ব্যবসা - বাণিজ্যে
সলোমন রোজেনবাউম ছিলেন আমাদের গোল্ডার্স গ্রিনের বাড়ির উলটো দিকের প্রতিবেশী। আদি বাড়ি ট্রানসিলভানিয়ার ক্লুজ নাপোকা (বর্তমানে রোমানিয়া, এক কালে হাঙ্গেরিয়ান কলসভার/ জার্মানে ক্লাউসেনবুরগ)। পক্ব কেশ, প্রসন্ন মুখ, হাসিটি বাঁধানো। ইহুদি পাড়ায় আমরা একেবারেই বাইরের লোক, অচেনা চিড়িয়া। একদিন দরোজায় বেল বাজিয়ে এসে নিজের পরিচয় দিলেন। লন্ডনে সেটা ক্বচিৎ ঘটে (অনেক পরে সারেতে যখন আসি, পাঁচ জন প্রতিবেশী উপহার সহ দেখা করে স্বাগত জানান)। তাঁর নিজের ব্যবসা ছিল। জমি, বাড়ি বন্ধকের ব্যাপারে উপদেশ দিতেন, নানান স্থানীয় ব্যাঙ্কের সঙ্গে রীতিমতো ভালো চেনা জানা। নিজে ব্যাঙ্কে কাজ করি। তাই আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তুর অভাব হত না। একদিন সকালে অফিস যাচ্ছি। সলোমন রোজেনবাউম বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন (বাড়ির ভেতরে ধূমপান মানা!)। একটু হেসে বললেন, “এ পাড়ায় আপনিই একমাত্তর মানুষ যিনি অপরের দফতরে কর্ম করতে যান! আমরা নিজের নিজের দোকান খুলি’’!
কথাটা পরিহাসের ছলে বলা কিন্তু এর ভেতরে একটি গভীর সত্য নিহিত! ইউরোপের হাজার বছরের ইতিহাসে ইহুদি হবার অপরাধে সরকারি বা অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্ম গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল বহুকাল। সে কারণেই ওকালতি, ডাক্তারি জাতীয় বিবিধ স্বাধীন পেশা এবং আপন ব্যবসাতে ইহুদির ভূমিকা বহু বছরে সুপ্রতিষ্ঠিত। মহাজনি কারবারের জন্য তাঁরা বিশেষ দুর্নাম কুড়িয়েছেন, শেক্সপিয়ারের শাইলক যার এক প্রতীক। এক দরোজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে অন্য দ্বারে করাঘাত করেছেন। আপন বুদ্ধি ও কর্ম বলে সফল হয়েছেন।
সিটি ব্যাংকে আমার কর্মকাণ্ড তখন বৃহৎ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত। সলোমনের খরিদ্দার আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষ যারা বাড়ির জন্য ঋণ খোঁজেন। তবু গল্পস্বল্প হতো বহির্বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ে। ঠাট্টা করে সলোমন আমাকে বলতেন আপনি মস্কো মিউনিক ঘোরেন, আর আমার দৌড় ম্যানচেস্টার অবধি! একদিন বললাম তার সঙ্গে মেক্সিকো যোগ করতে পারেন!
সময়টা ১৯৯৫। মেক্সিকান অর্থনীতি এবং তাদের মুদ্রা পেসোর ঘোর সঙ্কট চলছে। আমরা আমেরিকান কোকা কোলা প্রতিষ্ঠানের মেক্সিকো শাখার জন্য অর্থ সংগ্রহের অভিযানে লেগে পড়েছি। আটলান্টা জর্জিয়ার কোকা কোলা কোম্পানি স্বনামধন্য। তাঁদের প্রস্তুত পানীয় আপনাদের হাতে হাতে ফেরে। সে প্রতিষ্ঠানের জন্যে টাকা তোলা একেবারে বালখিল্য সুলভ সহজ ব্যাপার। দুনিয়ার ব্যাঙ্কের লাইন পড়ে যায়, ধার দিতে।
কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা কোকা কোলা মেক্সিকোর জন্য বাজারে নেমেছি – সে টাকা শোধ না হলে আটলান্টার এক নম্বর কোকা কোলা প্লাজার সেই বহুতল হেড অফিসের দরোজায় কড়া নাড়া যাবে না। আমাদের ঝুঁকি তাঁদের ব্যবসা মেক্সিকোয় সীমাবদ্ধ। কোকা কোলার নাম শুনিয়ে, সুদের হার বাড়িয়ে আপামর জনতাকে প্রলুদ্ধ করার ঘোর চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু ভবি কেউ ভুলছে না। মেক্সিকোর নাম শুনলেই আলোচনার টেবিল থেকে কফির কাপ সরিয়ে নিচ্ছে। একদিন ভাবলাম সলোমনকে না হয় ধরি। শনিবারে দেখলাম সিনাগগ থেকে ফিরছেন। কিন্তু খেয়াল হলো সাবাথের দিন। টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলবেন না। জানালাম কাল দেখা করবো।
সাক্ষাতে বললাম আপনি তো নানা রকম নিবেশকারীদের চেনেন। দেখুন না কোকা কোলা কোম্পানির জন্য স্বল্প মেয়াদের ঋণ সংগ্রহ করা যায় কিনা। পুরো বিষয়টার বর্ণনা দিলাম – এক বছরের মেয়াদি ঋণ নেবে কোকা কোলা মেক্সিকো, আমেরিকান ডলারে। প্রতি তিন মাসে সুদ দেবে আর আসল ফেরৎ দেবে ৩৬০ দিন বাদে। সুদের হার (এইখানে নাটকীয় বিরতি দিয়ে) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বা লাইবরের ওপর পাঁচ শতাংশ। শেষ করলাম এই বলে, ভাবুন কোকা কোলার মতো ঋণ গ্রহীতা এক বছরের জন্যে দিচ্ছে শতকরা পাঁচ শতাংশ সুদ!
এই রকম অসাধারণ আকর্ষণীয় প্রস্তাব শুনে সলোমনের মুখ গম্ভীর হল। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “এমন উঁচু হারে তারাই সুদ দিতে রাজি হবে যাদের কোন সমস্যা আছে। কোকা কোলা আটলান্টা ডলারে ধারের ওপরে এক শতাংশ সুদ দেবে না। এখানে যে এত বেশি দিচ্ছে তার একটা কারণ আছে। সমস্যার নাম কি মেক্সিকো?’’
সলোমনের একটি বাণী মনে রেখে দিয়েছি – যেখানেই উচ্চ সুদের হার আর লাভের আলেয়ার হাতছানি, সেখানেই লুকিয়ে আছে আশঙ্কা। সেটির অনুসন্ধান করো!
