“তিস্তা, এত ভাল হওয়াটাও ভাল নয়”, মেঘনা তার বন্ধু তিস্তাকে বলে। তিস্তা এ কথা শুনে বিস্মিত হয়ে বলে “তা কীভাবে?” মেঘনা বলে, “দেখ, আমি আজ তোর বাড়িতে এলাম, কিন্তু আমরা কিছুই করলাম না এতক্ষণ ধরে। সেটা-”
“করলাম তো!” তিস্তা বলে উঠল, “আমরা লুকোচুরি খেললাম -”
“ঊফ! লুকোচুরি খেলাটা আবার কিছু করা হল নাকি? আমি বলছি দুষ্টুমি করার কথা” মেঘনা বলল। তিস্তা আশ্চর্য হয়ে বলল, “সে কী! দুষ্টুমি করা উচিত না তো।” মেঘনা বিরক্ত হয়ে বলল, “দেখলি আমি এই কথাটাই বলছিলাম। তুই অতিরিক্ত রকমের ভাল”। তিস্তা কিছু বলল না। মেঘনা হঠাৎ বলে উঠল “চল কাউকে প্র্যাঙ্ক কল করি”। তিস্তা কুন্ঠিত স্বরে বলল, “না না আমি এসব কখনো করিনি”। তিস্তা আরও অনেক কিছু বলে মেঘনাকে বোঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু মেঘনা যখন কিছু মনস্থির করে তখন সে সেটা করবেই। সে তিস্তাকে বলল, “দেখ, তোর বয়েস যখন একশো বা নব্বই হবে তখন কিন্তু তুই বসে বসে আফসোস করবি -ছোটবেলায় আমি কেন কাউকে প্র্যাঙ্ক কল করিনি”। তিস্তা বলল, “না আমি আফসোস করবো না”। মেঘনা তার কথায় কান দিল না। তিস্তাদের বাড়ির টেলিফোনে একটা ভুলভাল নম্বর ডায়াল করে তিস্তাকে ফোনটা ধরিয়ে দিল। ফোনটা কানে নিয়ে তিস্তা এক বয়স্ক মহিলার কন্ঠস্বর শুনতে পেল, সেই মহিলা রাগী গলায় ‘হ্যালো’ বলতেই তিস্তা ফোনটা রেখে দিল। মেঘনা তিস্তাকে হেসে বলল “কী রে! কী হল? ফোনটা এত তাড়াতাড়ি রেখে দিলি কেন?” তিস্তা রেগে বিরক্ত হয়ে রীতিমতো চেঁচিয়ে বলল, “তোর পাল্লায় পড়ে আমাকে এসব করতে হয়”। তিস্তার কথা বলার ধরণ দেখে মেঘনা আর কিছু বলল না।
তারপর প্রায় দু মাস কেটে গেছে - দুই বন্ধুর কথা হয়নি। তিস্তা আর মেঘনা ছোটবেলা থেকেই ভাল বন্ধু । তিস্তা যেমন ভালোমানুষ মেঘনা তেমনই দুষ্টু। সবসময় তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে। কোনো নিয়ম দেখলেই তার সেটা ভাঙার ইচ্ছে করে। তিস্তা আর মেঘনা অনেক ঝগড়া করে কিন্তু তারপর তাদের ঝগড়া মিটিয়েও নেয়। কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর তাদের আর কথা হয়নি। এর কারণ হল লকডাউন । কোভিড ১৯ এর জন্য তাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার ফলে তারা আর কথা বলার সুযোগ পায়নি। মেঘনা কে ফোন করতে তিস্তা অস্বস্তি বোধ করছিল। সেদিন তো তারা ঠিক ঝগড়া করেনি। মেঘনার নিশ্চয়ই তার কথা শুনে খারাপ লেগেছিল। সে নীরব হয়ে ছিল। তিস্তার সাথে আর কোনো কথা বলেনি।
একথা মনে করলেই তিস্তা বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। সেদিনের ঘটনার জন্যই তাদের দু’মাস কথা হয়নি। সে তার বন্ধুকে ফোন করার সাহসও পাচ্ছিল না। যদি মেঘনা রাগ করে? তিস্তা এসব কথা ভাবছিল, এমন সময় তাদের ঘরের টেলিফোনটা বেজে উঠল। তাদের টেলিফোনে সাধারণত কেউ কল করে না। তাই টেলিফোনটা বাজছে দেখে তিস্তা একটু অবাক হল। তারপর সে আশঙ্কা করল নিশ্চয়ই সেই রাগী মহিলা তাকে ফোন করেছেন যাকে তিস্তা দুমাস আগে প্র্যাঙ্ক কল করেছিল। তিস্তা ভয়ে ভয়ে ফোনটা ধরল, “হ্যালো?” । একটি মেয়ের কন্ঠস্বর আন্তরিকতার সাথে বলল, “হ্যালো তুই কেমন আছিস? তোর বেস্ট ফ্রেন্ডকে ভুলে গেলি নাকি?” তিস্তার বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে মেঘনাই, আর কেউ নয়। মেঘনা ফোন করেছে দেখে তিস্তার মন আনন্দে নেচে উঠল। তিস্তা বলল, “ও! মেঘনা তুই? আমি আসলে ফোনে তোর গলাটা চিনতে পারিনি... হ্যাঁ, আমি ভাল আছি। তুই কেমন আছিস? এতদিন আমি ফোন করিনি কারণ আমি ভাবছিলাম সেদিনের ঘটনার পর- ”। সেদিনের কথা বলতেই মেঘনা বলে উঠল, “ঝগড়ার কথা থাক না। আমি অনেকদিন আগে সে কথা ভুলে গেছি”। তিস্তা এ কথা শুনে স্বস্তি পেল। সে উৎসাহিত হয়ে বলল, “অসলে তুই তো এত সহজে কিছু ভুলিস-টুলিস না। কয়েকমাস আগে তোর কাছ থেকে একটা পেন্সিল চাওযায় তুই বললি আমি নাকি দু বছর আগে তোর কাছ থেকে একটা পেন্সিল নিয়েছিলাম, তারপর ফেরত দিইনি । সেটা তুই ফেরত চাস । আর আমি নাকি তিন বছর আগে তোর কাছ থেকে আরেকটা পেন্সিল নিয়েছিলাম। সেটাও ফেরত দিইনি । আমি নাকি চার বছর আগে তোর কাছ থেকে একটা পেন্সিল নিয়েছিলাম তারপর ফেরত দিইনি । সেটাও তুই ফেরত চাস । আর পাঁচ বছর আগে-”
মেঘনা এই সময় তিস্তাকে না থামালে কে জানে সে আরও কত কথা বলে যেত। তিস্তা একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। মেঘনা তাড়াতাড়ি করে বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। ঐ পেন্সিলগুলো ফেরত না দিলেও হবে।” তিস্তা আরও উত্তেজিত হয়ে বলল, “সত্যি বলছিস? যাক বাবা, বাঁচা গেল। আচ্ছা, তুই সেদিন বলেছিলিস আমি এক বছর আগে তোর কাছ থেকে একটা পেন নিয়েছিলাম। সেটা ফেরত দিইনি । দু’বছর আগেও তোর কাছ থেকে আমি নাকি একটা পেন নিয়েছিলাম। তিন বছর আগেও নাকি একটা নিয়েছিলাম। আর চার বছর আগে-”
মেঘনা বলল, “ঠিক আছে, ওগুলোও ফেরত দিতে হবে না।” তিস্তা এ কথা শুনে খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করল, “খাতাগুলো কি ফেরত দিতে হবে?”
- “না।”
-বইগুলো?
- “না, না।”
- “কাঁচিগুলো?”
- “না। কাঁচিগুলো লাগবে না।”
- “পাটিসাপটাগুলো?”
- “না। সেগুলোর দরকার নেই।”
- “আর ঐ প-”
- “কিছুই ফেরত দেওয়ার দরকার নেই।”
তিস্তা বলল, “তোর আজ কী হল বল তো? আজ তুই নিজেই বললি আমাকে তোকে কিছুই ফেরত দিতে হবে না। তুই তো দু-তিন বছর ধরে তোর জিনিসগুলো ফেরত চেয়ে যাচ্ছিস। আজ হঠাৎ -”
মেঘনা শান্তস্বরে বলল, “না না বন্ধুদের মধ্যে অত দেওয়া-নেওয়ার কী আছে?” তারপর বলল, “আচ্ছা এখন রাখি, আমার চার্জ ফুরিয়ে যাচ্ছে” । তিস্তা হেসে বলল, “তোর চার্জ কী করে ফুরিয়ে যাবে? তোর ফোনের চার্জ বল” । কিন্তু মেঘনা ততক্ষণে ফোন রেখে দিয়েছে। তিস্তার সেই সাধারণ দিনটা তার বন্ধুর ফোনের জন্য অসাধারণ হয়ে গেল। কিন্তু তার মনে একটা প্রশ্ন রয়ে গেল – মেঘনা হঠাৎ ল্যন্ডলাইনে ফোন করল কেন? ও তো সাধারণত মোবাইলে ফোন করে। হয়তো ইচ্ছে করেই করেছে- কে ফোন করেছে সেটা না জেনে যে তিস্তা ফোন ধরতে ভয় পায় সেটা মেঘনা ভাল করেই জানে। যেকোনো অজানা জিনিসেই তিস্তার ভয়। সে তো আর মেঘনার মতো না, যে অজানার ওপর চোখ পড়লেই তাকে দুই বাহুপাশে আলিঙ্গন করবে! এ কথা জেনেই হয়তো মেঘনা তিস্তাকে এই ভীতিপ্রদ যোগাযোগমাধ্যমে ফোন করেছিল- একে একরকম প্র্যাঙ্ক কল বলাই চলে। কিন্তু যা ভেবেই মেঘনা ফোন করে থাকুক- ফোন করেছে সেটাই তিস্তার কাছে যথেষ্ট।
তার পরের দিন তিস্তা মেঘনার কথাই ভাবছিল। তার মনে হচ্ছিল, এর আগের দিন তাদের বেশি কথা হয়নি। আরেকটু কথা বলতে পারলে ভাল হত। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। তিস্তা ফোনটা ধরে উৎসাহের সাথে বলল, “হ্যালো!” সে যেমন মনে করেছিল, মেঘনাই তাকে ফোন করেছে।
মেঘনা বলল, “কাল অত বেশি কথা বলা হল না, আজ আমার হানড্রেড পার্সেন্ট চার্জ আছে, আজ কথা বলতে পারবো” । তিস্তা এ কথা শুনে খুব খুশি হল এবং দুই বন্ধু এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে কথা বলল। তিস্তা অপরিসীম আনন্দ পেল সেদিন।
এরপর বেশ কয়েকদিন মেঘনার কোনো ফোন নেই। তিস্তা চিন্তিত হয়ে পড়ল। মেঘনা বলেছিল রোজ ফোন করবে। হঠাৎ করে মেঘনা ফোন করা বন্ধ করে দিল কেন? মেঘনার ফোনের অপেক্ষায় বসে না থেকে তিস্তা স্থির করল সে নিজেই মেঘনাকে ফোন করবে। কিন্তু অদ্ভুত কাকতালীয়ভাবে, তক্ষুনি টেলিফোনটা বেজে উঠল। তিস্তা আনন্দের সাথে ফোন ধরে বলল, “হ্যালো মেঘনা! এতদিন ফোন করিসনি কেন? আমি ভাবলাম -”
একটি গম্ভীর মহিলা কণ্ঠ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “না আমি তোমার বন্ধু নই”।ওনার কণ্ঠস্বর একটু চেনা চেনা ঠেকলো তিস্তার। কিন্তু সে মনে করতে পারল না সে ওই কন্ঠস্বর কোথায় শুনেছে। তিস্তা বিমর্ষ হয়ে বলল, “ও। আচ্ছা”। তার গলায় হতাশা সহজেই পরিলক্ষিত হল। সেই গম্ভীর কন্ঠটি বলল, “আমার নাম যাজ্ঞসেনী মিত্র। আমি একজন বিজ্ঞানী। এতদিন তুমি যার সাথে কথা বলছিলে সে আসলে তোমার বন্ধু নয়। আমি অনেক বছর ধরে আর্টিফিসিয়াল ইমোশন বা কৃত্রিম আবেগ নিয়ে গবেষণা করছি।আমি এমন একটা রোবট বানিয়েছি যেটা মানুষের কথাবার্তা শুনে তাদের মনের ভাব বুঝে যায় এবং সেই অনুযায়ী তার সাথে কথা বলে। আমি আমার অবিষ্কারটি পরীক্ষা করে দেখতে চাইছিলাম। তাই আমার রোবটকে দিয়ে কয়েকজনকে ফোন করিয়েছি । তারপর তাদের জিজ্ঞেস করেছি তারা রোবটের সাথে কথা বলছিল সেটা টের পেয়েছে নাকি।এখন অবধি কেউই বুঝতে পারেনি যে তারা একটা রোবটের সঙ্গে কথা বলছিল। তুমি কি বুঝতে পেরেছিলে ?”
তিস্তা যাজ্ঞসেনীর কথা শুনে অবাক। সে যা শুনছে সেটা বিশ্বাস করতে পারছিল না ।তিস্তা বিস্ময়ের সাথে বলল, “না আমি রোবটের সাথে কথা বলেছিলাম বুঝতে পারিনি। এখনো আমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। যাজ্ঞসেনী হেসে বললেন, “সবাই এই কথাই বলে”। তিস্তা বলল, “তাছাড়া এই বিশ্বে এতজনের মধ্যে আমিই রোবটটার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি সে কথা ভাবলেই তো…”। সে কথা ভাবলেই তিস্তার কেমন লাগে সেটা সে প্রকাশ করতে পারল না। “ওতে তোমার অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর আগে আমার রোবট যাদের ফোন করেছিল তাদের অবাক হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। প্র্যাঙ্ক কল করার সময় যেমন যা মাথায় আসে তা ডায়াল করা হয় তেমন করেই আমার রোবট তাদেরকে ফোন করেছে। কিন্তু তোমার বেলায় তা করা হয়নি।“,যাজ্ঞসেনী এই কথাটি হেসে বললেও তাঁর কন্ঠস্বরে কেমন একটা ধমক দেওয়ার আভাস পাওয়া গেল। তিস্তা বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে আমার ফোন নম্বরটা কীভাবে-’
‘কীভাবে পেলাম? কেন, সেবার তো তুমিই আমাকে ফোন করেছিলে।আমি হ্যালো বলতেই তুমি ফোনটা রেখে দিয়েছিলে। আসলে তুমি বন্ধুর সাথে কথা বলার উত্তেজনায় ফোনটা ঠিক করে রাখোই নি। কিছুক্ষণ পরে আমাকে কাটতে হল।’ এ কথা শুনে তিস্তা কী বলবে তা বুঝে উঠতে পারল না। কিন্তু তাকে কিছু বলতে হল না, কারণ যাজ্ঞসেনী বললেন, “আচ্ছা তাহলে এখন রাখি। রোবটটাকে আরও কয়েকবার আমায় পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কিন্তু রাখার আগে আমার অবিষ্কারটির ব্যাপারে একটা কথা বলে যাই – আমি এই রোবটটি বানিয়েছি যাতে মানুষের যোগাযোগ করতে সুবিধা হয়। যাদের চেনাপরিচিতদের সাথে অনেকদিন কথা হয়নি তারা এই রোবটের সাথে কথা বলে কথা বলার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। তার ফলে অনেকদিন যাদের সাথে যোগাযোগ নেই তাদের সাথে কথা বলতে তারা উৎসাহ পাবে। আর, কথা বললেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে যায়। আচ্ছা, এখন রাখি। তোমার ওপর রোবটটা পরীক্ষা করলাম বলে তোমাকে এত কিছু বললাম”।
ফোনটা রাখার পর তিস্তা ভাবল, “তাহলে এ’কদিন আমি মেঘনার সাথে কথা বলিনি? আমি একটা রোবটের সাথে কথা বলছিলাম!” সে কথা ভেবে তিস্তা একটু মনক্ষুণ্ণই হল। সে আর সময় নষ্ট না করে মেঘনাকে ফোন করল। তিস্তা ফোন করেছে দেখে মেঘনা খুবই খুশি হল। “তিস্তা তুই!কতদিন কথা হয়নি!”, মেঘনা উৎসাহের সাথে বলল”। তিস্তা বলল, “আসলে সেদিনের ঘটনার পর-”
- “আরে সেদিনের কথা ছাড় না। সেদিন আমারই ওরকম চুপ করে থাক উচিত হয়নি। তোর তো রেগে যাওয়ারই কথা। আমি জোর করে তোকে দিয়ে প্র্যাঙ্ক কল করাচ্ছিলাম” । তিস্তা বলল, “না রে, আমারই ওরকম চ্যাঁচানো উচিত হয়নি। তুই জোর করেছিলি তাতে কী আছে? আমি কাউকে প্র্যাঙ্ক কল না করলে আমি আক্ষেপ করতাম নাকি জানি না, কিন্তু আমি যে তোর সাথে একটা প্র্যাঙ্ক কল করেছি তাতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই” ।
তারপর দুই বন্ধুর দুমাসের কথা – সে কি আর দুঘণ্টায় শেষ হয়! কথা বলার চেয়ে তার ঝগড়াই বেশি করল। মেঘনা বলল, “আচ্ছা আমার পেন্সিলগুলো তো তুই ফেরত দিলি না? আর পেন খাতা বই কাঁচি – এগুলো কবে ফেরত দিবি? আর শোন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কিন্তু আমরা ভূতের বাড়িটাতে যাচ্ছি। না বললে কিন্তু হবে না। না গেলে আমি তোর সাথে আর কখ্খনো কথা বলব না।”
- “তুই সবসময় এই একই কথা বলে আমায় রাজি করাস “।
- “তুই এক কোথায় রাজি হোস না তাই তোকে ওসব বলে রাজি করাতে হয়। বলেও তো কিছু হয়না। আমার পেন, পেন্সিল, বই, খাতা ওগুলো তো তুই এখনো ফেরত দিসনি” ।
তিস্তা এবার রেগে গিয়ে বলল, “এই শোন তুইও আমার কাছ থেকে অনেক জিনিস নিয়ে ফেরত দিসনি।
- “আমি আবার কখন তোর কাছ থেকে জিনিস নিয়ে ফেরত দিইনি?...ও হ্যাঁ একবার আমি অবশ্য…..আর সেবারও তো ফেরত দেওয়া হয়নি …। একটা কথা বলি? এত আগের কথা মনে রেখে কী লাভ? ও জিনিস কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে। তুই আমার জিনিস ফেরত দিসনি আমি তোর জিনিস ফেরত দিইনি – শোধ-বোধ হয়ে গেছে” ।
- “আমি তোকে একটা জিনিস ফেরত দিতে পারি । সেবার আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোর টিফিন থেকে কয়েকটা পাটিসাপটা খেয়ে ফেলেছিলাম। লকডাউন শেষ হলে তোকে ঠাকুমার বানানো পাটিসাপটা খাওয়াব” ।
এবার মেঘনার উৎসাহ দেখে কে! “আমি এই কথা শুনে এত খুশি হলাম যে আমি তোকে একটা কেন, দশটা ভূতের বাড়িতে নিয়ে যাব” ।
তিস্তা প্রতিবাদ করে উঠলো, “না আমি যাব না” ।
- “যেতেই হবে” ।
- “আমি যাব না” ।
এবার মেঘনাকে বলতেই হল, “আচ্ছা ঝগড়াটা কাল শেষ করব, মা আমাকে পড়তে বসতে বলছে। রাখছি” ।
ফোন রেখে দিয়ে তিস্তা ভাবল, “ওই রোবটটার একটাই ত্রুটি, রোবটটা ঝগড়া করতে পারে না” ।