরেকটি কাজ খুঁজে পেলেন। দেখা গেলো রাজা বা আমলাদের সামনে সকল নাগরিক নিজেদের কেস ঠিক ভাবে উপস্থিত করতে পারছেন না। বাদী বা বিবাদী তো আর্ট অফ পাবলিক স্পিকিং শেখেন নি। আন্তিফন নামক গরগিয়াসের এক চেলা পরামর্শ দিলেন দুই বিবদমান পক্ষের প্রয়োজন এমন একজন মানুষের যিনি মোটামুটি লেখাপড়া জানেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে কোন পক্ষের যথাযথ বয়ান দিতে পারেন।এই মানুষটি হবেন একজন নিঃস্বার্থ বন্ধু মাত্র যাঁদের কাজ অশিক্ষিত বাদী বিবাদীদের সহায়তা করা। অন্য অর্থে বলা যেতে পারে ইতস্তত ভ্রমণরত বাগ্মীরা একটা কাজের কাজ খুঁজে পেলেন! গ্রিকরা সেটি মেনে নিলেন কিন্তু সাব্যস্ত হলো মামলায় এই সহায়তার জন্য কোন পারিশ্রমিক দেওয়া বা নেওয়া চলবে না। বন্ধু রূপে যদি তাঁরা বিচারকের সামনে অবতীর্ণ হন, টাকা পয়সার প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে। মামলা জিতে কোন পক্ষ যদি সেই বক্তাকে আগোরার কোন শুঁড়ি খানায় দু পাত্তর সুরা পান করায় সেটাকে অবশ্য উকিলের ফি বলে ধরা হবে না।
রোমান সম্রাট ক্লদিয়াস পরবর্তীকালে বললেন ‘ এই সব বাগ্মি এবং বিচক্ষণ মানুষেরা একটা সেবা তো করছে। তাদের না হয় কিছু দক্ষিণা দেওয়া হোক’।
সুধী, যখনই কোন উকিলের বিল হাতে পাবেন, একবার মনের সুখে সম্রাট ক্লদিয়াসের আত্মার প্রতি আপনার সকল রোষ উগরে দেবেন।
রাজারা ফৌজদারি দেওয়ানি মামলার বিচার করতেন।সামাজিক আচরণ বিধি নিয়ে তাঁদের কোনো মাথা ব্যথা ছিল না। তাতে রাজকর্মে ব্যাঘাত হয়। মানুষের ইতিহাসে সামাজিক আইন কানুনের চার জন প্রণেতাকে আমরা বিশেষ সম্মান দিয়ে থাকি - হাম্মুরাবি, মোজেস, মনু এবং পয়গম্বর মহম্মদ। আইনের কাশী, মক্কা, জেরুসালেম স্বরূপ লন্ডনের ইনার টেমপেলের দেওয়ালে এই চারজনের মুরাল খোদিত আছে (যতদূর জানি পয়গম্বরের কোন কল্পিত রূপ একমাত্র এখানে দেখা যায় )।
১৯০১ সালে ইরাকের সুসাতে একটি কালো পাথরের স্তম্ভে বাবিলনের রাজা হাম্মুরাবির ২৭৭টি নির্দেশ আবিষ্কৃত হয়। শামাশ নামক দেবতার হাত থেকে তিনি এই আইনের সঙ্কলন গ্রহণ করেছেন। মানুষের সভ্যতার ইতিহাসে হাম্মুরাবির বিধান সবচেয়ে পুরনো। ক্যালেন্ডারের হিসেবে তিনি মোজেসের পুরোধা। সিনাই পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে মোজেস পাথরের ওপরে লেখা দশ আদেশ নিয়ে নেমে আসার (ইউ টিউবে টেন কমান্ডমেনটস ছবিতে একবার চার্লটন হেসটনকে দেখে নিন) হাজার বছর আগেই হাম্মুরাবি তাঁর বিধান দিয়ে গেছেন। তাঁর এক থেকে পাঁচ নম্বর আদেশ মিলে যায় হিব্রু দশ আদেশের সঙ্গে। হিব্রু বাইবেল হাম্মুরাবির নাম না করেও সেই বিধানের উল্লেখ করেছে একাধিকবার।
স্টিভ জবসের আড়াই হাজার বছর আগেই মোজেস সহজ সরল ইহুদি জীবনে কেবল একটি ট্যাবলেট শুধু দিয়ে গেলেন না। ৫৪২২ পাতার তোরা /তালমুদ এবং ৬১৩টি সামাজিক আইনের কড়চা দিয়ে সে জীবনকে তিনি হাজারটা নিয়মের কচকচিতে ভরিয়ে দিলেন। কোন কাজ কবে আমাদের করা উচিত, কোনটা নয়, কেন নয়, কখন নয় করলে কি শাস্তি তার বিরাট ফিরিস্তি। এই নিয়ে রাব্বিদের যে চুল চেরা আলাপ আলোচনা বাদ বিতণ্ডা শুরু হয়েছিল হাজার হাজার বছর বাদেও সেটি চালু আছে।
সামাজিক আইন বিধির বিস্তারিত লিখিত পাঠ ইহুদি তালমুদে পাওয়া যায়। এই যেমন ধরুন উইল – একজন মানুষের শেষ ইচ্ছার ব্যাখ্যান। কিভাবে সেটি লেখা হবে, কোন কোন বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ প্রথমে তোরাতে পাওয়া যায়, পড়ানো হয় শিউরিমের ক্লাসে।পরবর্তী আইন প্রণেতারা –মনু, মহম্মদ - দেশকালপাত্র ভেদে নতুন সমাজ বিধি রচনা করেছেন, যাকে মেনে নিয়েছে বহু দেশের সংবিধান।
আজকের ইউরোপ বা আমেরিকায় আইন ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইহুদিদের প্রাধান্য যে চোখে পড়ে তার কারণ হয়তো তোরাতেই নিহিত! বাল্যকাল থেকে তাঁরা ওই সব নিয়মের ভুক্তভোগী। শনিবারে কর্ম বিরতি, আয়ের কিছুটা শতাংশ দান খয়রাতে দিতে হবে এই রকম নিয়ম শয়ে শয়ে। দু জন রাব্বিকে জিজ্ঞেস করলে তিন রকম জবাব মেলে।
গোল্ডবেরগ এবং ফাইনস্টাইন বা করসাক এবং করসাক গোছের ওকালতি অফিস সর্বত্র দেখা যায়। আমার বন্ধু ও ব্যবসায়িক সহযোগী জোনাথান সলোমন এবং আইজাক ফেলডারবাউমের ব্যাখ্যান আগেই করেছি।
উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের অনেক দেশে ইহুদিরা প্রথম পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা পেলেন। তার আগে ইউরোপীয় ইহুদির পঠন পাঠন উচ্চশিক্ষা এবং কাজের অধিকার ছিল অত্যন্ত সীমিত। নাগরিকত্ব ও উচ্চশিক্ষা অর্জন করলেই কিন্তু তাঁদের সামনে হেড হান্টারদের লাইন পড়ে যেতো না। যোগ্যতা থাকলেই ইহুদিকে কাজে রাখতে মালিকরা নারাজ। অতএব অন্যের প্রতিষ্ঠানে ইহুদিদের কর্ম সংস্থানের সম্ভাবনা কম। তাঁরা খুঁজলেন স্বাধীন পেশা (জার্মানে ফ্রাইবেরুফ ), যেখানে নিজেরাই একটি দোকান খুলে বাইরের সাইনবোর্ডে লিখলেন ‘ব্লুমেনস্টাইন, উকিল ‘ অথবা ‘ ব্লাউ ও ভাইস, ডাক্তার’। আজকের ইউরোপ আমেরিকায় ওকালতি ও চিকিৎসা জগতে ইহুদিরা যে এমনি ধারা ছেয়ে আছেন তার সূত্রপাত এইখানেই। যখন ইউরোপীয় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, সরকারি দফতর ইহুদিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখলেন, উপায়ান্তর না দেখে শিক্ষিত ইহুদি বেছে নিলো স্বাধীন পেশা। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।
মনে রাখা ভালো ইহুদিরা উকিলের গাউন পরে বাগ্মিতা শুরু করার অধিকার পাবার বহু আগেই তাঁদের আদালতে দেখা গিয়েছে নানান রূপে। চুরি জোচ্চুরি, দলিল জাল করা, প্রতারণার অভিযোগে কখনো দাঁড়িয়েছেন কাঠগড়ায়। কখনো বাদী হয়েছেন। কখনো বিবাদী। কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে অর্থ উপার্জন করেছেন। লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, ইউক্রেন, বেলা রুশে, স্টেটেলে, গ্রামে গঞ্জে তাঁদের নিয়ে শোনা গেছে অজস্র কৌতুক কাহিনি।
**********
গোমেল, ইউক্রেন
বিচারক : আপনি এই লোক ঠকানোর কাজটা একাই করেছেন?