বিশ্বের বাণিজ্যে শুধু লক্ষ্মী নয়, ইহুদিও বাস করেন। তাই ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কিত ইহুদি রসিকতার ভাঁড়ার বিশাল। তার অতি সামান্য কিছু গল্প আজ।
**********
গোল্ডবেরগ অত্যন্ত ধর্মনিষ্ঠ। শুক্রবার বিকেলে সিনাগগে যাবার আগে তাঁর ম্যানেজারকে বলে গেলেন তিনি উপাসনায় যাচ্ছেন। এই সময়ে তাঁকে যেন কোন মতেই বিঘ্নিত করা না হয়। ম্যানেজার কাজের সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার বাজারের গতি বিধির ওপরে লক্ষ রাখছিলেন। তিনি জানেন গোল্ডবেরগ স্কোডা শেয়ার বিক্রির মতলবে আছেন। টেলিফোনে জানলেন ইতিমধ্যে স্কোডা শেয়ারের দাম ৩০০ ক্রোনারে উঠেছে। পাঁচ মিনিট বাদে দাম ৩৩০ পৌঁছুল। আবার ফোন বাজল – স্কোডা শেয়ারের দাম ৩৫০ ক্রোনার। ম্যানেজার আর থাকতে পারলেন না। গোল্ডবেরগের কানে সে খবরটা পৌঁছে দিতেই হবে। মালিকের উপকার সাধন। কোট চাপিয়ে দৌড়ুলেন সিনাগগে। গোল্ডবেরগের পাশে বসলেন।
ম্যানেজার (ফিসফিস করে) : সার, ক্ষমা করবেন। না এসে পারলাম না। স্কোডা শেয়ারের দর ৩৫০ ক্রোনারে উঠে গেছে ।
গোল্ডবেরগ (প্রায় নিঃশব্দে) : বৎস, তুমি তিনটে ভুল করলে। সিনাগগে এসে তুমি আমার ধ্যান ভঙ্গ করলে, এখানে সমবেত নিষ্ঠাবান ইহুদিদের ধ্যান ভঙ্গ করালে। আর শোনো, স্কোডার শেয়ার দরটাও ভুল বললে। এখন ৩৮৫ ক্রোনার চলছে।
**********
ইওসেফ লেভি তার ছেলে সলিকে ব্যবসায় ট্রেনিং দিচ্ছে। সলি এবার থেকে দোকানে বসবে বাবার সঙ্গে। আজকের ট্রেনিং নৈতিকতার।
ইওসেফ : ব্যক্তিগত জীবনে আর ব্যবসায় দু জায়গাতেই নীতি মেনে চলতে হয়। কোনটা সঠিক আর কোনটা অন্যায় এই জ্ঞান থাকা দরকার। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। মনে করো একজন খদ্দের এসে এক পাউন্ডের কিছু কিনল। সে দিলো আমাকে একটা ২০ পাউন্ডের নোট। আমি ধীরেসুস্থে গুনে তাকে ন পাউন্ড দিলাম। খদ্দের ভাবলো সে হয়তো আমাকে দশ পাউন্ডের নোট দিয়েছিলো। বাকি টাকার অপেক্ষা না করে সে দোকান থেকে চলে গেলো। এখানে কোন নৈতিক প্রশ্ন ওঠে?
সলি :তখুনি দৌড়ে গিয়ে সেই খদ্দেরকে বাকি দশ পাউন্ড দেয়া?
ইওসেফ : না। এখানে নৈতিক প্রশ্ন হলো আমি আমার বিজনেস পার্টনারকে এ কথা জানাবো কিনা?
**********
লুইস কোহেন মারা গেছেন। ইন্টারনেট আসেনি তখনও। স্ত্রী ভ্যালি কোহেন গোল্ডার্স গ্রিনের জুইশ ক্রনিকলে ফোন করেছেন। বিজ্ঞাপন দেবেন।
রিসেপশনিসট : খুব দুঃখের কথা মিসেস ব্লুম। আমরা আপনার দীর্ঘ জীবন কামনা করি। আপনি কিভাবে বিজ্ঞাপনটা দিতে চান?
ভালি ব্লুম : মানে?
রিসেপশনিসট : বিজ্ঞাপনে কি লেখা হবে?
ভালি ব্লুম : লুইস কোহেন মারা গেছেন।
রিসেপশনিসট : আর কিছু জানাতে চান? দিন, তারিখ, কোনো ব্যক্তিগত শোক সন্তাপ বাণী?
ভালি ব্লুম : না।
রিসেপশনিসট : আমাদের মিনিমাম বিজ্ঞাপন সাত শব্দের, তার খরচা দশ পাউন্ড। আপনি আরও তিনটে শব্দ যোগ করতে পারেন।
ভালি ব্লুম : তাহলে জুড়ে দিন ‘ভোলভো বিক্রি হবে’।
**********
মৃত্যু শয্যায় ইয়েহুদা (হিব্রুতে ইজরায়েলের মানুষের নাম ইয়েহুদি – বাংলায় আমরা সেই শব্দটি সঠিক গ্রহণ করেছি, অ্যাংলো স্যাক্সনদের মুখের ঝাল না খেয়ে)। চোখ বন্ধ। তবে কথা বলতে পারছেন এবং শ্রবণ শক্তি পরিষ্কার।
- সারা তুমি কোথায়?
- এই যে তোমার পাশে।
- আর ছেলেরা? ডেভিড? বেন? নাথান?
- আমরা সবাই এখানে আছি, বাবা।
ইয়েহুদা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
তাহলে আমার দোকানটা দেখছে কে?
**********
পোলিশ লিথুয়ানিয়ান ইহুদি প্রবচন :
কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকলে অর্থ উপার্জনের সময় পাওয়া যায় না।
**********
ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের ফোন
ব্যাঙ্ক ম্যানেজার : মিস্টার কোহেন, আপনার একাউন্টে সাতশ ডলার ওভার ড্রাফট হয়ে গেছে দেখছি! সেটা কি জানেন?
কোহেন : গত মাসে ব্যাল্যান্স কি ছিল ?
ব্যাঙ্ক ম্যানেজার : আড়াইশ ডলার ক্রেডিট।
কোহেন : তখন কি আমি আপনাকে ফোন করেছিলাম?
**********
ইহুদি সান্টা ক্লস চিমনি দিয়ে নেমে এলেন।
শিশুরা, তোমরা কে কি কিনতে চাও!!
**********
রোজেনহাইন সুটের অর্ডার দিয়েছে। মাপ নেওয়া শেষ হলে দরজি নাথানসন তাকে এক সপ্তাহ বাদে আসতে বলল। তারপরের সপ্তাহে আবার। এমনি করে পাঁচ সপ্তাহ কাটল। রোজেনহাইন আসে, নাথানসন তাকে সুট পরায়, চক দিয়ে আঁকিবুকি কাটে আবার পরের সপ্তাহে আসতে বলে। মাস দেড়েক বাদে শেষ অবধি সুট হাতে পেয়েও রোজেনহাইন রীতিমত তিক্ত।
রোজেনহাইন : স্বয়ং ঈশ্বর ছ দিনে পৃথিবী তৈরি করেছিলেন। আপনার সাত সপ্তাহ লাগলো একটা সুট বানাতে?
নাথানসন (সুটে হাত বুলিয়ে) : সার, আপনার সুটটা একবার দেখুন আর পৃথিবীর হালটা দেখুন!
**********
পথে।
ব্লখ : খুব খারাপ অবস্থা। ধার দেনায় ডুবে আছি।
নাখটব্লাউ : বিয়ে করো। যৌতুকের টাকায় ধার শোধ হবে।
ব্লখ : না। আমার পাওনাদারদের টাকার দরকার পড়লে তারা বিয়ে করুক।
********
আবেনডরোট : পাঁচশো গিলডার ধার পাওয়া যাবে?
ক্লাইনগেলড : কার থেকে?
**********
ক্লাদেন (আজকের ক্লাদনো, চেক)
ব্যারন প্রাখনিতস : হের গোল্ডবেরগ, আপনার ছেলে মেয়ের সঙ্গে দেখা হল আজ। আহা তারা একেবারে হিরের টুকরো। তেমনি মহিমময়ী আপনার স্ত্রী….
গোল্ডবেরগ : সংক্ষেপে বলুন, কতো ক্রোনার আর কতদিনের জন্য ?
