এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  সমাজ  শনিবারবেলা

  • ইহুদি রসিকতা ১৪: হিটলার এবং নাৎসি আমলে

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | সমাজ | ০২ অক্টোবর ২০২১ | ৩১৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • হিটলার এবং নাৎসি আমলে

    ঝটিকা বাহিনীর তিন হাজার সদস্য নিয়ে হিটলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের যে প্রয়াস করেন সেটিকে আমরা মিউনিক অভ্যুথান নামে জানি। দিনটা ৯ই নভেম্বর, ১৯২৩। আডলফ হিটলারের বয়েস চৌত্রিশ, নাৎসি পার্টির সাড়ে চার। ষোল জন প্রাণ হারালেন (তরুণতম সদস্য ক্লাউস ফন পেপের বয়েস ১৯) ।

    হিটলার গ্রেপ্তার। নাৎসি পার্টি নিষিদ্ধ হল চার বছরের জন্য।

    প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে আয়রন ক্রস বিভূষিত অস্ট্রিয়ান কর্পোরাল হিটলারের পাঁচ বছরের সাজা হল। নয় মাস হাজত বাসের পরেই সসম্মানে মুক্তি। নাৎসি পার্টির নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলো। হিটলার সেই যে তার হাল ধরলেন পরবর্তী বিশ বছর সেটি ছাড়েন নি।

    কারাবাসের সময় হিটলার যে আত্মজীবনী লেখেন তার নাম মাইন কাম্ফ- আইনে আবরেখনুং (আমার সংগ্রাম – একটি হিসেব) । সময় ও সুযোগ পেলে তিনি কি করতে চান তার নিখুঁত নিশানা দিলেন প্রায় ছশো পাতার এই কেতাবে। এটি যদি কেউ সময়মত অধ্যয়ন করতেন, হিটলারের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে কারো সংশয় থাকত না। চেম্বারলেন দালাদিয়ে রুজেভেলটের গোয়েন্দা দফতর সে প্রয়াস করেন নি। জার্মান জানারও প্রয়োজন ছিল না। ১৯৩৩ সাল নাগাদ মাইন কাম্ফের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ইংরেজিতে পাওয়া যেতো।

    ইহুদি বিদ্বেষ একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় অভ্যাস। বিভিন্ন দেশের সরকারি সমর্থনে ইহুদি নির্যাতন এবং নিধন চলে এসেছে হাজার বছর ধরে। ধিকি ধিকি করে জ্বলতে থাকা তুষের আগুনে হিটলার একটু বাতাস দিলেন। আত্মজীবনীতে তিনি বললেন এক হাজার বছর ধরে এরা ইউরোপে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে এখানে ওখানে বিচরণ করছে। তাদের নিজস্ব কোন সংস্কৃতি শিল্প সভ্যতা কিছুই নেই। এরা বাস করে সর্বত্র আর ভব্য ইউরোপীয় সভ্যতার শাঁস টুকু শুষে খায়। তাদের নিজের কোন দেশ নেই। মনে প্রাণে ভালো বাসে না বা আপন মনে করে না কোন দেশকে। না ঘর কা না ঘাট কা। এ দেশে তারা উত্তমরূপে জার্মান ভাষা শিখে ‘ জার্মান’ সাজার চেষ্টা চালিয়েছে। শিক্ষা দীক্ষার সুযোগ নিয়েছে পুরো দস্তুর, যদিও তাদের রক্তে বিন্দুমাত্র জার্মান সংস্কৃতি নেই। সেটা তাদের মুখোশ মাত্র। এই যাযাবর জাতির কোন স্থান নেই জার্মানিতে। এক শতাংশ ইহুদি অধিবাসীর কারণে জার্মান জনতা বিপন্ন।

    তিনি ইদিশ ভাষাকেও অবশ্য একহাত নিয়েছেন: “এরা জার্মান ভাষাকে দুমড়ে মুচড়ে, বিকৃত করে আপন সুবিধার্থে একটি কথ্য ভাষা চালু করেছে “(আমার সংগ্রাম, জাতি ও জনতা)

    জুলাই ও নভেম্বর ১৯৩২ পর পর দু বার নির্বাচন হয়। কোন দল সরকার গঠন করতে পারে না। জানুয়ারি ১৯৩৩ আবার নির্বাচন। কোন দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে নি (নাৎসিরা পায় ৩৩% ভোট) । ভোট ক্লান্ত জনগণকে রেহাই দেবার জন্য ছিয়াশি বছরের বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিনডেনবুরগ হিটলারকে কোন রকমে একটা জোড়া তালি দিয়ে সরকার গঠনের অনুমতি দিলেন। ক্ষমতা দখল করেই মার্চে আবার নির্বাচন ডাকলেন হিটলার। ক্রুপ থুসেন সহ যাবতীয় শিল্পপতিরা তাদের কোষাগার খুলে দিলেন – প্লেনে চড়ে এই প্রথম কোন রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনী প্রচার করলেন। বিপুল অর্থ ব্যয় করেও সংখ্যা গরিষ্ঠ হল না নাৎসি পার্টি -তারা পেলো ৪৩% ভোট। জার্মান জাতীয় দলের সঙ্গে একত্রে হিটলার আবার সরকার গঠন করলেন। দু মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের দরোজা বন্ধ হল। সে দরোজা আবার খুলবে দেড় দশক বাদে।

    জার্মানির জনসংখ্যা ছ কোটি। ইহুদির সংখ্যা পাঁচ লক্ষ। তারা পুরো জার্মান নাগরিক। জার্মান নোবেল বিজয়ীর এক চতুর্থাংশ ইহুদি। ব্যবসা বাণিজ্যে তাঁরা অত্যন্ত সফল। শিল্প সংস্কৃতিতে দেশের উচ্চাসনের দাবিদার। অনেক সংবাদ পত্রের মালিকানা তাঁদের হাতে। বারনারড ভাইস বার্লিন পুলিশের দ্বিতীয় উচ্চতম অফিসার।

    মার্চ মাসে অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক মানুষদের বিনা বিচারে আটকে রাখার জন্য প্রথম কনসেনট্রেশান ক্যাম্প দাখাউএর উদ্বোধন (সেখানে হত্যা লীলা শুরু হবে কয়েক বছর বাদে) । মে মাসে হুমবোলড বিশ্ব বিদ্যালয়ের সামনে ইহুদি লেখকদের বই পোড়ানো হল। আইনস্টাইন অবধি বাদ যান নি। সমস্ত সরকারি কাজ থেকে ইহুদি নিষ্কাশন। স্কুলের নতুন সিলেবাসে লেখা হল ইহুদিরা অধম মনুষ্য জাতি। বারনারড ভাইসের গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি হবার আগেই তিনি ইংল্যান্ডে পালালেন।

    ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে জার্মান ও আন্তর্জাতিক ইহুদি সমাজ এক বয়কট শুরু করে। ব্যবসা বাণিজ্যের মোটা ভাগ তাদের হাতে। নবীন নাৎসি রাষ্ট্রের পক্ষে সেটি ছিল শঙ্কাজনক। আপোষ স্বরূপ ১৯৩৩ সালের আগস্ট মাসে জার্মান ইহুদিদের সঙ্গে একটি গোপন বোঝাপড়ায় স্বাক্ষর করলেন হিটলার। এর নাম স্থানান্তর চুক্তি (ট্রান্সফার এগ্রিমেন্ট) । তার উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের প্যালেস্টাইনে যেতে উৎসাহিত করা। নাৎসি পার্টি ১০ কোটি ডলার অর্থ দিয়ে পাঁচ বছরে ষাট হাজার ইহুদিকে প্যালেস্টাইন পাঠায়। শর্ত ছিল সেই টাকা দিয়ে প্যালেস্টাইন গামী ইহুদিরা জার্মান মাল পত্র কিনবেন। বিতর্কের মুখোমুখি হয়েও বলা যায় আজকের ইজরায়েলের ভিত সেখানেই গাঁথা হল। একদিকে ইহুদিদের ওপর হাটে বাজারে মারধর হচ্ছে আর অন্যদিকে কিছু ধনী ইহুদি নাৎসিদের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনা করছেন। সেটি জার্মান ইহুদি সমাজের মধ্যে গভীর বিবাদের সূচনা করে। এই বিষয়টির চর্চা ইহুদি সমাজে আজো একটি বিতর্কিত বিষয়। ১৯৩৯ সালে যুদ্ধ শুরু হলে স্থানান্তর চুক্তি বাজে কাগজের বাকসোয় নিক্ষিপ্ত হয়।

