এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  খবর্নয়

  • তাকসিম স্কোয়্যার থেকে

    শিল্পী সুনেজা লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | খবর্নয় | ১৮ জুন ২০১৩ | ৬৮৮ বার পঠিত
  • আমার বন্ধু বলল, “যখনই সরকার বুঝবে ঐ পেপার স্প্রে দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না, দেখিস তখন “সাইলেন্ট গার্ড” কিনবে বিদেশ থেকে।” তাকসিম স্কোয়ার থেকে চুখুরিয়েম কাদেসিতে বন্ধুর বাড়ীর দিকে দিকে তখন রওনা হয়ে গেছি। মাইলখানেক দূরেও বেশ টের পাওয়া যায় মরিচের ঝাঁঝালো গন্ধ। চোখ ,নাক, গলায় একটা জ্বলুনি ভাব। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলো তাকসিম স্কোয়ারে নিয়মিত এই মরিচের স্প্রে চালানো হয়েছে, আমার বন্ধু বেচারা মরিচের ঝাঁঝ ছাড়া নিঃশ্বাস নিতেই ভুলে গেছে। আর তার এটাও মনে নেই কোন ম্যাজিকে হাজারে হাজরে লোক জমায়েৎ হয়েছিল গেজি পার্ক আর তাকসিম স্কোয়ারে। “সামান্য কয়েকটা গাছে”র বদলে পার্কের ভিতরে শপিং মল বানানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কীভাবে একটি একনায়কের শাসনের বিরুদ্ধে সারা দেশের প্রতিবাদ হয়ে উঠল সেটাও আশ্চর্যের। প্রধানমন্ত্রী তায়িপ এর্দোগানের হিংস্র পুলিসের অত্যাচারের মুখোমুখি হয়ে ঐ আন্দোলন ছাড়িয়ে গেল দেশের সর্বত্র।

    আমরা থাকতাম তাকসিমের কাছে খুর্তুলুশে। এক মধ্যবিত্ত পাড়ায়।  এক রাতের পাড়ার সব লোকেই জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বাড়ির বাসনপত্র পিটিয়ে আওয়াজ করে আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিল। তার আগের রাতেই তাকসিম স্কোয়ারে হাজারে হাজারে তরুণ জমায়েত হয়েছিল। জাতীয় পতাকা ছিল তাদের হাতে, কারুর পরণে ছিলো দেশের জনক আতাতুর্কের ছবি দেওয়া টি শার্ট। কোথাও তরুণ তরুণীরা অপশাসনের বিরুদ্ধে লেখা নতুন স্মারক সংগীতের বাজিয়ে নেচেছিল। পরে আমি ইস্তিকার এভেনিউতে সামিল একটা মিছিলে যোগ দিই। এই সেই রাজপথ যেখানে লক্ষ লক্ষ পর্যটক বেড়াতে আসেন প্রতি বছর। সে রাতে দোকানগুলি সবই বন্ধ ছিল, কিন্তু বার ও রেস্তোরাঁগুলি জমজমাট খোলা ছিল। ভিড়ে ভিড়াক্কার সে সব জায়গায় লোকে বীয়ার আর মাস্সেল খেতে খেতে আন্দোলন নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছিল। বয়স্ক মহিলারা জাতীয় পতাকাকে চাদরের মতন জড়িয়ে বসে ধূমপান করছিলেন।

    ঐ গাজি পার্ক দিয়েই হেঁটে গেছিলাম এর কয়দিন পরে। তখনো ওখানে অনেক মানুষ। তাঁবু খাটিয়ে প্রতিবাদীরা বসে আছে গিটার হাতে। মনে হচ্ছিল একটা ছোটোখাটো গ্রামের মধ্যে বসে আছি, আছে একটা লাইব্রেরি, একটা ফার্স্ট এইডের তাঁবু, গান ও নাচের জন্য তৈরি একটা মঞ্চ। চা আর কাবাবের অনেক দোকান। প্রচুর বিক্রি হচ্ছে পতাকা ও মুখোস। যদিও প্রতিবাদীরা কোনো রাজনৈতিক দলের ছাপ্পায় ছিলেন না তবু অনেক প্রতিষ্ঠান আর ইউনিয়ন ঐ আন্দোলনে সামিল ছিলেন ও সমর্থনে মিছিল করেছিলেন। ইস্তানবুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক আর সরকারি কর্মচারিদের ভিন্ন ভিন্ন ১১টা ইউনিয়ন আমাদের সমর্থনে দু দিনের হরতাল ডাকেন। আর ৫ জুন, গেজিপার্কের দখলকারীদের সমর্থনে আড়াই লক্ষ মানুষ জমায়েত হন তাকসিম স্কোয়ারে। একবার দেখলাম বোরখায় আবৃত কয়েকজন এসে আন্দোলনকারীদের ছবি তুলে চলে গেলেন।

    তবুও, এতো ভিড় সত্বে কও, যতদিন না নিম্নবিত্ত মানুষেরাও এই আন্দোলনে সামিল হন ততোদিন পর্যন্ত  অভিজ্ঞ মানুষেরা কিন্তু এটাকে “টার্কীর বসন্ত” বলে ভাবছিলেন না। তাঁরা বলছিলেন, যতদিন না খেটে খাওয়া মানুষ ও বোরখা পরা মহিলারা যোগদান না করছেন ততদিন এটি যথার্থ বিপ্লব হয়ে উঠবে না। একজন বহিরাগত হিসেবে,তুর্কীর এই প্রাচ্য/পাশ্চাত্য তফাৎটা আমায় খুব ভাবাত। ওরহান পামুকের লেখার বাইরে খুব কিছু পড়ি নি, আর সেই লেখা পড়ে জেনেছিলাম ইস্তানবুলের মুল ভাবাবেগের ধারা হচ্ছে অটোমান অতীতের বিষাদময়তা থেকে ইওরোপীয়ান পরিচয়ের জন্য এক আত্মঘাতী আকুতি।

    বেশ একটা, যাকে বলে এশিয়ান হাব্ভাব কিন্তু ইস্তানবুলে ভালই নজরে পরে, যেমন ছোটো খাটো পাড়াগুলিতে দেখতে পাবেন দোকানের অল্পবয়স্ক কর্মীরা তাদের মালিকদের জন্য লাঞ্চ, মানে ঐ ট্রে’র উপর স্টিলের বাটি, এইসব নিয়ে চলছে, যেমনটা দেখতে পাবেন ভারতেও। আবার ভারতের মতনই রাস্তার হকারেরা সুর করে তাদের পণ্য বেচছে, নিজস্ব স্থানীয় ভাষায়।  দুপুরের আজান শোনা গেলে মাথায় চাদর দেওয়া মহিলারা আর দাড়িওলা পুরুষেরা মসজিদে যাচ্ছেন, বাকিরা স্বাভাবিক ভাবেই তাদের নিজের নিজের কাজ বা কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছেন। টের পাওয়া যায় একই সাথে ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্ম উদাসীনতা পাশাপাশি চলছে। ভারতেও এরকম ভাবে ধর্ম বিশ্বাস ও সেকুলার বা লোকায়ত ব্যবহার একইসাথে টিঁকে থাকে কিন্তু ভারতের সাথে ইস্তানবুলের ফারাকটা হচ্ছে যে এখানে একাধিক ধর্ম বা ভাষা বা সামাজিক জীবন অনেক বেশি সুশৃঙ্খল। তার একটা কারণ বোধ হয় টার্কীতে শুধু ভিন্ন ধর্মই নয়, নিজের ইসলামি ঐতিহ্যের সাথেও একটা বোঝাপড়ার ব্যাপার ছিল। আতাতুর্ক একটা নতুন ধরনের ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, যে ইসলাম অনেক বেশি ব্যক্তিগত, নিজস্ব আর যুক্তিনির্ভর। উনি এমন কি ফেজ টুপিও নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন (যদিও তিনি নিজে কিন্তু ফেজ টুপি পরেই ছবি তুলেছেন)। ৬০ সালে নিষিদ্ধ হয়ে যায় মহিলাদের মাথর চাদরও। আমার বন্ধুর পরিবারও এই দারুন সেকুলার নিষিদ্ধকরণের আওতার বাইরে ছিল না। ওদের এক ঠাকুর্দা, যিনি কুর্দিশ ছিলেন তাকে দশটা মাত্র তুর্কী পদবি দিয়ে বলা হয়েছিল ওর মধ্যে থেকেই একটা পদবি বেছে নিতে হবে। অর্থাৎ কুর্দীশ পদবি রাখার অধিকার তাঁর ছিল না।  অনেক বছর পরে আমার বন্ধুটি সভয়ে বুঝতে পারে তার ঠাকুর্দা তুর্কী নয়, সম্পুর্ণ অন্য একটি ভাষাভাষি ছিলেন। তাঁকে যখন আমার ভারতে এক মুসলিম বন্ধুর জন্য আমার কেনা একটা দেওয়াল পট দেখালাম, তিনি কিন্তু আল্লাহের আরবিক অক্ষরে লেখা নামটি পড়তে পারলেন না। “এই লিপি আমি পড়তে পারি না” – তিনি আমায় বল্লেন – “কেউ শেখায় নি আমায়।”

    আর ইস্তানবুলের এশীয় দিকটায় গেলে কাফে আর কেক পেস্ট্রির দোকান অনেক কম দেখা যায়। সিনান মসজিদ খুঁজতে গিয়ে ঘোরাঘুরি করার সময় মাথার চাদর পরা মহিলা হাতে রুটি নিয়ে যাচ্ছেন, এরকমটা অনেক দেখলাম। রাস্তাগুলিও, এশীয় ঐতিহ্য মেনে যেন একেকটি গোলকধাঁধা। যা হোক, খুঁজে পেতে মসজিদে ঢুকে সেটির চত্বরে জমায়েত মানুষেরা দেখলাম আমাকে নিয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়েছেন। “আপনি মুসলমান?” একজন জিজ্ঞেস করলেন। আমি বলি “না”, আমার গাইডবুক দেখাই তাঁকে, “ট্যুরিস্ট”। উনি খুশি হয়ে আমাকে নিয়ে গেলন আতর্দানীর কাছে, কী ভাবে সেটার ব্যবহার করতে হয় সেটা শিখিয়ে আমায় পাঁচ আঙুলের ইঙ্গিত করলেন। আমিও চট করে পকেট থেকে পাঁচ লিরার নোট বার করে দিলাম ওনাকে। এইটাই ভালো। সিনান মসজিদের অপুর্ব স্থাপত্য নিয়ে আলোচনা বা বসফরাসের কূলে তাকসিম স্কোয়ারের প্রতিবাদসভা নিয়ে বিতর্ক –  এই সবই অপ্রয়োজনীয়। বাণিজ্য করা, স্রেফ লেনদেন, এই ব্যাপারে বিশদ কথাবার্তা সবথেকে কম জরুরি।

    আমি অবশ্য ইওরোপিয়ান দিকটাতেই ফিরে আসতে ছটফট করছিলাম। এক তো ওদিকটায় একটু বেশি সংখ্যক লোকে ইংরেজিতে কথা বলে আর দুই নম্বর কারণ আমার গাইডবুকে খুব বিস্তারিত ভাবে ওখানকার রাস্তাঘাটে হদিশ ও ফোটোগ্রাফ দেওয়া আছে।  ডলারে সওদা করবার জন্য বইটায় খবর প্রচুর – যেমন ধরুন গ্র্যান্ড বাজার আর স্পাইস বাজার নিয়ে দুটো গোটা পাতা আছে, তা ছাড়াও চার পাতা জুড়ে রয়েছে আর কোথায় কী কী সওদা করা যায় তার ফিরিস্তি। কিন্তু ইওরোপিয় প্রান্তে গেলে আমি এশীয় মনোভাবটা যেন আরো ভালো করে টের পচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো এশীয় হাবভাব, এটা যেন কতকগুলো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেই বেশি চোখে পড়ে, বাজারে ও মসজিদেও। সারা দুনিয়ার মতন এখানেও ইওরোপীয়ানদের মতন অবাক হাঁ করে পথে ঘাটে চলে না মানুষ, বা রাস্তায় হ্যাক করে পানের পিক ফেলে না কেউ। তাওও আমি যা কিনতে চাইছিলাম আর আমাকে সেরকম বলাও হল, যে সব কেনাকাটাই যেন আমি এশীয় প্রান্ত থেকেই কিনি। পশমিনা শাল, সুলেইমানের পাঞ্জা, ইজনিক টাইএর আদল, অলংকৃত আয়না, দরবীশের ছাপওয়ালা চুম্বক, এইসব। এশীয় স্বকীয়তা অনুপস্থিত নয়, কিন্তু সেগুলি এখন পণ্য হয়ে গেছে। এই একমাত্র ভাবেই বোধহয় ইওরোপ এশিয়াকে বশ করতে পারত – এশিয়াকে পণ্যপ্রতিমা বানিয়ে। এ ভাবেই এশিয়াকে একটু ঠেলে সরিয়ে রেখেই ইওরোপ পারবে তার মুনাফা ও আধিপত্য বজায় রাখতে।

    এবং এই ভাবেই, এর্দোগানও জনতাকে বিভ্রান্ত করে দুই ভাগে রেখে দিয়েছেন। তিনি আন্দোলনকারীদের বলছেন “সাদা তুর্কী” আর নিজেকে উনি জাহির করেন “কালো তুর্কী” বলে। এই বিভেদনীতি খাটিয়ে এই আন্দোলন থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছেন টার্কির অর্ধেক মানুষকে।

    এই বিভেদনীতিই এখনকার রাজ্য নীতি? নাকি অটোমানদের সময় থেকেই এইরকম কিছু চালু ছিল? ধরুন, হাঘিয়া সোফিয়ার কথাই। ৫৩৭ সালে এটি তৈরী হয়েছিলো একটি চার্চ হিসেবে আর তারপর পঞ্চদশ শতাব্দীতে এটাকে বদলে মসজিদ বানানো হল। এর চিহ্নগুলোও বেশ চোখে পড়ে। যেমন ইসলামিক প্রতীকগুলি বোঝাই যায় পরে আটকে দেওয়া হয়েছিল। মিনার একটু তেরচা ভাবে খাড়া আছে। কাঠের তৈরি চাকতি যেগুলিতে আল্লাহ আর মহম্মদ লেখা আছে সেগুলি খ্রীষ্টের নামাংকিত মোজাইকের নিচেই ঝুলছে। মসজিদে এটিকে বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো বিজয়ী সুলতানের আমলে। ১৯৩৫ সালে আতাতুর্ক এটিকে একটি ধর্মহীন যাদুঘরে পরিবর্তন করেন। এটাও আরেকটি সেই ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত।

    একবার ভাবলাম এরকম ভাবে বাররি মসজিদ আর রামজন্মভূমিকেও কি প্রত্নশালা করে রেখে দেওয়া যেত? মুশকিলের ব্যাপার ছিল যে হাঘিয়া সোফিয়ার মতন বাবরি মসজিদের তেমন কোনো স্থাপত্যের কৃতিত্ব নেই। এটিকে যাদুঘর বানানো তাই কষ্টকল্পিত ব্যাপার হত। তাও প্রশ্নটা থেকেই যায়, এক গণতান্ত্রিক দেশে এরকম বিতর্কিত ও একাধিক ভাগীদারের স্থান নিয়ে কী করা যেতে পারে? পুঁজিবাদীরা তো চটজলদি ওখানে শপিং মল বানিয়ে তুলবেন আর অসামান্য স্থাপত্য হলে সেটিকে সংরক্ষিত একটা মিউজিয়াম করে রাখা হবে। কিন্তু ধরুন, এমন একটা জায়গা যেটির স্থানমাহাত্ম্য শুধু সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্যই? যেমন ২০১৩ সালের মে মাসের তাকসিম স্কোয়ার?  তাকসিমের একটা অনন্য ব্যাপার হছে এটা ঐ ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া আইন বা কোর্টের হুকুম বা পুঁজিপতিদের পথ পরিষ্কার করার বিরুদ্ধে একটা অবস্থান।

    তবুও জানতে ইচ্ছে করে, কেন খেটে খাওয়া মানুষেরা এই তাকসিম স্কোয়ারের আন্দোলনে জড়িয়ে নেই। প্রথমতঃ আন্দোলন কিন্তু চলছে সারা টার্কি জুড়েই, এবং তার অনেকগুলিই শ্রমজীবিদের নিজস্ব। তাকসিম স্কোয়ার সেই পুরো আন্দোলনের মুখ মাত্র। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর অপপ্রচার যে এই আন্দোলনকারীরা আসলে একদল গুণ্ডামাত্র, এতেও অনেক শ্রমজীবি মানুষ দূরে রয়ে যাচ্ছেন।
    এক বুধবার, সেটি ছিল সব-এ-মেরাজ (এই দিনে নবী স্বর্গে গিয়ে ঈশ্বরের নির্দেশ নিয়ে আসেন)। তো যে রেস্টুরেন্টে আমি খাচ্ছিলাম তারা আমায় মদ দিতে অস্বীকার করে। আমি সেই ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করি ঐ তকসিম স্কোয়ারের আন্দোলন নিয়ে তার মতামত কী? সে উত্তর দেয় যে রাজনীতিতে তার কোনো উৎসাহ নেই। তবে ইস্তিকাল কাদেসীর এক কিউরিও দোকানের এক কর্মচারি আরো খোলামেলা ছিল, তার মতে এই আন্দোলনকারীরা নেহাতই বেকার কিছু অল্পবয়স্ক ছেলেপিলেদের সময় কাটানো।

    ঐ কিওরিও দোকানের কর্মচারির কথা আমার বন্ধুকে বলতে সে বললঃ “হ্যাঁ, সরকারি প্রচার বেশ ভালই কাজ করছে।” কিছুদিন আগেই সে পড়েছে একটা মসজিদের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় সেই মসজিদের ইমাম পুলিশের হাতে আহতদের চিকিৎসার জন্য মসজিদে আসতে অনুমতি দেন। প্রথমে যারা ঢুকেছিলেন সেই মসজিদে, তারা চিকিৎসার জন্যই এক আন্দোলনকারী পুরুষের শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন,আর সেই সময়ে তাদের ছবি তোলে কেউ। পরে সেই ছবিসহ সংবাদ বের হয় যে, আন্দোলনকারীরা নাকি গ্রুপ সেক্সের জন্যই মসজিদে ঢুকেছিল। সরকারি নিয়ন্ত্রণের মিডিয়া এই আন্দোলনকারীদের একটা হাঙ্গামাকারীদের দঙ্গল হিসেবেই দেখায়।

    তাকসিম, তুর্কী ও উর্দু ভাষায়, এর অর্থ বিভাগ; কিন্তু অদ্ভুত হল যে, এটা আসলে এক ঐক্যরই স্থান। এই আন্দোলন সবাইকে একজোট করে দেখাতে চাইছে যে সরকারই আসলে হিংসাশ্রয়ী ও অগণতান্ত্রিক। বাহ্যত এই প্রতিবাদ হচ্ছে এই জায়গাটিকে যেন এক শপিং মলের জন্য বেচে না দেওয়া হয় তার জন্য, কিন্তু এই বুলডোজারদের আটকিয়ে ঐখানে তাঁবু গেঁড়ে বসে আছেন যারা তাদের মুল আপত্তি পুঁজিবাদী মুনাফাবৃত্তিতে। এটা কাদের শহর তাহলে? সুলতানের? সরকারের? না কি আম জনতার?

    এই সুলতানদের অথবা সরকারে বিজয় অভিযান, নতুন করে গড়ে তোলা ইত্যাদি এখন ইতিহাসের বিষয়। কিন্তু যেসব মানুষেরা এইসব নবীকরণ বা পুনর্গঠনের চারিদিক ঘিরে রয়েছেন তাদের প্রাত্যহিক জীবন কিন্তু অলিখিতই থেকে যায়। মানুষ না থাকলে কীভাবে তার স্মৃতি থাকবে? তারা এই পার্কটিকে আগলে আছেন, কেন না এখানেই তাঁরা বাচ্চা অবস্থায় খেলেছেন, তরুণ অবস্থায় প্রতিবাদ করেছেন। আমরা বাস করি এখন এক ডিজিটাল যুগে। আমাদের স্মৃতির সাথে কোথায় আর যোগ রয়েছে সত্যিকারের এক প্রাকৃতিক স্থনের? এই দুনিয়া তো আই ফোনের ১.৫x২ এর দ্বিমাত্রিক স্ক্রীনের মধ্যেই আটকে নেই। এ তো সেই দুনিয়া যা বিস্তৃত, কোনো সুযোগের বন্দোবস্ত নেই এখানে, যা ফিরিয়ে দেয় না কিছুই আর প্রতিরোধ করে তোলে সর্বগ্রাসী লোভ আর মুনাফাবাজীকে।

    অনুবাদঃ দীপ্তেন


    তাকসিম স্কোয়্যারের প্রতিবাদের কিছু ছবিঃ


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ১৮ জুন ২০১৩ | ৬৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন