গ্রামে গঞ্জে
শহরকে জার্মানে বলে স্টাড। তা থেকে এসেছে ইদিশ স্টেটেল।
এই শব্দটির সঙ্গে আমার পরিচয় করান আইজাক ফেডারবাউম নামক লন্ডনের এক উকিল যিনি আমাদের ব্যাঙ্কের বিবিধ ঋণ পত্র প্রস্তুত করতেন। তিনি তখন ডেনটন ওয়াইল্ড সাপট (এখন এস এন আর ডেন্টন) নামক আইনি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। রোমানিয়ার কনসটানসা বন্দর থেকে জাহাজ ধরে তাঁর বাবা মা ইজরায়েলে যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে। আইজাক বাড়িতে ইদিশ বলেছেন। লেখাপড়া ইজরায়েলে, হিব্রু এবং ইংরেজিতে। তারপরে লন্ডন আসেন, ওকালতিতে বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। আমার পরিচিত ইহুদিদের মধ্যে তিনি এক বিরল ব্যক্তি যিনি ইদিশে দক্ষ এবং ইজরায়েলে জন্মেছেন (ইজরায়েলে যে ইহুদি জন্মান তাঁদের বলা হয় সাবরা)।
স্টেটেল কি সেটা সঠিকভাবে উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন একদিন।
লন্ডনের উত্তরে হ্যাম্পস্টেড একটি অত্যন্ত সম্পন্ন অভিজাত পল্লি (ইয়েহুদি মেনুহিন, আগাথা ক্রিস্টি ইত্যাদি বহু ডজন খ্যাতনামা মানুষ বসবাস করেছেন, সিগমুনড ফ্রয়েডের অন্তিম নিবাস সেখানে)। হ্যাম্পস্টেড হিল থেকে পুরনো জ্যাক স্ট্রস ক্যাসল নামক পাবটি (থ্যাকারে, ডিকেন্স একদা দু পাত্র পান করেছেন হেথায়; তবে আজ সেটা ভেঙ্গে বাড়ি হয়েছে) ছাড়িয়ে যে রাস্তা উত্তর পশ্চিম পানে নেমে যায় সেখানেই গোলডারস গ্রিন শুরু। তারপরে হেনডন, কলিনডেল, স্ট্যানমোর অবধি বিস্তৃত ভূখণ্ডে মূলত ইহুদিদের বাস। ১২৯০ সালে রাজার আদেশে ইহুদিদের ঝাড়ে বংশে তাড়ানো হয় এ দেশ থেকে। ফরাসিদের দেখাদেখি, উনিশ শতকে, ইংরেজ দিলো ইহুদিদের বসবাসের অধিকার। সে প্রায় দেড়শ বছর আগে। জাহাজে চড়ে লন্ডনের ডক এলাকায় ইহুদিরা প্রথম নামলেন এ দেশে। ইংরেজ অধিকৃত ভারতে বহু ইহুদি সুখে সংসার করছেন সে সময়ে।
ইংরেজ তার নিজের পাড়ায় এই নবাগত মানুষদের প্রতিবেশী হিসেবে দেখতে চায় নি। হাতে দু পয়সা হলে ইহুদি যখন বাসস্থান খুঁজেছেন, ওয়েস্ট এন্ড, কেনসিংটন অথবা উইম্বলডনে তাঁদের স্থান হয় নি। তাঁদের যেতে হয়েছে তখনকার শহর থেকে দূরে, উত্তরে। আজকের হেনডনে একশ বছর আগে আলু গমের চাষ হত। সেখানে তাঁরা বাড়ি ঘর বানালেন। আইজাক বলেন হ্যাম্পস্টেডকে ধরে নাও সেকালের বার্লিন বা ভিয়েনা : অর্থ এবং সভ্যতার চুড়ো! আর যত উত্তর পশ্চিমে যাবে, হেনডন কলিনডেল তারপর স্ট্যানমোর হচ্ছে দূর গ্রামাঞ্চল; শহরতলি স্টেটেল!
আইজাক পূর্ব ইউরোপের স্টেটেলের গল্প শুনেছেন পিতা মাতার কাছে। চোখে দেখেন নি। তাঁর কাছে জেনেছি দুই সমাজের কথা। আপোষে জার্মান ও ইদিশ ভাষার মিল এবং অমিল নিয়ে বিস্তর তর্ক বিতর্ক করেছি।
পথে কারো সঙ্গে দেখা হলে আপনি তাঁকে হিব্রুতে বলবেন শালোম আলাইখেম(শান্তি হোক আপনার)। সম্ভাষিত জন উত্তরে বলবেন আলাইখেম শোলেম (আপনার হোক শান্তি)। যদি মনে হয় এই শব্দবন্ধ আপনি অন্য কোথাও শুনেছেন, আপনার সে অনুমান সত্য। আরবির সালাম আর হিব্রুর শালোম একই অর্থ বহন করে – শান্তি। তাই আরবিতে আস সালামু আলাইকুম বললে জবাব মেলে ও আলাইকুম সালাম। একই অর্থ। একই শব্দ বিন্যাস। দুটিই সেমিটিক ভাষা। দুটিই ডান দিক থেকে বাঁ দিকে লেখা হয়।
এতাবৎ জানা ছিল।
আমার বাহাদুরি দেখানো শেষ হলে আইজাক আমাকে বললেন তেল আভিভ বা জেরুসালেমে (ইয়ারুশালেম/শান্তির শহর) আজকাল কেউ কাউকে শালোম আলাইখেম বলেন না। তাঁরা বলেন ‘মা নিশমা?’ কি খবর? কেমন চলছে? কি ঘটনা? কি রটনা? এর উত্তরে, ‘এই চলছে’ বা ‘ভালো’ বলতে উত্তর দেবেন টভ, খুব ভালো থাকলে মেজুয়ান। তবে মা নিশমার উত্তরে আপনাকে একটা জবাব দিতে হবে। ওই আপনার শান্তি হোক বলে ছেড়ে দিতে পারবেন না।
এই কারণে শুধু শালোম বলা খুব নিরাপদ। দেখা হলে শালোম, বিদায় নেবার সময়েও শুধু শালোম বলা যায়। শান্তি ওম শান্তি। এ আবার কেমন ধারা সম্ভাষণ? আইজাক বলেন সেই রাতারাতি মিশর ছেড়ে পালানো থেকে আরম্ভ করে দু হাজার বছর ইহুদি ভ্রাম্যমাণ। আজ হয়তো এখানে, খেদিয়ে দিলে কাল ওখানে। পোঁটলা বাঁধাই থাকে! কখন আসা কখন যাওয়া তার হদিশ মেলা ভার। তাই হয়তো ইহুদি আসতে ও যেতে শালোম বলে!