    ১৯৩৪ সালে সমস্ত ইহুদি দোকানে হলুদ রঙের ডেভিডের তারা (মাগেন দাভিদ / স্টার অফ ডেভিড) মেরে দেয়া হল। বাসে ট্রেনে আলাদা বসার জায়গা। অনেক শহরের পৌর সভা নির্দেশ দিলেন ইহুদিরা খেলার মাঠ লাইব্রেরি সহ কোন পৌর প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার পাবেন না।

    অন্যত্র?

    আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলে সাদা কালোর মাঝে আইন করে যে দেয়াল গড়া হয়েছিল সত্তর বছর আগে সেটি রীতিমত পোক্ত। লিঞ্চিং কোন ফৌজদারি অপরাধ নয়। সাদা কালো ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার মানা বিবাহ দূর অস্ত। এই সেই দেশ যার সংবিধান শুরু হয়েছে এক অমর উক্তি দিয়ে – ঈশ্বর সকল মানুষকে সমান ভাবে তৈরি করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণ বৈষম্যের জনক উনবিংশ শতাব্দীতে অক্সফোর্ড ফেরতা সিসিল রোডস তিনি যে বিধানটি দিয়ে গিয়েছিলেন ১৯৪৮ সালে আফ্রিকানার প্রভাবিত জাতীয় দল সেটাকে আইনি রূপ দেয় মাত্র। ইংরেজ শাসিত ভারতে, আফ্রিকায় মানুষের অধিকার নিত্য পদদলিত হচ্ছে। ফরাসি আধিপত্যে আফ্রিকায় কালো মানুষ নির্যাতিত। স্পেনে ফ্রাংকো, পর্তুগালে সালাজার, ইতালিতে মুসোলিনি চরম দক্ষিণ পন্থী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইতালি দখল করেছে আবিসিনিয়া। জাপান দখল করেছে মাঞ্চুরিয়া। নাঞ্জিঙ্গে পাঁচ লক্ষ মানুষের নিধন, যাকে ইতিহাস আজ রেপ অফ নানকিং নামে অভিহিত করে। লিগ অফ নেশনস তার প্রতিবাদ করলে জাপান সেই সভা পরিত্যাগ করে। ইউক্রেনের স্বাধীনতা সংগ্রাম দমিয়ে রাখার প্রয়াসে সোভিয়েত ইউনিয়ন যে দুর্ভিক্ষের আয়োজন করেছিল তাতে অন্তত পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যান (হলদমোর নামে কুখ্যাত)। মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচারের তালিকা অতি দীর্ঘ।

    হিটলারের মাইন কামফ প্রকাশের দু বছর আগে হেনরি ফোরডের তীব্র ইহুদি বিদ্বেষী রচনাবলী ‘আন্তর্জাতিক ইহুদি ‘ প্রকাশিত হয়। তাতে ফোরড বলেন, ‘ ইহুদিরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে, বাস করে নানা দেশে কিন্তু মেশে না কারো সঙ্গে। তারা লোভী, প্রতারক আবার তাদের হাতেই অর্থ ব্যবস্থা, ব্যাঙ্কিং ‘। সেটি পড়ে হিটলার মুগ্ধ হন। বইটির স্থান হয় তাঁর বিছানার পাশের টেবিলে। নাৎসিরা হেনরি ফোরডকে দেয় রাষ্ট্রীয় সম্মান জার্মান ঈগল, যা কোন অ-জার্মানকে কখনো দেওয়া হয় নি।

    জার্মানিতে ইহুদিদের ওপরে কোথায় কি অন্যায় হচ্ছে তা নিয়ে সভ্য ইউরোপ ও আমেরিকার সামগ্রিক বিবেক আর বিচলিত হয় নি।

    ১৯৩৫ সালে নুরেমবেরগের জাতি আইন পাশ হল। প্রত্যেক জার্মানকে প্রমাণ করতে হবে তার শিরায় কতটা ইহুদি রক্ত মিশে আছে। প্রপিতামহী অবধি ইহুদি রক্ত থাকলে ক্ষতি নেই, পিতামহী ইহুদি হলেই বিপদ। জার্মান নাগরিকত্ব বাতিল। সৈন্য বাহিনীতে প্রবেশ নিষিদ্ধ (পয়লা বিশ্ব যুদ্ধে কাইজারের নামে ১২০০০ ইহুদি প্রাণ দিয়েছিলেন) ।

    ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিক। ইতিহাসের প্রথম এক লাখি স্টেডিয়াম। সেটি এখনো দাঁড়িয়ে – ২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্ব কাপের ফাইনাল খেলা হয়। মশাল বয়ে গ্রিস থেকে অলিম্পিকের আগুন আনার যে প্রথা নাৎসিরা চালু করলেন সেটি আজো কায়েম আছে। পথে ঘাটে ইহুদি নিগ্রহ হঠাৎ কমে গেলো, কিন্তু তা শুধু বার্লিনে। সমাগত প্রেস, প্রতিযোগীরা লক্ষ্য করেন নি ইহুদিদের দোকানে হলুদ তারা ঝোলানো, বাসে ট্রেনে তাঁদের আসন আলাদা? আমেরিকার দক্ষিণ থেকে আগত প্রবাদ প্রতিম আমেরিকান অ্যাথলিট জেসি ওয়েন্স হয়তো এই বৈষম্য দেখে অবাক হন নি। একশ মিটার, দুশ মিটার দৌড়ে, লঙ জাম্পে এবং ৪X১০০ মিটার রিলে রেসে জিতে চারটে স্বর্ণ পদক পান। অলিম্পিকের ইতিহাসে তখন অবধি অনন্য। হ্যারজগেনআউরাখ নামক একটি ছোট গ্রামের এক জুতো নির্মাতা তাঁর তৈরি জুতো নিজের হাতে পরান ওয়েন্সকে। খেলোয়াড়দের স্পন্সর করার এই পুরোধার নাম আডলফ দাসলার – আডলফের ডাক নাম আদি আর দাসলার পদবির দাস মিলিয়ে জুতো কোম্পানির নাম হল আদিদাস।

    অনেকে হয়ত মনে রাখেন না ৪ x ১০০ মিটার রিলেতে (তাঁর চতুর্থ মেডেল) জেসি ওয়েন্সের দৌড়ুনোর কথা ছিল না। নির্ধারিত অ্যাথলিট ছিলেন ড্রেপার, উইকফ, গ্লিকমান এবং ষ্টোলার। শেষের দু জন ইহুদি। নাৎসি পার্টির নির্দেশে আমেরিকান অলিম্পিক শেফ দ্য মিশন ইহুদি অ্যাথলিটদের বাদ দিয়ে ওয়েন্স এবং আরেক আফ্রিকান আমেরিকান রালফ মেটকাফকে সেই রিলে রেসে অন্তর্ভুক্ত করেন। ওয়েন্স শেষ মুহূর্তের এই পরিবর্তনে প্রতিবাদ জানান। সেটি বিফল হয়। এই বিজয়ে ওয়েন্সের কৃতিত্ব খাটো হয় নি। কিন্তু আমেরিকান তথা বাইরের দুনিয়ার মানুষের মেরুদণ্ডহীনতা প্রমাণিত হয়।

    অলিম্পিকের ইতিহাসে অনন্য ঘটনা - অ্যাথলেটিকসে চারটি স্বর্ণ পদক জিতে দেশে ফিরলে জেসি ওয়েন্স প্রেসিডেন্ট রুজেভেলটের হোয়াইট হাউস থেকে কোন আমন্ত্রণ পান নি। নিউ ইয়র্কের ওয়ালডরফ অ্যাস্টোরিয়া হোটেলে তাঁর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে ওয়েন্সকে হোটেলের পেছনের মালবাহী লিফটে আসতে হয়, সদর দরোজা দিয়ে নয়।

    বার্লিন অলিম্পিকের মার্চ পাসটে ফ্রান্স সহ বহু দেশ নাৎসি স্যালুট দেয় হিটলারকে। ইংল্যান্ড বনাম জার্মানি ফুটবল ম্যাচে ইংরেজ খেলোয়াড়রা জার্মান জাতীয় সঙ্গীতের সময় হিটলার স্যালুট দিয়েছেন।

    ১৯৩৮ সালে ইহুদি ডাক্তারদের নির্দেশ দেয়া হল তাঁরা কোন আর্য জার্মানের চিকিৎসা করতে পারবেন না। উকিলরাও নিতে পারবেন না কোন আর্য জার্মানের কেস। ইহুদিদের স্কুল, কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ১৯৩৮ সালে নভেম্বরের ৯ তারিখের রাতটি ক্রিস্টাল নাখট (ভাঙ্গা কাঁচের রাত) নামে স্মরণীয় হয়ে আছে। চারশ সিনাগগ পোড়ানো হলো। নুরেমবেরগে এক সময় যে ব্যাংকে কিছুদিন কাজ করেছি তার পেছনেই ছিল সে অঞ্চলের বৃহত্তম সিনাগগ -সেটি এখন কার পার্ক। ইহুদিদের বাধ্য করা হয় সেই ধংসস্তূপ হাতে করে পরিষ্কার করতে এবং জার্মান ইহুদিদের ওপর এক বিলিয়ন মার্ক জরিমানা ধার্য করা হল সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করার অপরাধে।

    এক নতুন আইনের বলে নবজাত শিশুদের নামাঙ্কন নির্দেশিত হল- মেয়ে হলে নাম রাখতে হবে সারা ছেলে হলে ইজরায়েল (এই আইনটির অন্যতম প্রণেতা হান্স গ্লোবকে, যিনি যুদ্ধের পরে কনরাড আদেনআউয়ারের মুখ্য সচিব হন)।

    প্যালেস্টাইন নয়, যাবতীয় সম্পত্তি বাড়ি দোকান ঘটি বাটি ফেলে রেখে যারা পারলেন সেই সব ইহুদি গেলেন আমেরিকা, ব্রিটেন। অন্তত দু লক্ষ। শিয়রে কাল সংক্রান্তি জেনেও অনেকে রয়ে গেলেন। রোটশিল্ডের মা যান নি। তিনি গ্যাস চেম্বারে পরমগতি প্রাপ্ত হন।

    অল কোয়ায়েট অন দি ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট (পশ্চিম রণাঙ্গন নিশ্চুপ) লেখার জন্য নাৎসিদের দ্বারা নিন্দিত এরিখ মারিয়া রেমারক জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। দেশের কথা ভেবে মন কেমন করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেন, আমি কি ইহুদি নাকি? জার্মানিকে তারাই বেশি ভালবাসে। “

    জার্মানিতে সম্পত্তি অথবা বিদেশে বন্ধু আত্মীয় পরিজন যাদের ছিল না, তাদের যাত্রা শুরু হল কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের দিকে। গ্যাস চুল্লী জ্বলে উঠল লেলিহান। বিশে জানুয়ারি ১৯৪২ বার্লিনের ভানজে কনফারেন্সে তৃতীয় রাইখের বিশিষ্ট মানুষেরা ইহুদি সমস্যার শেষ সমাধান (এন্ড লোয়েসুং) নির্দিষ্ট করলেন - সামগ্রিক নিধন।

    জার্মান অধিকৃত ইউরোপে তখন এক কোটি ইহুদির বাস।

    বাকিটা ইতিহাস।

    তবু বিহঙ্গ বন্ধ করে নি পাখা! ইহুদি সে দুর্দিনেও ভোলেনি স্বভাবসিদ্ধ রঙ্গ ব্যঙ্গ। তাতে নেই ঈশ্বরের প্রতি কোন অভিযোগ।
    আছে অদৃষ্টের প্রতি পরিহাস।



    **********


    প্রশ্ন :একটা ফোলকসভাগেন গাড়িতে কত জন ইহুদি চড়তে পারে?
    উত্তর : ২৪ জন। সামনে দু জন পেছনে দু জন। ছাইদানিতে কুড়ি।

    **********


    প্রশ্ন : বার্লিন অলিম্পিকে কত জন ইহুদি অংশ নেয়?
    উত্তর : আশি হাজার ইহুদি। কুড়ি হাজার অলিম্পিক আগুনে, ষাট হাজার সিনডার ট্র্যাকে।

    **********


    ১৯৪০
    কনসেনট্রেশান ক্যাম্প। কমান্ডার ডেকেছেন এক বৃদ্ধ ইহুদিকে।

    কমান্ডার :শোন, আমার একটা চোখ কাঁচের, নামকরা জাইস কোম্পানির বানানো। বলতে পারিস কোন চোখটা? ঠিক বলতে পারলে ছেড়ে দেব।
    ইহুদি :বাঁ চোখটা হের কমানডানট।
    কমান্ডার :এক্কেবারে ঠিক বলেছিস তো! কি করে বুঝলি?
    ইহুদি :আপনার বাঁ চোখটা খুব মানুষের মতন, আমাকে একটু করুণার চোখে দেখছে মনে হল।

    পুঃ ফ্রয়েড ইহুদি মননে নিরন্তর আত্ম নিগ্রহ দেখেছেন।

    **********


    বার্লিন ১৯৩৬

    নাথান :আমার কাছে দুটো খবর আছে। একটা ভালো অন্যটা খারাপ। কোনটা আগে বলি? “
    ডেভিড :ভালোটা আগে।
    নাথান :হিটলার মৃত।
    ডেভিড:দারুণ খবর। আর খারাপ খবরটা কি?
    নাথান :ও খবরটা সত্যি নয়।

    **********


    নুরেমবেরগ। নাৎসি র‍্যালি। ১৯৩৫

    রাস্তায় বিশাল সমারোহ। ফেস্টুনে সাজানো বাড়ি। লাল কালো সাদা রঙের স্বস্তিকা মার্কা পতাকা। হিটলার যাবেন তাঁর দলবল নিয়ে। সবাই ডান হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চতুর্দিকে উচ্চ রব - হাইল হিটলার! রুবিন হাতটা তুলেছে কিন্তু চুপ করে আছে। ঝটিকা বাহিনীর ছেলে এসে দাঁড়াল।

    এস এ যুবক :চুপ করে আছিস কেন? বল হাইল হিটলার!
    রুবিন :কেন, আমি কি ডাক্তার?

