মিশপখে বা গুষ্ঠি
মিশপখে একটি আদি ও অকৃত্রিম হিব্রু শব্দ।
ইহুদি পৃথিবীর একমাত্র জন সমষ্টি যারা একত্রে একই দিনে এক ধর্ম গ্রহণ করেছে। সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে মোজেস দশ আদেশ সম্বলিত যে প্রস্তরলিপিটি তাদের হাতে ধরালেন সেটিকে মান্য করে তাঁর নির্দেশ মতো সদলবলে তারা কানান (আজকের ইজরায়েল- এক অর্থে নিচু জমি অন্য অর্থে বেগুনি রঙ ) পানে ধাবিত হল। লিখিত বা কথিত ইতিহাসে এই একমাত্র ঘটনা যেখানে স্বয়ং ঈশ্বর কুড়ি লক্ষ (বাইবেল মতে) ইহুদিকে আগাম তাদের বাসভূমি নির্দিষ্ট করে আকাশের আপিস থেকে ভিসা এবং পাসপোর্ট বণ্টন করেছেন। তাই সকল ইহুদি সবার পরিজন, মিশপখে। ইথিওপিয়া ইরাক কেরালা কলকাতা কাজাখস্তান সাংহাই (এই সব দেশের কিছু মানুষের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে ইজরায়েলে) বা অন্য যে কোন দেশ থেকে আগত দুনিয়ার সকল ইহুদির সমান অধিকার আছে ইজরায়েলি নাগরিক হবার। এই রেওয়াজের নাম আলিয়া (মহেশ ভাটের মেয়ের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই)।
প্রসঙ্গত কলকাতার ইহুদি সম্প্রদায়ের এক বৃহৎ অংশ বাগদাদ এবং আলেপো (সিরিয়া) থেকে আসেন। কলকাতা শহরের তাবৎ মানুষকে মিষ্টিমুখ করানোতে যাদের অবদান অনস্বীকার্য নিউ মার্কেটের সেই নাহুম কেকের জনক নাহুম ইজরায়েল মরডেকাই ছিলেন বাগদাদি ইহুদি।
ইদিশ ভাষা অসম্ভব চাতুর্যের সঙ্গে এই শব্দটিকে মুক্তি দিয়েছে তার সঙ্কীর্ণতা থেকে। সেখানে মিশপখের ব্যুৎপত্তি ইহুদিয়ানার গণ্ডিকে অতিক্রম করে যায়- তাই মিশপখে আমাদের হিসেবে গুষ্ঠি! ইংরেজিতে ক্ল্যান। লক্ষ্যের ঐক্য থাকলে তার ভেতরে বন্ধু বর্গ পাড়া পড়শি যে কেউ ঢুকে পড়তে পারেন। বৃহত্তর পরিবার! যেমন ধরুন এই দুনিয়ার সব মোহন বাগান সমর্থক আমার আপন গুষ্ঠি, তারা সবাই আমার মিশপখে। গোরা ঘোষকে খুঁজে পেয়েছি নুরেমবেরগে, শিকাগোতে সিরাজুল ইসলামকে। আমরা সবাই এক ডালের পাখি, এক গোয়ালের গরু। একই দলের লোক। হাত ঘড়ির সময়টা আলাদা হলেও মনে পড়ে যায় খেলা শেষ হবার বিশ মিনিট আগে আমাদের সবুজ -মেরুন পতাকা নেমে যাবে (আমাদের কালে যেতো)। সেখানে সকলে এক মন এক প্রাণ।
গোষ্ঠীবদ্ধতার চূড়ান্ত পরিচয় পাওয়া যায় ইংল্যান্ডের ফুটবল মাঠে, দুটি দলের সমর্থকদের পারস্পরিক সম্ভাষণে তার বিলিতি নাম ট্রাইবাল ওয়ারফেয়ার। দুই যুযুধান পক্ষের আচরণ গুহা মানব গোষ্ঠীর সম্মুখ সমরের কথা অনায়াসে মনে করিয়ে দিতে পারে।
গোলডারস গ্রিনে বড়ো হয়েছে ইন্দ্রনীল। ঠাট্টা করে বলেছি তোমার কপালে ইহুদি কন্যা লেখা আছে। তাদের দেখা অবশ্য হয় ক্যালিফোর্নিয়াতে। পেনির পিতা মাতা নিউ ইয়র্ক রাজ্যের উত্তর অঞ্চলে অনিওন্তা শহরের বাসিন্দা। নিউ ইয়র্ক থেকে তিন ঘণ্টার ড্রাইভ। পেনির বাবা, আমার বেয়াই স্যামুয়েল পোলাকের পূর্ব পুরুষ পোল্যান্ড থেকে আমেরিকায় আসেন। পোলাক কথাটার অর্থ পোল্যান্ডের লোক, সেই পেল অফ সেটলমেনট (গ্রামে গঞ্জে পর্বে সে গল্প বলেছি) থেকে তাঁদের পূর্ব পুরুষ আমেরিকায় এসেছেন একশ বছর আগে। খানিকটা ইদিশ বলেন এবং বোঝেন। আমার পুত্র ও পুত্রবধু তখন ব্রুকলিন বাসিন্দা। সেখানকার ইহুদি জমায়েত গোলডারস গ্রিনের মতন । চতুর্দিকে হিব্রু লেখা। রাস্তায় ইদিশ শোনা যায় (যা ইজরায়েলে বিরল)। বেয়াই বেয়ান, স্যাম এবং জুলি জানালেন আমরা মানে আমাদের দিকের কিছু হিন্দু, আমার বউ (অর্থোডক্স ক্রিশ্চান), বড়ো জামাই (চার্চ অফ ইংল্যান্) সকলেই পরিজন, প্রিয়জন, মিশপখে। মিশপখের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বা সদস্য পদের জন্য ইহুদি হওয়া আবশ্যিক নয়!
