শনিবারে সাবাথে
ঐন্দ্রিলা বললে মুশকিল। সেদিন সাবাথ। আমার কিছু বন্ধুর আসার অসুবিধে আছে যে।
আমার মেয়ে ঐন্দ্রিলার ত্রয়োদশ জন্মতিথি পড়েছিল এক শনিবারে। তাতে আমার এবং কিছু বন্ধুজনের সুবিধে। ছুটির দিন। কিন্তু ঘটনাস্থল গোলডারস গ্রিন, লন্ডনের উত্তর পশ্চিমে হ্যাম্পস্টেড থেকে স্ট্যানমোর পর্যন্ত বিস্তৃত ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম ইহুদি অধ্যুষিত জনপদ গুলির মধ্যমণি!
আমাদের প্রথম দুই সন্তান ঐন্দ্রিলা ও ইন্দ্রনীলের জন্ম গোলডারস গ্রিনে। হ্যাম্পস্টেড/ গোলডারস গ্রিনের স্কুলে পড়েছে। তাদের সত্তর শতাংশ বন্ধু বান্ধবী ইহুদি। পাঁচ বছরের মেয়ে ঐন্দ্রিলা একদিন বাড়ি এসে জানতে চেয়েছিল আমরা ইহুদি কিনা। তা নই শুনে ক্ষুণ্ণ হল। জানাল তার শিক্ষিকা বলে দিয়েছে স্কুল খোলা থাকলেও ইহুদি বালিকাদের পরের দিন স্কুলে আসার প্রয়োজন নেই। আগামী কাল ইওম কিপ্পুর (অনুশোচনার দিন)।
অনুশোচনার দিনটি ইহুদি ধর্মে সবচেয়ে পুণ্য তিথি। এর পরেই নববর্ষ (রশ হাসানা – ইহুদি ক্যালেন্ডার মতে এ বছর ৫৭৮১ চলছে)। ইতিহাসের ক্রম অনুযায়ী অবশ্য প্রথম পরব পাস ওভার বা পেসাখ (মিশর থেকে নির্গমন), শাভুথ (ঈশ্বরের কাছ থেকে তোরা পাবার দিন/ ফসল উৎসব) সুকোথ (ভ্রাম্যমাণ ইহুদিদের মরুভূমিতে তাঁবু বানিয়ে বসবাসের স্মৃতি), টিশা বাব (মন্দির ধ্বংসের দুঃখ ) - এগুলি হিব্রু বাইবেলে উল্লিখিত। এছাড়া দুটি উৎসব আছে যেগুলি বাইবেলে উল্লিখিত নয়। পুরিম ও হানুকা।
এস্থার নাম্নী এক ইহুদি রাজকন্যার বিয়ে হয় পারস্য রাজ পরিবারে। প্রধান মন্ত্রী হামান দেশের সকল ইহুদি নিধনের চক্রান্ত করেছিলেন। সেটি সময়মত জেনে এস্থার ও তাঁর কাকা মরডেকাই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ইহুদিদের প্রাণ রক্ষা করেন (বুক অফ এস্থার)। তার স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় পুরিম।
আলেকজান্দারের দেড়শ বছর পরে গ্রিক রাজা আনটিওখুস রাজা হলেন জুডিয়ার। তিনি ইহুদি ধর্ম এবং প্রথার প্রচণ্ড বিরোধী- ইহুদি মন্দির তছনছ করালেন। তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইহুদি ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন জুডা ম্যাককাবি। আট দিনের এই যুদ্ধকে সম্মানিত করে যে উৎসব তার নাম হানুকা।
বছরে অন্তত ১৮০ দিন স্কুল খোলা রাখার একটা সরকারি ফরমান আছে ইংল্যান্ডে। গরমের ছুটি, বড়দিন ও ইস্টারের দু তিন সপ্তাহ, মে দিবস নাগাদ এক সপ্তাহ, অক্টোবরে এক সপ্তাহ ইত্যাদি এক সঙ্গে জুড়লে কোন স্কুলের পক্ষে সেই নির্দেশ মেনে চলা এমনিতেই বেশ কঠিন। তার সঙ্গে অতগুলো ইহুদি ছুটি যোগ করলে ন্যূনতম ছ মাস স্কুল খোলা রাখা একেবারেই অসম্ভব। তাই ইহুদি প্রধান অঞ্চলে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরবের দিনগুলিতে ইহুদি বালক বালিকাদের অনুপস্থিতিকে ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখে থাকেন।
আপাতত ঐন্দ্রিলাকে বলতে হল এ শনিবার অনেকের যে সুবিধে! তোমার বন্ধুদের বলো হেঁটে আসতে! মনে আছে হ্যাম্পস্টেড গার্ডেন সাবার্ব থেকে রোজা ফ্রিডম্যান এসেছিল দু মাইল হেঁটে। শনিবারের সূর্য অস্তাচলে গেলে তাকে গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দিই। রোজা এখন উকিল। মানবিক অধিকার নিয়ে লড়াই করে খুব নাম করেছে।
শাবাত হিব্রু শব্দ। ইদিশে শাবেস বা শাবোস। বিশ্রাম। তবে তার মানে এই নয় যে আপনি শনিবারের দিন, আজ বিশ্রাম করছি বলে সংসারের সকল কাজকে উপেক্ষা করে বসার ঘরের টেবিলে পা তুলে দিয়ে টেলিভিশনে আই পি এল দেখতে দেখতে ফেসবুকে দুনিয়ার তাবৎ বন্ধুবর্গকে লাইক বা ডিস লাইক করবেন। সেটা শাবাতের অর্থে বিশ্রাম নয়। শাবাতের গভীরতর অর্থ কাজ থেকে বিরতি।
সাবাথের (আমি বহুল ব্যবহৃত সাবাথ শব্দটি ব্যবহারের পক্ষপাতী) সূত্র খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে চার হাজার বছর। মিশরের দাসত্ব থেকে ইহুদিদের মুক্ত করে তাদের প্রতিশ্রুত কানান দেশে নিয়ে যাবার পথে মোজেস চল্লিশ দিন সিনাই পর্বত শিখরে তপস্যা করে ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎকারটি সেরে গেলেন। ফলস্বরূপ পেলেন পাঁচটি গ্রন্থ (হিব্রু বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বই – সৃষ্টি থেকে ইহুদিদের প্রতিশ্রুত দেশে পৌঁছানর বৃত্তান্ত)। তার সঙ্গে পাথরের ট্যাবলেটে লেখা দশ আদেশ - টেন কমান্ডমেনটস ছবিতে চারলটন হেসটনকে যেটি দুহাতে তুলে ধরতে দেখেছেন। সেখানে ইহুদি জাতির প্রতি চতুর্থ আদেশটি ছিল : সাবাথের মর্যাদা দেবে। সে দিনটি রাখবে পবিত্র।
পৃথিবী তৈরী করার কঠিন কর্ম ঈশ্বর শেষ করলেন শুক্কুরবার বিকেলে। সূর্য তখন পাটে বসেছে। সন্ধ্যের বিলীয়মান সূর্য রশ্মির পানে চেয়ে ঈশ্বর বললেন : অনেক খাটাখাটনি হল বাপু। এবার একটা দিন জিরুই। তাঁর বিশ্রাম সম্পূর্ণ হবে পরের দিন, শনিবার সূর্য ডুবলে। শনিবার গোটা দিনটা প্রভুর বিরতির সময়। ঈশ্বরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইহুদিদের কর্ম বিরতি, শুক্রবার সন্ধ্যে থেকে শনিবারের সন্ধ্যেবেলা অবধি।
আব্রাহামপন্থী তিনটি ধর্ম ছদিনে বিশ্ব সৃষ্টি তত্ত্বে বিশ্বাসী। কিন্তু সপ্তাহের ঠিক কোন দিনে মনুষ্য জন কাজ থেকে বিরত হয়ে প্রভুর বন্দনা করবেন সে বিষয়ে এই তিন ধর্ম একমত হতে পারেনি। তাই জেরুসালেমের চারটে পাড়ায় তিনটে বিভিন্ন দিনে ছুটি – মুসলিম পাড়া শুক্রবার, ইহুদি পাড়া শনিবার এবং ক্রিস্টিয়ান ও আর্মেনিয়ান মহল্লা রবিবারে বন্ধ থাকে।
সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে শান্তিনিকেতনে বেস্পতিবার ছুটি!
সিনাই পর্বতে ঈশ্বর যে নিদানটি দিলেন সেটা জনতাকে জানিয়ে দিয়েই মোজেস তো খালাস। ঈশ্বর বললেন সাবাথের দিনে কাজ কম্ম বারন কিন্তু কোন কাজটা করলে বিশ্রামের ব্যত্যয় হবে তার হিসেব নিকেশ করতে বহু বছর কেটেছে।
ছ দিন খেটেখুটে প্রভু সৃষ্টি করলেন নদী মহাসাগর পাহাড় পর্বত আদম ইভ। বিশ্রামের দিনে এমন কিছু করা চলবে না যাকে সৃষ্টির সম্মান দেয়া যায়। আমরা অতি সাধারন আম জনতা। নদী পাহাড় সমুদ্দুর ছেড়ে দিন, একটা নালা খোঁড়াও সম্ভব নয় আমার দ্বারা। তাহলে প্রভুর কাজের সঙ্গে আমাদের কাজের তুলনা কি সাজে? তাঁর খাবার দাবার ভাবনা নেই। কাজে বা বাজারে যেতে হয় না। কোভিদের কারণে নিজের কারফিউ ঘোষণার কাজ তাঁর আপন হাতে। তাই শনিবার তিনি সিনাই পাহাড়ের ওপর পাথরের আরাম কেদারায় বসে বিশ্ব জগত অবলোকন করেন। জগত ও জীবন, আরব ইজরায়েলি সম্পর্ক, তেলের দাম, শেয়ার বাজারের ওঠা নামা, নতুন ভ্যাক্সিনের উপযোগিতা ইত্যাদি নিয়ে বিচার বিমর্ষ করেন একাকী। রবিবারে কোন নতুন কাজে হাত দেবেন তার ছক কষেন।
অনেক জ্ঞানী গুণী এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন বছরের পর বছর। মৌখিক ভাবে রক্ষিত তার সারাংশের নাম মিশনা। রাবিরা তাই নিয়ে যে বিচার বিমর্ষ করেন সেই লিখিত সঙ্কলনের নাম গেমারা। মিশনা আর গেমারা মিলিয়ে যে সার সত্য নিষ্কাশিত হল, খেজুরের পাতায় সেটি লিপিবদ্ধ হয়েছে তালমুদে। সেখানে কাজের প্রকৃত চরিত্র নির্ধারিত হয়েছে। সেই সব কাজ শনিবারের আসর থেকে নির্বাসিত।
জেফ্রি উইন আমার দীর্ঘ দিনের ব্যবসায়িক সাথী ও বন্ধু। শুস্তার সালিভান নামক আইনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান। থাকেন গোলডারস গ্রিনের অনতিদূরে, সাউথগেটে। তাঁর মেয়ে মেলিসার হেনডন (নিকটবর্তী আরেক ইহুদি প্রধান পাড়া) বাসের সময় আমি ছিলাম তার লোকাল গার্জেন। জেফ্রি বিশেষ যত্ন নিয়ে আমাকে সাবাথের নিয়ম কানুন বুঝিয়েছিলেন। একে ইহুদি তায় উকিল, জেফ্রির কথা মেনে নিতে আমার দ্বিধা হয় নি।
জেফ্রি বললেন কাজ হলো তাই, যার প্রত্যক্ষ ফল দৃষ্ট হয়। কার্যকারণ সম্পর্ক। সেটা ধরে ফেলতে পারলে কর্মকাণ্ডের নিষেধ বিধি গুলো সহজেই বোধগম্য হয় – হাল বা মেশিন চালানো, বোনা, কাপড় কাটা বা সেলাই করা, আগুন জ্বালানো বা নেভানো, হাতুড়ি পেটানো ইত্যাদি উনচল্লিশটি কাজ হিব্রু বাইবেলে নিষিদ্ধ। থিওরিটা বোঝাতে জেফ্রি আমাকে কতকগুলো উদাহরণ দিলেন – এই ধরো তুমি ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটছ। তার ফলে সেখানে একটি পথ রেখা তৈরি হচ্ছে। সেটি সৃষ্টি। মানে তুমি ঘাসের ওপরে পা দেয়ার আগে এই রেখাটি ছিল না। তুমি সেটা সৃষ্টি করলে। এটা বারণ। বালির ওপরে হাঁটলেও তাই। শনিবারে আপনি কুসুমে কুসুমে চরণ চিহ্ন দিয়ে যেতে পারেন না। নামটা যারই হোক না কেন, শনিবারে বালুকা বেলায় সেটি লেখাও মানা। মনে রাখা প্রয়োজন ঈশ্বর নির্দেশিত বিশ্রাম গবাদি পশুর জন্য সম্যক প্রযোজ্য।
শনিবারের দিন। কোন কাজ কর্ম করা মানা। তাই বলে আপনি বলদের গাড়ি অথবা জুরি গাড়ি হাঁকিয়ে পাশের গ্রামের দত্ত মশায়ের বাড়ি আড্ডা দিতে যেতে পারেন না। শনিবারে গোরু বলদ ঘোড়ারও ছুটি। আপনার হুঁকোটা বাড়িয়ে দেবার হুকুম পুরাতন ভৃত্যকে দেওয়া যাবে না। এদিন তারও বিশ্রাম।
ছ বছর চাষ করার পরে একটা বছর জমিকে পতিত রাখার বিধান দেওয়া হয়েছে। সপ্তম বছরটি জমির বিশ্রামের জন্য নির্দিষ্ট। আজকের বহুল প্রচলিত শব্দ ‘সাবাটিকাল’ এর উৎপত্তি এখান থেকে – কয়েক বছর কাজ করার পরে এক বছর বিরতি নেওয়া।
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই উনচল্লিশটি বিধান বিস্তৃত হল। জেফ্রি আমাকে বোঝালেন সেটি খুবই সহজ ছিল। এই ধরো বিজলি/ইলেক্ট্রিসিটি। সুইচ টিপলে আলো বা অগ্নির উৎপাদন হল। প্রাথমিক উনচল্লিশটি বিধানে আগুন জ্বালানো মানা। তাই এটির বারণ। মোজেসের আমলে মোটর গাড়ি, বিজলি বাতি, হাওয়াই জাহাজ, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন ছিল না। সাবাথের রীতি নীতি অনুসারে বাতিল হল গাড়ি চালানো বা চড়া, বিজলি বাতি জ্বালানো বা নেভানো টেলিভিশন দেখা ফোন করা বা ধরা। বই পড়তে পারেন অবশ্যই। তবে আইপ্যাড বা স্মার্ট ফোনে নয়। তার সুইচ অন করাটা একটা কাজ!
বৃষ্টির দিনে সিনাগগ থেকে বহু মানুষকে ভিজে আসতে ও যেতে দেখেছি। ছাতা খোলা একটি কাজ। কর্মহীন শনিবারে নিষিদ্ধ।
এমন ঘটনার কথা জানা যায় যে ইহুদি এলাকায় ভর দুপুরে বাড়ি ঢুকে চোর যা হাতে পেয়েছে তাই নিয়ে প্রস্থান করেছে। গৃহ কর্তা বা কর্ত্রী বসে দেখেছেন। পুলিসে ফোন করেননি।সাবাথের দিনে সেটা মানা।
গোলডারস গ্রিনের বাড়ি ছেড়ে এসেছি। সেটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। পোস্ট অফিসের গলতিতে মাঝে মধ্যে আমাদের নামের চিঠি সেখানে চলে আসে। এক শনিবারে গেছি তার খোঁজ নিতে। গৃহ কর্ত্রী দরোজা খুলে সাদর সম্ভাষণ করে জানালেন কয়েকটা চিঠি আছে। তিনি ছোট একটি টেবিলের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানালেন যে সেগুলি আমি যেন নিজের হাতে তুলে নিই। মম আপন করে। চিঠি গুলো তিনি হাতে করে আমাকে দিতে পারেন না। সাবাথের দিনে কোন বস্তু স্থানান্তকরন একটা কাজ। সেটি সম্পন্ন করা তাঁর ধর্ম বিরুদ্ধ।
দুই
এক শনিবার সকালে জো বেল বাজাল। সে তখন আমাদের ছোট দুটি ছেলে মেয়ের দেখাশোনা করে সপ্তাহান্তে। তাড়াতাড়ি দরজা খুলতেই জো ভীষন বেজার মুখে বলল : কি রকম পাড়ায় থাকো? এদের সবার মাথা খারাপ।
জো নিউজিল্যান্ডের মেয়ে। অল্প দিন এ দেশে এসেছে। ইহুদী পাডায় প্রথম আগমন। কি হয়েছে জানতে চাইলে সে বিস্তারিত বিবরণ দিল। যেন সকাল বেলায় বিবিসি খবরের খুলাসা দিচ্ছে।
টিউব থেকে নেমে আমাদের বাড়ীর দিকে হাঁটতে গিয়ে জো দেখে রাস্তার ধারে পার্ক করা একটা গাড়ীর অ্যালারম বাজছে তারস্বরে। আর একজন মধ্য বয়স্ক মানুষ অসহায়ের মত তার সামনে দাঁডিয়ে। হাতে কিছু একটা ধরা আছে মনে হয়। জো কে সামনে পেয়ে তিনি কাকুতি মিনতি করেছেন। "মিস তুমি যদি কিছু মনে না করো, আমার হাত থেকে এই যন্ত্রটি নিয়ে আমার গাড়ীর অ্যালার্মটা বনধ করে দাও” ।
জো খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছে “ কেন তুমি পারো না বুঝি?” তার উত্তরে তিনি বলেন “ মিস, আজ যে শনিবার” । তাকে নির্ঘাত পাগল ছাগল লোক ভেবে জো কর্ণবিদারী অ্যালার্মের বোতাম অফ করে দিয়ে আমাদের বাড়ীর বেল বাজিয়েছে।
“ কোন পাগলের পাল্লায় পড়েছিলাম “ বলে জো তার বিবরণী শেষ করল।
“পাগল নয় জো । তুমি একজন নিতান্ত ধর্মনিষ্ঠ ইহুদির সেবা করতে পেরেছ বলে নিজেকেই ধন্য মনে করো। শনিবার প্রভুর নির্দেশমত ছুটির দিন। এ দিনে কোন কল কবজা নাড়া চাড়া করা ধর্ম বিরোধী কাজ। কোন অজ্ঞাত কারণে তাঁর গাড়ীর অ্যালার্ম সচল হয়েছিল । সেটাকে থামাতে গেলে একটি যন্ত্রের বোতাম টিপতে হবে। সেটা কাজ। অন্যদিনে ইহুদি মানুষটি করতে পারেন । তবে শনিবারে নয়। সে আজকে নয়। ধর্মের বারণ ।
আরো একটি কথা। শনিবারে আমাদের দরোজার বেলটি বাজিও না। এদিন এ পাডায় কেউ বেল বাজায় না। কড়া নাড়বে। “
আমাদের রাস্তায় সবাই ইহুদি , আমরা বাদে । তাই কোন বৈষম্য বা অসদ্ভাব না করে কে বা কারা লেটার বক্সে নিয়মিত জুইশ ক্রনিকল নামক সাপ্তাহিক পত্রিকাটি দিয়ে যেত । ফিরিতে । সে আমলে আমরা খবরের কাগজ পড়তাম । একদিন খুলে দেখি হই হই কাণ্ড ।
প্রথম পাতার দ্বিতীয় কলামে রোম হর্ষক খবর : এ পাড়ার চেনা জানা এক কসাইকে দেখা গেছে শনিবার দিন ভর দুপুরে গোল্ডার্স গ্রিন হাই স্ট্রিটে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে। তাঁর মাংসের দোকান এ অঞ্চলে বিখ্যাত। তিনি স্থানীয় সমাজের কেউ কেটা মানুষ । অনেকেই তার দোকানের বাঁধা খদ্দের। এই ঘটনায় বহু মানুষ মনে আঘাত পেয়েছেন । সামনের শনিবারে সিনাগগে এই প্রসঙ্গ রাবির সামনে এ বিষয়টি তোলা হোক এই প্রস্তাব জানিয়ে লেখাটি শেষ করেছেন স্থানীয় সংবাদদাতা।
জুইশ ক্রনিকলের এর পরবর্তী সংখ্যায় আবার উত্তেজনা। এবার সেই কসাই মশাই (ধরুন তাঁর নাম নাথান ) একটি দীর্ঘ পত্রাঘাত করেছেন। তার
সার মর্ম এই : নাথানের স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। বিগত শনিবার দিন তাঁর ব্যথা ওঠে। কোনো অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় নাথানের পক্ষে গাড়ি করে তাঁকে দ্রুত রয়াল ফ্রি হসপিটালে স্থানান্তরিত করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। এটি জীবন মরনের সমস্যা। এ ক্ষেত্রে সাবাথের আইন কানুন প্রযোজ্য নয়- বাইবেলে পষ্ট লেখা আছে। পরিশেষে নাথান সেই স্থানীয় সংবাদদাতার প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন তুলেছেন- ইহা কি সত্য যে এই সংবাদদাতার নিজস্ব মাংসের দোকান হেনডন অঞ্চলে আছে ?
এবার বুঝুন ঠেলা। এটা আর শুধু হিব্রু বাইবেল আর তালমুদের ব্যাপার রইলো না। অন্তর্নিহিত রহস্য তাহলে দুটি কসাইয়ের লড়াই ?
শীরা টেনডলার নাম্নী একটি ইহুদি তরুণীও এক সময় ন্যানির কাজ করেছে আমাদের বাড়িতে । সে নিজে অনেক কিছুই মানে না ।
মিসেস টেনডলার একদিন আমাকে ফোন করলেন । বললেন শুক্কুরবারের সন্ধ্যায় বা শনিবারের সকালে আমি যেন তাঁদের বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে হাজির না হই । হাই স্ট্রিটের মোড় থেকে ফোন করে দিলে শীরা ওই পথ টুকু হেঁটে এসে গাড়িতে উঠতে পারে। তাঁর নিজের কোন গোঁড়ামি নেই কিন্তু পাড়া পড়শির চোখে সাবাথের দিনে তাঁর মেয়ের গাড়ি চড়া অত্যন্ত গর্হিত কর্ম বলে বিবেচিত হবে।
আজকের ব্যস্ত জীবনে শনিবারের কর্ম হীনতা হয়ত খুব যুক্তিযুক্ত নয় । তবে তারও ব্যবস্থা আছে ধর্মে। স্থানীয় রাবি বাড়ি বাড়ি ঘুরে একটি কাল্পনিক সুতো বেঁধে দিতে পারেন। এর নাম ইয়েরুভ । যে বাড়ি বা অঞ্চলটি ঘিরে তিনি এই সুতোটি বাঁধলেন বা শুদ্ধ করে দিলেন সেখানে শনিবারে বাড়িতে আপনি ভিডিও গেম খেলতে পারেন , রেসের বাজি লাগাতে পারেন, আর্সেনাল চেলসির ফুটবল ম্যাচ বা লর্ডসের মাঠের ক্রিকেট টেলিভিশনে দেখতে পারেন।
ইয়েরুভে নিয়মো নাস্তি ।
এটিকে সম্প্রতি এক ধাপ উঁচুতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । এখন আর কাল্পনিক নয় সত্যিকারের সূত্র বন্ধন। গোলডারস গ্রিনের বাড়ির পুরনো প্রতিবেশী ফোন করে জানালেন আশে পাশের চারটে রাস্তা নিয়ে একটি ব্লকের ওপরে ফুটপাথ বরাবর ইয়েরুভের দড়ি বাঁধা হবে ( ইয়েরুভ রাস্তার ওপরে টেনে দিলে তার ওপর গাড়ির চাকা চলবে - সেটা বাঞ্ছনীয় নয় ) । দুটো রাস্তার কোণায় আমাদের বাড়িটা পড়ে বলে সেখানে , ঠিক সদর দরজার বাইরে একটি পেরেক মেরে ইয়েরুভের মোড় ঘোরানো হবে। ফলে সাবাথের দিনেও এই চারটে রাস্তার অধিবাসীদের আপন গৃহে জীবন যাত্রা থাকবে অপরিবর্তিত । মানে ঐ একটু গঙ্গাজল বা জর্ডান নদীর জল ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নেয়া আর কি । আমার সম্মতি চাই ।
বহু ইহুদি হংসের মধ্যে একক বাঙালি বক রূপে বিশ বছর কাটিয়েছি । ইয়েরুভের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারি নি।
**********
কারলসবাদ ( আজকের চেক- কারলভি ভারি ) স্যনাটোরিয়ামের পার্ক । শনিবার , সাবাথের বিকেলবেলা ।
হিরশফেলড :কোন , শুনলাম তুমি নাকি নাস্তিক হয়ে গেছ!
কোন :ঠিক শুনেছ।
হিরশফেলড :ঈশ্বরে বিশ্বাস করো ? পরিষ্কার করে বল হ্যাঁ কি না ?
কোন :আজ থাক না। অন্য কিছুর গল্প করি । ঐ ব্লনড মেয়েটিকে দেখেছ ?
রবিবার সকালে আবার দেখা ।
হিরশফেলড:কাল সারা রাত আমার ঘুম হয় নি । ঐ প্রশ্নটা মাথার ভেতরে ঘুরছে । ঈশ্বরে বিশ্বাস করো ?
কোন :না, করি না ।
হিরশফেলড:গতকাল তো তুমি সোজা জবাবটা দিতে পারতে ?
কোন :পাগল নাকি ? সাবাথের দিনে?
********
শনিবারে পুরনো জামা কাপড়ের দোকান খুলে বসে আছে ইতঝিক । অত্যন্ত অপ্রসন্ন মুখে দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালেন ধর্মনিষ্ঠ গেলবরোট।
ইতঝিক : ভেতরে আসুন না । সেল লাগিয়েছি ।
গেলবরোট :লজ্জা করে না ? আজ, সাবাথের দিনে দোকান খোলা রেখে ব্যবসা করছ ?
ইতঝিক : কেনা দামের অর্ধেকে জামা বিক্রি করছি । এটাকে আপনি ব্যবসা বলেন ?
*********
সিনাগগের দরোজায় নোটিস
শনিবারে তাড়াতাড়ি এলে পেছনের দিকের সিট খালি পাওয়া যায়
*********
শনিবারে ধূমপান বারণ । সিনাগগ যাবার পথে প্রবীণ ইহুদি দেখেন এক তরুণ সিগারেট ধরিয়েছে । তিনি ক্রুদ্ধ হলেন ।
বয়স্ক ইহুদি :আমার আশি বছর বয়েস হল । এখনো সাবাথের দিনে ধূমপান করি না।
তরুণ ইহুদি :আমরা কেউ স্বর্গে যাব না ।
বয়স্ক ইহুদি :তোমার কথা জানি নে বাপু ।
তরুণ ইহুদি :স্বর্গে আমি যাব না কারণ শনিবারে ধূমপান করি । আপনিও যাবেন না কারণ স্বর্গ বলে কিছু নেই ।
**********
সাবাথের দিনে কোন ব্যবসায়িক কাজের কথা বলাও নিষিদ্ধ। ইজি ও গিদন সিনাগগে সকালবেলা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে
ইজি :সাবাথের দিনে বলা উচিত নয়, আমার গাড়ি বিক্রি করব।
গিদন:সাবাথের দিনে বলা উচিত নয় , কি দাম চাইছ ?
ইজি :সাবাথের দিনে বলা উচিত নয় , ৫০০০ গিলডার ।
গিদন :সাবাথের দিনে বলা উচিত নয় , ৩০০০ দিতে পারি।
ইজি :সাবাথের দিনে বলা উচিত নয় , ভেবে দেখি।
সেদিন বিকেলে আবার সিনাগগে দুজন
গিদন :সাবাথের দিনে বলা উচিত নয়, ভেবে দেখলে ?
ইজি :সাবাথের দিনে বলা উচিত নয়, গাড়ি বিক্রি করে ফেলেছি
**********
শনিবার। সাবাথ । সেদিন কোন কাজ কর্ম , এমনকি টাকা ছোঁয়া বারণ । সিনাগগ যাবার পথে রাবি দেখেন আইসাক দোকান খুলে বসে
আছে ।
রাবি :তুমি কি আহাম্মক ? আজকে সাবাথ । আজ কে আসবে তোমার দোকানে কেনা কাটা করতে ?
লক্ষণীয়: দোকান খোলা রাখাটাকে রাবি উপেক্ষা করলেন! সেটা কাজের অভিধায় পড়ে না। টাকার লেনদেন হলে সাবাথ ভঙ্গ
হয়।
********
ইলান সলিকে ( সলোমন ) জিজ্ঞ্যেস করেছে সে ধর্ম মেনে চলে কি না ।
সলি :দেখো, আমি সিনাগগে যাই না।সাবাথের দিনে কাজ করে দু পয়সা রোজগার করি।তবে ঐ ইওম কিপ্পুরে উপোষটা করি।
ইলান :ইওম কিপ্পুরে উপোষ করো ? আমি তো ভাবলাম তুমি ঈশ্বরেই বিশ্বাস কর না !
সলি :মাঝে মাঝে করি ।
********
ভিলনা ( ভিলনিউস )
কোনো মানুষের মৃত্যুর পরে তাঁর পরিচিত জনের কাছ থেকে তাঁর জীবন ও কাজের প্রশংসা পত্র সংগ্রহ করার একটি প্রথা প্রচলিত আছে ইহুদি সমাজে । এটি মৌখিক বা কাগুজে হতে পারে । তার পরে মরদেহ সমাহিত হবে। ভালো মানুষীর সার্টিফিকেট যদি না জোটে রাবি চেষ্টা করেন তাঁর নিজের মতন করে মৃত মানুষের সম্বন্ধে দু চারটে ভালো কথা বলার। সেটি অবশ্যই সত্যের ওপর আধারিত হতে হবে , ফেক নিউজ নয় । আবার , ‘ আহা তিনি বড়ো ভালো লোক ছিলেন ‘ গোছের ঢিলে ঢালা মন্তব্য করা চলবে না । রাবির ভাষণ তথ্য নিষ্ঠ হওয়া চাই ।
ভিলনার এক ধনী ইহুদি মরগেনষ্টেরন ( ভোরের তারা! ) মারা গেছেন । জীবৎকালে প্রচুর লোককে ঠকিয়েছেন । তাঁকে কেউ কখনো সিনাগগে দেখেছে বলে মনে করতে পারে না।। আপদ গেছে ধরনের বাক্যবাণ ছাড়া কারো কাছ থেকে একটাও ভালো কথা শোনা গেলো না।
সমাধি ক্ষেত্রে রাবি তাঁর ভাষণে বললেন
সাবাথের সম্মানে মরগেনষ্টেরন কখনো শনিবারে ধূমপান করেন নি । সেদিন কাগজে কলমে আঁচড় অবদি কাটেন নি ( সাবাথের দিনে দুটো অক্ষর পাশাপাশি লেখা নিষিদ্ধ )।
তাঁর ভাষণ শেষ হলে শোকযাত্রার এক সঙ্গী নাথান রাবির কাছে এগিয়ে এলেন।
নাথান : রাবি , আপনি কি করে মৃত মরগেনষ্টেরনের সম্বন্ধে এই প্রশংসা বাণী ছাড়লেন ? তিনি তো সিনাগগেই কোনদিন আসেন নি !
রাবি : নাথান, আমি খবর নিয়ে দুটো জিনিস জেনেছি । মরগেনষ্টেরন আবাল্য ধূমপান করেন নি । অতএব সাবাথের একটা শর্ত মেনেছেন ।
খোঁজ নিয়ে আরো জানলাম মরগেনষ্টেরন সম্পূর্ণ নিরক্ষর ছিলেন। তাই দুটো কেন, একটা অক্ষরও সারা জীবনে তাঁর পক্ষে লেখা
অসম্ভব ছিল।
**********
বিচারক :হালবগেওয়াকস, আমি ইহুদি নই তবে আপনাদের ধর্মের বিষয়ে আমি কিছু কিছু অবগত আছি । আপনার লজ্জিত
হওয়া উচিত । আপনি যে শুধু চুরি করেছেন তাই নয় । কর্মটি সেরেছেন আবার আপনাদের প্রভুর বিশ্রামের দিনে, পুণ্য
সাবাথ তিথিতে !
হালবগেওয়াকস:দেখুন, ধর্মের বিষয়ে আমার কোন গোঁড়ামি নেই ।
*********
আলেনস্টাইন ( বর্তমান পোলিশ অলসটিন ), পূর্ব প্রাশিয়া ।
প্রাশিয়ান কাইজার এসেছেন রাজ্য দরশনে। তিনি স্থানীয় রাবিকে ডেকে পাঠালেন তাঁর ইহুদী প্রজাদের খবরাখবর নিতে । রাবি জানালেন সেদিন শনিবার। সাবাথের দিনে তিনি কাইজার নয় , ঈশ্বরের সঙ্গে বাক্যালাপ করবেন । পরের দিন রাবি খবর পাঠালেন কাইজারের দফতরে । সেদিন তিনি সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত । জবাব পেলেন
আজ তো দেখা হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের কাইজার আজ তাঁর ঈশ্বরের সঙ্গে বাক্যালাপ করবেন।
**********
রাস্তায়
সাবাথের দিনে টাকা পয়সা ছোঁয়া বারন।
সিলবারনাখট :মনে করো আজ এই সাবাথের দিনে রাস্তায় কারো টাকার ব্যাগ পড়ে আছে, তুমি কি তা তুলবে ?
ফাইনহেরব :: টাকার ব্যাগ ? কোথায়? কোথায় ?
**********
সাবাথ।
কালমানের ব্যবসা খারাপ চলছে। সিনাগগে ঢুকতেই তার কট্টর দুশমন ফাইনগোল্ডের সঙ্গে দেখা ।
কালমান :আজ সাবাথের দিনে আমি তোমাকে সেই শুভ কামনা জানাই যা তুমি আমাকে জানাতে চাও।
ফাইনগোল্ড :এই সিনাগগে , সাবাথের দিনে ব্যবসায়ের কথা শুরু করলে ?
********
ইহুদি পঞ্জিকায় সবচেয়ে পুণ্য তিথি ইওম কিপ্পুর । বিগত বছরের সমস্ত অন্যায় আচরণের জন্য পশ্চাত্তাপ। । আরেক মহান তিথি টিশা বাব। সেদিন ইহুদিরা বড়ো দুঃখের সঙ্গে স্মরণ করেন জেরুসালেমে তাঁদের মন্দির ধ্বংসের কথা (সলোমনের প্রথম মন্দির – খ্রিস্ট পূর্ব ৫৮৬ এবং দ্বিতীয় মন্দির -৭০ খ্রিস্টাব্দ)। দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংসের পরেই তাঁরা ঘর ছাড়া হন। এই দুই পুণ্য দিনেই ধূমপান নিষিদ্ধ এবং উপোষ নির্দিষ্ট । সাবাথের দিনে খাওয়া দাওয়ার বাধা নেই তবে ধূমপান নিষিদ্ধ ।
শ্লয়মে :ফ্লেকসাইফ, জানিস সাবাথ, ইওম কিপ্পুর আর টিশা বাবের মধ্যে তফাত কোথায় ?
ফ্লেকসাইফ :কোথায় ?
শ্লয়মে :জেনে রাখ, গর্দভ । সাবাথের দিনে খাবার প্রকাশ্যে আর সিগারেট লুকিয়ে খাবি। টিশা বাবের দিন সিগারেট
প্রকাশ্যে আর খাবার লুকিয়ে খাবি। ইওম কিপ্পুরের দিনে দুটোই লুকিয়ে ।
********
রাবি সামুয়েলোভিতস তাঁর বাড়ির টেবিলে বসে একমনে কিছু লিখছেন । ছেলে ইয়াঙ্কেল বসে আছে উলটো দিকে ।
ইয়াঙ্কেল :বাবা , আজ কি লিখছ ?
রাবি : সাবাথের ভাষণ ।
ইয়াঙ্কেল :কি করে জানো কি বলতে হবে ?
রাবি :ঈশ্বর আমাকে বলে দেন সব।
ইয়াঙ্কেল :তাহলে লেখার মাঝে মাঝে কাটা কাটি করছ কেন?
*********
সমস্ত অ ইহুদির আখ্যা গয় । খ্রিস্টান মেয়েকে বলা হয় শিকসা । মরগেনগ্রাউ ভীষণ অখুশি যে তার ছেলে বিনয়ামিন এক শিকসাকে বিয়ে করতে চায়।
বিনয়ামিন:বাবা , ক্রিসটেল শিকসা । তবে সে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করবে । তোমার আপত্তি কিসের ? সে আমাকে ধর্মভ্রষ্ট করবে না ।
মরগেনগ্রাউ ;নিক আমাদের ধর্মে দীক্ষা । বলে রাখলাম শিকসাকে বিয়ে করলেই বিপদে পড়বে।
বিয়ে হল। হনিমুনের পরে তারা ফিরে এসেছে । মরগেনগ্রাউ শনিবারে জামা কাপড়ের দোকান খোলা রাখে । কিন্তু বিনয়ামিন আসে নি সেদিন ।ছেলেকে ফোন ।
মরগেনগ্রাউ : দোকানে আসো নি কেন? কোথায় আছো ।
বিনয়ামিন : আজ শনিবার , সাবাথ ।
মরগেনগ্রাউ : আমাদের দোকান শনিবারে খোলা থাকে, সবচেয়ে বেশি বিক্রি বাটা হয় ।তুমি আমি এতদিন শনিবারে কাজ করেছি।আজ কি হল ?
বিনয়ামিন : বাবা , আমি সাবাথের দিনে আর কাজ করবো না। বউ সিনাগগে যেতে চায় ।
মরগেনগ্রাউ : তোমাকে বলি নি ? শিকসাকে বিয়ে করলেই বিপদে পড়বে ।
পুঃ যদিও এ গল্পের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই তবু মটি ভোলকেনব্রুখের জাগরণ নামে একটি সুইস ছবি দেখতে পারেন নেটফ্লিক্সে । এক কট্টর ইহুদি পরিবারের ছেলে ও একটি শিকসার প্রেম কাহিনি !
*********
সাবাথের দিন। খুব সকাল সকাল ময়শে এসেছে সিনাগগে রাবির সঙ্গে একান্তে কথা বলতে ।
ময়শে :রাবি , অনেক অন্যায় করেছি জীবনে। এবার ঠিক করেছি সৎ পথে , ধর্মের পথে চলব।
রাবি ( সহর্ষে ) :বড় ভাল কথা ময়শে , বড় ভাল। যা অন্যায় জীবনে করেছ তার জন্য তুমি অনুতাপ করো ?
ময়শে :হৃদয়ের ভেতর থেকে, রাবি ।
রাবি :স্ত্রীকে কখনো প্রবঞ্চনা করবে না?
ময়শে :রাবি , কখনো নয় ।
রাবি :প্রতিবেশীর সম্পত্তিতে লোভ করবে না, যেমন ঈশ্বর দশ আদেশে নির্দেশ দিয়েছেন ?
ময়শে :রাবি , আমি শপথ করছি আপনার সামনে, এই সিনাগগে।
রাবি :যার কাছে যা ধার দেনা আছে সেগুলো সব শোধ করে দেবে ? যা তাদের প্রাপ্য তাদের দেবে ?
ময়শে :রাবি ! আমি এসেছি ধর্মের কথা বলতে শুনতে । ধর্মের পথে চলতে । আপনি শুরু করলেন আমার ব্যবসায়ের কথা! তাও আবার এই সাবাথের দিনে !
দর্শনাভাব/দশানাভাব এর ঘটনাটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনিলা দেবী ছদ্মনামে রচিত কানকাটা প্রবন্ধ হতে উদ্ধৃত।
"এই সেদিন চন্দ্রগ্রহণ উপলক্ষে বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা থালায় জল লইয়া হাঁ করিয়া বসিয়াছিল। গ্রহণ লাগিলে তাহারা দেখিবে। হঠাৎ শাশুড়ী ঠাকরুন বলিলেন, “হাঁ বৌমা, কালীচরণ যে পাঁজি দেখে বলে গেল সাতটার পূর্বেই গেরণ লাগবে, সাতটা ত বেজে গেল, কৈ একবার ভাল করে পাঁজিটা দেখ দেখি গা!” দেখিলাম, পাঁজিতে লেখা আছে, 'দর্শনাভাব'। বলিলাম, “গেরণ হয়ত লাগবে, কিন্তু দেখা যাবে না।” ঠাকরুন বিশ্বাস করিলেন না, বলিলেন, “সে কি কথা বৌমা? কালী যে বেশ করে দেখে বলে গেল, 'দশানা ভাব' দেখা যাবে, আর তুমি বলছ একেবারেই দেখা যাবে না? এ কি হয়? দশানা না হউক আটানা, আটানা না হউক চার আনাও ত দেখতে পাওয়া চাই!” কালীচরণকে ডাকানো হইলে আমি আড়ালে থাকিয়া বলিলাম, “সরকারমশায়, পাঁজিতে দর্শনাভাব লেখা আছে—গেরণ ত দেখতে পাওয়া যাবে না।” কালীচরণ হাসিয়া বলিল, “বৌমা, কর্তা স্বর্গে গেছেন—তিনি বলতেন, গাঁয়ের মধ্যে পাঁজি দেখতে যদি কেউ থাকে ত সে কালী। ঐ যার নাম দর্শনাভাব, তারই নাম দশানাভাব। শুদ্ধ করে লিখতে গেলে ঐ রকম লিখতে হয়। এ বড় শক্ত বিদ্যে বৌমা, পাঁজি দেখে দেওয়া যে-সে লোকের কাজ নয়!” আমি অবাক্ হইয়া গিয়া 'রেফের' উল্লেখ করিয়া বলিলাম, “শ'য়ের মাথায় ঐ খোঁচাটার মত তবে কি রয়েচে? 'আ'-কার এদিকে না থেকে ওদিকে কেন?” কিন্তু আমার কোন কথাই খাটিল না। কালীচরণ সাদৃশ্য দেখিতে পাইয়াছে—সে হটিল না। বরং আরো হাসিয়া বলিল, “বৌমা, ওগুলো শুধু দেখবার বাহার। ছাপাড়েরা মনে করেছে, ঐগুলো দিলে বেশ দেখতে হবে। শোননি, লোকে কথায় বলে—যেন ছাপাড়ের বিদ্যে! ওগুলো কিছুই নয়।” এই বলিয়া সে 'দর্শনাভাব'কে' 'দশানা ভাবে' সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়া জয়োল্লাসে হাসিতে হাসিতে বাহির হইয়া গেল।"
উৎস URL: https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?006077001001 - পাতা ২
মধ্য প্রাচ্যের সকল ভাষা বা লিপি মাত্রেই আরবীর দশানাভাব নয়।
অনুগ্রহ করে কেউ গায়ে পেতে নেবেন না।
সাবাশ 'সাবাথ'! ...লেখার গুণে পাঠক মুগ্ধ।
একটা বিষয়গত বা আচরণগত মিল সব ধর্মেই ... 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'র সুবিধাবাদ সর্বত্রই।
সত্যি বলতে কি লেখক যেহেতু লেখার ঈশ্বর। তিনি যাকে ইচ্ছে বা যেকোনও বিষয়কেই মর্যাদায় উন্নীত করতে পারেন। এখানে তিনি রসিকতার মতো একটি তথাকথিত ছেলেখেলার মতো বিষয়কেও ইতিহাস সংস্কৃতি চর্চার মতো মর্যাদার স্তরে উন্নীত করছেন, এখনও পর্যন্ত, সফল ভাবে। তাইলে উপরের বাণীর সঙ্গে এই রচনার অসামঞ্জস্য হলো কেমন করে?
দশনাভাব বলে গালি দিতে পারেন, তবু বলে যাই আমি অন্তত কোনও অসংগতি দেখতে পাচ্ছিনা।
প্রথম বাক্যে ঈশ্বর শব্দের পর দাঁড়িটা টাইপো।
আপনার সাধু সূক্তি বোধকরি মুসলমান বা ইহুদী কেউই মেনে নেবে না। তারা নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থসমূূূহের ভাষা ও লিপি সম্পর্কে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অদ্যরজনীতেও বোধকরি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষিত হচ্ছে। আপনার দর্শনাভাবে তাদের খুব কিছু এসে যায়না।
(ও, আর দশনাভাব মনে হয় দাঁত পড়়ে যাওয়ার পর হয়)
ধন্যবাদ কৌশিক সাহা, রেফারেন্স টা বোঝানোর জন্য।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে যে দুই জাতিকে "স্পর্শকাতর" বলে দাগিয়ে দিলেন তাঁরা কিন্তু "কেউই" প্রতিবাদ করেননি। সাধু ব্যাখ্যা মেনে না নেবার মত অনুদারতা এখনও অবধি চাক্ষুষ করি নাই। জানিনা কোথায় বোমা পড়ছে গুরুর জন্য, তবু আপনার "বোধকরি" মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কি? মেনে নিয়ে প্রচ্ছদ বদলেও দেওয়া হলো।
(দশনাভাব প্রসঙ্গে -- বয়েস তো কম হলো না!)