*********
ব্যবসায়িক প্রবচন
বিয়ের সময় স্ত্রী স্বামীর পদবী গ্রহণ করে।
ব্যবসা লাটে উঠলে স্বামী স্ত্রীর পদবী গ্রহণ করে ।
**********
ভিলনো
কাউনার এবং ইওসেল রাস্তায় ।
কাউনার : কুপফারস্টিলের সঙ্গে যেন রাস্তায় দেখা না হয়। দিন খারাপ যাবে।
ইওসেল : কেন?
কাউনার : এক বছর আগে ঠিক এইখানেই দেখা। আমি বারোশো রুবেল ধার চেয়েছিলাম।
ইওসেল : কিপটেটা দেয় নি?
কাউনার : না, দিয়েছিল।
*********
ইতঝাক নিজেকে দেউলে ঘোষণা করেছে। তবে তার কাছে যার যা পাওনা আছে তার চার ভাগের একভাগ সে ফেরত দেবে। প্রতি রুবেলে ২৫ কোপেক। ইলান অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে কথা বলতে এসেছে।
ইলান - আমার সঙ্গে এমন করলে? আমি না তোমার দীর্ঘদিনের বন্ধু?
ইতঝাক - তোমার কোন ক্ষতি হবে না ইলান। যে মাল আমি তোমার কাছ থেকে নিয়েছিলাম সে সব তেমনি পড়ে আছে। আমি তার প্যাকিং অবধি খুলিনি। সব ফেরত পাবে অক্ষত অবস্থায়।
ইলান - আমার মাল আমাকেই ফেরত দেবে? মানে আমাকে আবার খদ্দের ধরতে হবে ? কেন আমার ক্ষতি করছ? মালের দামের ওপরে পঁচিশ পারসেন্ট যোগ করে দাও।
*********
অঙ্কের ক্লাস।
শিক্ষক : লিও, মনে করো তোমার বাবার কাছে আমি একশ ক্রোনার ধার করেছিলাম। তিন মাস বাদে সতেরো ক্রোনার ফেরত দিয়েছি। পুরোটা শোধ করতে হলে আর কত দিতে হবে?
লিও : একশ ক্রোনার।
শিক্ষক : তুমি একটি গর্দভ ইহুদি পুত্র। অঙ্কটা জানো না।
লিও : আমি অঙ্ক জানি স্যার। আপনি আমার বাবাকে জানেন না।
**********
রাস্তায় দু জনের দেখা।
গ্রুন :ব্যবসা কেমন চলছে ?
কোন : আর বোলো না ।
গ্রুন :ঠিক তাই। বছরের এ সময়টায় এমনি যায়।
**********
মৃত্যু শয্যায় নাথান । ছেলে আমশেল কাগজ কলম নিয়ে পাশে বসে বাবার শেষ উপদেশ ও আদেশ লিখে নিচ্ছে ।
নাথান : এবার কিছু লোকের নাম ঠিকানা জেনে রাখো। এদের কাছে আমাদের টাকা পাওনা আছে ।পাওনার
পরিমাণটা এদের নামের পাশে লেখো । আমি চোখ বুজলেই বেরিয়ে পড়বে সেই প্রাপ্য ঋণ উদ্ধার করতে।
আমশেল :বাবা, আর যারা আমাদের কাছে টাকা পায় তাদের নাম ঠিকানা আর পরিমাণ গুলো বলে দাও। সেটাও লিখে নিই।
নাথান :তার কোন প্রয়োজন নেই আমশেল। পাওনাদাররা নিজেরাই তোমার দোকানে এসে হাজির হবে ।
**********
ফাইগেনবাউমের বাড়িতে জলের কল সারানোর কাজ শেষ । মিস্ত্রি বিদেয় হবে।
ফাইগেনবাউম : তাহলে কত দিতে হবে?
কলমিস্ত্রি নাফতালি : আমাকে দু গিলডার দেবেন।তবে আর কার কাছে আপনার কত ধার, কাকে কত দিতে হবে
তা আমি জানি না ।
**********
নিউ ইয়র্ক। ৪২ নম্বর পথ।
আইরিশ ক্যাথলিক পাদ্রি হেঁটে যেতে যেতে দেখলেন একটা দোকানের সাইন বোর্ডে লেখা আছে - গোল্ডবেরগ এবং ও’ রিগান কোম্পানি । ও’রিগান একেবারে অকাট্য আইরিশ নাম। পাদ্রী খুব খুশি হয়ে দোকানে ঢুকলেন । সামনেই বসে আছেন এক দাড়িওলা বয়স্ক ইহুদি ।
পাদ্রি : আমার দেখে খুব ভাল লাগছে আপনারা আমাদের ক্যাথলিক আইরিশ ভাইয়েদের সঙ্গে ব্যবসা করছেন । এ বড়ো
আনন্দের ও আশ্চর্যের কথা ।
মালিক : আপনি আরও আশ্চর্য হবেন শুনলে যে আমার পদবী ও’ রিগান ।
**********
বিঙ্গেন , রাইন
রাইন উপত্যকার খ্যাতনামা মদ্য ব্যবসায়ী সাউয়ারতাইগ মৃত্যু শয্যায়। ছেলেরা বসে আছে তাঁকে ঘিরে। নানান সাংসারিক বাণিজ্যিক বিষয়ে শেষ উপদেশ দিচ্ছেন বৃদ্ধ পিতা। জানলা বাইরে রাইন নদী বয়ে যাচ্ছে । দূরে আঙ্গুরের খেত ।সেদিকে চেয়ে সাউয়ারতাইগ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ছেলেদের বললেন
আরেকটা রহস্যের সূত্র তোমাদের সামনে আজ উন্মোচন করি বাবা সকল। আঙ্গুর থেকেও মদ বানানো যায় ।
**********
ইহুদি বিদ্বেষ এড়াতে দুজন মিলে দোকানের নাম দিলেন ও’নীল এবং ও’নীল
দোকানে টেলিফোন :আমি মিস্টার ও’নীলের সঙ্গে কথা বলতে চাই ।
উত্তর :কোন ও’নীল ? নাফতালি ও’নীল না মরডেকাই ও’নীল ?
পুঃ নাফতালি আর মরডেকাই আদি অকৃত্রিম ইহুদি নাম ।
**********
ফিফথ অ্যাভেনিউ, নিউ ইয়র্ক
দারুণ ঝক ঝকে অক্ষরে লেখা সাইনবোর্ড - গোল্ডবেরগ কোম্পানিঃ মহার্ঘ্য চুরুট বিক্রেতা
উত্তেজিত ক্রেতার প্রবেশ।
ক্রেতা :আপনার দোকানের সবচেয়ে ভালো চুরুট কিনে নিয়ে গেলাম এত দাম দিয়ে। সেটা মুখে দেয়া যায় না । এত খারাপ মনে হয় যেন সস্তার সিগারেটে ধোঁয়া দিচ্ছি।
গোল্ডবেরগ নিশ্চুপ ।
ক্রেতা (ক্ষিপ্ত ) ::চুপ করে আছেন কেন ? কিছু বলুন ?
গোল্ডবেরগ (উদাস হয়ে ) :আপনাকে আমি আর কি বলব ? আপনি তো ঐ এক বাকসো চুরুট কিনে পস্তাচ্ছেন । আমার সারা দোকান যে ভরা আছে ঐ চুরুটে !
**********
ফাইনস্টাইন :রাবি, এভি গিনসবেরগের খুব বিপদ।৫০০ কোপেক ধার আছে বাজারে।আগামী কাল অবদি শোধ
দিতে না পারলে তার জিনিস পত্র নিলামে উঠবে । এভির শরীর ভালো নয় যে কাজ করে সে টাকা
শোধ দেবে।
রাবি :খুব দুঃখের কথা। আমি দেখি যদি সিনাগগের ফান্ড থেকে কিছু টাকা তোলা যায় । আরও দু চারজনকে
অনুরোধ করি। কিছু সজ্জন হয়তো সাহায্য করবেন ।তুমি তো বড় ভাল মানুষ । এভি তোমার আত্মীয় হয় বুঝি ?