এই বৃহত্তর গোষ্ঠীবদ্ধতার কোন স্থায়ী গ্যারান্টি নেই। সকল মিশপখে সর্বদা একত্র উড়ো উড়ি করবেন এমন মাথার দিব্যি কেউ কখনও দেয় নি। একমাত্র ব্যতিক্রম হয়তো মোহন বাগানের মানুষ- তারা কোনো দিন কোনদিন লাল হলুদের ঝাণ্ডা তুলবে না । অথবা ইন্দ্রনীলের মতো আর্সেনাল ফুটবল দলের কট্টর মেম্বর – যাদের শত্রুর নাম উত্তর লন্ডনের আরেক ইহুদি সমর্থিত ফুটবল ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারস। আমার ছেলে কখনও লন্ডনের টটেনহ্যাম কোর্ট রোড টিউব স্টেশানে নামে না বা ট্রেন বদল করে না-ঐ নামটা তার অসহ্য।
তবে গুষ্ঠির সব সদস্যের মেম্বারশিপ জন্মসূত্রে পাকা নয় বা যাবজ্জীবন সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো থাকে না। অন্যভাবে বলতে গেলে মিশপখের সবাইকে চেনা বলে প্রয়োজনে কিছু লোককে ছেঁটে ফেলাটাও সহজ। ধোপা নাপিত বন্ধ হতে পারে!
এর একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্টের ব্যাঙ্কার বন্ধু হানস শ্নুস।
তিনটি ইহুদি পরিবার এবং একটি জার্মান বাণিজ্যিক সঙ্ঘ মিলে বার্লিনার হানডেলসগেজেলশাফট নামে একটি ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন বার্লিনে, ১৮৫৬ সালে। একশ বছর বাদে ফ্রাঙ্কফুরটার ব্যাঙ্কের মিলিত হবার পরে সেই সত্তার নতুন নাম হল বারলিনার হানডেলসগেজেলশাফট উনড ফ্রাঙ্কফুরটার ব্যাঙ্ক(এই এতো লম্বা নাম এমনকি জার্মানদের কানেও শক্ত ঠেকবে বলে সংক্ষেপে বি এইচ এফ নাম দিয়ে সে কর্তৃপক্ষ আমাদের আনন্দ বর্ধন করেছেন)। সৌম্য দর্শন শ্বেত শ্মশ্রু ধারি হানস ছিলেন সে ব্যাঙ্কের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের আধিকারিক। আমার ইংরেজ সহকর্মী অ্যাঞ্জেলা রোজ তাকে আড়ালে ফাদার ক্রিসমাস বলতো!
বার্লিনের সেই ব্যাঙ্কটির প্রবাদ প্রতিম সি ই ও ছিলেন কার্ল ফুরস্টেনবেরগ যিনি প্রায় পঞ্চাশ বছর এই ব্যাঙ্কটি পরিচালনা করেন।। জার্মানিতে রোটশিল্ডের পরেই কার্ল ফুরসটেনবেরগ উনবিংশ (এবং বিংশ শতাব্দীর গোঁড়ায়) শতাব্দীর সবচেয়ে খ্যাতনামা ইহুদি ব্যাঙ্কার বলে গণ্য হয়ে থাকেন। নাৎসিরা ক্ষমতায় আসার দশ দিনের মধ্যে বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি মারা যান। সাতাত্তর বছর বয়েসে।
ফ্রাঙ্কফুর্টের বোকেনহাইমার লানড স্ত্রাসেতে বি এইচ এফ ব্যাঙ্কের হলের দেয়ালে বিশাল কাঁচের ফ্রেমের ভেতরে কার্ল ফুরসটেনবেরগকে ঝুলতে দেখেছি। তার সঙ্গে হানসের চেহারা খুব মেলে। এ কথা শুনে হানস হেসে বললেন ‘মিলটা ঐ পর্যন্তই। আচ্ছা, আপনি তো এখন লন্ডনের ইহুদি পাড়ায় থাকেন। মিশপখে বোঝেন? তাহলে কফির সঙ্গে আপনাকে কার্ল ফুরসটেনবেরগের একটা গল্প শোনাব ‘।
কার্ল ফুরসটেনবেরগ বারলিনার হানডেলসগেজেলশাফট ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন (১৮৮৪)। নতুন পদে বসার প্রথম দিনেই
সক্কালবেলা তিনি তাঁর অফিসে ডেকে পাঠালেন সিকিউরিটি বিভাগের ওপরওলা, প্রাশিয়ান পুলিশ বাহিনী থেকে অবসর প্রাপ্ত হের শ্লেসিঙ্গারকে।বসালেন
তাঁর অফিসে। সম্ভাষণ পর্ব শেষ হলে পর টেবিলের ওপরে কয়েকটি ফোটো সাজিয়ে দিলেন।
ফুরসটেনবেরগ: এই সাতজনের ছবি খুব ভালো করে দেখে নিন। এরা সবাই আমার আত্মীয়, মিশপখে। এই দেখুন এই আমার মাসির ছেলে,
নয় কলোনে থাকে। সে আর তার দুটো ছেলে বার্লিন লিখটেনবেরগে মুদির দোকান চালায়। জ্যাঠার দুটো ছেলে - ক্রয়েতসবেরগে জামা কাপড়ের ব্যবসা করে, আর দিদির এই দুই মেয়ে কোন কাজ করে না। বাড়ির খেয়ে দেশ উদ্ধার করে।
শ্লেসিঙ্গার: বড়ো সুন্দর আপনার পরিবারের লোকজন, হের ফুরসটেনবেরগ।
ফুরস্টেনবেরগ: হের শ্লেসিঙ্গার, এদের চেহারা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। মুখ গুলো খুব ভাল করে চিনে রাখুন। এদের মধ্যে কেউ যদি কখনো
আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, সাক্ষাতের কোন কারণ জানতে চাইবেন না, বসতে অনুরোধ করবেন না। বলবেন আমি
সারাদিন ব্যস্ত আছি। কোন মতেই দেখা হবে না।
বোঝা গেল! মিশপখে বলেই দ্বার অবারিত নয়।। বিজনেস ইজ বিজনেস।
আবার গুণ বিচারের ব্যাপারও আছে।
ভিলনোর (ভিলনিউস, লিথুয়ানিয়া) ধনী বস্ত্র ব্যবসায়ী ইয়েলিনেক মৃত্যু শয্যায়। পাশে বসে স্ত্রী রিফকা স্বামীর শেষ ইচ্ছা লিপিবদ্ধ করছেন। সাক্ষী হিসেবে হাজির আছেন পারিবারিক উকিল সিলবারফারব।
ইয়েলিনেক: কারখানাটা দেব ইতঝাককে।
রিফকা: শোনো, ইতঝাকের ব্যবসা বুদ্ধি যে কম তা তুমিও জানো। কারখানাটা বরং এলানকে দাও।
ইয়েলিনেক: আচ্ছা তাই হোক। লিখে নাও কারখানা পাবে এলান। দোকানের সংলগ্ন বাড়িটা আমাদের মেয়ে লিয়াকে দেব।
রিফকা: কেন লিয়াকে কেন? তার তো দুখানা বাড়ি আছে। আবার কেন? ওটা বরং আবিতালকে দিয়ে যাও।
ইয়েলিনেক: ঠিক আছে। ওটা আবিতালের নামেই লিখে নাও। আমার নগদ টাকা আর শেয়ার কিন্তু সব পাবে আমাদের ছোট ছেলে বিনইয়ামিন।
রিফকা: বিনইয়ামিন কেন?
ইয়েলিনেক অনেক চেষ্টা করে বিছানায় একটু উঠে বসলেন।
ইয়েলিনেক (দুর্বল স্বরে): একটা জিনিস বুঝতে পারছি না রিফকা।। মারা যাচ্ছে কে? তুমি না আমি?
মিশপখে সংবাদ নানা রূপ ধারণ করে। এই ধরুন বিয়ে। তার মানেই মিশপখের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, যেমন স্যাম বা জুলির পরিবারে ইন্দ্রনীলের আবির্ভাব। প্রেম নয় প্রীতি নয় আরো এক বিপন্ন বিস্ময় পিতা মাতার অন্তর্গত মনের ভিতরে খেলা করে। ভাবি পুত্রবধু বা জামাতার সামাজিক অবস্থান, আর্থিক স্বছলতা ইত্যাদি নিতান্ত গদ্যময় ব্যাপার নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন থাকেন। মিশপখের আকার বৃদ্ধি অনিবার্য। তবে জরা সোচ সমঝকে।
ইজি গেছে হবু জামাই বেনজির সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে আলোচনা করতে।
ইজি: তুমি কি কাজ করো?
বেনজি: আমি তোরা পাঠ করি (হিব্রু বাইবেলের প্রথম পাঁচ খণ্ড)
ইজি: আমার মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছ। তাকে খাওয়াবে পরাবে কি করে?
বেনজি: আমি তোরা পাঠ করে যাব। বাকি ব্যবস্থা ঈশ্বর করে দেবেন।
ইজি: ছেলে মেয়ে হলে তাদের লেখা পড়া শেখাবে কি করে?
বেনজি: আমি তোরা পাঠ করে যাব। ছেলে মেয়ের ব্যবস্থা ঈশ্বর স্থির করে দেবেন।
ইজি বাড়ি ফিরে এলে উৎকণ্ঠিত স্ত্রী মিয়া জানতে চাইল - ছেলে কেমন দেখলে?
ইজি: বউ, ছেলে খুবই ভাল। আমার সঙ্গে প্রথম দেখাতেই সে ধরে নিয়েছে আমি স্বয়ং ঈশ্বর। সে কেবল তোরা পড়বে আর প্রার্থনা করে যাবে। তার সংসারের ভারটা আমার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। লক্ষ লক্ষ ইহুদি নিহত হয়েছেন নাৎসি অত্যাচারে। দু হাজার বছর বাদে ইহুদি গুষ্ঠির এক বিশাল সংখ্যক মানুষ ঈশ্বর নির্দেশিত বাস স্থানে ফিরেছেন। ইহুদি পরিচয় আর কোন বিড়ম্বনার বিবৃতি নয়, তাঁরা সমান নাগরিক, সব দেশে। ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চল্লিশ বছর মরুভূমিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোজেস তাঁদের যে বাসভূমির দোর গোড়া অবধি পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেখানে এখন ডেভিডের তারা মার্কা (মাগেন ডাভিড) নীল শাদা পতাকা উড়ছে। সেটা ইহুদিদের আপন দেশ।
বাকিরা ছড়িয়ে পড়েছেন পৃথিবীর নানান দেশে ।
ইউরোপ আমেরিকার পথে ঘাটে ইহুদিদের কারো সঙ্গে কারো দেখা হলেই প্রথম প্রশ্ন – বেঁচে আছো দেখছি! আর কে বেঁচে আছে? মিশপখের মধ্যে কার কার খবর রাখো?
নিউ ইয়র্কের রাস্তায় পিনকাসের দেখা তার পুরনো বন্ধু রাইখের সঙ্গে। খোঁজ খবর করছে বন্ধুদের, কে কোথায় এবং কেমন আছে।
পিনকাস: আচ্ছা আমাদের সলোমন কোথায় এখন?
রাইখ: সলোমন? সে ম্যানচেস্টারে । ইংল্যান্ডে সাম্যবাদের ভীষণ বড়ো প্রচারক সে।
পিনকাস: আর ডেভিড?
রাইখ: ডেভিড আছে আর্জেন্টিনাতে। জানো তো সে দেশে পেরোন এক কট্টর দক্ষিণ পন্থী রাষ্ট্রনেতা। তার বিরুদ্ধে কমিউনিজমের পতাকা তুলে ধরেছে ডেভিড। বুয়েনোস আইরেসের পুলিস তার পিছনে লেগে আছে। তবে সে এক দৃঢ় সঙ্কল্প সাম্যবাদী নেতা।
পিনকাস: সামুয়েল কোথায় গেলো?
রাইখ: রোমে। ইতালিতে সাম্যবাদের সে প্রধান প্রবক্তা। সেখানে সামুয়েল লড়াই করছে অবক্ষয়ী পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে।
পিনকাস: আর আমাদের শিমন?
রাইখ: শিমন আছে ইজরায়েলে। হাইফার কাছে।
পিনকাস: সেখানে সে সাম্যবাদ প্রচার করছে?
রাইখ: মাথা খারাপ নাকি! সাম্যবাদ? আমাদের নিজেদের দেশে?
গোল্ডস্টাইনের বাড়িতে বিশাল ডিনার পার্টি। শহরের গোটা ইহুদি গুষ্ঠি নিমন্ত্রিত।
হঠাৎ শোনা গেল কেউ উচ্চকণ্ঠে বলেছেন- আমার ওয়ালেট খুঁজে পাচ্ছি না। তাতে ১০০০ রুবেল আছে। যদি কেউ খুঁজে দেন, ১০০ রুবেল পুরষ্কার দেব।
পেছন থেকে আরও উচ্চস্বরে কেউ বললেন- আমি ডবল দেব।
মিশপখের মানুষ পরস্পরের স্বার্থ দেখেন।
ধর্ম শিক্ষার ক্লাস। গোলডিঙ্গেন (আজকের কুলডিগা, লিথুয়ানিয়া)
শিক্ষক: নরক এমন এক জায়গা যেখানে সবসময় আগুন জ্বলে আর তার ধোঁয়ায় চারিদিক আচ্ছন্ন হয়ে থাকে।
মরিতস হাত তুলেছে।
শিক্ষক: বল মরিতস, কি তোমার প্রশ্ন?