    পুঃ জার্মানে হাইলেন একটি ক্রিয়াপদ, মানে সারানো। আক্ষরিক অর্থে হাইল হিটলার - হিটলারকে সুস্থ করো।

    **********


    তিনের দশকের ইহুদি প্রবচন

    প্রশ্ন:পতিদাহ প্রথা কি?
    উত্তর:মিশ্র বিবাহে ইহুদি পতির আর্য জার্মান স্ত্রী মারা গেলে তাঁর নিধন। ভাগ্য ভালো থাকলে দেশ থেকে নির্বাসন।

    **********


    বার্লিন ১৯৪৫
    প্রতি রাতে রাশিয়ান বোমারু বিমানের হানা। রাতে ঘুমোতে পারছেন না হিটলার। গোয়েবলসকে বললেন একটা জ্যোতিষী ডেকে আনতে।

    হিটলার :রোজ দুঃস্বপ্ন দেখছি। আমার মৃত্যু কোন দিন হবে বলে আপনার মনে হয় ?
    জ্যোতিষী : যা দেখছি আপনার মৃত্যু হবে ইহুদিদের কোনও ছুটির দিনে।
    হিটলার : কোন দিনে? ওদের তো একগাদা ধার্মিক ছুটির দিন।
    জ্যোতিষী : সেটা বলা শক্ত। তবে আপনি যেদিন মারা যাবেন সেটাই ইহুদিদের ছুটির দিন হবে।

    **********


    মতান্তরে

    নাফতালি :রাবি, হিটলার কবে মরবেন বলুন তো?
    রাবি :জানি না। তবে যে দিনই তিনি মারা যান না কেন, সেটা ইহুদিদের ছুটির দিন হবে।

    **********


    জুন, ১৯৪০
    ফ্রান্সের পতন হয়েছে। এবার হিটলার ইংল্যান্ড বিজয়ে যেতে চান। পথের বাধা ইংলিশ চ্যানেল (জার্মানে এরমেল কানাল)। । তিনি বার্লিনের চিফ রাবিকে ডেকে পাঠালেন।

    হিটলার :আপনাদের মোজেস শুনেছি একটা লাঠি দেখিয়ে লোহিত সাগর শুকিয়ে ফেলেছিলেন। তারপর আপনারা দিব্যি হেঁটে সাগর পার হয়ে যান। সে লাঠিটা এখন কোথায় আছে জানেন?
    রাবি :জানি। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে।

    **********


    বার্লিন ১৯৪০
    কুরফুরষ্টেনডাম

    বার্নস্টাইন আর পিনকাস রাস্তায়। উলটো দিকে নাতসি পুলিশ আসছে। পরিচয় পত্র দেখতে চাইবে। বারনসটাইনের নেই পিনকাসের আছে।

    বার্নস্টাইন :তুই দৌড় লাগা, ও তোর পেছনে ছুটবে।

    পিনকাসকে ধরে ফেলতে সময় লাগল না পুলিশের।

    পুলিশ :কাগজ দ্যাখা। কাগজ তো ঠিক আছে। পালাচ্ছিলি কেন? আমাকে দেখিস নি?
    পিনকাস :ডাক্তার বলেছে খাওয়ার পরে এক কিলো মিটার না থেমে একটানা দৌড়ুতে। এক কিলো মিটার হলে তবে তো থামব।
    পুলিশ :আমাকে দেখিস নি তোর পেছনে দৌড়ুতে?
    পিনকাস :দেখেছি। আমি ভাবলাম আপনি হয়ত আমারই ডাক্তারের কাছে যান, তাই এক কিলো মিটার দৌড়ুচ্ছেন।

    **********


    রবিবারের সকাল। বার্লিন টিয়ার গারটেন পার্ক।

    ইথান হাঁটছে। তার পেছনে একটা কুকুর। পুলিস এসে আদেশ দিল কুকুরের গলায় চেন লাগিয়ে চলতে (সমস্ত জার্মান পার্কে সে নিয়ম আজও সমান বলবৎ)। জবাব না দিয়ে ইথান এগিয়ে গেল। কুকুরটাও তার সঙ্গী। পুলিস ক্ষিপ্ত হয়ে ইথানের সামনে দাঁড়াল।

    বললাম না কুকুরের গলায় চেন লাগিয়ে চলতে? তিন মার্ক ফাইন। টিকিট লিখছি।

    ইথান - আমি ফাইন কেন দেব? ওটা আমার কুকুর নয়।
    পুলিস - তবে তোর পেছনে পেছনে হাঁটছে কেন?
    ইথান - আপনিও তো আমার পেছনে পেছনে হাঁটছেন এতক্ষণ ধরে। আপনি কি আমার কুকুর?

    **********
    *

    ১৯৩৪
    ইহুদিদের তখনও জার্মানিতে ট্রেনে চড়তে দেওয়া হত।

    সিটের পাশে লাল কালোতে (স্বস্তিকার রঙ) লেখা প্ল্যাকার্ড।

    ‘একজন জার্মান মিথ্যে বলে না (আইন দয়েচার লুইগট নিখট) ‘

    ইহুদি :হ্যাঁ, ছ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র একজন!

    **********


    ১৯৩৪
    ক্রাইসব্লাট খবরের কাগজে বেরিয়েছে বার্লিন পুলিশে লোক নেবে।

    সেই বিজ্ঞাপন হাতে নিয়ে ইতঝাক সিলবারস্টাইন হাজির হল শারলোটেনবুরগের পুলিস অফিসে। তাকে দেখে আধিকারিক
    হাসবেন না কাঁদবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

    পুলিস চিফ :আপনার কি মতিভ্রম হয়েছে? আমরা চাই একজন শক্ত সবল ব্লনড যুবক, চশমা চোখে কুঁজো বয়স্ক লোক নয়।
    সিলবারস্টাইন :সার, আপনাকে শুধু জানাতে এলাম আমি এ কাজের জন্য দরখাস্ত করবো না।

    **********


    বার্লিন। স্পোর্ট পালাস্টের বিশাল সভায় হিটলার।

    হিটলার :এই যে চারিদিকে এতো সমস্যা, এর জন্য দায়ী কে?

    কোহেন (পেছন থেকে):অশ্বারোহী আর ইহুদিরা।

    হিটলার :অশ্বারোহীরা কেন? তারা কি দোষ করল?
    কোহেন :তাই তো। আমার প্রশ্ন ইহুদিরাই বা কেন ?

    **********


    আবার বার্লিন কাফে। ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিক চলছে। এক দল বিদেশী অ্যাথলিট ঘুরে বেড়াচ্ছেন টিয়ারগারটেনে।

    পার্কের বেঞ্চে বসে দেখছে কোহেন আর ইতজাক।

    কোহেন :মোজেস কেন যে ইহুদিদের মিশর থেকে খেদিয়ে নিয়ে এলেন!
    ইতজাক :কোহেন, তিনি ফারাওয়ের দাসত্ব থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছিলেন!
    কোহেন :দূর বোকা, মিশরে থেকে গেলে আজ আমাদের হাতে ব্রিটিশ পাসপোর্ট থাকতো, বুঝলি?

    পুঃ মিশর সে সময় ব্রিটিশ আশ্রিত রাষ্ট্র।



    অনলাইন কিনতে এখানে ক্লিক করুন
    **********


    ১৯৪৩, লন্ডন
    নাৎসি জার্মানি থেকে পলাতক দুই ইহুদির দেখা, লন্ডনের রাস্তায়।

    গ্রুন :আমি জার্মান কোম্পানির শেয়ার কিনে যাচ্ছি। যা পাই।
    ব্লাউ :পাগল নাকি? জার্মান কোম্পানির শেয়ার কিনছ কেন?
    গ্রুন :কেন? ধরো হিটলার যুদ্ধ জিতল। আমার শেয়ারের দাম বেড়ে দশগুণ হবে।
    ব্লাউ :আর জার্মানি যদি যুদ্ধে হেরে যায়?
    গ্রুন :সেটাও তো আমাদের পক্ষে ভালো, তাই না?

    **********


    ইনসব্রুক স্টেশন, অস্ট্রিয়া

    নাৎসি পুলিস কালো টুপি পরা জন দশেক ইহুদিকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলো।

    টাইরোলের সবুজ টুপি আর চামড়ার ট্রাউজারে সজ্জিত এক অস্ট্রিয়ান ঠিক একই বেশে বিভূষিত আরেক জনকে বললে ইহুদিরা কি বোকা দেখেছেন? তারা যদি আমাদের মতন টাইরোলের জাতীয় পোশাক পরে থাকতো নাৎসি পুলিস তাদের গায়ে হাত দিতো না।

    অন্যজন - কাকে বলছেন!

    **********


    বার্লিন

    নাৎসি পুলিশের হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে আধমরা অবস্থায় রাস্তায় বেরিয়েছে ইলান। ফুটপাথের মানুষ কৌতূহলী হয়ে দেখছে
    তাকে। কেউ কিছু বলার আগেই ইলান উচ্চস্বরে ঘোষণা করল

    কিছুই ঘটে নি। যা দেখছেন সেটা নাৎসিদের বিরুদ্ধে একটা দুস্প্রচার মাত্র।

    **********


    ১৯৪২
    জার্মানি থেকে পলাতক এক ইহুদি ব্রিটিশ সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে চান।

    ব্রিটিশ রিক্রুটিং অফিসার :নাম?
    ইহুদি :ভিলহেলম আডলফ ডয়েচ।
    ব্রিটিশ রিক্রুটিং অফিসার :একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?

    **********


    বার্লিন ১৯৩৪। ইহুদিদের রাস্তা ঘাটে চলাফেরা তখনো অনুমোদিত।

    বার্লিন ভানজে (লেকে) স্টিমার ছাড়ল। মিসেস গিনসবেরগ রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। .খুব উত্তেজিত। পাশে নাৎসি ইউনিফরম পরা অফিসার।

    মিসেস গিনসবেরগ:আহা, কি সুন্দর চারিদিক! কত কিছু যে দেখতে পাচ্ছি!
    অফিসার :তার জন্যও আপনি আমাদের ফুয়েরারকে ধন্যবাদ দিতে পারেন।
    মিসেস গিনসবেরগ :ফুয়েরারকে কেন? আমি ধন্যবাদ দেব ডাক্তার মানডেলবাউমকে। তিনি আমার চোখের ছানির অপারেশন করেছেন।

    **********


    বার্লিন ১৯৩৩

    কুরফুরস্টেনডামের ফুটপাথে একজন ভিখিরি বসে আছে। তার বুকের ওপরে একটা বড়ো কাগজে লেখা

    “আমি অন্ধ। ইহুদিদের কাছ থেকে কোন ভিক্ষা নিই না “।

    গিনসবেরগ :আমি দশ মার্ক দিচ্ছি। তুমি দয়া করে তোমার ঐ কাগজটা সরিয়ে নাও।
    ভিখিরি :আপনার এই উপদেশের জন্যেই আমি অপেক্ষা করছিলাম! দোহাই, এই নাৎসি শুওর বাচ্চাদের কাছ থেকে ভিক্ষে নেবার কায়দা আমাকে বাতলাবেন না।

    **********


    বার্লিন
    ঊনটার ডেন লিনডেন। রাস্তা পার হতে গিয়ে দুজনের ধাক্কা লাগলো।

    প্রথম জন:শুয়োরের বাচ্চা !
    দ্বিতীয় জন :আপনার সেবায়, গোল্ডবেরগ!

    **********


    গোয়েবলসের কানে এলো ব্লাউস্টাইন নামের এক ইহুদি হিটলারকে নিয়ে নানা রসিকতা বার্লিনের বাজারে ছাড়ছে। তাকে ডেকে আনা হল হিটলারের সামনে।

    হিটলার :তোর এমন দুঃসাহস আমাকে ব্যঙ্গ করে বেড়াচ্ছিস ? আমি না তোর ফুয়েরার, হারামজাদা।

    ব্লাউস্টাইনের শাস্তি নির্ধারিত হল- গলায় একটি প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তাকে বার্লিনের পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হবে। তালা চাবি দিয়ে সেটি আটকানো থাকবে। তিন দিন বাদে প্রিন্তস আলব্রেখট স্ত্রাসের গেস্টাপো অফিসে হাজিরা দিলে মুক্তি তার। প্ল্যাকার্ডে লেখা

    এটা আর্যদের আবাস। ইহুদিরা বেরিয়ে যাও।

    প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে সেই যে ব্লাউস্টাইন বেরিয়ে পড়েছে, তার আর খোঁজ নেই। তিন দিন কেটে গেলে ব্লাউস্টাইন নিজেই হাজির, একেবারে ভিলহেলম স্ত্রাসেতে হিটলারের অফিসে।

    হিটলার :শুয়োরের বাচ্চা কোথায় ছিলিস তিন দিন? প্ল্যাকার্ড নিয়ে তোকে কেউ ঘুরতে দেখেনি!
    ব্লাউস্টাইন : আমার প্রিয় ফুয়েরার, আমি বার্লিনেই ছিলাম।
    হিটলার :তাহলে তোকে কেউ দেখতে পায় নি কেন? এই প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে কোথায় বসে ছিলি?
    ব্লাউস্টাইন :ইহুদিদের সমাধি ক্ষেত্রে!

    **********


    লাইপজিগ ১৯৩৭

    ইহুদির দোকানে তালা। সামনে লেখা - মৃত্যুর কারণে দোকান বন্ধ

    নাৎসি পুলিশ : কে মারা গেল?
    গ্রুন : আমার ব্যবসা।

    **********


    ১৯৩৭। বাদ ইশ্ল। অস্ট্রিয়া। তখনো স্বাধীন দেশ। রাস্তায় গ্রুনের সঙ্গে ব্লাউএর দেখা।
    গ্রীষ্মকাল- টুরিস্ট সমাগম তুঙ্গে।

    ব্লাউ :গ্রুন, কোন হোটেলে উঠেছ?
    গ্রুন :লাল ঘোড়া।
    ব্লাউ :এত জায়গা থাকতে ওখানে? লাল ঘোড়া হোটেলে?
    গ্রুন :কেন?
    ব্লাউ :তার মালিক একটা কট্টর নাৎসি!
    গ্রুন :তাই? আমি এখুনি যাচ্ছি সে হোটেল ছাড়তে।

    লাল ঘোড়া হোটেলের রিসেপশানে মালিক হাইনরিখের মুখোমুখি উত্তেজিত গ্রুন।

    গ্রুন :আমার হিসেব মিটিয়ে দিন। আপনার হোটেলে থাকব না।
    হাইনরিখ :কেন, আপনার কোন অসুবিধে হচ্ছে?
    গ্রুন :আমি শুনলাম আপনি ভয়ঙ্কর নাৎসি!
    হাইনরিখ :নাৎসি? আমি? এই হাই সিজনে?

    **********


    পোল্যান্ড। ১৯৩৯। নাৎসিরা পোল্যান্ড দখল করে ইহুদি দমন চালু করেছে। সামাজিক জীবন থেকে ইহুদিদের সম্পূর্ণ নির্বাসন। স্কুল বাজার দোকান কোথাও যাবার অনুমতি নেই।

    আব্রাম লুবিনস্কির ঘোড়া অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে তাকে নিয়ে এসেছে।

    পোলিশ ডাক্তার :হের লুবিনস্কি, আমি তো আপনার ঘোড়ার চিকিৎসা করতে বা ওষুধ দিতে পারব না। বারন আছে।
    লুবিনস্কি :কেন, আমার ঘোড়াটা কি ইহুদি?