রোটব্লাট : আজ্ঞে, এই সব কাজ আমি একাই করে থাকি। আমাদের ব্যবসায়ে সৎ এবং নির্ভরযোগ্য সহকারী পাওয়া খুব শক্ত।
**********
সিমন ও লেভি ভালো বন্ধু। কিন্তু বিবাদ বাধল একশো রুবেল নিয়ে। সিমন সেটি ধার দিয়েছিল লেভিকে। লেভি তা অস্বীকার করেছে। অতএব আদালত। সিমন মামলা হেরে গেলো কারণ তার কাছে ঋণ পত্রের দলিল নেই। মামলা শেষে দুজনে আদালতের সিঁড়ি দিয়ে নামছে।
সিমন : লেভি, তোমার লজ্জা করলো না একশো রুবেলের জন্যে মিথ্যে কথা বলতে?
লেভি : লজ্জা তোমার হওয়া উচিত। মাত্র একশো রুবেলের জন্য আমাকে মিথ্যেবাদী হতে হল।
**********
বয়স্ক ইহুদি সাক্ষীর কাঠগড়ায়।
বিচারক : আপনার বয়েস কতো?
ইহুদি : চল্লিশ বছর! একশো বছর পর্যন্ত।
বিচারক : মানে ষাট বছর? এক কথায় বলুন বয়েস কতো?
ইহুদি : চল্লিশ বছর। একশো বছর পর্যন্ত।
বিচারক (ক্ষিপ্ত ): এক কথায় না বললে আপনাকে জেলে পাঠাব।
বিচারকের কাছে উকিল সেই প্রশ্ন করার অনুমতি নিলেন।
উকিল : একশো বছর পর্যন্ত বাঁচবেন। আপনার বয়েস কতো?
ইহুদি : চল্লিশ বছর।
পু : শতজীবী হবার সুপ্ত বাসনায় এককালে ইহুদিরা নিজের বয়েস এবং তার সঙ্গে একশো অবধি পৌঁছুনোর সঙ্কল্প প্রকাশ করতেন। তাই বয়েস যতই হোক না কেন তার সঙ্গে একশ বছর বাঁচার বাসনা জুড়ে দেওয়া হতো।
**********
রেজেসো ( দক্ষিণ পোল্যান্ডের বড়ো শহর )।
বিচারক : রোজেনবাউম, আপনার বয়েস কত?
রোজেনবাউম : আমার?
বিচারক : আবার কার? এখানে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছেন?
রোজেনবাউম : পঞ্চাশ বছর।
বিচারক : জন্ম কোথায়?
রোজেনবাউম : আমার?
বিচারক : হ্যাঁ, আপনার।
রোজেনবাউম : রেজেসো।
বিচারক : আপনি কোটটা কোথায় চুরি করেছেন?
রোজেনবাউম : কে, আমি?
বিচারক (ক্ষিপ্ত ) : না হলে কে? আমি চুরি করেছি?
রোজেনবাউম : তা আমি কি করে জানব?
**********
বিচারক : নাম?
হ্যারশ : হ্যারশ লাইবোভিতস
বিচারক : ধর্ম?