মরিতস: সার এই আগুন কি দিয়ে জ্বালানো হয়? কয়লা?
শিক্ষক (অবাক: কেন মরিতস?
মরিতস: আমার কাকার কয়লার ব্যবসা আছে সার । তিনি ভালো দরে কয়লা দিতে পারেন। যোগাযোগ করিয়ে দেবেন?
হানিমুনে ফিঙ্কেলস্টাইন দম্পতি।
স্বামী: মিলা, বাবা আমার জন্যে এতো ধন সম্পত্তি রেখে না গেলে তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে?
মিলা: নাথান, তোমাকে নিশ্চয় বিয়ে করতাম তা তোমার মিশপখের যেই সে সম্পত্তি রেখে যাক না কেন।
কাকার দোকানে ছেলে কাজ পেয়েছে, ওয়ারশতে। ক্রাকাউ থেকে এই প্রথমবার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে।
বাবা: সাবধানে যেও। তোমার কাকা অতি সজ্জন ব্যক্তি। তোমার যত্ন নেবেন।আর মনে রেখো ঈশ্বর তোমার সঙ্গে
যাবেন।
ছেলে: বাবা, ঈশ্বর কি ট্রেনের থার্ড ক্লাসে চড়েন?
পিতা পুত্র সংবাদ এক
ছেলে পড়াশোনায় নিতান্ত খারাপ। পিতা উত্যক্ত।
পিতা: একটা কথা জেনে রাখো, বৎস। লেখা পড়া জানাটা খুব জরুরি। নিজে কষ্ট করে বিদ্যা অর্জন করো। সেটা যদি না করতে পারো, মিশপখের ভেতরে খুঁজে পেতে এমন লোককে কাজে রাখো যার পেটে বিদ্যে আছে।
পিতা পুত্র সংবাদ দুই
রুবিন: বাবা, পুঁজি আর পরিশ্রমের তফাত কি?
নাফতালি মানডেলবাউম: শোনো, আমি যদি তোমার বড়লোক মামা গোল্ডেনস্টাইনের কাছ থেকে একশো রুবেল ধার করি, সেটা
হল আমার পুঁজি। আর গোল্ডেনস্টাইন যদি সেই একশো রুবেল আমার কাছে আদায় করার চেষ্টা করে
সেটা হবে তার পরিশ্রম।
পিতা পুত্র সংবাদ তিন
ছেলে প্রেমে পড়েছে শুনে পিতা চিন্তায় পড়েছেন।
পিতা: প্রথম দর্শনেই প্রেম? সেটা কি রকম জানো?
পুত্র: কি রকম?
পিতা: শেয়ার কিনলে ফোনে। তার সার্টিফিকেট এলো না হাতে।
পিতা পুত্র সংবাদ চার
পুত্র: বাবা, সততা কি?
পিতা: খুব সহজে বোঝাই। ধরো রাস্তায় এক রুবেল পড়ে পেলে। সেটা কি থানায় গিয়ে জমা দেবে? না। এই রুবেলটা
অনায়াসে নিজের পকেটে পুরতে পারো। তারপর হয়তো একদিন দেখলে এক হাজার রুবেলের একটা বান্ডিল
ফুটপাথে পড়ে আছে। তুমি তৎক্ষণাৎ সেটি থানায় গিয়ে জমা দেবে। লোকে তোমার সততার জন্য ধন্য ধন্য করবে। সেটা হবে তোমার ব্যবসায়ের বিরাট পুঁজি।
কিন্তু যদি একদিন রাস্তায় দশ হাজার রুবেলের থলি পেয়ে যাও, সেটা থানায় জমা দিয়ে সততার পরাকাষ্ঠা দেখাতে যেও না। তখন সততা নয়, ওই দশ হাজার রুবেলই হবে তোমার আসল পুঁজি।
বেলতস (আজকের ইউক্রেন – পেল অফ সেটলমেনট)
অনেক কষ্টে একটা কাজ জুটেছে ফিঙ্কেলস্টাইনের। সরকারি উকিলের সামনে বসে ফর্ম ভরতি করেছে।
উকিল: আচ্ছা আপনি নাগরিকতার কলামে ইহুদি লিখলেন কেন? ইহুদিদের তো কোন দেশ নেই।
ফিঙ্কেলস্টাইন: যথার্থ বলেছেন। কেন লিখেছি আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। দেখুন, আমার দাদা থাকে কিয়েভে- সে নিজেকে রাশিয়ান বলে পরিচয় দেয়। ছোট ভাই থাকে ইয়াসি, নিজেকে রুমানিয়ান মনে করে। এক মাসি বুদাপেস্টে – তিনি তো হাঙ্গেরিয়ান। বাবা ভিয়েনাতে কাজ করেন। তিনি অস্ট্রিয়ান। আমার মা দীর্ঘদিন ওয়ারশ বাসি, নিজেকে পোলিশ বলে পরিচয় দেন। তাই আমি ভাবলাম আমাদের গুষ্ঠির অন্তত একজনের উচিত নিজেকে ইহুদি বলে ঘোষণা করা।
আমেরিকান রাজনীতিতে সবচেয়ে বিখ্যাত ইহুদি হেনরি কিসিঙ্গার (নুরেমবেরগে জন্ম; যে কারণে আমেরিকান রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিবেচিত হতে পারেন নি) বিদেশ সচিব হয়ে প্রথমবার রোমে গেছেন। পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎকার করার আগে তিনি শুনলেন সে সপ্তাহে পোপ ক্যাথলিকদের প্রচলিত ধারার ব্যতিক্রম করে অন্য ধর্মাবলম্বী দুজন মানুষকে সন্ত আখ্যা দেবেন। ষ্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রশ্ন পাঠালেন।
কিসিঙ্গার: অন্য জনের নাম কি?
গোল্ডম্যানের মেয়েকে বিয়ে করতে আইসাক বদ্ধ পরিকর। আইসাকের আর্থিক অবস্থা অনুধাবন করে গোল্ডম্যান তাকে মিশপখের অন্তর্ভুক্ত করতে ঠিক ততটাই অরাজি।
গোল্ডম্যান: আমার মেয়েকে আর্থিক ভাবে সুনিশ্চিত করার কথা ভেবেছ?