ফাইনস্টাইন :না, আমি এভির কাছে টাকাটা পাই।
**********
গোল্ডবেরগ ফোন করছে গিনসবেরগকে
গোল্ডবেরগ :সিগি ( সিগমুণ্ড ) আমার কাছে এক হাজার রুবেল ধার চাইছে । দেব?
গিনসবেরগ:নিশ্চয় দেবে।
গোল্ডবেরগ :বিশ্বাস করা যায় তাকে ? সিগি শোধ দেবে তো ?
গিনসবেরগ:দিয়ে দাও। নাহলে আমার কাছে এসে ধার চাইবে।
**********
ইলান নুন কিনতে গেছে সিলবারমানের দোকানে।
ইলান :নুন আছে আপনার দোকানে ?
সিলবারমান : অবশ্যই আছে। কি ধরনের নুন চান ?
ইলান : নুন আবার ক রকমের হয়? বউ বলেছে রান্নার জন্য চাই ।
সিলবারমান : কি বলেন! নুন যে কতো রকমের হয়! এই দেখুন নানান তাকে সাজিয়ে রেখেছি অন্তত দশ রকমের।
ইলান : এসেছিলাম রান্নার নুন কিনতে। তার যে এত প্রকার হয় জানতাম না। আপনি দেখছি নুনের
বিষয়ে অনেক কিছু জানেন।
সিলবারমান(তিক্ত ) : আমি জানতাম না । তবে জানে কিয়েভের এক তুখোড় সেলসম্যান পসেনার যে আমাকে এতোগুলো বস্তা
গছিয়ে দিয়ে গেছে । এখন না জেনে উপায় নেই।
*********
সলি ( সলোমন ) বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে ।
স্ত্রী বেকি :কি সমস্যা তোমার ?”
সলি :পাশের বাড়ির নাথান আমার কাছে ৫০০ কোপেক পায় । কাল আমার শোধ দেয়ার দিন । হাতে
টাকা নেই । কি করে দেব ভেবে ঘুম আসছে না ।
বেকি ( জানলা খুলে ) :নাথান , সলি তোমার টাকা কাল শোধ দিতে পারবে না ।
বেকি (জানলা বন্ধ করে) :সলি , এবার ঘুমোও ।নাথান জানে তুমি কাল তার টাকা শোধ দেবেনা। এটা এখন নাথানের সমস্যা ।
**********
পোস্ট অফিস। ওয়ারশর কাপড় বিক্রেতা গ্রুনকে টেলিগ্রাম পাঠাতে গেছে কোন । টেলিগ্রামে লিখেছে
“ প্রস্তাবে সম্মত । চিঠি পাঠাচ্ছি । শ্রদ্ধা সহকারে ।“
কাউনটারের মহিলা :আপনি ঐ শ্রদ্ধা সহকারে কথাটা বাদ দিন । সস্তা হবে ।
কোন ( খুশি হয়ে ) :ঠিক বলেছেন । শ্রদ্ধাটা বাদ দিই । আপনি গ্রুনকে চিনলেন কি করে ?
**********
গ্রুনবেরগ প্রতিষ্ঠানের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল। মালিক ডাকলেন তাঁর ডিরেক্টর ক্রোতোশিনারকে।
গ্রুনবেরগ : আমার ব্যবসায়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব পালনের আয়োজন করুন। এমন কিছু করুন যেটা সকলের চোখে
পড়ার মতন হয়, আমার কর্মচারীরা যেন খুশী হন আর এতে আমার কোন খরচা না হয় ।
ক্রোতোশিনার :হের গ্রুনবেরগ , আপনি আপনার অফিসের জানলা থেকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ুন। সকলের চোখে পড়বে , আপনার কর্মচারীরা খুশী হবে এবং আপনার কোন খরচাও হবে না ।
**********
রুবিন :আমার টাকাটা কবে শোধ দেবে ?
নাফতালি :কি করে বলব? আমি কি জ্যোতিষী ?
**********
নাফতালি :বড়ো টানাটানিতে আছি।
রুবিন :প্রার্থনা করো । ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন ।
নাফতালি :তাঁর সাহায্য করতে দেরি হবে মনে হচ্ছে । আপাতত পাঁচ গিলডার ধার দিতে পারো ?
**********
বিমা এজেন্ট দাভিদ তার পলিসির গুন ব্যাখ্যা করছে আইজাককে।
আইজাক , আপনি একটা দুর্ঘটনা বিমা করিয়ে ফেলুন। বিমার কতো সুবিধে জানেন ? এই ধরুন আপনার একটা হাত ভেঙ্গে গেলো, তৎক্ষণাৎ ৫০০০ রুবেল পাবেন , পা ভেঙ্গেছে জানালেই ১০,০০০ রুবেল হাতে হাতে। আর ধরুন যদি আপনার ঘাড়টাই ভেঙ্গে যায়, আপনাকে দেখে কে ? অনেক টাকা পেয়ে যাবেন এক ধাক্কায় !
**********
রাবির সামনে নাফতালি ও রুবিন
রুবিন :রাবি , নাফতালি পাঁচশ রুবেল ধার নিয়েছে ছ মাস আগে । এক কোপেক ফেরত দেয় নি ।
নাফতালি :বলেছি তো , এ মাসটায় দিতে পারব না ।
রুবিন :গত মাসেও তো তাই বলেছিলে ।
নাফতালি :কেন? কথা রাখি নি ?
**********
এক জন আবেনডশাইনকে ( আক্ষরিক অর্থে সন্ধ্যের আলো ) জিগ্যেস করলেন ব্যবসা কেমন চলছে ।
আবেনডশাইন :আমার তেমন কোন সমস্যা নেই । সমস্যা আমার পাওনাদারদের ।
**********
রোটশিল্ড পোল্যান্ড সফরে গেছেন । গ্রামের ভেতরে ঘোড়ার গাড়ি থামিয়ে একটি ছোট রেস্তরাঁয় গিয়ে ডিমের অমলেট অর্ডার করলেন। বিল পেলেন ২০ রুবেলের ।
রোটশিল্ড :২০ রুবেল ? একটা অমলেটের জন্যে ? আপনাদের গ্রামে ডিম কি দুর্লভ ? তাই এত দাম ?
মালিক :ডিম নয়। আমাদের গ্রামে রোটশিল্ড দুর্লভ। তাঁকে সচরাচর পাওয়া যায় না।
**********
কোভনোর ( কাউনাস, লিথুয়ানিয়া ) স্বর্ণকার বন্ধুকে জানাচ্ছে নাফতালি ।
জানো , রুবিন, আমার ব্যবসার অংশীদার অত্যন্ত নীতিবাগীশ মানুষ । কাল এক খদ্দেরকে পঞ্চাশ রুবেল ঠকিয়েছে আর তৎক্ষণাৎ তার অর্ধেক আমার হাতে তুলে দিয়েছে।
********
ইসিডোর নতুন সেলসম্যান রেখেছে ।
ইসিডোর :মনে রাখবেন আমার দোকানে যে বস্তু আছে আর খদ্দের যদি তাই চায় এবং কেনে তাতে লাভ কম। এতে
কোন কৃতিত্ব নেই। বাহাদুরি হল তাই যখন আপনি সেই বস্তু বেচতে পারবেন যা দোকানে নেই এবং যেটা খদ্দের কিনতেও ঢোকে নি । সেটাই আসল এলেম।
*********
রাস্তায় মুখোমুখি দুটো দোকান। একটায় ধুন্ধুমার সেল চলছে লোকে লোকারণ্য । ফিঙ্কেলস্টাইন বসে আছেন অন্যটায়। মাছি তাড়াচ্ছেন। সেখানে দু চার জন মাত্র কৌতূহলী খদ্দের । বন্ধু লেভি এলো দোকানে ।
লেভি :ফিঙ্কেলস্টাইন , উলটো দিকের দোকানে দেখে এলাম একই জিনিস বিক্রি করছে, তোমার চেয়ে এক রুবেল কম দামে।
তুমি দাম কমাও না কেন ? সব খদ্দের হারাচ্ছ ?