    **********


    ১৯৩৫
    বার্লিন আলেকসানডার প্লাতস।

    ফিঙ্কেলস্টাইন কিওস্কে গিয়ে বারলিনার নাখরিখট (বার্লিন সংবাদ) কাগজটি কিনেছে। প্রথম পাতাটা দেখে নিয়েই দুমড়ে মুচড়ে সেটা ডাস্টবিনে ফেলে চলে গেলো। পরের দিন, তার পরের দিন সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। চার দিন বাদে বিক্রেতা কৌতূহল চেপে রাখতে পারলেন না।

    দোকানদার :কদিন ধরে লক্ষ করছি রোজ আপনি প্রথম পাতায় চোখ বুলিয়েই কাগজটা ছুঁড়ে ফেলেন। তার কারণ জানতে পারি?
    ফিঙ্কেলস্টাইন :আমি মৃত্যু সংবাদ খুঁজি।
    দোকানদার :মৃত্যু সংবাদের তালিকা কাগজের শেষ পাতায় থাকে। আপনি তো পয়লা পাতা দেখেই ফেলে দেন!
    ফিঙ্কেলস্টাইন :আমি যাদের মৃত্যু সংবাদ খুঁজি তাদের খবর প্রথম পাতায় থাকবে।

    **********


    সাংহাই জাপানের দখলে তখন। মিত্র দেশ জার্মানি থেকে সাংহাইয়ের ভিসা পাওয়া যেতো।
    বিদেশী ভিসা দফতরে রোট আর গ্রুনের দেখা।

    রোট :কেন সময় নষ্ট করছ এরা কি আমাদের কোথাও যেতে দেবে? কোথাকার ভিসা খুঁজছ?
    গ্রুন :সাংহাই।
    রোট :এতো দূর যাবে?
    গ্রুন :দূর? কোথা থেকে?

    পু: সিটি ব্যাঙ্কে আমার অন্যতম খদ্দের ছিল নরওয়ের বিওরন। সে আমাকে ইজরায়েলে আপ্যায়ন করেছিল! তার মা চিনের ইহুদি – সাংহাইতে জন্ম।

    **********


    ১৯৩৩। জার্মানি। ইতিহাসের ক্লাস

    ইতিহাস শিক্ষক :হফমান, জার্মানি কি কারণে যুদ্ধে হেরে যায়?
    হফমান :কাপুরুষ ইহুদি সৈনিকরা লড়াই করতে চায় নি বলে।
    ইতিহাস শিক্ষক :যথার্থ। হার্টউইগ?
    হার্টউইগ :যুদ্ধের সময় ইহুদিরা খাবার লুকিয়ে রেখেছিল। সৈন্যেরা অভুক্ত ছিল তাই জার্মানি যুদ্ধে হেরে যায়।
    ইতিহাস শিক্ষক :চমৎকার, হার্টউইগ। আর কোন কারণ, রোজেনবাউম?
    রোজেনবাউম :ইহুদিরা সামরিক প্রশাসনের দায়িত্বে ছিল বলে।
    ইতিহাস শিক্ষক :তুমি আস্ত গর্দভ রোজেনবাউম। কোনো ইহুদি জার্মান সমর ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল না
    রোজেনবাউম :ঠিক, সার। ইহুদিরা ফরাসি সামরিক প্রশাসনের দায়িত্বে ছিল।

    **********


    মে, ১৯৩৮

    অস্ট্রিয়ার একীকরণ (আনশ্লুস) হয়েছে জার্মানির সঙ্গে। তার নতুন নাম অষ্ট মার্ক। স্কুল পরিদর্শনে এসেছেন স্থানীয় নাৎসি অধিকর্তা (গাউলাইটার) । সকলকে প্রশ্ন করে চলেছেন। এবার ছোট্ট মরিতসের পালা। গাউলাইটার জানেন না ছেলেটি ইহুদি।

    গাউলাইটার :মরিতস, বল দেখি তোমার আমার আর এই রাষ্ট্রের পিতা কে?
    মরিতস :আডলফ হিটলার।
    গাউলাইটার :ঠিক! বলতো তোমার মাতা কে?
    মরিতস :জার্মানি আমার মাতা।
    গাউলাইটার :এক্কেবারে সঠিক! বড়ো হলে তুমি কি হবে?
    মরিতস :সম্পূর্ণ অনাথ, হের গাউলাইটার।

    **********


    পিতা পুত্র সংবাদ

    পুত্র : বাবা, বাইবেলে বলা আছে ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করবেন, দুষ্টকে শাস্তি দেবেন। তাহলে আমাদের এতো কষ্ট আর খুনিদের এত সমৃদ্ধি কেন?
    পিতা:দেখো, এটা এ জগতের খেলা। অন্য জগতে আমরা ভালো থাকব। হত্যাকারীদের সাজা হবে।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিতা : অন্য জগতে তা যদি নাও হয়, তবু এমনি, আজকের মত, সেখানেও হেসে যাব।

    **********


    লন্ডন ১৯৪৪

    এককালে ভিয়েনার দুই অধিবাসী একত্র হয়েছেন লন্ডনে। গল্প করছেন। যুদ্ধ একদিন শেষ হবে। একদিন ভিয়েনায় ফিরে যাবেন। তখন কেমন লাগবে? কি ঘটবে?

    টাইটেলবাউম :আমার ছবিটা এই রকম। আমি সারার সঙ্গে হাঁটছি প্রাটারআলে দিয়ে একজন জীর্ণ পোশাকের ভিখিরি রাস্তার ধারে বসে আছে। আমি সারাকে বললাম, দ্যাখ ঐ লোকটা হিটলার। কি অবস্থা হয়েছে তার!

    মানডেলবাউম :আমার ছবিটা অনেক আলাদা। আমি আমার অভ্যেস মত কাফে সেন্ট্রালে বসে আছি। মুখে ভার্জিনিয়া সিগার। টেবিলে ক্রিম দেয়া কালো কফি (আইনস্পানার) । হাতে খবরের কাগজ। পাশের টেবিল থেকে এক ভদ্রলোক এসে পাশে দাঁড়াবেন, অত্যন্ত ভদ্র ভাবে বলবেন, হের মানডেলবাউম, আপনার পড়া শেষ হলে আমাকে খবরের কাগজটা দেবেন? আমি তখন তাকে বলব, আপনাকে এ কাগজ দেব না, হের হিটলার!

    **********


    পরিশিষ্ট:
    যুদ্ধ শেষ। ভিয়েনা, সেপ্টেম্বর ১৯৪৫

    কাফে সেন্ট্রাল।

    ১৯২০ সাল থেকে ভোলকিশে বেওবাখটার (জনতার পর্যবেক্ষক) সংবাদ পত্র ছিল নাৎসি পার্টির মুখপত্র - ‘ বৃহৎ জার্মানির জাতীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগ্রামী সংবাদপত্র ‘। প্রথমে সাপ্তাহিক, ১৯২৩ থেকে দৈনিক।

    ফিঙ্কেলস্টাইন :হের ওবার, আজকের ভোলকিশে বেওবাখটার খবরের কাগজটা পেতে পারি?
    ওয়েটার না, সেটা নেই।

    পরদিন

    ফিঙ্কেলস্টাইন : হের ওবার, আজকের ভোলকিশে বেওবাখটার খবরের কাগজটা দিয়ে যাবেন?
    ওয়েটার : সে কাগজ নেই।

    পরের দিন।

    ফিঙ্কেলস্টাইন : হের ওবার, আজকের ভোলকিশে বেওবাখটার খবরের কাগজটা দেবেন?
    ওয়েটার : মাইন হের, যুদ্ধ শেষ হয়েছে চার মাস আগে। নাৎসিরা আর ক্ষমতায় নেই। তাই ভোলকিশে বেওবাখটার আর ছাপা হয় না। আপনি রোজ রোজ সেটা চান কেন?
    ফিঙ্কেলস্টাইন : ওই জন্যেই তো। জেনে খুশি হতে চাই যে সেটা আর ছাপা হয় না।

