খেয়ালি কৌতুকে কখনও একবার ফেসবুকের পাতায় লিখেছিলাম পাঁচালি ঢঙের ছন্দে একটি প্রায়-ছড়া—
বংশীয় মাচা-সম উচ্চ সিংহাসন,
সেথায় স্বদেশব্রতে জাগে নরাধম!
হাঁকে—‘আয়, আয়...
কে কে যাইবি তোরা
গড্ডলিকায়...?’
অপার মহিমা তব,
টানি অসাড় হৃদয়
ভেড়াসম মানুষেরে লেঙ্গি দিয়া কয়—
‘আসিও আমার দ্বারে, দিবো থালি থালি,
অন্নে ভস্ম মাখি, প্রতিশ্রুতি জালি।
বৎসর পঞ্চম শেষে দিবো চমৎকার,
ভোটযুদ্ধ রমণীয়, ফিরিবো আবার...।’
গণতন্ত্রে মুক্তিমন্ত্র নেতার বচন
শ্রবণে বেবাক তাহারা, যাহারা জনগণ!
নিজেই ভুলেছিলাম অনেকদিন আগের সেই পোস্ট। তবে, মুক্তির প্রায় বছর তিনেক বাদে হলেও, বাড়িতে ডিভিডি ডিস্কে ‘নিউটন’ নামে একটি হিন্দি ছবি দেখে কাহিনী পারম্পর্যের অনুষঙ্গে ঐ ‘প্রায়-ছড়া’ পদবাচ্য নিজের খামখেয়ালি সৃজনটি নিজের কাছেই নতুন করে ফিরে এলো। নিজের ভেতরেই অতঃপর একটা সমস্যাও তৈরি হয়ে গেল। ‘স্বদেশব্রতে জাগে নরাধম’ শব্দবন্ধের ব্যবহারে নিশ্চিতই তখন লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের চালিকাশক্তিতে আসীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ ভোট বা জনাদেশ কৃপাপ্রার্থী নেতৃবৃন্দকেই বিদ্ধ করা। প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে ‘গণতন্ত্র’-র সমার্থক ‘নির্বাচন’ শব্দটির ব্যঙ্গার্থক উপস্থাপনাই হয়তো আমাকে প্রণোদিত করেছিল এ-ছড়ার সামগ্রিক ব্যঞ্জনায়। প্রায় বছর দু’য়েকের ব্যবধানে অমিত মাসুরকার পরিচালিত ব্ল্যাক কমেডি ‘নিউটন’ তার চলচ্চিত্রীয় ভাঁজেবিভাঁজে নাড়া দিয়ে গেল ভিন্ন আঙ্গিকে, যেখানে মাচামঞ্চের উচ্চকিত নিনাদের পাশাপাশি ‘স্বদেশব্রত’-র বিস্তৃততর মাত্রার পরিধিতে বাধ্যতই ঢুকে গেলাম আমিও, বা, বলা ভালো, ঢুকিয়ে নিলাম আমার মতো আরো অসংখ্য শিক্ষক-সরকারি কর্মচারীবৃন্দকে। ‘বাধ্যত’ দু’তরফেই, তবে ‘তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়’—এক মেরুতে ‘মহান’ ব্রতপালনের আস্ফালন, অন্য মেরুর প্রান্তে ছাপোষা কেরানি-জীবনে ‘শো-কজ’ জুজু-র নখদন্ত এড়াতে গতানুগতিক দশটা-পাঁচটার নিস্তরঙ্গ দৈনন্দিনকে সর্বময় অনিশ্চয়তায় বাজি রেখে অনন্যোপায় ‘ভেড়াসম’ দাসানুদাসের মতো দিন দু’য়েকের ঝাঁপিয়ে পড়া! তাই ‘ভোটযুদ্ধ রমণীয়’ বাস্তবিকই ঐ দু-তরফেই—রমণীয় অর্থে প্রীতিকর কোথাও পার্টিসর্বস্ব স্বার্থ-চরিতার্থের সর্বাধিক লাভদায়ক মাধ্যম হিসাবে, কোথাও আবার ‘যুদ্ধ’-অন্তে সরকার-নির্ধারিত দায়িত্বের সুচারু সম্পাদনা শেষে গতানুগতিক জীবনবৃত্তে প্রত্যাবর্তনে রমণীয় মুক্তির ক্ষণিক নিঃশ্বাসে!
আলোচ্য ‘নিউটন’-এর নাম ভূমিকায় রাজকুমার রাও ‘এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছেন। ‘অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’ থেকে ‘বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভাল’ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় এই ছবি সমাদৃত। বাণিজ্যিক মাত্রাতেও এর গড়পড়তা সাফল্য মাল্টিপ্লেক্সে একাধিক সপ্তাহের দর্শক-সমাগমের পুরনো তথ্যে নিশ্চিতই তর্কাতীত। চিত্রনাট্যে টানটান উত্তেজনায় বসিয়ে রাখার যাবতীয় রসদও মজুত। সামান্য সরকারি ক্লার্ক নিউটন কুমার চাকরিজীবনের শিক্ষানবিশ পর্বেই অতিরিক্ত প্রিসাইডিং অফিসারের অবশ্য-পালনীয় সরকারি কর্তব্যের ডাক পান এবং ‘দুর্ভাগ্যবশত’ নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের তথাকথিত ‘অসুস্থতা’ হেতু জুটেও যায় নিয়মিত অফিসারের নিয়োগপত্র, তাও আবার দুর্গম ছত্তিসগড়ে জঙ্গলাকীর্ণ নকশাল-অধ্যুষিত এক নির্জন বিচ্ছিন্নতায়, যেখানে ভোটদাতার সংখ্যা সাকুল্যে মাত্র ছিয়াত্তর। ছবিটুকু তো নিজের অন্তর্গত বেদনাকে চাগিয়ে তোলার অনুঘটক মাত্র। আমরা যারা বেতন কাঠামোর কৌলীন্যে এমন মর্যাদাসম্পন্ন পদে নিজেদের সম্মানিত করার সুযোগ পাই বছরের পর বছর লোকসভা-বিধানসভা-মিউনিসিপালিটি-পঞ্চায়েত ইত্যাদি বিবিধ বিন্যস্ত প্রশাসনিক স্তরে, ‘সৌভাগ্যবশত’ রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড় হিসাবে নিয়োগপত্র একবার পেয়ে গেলে ডিসিআরসি-তে নির্বাচন-পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় চলতে থাকে নিরন্তর এক চোর-পুলিশ লুকোচুরি খেলা। লাউডস্পিকারে বারংবার নামোচ্চারণ, অথচ পিতৃদত্ত নামটুকু সজ্ঞানে বিস্মৃত হয়ে আশেপাশে সংজ্ঞাহীন চড়ে বেড়ানোর সুযোগ বুঝি এমন মুহূর্তেই আসে! যৌবনরক্তের তেজ সম্ভবত এ-মাঠে পাকা খেলোয়াড় হয়ে ওঠায় নিউটনের পথে বাধাস্বরূপ। দেখলাম, অনায়াসেই ফাঁদে নিজেকে জড়ালেন। চললেন সহকর্মী পোলিং অফিসারদের নিয়ে প্রত্যন্ত দুর্গমে, যেখানে উগ্রপন্থী ‘মাও’ হানার আশঙ্কায় সড়কপথ নয়, নিরাপদ অবলম্বন আকাশপথের হেলিকপ্টার! চুপি চুপি বলি, আসলে ‘পাকা খেলোয়াড়’ ঐ প্রিসাইডিং অফিসার পদে পূর্বনির্ধারিত মানুষটিই, যিনি ১৪৮ নম্বর বুথের ঠিকঠাক হদিশ জেনে একের পর এক কাঁদুনি বাহানায় শেষপর্যন্ত নিজেকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। মাত্র একটি দৃশ্যে আপাত গুরুত্বহীন তার সকাতর উপস্থিতি, তবু চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতায় নিউটন নন, এমন মানুষই স্পষ্টত আমাদের বড় চেনা, যাদের কাছে মিথ্যাচার গুটিয়ে থাকা মধ্যবিত্তপনায় স্বজন-পরিবারের স্বার্থে বাধ্যত আর্তি!
সে যা হোক। আমাদের নিউটনবাবু মিলিটারি ও পুলিশ পরিবৃত হয়ে শেষমেশ পৌঁছলেন তার গন্তব্যে। যদিও ইতিমধ্যে সঙ্গী আইনরক্ষকরা তাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন দূরবর্তী ক্যাম্পে বসেই কাগজেকলমে ভোটপর্ব সেরে নিতে। কারণ জঙ্গি হানায় কুঁকড়ে থাকা ঐ আদিবাসী গ্রামের নিরক্ষর স্বল্পসংখ্যক মানুষদের মধ্যে কেউ-ই কোনো কালে এই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে অভ্যস্ত নন। নিউটনও ছাড়ার পাত্র নন। ‘স্বদেশব্রত’-ই যে তখন তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান! হয়তো তেমনটাই যৌক্তিক। প্রথমবার ইলেকশন ডিউটি পেয়ে হয়তো এমনই গরম রক্তে আমিও ফুটেছিলাম গণতন্ত্রের মহান উৎসবে সামিল হতে। কিন্তু পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতা বড় নির্মম। মানুষকে কাপুরুষও করে তোলে। বাস্তবে এমন আশাতীত প্রস্তাব পেলে হয়তো বুদ্ধিমান প্রিসাইডিং অফিসার তা দু’হাতে লুফে নিতেন। আবারও সিনেমা-প্লটের অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে ব্যক্তিগত হিসেবনিকেশের দুস্তর ব্যবধান। তবু শিল্পমাধ্যম তো তখনই যথার্থ হয়ে ওঠে, যখন হৃদয়-উৎসারিত বেদনা উন্মোচনে তা অনুঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এবং দীর্ঘ বিতর্কে জয়লাভ অন্তে জঙ্গল-মধ্যস্থিত সামান্য ফাঁকা পরিসরে টালির একতলা ঘরে পৌঁছনো। হয়তো কাগজেকলমে তা প্রাইমারি স্কুল, তবে দরজা বা জানলা কপাট বিহীন এবং মানুষের আনাগোনা সেখানে তেমন ঘটে বলে মনে হয় না। যেহেতু এইটিই নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত বুথ, ভোট-আনুষঙ্গিক গোপনীয়তা রক্ষার্থে তাকে ঝেড়ে-মুছে যাবতীয় প্রস্তুতির দায়ও ভোটকর্মীর। দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, আসানসোল এলাকায় চাকরি সূত্রে হয়তো আমাদের মতো শিক্ষক-কর্মচারীদের তেমন জনমানবহীনতার দুর্গমে গিয়ে পড়তে হয় না। তবে ‘নাগরিক জঙ্গল’-এর অভিজ্ঞতা বলে, বুথ হিসাবে ধার্য যে বিদ্যালয়, বহুক্ষেত্রে অকুস্থলে পৌঁছে হয়তো প্রত্যক্ষতই সে এক পোড়োবাড়ি, পড়াশোনার পাট চুকিয়ে আস্ত স্কুলটাই নতুন কোনও ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই! ‘ম্যাক্রো’ জাতীয় স্বার্থে মনোনিবেশ হেতু মাইক্রোস্কোপিক লক্ষ লক্ষ বুথ পর্যবেক্ষণের অবসর কোথায় মহান কমিশনের! নিচুতলার পদাতিক সৈন্যবাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে যুঝতে তো হাতে ধরিয়েই দিয়েছেন কার্বলিক অ্যাসিডের শিশি! হয়তো দেখা গেল ক্লাসরুমে ছিটেফোঁটা আলোর ব্যবস্থা নেই, নেই প্রখর গ্রীষ্মে পাখার বন্দোবস্ত। মেঝেবেঞ্চ ধুলোর আস্তরণে হাঁসফাঁস করছে। দেওয়ালে পর্যাপ্ত পেরেক না পেয়ে মশারি ব্যাগবন্দিই থাকে, মশারা মিছিল শানায় রাতের গভীরে। আমার কলেজেরই এক সহকর্মীর অভিজ্ঞতা শোনাই। ভরপুর শহর এলাকা দুর্গাপুর ডিভিসি মোড়ের অনতিদূরে একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। ‘ভোট-ডিউটি’-র ভাষায় ‘ডে ওয়ান’ অর্থাৎ ভোটগ্রহণের আগের দিন প্রায় ভোরবেলায় গৃহত্যাগী হয়ে সারাদিন ডিসিআরসি-তে ছোটাছুটি, ভোটমেশিন ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র গ্রহণ এবং মিলিয়ে নেওয়ার দীর্ঘ পর্ব পেরিয়ে নির্ধারিত বাসে আরও গোটা দশেক ‘পোলিং পার্টি’-র সঙ্গে ঠাসাঠাসি চেপে অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত খোপে পৌঁছে স্বভাবতই পিপাসার্ত তারা প্রথমে পানীয় জলের খোঁজ করলেন। সন্ধান জানতে চাওয়ায় সেক্টর অফিসার না কি জরাজীর্ণ শৌচাগারের দেওয়ালের কল দেখিয়েছিলেন! অথচ এমনটি হওয়ার তো কথা ছিল না। ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের ভার কাগজেকলমে অন্তত নির্বাচন কমিশনের ওপরেই বর্তায়। যারা তুলনায় সৌভাগ্যবান, বিদ্যালয়ের আবাসিক কর্মীদের মাধ্যমে সামান্য খাবার জোগাড় করে নিতে পারেন নিজেদের গ্যাঁটের মোটা অর্থ খসিয়ে। অন্যথায় অচেনা এলাকায় বেড়িয়ে আঁতিপাঁতি খুঁজে নিতে হয় খাদ্যসংস্থান। ভোটের নামে প্রহসন কেন হবে—এই ভেবে মেরুদণ্ডে ঋজু নিউটনবাবু বড়ই ক্রুদ্ধ। ছটফট করেন, নিয়ম মতে দায়িত্ব সমাধায়। মিলিটারি ফোর্সের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতেও পিছ-পা নন। তেমন কর্তব্য পরায়ণতায় দায়িত্বশীল কোনও নাগরিকেরই আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু ঐ অমার্জিত পরিবেশ, ঝাণ্ডাধারী ‘লোকাল’ দাদাদের রক্তচক্ষু এড়াতে মাত্র গোটা দুই ক্লান্ত পুলিশকর্মী—এ-হেন সরকারি পরিষেবার আয়ত্তে ধরে বেঁধে এনে বসিয়ে দেওয়ায় প্রথমেই যে বিতৃষ্ণা, সেখানে ‘কেউ (যে) কথা রাখে নি...কেউ কথা রাখে না’—এমন গহীন উপলব্ধি অভাজন ভোটকর্মীদের তরফে কি খুবই অনৈতিক? আর শেষমেশ যদি সামান্য প্রহরার বেড়া ডিঙিয়ে প্রবলতর ‘পার্টি’-র অনুগত ক্যাডার সৈনিকদের সশস্ত্র অনুপ্রবেশ, ‘ব্যালট’ বা ‘কন্ট্রোল ইউনিট’ তাদের আধিপত্যে সঁপে বরং সামান্য মুক্ত অক্সিজেনের আশায় মনে মনে গুনগুনিয়ে ওঠাই শ্রেয় মৃণাল চক্রবর্তীর কবেকার সেই বাংলা গানের কিছু শব্দ—‘...কথা রাখার কথা ছিল, তোমারই, আমার তো নয়...’! বিধাতাপুরুষ নির্বাচন কমিশন, সেই-ই তো ‘তুমি’। সিঁদুরে মেঘে ভীত ঘরপোড়া ছাপোষা মধ্যবিত্ত আর যাই হোক, বিদ্রোহ-বিপ্লবের অভ্যাস ভুলেছে বহুদিন। দিনান্তের ঘরকুনো মন অক্ষত ফিরতে চায় ঘরেই, গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকার বশেই। সব কেমন যেন গুলিয়ে যায়। লেনিনকে নিয়ে কখনও নিজেরই লেখা আরও একটা আবোলতাবোল প্রলাপ-পদবাচ্য ফেসবুক-কবিতার প্রথম কয়েকটা লাইন খুঁচিয়ে দিয়ে যায় নিজেরই অবচেতন—
রাষ্ট্রযন্ত্র, গণ বা তন্ত্র কিছুই বুঝি নে মা!
কুড়িয়ে আখের প্রভু দেন তালি
অধমে পড়েছে ঘা!...
পর্দার নিউটন গণতন্ত্রে আস্থা জ্ঞাপনে যাবতীয় প্রত্যয়ী রেশ এঁকে দিয়ে যান। প্রেক্ষাপটে বাস্তব জীবন তেমন ভরসা যোগায় কই! শহীদ প্রবণ অস্থিরতা দর্শকের শিরা-উপশিরায় উত্তেজনা আনে। অথচ, শহীদ হওয়ার আবারও ডাক এলে, জানি, আবারও আত্মাহুতির যাবতীয় স্ফুলিঙ্গ নির্বাপিত হবে এমনই গণতন্ত্রের ঘোলাজলে!
তবুও বছর ঘুরবে। আসবে আবারও কোনও না কোনও বেশে অনিবার্য সেই রাষ্ট্র-উৎসবে সামিল হওয়ার বাধ্যবাধকতা। পালিয়ে আসার তো পথ নেই চাকরি সর্বস্ব এ ক্ষুন্নিবৃত্তিতে। তবুও অন্তে আস্থাটুকু হয়তো জিইয়ে থাকে, যখন ভোট প্রদান আরম্ভের নির্ধারিত লগ্নের বহু আগে, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই বুথের চৌকাঠে এসে দাঁড়ান কোনও অশীতিপর বৃদ্ধা বা বৃদ্ধ, বলেন—‘সকাল সকাল চলে এয়েচি। লাইনে দাঁড়াতে গাঁটের ব্যথায় বড় কষ্ট পাই বাবা...।’ অথবা সহায়তার হাত দৃঢ় প্রত্যাখ্যানে কোনও প্রতিবন্ধী গণতন্ত্রের মৌলিক শিক্ষায় দীক্ষিত করেন—‘নিজের ভোট নিজে দিতে এসেছি। সাহায্যের কী দরকার?’ তেমন মুহূর্তে ভাবতে ভালো লাগে, চারপাশের হুঙ্কার-ডামাডোল-রাজ্যে গণতন্ত্রের আক্ষরিক শিকড়টুকু কোথাও প্রচ্ছন্নে বহাল থেকেই যায়। মাঝেমধ্যে সেই শিকড়ে সামান্য জল সিঞ্চনে না হয় দু’দিনের ক্লেশই শিরোধার্য। তবু তো সমাজ অর্ঘ্যে সামান্য অঞ্জলি!