ফিঙ্কেলস্টাইন :শোনো লেভি , উলটো দিকের দোকানটাও আমার। আমার দোকানে এসে জিনিস পত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা
করে ভিড় দেখে খদ্দের যাচ্ছে রাস্তার ওপারে। একই জিনিসের দাম সেখানে এক রুবেল কম দেখে কিনছে । তাদের
টাকা তো আমারই ক্যাশ বাক্সয় আসবে।
আবার দু চারজন আমার কাছেও কিনছে , এক রুবেল বেশি দাম দিয়ে ! তারা ভাবে আমার দাম যখন
বেশি, মাল ভালো হবে। আসতে লাভ , যেতে লাভ ।
*********
লুবলিনের কর্ণফেলড মাল কিনবে । তার সাপ্লায়ারকে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছে ওয়ারশতে ।
কর্ণফেলড :এক হাজার পিস শার্ট পাঠাও
উত্তর :আমার আগের ডেলিভারির দাম মিটিয়ে দিলে পাঠাব ।
কর্ণফেলড :ততদিন অপেক্ষা করতে পারব না । আমার অর্ডার বাতিল করছি ।
**********
বেলতস ( ইউক্রেন ) শহরের বিখ্যাত বস্ত্র ব্যবসায়ী কপেলবেরগ এক লপ্তে এক হাজার বর্ষাতি কিনেছেন । মোটে বিক্রি হচ্ছে না দেখে তিনি কর্মচারী ময়শেকে পাঠালেন ইউক্রেনের গ্রামে গঞ্জে গিয়ে অর্ডার যোগাড় করতে ।
কপেলবেরগ :ময়শে , একটা বর্ষাতির দাম পনেরো রুবেল। যদি বড়ো অর্ডার পাও , বারো রুবেলে বিক্রি করো। কিন্তু তার নিচে কখনো নয় । আমি লোকসান করার জন্য ব্যবসা খুলি নি ।
দুদিন বাদে ময়শের টেলিগ্রাম :এগারো রুবেল দাম হলে একশো বর্ষাতির অর্ডার পেতে পারি ।
কপেলবেরগ :রাজি হয়ে যাও।
দু দিন বাদে আবার টেলিগ্রাম :একজন বলছে তিনশ বর্ষাতি নেবে। কিন্তু নয় রুবেলের বেশি দেবে না ।
কপেলবেরগের জবাব :রাজি হয়ে যাও।
চারদিন বাদে ময়শের টেলিগ্রাম: একজন তিনশ নেবে সাত রুবেল দরে ।
কপেলবেরগ :রাজি হয়ে যাও।
কয়েকদিন গেলো তাঁর আর কোনো খবর নেই । কপেলবেরগ জানেন ময়শে ইউক্রেন চষে বেড়াচ্ছেন । চরকির মতো ঘুরছেন
বর্ষাতির খদ্দেরের খোঁজে। হঠাৎ একদিন ঝুঝেলিয়ানি শহরের একটি হোটেল থেকে টেলিগ্রাম এলো। সেখানকার ম্যানেজার জানিয়েছেন
ময়শে ফাইনস্টাইন নামের এক ব্যক্তি ভীষণ অসুস্থ হয়ে সেই হোটেলে আছেন।কপেলবেরগ তৎক্ষণাৎ তাঁর বিশ্বস্ত কর্মচারীর তদারক করতে
ঝুঝেলিয়ানি গেলেন।
ময়শে বিছানায় শুয়ে আছেন ।
কপেলবেরগ :ময়শে , বল কেমন আছো? আমি কি করতে পারি তোমার জন্য ?
ময়শে (ক্ষীণ কণ্ঠে ) :আর কিছু নয় সার , শুধু একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে । আমাকে একবার বলবেন আপনি ঠিক কত
দামে ওই এক হাজার বর্ষাতি কিনেছিলেন ?
প্রত্যেকটি ঢমতকার। ইহুদীদের নিয়ে এতগুলো? খোদ মুজতবা এত জানতেন না। বোধহয় আপনার অনেকদিন ধরে মেশার ও কাছাকাছি থাকার ফল।
অশেষ ধন্যবাদ । আমার ভাঁড়ারের আহরণ সূত্র ত্রিবিধ: চার দশকের ইহুদি সঙ্গগুণ বা দোষ, অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে দুর্বার কৌতূহল এবং গোলডার্স গ্রিন লাইব্রেরীর ইহুদি অধ্যক্ষের নির্দেশে ( দ্বিতীয় পরবে যার কথা বলেছি ) ইদিশ অধ্যয়ন! আশা করি আগামী দ্বাদশ পর্বের জন্য আগ্রহ ধরে রাখতে পারব ।
বাপ্রে! এতো বিশাল রত্নভাণ্ডার।
হো হো করে হাসি পেল না ঠিকই, তবে মজারু সব ক’টাই।
আর প্রতিটি কৌতুকের নেপথ্যে আছে হাজার বছরের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই
বিপ্লব রহমান - আপনি আমার এই উদ্যমের নাড়িটি ধরে ফেলেছেন ভাই। তাবৎ ইহুদি রসিকতার পেছনে আছে সেই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সিগমুণ্ড ফ্রয়েড বলেছেন অক্ষমের একমাত্র অস্ত্র পরিহাস। অনেক ধন্যবাদ।
আচ্ছা, হীরেনবাবু, সাধারণ ইহুদীরা সাধারান প্যালেস্তানীয়দের নিয়ে কীরকম ধারণা পোষণ করেন, আর দুই রাষ্ট্রের আচরণ নিয়েও, সে নিয়ে আপনার বিস্তারিত লেখা পেলে ভাল লাগবে।
বুদ্ধিদীপ্ত পরিহাস সংলাপের অলংকার। অসাধারণ উপহারের জন্য ধন্যবাদ বারবার!
"ভোলভো বিক্রী হবে"টাই বেস্ট! :-))
ওই ভোলভো গাড়ি বিক্রির পেছনে আরেকটা গল্প নিহিত আছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে বহুদিন ইহুদিরা জার্মান গাড়ি কিনতেন না। কারণটা সহজেই অনুমেয় ( হলোকস্ট বা হিব্রুতে শোয়া)।তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গাড়ি ছিল ভোলভো। আটের দশকে উত্তর পশ্চিম লন্ডনের ( গোলডারর্স গ্রিন থেকে স্ট্যানমোর ) ইহুদিদের জীবন নিয়ে বি বি সি একটি সিরিজ বানায় তার নাম ছিল " ভোলভো সিটি "। কত যে গপ্প আছে !
