

বাঙ্কা ট্রানসিলভানিয়া থেকে যিনি দেখা করতে এলেন তাঁর নাম ডান (ডানিয়েল) কমেস্কু।
সে ব্যাঙ্কের সদর দফতর রোমানিয়ার পশ্চিমে, ক্লুজ নাপোকা শহরে। ইউরোপের আর কোন শহরের জোড়া নাম এভাবে একসঙ্গে উচ্চারিত হয় বলে জানা নেই। সম্রাট হাদ্রিয়ানের স্মৃতি বিজড়িত দু হাজার বছরের পুরনো এই রোমান জনপদের আদি নাম ছিল নাপোকা। তারপর দীর্ঘদিন দক্ষিণ জার্মানির স্যাক্সনরা বসবাস করেছে। অতি অল্প সংখ্যক এখনো করেন। দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জার্মান বংশোদ্ভূত - ক্লাউস ইওয়ানিস। এ শহরের জার্মান নাম ক্লাউসেনবুরগ (কোন ক্লাউসের দুর্গ)। হাঙ্গেরির অধিকারে ছিল বহু বছর। তারা একে বলে কলসভার। সেটা ওই জার্মান নামেরই অনুবাদ। হাঙ্গেরিয়ানে ভার মানে দুর্গ। রোমানিয়ান নাম ক্লুজ। অধিকন্তু ন দোষায় বিধে তার সঙ্গে রোমান নামটা জুড়ে দিয়ে আমাদের কৌতূহল ও টুরিস্টের আগ্রহ বাড়ায়।
শক হুন দল পাঠান মোগল ইংরেজ তাদের ভাষার ও শব্দের সম্ভার যোগ করেছে আমাদের সংস্কৃতিতে। বাক্যবন্ধে ইংরেজির প্রকোপ তো উঠতে বসতে। দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে দৈনন্দিন জীবনে আপন করে নিয়েছি অজস্র শব্দ। আমরা মনে রাখি না বিমা বা চশমা ফারসি শব্দ; আদালত, হিসাব তুরকি; ইশারা, আজব আরবি; জানলা, আলমারি পর্তুগিজ; আরবির হাত ধরে এসেছে হিব্রু আব্বা, মোকাম। বাংলা মহানন্দে গুলতানি করছে, সুর বাঁধছে তাদের সকলকে নিয়ে।
আমার বউকে বলি দেশ দখল করার পরে রোমান রাজারা কেড়ে নিয়েছে তোমাদের মুখের ভাষা, দিয়েছে ভালগার ল্যাটিন! সারা পূর্ব ইউরোপে রোমানিয়ান একমাত্র ভাষা যার শেকড়টি গাঁথা আছে ল্যাটিনে (ফল স্বরূপ ইতালিয়ান ফরাসি পর্তুগিজ স্প্যানিশের সঙ্গে তারা আত্মীয়তা অনুভব করে, প্রতিবেশীদের স্লাভিক ভাষার সঙ্গে নয়। আমাদের পরিবারের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ইংরেজি কিন্তু আমাদের মেয়ে মায়া স্প্যানিশ শেখে অনায়াসে, রোদিকা ইংরেজির চেয়ে ফরাসিতে বেশি স্বচ্ছন্দ, আমি যেমন বাংলায়)। তোমাদের দেশের নামটা অবধি পুরনো প্রভুদের নামে- রোম থেকে রোমানিয়া! আর কোন উপনিবেশে রোমানরা এমন পোক্ত ছাপ রেখে যায় নি! আর বিগত সাতশো বছরে জার্মানরা তোমাদের দিয়ে গেছে সভ্যতা, শিল্প, স্থাপত্য। একটা আলাদা সংস্কৃতি।
ইউরোপ থেকে শুরু হয়ে যে পর্বত মালার শেষ হয় হিমালয়ে, সেই কারপেথিয়ানের কোল ঘেঁষে পুব থেকে পশ্চিমে একটি জনপদ গড়ে উঠেছে যার ল্যাটিন নাম ট্রানসিলভানিয়া। অর্থ পাহাড়ের অন্য দিকে। জার্মান নাম জিবেন বুরগেন (সাতটি দুর্গ) - আশীর্বাদের ভূমি। এখানে চলতে ফিরতে যে দেশটি দেখবেন তার ছবি মেলে জার্মানি, অস্ট্রিয়ার সঙ্গে, বাকি দেশটার সঙ্গে নয়। আজকের রোমানিয়ার একশোর বেশি শহর ও গ্রাম তাদের জার্মান নাম