হ্যারশ : নামের ভেতরেই আছে।
**********
স্টানিস্লাভ, পূর্ব পোল্যান্ড
গোল্ডফারবের মামলা চলছে বহু দিন যাবত। মামলার দিন পড়তেই থাকে। যাকে আমাদের দেশে বলে তারিখ পে তারিখ। গোল্ডফারব অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে আদালতের কেরানির কাছে তীব্র প্রতিবাদ করেছে।
পোলিশ কেরানি : ইহুদি, চুপ করো। তোমরা আমাদের প্রভু যীশুকে মিথ্যা বিচারে বধ করেছ।
গোল্ডফারব : এটা তাঁরই ভুল। জেরুসালেমের বদলে তিনি যদি এই স্টানিস্লাভের পোলিশ কোর্টে বিচার দাবী করতেন আজো বেঁচে থাকতেন।
**********
সলোমনের ব্যবসা উঠল লাটে। পাওনাদাররা মামলা ঠুকেছে। সলোমনের পরিবারের ভীষণ চিন্তা- তার হাজত বাস না হয়। তার কাকা খুঁজে পেতে দ্যাখে জুরি বেঞ্চে আছে একজন ইহুদি। তাঁর সঙ্গে চুক্তি হল সলোমন যদি জরিমানা দিয়েই ছাড়া পেয়ে যায় তাঁকে তিন হাজার মার্ক দেওয়া হবে পরিবারের তরফ থেকে। অবশ্যই গোপনে।
বিচারক কিছু জরিমানা ধার্য করে সলোমনকে রেহাই দিলেন। কৃতজ্ঞ পরিবার টাকা ও ধন্যবাদ দিতে গেছে ইহুদি জুরি, মশেকে।
সলোমনের কাকা : অনেক ধন্যবাদ। জেল যাওয়া থেকে আপনি আমার ভাইপোকে বাঁচালেন। জরিমানার ওপর দিয়ে গেল।
মশে ( কপালের ঘাম মুছে ) : তা ঠিক। তবে এই জরিমানার পরিমাণ ধার্য করার কাজটা সহজ ছিল না, বুঝলেন!
সলোমনের কাকা : কেন? অন্য জুরিরা সলোমনকে জেলে পাঠাতে চাইছিল?
মশে : মোটেও নয়। জরিমানা বাদ দিন, জুরিরা তো সলোমনকে সসম্মানে ছেড়ে দিতে চাইছিল! আমিই আপনাদের কথামত জরিমানা ধার্য করার কথা তুলে জুরির অন্য সদস্যদের রাজি করালাম। বড়ো কঠিন কাজ ছিল। আমার পাওনাটা একটু কি বাড়াবেন?
**********
বিচারক : আবেনডশাইন, আপনার অভিযোগ হের গ্রুনব্লাট আপনার টাকা অপহরণ করেছেন?
আবেনডশাইন : আজ্ঞে না। সে রকম অভিযোগ আমি করি নি। আমি বলেছি গ্রুনব্লাট যদি আমার টাকার বাকসো খুঁজতে সাহায্য না করতেন তাহলে আমি সেটা ঠিকই খুঁজে পেতাম।
**********
কলসভার, হাঙ্গেরি
লাসলো : আপনার ছেলে শুনলাম ভিয়েনাতে আইন পড়ছে। বড়ো হয়ে সে কি হতে চায়?
ব্লাউগেলব : একজন বয়স্ক ইহুদি।
**********
ইহুদি বিচারক : মহোদয়া, আপনার বয়েস কতো?
মহিলা সাক্ষী : সঠিক জানি নে। লোকে বলে চল্লিশ।
ইহুদি বিচারক : লোকের কথাই মেনে নিন। এমন সুযোগ বারবার পাবেন না!
**********
বিচারক : সাক্ষী গোল্ডেনস্টারন, আপনাকে অবহিত করছি। আপনি আদালতকে শুধু তাই জানাবেন যা আপনি' নিজের চোখে দেখেছেন। কারো কাছ থেকে শোনা কোন গল্প নয়। এবার বলুন আপনার বয়েস কতো?
গোল্ডেনষ্টেরন : ধর্মাবতার, আমার বয়েস পঞ্চাশ বছর। কিন্তু সেটা তো আমার অন্যের মুখে শোনা।
**********
কিয়েভ
আদালতে মামলা চলছে কয়েক মাস ধরে। রায় বেরুনোর দু দিন আগে সিলবারমানকে কাজে অন্য শহরে যেতে হল। তাঁর ম্যানেজার কপেলবেরগকে বলে গেলেন রায় জানা মাত্র তিনি যেন টেলিগ্রাম পাঠান।
কপেলবেরগের টেলিগ্রাম এলো : আদালতে সত্যের জয় হয়েছে।
সিলবারমানের জবাব : এখুনি আপিল করুন।
**********
বিয়ালিস্টক। পুলিশ দফতরে কাগান।
কাগান : ব্লাউ নামের একজন আমার নাম ভাঁড়িয়ে এক হাজার রুবেলের ব্যবসা করেছে। আমার নিজের সেলসম্যানদের চেয়ে অনেক বেশি।
পুলিশ : নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা ব্লাউকে গ্রেফতার করে অতি সত্বর আদালতে হাজির করব।
কাগান : গ্রেফতার করার কথা কে বলল? তাকে শুধু খুঁজে আনুন। আমি তাকে আমার কোম্পানির কাজে বহাল করব।
**********
বিচারক : আপনি বলছেন তিনশ রুবেল বাদী পক্ষকে দিয়েছেন। তিনি সেটা অস্বীকার করছেন।
ব্লাউ : আমার মনে হয় আমি দিয়েছি, ধর্মাবতার।
বিচারক : মনে হয় নয়। বলুন আপনি তিনশ রুবেল দিয়েছেন অথবা দেন নি।
ব্লাউ : ঠিক বলেছেন। আমিও ঠিক এই ভাবে সাক্ষ্য দিতে চাই।
**********
আদালতে অপরাধীর কাঠগড়ায় মানডেলবাউম।এক অত্যন্ত ধনীর বাড়িতে সিঁধ কেটে চুরির দায়ে অভিযুক্ত।
বিচারক : একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না, মানডেলবাউম। যে বাড়িতে আপনি চুরি করেছেন সেখানে অজস্র মূল্যবান সামগ্রী যেখানে সেখানে পড়ে আছে। বয়স্ক স্বামী স্ত্রী সেগুলো সিন্দুকে তালা চাবি দিয়ে বন্ধ করে রাখেন না। তা সেই সব মাল না হাতিয়ে আপনি নিতান্ত আজে বাজে কিছু জিনিশ আপনার ব্যাগে ভরলেন কেন?
মানডেলবাউম : ধর্মাবতার, চুরি করে বাড়ি আসার পর থেকে আমার বউ ক্রমাগত সেই খোঁটা দিয়ে চলেছে। আপনি আবার সেই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিচ্ছেন?
**********
বিচারের জন্য জুরি নির্বাচন হচ্ছে। লেভি বললেন তিনি জুরি হতে রাজি কিন্তু তাঁর একটা সমস্যা আছে। বাঁ কানে একটু কম শোনেন।
বিচারক সিলবারভাইস : তাহলে আপনি জুরি হতে পারেন না।
লেভি : কেন?
বিচারক সিলবারভাইস : এক কানে শোনা মানে এক পক্ষের কথা শোনা।
**********
দোকানে চুরি করে ধরা পড়েছে ইজি।
বিচারক : কোন দুষ্কর্মের কারণে এখানে হাজিরা দিয়েছেন?
ইজি : এবারের পাস ওভার উৎসবের বাজারটা একটা দোকানে সাত তাড়াতাড়ি করে ফেলেছি বলে।
বিচারক : সে কি? আগে ভাগে বাজার করাটা তো কোন অপরাধ নয়? সময় বাঁচানোর জন্য অনেকেই তা করে থাকেন।
ইজি : ধর্মাবতার, কেনা কাটার কাজটা আমি যে সেই দোকান খোলার অনেক আগেই করে ফেলেছি। এই ধরুন রাত একটা নাগাদ।
অনলাইন কিনতে এখানে ক্লিক করুন
**********
বিচারকের সামনে বেনজি। পোশাকের দোকানে চুরির দায়ে ধরা পড়েছে।
বিচারক : তুমি একই দোকানে তিন বার হানা দিয়েছো?
বেনজি : আজ্ঞে হ্যাঁ।
বিচারক : আদালতকে জানাবে তুমি কি চুরি করেছিলে?
বেনজি : মেয়েদের একটা ড্রেস।
বিচারক : একটাই ড্রেস যদি চুরি করবে তিন বার দোকানের জানলা ভাঙ্গলে কেন?
বেনজি : প্রথম দুটো আমার বউ আবির পছন্দ হয় নি বলে।
**********
লুবলিন
চোরাই মাল কেনার দায়ে পুলিশ হারস্পালটারকে আদালতে হাজির করেছে। বিচারকের সামনে হারস্পালটার।
বিচারক আপনি চোরাই মাল কিনেছেন?
হারস্পালটার সেটাই আমার অপরাধ? আমি যদি জানতাম ইতঝাক চুরি করা মাল আমাকে বেচছে আমি কি তাকে দশ রুবেল দিতাম? খুব বেশি হলে তিন রুবেল! ঠকেছি আমি আর আপনি আমাকে দোষী ঠাউরালেন?
**********
কোভনো ( কাউনাস )
ওকালতি অফিসে ফিঙ্কেলস্টাইন।
ফিঙ্কেলস্টাইন : দেখুন দিকি কি সব মিথ্যে কথা লিখেছে হতচ্ছাড়া গোল্ডবেরগ? আমি নাকি তার কাছ থেকে দু হাজার রুবেল ধার নিয়েছি? ফেরৎ না দিলে সে আদালতে যাবে? শপথ করে বলতে পারি আমি জীবনে কখনো গোল্ডবেরগের কাছে টাকা ধার করিনি!
ডক্টর বেরন : তাহলে তো ব্যাপার মিটে গেলো! মিস কুরতস ( স্টেনো ) লিখে নিন, "হের গোল্ডবেরগ - আমি কখনো আপনার কাছ থেকে দু হাজার রুবেল ধার করি নি। অতএব আপনার দাবী সম্পূর্ণ অন্যায্য। ইতি ফিঙ্কেলস্টাইন"
ফিঙ্কেলস্টাইন : না, না ডক্টর বেরন, আপনি কোথায় আইন পড়েছেন? মিস কুরতস, এবার লিখুন,"আমি আপনার দু হাজার রুবেল অনেকদিন আগেই ফেরৎ দিয়েছি। তাই আপনার এই দাবী সম্পূর্ণ অযৌক্তিক"।
ডক্টর বেরন : হের ফিঙ্কেলস্টাইন, এই যে একটু আগে আপনি শপথ নিয়ে বলতে চাইলেন আপনি গোল্ডবেরগের কাছে কখনো ধার করেন নি! ধার যদি না করে থাকেন, তাহলে কেন বলছেন আপনি সে টাকা ফেরত দিয়েছেন?
ফিঙ্কেলস্টাইন : শুনুন ডক্টর বেরন। যদি বলি আমি তার কাছে কোনদিন ধার নিই নি, গোল্ডবেরগ দুটো সাক্ষী খাড়া করে প্রমাণ করতে চাইবে যে আমি নিয়েছি। এখন আমি সে টাকা ফেরত দিয়েছি এটা যদি বলি, সেটা প্রমাণ করার সাক্ষী দাঁড় করানোর দায়িত্ব আমার!
**********
তালমুদের বিচার
ইলানের গালে একটা থাপ্পড় মারার অপরাধে কোহেনের এক রুবেল জরিমানা সাব্যস্ত করলেন বিচারক।
কোহেন : এই নিন। আমার কাছে দু রুবেলের নোট আছে। এটা ভাঙ্গিয়ে এক রুবেল জরিমানা নিন আরেকটা রুবেল ফেরত দিন।বাড়ি যাবো।
আদালতে সে নোট ভাঙ্গানো গেলো না কারো কাছে।
বিচারক : কোহেন, তুমি ইলানের গালে আরেকটা থাপ্পড় মেরে ওই দু রুবেলের নোটটা আদালতের কেরানিকে জমা দিয়ে বাড়ি যাও।
**********
মরিতস গেছে বিখ্যাত উকিল ফাইনগোল্ডের অফিসে। মাথায় চিন্তা এতো বড়ো উকিল কত টাকা নেবে কে জানে।
মরিতস : জানতে পারি কি আপনার পরামর্শের জন্য কত ফি দিতে হবে?