জেরুসালেম থেকে ছড়িয়ে পড়া ইহুদি ইউরোপে এলেন স্পেন পর্তুগালে (সেফারদি) এবং রাইন নদী ধারে আরেক দল (আশকেনাজি) গেলেন উত্তরে। নাগরিক অধিকার বস্তুটি মেলে না।পশ্চিম ইউরোপের নানা দেশের দরজা তাঁদের জন্য বন্ধ। এমন সময়ে পোলিশ রাজা পুণ্যবান বলেস্লাভ আমন্ত্রণ জানালেন - ইহুদিদের দিলেন ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, আপন বিচার ব্যবস্থা, জোর করে ধর্মান্তরিত করার বিরুদ্ধে আইনি সমর্থন (কালিস ঘোষণা ১২৬৪)। পরবর্তী চারশ বছরের পোলিশ লিথুয়ানিয়ান রাজত্বে সকল শাসক ইহুদিদের সে অধিকার সসম্মানে রক্ষা করেছেন। ১৫শ শতকে স্পেনে যখন রাজা ফারদিনান্দ ও রানি ইসাবেলার সাদর উৎসাহে কলম্বাসের কল্পিত ভারত আবিষ্কার আর তার সঙ্গে ইহুদি ধর্মান্তর, সংহার ও বিদায় উৎসব চলছে, নরওয়ে সুইডেনের মতো আলোকিত দেশগুলি অবধি তাদের প্রবেশাধিকার দেয় নি। পোল্যান্ড লিথুয়ানিয়া তাদের স্বাগত জানিয়েছে। স্বাধীনতা ছিল সীমিত, জীবন ধারণ অত্যন্ত কঠিন কিন্তু এই প্রথম ইউরোপ তাদের খানিকটা মানুষের মর্যাদা দিলো।
পোলিশ লিথুয়ানিয়ান রাজত্বের পতন হলে রাশিয়ান জারেরা এই অঞ্চল দখল করেন ১৮ শতকে। রাশিয়ান জার পেলেন তিরিশ লক্ষ ইহুদি প্রজা (ইহুদিরা তাই বলেন আমরা রাশিয়া যাই নি। রাশিয়া আমাদের কাছে এসেছে)। তৎক্ষণাৎ ইহুদিদের বহু অধিকার লুপ্ত হল।
খাস রাশিয়াতে সে যাবত কোনও ইহুদির বাস ছিল না। ১৮ শতকে জারিনা একাতারিনা (ক্যাথারিন দি গ্রেট) তাঁর দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ইউরোপিয়ানদের (ইহুদি বাদে) আহ্বান জানিয়েছিলেন রাশিয়াতে বসবাস করতে। বেশির ভাগ ইউরোপিয়ান সে সময়ে নিউ ইয়র্কের জাহাজ ধরতে ব্যস্ত। তবে জার্মান বংশোদ্ভূত রাশিয়ান রানির (একাতারিনা প্রাশিয়ান জমিদার আউগুস্তের কন্যা) আমন্ত্রণে গেলেন কিছু জার্মান, যাদের পরিচিতি হয় ভোলগা বা রুসল্যান্ড ডয়েচে বলে। পোলিশ লিথুয়ানিয়ান রাজত্বে যে ইহুদিরা বাস করছিলেন তাঁদের বাধা নিষেধ বাড়ালেন জারিনা। আদেশ হল সকল ইহুদিকে বাস করতে হবে একটি সীমিত এলাকার মধ্যে, পোলিশ রাশিয়ান প্রজাদের পাশাপাশি, ছোট বসতিতে।
এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ইদিশ নাম টে খুম হা ময়শেভ। যাকে ইংরেজিতে আমরা পেল অফ সেটলমেনট নামে জানি। পেল শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ পালুস বা বরশা থেকে, যেটি মাটিতে গেঁথে দিয়ে দখলি এলাকা চিহ্নিত করা যায়। পরে তাকে ঘেরা হয়। প্রাচীর ওঠে (যেমন ১৮শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের এনক্লোসার মুভমেন্ট)। একটি মাপা জোপা এলাকা, যার বাইরে ইহুদিদের পা ফেলা মানা। ভৌগোলিক বন্ধনে বাঁধা পড়ে ইদিশ ভাষা - তার আরেকটি রূপ নেয় এই অঞ্চলে। আইজাকের পূর্ব পুরুষ সেখানে বাসা বাঁধেন।
ইদিশ ভাষায় এর নাম স্টেটেল। শহর থেকে দূরে। স্টাড থেকে স্টেটেল। গঙ্গা থেকে যেমন গাঙ। তদ্ভব!
ইউরোপীয় ইহুদিদের ইতিহাসে এই স্টেটেলের ভূমিকা প্রবাদ স্বরূপ। এটিকে একটি বিশাল ইহুদি পাড়া আখ্যা দিয়ে আমাদের বীরভূমের বাউরি পাড়া, বাগদি পাড়ার সঙ্গে তুলনা করা যায় না। আমার বাল্যকালে তাদের হাতের জল চলত না। ছোঁয়া বারন। বাবু পাড়ার সঙ্গে তাদের বিশাল আর্থিক বৈষম্য। কিন্তু বীরভূমে তাঁদের গতিবিধিতে কোন সরকারি বাধা ছিল না। আর্থিক সামর্থ্যে কুলোলে বা কাজে বাসে চড়ে সিউড়ি দুবরাজপুর যেতে পারেন তাঁরা। রাস্তায় থামিয়ে কেউ বংশ পরিচয় পত্র দাবি করে না।
অর্থবলে বলিয়ান কিছু ইহুদির অনুমতি ছিল এই সীমানার বাইরে বাস করার - যেমন সম্পন্ন ব্যবসায়ী, বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র, সৈনিকদের পরিষেবা সরবরাহকারী দরজি ইত্যাদি এবং জারের খাতায় নাম লেখানো সৈনিক। স্টেটেলের বাকি ইহুদিদের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি অতিক্রম করার অনুমতি ছিল না, কোন বিশেষ অনুমোদন ছাড়া।
কি রকম ছিল সে জীবন?
বেশির ভাগ মানুষের প্রধান সঙ্গীর নাম দারিদ্র্য। ষ্টেটেল এক ধরনের বিশাল উন্মুক্ত জেল খানা। সেই ছোট গ্রামেই একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বাস। গোয়ালা, কসাই, মুচি, দরজি, ফিরিওলা, দোকানদার যে যা পারে সেই ধান্দা ধরে। পোলিশ জমিদারের খামারে দিন মজুরি, জুতো সেলাই, চুন কাম ঘর সারানোর কাজ। কিন্তু গতিবিধি সীমাবদ্ধ। জমি কেনা, চাষ, বড়ো শহরে যাওয়া মানা। জারের অফিসারদের বিশেষ জলপানির ব্যবস্থা করতে পারলে বাইরে যাওয়া সম্ভব হত কিন্তু সেটা খুব কম লোকের সাধ্যে কুলোয়। এমনি দারিদ্র্য ও বন্দিদশায় তাঁরা আঁকড়ে ধরেন আপন বিশ্বাসকে, আপন সমাজকে, সকল ধার্মিক রীতিনীতিকে। দরিদ্রতর মানুষের সাহায্যের জন্য গড়ে তোলেন আর্থিক সমবায় যেখানে সক্ষম ইহুদি অকাতরে অর্থদান করেছেন। তাঁদের দৌড় ইয়েশিভা (ধার্মিক পাঠশালা) এবং শুল (সিনাগগ) অবধি। তাঁরা স্বপ্ন দেখেন। কোনও একদিন তাঁরা ঈশ্বর প্রতিশ্রুত ভূমিতে পা রাখবেন। বাবা ছেলেকে বলেছেন - দেখিস, একদিন আমরাও! যেমন সুনীল বলেছেন কেউ কথা রাখেনি কবিতায়। পেসাখ বা পাসওভারের (মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্তি –একসোডাস) সন্ধ্যায় খাবার টেবিলে বলা হত: পরের বছর এই অনুষ্ঠান হবে জেরুসালেমে (নেক্সট ইয়ার ইন জেরুসালেম)! আস্থাই সম্বল। ফিডলার অন দি রুফ ছবিটি সেই জীবনের এক অনন্য দলিল। পারলে অবশ্যই দেখে নেবেন।
আইজাক বলেন ভেবে দেখ, সে আমলে ইন্টারনেট নেই। টেলিফোন দূর অস্ত। তাঁদের মুখের ভাষা ইদিশ যদিও সেটা রাইনের জার্মানে ততটা সপসপে চোবানো নয়। ছাপ পড়ছে পোলিশ, রাশিয়ান সহ অন্য স্লাভিক ভাষার। বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সংখ্যায় অনেক কম হলেও ইউরোপের অন্যত্র ইহুদিরা রীতিমত সফল। ফরাসি বিপ্লবের পরে সরকার নাগরিক অধিকার দিয়েছেন ইহুদিদের। অস্ট্রিয়ান সরকারও সেটি চালু করলেন। উনবিংশ শতক নাগাদ ফ্রাঙ্কফুর্ট ভিয়েনায় রোটশিল্ড পরিবার গণ্যমান্য ধনী ব্যাঙ্কার। আমস্টারডাম বার্লিন হামবুর্গ লন্ডনের সমসাময়িক ইহুদিরা শহুরে। বাড়িতে ইদিশ বলেন; সভ্য সমাজে ইংরেজি জার্মান ফরাসি বলেন। সমাজে প্রচ্ছন্ন ইহুদি বিদ্বেষ থাকা সত্ত্বেও আপন কর্ম ও ধনবলে উঁচু মহলে ঘোরাঘুরি করেন। তাঁরা খবরের কাগজ পড়েন, তাঁদের কথা কাগজে ছাপা হয়!
জনসংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ আজকের ইজরায়েলের সমান। এ হেন খোলা কারাগারে জীবন শঙ্কাবিহীন ছিল না। ইহুদি হবার অপরাধে রাস্তায় ঘাটে মারধর চলত। রাশিয়ান পুলিশ সৌম্য বদনে সেটি অবলোকন করেছে। কখনও বা ইহুদি নির্যাতনে সক্রিয় অংশ নিয়েছে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে রাশিয়া নিজেকে রিটায়ার্ড হার্ট ঘোষণা করলে এই পেলের বেড়াটি ভেঙ্গে পড়ে। শুরু হয় দলগত নিষ্ক্রমণ। কিছু গেলেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে, বিশেষ করে ওডেসা। কিছু গেলেন বিদেশের বিভিন্ন শহরে যেমন লন্ডন আমস্টারডাম। আর অনেকে গেলেন আমেরিকা, দলে দলে। পেল থেকে যারা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছেন তাঁদের অনেকের পুত্র কন্যা/ দৌহিত্র দৌহিত্রীকে আপনারা জানেন, নাম শুনেছেন। এখানে একটা ছোট্ট লিস্টি –
মারক শাগাল (শিল্পী), রোমান আব্রামভিচ (চেলসি!), হ্যারিসন ফোরড, ওয়াল্টার মাথাউ (অভিনেতা), আরিয়েল শারন, গোলডা মেইর, ইসাইয়া বার্লিন, ওঁরি বেরগসঁ, ম্যাক্স ফ্যাক্টর (মাক্সিমিলিয়ান ফ্যাক্টরোভিতস!), আন্দ্রে সিত্রওঁ (ফরাসি গাড়ি নির্মাতা), সামুয়েল গোল্ডউইন (এম জি এম), আলবার্ট, হ্যারি, জ্যাক, স্যাম ওয়নসাল (ওয়ারনার ব্রাদারস), হেলেনা রুবিনস্টাইন, রোমান পোলানস্কি, ল্যারি কিং (সি এন এন), শাশা ব্যারন কোহেন, আয়ান র্যানড (অ্যাটলাস শ্রাগড), নাইজেল লসন (ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী), ক্লাউদিয়া শাইনবাউম (মেক্সিকো সিটির বর্তমান মেয়র), ভ্লাদিমির হরোভিতস (পিয়ানো), আইসাক ষ্টেরন (বেহালা), মিলা কিউনিস, বারব্রা স্ট্রয়াইসানড, মেল ব্রুকস (হলিউড অভিনেতা), বিলি ওয়াইলডার (নির্দেশক), মাইকেল ব্লুমবেরগ ও আরও অনেকে।
একবার জামশেদপুরের কিনান স্টেডিয়ামে পূর্ব বনাম পশ্চিম জোনের ইরানি ট্রফির খেলা দেখেছিলাম কিছু সরদারের সঙ্গে বসে। সত্যি মিথ্যে জানি না কিন্তু তারা আমাকে বলেছিল সরদারজির নির্বুদ্ধিতা সংক্রান্ত সব রসিকতা নাকি ক্রিকেটের ব্যাট আর ফুটবলের মতোই জলন্ধরের কারখানায় তৈরি হয়ে থাকে! তাই তা শুনে সরদারবৃন্দ মোটে ক্ষিপ্ত হন না। তাঁরা বরং বলেন, আরে ইয়ার অব ইয়ে ভি সুনলো। আইজাক বা সলোমনের সঙ্গে গল্প করার সময় আমার জামশেদপুরের সেই দিন দুটো মনে পড়েছে! একটা শুনলে তাঁরা বলেছেন এটা আমার চেনা। আরেকটা বলি শোনো!
**********
গ্রামের ইহুদি সমবায় সমিতিতে খাতা লেখে এথান। সে দু হাজার রুবেল ধার চেয়েছে। মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিতে হবে। তিন বছরে শোধ করে দেবে বলেছে। সমিতির প্রধান মরগেনশাইন চিন্তায় পড়লেন। শোধের রকম তার মাইনে থেকে না হয় মাসে মাসে কেটে নেয়া যাবে কিন্তু এথান যদি তিন বছর না বাঁচে? এথান আশ্বাস দিলো।
একটু ভেবে দেখুন। ধরুন আপনাদের ভাগ্য ভালো, আমি তিন বছর বাঁচলাম। আপনাদের টাকা শোধ হল। আর যদি না বাঁচি তাহলে আমার ভাগ্যটা ভালো!