আইসাক: আজ্ঞে হ্যাঁ। জীবন বীমা করিয়েছি। আমার যদি কোন অঘটন ঘটে আপনার মেয়ে তৎক্ষণাৎ এক লক্ষ মার্ক পাবে।
গোল্ডম্যান: সেটা খুব ভালো কথা। আর যদি তোমার কোন অঘটন না ঘটে? তাহলে?
ইলান বিয়ে করতে চায় ধনী ব্যাংকার গোল্ডবেরগের মেয়েকে। বাংলা ছবিতে বাবার ভূমিকায় কমল মিত্র বা ছবি বিশ্বাসের স্টাইলে পাইপ মুখে দিয়ে গোল্ডবেরগ জেরা করছেন।
গোল্ডবেরগ: আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও? কিসের ব্যবসা তোমার? নিজের ধন সম্পত্তি আছে?
ইলান (ক্ষুণ্ণ হয়ে): আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছি। কিনতে নয়!
মেয়ে এস্থার বেশ কিছুদিন ডেভিডের সঙ্গে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু সেটা বিয়ের দিকে এগোচ্ছে কিনা বাবা সিলবারস্টাইন বুঝতে পারছেন না।
সিলবারস্টাইন (মেয়েকে): এস্থার, বলতো কখন তুমি বুঝবে ডেভিড তোমাকে বিয়ে করতে চায়?
এস্থার: বাবা, সেটা আমি জানি। যখন কেনাকাটা করতে গেলে সে আমাকে সবচেয়ে সস্তার জামা কাপড় গয়না কিনে দেওয়া শুরু করবে, তখন।
ছেলে খুঁজছেন গোল্ডস্টাইন। কাউকেই মেয়ের পছন্দ হয় না। গোল্ডস্টাইন উত্যক্ত।
গোল্ডস্টাইন (মেয়েকে): খুঁজে পেতে এবারে একটা ভালো ছেলে যোগাড় করেছি। আমাদের পরিচিত মানুষদের, মিশপখের সূত্রে।
তোমার এত আপত্তি কীসের? এর কোন পুরনো বান্ধবীর ইতিহাস বা টাকা সরানোর কেচ্ছা নেই।
রেচেল: মানছি। তবে -
গোল্ডস্টাইন: তবে আবার কি? ছেলে কাজের। সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, সেটা দেখছ না? তার বাবা হল রাবি?
রেচেল: আমি তার বর্তমানটা দেখে ভয় পাচ্ছি। সে একটা পুরনো কাপড় কেনা বেচার দোকানে খাতা লেখে।
হ্যারশেলের সঙ্গে ব্লাটের দেখা।
হ্যারশেল: ব্লাট, পাঁচ বছর বাদে দেখা হল তোমার সঙ্গে! বলছ কি? এখনো বিয়ে করো নি?
ব্লাট: হ্যারশেল, আমার কপালটাই খারাপ।
হ্যারশেল: কেন?
ব্লাট: যখনি কাউকে ভালবেসে বিয়ে করতে গেছি, আমার মিশপখে বলে সে মেয়ের পরিবার হত দরিদ্র।
কিয়েভের ট্রেন।
ষ্টেটেলের (গ্রামে গঞ্জে পর্ব পশ্য) মানুষ বিনা টিকিটে যাত্রায় অভ্যস্ত।
টিকিট চেকার উঠেছেন। কামরা খালি দেখে সন্দেহ হল। বেঞ্চের তলায় উঁকি দিলেন। একজনের জুতো দেখা গেলো। তাকে বেরিয়ে আসতে বললেন।
টিকিট চেকার: কতদূর যাবেন?
গ্রুন: কিয়েভ, সার।
টিকিট চেকার: টিকিট দেখান।
গ্রুন: গরিব মানুষ, সার। টিকিট কাটার পয়সা কোথায়? এই নেহাত আমার মেয়ের বিয়ে, তাই যাচ্ছি।নইলে কি আর ট্রেনে উঠি?এবারের মতো ছেড়ে দিন।
টিকিট চেকার: আচ্ছা, মেয়ের বিয়েতে যখন যাচ্ছেন তখন ছেড়ে দিলাম না হয়।কিন্তু আমি অন্য বেঞ্চের তলায় আরও দুটো পা দেখছি যে?
গ্রুন: সার, ওকেও ছেড়ে দিন।উনি আমার বেয়াই।ওরই ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে সার। একই বিয়েতে যাচ্ছি আমরা দুজন।
একটা ওকালতি অফিসের নাম গোল্ডফারব গোল্ডস্টাইন ফাইনস্টাইন হতে পারে। অবশ্যই পারে। তারা তিনজন, তাদের তিনটে নাম - ঘোষ
মণ্ডল দত্ত লেখা যেমন দেখেছি কলকাতার আইনি অফিসের সাইন বোর্ডে। কিন্তু ব্লুমেন্থাল ব্লুমেন্থাল ব্লুমেন্থাল মানে কি? তিনবার একই নাম লেখা হবে কেন?
আর্সেনাল ফুটবল ক্লাবের সহমর্মী সদস্য আমার সমব্যথী জোনাথান সলোমন তখন লন্ডনের একটি বিখ্যাত আইনি সংস্থায় কাজ করে। আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে বড়ো হয়েছে। ছোট বেলায় বাড়িতে লাদিনো বলেছে। জোনাথান অতি কট্টর ধর্মানুসারী। তাকে আমাদের ব্যাঙ্কে লাঞ্চে ডাকলে সে তার আপন কোশার (ইহুদি কাশরুট মতে প্রস্তুত) খাবার একটি প্যাকেটে পুরে নিয়ে আসে। টেবিলে বসে সবার সঙ্গে খায় তার আপন খাদ্য। লাঞ্চের আগে মদ্যপান এবং অন্তে চা বা কফি পানে সবার সঙ্গে যোগ দেয়।
জোনাথানকে এই প্রশ্ন করলাম একদিন।
সে আমাকে বোঝালে ‘অয়! (কিভাবে সেই শব্দটি কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হয় তার ওপরে ইদিশে অয় শব্দের অন্তত ১৭টা অর্থ হয়। এ প্রসঙ্গে পরে আসব)। নাম এক হতে পারে। কিন্তু মানুষ গুলো আলাদা। তিনটে ব্লুমেন্থাল একটাই লোক নয়। মিশপখে। তবে তাদের স্বতন্ত্র সত্তা আছে। সেটা বোঝা দরকার! উদাহরণ দিয়ে বলি ধরো ওকালতি সংস্থার নাম গোল্ডবেরগ, গোল্ডবেরগ, গোল্ডবেরগ এবং গোল্ডবেরগ। পদবি এক হলেও এঁরা সকলেই যে আত্মীয়তা সূত্রে জড়িত, তা নয়।
আপিসে ফোন বাজছে।
- আমি কি মিস্টার গোল্ডবেরগের সঙ্গে কথা বলতে পারি?