ফাইনগোল্ড : প্রথম তিনটি প্রশ্নের জন্য ১৫০ রুবেল।
মরিতস : সেটা খুব বেশি নয় কি?
ফাইনগোল্ড : হ্যাঁ। আপনার তৃতীয় প্রশ্ন?
**********
পোস্ট অফিসে আইগেলব।
বন্ধু শাইনবাউম একটা টেবিলে বসে একের পর এক কার্ডে ঠিকানা লিখছে আর আঁটা দিয়ে মুখ বন্ধ করছে। কৌতূহলী হয়ে আইগেলব তার পাশে দাঁড়াল।
আইগেলব : কাকে এতো গুলো কার্ড পাঠাচ্ছ?
শাইনবাউম : : একশো ভ্যালেন্টাইনস ডে কার্ড পাঠাচ্ছি।
আইগেলব : সেকি একশো ভ্যালেন্টাইনস ডে কার্ড? সবাই তোমার বান্ধবী?
শাইনবাউম : : আরে দূর, এগুলো পাঠাচ্ছি আমার ক্লায়েন্টদের। সুগন্ধি মেশানো কার্ড। প্রেরকের নাম নেই শুধু লিখছি 'আমাকে চিনতে পারো কি'?
আইগেলব : তার মানে কি?
শাইনবাউম : মানে বুঝলে না? শোনো, আমি বিবাহ বিচ্ছেদের ওকালতি করি। এখন হাতে কেস নেই। এই কার্ড গুলো ক্লায়েন্টের বউদের হাতে পড়বে। তারপরেই আমার মক্কেলরা বিয়ে সামলাতে আমার কাছে ছুটে আসবে।
**********
উকিলের অফিস।
ইলান ও নাথান একটি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানির গঠন করেছে। চার পাতার চুক্তি। সেখানে মোট ৩৯টি ধারা।
শেষ শর্ত :
ঈশ্বর না করুন, যদি এই প্রতিষ্ঠান কোনো কারণে দেউলিয়া হয়, তার নিট মুনাফা দুজন মালিকের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করা হবে।
**********
মিন্সক
ঊনগেউইস আদালতে হাজির। তাঁর অভিযোগ এক কসাকের প্রতি। সে ঊনগেউইসের ঘোড়া চুরি করেছে।
বিচারক : তুমি ঊনগেউইসের ঘোড়া চুরি করেছ?
কসাক : আজ্ঞে না। রাস্তায় ঘোড়াটা পেয়েছিলাম তাই নিয়েছি।
ঊনগেউইস : না মানে কি? আমি বসেছিলাম আমার ঘোড়ার ওপর তুমি এসে জোর করে আমাকে নামিয়ে ঘোড়াটা নিয়েছ!
বিচারক : বাদী সত্যি বলছে?
কসাক : ধর্মাবতার, রাস্তায় ঘোড়াটা দাঁড়িয়েছিল তার ওপর ইহুদি বসে। তা এই ইহুদিকে নিয়ে আমি কি করবো? ঘোড়াটা কাজে লাগবে। তাই লোকটাকে নামিয়ে দিয়ে ঘোড়া নিয়ে বাড়ি গেছি।
**********
মেসেরিতস (আক্ষরিক অর্থে মেসোপতেমিয়া বা দুই নদীর মাঝে ) পোল্যান্ড।
রুবিনস্টাইন আদালতে হাজির হয়েছে। এক পোলিশ চাষি কাঠ কাটতে এসেছিল তার বাড়িতে। রুবিনস্টাইনের দাবী সে তার রুমাল চুরি করেছে। সে সময়ে লাল সাদা চেক কাটা রুমালের স্টাইল খুব চালু। কেতা দুরুস্ত লোকেরা সেই রুমাল তেকোনা ভাঁজ করে কোটের পকেটে রেখে গর্বের সঙ্গে হাঁটেন। পোলিশ চাষির ব্যাগে সেটা পাওয়া গেছে। রুবিনস্টাইনের দাবী এই রুমাল তার।
আদালতে বিচারকের সামনের টেবিলে সে রুমাল রাখা হল। বিচারক মন দিয়ে সেটি পর্যবেক্ষণ করলেন।
বিচারক : আপনি কি করে এতো নিশ্চিত হলেন যে এই রুমালটা আপনারই? এই দেখুন আমার পকেটে ঠিক একই রকমের রুমাল আছে?