বাঁচিয়ে রেখেছে, যেমন ব্রাশভ। ড্রাকুলার ব্রান দুর্গ দেখতে হলে আপনি এই আদ্যোপান্ত জার্মান স্থাপত্যে মোড়া ব্রাশভ বা ক্রোনস্টাড পার হয়ে যাবেন। এখানকার প্রধান গিরজেয় রবিবারের প্রার্থনা হয় জার্মান রোমানিয়ান এবং হাঙ্গেরিয়ান ভাষায়। আজকের বারো বছরের কম বয়েসি বালক বালিকারা হোটেল ট্রানসিলভানিয়া নামের যে ডিজনি ছবিটি দেখে সেটি ব্রাশভের ওপর আধারিত।
এককালে আমেরিকা দেখেছে ওয়েস্টওয়ার্ড হো। ইউরোপ থেকে আসা মানুষ পূর্ব তটে নেমে চাষ ও বাসের জমির সন্ধানে ধাওয়া করেছে পশ্চিম পানে। অজস্র মানুষকে হত্যা ও একটি সভ্যতাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে সেই অভিযান থেমেছিল একেবারে ক্যালিফোর্নিয়া গিয়ে। কারণ এর পরে সমুদ্র। এখন ইউরোপের হুঙ্কার হল - ইস্টওয়ার্ড হো। ভেঙ্গেছে দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়! মুনাফার হউক জয়। চলো পুব দিকে। যদিও পঞ্চাশ বছর আগে হিটলার দ্রাং নাখ ওস্টেন (পূবে এগিয়ে চলো ) আওয়াজ তুলে, চেক পোল্যান্ড দখল করে দুনিয়ার জন সমুদায়ের কাছে নিতান্ত অপ্রিয় হয়েছিলেন।এবারের অভিযানের অগ্রদূত ট্যাঙ্ক নয়, ব্যাঙ্ক।
পাঁচ বছর আগে বার্লিন দেওয়াল মিশে গেছে ধুলোয়। চেক পোল্যান্ড রাশিয়ার পরে সিটিব্যাঙ্কের শাখা খোলা হয়েছে বুখারেস্টের পিয়াতসা ভিকতোরিতে (বিজয় চত্বর )। আমাদের মতো ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কাররা অবশ্য তার আগেই "ডলার ধার নেবে গো?” বলে সে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দরোজায় কড়া নেড়েছি। তারপর শুরু হয় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিশ্বের ব্যাঙ্কের দুয়ারে ধর্ণা। দুর্জনে নাম দিয়েছিল সুটকেস ব্যাংকার - যারা সুটকেসটি নিয়ে স্থানীয় হোটেলে ওঠে, খদ্দেরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ পূর্বক আপন ডিল বা ডালটি সেদ্ধ করেই কেটে পড়ে। এক মাঘে শীত যায় না এ প্রবাদটি আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় – আমাদের শীত বা গ্রীষ্ম ওই কয়েক সপ্তাহের মাত্র, যতদিন না ডিলটি সম্পন্ন হচ্ছে। শাখা খোলা হলে অবশ্য মুশকিল - ফি বা পারিশ্রমিক পকেটস্থ করে সিটি ব্যাঙ্ক দেশ থেকে কেটে পড়তে পারে না। তখন সেথায় নিত্য ওঠা বসা। খদ্দেরের খোঁজে জুতোর সুকতলা খোয়ানো। সেই তালিকার ওপরে থাকতো নব গঠিত বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং সরকারি মালিকানাধীন তেল, টেলিকম কোম্পানি।
যেমন বাঙ্কা ট্রানসিলভানিয়া।
এত বাখানিয়া বলছি কারণ আমরা তখন এই বাণিজ্য পদ্ধতি শুধু রোমানিয়া নয়, রাশিয়া থেকে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া সর্বত্র প্রয়োগ করেছি।
ডান কমেস্কুর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল বিদেশী মুদ্রা ব্যবসা এবং তাদের জন্য বিশ্বের বাজারে ঋণ সংগ্রহ করা। সে ব্যাঙ্কের ডলার অ্যাকাউনটটি সিটি ব্যাঙ্ক নিউ ইয়র্কের করতলগত করার বিপুল অভিপ্রায় তার মধ্যেই নিহিত। ডান ইংরেজি বলেন চমৎকার। আমরা রোমানিয়াতে তখন কচি এবং কাঁচা। স্থানীয় লোক জনের সঙ্গে কথা বার্তা বলে জানবার চেষ্টা করি আদতে কোথায় কি ঘটছে। সেই সব জ্ঞান যা ফাইনান্সিয়াল টাইমস বা ব্লুমবেরগে পাওয়া যায় না।
কমিউনিস্ট আমলে পূর্ব ইউরোপের সব দেশে ছিল কঠোর সরকারি মালিকানাধীন দুটি মাত্র ব্যাঙ্ক -একটি বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য, অন্যটি আম জনতার সুবিধার্থে আভ্যন্তরীণ ব্যাঙ্কিঙ্গের জন্য। সেখান থেকে পশ্চিমি কায়দায় ব্রাঞ্চ ব্যাঙ্কিঙ্গে উত্তরণ সহজ নয়। পশ্চিমের চোখে যেটা ডাল ভাত বা রুটি মাখনের মত জলবৎ তরলং, সেটা এইসব দেশে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মত কঠিন।
লন্ডনে অভ্যাগত বিদেশি ব্যাঙ্কারদের সঙ্গে আলাপন শেষ হলে একটি আপাত নিরীহ প্রশ্ন করতাম " আচ্ছা এবার কোথায় যাবেন? পরের মিটিং লন্ডনের কোন খানে?" এমন নিরিমিষ প্রশ্ন শুনলে আমাদের অতিথি ভাবতেন এইসব বিদেশি মানুষকে তাদের পরবর্তী ঠিকানায় সহি সালামত পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নেবার জন্য আমি ভয়ানক উৎসুক। এর পিছনে নিহিত ছিল একটি একান্ত স্বার্থপর উদ্দেশ্য – জানতে চাই এবার তিনি কোন ব্যাঙ্কের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। আমরা এক অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই শত্রু পক্ষকে চিনে রাখা দরকার।
ডান বললেন, "এটাই আমার শেষ মিটিং। এবার হিথরো। আজ বাড়ি যাব।। তেল আভিভ।"
জানলার বাইরে টেমস নদী, ঘোলা জলে ঢেউ। যেন কলকাতায় ষ্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার স্ট্র্যানড রোডের অফিসে ছ তলার জানলা দিয়ে গঙ্গা দেখছি। টাওয়ার অফ লন্ডনের আলো গুলো এক এক করে জ্বলে উঠছে অপর পাড়ে।
রোমানিয়ার ক্লুজ নাপোকার ব্যাঙ্কারের বাড়ি ইজরায়েলের তেল আভিভ?
ডান মৃদু হাসলেন।
" ভাবছেন বাড়ি যদি তেল আভিভে তাহলে ক্লুজ নাপোকায় কি করি? আমরা ইহুদি। বহু পুরুষে আমরা রোমানিয়ান। সেটা আমাদের দেশ। আমার বাবা কমিউনিস্ট পার্টিকে চাঁদা বা ঘুষ দিয়ে ইজরায়েলে যাবার অনুমতি আদায় করেন। সীমান্ত খুলে যাওয়ার পরে প্রথম যে দেশে ভাগ্যের অনুসন্ধান শুরু করি সেটা অবশ্যই রোমানিয়া। তেল আভিভ থেকে ক্লুজ তিন ঘণ্টার পথ। সংসার এখনো রামাত গান, তেল আভিভ। আপাতত আমি আসা যাওয়া করছি। মাসে দু বার ইজরায়েল যাই "।
আইনস্টাইন বা স্পিলবেরগের মত যে সব নামের জার্মান ভাষায় একটা অর্থ আছে সেটি নব্বুই শতাংশ ইহুদি নাম। কিন্তু এই শর্ট কাটটি রোমানিয়ায় খাটে না। মসেস্কু পেত্রেস্কু খাঁটি রোমানিয়ান পদবি। সেটি ইহুদিদেরও হতে পারে। হাঙ্গেরি ট্রানসিলভানিয়া রোমানিয়ার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইহুদিরা বাস করেছেন দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে জার্মানি ও রোমানিয়ার ইহুদি জনসংখ্যা প্রায় সমান।
যুদ্ধ শেষ হল ১৯৪৫ সালে। ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠা ১৯৪৮। তার সংবিধানে দেওয়া হল দুনিয়ার সব ইহুদির ইজরায়েলে বসবাসের সমান অধিকার (হিব্রুতে আলিয়া বা ঘর ওয়াপসি)। পূর্ব ইউরোপ থেকে ইহুদিরা ইজরায়েল যেতে চাইলেন, আপন দেশে। একমাত্র পোল্যান্ড তাদের সে ইচ্ছায় কোন বাধা দেয় নি। যেতে চাইলে যান, কেবলমাত্র অস্থাবর সম্পত্তি ও পৈত্রিক প্রাণটি নিয়ে। যাবার সময়ে বাকি বিষয় টুকু মানে এই বাড়ি, গাড়ি, চাষের জমি, দোকান, কারখানা ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় বস্তুগুলি মহান সাম্যবাদী আন্দোলনের খাতায় দান করে যাবেন।
রাশিয়াতে তখন বাস করেন ছ লক্ষের বেশি ইহুদি। ইজরায়েল চাইল তাঁদেরও আপন দেশে ফেরাতে। সরকার জানালেন কোনো ইহুদি যদি স্বেচ্ছায় ইজরায়েলে যেতে চান, সোভিয়েত ইউনিয়ন সে আবেদন অবশ্যই সযত্নে বিবেচনা করবে। তবে তাদের ভরন পোষণ বাবদ যে ব্যয় সোভিয়েত ইউনিয়ন এযাবৎ বহন করেছে তার একটা অংশ বিদেশি মুদ্রায় দিলে এই নির্গমনের অনুমতি সহজলভ্য হতে পারে। কৃষক শ্রমিকের স্বর্গরাজ্য থেকে বিদায় নেওয়ার মাথা পিছু দক্ষিণা কি ভাবে নির্ণীত হত তা জানা শক্ত। সে তথ্য তো আর রাশিয়ার সরকারি মুখপত্র প্রাভদায় (আক্ষরিক অর্থে সত্য) ছাপা হত না। শোনা যায় গোয়েবলস রাশিয়ান খবরের কাগজের এই নাম শুনে অট্টহাস্য করেন। তিনি নিজে ফেক নিউজের কারখানা চালাতেন তবে তাকে " সত্য” বলে অভিহিত করার ধৃষ্টতা দেখান নি। তাঁর মুখপত্রের নাম ছিল জনতার পর্যবেক্ষক।
রাশিয়ার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ এই নতুন বিজনেস মডেলটি গ্রহণ করলেন।
ইহুদি বেচে অর্থাগম।
রাশিয়ান বিপ্লবে অনেক ইহুদি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। লেনিন নিজে ইদিশ ভাষায় বিপ্লবের বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানান। সেন্ট পিটারসবুরগের পথে হিব্রু, ইদিশে লেখা বিপ্লবী ব্যানার তুলে ইহুদিরা মিছিলে অংশ নিয়েছেন। অন্তত দু জন ইহুদি কমিসার ছিলেন- কার্ল রাদেক (সংবাদ বিভাগ) লিটিনোভ (বৈদেশিক বিভাগ)। হালে শ্রী পুটিন বলেছেন মহান রাশিয়ান বিপ্লবের পরে প্রতিষ্ঠিত নতুন সরকারের আশি শতাংশ সদস্য ছিলেন ইহুদি। যতদূর জানা যায় লেওন ট্রটস্কি সেই সরকারের একমাত্র ইহুদি সদস্য। একাই একশো না আশি?
আজকাল অবশ্য অনেক দেশেই ইতিহাসের সংশোধন করা হচ্ছে। রাশিয়া তার ব্যতিক্রম হতে যাবে কেন?
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অব্যবহিত আগে বা পরে ইউরোপের কিছু ইহুদি বুদ্ধিজীবী কমিউনিস্ট চিন্তাধারাকে সমর্থন জানান। বহু শতাব্দী যাবত জার্মান কাইজার, অস্ট্রিয়ান হাবসবুরগ সম্রাট এবং রাশিয়ান জারের নিরন্তর নিপীড়নের পরে ইহুদিরা হয়তো ভেবেছিলেন শ্রেণিহীন এক সমাজে তাঁদের ধর্মটা প্রাত্যহিক বিড়ম্বনার কারণ হবে না। এক সংগ্রামী নাম পোলিশ ইহুদি রোজা লুকসেমবুরগ। কার্ল লিবকনেখটের সঙ্গে জার্মানিতে যুদ্ধ বিরোধী স্পারটাকুস লিগ স্থাপনা করেন, সেটি পরবর্তী কালের জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির পুরোধা। ক্ষমতা দখলের ব্যর্থ অভ্যুথানের পরে তাঁকে হত্যা করা হয়।
১৯২০র পরে রাস্তা ঘাটে নাৎসিদের সঙ্গে কমিউনিস্টদের মারপিট প্রতিদিনের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত হল।
সাতের দশকে ব্যারিকেড নাটকে উৎপল দত্ত জার্মানিতে দুই যুদ্ধের মধ্যবর্তী এই উত্তাল সময়টিকে বাঙময় করে তুলেছেন।রবীন্দ্র সদনের মঞ্চে এই নাটকের একটা দৃশ্য মনে আছে। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন , " এটা কাদের পাড়া জানেন না? দেওয়ালগুলো দেখে নিন। সেখানে যদি লেখা থাকে 'জার্মানি জাগো' বা 'নিতশে আমাদের চিন্তা ধারার জনক', তাহলে বুঝবেন নাৎসি পাড়ায় আছেন। দুটো রাস্তা পার হলে দেখবেন দেওয়ালে দেওয়ালে কাস্তে হাতুড়ি আঁকা। কোনটা খুঁজছেন ?”
রবীন্দ্র সদনের বাইরের কলকাতা শহর তখন ঠিক সেই ভাবে ভাগ হয়ে গেছে। কোনো পাড়ার দেওয়ালে লেখা ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস’। অন্য পাড়ার দেওয়াল লিখনে তার প্রতিবাদী উত্তর। শহিদ বেদিতে শহর ভরে গেছে।
‘কমরেড তিমু তোমাকে ভুলছি না। ভুলব না’।
নাৎসিরা ইহুদি এবং বলশেভিজম বা কমিউনিজমকে সমার্থক ঘোষণা করেন। দুটোই শত্রু। গ্যাস চেম্বার উদ্বোধনের আগেই রাজনৈতিক কারণে পালান হাজার তিনেক ইহুদি কমিউনিস্ট -অনেকেই যান মেকসিকো। যুদ্ধের শেষে অন্তত দু হাজার ফেরেন পূর্ব জার্মানিতে, যেমন আলেকসানডার আবুশ (পূর্ব জার্মানির সাংস্কৃতিক বিভাগীয় মন্ত্রী)। রেখা রোটশিল্ড বলেছিলেন, "নতুন, এক সভ্য জার্মানির প্রতিষ্ঠার অপেক্ষা করছি অধীর আগ্রহে"। কমিউনিস্ট গণতান্ত্রিক জার্মান প্রজাতন্ত্র তাদের সে বাসনা পূরণ করেছিল কিনা জানা শক্ত।
নাৎসি যুগের কঠোর অ্যান্টি সেমিটিজমের সঙ্গে সুপরিচিত যে সব ইহুদি যুদ্ধোত্তর পূর্ব ইউরোপে প্রাণ এবং ভগ্ন কুটির নিয়ে বেঁচে রইলেন তাঁদের অনেকেই কমিউনিস্ট সরকারের সমর্থন করেছেন,কেউ কেউ নেতৃত্ব দিয়েছেন। নতুন দিন, উজ্জ্বল দিনের আশায় - লিবারতে এগালিতে ফ্রাতারনিতে। স্বাধীনতা সমতা ভ্রাতৃত্ব। ১৯৪৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়াতে ভোটের মাধ্যমে যে কমিউনিস্ট সরকার নির্বাচিত হল তাতে ইহুদি নেতা রুডলফ স্লান্সকির বিশাল অবদান ছিল। পার্টিতে তাঁর শক্তি বৃদ্ধি দেখে কমরেড স্টালিন পছন্দ করেন নি অতএব ১৯৫২ সালে স্লান্সকি নিধন সম্পন্ন হল। অত্যন্ত দরিদ্র ইহুদি পরিবারের মেয়ে আনা পাউকার আজীবন রোমানিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির জন্য কাজ করেছেন। যুদ্ধের পরে নব গঠিত প্রশাসনে অনেক উঁচুতে উঠেছেন। রোমানিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পদ, পার্টি সেক্রেটারির জন্য মনোনীত হন - মেয়ে বলে সেটি নিজেই প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৫০ সালে আনা পাউকার পৃথিবীর প্রথম মহিলা বিদেশ মন্ত্রী হলেন। স্টালিনের রোষানলে পড়লেন। বলির হাড়ি কাঠে প্রায় চাপানো হয়েছিল। প্রাণে বাঁচলেন এই মাত্র। হাঙ্গেরিতে সরকারি ভাবে ইহুদি বিদ্বেষ বে আইনি। কিন্তু তাঁদের ইজরায়েল যাবার বাসনাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী জাতীয়তা বিরোধী মনোভাব বলে নিন্দা করা হল। পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশে এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
তবে কি ইজরায়েলের জন্মের সঙ্গে কমিউনিস্ট ইউরোপে ইহুদি বিদ্বেষের কোন পরস্পর বিরোধী সম্পর্ক আছে? ইজরায়েল সৃষ্টি হল বলেই কি সেটি বর্ধিত হল? তোমরা নিজের দেশে চলে যাও?
অথবা সাম্যবাদের ভবিতে কিয়তকাল ভোলার পরে ইহুদি জানলেন হাজার বছরের বিদ্বেষ মারক্সিয় তত্ত্বের পুণ্য স্রোতে ধুয়ে মুছে গেলো না, যাবার নয়?
কে মনে রাখে ইহুদিরা সে সব দেশে কয়েকশ বছর বাস করেছেন! অন্য পাঁচজনের পাশাপাশি, বাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির জগতে ছাপ রেখেছেন।
ইহুদিরা পুনরায় প্রবঞ্চিত হলেন।
ডান একটা চমৎকার মন্তব্য করেছিলেন। তিনি হেসে বলেন "আপনি ডাভিড বেন গুরিওনের নাম জানেন তো? পোলিশ ইহুদি, তাঁর জার্মান পদবি গ্রুনকে গুরিওন বানালেন?"
এখানে একটা শ্লেষ আছে। ইজরায়েলে এসেই আশকেনাজি বা জার্মান নামধারি ইহুদিরা তাঁদের পদবিকে সযত্নে পরিবর্তন করেছেন। চেক, হাঙ্গেরিয়ান, রাশিয়ান বা রোমানিয়ানরা সেটি সচরাচর করেন না।
"জানি, তিনি ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রপিতা। আপনাদের প্রথম প্রধান মন্ত্রী।"
"ইজরায়েলে তাঁর সম্বন্ধে একটা বক্রোক্তি প্রচলিত আছে! যে দেশটার পিতা বলে আপনি তাঁর সম্মান দিলেন, তিনি সেটাকে নিয়ে দুবার ব্যবসা করেছেন। আমেরিকাকে দেশটা বেচে পেলেন টাকা। তারপরে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকে কিনলেন মানুষ। ইহুদি বাণিজ্য বুদ্ধি ও চালাকির শ্রেষ্ঠ নমুনা!"

syandi | 45.25.***.*** | ০৬ নভেম্বর ২০২১ ১৯:১৩500805
b | 117.194.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২১ ০১:২৩500818
সে | 2001:1711:fa42:f421:a4ad:8f5a:c0fc:***:*** | ০৭ নভেম্বর ২০২১ ১৭:২৫500874
হীরেন সিংহরায় | ০৭ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৫৯500876
Amit | 203.***.*** | ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০২:৩২500901
:|: | 174.255.***.*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৪:১২500960
সে | 2001:1711:fa42:f421:c9c6:5d06:35eb:***:*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৫:০৮500961
সে | 2001:1711:fa42:f421:c9c6:5d06:35eb:***:*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২০500962
সে | 2001:1711:fa42:f421:c9c6:5d06:35eb:***:*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২৯500963
হীরেন সিংহরায় | ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩৪500964
হীরেন সিংহরায় | ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৫২500965
সে | 2001:1711:fa42:f421:c9c6:5d06:35eb:***:*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ১৩:৪৫500971
সে | 2001:1711:fa42:f421:c9c6:5d06:35eb:***:*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ১৪:১১500972
সে | 2001:1711:fa42:f421:c9c6:5d06:35eb:***:*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ১৪:২৬500973
হীরেন সিংহরায় | ১০ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৪৯500974
সে | 2001:1711:fa42:f421:c9c6:5d06:35eb:***:*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ১৫:৫৭500975
হীরেন সিংহরায় | ১০ নভেম্বর ২০২১ ১৬:০৭500977
হীরেন সিংহরায় | ১০ নভেম্বর ২০২১ ১৬:০৯500978
শ্রী সে | 2001:1711:fa42:f421:c9c6:5d06:35eb:***:*** | ১০ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৩৫500980