ভীষণ ভালো কাজ করছেন হিরেন বাবু | একটি জাতির সংস্কৃতির সঙ্গে এবং তাদের রসিকতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমাদের এই covid সংক্রান্ত দিনগুলি আনন্দে ভরিয়ে তুলছেন |
কয়েকটি বিষয়ে আগ্রহ আছে |
1. এই কয়েকটি শব্দ আছে যেগুলির মানে এবং ইতিহাস জানার ইচ্ছে রইলো | এইগুলি হলো "Goyim", "Hasbara" এবং "Chutzpah" | এই গুলির ইতিহাস এবং এই সংক্ৰান্ত রসিকতা একটু জানাবেন ?
ভালো থাকবেন | আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম |
ধন্যবাদ। গয় হিব্রু শব্দ - জাতি। হিব্রুতে বহু বচন হয় ইম জুড়ে দিয়ে -গোয়িম। অ ইহুদিকে গয় বলা যায় । কিন্তু এটির মূল ব্যবহার খ্রিস্টীয় সম্প্রদায় বোঝাতে । যেমন খ্রিস্টান বালিকাকে বলা হয় শিকসা । হাসবারা কে প্রচার বা প্রোপাগান্ডা বলা উচিত অবশ্য এখানে বিতর্কের অবকাশ আছে । খুৎসপা এসেছে হিব্রু থেকে - দুর্বিনীত । আমার ভীষণ প্রিয় শব্দ - এর ব্যবহার ব্যাপক এবং বহুবিধ। নির্লজ্যতা , দুঃসাহস, অভদ্রতা আস্পর্ধা বাঁদরামো - এ নিয়ে গোটা অধ্যায় লেখা যায় । একটা উদাহরণ দিই : রেস্তোরাঁর টেবিলে বসে আছেন। আপনার পাশ দিয়ে একজন ওয়েটার যাচ্ছে। আপনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন - এখন কটা বাজে বলতে পারেন ? তার জবাব - আপনি আমার টেবিলে বসেন নি। অথবা মেয়ের মা উত্তেজিত হয়ে বলছেন , সে ছেলে আমার জামাই হতে চায় ! এ দুটোই খুতসপা । নিউ ইয়র্কে আকছার শুনবেন।
খুব ভালো লাগল। বেশ পরিচ্ছন্ন বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা। হো হো করে হাসার জন্য নয় কিন্তু উইটে ভরা।
লজ্জার মাথা খেয়ে একটা খালি জিগেস করছি, ওই আঙ্গুর থেকে মদ হয় টা ঠিক বোঝা গেল না।
আর বাংলা য় সঠিক বলা হয় ইহুদি এটাও ভীষন গুরুত্বপূর্ণ। বাংলায় অনেক নামের ই এন্ডোনেম টাই use হয়। যেমন মিশর, পারস্য। আগে প্যারিস কে বাংলায় পারি বলা হত। অ ননদা শঙ্কর রায়র লেখা তেও পাই পারি। সেতাাই তো সঠিক উচ্চারণ যদ্দুর জানি।
শ্রী রমিত চট্টোপাধ্যয় সাউয়ারটাইগ সারাজীবন নানান বস্তু দিয়ে মদ বানিয়েছেন ( আঙ্গুরের দাম বেশি)। ছেলেরাও তাই দেখে এসেছে ।মৃত্যু শয্যায় বৃদ্ধ পিতা সত্যি কথাটা জানালেন। জানলা দিয়ে আঙ্গুরের ক্ষেত দেখিয়ে বলতে চাইলেন মদ আঙ্গুর থেকেই হয় , হওয়া উচিত ! তাঁর কনফেশান।
হিব্রু , আরামাইকে ( যে ভাষায় যীশু কথা বলেছেন ) এবং পরে আরবিতে দেশের নাম মিসর-আক্ষরিক অর্থে সীমান্ত )।হিব্রু বাইবেলে সেই দেশ থেকে মোজেস ইহুদিদের মুক্ত করেছেন । গ্রিকদের দেওয়া ইজিপ্ট নামটা নয় মিশর নামটি আমরা গ্রহণ করেছি। পারস অঞ্চলের শক্তিশালী রাজাদের নাম থেকে পারস্য নামটি নিয়েছি। পরে অবশ্য ইংরেজের দৌরাত্ম্য বশত পারিকে প্যারিস , মুনশেন কে মিউনিক , হামবুর্গ কে হ্যামবার্গ , ব্রাউনশোয়াইগ কে ব্রান্সউইক বলতে শিখলাম। রোমা মিলানো নাপোলি তো বহু দূরের কথা
প্রিয় হীরেন বাবু ,
আমার প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য ধন্যবাদ | আরো কয়েকটি ইহুদি সংক্রান্ত নাম ও শব্দের বুৎপত্তি একটু বলে দিন |
1. বিল গেটস , অ্যালেন গ্রিন্সপ্যান , স্টিভ JOBBS , Karl Marx, ভ্লাদিমির লেনিন , Waren বুফে , Moimonides এই ইহুদি নামগুলির যদি বুৎপত্তি ও তদসংক্রান্ত জোকস দিয়ে দেন খুব মজার হবে |
2. Mesiah , পুরিম , Sephardi, Mizrahi এই শব্দগুলির বুৎপত্তি ও তদসংক্রান্ত জোকস দিলে বাধিত থাকবো |
3. ইন্টারনেট ঘেঁটে কিছু ইহুদি সংক্রান্ত জোকস পেয়েছি | আপনার মতো এতো উৎকৃষ্ট ও বিশুদ্ধ না হলেও আপনি ও এই লেখার পাঠকরা এই গুলি পড়ে আনন্দ পেলে খুবই বাধিত হবো |
প্রথম জোকস (এটি পড়ে মনে হয় খুব সম্ভবত এটি নাত্সি জার্মানি সমসাময়িক )
একজন মধ্যবয়স্ক ইহুদি ভদ্রলোক ও তার যুবক ছেলেটি একসঙ্গে বৈঠকখানায় বসে নানান কাগজ পত্র পত্রিকা পড়ছে | ছেলেটি একসময় লক্ষ্য করলো যে তার বাবা শুধুই নাৎসি দের দৈনিক মুখপত্র পড়ছেন এবং সে নিজে শুধুই খুবই প্রগতিশীল পত্রপত্রিকা পড়ে চলেছে | খুব অবাক হয়ে সে তার বাবাকে প্রশ্ন করলো যে "কি করে তুমি নাৎসি দের প্রচারপত্র পড়ছো ? ওটায় তো শুধু আমাদের ইহুদিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয় |" মধ্যবয়স্ক ইহুদি ভদ্রলোক একটু মুচকি হেসে বললেন "তোমার ওই সব প্রগতিশীল পত্রপত্রিকা খালি বলে চলে যে আমরা ইহুদিরা অত্যাচারিত , নিপীড়িত, সমাজের পদদলিত কিন্তু নাত্সি পত্রিকাগুলি বলে যে আমরা ইহুদিরা সর্ব শক্তিমান , সারা পৃথিবীটা বকলমে আমাদের টাকাতেই চলে , আমাদের অঙ্গুলিহেলনে সারা পৃথিবীর সরকার বদলে যায় | তা নিজেদের সম্বন্ধে যারা এই রকম প্রশংসা করে তাদের লেখাই তো পড়ব !"