*********
স্টেটেলের প্রবচন
ঈশ্বরে বিশ্বাস আর মেয়ের বিয়ের জন্য যৌতুক জমা রাখো।
পু: গরিব গ্রামেও ইহুদি সমাজ কন্যাদায় গ্রস্ত পিতাদের সাহায্যার্থে ফান্ড তৈরি করতেন। কোন মেয়েকে শূন্য হাতে পতিগৃহে যেতে দেওয়া যায় না।
*********
সুওয়াল্কি তখন একটি ছোট পোলিশ গ্রাম (আমার ছোট মেয়ের পোলিশ বান্ধবীর সামার কটেজ আছে সেখানে)। রাবিকে মাসিক বেতন দেবার চাঁদাও তারা যোগাড় করতে পারে না। তাই জন্ম মৃত্যু বিবাহে তাঁর কাজের জন্য তিনি আলাদা দক্ষিণা দাবি করেন। তাঁকেও সংসার চালাতে হবে।
ইলানের বাবা মারা গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী রাবি অশৌচ মুক্তির কাজ করবেন। সবশেষে রাবির একটি শোক বার্তা পাঠ করার প্রথা আছে। তার জন্য অতিরিক্ত দক্ষিণা তাঁর প্রাপ্তব্য। ইলান জানতে চাইল তার পরিমাণ। রাবির উত্তর - তোমার পরলোক প্রাপ্ত পিতার স্মরণে ভীষণ সমবেদনায় ভরা একটা করুন রসের ভাষণ দিতে পারি। শ্রোতাগণ তা শুনে একবারে শোক সাগরে নিমজ্জিত হবেন। তার জন্য লাগবে আশি রুবেল। আরেকটা মৃত্যু চেতনায় মোড়া দরদি সন্তাপের বাণী দিতে পারি। সেটাও মন্দ হবে না, তবে তার দক্ষিণা পঞ্চাশ রুবেল। এর চেয়ে কমে হয়,ধরো বিশ রুবেল। কিন্তু সেটা তোমার পছন্দ হবে না।
**********
বেরদিচেভ। কয়েকঘর ইহুদির বাস। ছোট গ্রাম। তেমনি হতদরিদ্র সেখানকার রাবি। গ্রামের ইহুদি গোষ্ঠী নিয়মিত চাঁদা দিতে কৃপণতা করে, মাইনে বাকি পড়ে। অথচ তাদের ইহকাল পরকালের সব কাজের দায়িত্ব তাঁরই ঘাড়ে। ভয়ানক তিক্ত হয়ে সিনাগগে একদিন বললেন - পুরুতকে দুটো পাওনা রুবেল দিতে তোমাদের গায়ে জ্বর আসে। কিন্তু মরার পরে সমাধিক্ষেত্রে ইহুদি ধর্মমতে সমাহিত হতে তোমাদের বড়ো আনন্দ হয়!
**********
এক শহুরে ধনীর গাড়ি থেমে গেছে গ্রামের পথে। তিনি এটা টেপেন সেটা খোলেন। গাড়ি আর চলেনা। গ্রামের এক ইহুদি মিস্তিরিকে ডাকলেন। গাড়ির বনেট খুলে দেখে নিয়ে সে একটি হাতুড়ির বাড়ি মারল। গাড়ি সচল।
গাড়িওলা - কত দিতে হবে?
মিস্তিরি - দশ রুবেল।
গাড়িওলা - দশ রুবেল? হাতুড়ির একটা ঘায়ের জন্যে? কি হিসেবে?
মিস্তিরি - হাতুড়ির ঘা – এক রুবেল। ঘা কোথায় দিতে হবে সেটা জানা – নয় রুবেল।
*********
একদিন অঘটন ঘটল। এক ব্যক্তি গ্রামের ইহুদি সমাজকে অকস্মাৎ ১০০ রুবেল দান করেছেন। রাবি সে অর্থ যেকোন সমাজসেবার কাজে ব্যয় করতে পারেন। সেই বার্তা রটি গেল গ্রামে।
পরের দিন রাবির সামনে হাজির হলেন দুজন মানুষ – মরডেকাই আর ইতঝাক। অসীম শ্রদ্ধা সহকারে তাঁরা রাবিকে জানালেন যে, ইহুদি সমাধিক্ষেত্রের বেড়াগুলি অত্যন্ত অশক্ত হয়ে পড়েছে। কুকুর এবং শুয়োর সেখান দিয়ে ঢুকে মৃতের অবমাননা করতে পারে। তাই তাঁরা মনে করেন সেই বেড়াগুলির সম্যক রক্ষার্থে ওই একশ রুবেল নবগঠিত সমাধি সংরক্ষণ সমিতির হাতে তুলে দেয়া হোক। রাবি দাড়ি চুলকে বললেন – সে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমি শুধু ভাবছি একশো রুবেল যে আমাদের তহবিলে এসেছে সেই খবরটা ওই কুকুর ও শুয়োরের দল কি করে এত তাড়াতাড়ি পেয়ে গেল!!
********
গ্রামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রাবি এক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে গল্প করছেন। বয়স্ক সমাজপতিরা সেটা ভাল চোখে দেখলেন না। ডেকে পাঠালেন রাবি রাবিনোভিতসকে।
বড়ো রাবি - রাবিনোভিতস, তুমি কাল হাটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে অত কি কথা বলছিলে? এটা তোমাকে মানায় না। অত্যন্ত আপত্তিকর।
রাবিনোভিতস - রাবি, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় একজন রূপবতী মহিলার কথা ভাবার চেয়ে এক রূপসীর সঙ্গে কথা বলার সময় ঈশ্বরের আশীর্বাদ স্মরণ করাটা কি বেশি ভাল নয়?
**********
যদিও লিথুয়ানিয়ান ইহুদিরা (লিটভাক, যেমন পোলিশ ইহুদি পোলাক) দুনিয়াতে অনেক উচ্চ পদে পৌঁছেছেন পরবর্তী কালে, সে সময় লিটভাকদের বোকা বলে বিশেষ সুবাদ ছিল।
লিটভাকরা এমন বুদ্ধিমান যে পাপ করার আগেই তারা অনুতাপ শুরু করে।
**********
শামির কোভনো (আজকের কাউনুস, লিথুয়ানিয়া) থেকে ওয়ারশ যাবে।
শামির (সহযাত্রীকে) : আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
সহযাত্রী : ওয়ারশ থেকে কোভনো।
শামির : বিজ্ঞানের কি বিচিত্র মাহাত্ম্য! আপনি যাচ্ছেন ওয়ারশ থেকে কোভনো। আমি যাচ্ছি কোভনো থেকে ওয়ারশ। দুজন দুদিকে। একই ট্রেনে!
*********
গ্রামের রাস্তায় কাঁধে বোঝা নিয়ে একজন হাঁটছে দেখে ঘোড়া গাড়ি ওলার মায়া হল। সে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়েছে। ময়শে ধন্যবাদ দিয়ে গাড়িতে বসল। বোঝা রইল কাঁধে।
গাড়িওলা : বোঝাটা নামিয়ে রাখো। আরাম করে বোসো।
ময়শে : না, আমার কাঁধেই থাক। ঘোড়ার ভারটা কম হবে।
**********
ওয়ারশর ট্রেন। পিনকাস টয়লেটে যাবে।
পিনকাস (বাঁ পাশের লোককে) : আচ্ছা ইহুদিদের সম্বন্ধে আপনার কি মত?
পাশের লোক : আমি তাদের সব সময় খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখি।
পিনকাস (ডান দিকের লোককে) : আপনি ইহুদিদের সম্পর্কে কি ধারনা পোষণ করেন?
ডান দিকের লোক : আমি তো আশ্চর্য হয়ে যাই সাহিত্য সংস্কৃতিতে ইহুদিদের অবদান দেখে। অসামান্য।
পিনকাস (উলটো দিকের লোককে) : আচ্ছা আপনি ইহুদিদের কি চোখে দেখেন?
উলট দিকের লোক : আমি? ইহুদিদের আমি মোটেও পছন্দ করি না। তাদের সংস্পর্শ থেকে আমি দূরে থাকি।
পিনকাস : সার, আপনি একজন সৎ লোক। আমার জিনিসপত্র গুলোর ওপরে একটু চোখ রাখবেন? টয়লেটে যাব।
**********
স্টেটেলের কিছু শাপ শাপান্তঃ
পেঁয়াজের মতো জীবন হোক - মাথাটা থাক মাটির ভেতরে আর পা দুটো ওপরে।
একটা বাদে তোমার সব দাঁত পড়ে যাক। দাঁত ব্যথা কি সেটা বোঝার জন্যে একটা দাঁত থাকা দরকার।
রাস্তার বাতির মতো হও। সারাদিন ঝুলে থাকবে, রাতের বেলায় জ্বলবে।
*********
স্টেটেলের মানুষ ছাতা কেনে না। তার কারণ দুটো।
এক, ছাতা কেনার পয়সা নেই।
দুই, দুটো বৃষ্টির ফোঁটার মাঝে ফাঁক থাকে। তার ভেতর দিয়ে স্টেটেলের মানুষ দিব্যি না ভিজে হাঁটতে পারে।
********
মেঠো পথে হাঁটছে নাফতালি। একটা বলদে টানা গাড়ি আসছে দেখে জিগ্যেস করলো, সাটিমাতসি (হাঙ্গেরির গ্রাম) এখান থেকে কতদূর?
গাড়িওলা : এই আধ ঘণ্টার পথ।
নাফতালি : আমাকে নেবে তোমার গাড়িতে?
গাড়িওলা : উঠে পড়।
আধঘণ্টা কাটল। সাটিমাতসির দেখা নেই।
নাফতালি : সাটিমাতসি আর কত দূর?
গাড়িওলা : এই এক ঘণ্টার পথ।
নাফতালি : আধ ঘণ্টা আগে বললে যে আধ ঘণ্টার পথ?
গাড়িওলা : যেখানে জানতে চেয়েছিলে সেখান থেকে আধ ঘণ্টার পথ ছিল। আমরা উলটো দিকে যাচ্ছি।
**********
একটি বিশেষ গ্রামের মানুষদের কিছু গল্প।
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে বিশ কিলো মিটার দূরে আজকের পূর্ব পোল্যান্ডের ছেম শহর ছিল পেলের অংশ। ইদিশে তার নাম খেলম, জার্মানে কুলম। জলন্ধর লুধিয়ানার মতন এই খেলম স্টেটেলের এবং ইহুদি রসিকতার ইতিহাসে এক অনন্য স্থান গ্রহণ করেছে। খেলমের মানুষ নিতান্ত সাদাসিধে। কেউ কেউ তাঁদের বোকা বলে পরিহাস করেন।
সামুয়েল লাইবুশ ঘোড়ায় চড়েছে জীবনে প্রথম।
নাফতালি : কি রকম লাগলো?
সামুয়েল : ভীষণ অবাক হয়েছি।
নাফতালি : কি কারণে?
সামুয়েল : ভাবছি যে প্রাণী কেবল ঘাস খড় খেয়ে বেঁচে থাকে, তার গা এত কাঠের মতো শক্ত হয় কি করে?
**********
জোসেফ ছেলে দাভিদকে দিয়ে একটা চিঠি পাঠাবে খেলমের আরেক প্রান্তে।
জোসেফ : দাভিদ, এই খামের ওপর ঠিকানা লেখা আছে। তুমি সেখানে যাও। তবে যাবার আগে পোস্ট অফিসে ৩০ কোপেকের ডাক টিকিট কিনে সাঁটিয়ে দেবে। সেটি নিয়ম।
এক ঘণ্টা বাদে দাভিদ ফিরে এসে বাবাকে ৩০ কোপেক ফেরৎ দিলো।
জোসেফ : একি? চিঠি দিয়ে আসোনি?
দাভিদ : বাবা, সে রাস্তাটা একেবারে সুনসান! কেউ কোথাও নেই দেখে আমি খামটা তাদের চিঠির বাক্সয় ফেলে দিয়েছি। টিকিট লাগাইনি। তাই পয়সা বেঁচে গেলো তোমার!
**********
জোয়েলের চিঠি এসেছে। বউ রিফকা (রেবেকা) উৎসুক হয়ে জানতে চাইল কার চিঠি। জোয়েল যত্ন সহকারে লেফাফা খুলল। ভেতরে সাদা পাতা। কিছুই লেখা নেই।
রিফকা : এ কি রকম চিঠি?
জোয়েল : বউ, এটা আমার দাদার চিঠি। আমরা আজকাল কেউ কারো সঙ্গে কথা বলি না।
**********
নিয়েমেন নদীর ফেরি (এই সেই নদী যেটি পার হয়ে নাপোলে ওঁর ফরাসি ফৌজ ১৮২২ সালে এবং হিটলারের জার্মান বাহিনী ১৯৪১ সালের জুন মাসের যথাক্রমে ২১ ও ২২ তারিখে রাশিয়ান অভিযান শুরু করে – পরিণতি একই)। নৌকায় জল ঢুকেছে। লোকের চেঁচামেচি শুনে খেলমের একজন তার পাশের জনকে বললে, এতো কান্না কাটি কিসের? জল ঢুকেছে তো কি হয়েছে? এটা কি তোমার নৌকো?
**********
লেমবেরগের এক লেখক, শলেম বিয়ে করেছেন খেলমের মেয়ে ডেবরাকে। কয়েকদিন ধরে কিছু লেখালেখি করেছেন সেগুলো টেবিলের ওপরে ফেলে রেখে একটা সেমিনারে গেলেন। বাড়ি ফিরে মনে হল একটা পোড়া গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁর লেখার ডেস্ক একেবারে পরিষ্কার। বউকে ডাকলেন,
শলেম : আচ্ছা, কেমন একটা গন্ধ পাচ্ছি। তুমি কি আমার কাগজপত্র পুড়িয়েছ নাকি?
ডেবরা : মাথা খারাপ? আমি তোমার কাগজপত্র পোড়াবো কেন? সাদা কাগজগুলো তোমার দেরাজে যত্ন করে তুলে রেখেছি। ঐ শুধু যেগুলোতে কি সব আঁকি বুকি লেখা ছিল সেই জঞ্জালগুলো জ্বালিয়ে দিলাম।
*********
খেলমের দুই গ্রামবাসী পদচারনা করছে। বৃষ্টি নামল।
ইওসেল : ইয়াঙ্কেল, বৃষ্টি পড়ছে। তোমার ছাতাটা খোলো।
ইয়াঙ্কেল : আমার ছাতায় ফুটো আছে। জল আটকাবে না।
ইওসেল : তাহলে ছাতা এনেছ কেন?
ইয়াঙ্কেল : ভাবিনি বৃষ্টি হবে।
**********
আদালতে,
বিচারক : সাক্ষী! কি নাম তোমার?
সাক্ষী : মেনুখিম ইয়ন্তেফ।
বিচারক : পেশা?
সাক্ষী : পুরনো কাপড় কেনা বেচা ।
বিচারক : সাকিন?
সাক্ষী : খেলম।
বিচারক : ধর্ম?
সাক্ষী : আমার নাম মেনুখিম ইয়ন্তেফ, পুরনো কাপড়ের ব্যবসা করি, খেলমে থাকি। আমার ধর্ম কি হতে পারে বলে মনে করেন?
*********
খেলমের নাফতালি গেছে শহরের ডাক্তার কোহেনের কাছে,
নাফতালি : ডাক্তার আমার খুব কাশি হচ্ছে। থামতেই চায় না।
কোহেন : বয়েস কত আপনার?
নাফতালি : আজ্ঞে সত্তর।
কোহেন : আগে কাশি হত? এই যখন আপনার চল্লিশ বছর বয়েস?
নাফতালি : আজ্ঞে না।
কোহেন : আপনার পঞ্চাশ বছর বয়েসে? ষাট বছর বয়েসে?