তিনি সেটি বের করে টেবিলে রাখলেন।
রুবিনস্টাইন : আমার তো দুটো রুমাল চুরি হয়েছে ধর্মাবতার।
**********
ভিয়েনা
আদালতের দোরগোড়ায় লেভির দেখা তার পড়শি শ্লয়মের সঙ্গে। পুরনো কাপড়ের ব্যবসা করে শ্লয়মে। সে এখানে কেন?
লেভি : শ্লয়মে! তুমি আদালতে কি করছ? কিসের মামলা?
শ্লয়মে : সাক্ষী দেব।
লেভি : কোন মামলায়?
শ্লয়মে : জানি না। কোন না কোন মামলায় ডাক পড়বে।
হাবসবুরগ রাজাদের আমলে আদালতে কিছু লোক আপাত উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে ঘোরা ঘুরি করতেন। এঁরা ছিলেন পেশাদারী সাক্ষী। ভিয়েনার বাজারে শোনা যেতো গোটা দশেক মামলায় সাক্ষ্য দিতে পারলে এক বছরের মত সংসার চালানোর খরচা জুটে যেত। কারো কারো মনে থাকতে পারে এক বেতার নাটিকায় নবদ্বীপ হালদার ভাড়াটে সাক্ষীর ভূমিকায় কি অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন।
**********
আরিয়েল আর ময়সে, দুই ব্যবসায়ীর দেখা।
আরিয়েল : কোথায় লুকিয়েছিলে? ছ মাস তোমাকে দেখিনি!
ময়সে : কাজে আটকে ছিলাম।
আরিয়েল আপিল করো নি কেন?
মাইন্তসের ঊনটার হাউসে বসে করডুলা ব্যাখ্যা সহকারে এটি আমাকে শোনায়। প্রথম বারে বুঝি নি।
**********
কিয়েভ
অনাদায়ী ঋণ উদ্ধারের জন্য খাইম মামলা করেছে ইলানের বিরুদ্ধে। ইলানের উকিল শ্নাইডার।
শ্নাইডার : আপনার কেস খুবই খারাপ। একে ধার শোধ করেন নি তায় আবার চালান জাল করেছেন। আপনাকে বাঁচানোর আমি তো কোন রাস্তা দেখছি না।
ইলান : সার, আমার একটা প্ল্যান মাথায় এসেছে। শুনবেন?
শ্নাইডার : সেটা কি?
ইলান : ভাবছি আমি যদি একটা দামি শ্যাম্পেনের বোতল বিচারকের বাড়ি পাঠাই? সঙ্গে আমার ভিজিটিং কার্ড?
শ্নাইডার : আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে? বিচারককে ঘুষ দেবার চেষ্টার অভিযোগে আপনি আরেক মামলায় জড়িয়ে পড়বেন।
মামলায় ইলানের জয় হল। উকিলকে ধন্যবাদ দিতে এসেছে সে।
ইলান : জানেন, আপনার পরামর্শ কিন্তু আমি শুনি নি। আমি বিচারককে একটা শ্যম্পেনের বোতল পাঠিয়েছিলাম।
শ্নাইডার : হতেই পারে না।
ইলান: আরে শুনুন পুরো ব্যাপারটা। আমার কাছে তো খাইমের ভিজিটিং কার্ড ছিল। একটা শ্যাম্পেন বোতলের সঙ্গে সেটা লাগিয়ে বিচারককে পাঠাই। সঙ্গে লিখে দিয়েছিলাম 'আপনার করুণা প্রত্যাশী’।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।