দ্বিতীয় জোকস (এটি পড়ে মনে হয় খুব সম্ভবত এটি বর্তমান নিউ ইয়র্ক থেকে | আপনি এটার সম্বন্ধে আরো ভালো বলতে পারবেন যে সত্যি এটি নিউ ইয়র্ক এ চালু কিনা | )
নিউ ইয়র্ক এর একটি পাবে একজন প্রৌঢ় ইহুদি ব্যাংকার ও একজন তরুণ বয়স্ক ফিলিস্তিনি মদের টেবিলে পরিচিত হলো | কয়েক গেলাস পেটে পড়ার পড়ে দুজনের মধ্যে একটা কোনো ব্যাপারে বিতর্ক হলো এবং সেই বিতর্ক গড়ালো মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা পর্যন্ত | ইহুদি ভদ্রলোক তার ফিলিস্তিনি প্রতিদ্বন্দীর দিকে আঙ্গুল তুলে বলে বসলেন "তোরা সব ফালতু সেদিনের ছোকরা , জানিস আমরাই সবচেয়ে বেশি নোবেল পেয়েছি | তোরা কি করেছিস ?" ফিলিস্তিনি ছেলেটি ভাঙবে তবু মচকাবেনা "আপনারা তো সবে ২০০০ বছর ধরে রগড়ানি খেয়েছেন আমরা তো মাত্তর ৭৫ বছর ধরে রগড়ানি খাচ্ছি | একটু সময় তো দেবেন |"
4. আমার সংগৃহিত জোকস গুলি কেমন লাগলো একটু জানালে খুব ভালো লাগবে | ইহুদিদের রাজনীতি ও প্যালেস্টিনিয়ান দের নিয়ে কোনো জোকস লিখে পাঠালেও খুবই ভালো লাগবে |
আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম |
ধন্যবাদ @হীরেন সিংহ রায়
একটা রসিকতা আমারও ভাগ করে নিতে ইচ্ছে করছে -
এক ইহুদি মৃত্যুর পর স্বর্গে যেতে ভগবান প্রশ্ন করলেন তুমি কি কিছু বলতে চাও ?
ইহুদি বললে আমি একটি হলোকষ্ট এর ওপর জোকস বলতে চাই, বলে সে জোকস টি ভগবান কে শোনাল।
ভগবান শুনে বললেন আমার মোটেই হাসি পেলো না।
তাতে ইহুদি সহাস্যে বলল এটা বোঝার জন্য তো আপনাকে ওখানে থাকতে হত।
গুরু
১। আমি যতদূর জানি বিল গেটস এর পিতৃ পুরুষ ইহুদি নন। আলান গ্রিন্সপানের কথা আমি চতুর্থ পর্বে বলেছি । রোমানিয়ান মাতা / হাঙ্গেরিয়ান পিতা। আসল নাম গ্রুনস্পান ( সবুজ কুটো বা চিপস )। সেটিকে তিনি বদলে নিয়েছেন। স্টিভ জবসের বাবা সিরিয়ান মুসলিম। কার্ল মার্ক্স ধর্মান্তরিত ইহুদি। মার্ক্স নামটি বহুল প্রচলিত ইহুদি মরদেকাই থেকে এসেছে। ভ্লাদিমির ইলিয়িচ উলিয়ানভ বা লেনিন অর্থোডক্স ক্রিস্টিয়ান। ওয়ারেন বাফেট ইহুদি নন । মাইমনিদেশ ইহুদি দার্শনিক। পুরো নাম মোজেস বেন মাইমন ( মাইমনের ছেলে ) সেটি মায়মনিদেশে বদলে যায় কোন বিশেষ অর্থ নেই।
২। আমার প্রথম পর্বে সেফারদি মিজরাহি দের ব্যাখ্যা দিয়েছি। পুরিম একটি উৎসব (যেটি বাইবেলে উল্লেখিত নয় , যেমন হানুকা )। পারস্যে ইহুদিদের সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করেন এস্থার । এটি তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় । হিব্রুতে মাসিয়া গ্রীকে মেসিয়াস আরবিতে মাসিহা - মুক্তি দাতা বা ত্রাণ কর্তা ।সেভিয়ার।
৩। নাৎসি যুগ সম্পর্কিত জোকটি অসাধারণ। এটির আবার বিশাল রকমফের আছে। আমি শুধু নাৎসি সময়ে উদ্ভুত ওপরে একটি পর্ব লিখেছি। এবারে সেটি দেব
দ্বিতীয়টি আমার অচেনা। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে জোকস বদলাচ্ছে জানি। তবে এটি আমার পরিচিত পরিহাসের চেয়ে অনেক আলাদা।
৪। আমার সংগ্রহের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। ইহুদিদের রসিকতা নিয়ে লিখছি।
রমিত বাবু এটি আমার কাছে নতুন তবে যথার্থ ইহুদি রসিকতা। ফ্রয়েড লিখছেন ইহুদি রসিকতার মূল মন্ত্র হলো আত্ম নিগ্রহ। আপনার জোক তার সার্থক উদাহরণ। ধন্যবাদ।
একদম, তবে আত্ম নিগ্রহের সাথে সাথে ঈশ্বর এর প্রতি এটা তার অভিযোগও, যে আমাদের ওপর যখন অত্যাচার হচ্ছিল, আপনি সেখানে ছিলেন না।
যতই গভীরে এগোচ্ছে লেখাটা, ইহুদি রসিকতার আসল রূপ রস পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
নাৎসি নিয়ে পর্ব করবেন জেনে তবে আরেকটা নাৎসি জোকস শেয়ার করি ।
এক নিও নাৎসি এক পাবে ঢুকে দেখে অনেক লোক রয়েছে আর এক বৃদ্ধ ইহুদি বসে আছেন। সে বারটেন্ডার কে ডেকে বলল সবাই কে আমার তরফ থেকে এক রাউন্ড দাও, খালি ওই বুড়ো ইহুদি টাকে দেবে না। এই বলে সে বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখে বৃদ্ধ তার দিকে মুচকি হেসে মাথা নাড়ছে।
তাতে আরো চটে গিয়ে সে বারটেন্ডার কে বলল আবার ওই বুড়ো কে ছাড়া সবাইকে আরেক রাউন্ড পান করাও। টপ শেলফ এর মাল দেবে। আমার তরফ থেকে।
এবারও তাকিয়ে দেখে বৃদ্ধ ইহুদি মুচকি মুচকি হাসছে। দেখে রেগেমেগে বারটেন্ডার কে জিজ্ঞেস করল, এই বুড়োটাকি পাগল ? হাসছে কেন ?
বারটেন্ডার বিনীত ভাবে জানাল উনি স্যার এই পাবের মালিক।
ধন্যবাদ তপন।
রোমিত বাবু
আপনার ঈশ্বর ইহুদি সংবাদ একটি কঠোর সময়ের অপরূপ প্রতিবিম্ব।
প্রসঙ্গত যদি পারেন ইউ টিউবে Ein Lied von Liebe und Tod ( প্রেম ও মৃত্যুর এক গান ) দেখবেন। হাঙ্গেরিতে ইহুদি বধের সময়কার গল্প । কেন্দ্রীয় জার্মান চরিত্র এবং গান টি ( বেদনার রবিবার ) কল্পিত নয়। এই জার্মান চরিত্রটির( ওবারস্টুরমবানফুয়েরার বা লেফটেনান্ট কর্নেল ) সঙ্গে আমার বাণিজ্যিক কারণে যোগাযোগ হয় আটের দশকে। এ ছবিতে সেই সময়ের ইহুদি জোকসও পাবেন। গভীর বেদনার মাঝে অট্টহাসির মতো বাজে।
ইহুদি মালিকের পাবের গল্পটার গুজরাতি ভারশান চালু হয়ে গেছে ! হোয়াটসআপে!
ধন্যবাদ এর সন্ধান দেওয়ার জন্য। অবশ্যই দেখব।
প্রিয় হীরেন বাবু ,
অনেক ধন্যবাদ আমার প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য l আরো কয়েকটি ইহুদী নামের ব্যুৎপত্তি ও তাঁদের নিয়ে কোনো জোকস আছে কিনা একটু বলে দেবেন l.
১ . আব্রাহাম stern, জ্যাকব jabotinsky, রাবি meir. Kahane, judenrat, hasidim, haredim. এদের নিয়ে কোনো জোকস থাকলে দেবেন প্লিজ l
২ . আপনি যেহেতু নাত্সি জোকস দেবেন এবারের পর্বে খুব উৎসাহের সঙ্গে অপেক্ষা করবো l আমি অন্তর্জাল ঘেঁটে কয়েকটি নাত্সি জোকস পেয়েছি আপনি শুনে বলবেন কেমন লাগলো l
জোকস ১ : বিরখানাও কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে কিছু মহিলা ইহুদী বন্দীদেরকে নিয়ে আসার পরেই তাদের অপমানজনক ভাবে সমস্ত চুল কেটে ফেলা হলো l সবকটি মেয়েই দেখতে শুনতে বেশ ভালো , তারা এইরকম হৃদয়হীন নির্দয় ব্যবহারে প্রবলভাবে কাঁদতে লাগলো l একটি মেয়ে , রাচেল কিন্তু কান্নার বদলে অট্টহাস্যে ফেটে পড়লো l সবাই জিজ্ঞেস করলে সে বললো , " আজকে আমার জন্মদিনে আমি ফ্রী haircut পেলাম তাও আমাদের পরম শত্রুদের থেকে , এর থেকে ভালো জন্মদিনের উপহার আর কি হতে পারে ? "
জোকস ২ : (এটি পড়ে মনে হয় এটি পোল্যান্ড থেকে ১৯৩৯ এর পরে ) একজন ইহুদী রাত্রে ঘুমের মধ্যে বারবার হাসতে হাসতে আনন্দসূচক শব্দ করতে লাগলো l তার বৌ তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ফেলে কারণ জিজ্ঞাসা করলো l ইহুদী ভদ্রলোকঃ " আরে আমি স্বপ্ন দেখলাম আমাদের পাড়ায় সব দেওয়ালের গায়ে গায়ে পোস্টার পড়েছে , যে প্রভু যীশুর খুনী ইহুদীরা সব নিপাত যাক , নিপাত যাক , তাই তো হাসছি l" ইহুদী ভদ্রলোকের স্ত্রীঃ " এই ভয়ঙ্কর কথাতে তুমি হাসছ কি কোরে ? " ভদ্রলোক : " আরে এর মানে হোল জার্মানরা আমাদের দেশ ছেড়ে চলে গেছে , আবার পোলিশ গভর্নমেন্ট ফিরে এসেছে তাই সব আগের মতো হয় গেছে ! "
জোকস ৩ : (এটি পড়ে মনে হয় জার্মানি থেকে ) একজন বৃদ্ধ ইহুদী সৈনিক যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর হয়ে লড়ে কাইজার এর থেকে বিশেষ সম্মানের পদক পেয়েছেন , মৃত্যুশয্যায় খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করবার সিদ্ধান্ত নিলেন l তার লোকাল parish এর পাদ্রী মহাখুসি হয়ে তার কাছে এলেন l পাদ্রীঃ " আমি ভীষণ খুসি কার্ল যে অন্ততঃ শেষ সময়ে তুমি অন্ধকারের থেকে আলোয় আসার পথ বেছে নিয়েছ l " কার্ল :(গম্ভীরভাবে ) " আচ্ছা সে তো হল কিন্তু আমার একটি শেষ ইচ্ছা যে আছে ফাদার l " পাদ্রীঃ " বলোনা কি তোমার শেষ ইচ্ছা ? " কার্ল : " মৃত্যুর সময় আমার বিছানার ডানদিকে যেন হিটলার আর বামদিকে যেন হিমলারের একটা করে ছবি থাকে l " পাদ্রীঃ " হঠাৎ এই রকম কেন ইচ্ছা ? " কার্ল : " আসলে যীশুর মতো আমিও মৃত্যুর আগে দুই পাশে যেন দুটি খুনীকে নিয়েই শান্তিতে মরতে পারি l"
এই জোকসগুলো কেমন লাগলো জানালে খুব খুশি হব l আপনার ভবিষ্যতের পর্বগুলির জন্য অপেক্ষা করে রইলাম l
দেবাঞ্জন বাবু
১) Stern জার্মান শব্দ ( অর্থ তারা )। আমি নামাবলি পর্বে বলেছি অর্থবান ইহুদি ভালো নাম পেয়েছেন। যেমন রুবিন ( রুবি – যেমন রবার্ট রুবিন, আমেরিকান সরকারের ট্রেজারি সেক্রেটারি), রুবিনস্টাইন ( হেলেনা রুবিনস্টাইন কসমেটিকস), গোল্ডমান ( গোল্ডম্যান সাখস )। আইসাক ষ্টেরন বিখ্যাত বেহালা বাদক। এই নাম নিয়ে কোন রসিকতার স্থান নেই। আপনি কি কোন আব্রাহাম ষ্টেরনের কথা তুলছেন ? আবিষ্কারক না লেহী গ্রুপের যোদ্ধা ? দ্বিতীয় জনের সমর্থকরা ষ্টেরন গ্যাং নামে সুপরিচিত । দু জনই পোলিশ ইহুদি। জাবোতিন্সকি নামের পেছনে কোন গল্প নেই জি’ভ জাবোতিন্সকির অবদান আছে নতুন ইজরায়েল প্রতিষ্ঠায় -তিনি ব্রিটিশ সরকার দ্বারা সম্মানিত হন- MBE)। অ জার্মান পদবির আক্ষরিক অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। ট্রান্সিলভানিয়ার বাইরে রোমানিয়ান ইহুদিদের নাম দেখে চেনা মুশকিল। ইতালি বা ফ্রান্সেও তাই । নামাবলিতে ( চতুর্থ পর্ব ) লিখেছি ইউক্রেনের গোলডা মাইয়ারসন গোলডা মেইর হলেন। রাবি মেইর তাই । কাহানে কোহেনের আরেক রূপ । রাশিয়াতে এটা কাগান হয়ে যায় , সে ভাষায় এইচ নেই বলে (চতুর্থ পর্ব পশ্য )।
পরের শব্দ গুলো নিয়ে জোকস আছে বলে জানি না । এগুলি সবই কোন না কোন কিছুর দ্যোতক । ইউডেনরাট ( ইহুদি কাউন্সিল যেমন ইংল্যান্ডে আছে ব্রিটিশ বোর্ড অফ জুস )। ১৮ শতকে ইজরায়েল বেন এলিজার হাসিদিসম প্রতিষ্ঠা করেন , এটি অর্থোডক্স ইহুদি ধর্মের কাছা কাছি । আজকের ব্রুকলিনে বহু হাসিদিক ইহুদি দেখবেন। ইম দিয়ে বহু বচন হয় তাই এই গোষ্ঠীর নাম হাসিদিম। হারেদি ইহুদিরা আরেকটু বেশি অর্থোডক্স ! জেরুসালেমে খুব পাবেন , তবে ব্রুকলিনে নয় । বহু বচনে হারেদিম । আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ইহুদি ধর্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখছি। আপনার উৎসাহ থাকলে পাঠাতে পারি।
আপনার নাৎসি জোকস সংগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
আমার পরিবেশিত রসিকতা থেকে ভিন্ন প্রকৃতির এর রসের আস্বাদ গ্রহণে নিজেকে ঠিক উপযুক্ত ভাবি না ।