নাফতালি : আজ্ঞে না।
কোহেন : আচ্ছা বলুন তো? এত বছর কাশেন নি। এখন এই সত্তর বছর বয়েসে কাশবেন না। বাড়ি যান। বেরুনোর সময়ে আমার সেক্রেটারিকে এক রুবেল ফি দিয়ে যাবেন।
**********
শেষে হাঙ্গেরির একটি গল্প।
যদিও আজ অবদি কোন প্রামাণ্য তথ্য কখনো পাওয়া যায় নি, হাঙ্গেরির নয়ত্রা গ্রামের খ্যাতি ছিল চোরবাজার বলে (বর্তমানে স্লোভাকিয়ার নিতরা)। ডাকাতের দল অবধি দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে পার হতো তাদের মাল লুট হবার ভয়ে। এখানে নাকি কোন গোরস্থান পাওয়া যায়নি কারণ রোগশয্যায় কারো দেহান্ত হতো না। চুরির দায়ে ফাঁসি যেতো অথবা অপরাধীরা সপরিবারে গা ঢাকা দিতো অন্য কোথাও।
একদিন শনিবারের প্রার্থনা সভায় রাবি লক্ষ করলেন প্রথম সারিতে বসা গাবাইকে ভীষণ চিন্তিত দেখাচ্ছে। তাকে ডাকলেন।
রাবি :গাবাই, তোমার শরীর ভালো আছে তো?
গাবাই : রাবি, শরীর ভালো আছে। তবে সিনাগগে বসে হঠাৎ মনে পড়লো বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় দরোজায় তালা দিয়ে আসি নি।
রাবি ভালো করে সমবেত জনতাকে নিরীক্ষণ করে নিলেন।
রাবি :গাবাই, কোন চিন্তা নেই। তাঁরা সবাই সিনাগগে বসে আছেন।
ফিদা! একদম ফিদা!
দুর্ধর্ষ লাগল। বিশেষ করে প্রথম দিকের ইতিহাসটা। জোকস গুলোও ভালো। দু একটা চেনা, বাাকি গুলো বেশ ভাল।
স্পেনের মুসলিম শাসকরাও তো ইহুদীদের দরাজ পাসপোর্ট দিয়েছিলেন।
শ্রী ব
অবশ্যই। ইসলামিক আইবেরিয়াতে ( অন্যভাবে দেখলে হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত তারশিশ পরে সেফারদা) ইহুদিরা পাসপোর্ট না হোক অসম্মান পান নি । এমনকি সেনা বাহিনীর জেনারাল হয়েছেন । সেফারদিকরা ল্যাটিন ও আরবি দুটোই জানতেন ( পোপেরা আরবি ভাষা শেখাটাকে খ্রিস্ট দ্রোহের সমান বিবেচনা করেন!) বলে অনেক মূল্যবান আরবি কেতাবের ল্যাটিন অনুবাদ করেন সেখানে নিধন ও ধর্মান্তর শুরু হয় ফার্দিনান্দ ইসাবেলার দু শো বছর আগেই ।
আমার মন্তব্য ক্রিস্টিয়ান ইউরোপ নিয়ে যেখানে পুণ্যবান বলেস্লাভ (১২৮৪ )- ইউরোপের ইতিহাসের বৃহত্তম সাম্রাজ্যের মালিক- প্রথম ইহুদিদের কিছু অধিকার দেন । তাঁদের " পাসপোর্ট " পেতে আরও পাঁচশ বছর কেটে যাবে ! মেরসি ফ্রন্স!
যাদের নিয়ে লেখা তারাও এত বিস্তারিত
ভাবে জানে কিনা আমার মনে সন্দেহ হচ্ছে। বিদেশি ভাষায় লেখা হলে বহুল
প্রচার হবে। বাংলায় এ রকম লেখা লেখা
আছে কি? আমার সন্দেহ হচ্ছে। আজকের বাংলা ছবির মতোই পাঠ যোগ্যলেখা চোখেই পড়ে না
অনবদ্য। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। কত জানার বিষয়! লেখনীর সহজ সরল সাবলীল ভঙ্গিমায় উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। জোকসগুলো ও খুুুব মজার।
আইজাক বাবেলের লেখায় স্টেটেল শব্দটা খুব পাওয়া যায়। খালি ভাবতাম এটার অর্থটা কি? আপনার লেখায় পরিষ্কার হলো। রুশ কবি ওসিপ মান্ডেলস্টেম ও ইহুদি ছিলেন। অনেকের মতে বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার সেরা কবি।
ধন্যবাদ। ষ্টেটেলের শ্রেষ্ঠ বর্ণনা আছে শোলেম আলাইখেমের ( আসল নাম সলোমন রাবিনোভিচ ) লেখায় । তাঁর সৃষ্ট গোয়ালা তেভিয়েকে পাবেন ফিডলার অন দি রুফ ছবিতে - ব্রডওয়েতে অসম্ভব সফল ছিল তার নাট্যরূপ । ষ্টেটেল দেখবেন চোখের সামনে ।আর কিছু না করুন ইউ টিউবে গিয়ে ইফ আই ওয়ের এ রিচ ম্যান দেখুন! ষ্টেটেলের দারিদ্র্য আর আশার অনবদ্য সংমিশ্রণ!
মানডেলস্টেম অবশ্যই ইহুদি । তাঁর নামটাই যে ক্লু ! ! বাদামগাছের গোড়া ! আমি এর আগে নামাবলি পর্যায়ে এ সব গল্প বলেছি।
নিশ্চয়ই দেখবো। অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ।
কত অজানারে জানতে পারছি, রসিকতার মোড়কে,...সেটাই বড় প্রাপ্তি।