

দু দিন পরেই সুমির জন্মদিন। বারান্দায় বসে মা-বাবা চা খাচ্ছে। তখন সুমি ওদের কাছে গিয়ে বলল, 'আর দুদিন পরেই তো আমার জন্মদিন তাই আমি চাই যে আমরা কোন জলা জায়গায় যাই।' বলেই ঘরে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিজের বই মুখে করে পড়তে বসল। তাই দেখে মা-বাবা বেশ খুশি হল। চা খেতে খেতে তারা ভাবছে কোন জায়গায় যাওয়া যায়। ভাবতে ভাবতে মা বললো, 'আর কোথাও যাব না, শুধু যাব দীঘাতে। এটাই আমি ঠিক করলাম।' পরের দিন ওরা কোথায় যাবে জানার পর সুমি এত খুশি হল যে তার আর দুপুরে ঘুমই হয় না। এরপর বিকেলে মা-বাবা ব্যাগ গুছিয়ে, সকালে কি পরে যাবে, সব রেডি করল। ওরা সঙ্গে একটু খাবারও নিলো। তারপর রাতে তারা আলুর দম আর লুচি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন ওরা ট্রেনে করে দীঘা চলে গেল। ওখানে গিয়ে ওরা হোটেল বুক করল। হোটেলেই পরিষ্কার হয়ে সুমি তাদের ঘরটা ভালো করে দেখতে দেখতে ভাবল, 'কত বড় ঘর। মাঝখানে বড় বিছানা, এক কোনে বাথরুম। দু'ধার দিয়ে জানলা। ঠাণ্ডা বাতাস আর পাখির কিচিরমিচির। এক কোণে বারান্দা, তাতে কত রকম গাছ; জবা, তুলসী, গোলাপ আর কত কী!’ ভাবতে ভাবতে সুমি বিছানায় বসে পড়ল। মা বলল, 'এবার তো আমরা সমুদ্রের দিকে রওনা দেব।' সুমি মাথা নেড়ে বিছানা থেকে উঠল। সবাই রওনা দিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা পৌঁছে গেল। সেখানে গিয়ে সুমির নজর পড়ল জলে। এত ঢেউ! দুর থেকেই অবাক হয়ে ও কিছুক্ষণ ওই জলের দিকে তাকিয়ে থাকল। আরও দেখল জলের রংটা কেমন নীল। ও বাড়িতে যখন জল খায় তখন তো জলের কোন রং থাকে না তাহলে এখন জলটা নীল কেন! আবার যখন ঢেউ পাড়ে এসে ভেঙ্গে যাচ্ছে তখন জলটা কিরকম যেন সাদা ফেনার মতন হয়ে যাচ্ছে। ও খুব অবাক হলো। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল। বেশি জোরে বৃষ্টি নামেনি তাই সুমি ভাবল যে সে চুপিচুপি সমুদ্রর জলে সাঁতার কাটবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সে হঠাৎ দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপাবে, এমন সময় দেখল সমুদ্রর রংটা কালো। ঘাবড়ে গিয়ে সুমি আবার তার মা-বাবার কাছে ফিরে এল। সে ভাবতে লাগল, 'এটা কীভাবে সম্ভব যে জলের রং একবার নীল আবার একবার কালো আবার সাদাও হতে পারে?’ সুমি অবাক হয়ে গেল কিন্তু চুপ করে থাকল।
বৃষ্টি থামতে মা সুমিকে ডেকে বলে উঠল, 'এবার তো হোটেলে ফিরতে হবে, অনেক দেরি করে এসেছি, তাই তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।' বাবা রিক্সা ডাকল। একটু পরেই রিক্সা চলে এল, সবাই উঠে পড়ল। তারপর হোটেলে গিয়ে সুমি পরিষ্কার হয়ে ডিনার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। পরের দিন ওরা অনেক ভোর বেলায় সূর্য উঠার আগে সমুদ্রের দিকে গেল। ওইখানে বসে মা-বাবা কিছুক্ষণ সূর্য ওঠা দেখল। আর সুমি সেই সময় সমুদ্রের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, 'এই তো কালকে দেখলাম জলের রং নীল আর কালো আবার এখন দেখছি কমলা! এ যে এক আশ্চর্য ব্যাপার!’
এরপর দু'দিন ওরা খুব মজা করে কাটাল। জন্মদিনের কেক কাটল। সমুদ্রে স্নান করল। বালি নিয়ে অনেক খেলাধুলো করল। বাবা মায়ের সঙ্গে সাঁতার কাটার প্রতিযোগীতা করল। ওরা আবার মেলাতেও গেল। সেখানে আইসক্রিম খেল। দু'দিন পর ওরা ট্রেনে করে বাড়ি ফিরল। ট্রেনে ওরা ঝালমুড়ি আর লজেন্স খেল। সুমি জানলার ধারেই বসেছিল। তাই জানলা দিয়ে বাইরের দিকেই তাকিয়ে ছিল। সে দেখল কত সবুজ ঘাস, ধানখেত। কত লোকের বাড়ি। কেউ জামা কাপড় মেলছে অন্য দিকে কেউ বসে কারোর সঙ্গে গল্প করছে। কেউ মাঠে ফুটবল খেলছে। সুমির এইগুলো দেখতে ভারী মজা লাগছিল।
বাড়ি ফিরে সুমি তার মাকে বলল, 'মা, তুমি আমায় কাল তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠিও।' মা একটু অবাক হল কিন্তু কিছু বলল না। শুধু মাথা নাড়ল। সেই রাতে সুমি এক স্বপ্ন দেখল। সে দেখল সে একজন জাদুকর। আর জাদুকাঠি ঘোরালে সে জলকে বিভিন্ন রঙে বদলে দিতে পারে। নীল জলকে কমলা করে দিতে পারে। আবার জাদুকাঠি ঘুরিয়ে কমলা জলকে কালো করে দিতে পারে। সে আরও দেখল যে দর্শকরা সব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকছে আর খালি হাততালি দিচ্ছে। কেউ কেউ ফুল ছুঁড়ছে। জাদু শেষে সব দর্শকরা যখন চলে গেল সুমির ঘুমটাও তখন ভেঙে গেল।
ঘুম ভেঙ্গে উঠে সুমি দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে একটা গ্লাসে জল ভরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর হাত ঘুরিয়ে বলে উঠল, 'আবরাকাডাবরা গিলিগিলি ছু!’ কিন্তু জলের রং যে একটুও বদলাল না! মনটা খারাপ হয়ে গেল ওর। মনের দুঃখে ঘরে গিয়ে আবার চুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মা জিজ্ঞেস করল, 'কী রে, কী হল, সকাল সকাল এত মনমরা যে? তাড়াতাড়ি স্কুলে যাবি না?’ স্কুলের নামে সুমি তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলল, 'ও তাই তো, আমাকে যে আজ একটু তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতে হবে!’
সেদিন সুমি সবার আগে ক্লাসে ঢুকল। ঢুকেই ম্যামের কাছে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, 'এক্সকিউস মি ম্যাম, আমি কি একটা প্রশ্ন করতে পারি?’ ম্যাম হেসে বললেন, 'নিশ্চয়ই!’ তখন সুমি বলল, 'ম্যাম জলের রং কী করে বদলাতে পারে? একবার নীল একবার কমলা আবার কখনো কালো? আমাকে এটা একটু বোঝাবে?’ ম্যাম বললেন, 'শোন সুমি, জলের তো কোনও রঙ হয় না। তুমি জলের উপর মুখ রাখলে, আয়নার মতন তোমাকে দেখতে পাও তো? এবার যখন খোলা নীল আকাশটা জলের উপর থাকে তখন আকাশের ছায়া পড়ে পুরো জলটাই নীল দেখায়। এইভাবেই আবার কালো আকাশের ছায়া পড়লে জলটা কালো দেখায়। আবার সূর্য ওঠার সময় বা ডোবার সময় আকাশ কমলা হয়ে যায়, তাই জলও কমলা রঙের দেখায়। এবার বুঝতে পারলে?'
ম্যামের কথা শুনে সুমি ভীষণ খুশি হয়ে হাততালি দিয়ে উঠল। 'আরে, তাই তো! আমি যে এইরকম একটা এক্সপেরিমেন্ট আগে একবার করেছিলাম! এইবার আমি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি দীঘার সমুদ্রের জলের রং বদলের কী রহস্য!'
Abhyu | 47.39.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২১ ২২:১৭501183
Abhyu | 47.39.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২১ ২২:১৭501184
kk | 68.184.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০২:৪৮501204
&/ | 151.14.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:০২501212
hu | 2603:6011:6506:4600:8073:b511:f785:***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২৯501213
Tim | 2600:1009:b12d:db11:2d36:e6bc:92ce:***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৫৭501227
Aparna | 45.25.***.*** | ২৭ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৫৭501478
Mahasweta Mahapatra Sau | 42.***.*** | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৩516748