- দুঃখিত, মিস্টার গোল্ডবেরগ এখন কোর্টে আছেন।
- তাহলে কি মিস্টার গোল্ডবেরগের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে?
- এখন তো সম্ভব হবে না। তিনি মিটিঙে আছেন।
- আচ্ছা একটু দেখুন না, মিস্টার গোল্ডবেরগকে কি পাওয়া যেতে পারে?
- তিনি বেলা দুটোর পরে আসবেন।
- তাহলে না হয় মিস্টার গোল্ডবেরগের কথা বলি?
- বলছি।
একজন ধনী ব্যাঙ্কার মারা গেছেন। শোক যাত্রায় বহু লোকের সমাবেশ। সমাধি ক্ষেত্রে কিছু মানুষ ঘন ঘন অশ্রু বর্ষণ করছেন। এমন সময় রাবি দেখলেন একজন লোক ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন কান্নায়। তাঁকে থামানো যাচ্ছে না। সান্ত্বনা দেবার জন্য রাবি এগিয়ে এলেন।
রাবি: আপনার দুঃখের ভার আমরা নিতে পারব না জানি , তবে আন্তরিক সমবেদনা জানাই। আপনি নিশ্চয় ব্যাঙ্কার গোল্ডবেরগের খুব নিকট আত্মীয়?
ক্রন্দনরত মানুষ: আজ্ঞে না। সেই কারণেই তো কাঁদছি। বাকিরা সবাই কিছু না কিছু পাবে। আমার কপালে ঢু ঢু।
মরিতস স্কুল শেষের পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। পরিবার বলে কথা। কাকা গোল্ডস্টাইন উচ্ছ্বসিত।
গোল্ডস্টাইন: মরিতস, তোমাকে এখন যদি আমি এক হাজার ক্রোনার দিই, তুমি কি করবে?
মরিতস: গুনব।
গোল্ডফারব আর তাঁর ছেলে ছোট দোভিদল ভিয়েনার সেই বিশাল স্টেফান ক্যাথেড্রালের সামনে।
দোভিদল: বাবা এটা কিসের বাড়ি?
গোল্ডফারব: একে গিরজে বলে। আমাদের মিশপখে যিশুর বাড়ি। তাঁকে গোইয়িম (ক্রিস্টিয়ান) ঈশ্বর মনে করে।
দোভিদল: বাবা, ঈশ্বর তো আকাশে থাকেন?
গোল্ডফারব: তা ঠিক। এটা ওঁর অফিস।
প্রবচন
বিবাহ মণ্ডপে বর বধুকে সঙ্গে করে এগিয়ে নিয়ে যায় দুই তরফের পিতা মাতা পরিজন।
বিবাহ বিচ্ছেদের সময় মিশপখে অদৃশ্য। বর একাই দৌড়োয় রাবি বা উকিলের অফিসের দিকে।
প্রশ্ন: ইহুদিরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছেন কেন?
উত্তর: যাতে কেউ কারো মুখো মুখি না হয়।
গোল্ডস্টাইন: শুনছি রিফকা ক্রোয়াঙ্কার সঙ্গে আমাদের বন্ধু ফ্লেকসাইফ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে?
গ্রুনব্লাট: ঠিকই শুনছ, তবে সময় লাগবে। এখনও পাঁচশ ক্রোনারের ব্যবধান আছে।
মেয়ে: বাবা, আমার মনে হচ্ছে রুবেন সম্পত্তির লোভে আমাকে বিয়ে করতে চায়।
বাবা: তা যদি হয় ঈশ্বর তাকে শাস্তি দেবেন।আমি কোন মিশপখে সেবা সমিতি খুলি নি। আমার কাছ থেকে কিছুই পাবে না।
ফল ব্যবসায়ী লেভি মেয়ের বিয়ের যৌতুকের খরচা নিয়ে ভাবনায় আছে। হবু বর আরিয়েল সরাসরি জানতে চায়।
আরিয়েল: যৌতুক কত দেবেন?
লেভি: পাঁচ হাজার রুবেল।
আরিয়েল: নগদে ?
লেভি: অর্ধেক নগদ। বাকিটা আপেলে।
জুডিথ: তুমি কি আমাকে কেবল আমার বাবার টাকার জন্যে বিয়ে করেছ?
নাফতালি: মোটেও নয়। আমার পাওনাদারদের ঠেলায়।
ফয়াররোট আর আবেনডশাইনের দেখা অনেকদিন বাদে। মিশপখের খবরা খবর চলছে।
ফয়াররোট: এতদিন কোন খোঁজ খবর নেই তোমার! আছো কেমন? তোমার বড়ো ছেলে আইজাক কি করছে?
আবেনডশাইন: আইজাকের বিরাট ডাক্তারি অফিস। সারা শহরের লোক সেখানে ভিড় করে।
ফয়াররোট: আর মেজো ? বেনি?
আবেনডশাইন: বেনি মস্ত বড়ো উকিল হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট অবধি তার আনা গোনা।
ফয়াররোট: ছোট ছেলে? ইজি?
আবেনডশাইন: আঃ, ইজি সেই ইজি রয়ে গেছে! দরজি! তবে সত্যি বলতে কি ইজি না থাকলে আমাদের কপালে খাওয়া জুটত না!
হ্যারশেল রেবেকাকে বিয়ে করতে চায়। সে গেছে রেবেকার বাবা ফিঙ্কেলস্টাইনের সঙ্গে কথা বলতে।
ফিঙ্কেলস্টাইন: হ্যারশেল তুমি ভাল ছেলে। আমার মেয়ে রেবেকার উপযুক্ত। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে। তুমি কি সংসারের প্রতিপালন করতে পারবে?
হ্যারশেল: অবশ্যই পারব।
ফিঙ্কেলস্টাইন: একটু ভেবে বলো বাবা। সব মিলিয়ে আমরা ন জন মানুষ।
এবারের প্রত্যেকটি রসিকতা অসাম! কিন্তু নীচেরটি বোধহয় আলাদা লেভেলের।
"একটা জিনিস বুঝতে পারছি না রিফকা।। মারা যাচ্ছে কে? তুমি না আমি"?
লেখা শেষ হলে একটি বই হিসেবে প্রকাশ করার দাবি আবার পেশ করলাম। যেমন ভাষার মাধুর্য, তেমনি ক্র্যাফট।
ওটা তো দারুন ছিলই। আমার কপালে ঢুঁ ঢুঁ আর পাওনাদারের ঠেলায় এই দুটোও দারুন লেগেছে।
মিশপাখে র ব্যাপারে জানলাম। খুব ভালো লাগল।
সত্যিই বই হওয়া উচিত।
আচ্ছা ইসরায়েলের জাতীয় পতাকা র অরিজিন সম্মন্ধে একটু বলবেন সময় পেলে। খুবই জানার ইচ্ছে আছে , দেশের লোকের মুখ থেকে।
সত্যিই, তুলনা হয় না ! সবগুলোই খুব মজার। পুঁজি আর পরিশ্রমের তফাৎ টা অনবদ্য। সবদেশে, সবকালে, সবযুগে মিশপখের বৈশিষ্ট্য যেন একইরকম। কারণ মনে হয় উপাদানগত, সেটা যে মনুষ্যপ্রজাতির সমাহার! গুষ্ঠির তুষ্টি মিশপখেতেও তাই সমানভাবে বিদ্যমান। অনবদ্য লেখনী। মন ভরে গেল।
গুষ্টির গপ্প নয় যদিও তবু জিউদের সঙ্গে সম্পর্কিত রসিকতা -- তাই কয়লার দরের কাহিনী শুনে দিতে মঞ্চাইলো।
<
জোকটি <al-ghorba.com> সাইট থেকে কপি পেস্ট করা হলো।
@:|: জোক টা দারুন ছিল।
@ হীরেন সিংহরায় প্রচ্ছদ চিত্র নিয়ে এত বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় আমি লেখাটির সাথে মানানসই একটি প্রচ্ছদ চিত্র বানিয়েছি। যদি ইচ্ছা হয় ব্যবহার করতে পারেন।
অবশ্যই গুরু কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে।
বাহ, ক্যালিগ্রাফিটা বেশ।
নীচের লেখাটা কী?
ইহুদি রসিকতা হিব্রু ভাষায়
রমিত বাবু
ইজরায়েলি পতাকার মাঝখানে আছে মাগেন দাভিদ / দাভিদের বর্ম - যেটাকে আমরা স্টার অফ ডেভিড বলে জানি । যুদ্ধক্ষেত্রে রাজা দাভিদের বর্মে এটি নাকি আঁকা থাকতো। প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই ! আমার মতে এই ছয় কোণা তারকাকে ইহুদি আবিষ্কার বলা শক্ত কারণ আমাদের দেশে এবং অন্যত্র এটি দেখা গেছে । একাদশ শতাব্দীতে একটি ইহুদি প্রার্থনা পুস্তকে প্রথম দেখা যায় এই তারকাটিকে। সদ্যজাত যিশুর তল্লাশে পূব দেশ থেকে তিন জ্ঞানী ব্যক্তি বেথলেহেম এলেন তাঁরা যে তারকাকে অনুসরণ করেছেন সেটি নাকি রাজা দাভিদের তারকা !
ইহুদি প্রার্থনায় যে শাল টি ( ইদিশে তালিত ) পুরুষেরা ব্যবহার করেন তার জমিটি সাদা কিনারা নীল। আরেক রকমের শালে শাদা কালো আছে। সাদা পবিত্রতা নীল আকাশের প্রতীক। জাইনিওজিম জেগে ওঠের উনবিংশ শতাব্দীতে । কিছু মান্য গণ্য ইহুদি তখন প্রথমবার একটি পতাকার কথা ভাবলেন। ১৮৪৫ সালে জার্মানিতে এই পতাকার প্রথম খসড়া দেখা যায় ইজরায়েল তখন এক দূরতর দ্বীপ মাত্র ! ক্রমশ এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নাৎসিরা এ পতাকার ব্যবহার অনুমোদন করে বেরগেন বেলসেন , আউশউইতসে এটি দেখা গেছে।
ইহুদি রসিকতার অলঙ্করণে মেনোরাকে আনবার প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি ধর্মীয় প্রতীক। বাজে গপ্পোর আড্ডায় একে নিয়ে টানাটানি না করাই বোধহয় ভালো।
পতাকার সম্মন্ধে জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। এটা আমার বেশ আগ্রহের বিষয়।
মেনোরা কে না আনার হুকুম শিরোধার্য। সাধারণত কোন কোন প্র তী ক লঘু আড্ডায় চলতে পারে ? স্টেরিও টাইপের ভয়ে টুপি পড়া ইহুদি মুখ আনতে চাই ছিলাম না।
ডেভিডের তারা চলতে পারে কি ?
আরেকটা এইটা বানিয়েছিলাম। এটাও দেখতে পারেন
ধন্যবাদ । গুরুচণ্ডালীর সম্পাদক মন্ডলী সিদ্ধান্ত নেবেন আশা করছি।
"সাধারণত কোন কোন প্র তী ক লঘু আড্ডায় চলতে পারে "
কেন? একটা ফেইনম্যান, আর একটা আইনস্টাইনের মুখ নিন। দুজনেই হো হো করে হাসছেন। (এও স্টিরিওটাইপ, কিন্তু মোগাম্বো শুদ্ধু সবাই খুশ হবেন )। উডি অ্যালেন বলতাম কিন্তু ভদ্রলোক কেস খেয়ে গেছেন।
ই কি, কমেন্ট দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেছে।
এবরে ঠিক হোলো
হীরেন বাবু , ভীষণ ভালো কাজ করছেন | আপনার ইহুদি জোকস আসলে একটি বই হিসেবে প্রকাশিত হবার উপযুক্ত | আমার অন্তর্জাল ঘেঁটে দুটি ইহুদি জোকস খুঁজে পেয়েছি | কেমন লাগলো জানাবেন |
জোকস ১ : (এটিতে আবার হেনরি kissinger আছেন )
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ের ইস্রায়েল -আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে তৎকালীন আমরিকী সেক্রেটারি অফ স্টেট হেনরি কিসিংয়ের কে ইসরায়েলকে তার পদের ব্যবহার করে আরো সুযোগসুবিধা দেবার জন্য একটি চিঠি লেখেন | হেনরি তার উত্তর দিয়ে একটি চিঠি লেখেন যেখানে তিনি বলেন , "আমি প্রথমে একজন মানুষ , তারপরে একজন আমেরিকান এবং সবশেষে একজন ইহুদি "| গোল্ডা মেয়ের উত্তর দিলেন , "ইসরায়েলে আমরা সবসময়ে ডানদিক থেকে বামদিকে পড়ি |"
জোকস ২ : (এটি একটি গোয়িম সংক্রান্ত রসিকতা )
তিনজন ইহুদি যারা সদ্য খৃষ্টান হয়েছেন একটি বারে বসে গল্প করছিলেন |
ইহুদি ১ : আমি খ্রীষ্টান হয়েছি কেননা না হলে আমার পাড়ার ব্যাংকার টার মেয়েটাকে পটিয়ে বিয়ে করতে পারতাম না |
ইহুদি ২ : আমি খ্রীষ্টান হয়েছি কেননা না হলে এই সরকারি পদটা বাগাতে পারতামনা |
ইহুদি ৩ : আমি খ্রীষ্টান হয়েছি কেননা আমি মনে করি যে সত্যিসত্যি খৃষ্টধর্ম আমাদের ইহুদি ধর্মের থেকে উৎকৃষ্ট |
ইহুদি ১ ও ২ : হতচ্ছাড়া বেরিয়ে যা আমাদের টেবিল থেকে তুই কি ভেবেছিস যে আমরা সত্যিসত্যি তোর মতো মাথামোটা গোয়িম নাকি ?
এই জোকস দুটি কেমন লাগলো জানাবেন | একটি প্রশ্ন আছে | আপনার একটি জোকসে ইহুদি নরক প্রসংজ্ঞ এসেছে | আচ্ছা ইহুদিদের মধ্যে কি সত্যিসত্যি কোন স্বর্গ - নরক, কেয়ামত , জাজমেন্ট ডে এইসব বিশ্বাস আছে নাকি এইগুলি সব খ্রীষ্টান ও ইসলাম ধর্মের কনসেপ্ট ?
আপনার উত্তরের প্রতীক্ষায় রইলাম |
হীরেন বাবু , ভীষণ ভালো কাজ করছেন | আপনার ইহুদি জোকস আসলে একটি বই হিসেবে প্রকাশিত হবার উপযুক্ত | আমার অন্তর্জাল ঘেঁটে দুটি ইহুদি জোকস খুঁজে পেয়েছি | কেমন লাগলো জানাবেন |
জোকস ১ : (এটিতে আবার হেনরি kissinger আছেন )
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ের ইস্রায়েল -আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে তৎকালীন আমরিকী সেক্রেটারি অফ স্টেট হেনরি কিসিংয়ের কে ইসরায়েলকে তার পদের ব্যবহার করে আরো সুযোগসুবিধা দেবার জন্য একটি চিঠি লেখেন | হেনরি তার উত্তর দিয়ে একটি চিঠি লেখেন যেখানে তিনি বলেন , "আমি প্রথমে একজন মানুষ , তারপরে একজন আমেরিকান এবং সবশেষে একজন ইহুদি "| গোল্ডা মেয়ের উত্তর দিলেন , "ইসরায়েলে আমরা সবসময়ে ডানদিক থেকে বামদিকে পড়ি |"
জোকস ২ : (এটি একটি গোয়িম সংক্রান্ত রসিকতা )
তিনজন ইহুদি যারা সদ্য খৃষ্টান হয়েছেন একটি বারে বসে গল্প করছিলেন |
ইহুদি ১ : আমি খ্রীষ্টান হয়েছি কেননা না হলে আমার পাড়ার ব্যাংকার টার মেয়েটাকে পটিয়ে বিয়ে করতে পারতাম না |
ইহুদি ২ : আমি খ্রীষ্টান হয়েছি কেননা না হলে এই সরকারি পদটা বাগাতে পারতামনা |
ইহুদি ৩ : আমি খ্রীষ্টান হয়েছি কেননা আমি মনে করি যে সত্যিসত্যি খৃষ্টধর্ম আমাদের ইহুদি ধর্মের থেকে উৎকৃষ্ট |
ইহুদি ১ ও ২ : হতচ্ছাড়া বেরিয়ে যা আমাদের টেবিল থেকে তুই কি ভেবেছিস যে আমরা সত্যিসত্যি তোর মতো মাথামোটা গোয়িম নাকি ?
এই জোকস দুটি কেমন লাগলো জানাবেন | একটি প্রশ্ন আছে | আপনার একটি জোকসে ইহুদি নরক প্রসংজ্ঞ এসেছে | আচ্ছা ইহুদিদের মধ্যে কি সত্যিসত্যি কোন স্বর্গ - নরক, কেয়ামত , জাজমেন্ট ডে এইসব বিশ্বাস আছে নাকি এইগুলি সব খ্রীষ্টান ও ইসলাম ধর্মের কনসেপ্ট ?
আপনার উত্তরের প্রতীক্ষায় রইলাম |
শ্রী গুরু
অনেক ধন্যবাদ । এখনো অনেক পর্ব বাকি । শেষ হোক তারপর বই হবে আসা করছি ।
আপনার উল্লিখিত প্রথম জোকটি খুবই ভালো - এটিকে নানান ভার্শনে দেখেছি ! হিব্রু ডান দিক থেকে বাঁ দিকে লেখা হয় বলে এই নিয়ে মজার সুযোগ অনেক। ধরমান্তরনের ওপরে প্রচুর রসিকতা আছে আপনি যেমন উদাহরণটি দিয়েছেন আমি শুধু এই বিষয়টি নিয়ে একটি পর্ব লিখব স্থির করেছি । হাইনরিখ হাইনের বিখ্যাত উক্তি - ধরমান্তরন হল সভ্যতার পাসপোর্ট এই কথাটিকে মনে রেখে ! মনে রাখতে হবেচাকরি শুধু নয়, বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ার অধিকারও সীমিত হতো ইহুদিদের জন্য যেমন ব্রেসলাউ ( আজকের ভ্রতস্লাভ ) বিশ্ব বিদ্যালয়ে একশোর বেশি ইহুদির অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ ছিল প্রাশিয়ান ও জার্মান আমলে -অথচ ডজন খানেক নোবেল প্রাইজ পান তাঁরা যেমন মাক্স বর্ণ। লিখব শিগগির।
আব্রাহামপন্থী তিনটি ধর্মে স্বর্গ নরক শেষ বিচারের সংজ্ঞা একই । তফাত শুধু বিস্তৃত বর্ণনায় ।