    **********


    মিউনিক ১৯৫০
    জার্মানদের নাৎসি নামের কলঙ্ক থেকে শুদ্ধিকরণের কাজ চলছে পাড়ায় পাড়ায়। নতুন জার্মানিতে সরকারি অফিসাররা প্রাক্তন নাৎসি পার্টি সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানছেন তাঁরা আদৌ নাৎসি ছিলেন কি? অথবা নিতান্ত পাকে চক্রে দুর্নামের ভাগী হয়েছেন? এই অফিসাররা (বেআমতে) এক কলমের খোঁচায় দাগি নাৎসিকে জর্ডান নদীর জলে ধোয়া সৎ সম্ভ্রান্ত নাগরিকে পরিবর্তিত করার ক্ষমতা রাখতেন। এহেন সার্টিফিকেটের চলতি নাম ছিল পেরসিল শাইন (পেরসিল এখনো জার্মানিতে খুব প্রচলিত জামা কাপড় ধোবার সাবান) ।

    অফিসার :হের ম্যুলার, আপনি কি কখনও হিটলারের বিরোধিতা করেছেন? প্রতিবাদী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন? কোন কারণে নির্যাতিত হয়েছেন? অন্নাভাবে ভুগেছেন?
    ম্যুলার :না এসব কিছুই করি নি। খাবারের অভাব হয় নি। এমনকি আমার সেলারে যথেষ্ট ওয়াইন লুকিয়ে রাখতে পেরেছি।
    অফিসার (সেক্রেটারিকে) : ফ্রয়লাইন মায়ার – লিখে নিন হের ম্যুলার যুদ্ধের সময় অনেক ওপেনহাইমারকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন সে কাজ সহজ ছিল না। তিনি নাৎসিদের ইহুদি বিদ্বেষের পরিপন্থী মনোভাব বজায় রেখেছেন। অতএব তিনি সম্পূর্ণ ভাবে নাৎসি কলুষ মুক্ত।

    পু:ওপেনহাইমার কথাটির দুটো অর্থ – একটি বিখ্যাত ওয়াইনের নাম আবার এটি প্রচলিত ইহুদি পদবিও বটে।

    নাৎসিদের শুদ্ধিকরণ এক অসাধারন সফল প্রকল্প – যুদ্ধ শেষের পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে নাৎসি খুঁজে পাওয়া শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় কথাটা শুনেছিলাম।
    যুদ্ধোত্তর জার্মানিতে ঠগ খুঁজে পাওয়া শক্ত হয়েছিল। নাৎসি পার্টির নাম শোনেন নি বলেও অনেকে দাবি করেন। প্রায় সকলেই শুদ্ধ। পবিত্র। নাৎসি মুক্ত জার্মানি।

    **********


    হামবুর্গ ১৯৫০
    ক্যাথলিক ফাদারের কাছে এসেছে পেটার।

    পেটার :ফাদার, বিবেক দংশনে ভুগছি। আমি একজন ইহুদিকে বাড়ির সেলারে লুকিয়ে রেখেছি।
    ফাদার :বিবেক দংশন কিসের? পেটার, এতো বড়ো সৎ কাজ। পুণ্য হবে তোমার।
    পেটার :আমি তার কাছ থেকে যে দিন পিছু পঞ্চাশ মার্ক নিচ্ছি।
    ফাদার : তাতে অবশ্য তোমার পুণ্য কিছু কম হবে।
    পেটার :ফাদার, এটাই সব নয়। আমি তাকে বলিনি যে যুদ্ধ পাঁচ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে।

    **********


    ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি ১৯৯০

    নাৎসিদের বারো বছরের নিরন্তর ইহুদি নিপীড়ন ও সংহারের শেষে জার্মানিতে এসেছে শান্তি। ১৯৩৯ সালে পাঁচ লক্ষ ইহুদি বাস করতেন। আজ (২০২০) তাঁদের সংখ্যা প্রায় দু লক্ষ!
    দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে জার্মানিতে ইহুদিদের সঙ্গে সর্বদা সসম্ভ্রমে আচরণ করার একটি অলিখিত বিধি সবাই মান্য করেন।

    ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের রাস্তায় দুটি গাড়ি একে অপরকে ধাওয়া করছে। একটি ছোট ফোলকসভাগেন বিটল বারবার চেষ্টা করছে শক্তিশালী মারসিডিস ২২০ গাড়িকে অতিক্রম করতে। এই রাস্তায় গতি সীমা বাঁধা আছে, এটা অটোবান নয়। এমনি বার দশেক ওভারটেকিঙের খেলা শেষ করে উত্যক্ত মারসিডিস ড্রাইভার বিটলের পথ আটকে দিয়ে গাড়ী থেকে নামলেন। কথা বলবেন সে গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে।

    মারসিডিস ড্রাইভার :যদি অনুগ্রহ করেন, অগ্রিম অসংখ্য মার্জনা চেয়ে আপনাকে কি একটি প্রশ্ন করতে পারি?
    বিটল ড্রাইভার (গাড়িতে বসে) : বলুন?
    মারসিডিস ড্রাইভার : আপনি কি ইহুদি?
    বিটল ড্রাইভার : না।
    মারসিডিস ড্রাইভার : নেমে আয়, তুই শুয়োর (কম রাউস দু শোয়াইন) ।
    ছবি : র২হ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০২ অক্টোবর ২০২১ | ৩১৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Nirmalya Bachhar | ০২ অক্টোবর ২০২১ ১০:৪৬498974
  • খুব কন্সেন্ট্রেটেড ডোজ। আস্তে আস্তে হজম করছি
  • Amit | 103.6.***.*** | ০২ অক্টোবর ২০২১ ১১:০৮498976
  • এতো গুলো পর্বের মধ্যে আজকেরটা সেরা হয়তো। গল্প আর ইতিহাস পরতে পরতে একে অন্যের সাথে দারুন ভাবে মিশে গেছে.  ইতিহাসের ঘটে যাওয়া সব থেকে বর্বর ঘটনা গুলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে জীবন নিয়ে যারা এসব প্রাকটিক্যাল জোকস বানিয়ে ফেলতে পারেন , তাদেরকে জাস্ট হ্যাটস অফ। 
  • কৌশিক ঘোষ | ০২ অক্টোবর ২০২১ ১১:৪৪498977
  • কোন পর্বটা সেরা নয়, অমিত ? ইতিহাস আর সমাজতত্ত্ব মিশিয়ে HSR বিষয়টাকে অন‍্য লেভেলে নিয়ে গেলেন। প্রথমে আলোচনা থাকায় তার পরে রসিকতা পড়ে বোঝার ব‍্যাপারটা অন‍্য মাত্রা পেয়ে গেলো।
  • Ramit Chatterjee | ০২ অক্টোবর ২০২১ ১৯:২৫498981
  • এই পর্বটা জাস্ট ফ্যান্টাস্টিক ছিল। wunderbar
  • jsl | 2405:201:8005:9947:2519:e7cc:7e9f:***:*** | ০২ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৩৪498982
  • এই পর্বটা আমার মতেও সেরা, সূত্রধার হিসেবে হীরেনবাবুর বিস্তারিত ভূমিকার জন্যে। ঘটনাক্রমের বিবরণ রসিকতার মধ্যে নিহিত তিক্ত, কটু, কষায় ও করুণ রেফারেন্সগুলো ধরতে সাহায্য করে।

    "মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচারের তালিকা অতি দীর্ঘ।"
  • | ০২ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৫১498983
  • এইটা দুর্ধর্ষ  লাগল।
  • শঙ্খ | 2402:3a80:a6f:4635:af66:b049:1923:***:*** | ০২ অক্টোবর ২০২১ ২০:১০498985
  • সবকটি পর্বই অসাধারণ লাগে। তারই মধ্যে এটি যেন বিষাদে কৌতুকে একটু বেশি ইমপ্যাক্ট রেখে গেল। হাইল এইচএসআর।
  • Amit | 203.***.*** | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৩:০১498994
  • এই পর্বটা পড়তে গিয়ে বারবার কেন যেন রবের্তো বেনজিনির " Life is Beautiful" মুভিটা মনে পড়ে যাচ্ছিলো। চারদিকে নাত্সি হিংস্রতার মধ্যে দাঁড়িয়ে একটা ইহুদি-জার্মান মিক্সড ফ্যামিলি আর তাদের ছোট বাচ্চা টা কিভাবে ছোট ছোট জিনিসের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে। শেষটা দেখে চোখের জল চাপা মুশকিল। আমার দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা। 
  • Tim | 2603:6010:a920:3c00:20fb:6797:a569:***:*** | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৮:০৭498996
  • প্রতিটি পর্বই ভালো লাগছে। সবকটা পড়া হয়নি এখনও। এই পর্বটা খুবই ভালো লাগলো। 
  • সুকি | 49.207.***.*** | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৮:০৯498997
  • বাকি সবার মত আমিও জানিয়ে রাখি, এই সিরিজটা খুব ভালো লাগছে - রিফ্রেসিং এবং অনেক কিছু অজানা ইতিহাসও জানা হচ্ছে। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:7da9:c5ae:8f5:***:*** | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৮:১৪498998
  • ভূমিকা-টা এই পর্বকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। অসাধারণ 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:7da9:c5ae:8f5:***:*** | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৮:১৪498999
  • " Life is Beautiful" - আমারও খুব ​​​​​​​প্রিয় সিনেমা 
  • ইন্দ্রাণী | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৯:২২499002
  • প্রতিটি পর্বই অনন্য। পরিবেশন উল্লেখের দাবি রাখে। কারণ ভূমিকার ব্যাকড্রপে রসিকতাগুলি আভাময়- বিবিধ বর্ণের বিচ্ছুরণ ঘটে।
    ব্যাকড্রপ সরিয়ে নিলে হয়ত শুধুই সংকলন হয়ে থাকত।

    এ'লেখার পিছনে চিন্তা ও পরিশ্রমকে কুর্ণিশ। লেখককে নমস্কার।
  • :|: | 174.255.***.*** | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১০:৫৮499004
  • প্রতি পর্বের মতো এই পর্বটা পড়েও হাসলাম। দুঃখের হাসি। 
    ছোট্ট সাজেশন: "সমস্ত সরকারি কাজ থেকে ইহুদি নিষ্কাশন।" বোধহয় "নির্বাসন" আরও উপযুক্ত ​​​​​​​হবে। ​​​​​​​আকর ​​​​​​​থেকে ​​​​​​​ধাতু নিষ্কাশন হয় ​​​​​​​কিন্তু ​​​​​​​মানুষের ​​​​​​​ক্ষেত্রে ​​​​​​​তেমন প্রয়োগ ​​​​​​​এই মুহূর্তে ​​​​​​​মনে ​​​​​​​পড়ছে ​​​​​​​না। ​​​​​​​
  • প্রত্যয় ভুক্ত | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১১:৪৫499007
  • 'পিতা পুত্র সংবাদ' পড়ে মনটা বড় খারাপ হয়ে গেল।লেখাটা চমৎকার।
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৩৮499011
  •  
     
     
     

    জারমানী এসেছি নিজের কাজে। শনিবারের জার্মান কাগজে  (.১০এটা চোখে পড়ল। ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিকের ৮৫ বছর বাদে বারলিনেরইউনিয়ন বার্লিন বনাম তেল আভিভের মাকাবি ফুটবল দলের খেলা সেই অলিম্পিক  স্টেডিয়ামে। ইউনিয়ন বারলিনের এক অংশ হিটলার স্যালুট দিছছে ইজরায়েলী সমর্থকদের 

     

  • ছবি | 2405:201:8005:9078:cc9d:1886:2845:***:*** | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪৭499013
  • syandi | 45.25.***.*** | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১৪499014
  • হীরেন সিংহরায়, কিন্তু নাৎসি স্যালুটেশন দেওয়া তো ক্রাইম বলেই জানতাম। যাইহোক প্রতিটি পর্বই সাঙ্ঘাতিক ভালো হচ্ছে, কিন্তু এটা একটু বেশিই ভালো হয়েছে। 
     
    আর এটা কমন পড়ে গেল। তাই মজা পেলাম।
    Persil Liquid Detergent Power Gel Top Load 1Litre - MRSOUK .COM W.L.L
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৩৭499015
  • অনেক অনেক ধন্যবাদ !! কি বলে যে আপনাকে ...
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৪৬499016
  • Syandi হিটলার স্যালুট দেয়া বেআইনি! তার জন্য  শাস্তির ব্যবস্থা আছে। ইউনিয়ন বার্লিন আপাতত এই আচরনের জন্য সমর্থকদের কড়ি সে কড়ি নিন্দা করেছে। আর কিছু হবে বলে মনে হয় না। চেক স্লোভাক বুলগারিয়ান ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল দলের নিয়মিত কিছু ফাইন হয়  ব্রিটিশ ফরাসি ফুটবল দলের কালো খেলোয়াডদের কলা দেখানো ও মাংকি চ্যানট করার জন্য। অথবা বন্ধ স্টেডিয়ামে খেলা। Kick Racism out of the game কথাটা খুব ফাঁপা শোনায়। 
     
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৫৩499017
  • শ্রী চতুষ্কোণ নির্বাসন কথাটাই যুক্তি যুক্ত হবে। অজৈবকে নিষ্কাশন করা যায়। 
  • syandi | 45.25.***.*** | ২০ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৩৬499887
  • এই সিরিজটায় পরবর্তী পর্ব কি আর আসবে না? 
  • b | 14.139.***.*** | ২০ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৫৪499888
  • হান্স গ্লোবকে শেষ জীবন সুইজারল্যান্ডে কাটাবেন ভেবেছিলেম। সুইস সরকার ভিসা দেয় নি। জার্মানি পার্সিল গ্রেড দিলেও সুইস সরকার দেয় নি। 
  • আসবে নিশ্চয় | 2405:201:8005:9947:b1a5:5751:8df2:***:*** | ২০ অক্টোবর ২০২১ ১৮:২২499892
  •  
    • syandi | 45.250.246.238 | ২০ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৩৬499887
    • এই সিরিজটায় পরবর্তী পর্ব কি আর আসবে না? 
     
    উৎসব সংখ্যার সময় সব নিয়মিত বিভাগ বন্ধ থাকে।
  • হীরেন সিংহরায় | ২১ অক্টোবর ২০২১ ০২:৫০499916
  • শ্রী ব 
    আইখমানের বিচারের সময় ইজরায়েল সরকারের কৌঁসুলী  একবারও গ্লোবকের নাম করেন নি। জার্মান বিদেশ দফতর বলেছিলেন সেটি করলে জার্মান ইজরায়েলী বানিজ্যে অসুবিধে ঘটতে পারে! অতএব! তিনি বহাল তবিয়তে আরো ৩ বছর বনে  চিফ সেকরেটারি পদে আসীন থাকবেন। আদেনআউয়ার বলেছিলেন যতক্ষন না পরিষ্কার জল মেলে, ময়লা জলেই কাজ চালাতে হয়। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন