একদল ছেলেমেয়ে রোজ তাদের পাড়ার গলিতে ক্রিকেট খেলত। গলির ঐ রাস্তার পাশেই ছিল রায়দাদুর বাড়ি। ভদ্রলোক তাঁর বিরাট বড় বাড়িতে একা থাকতেন তাঁর পোষা ল্যাব্রাডর কুকুর জোজোর সঙ্গে। আর ছিল ওনার কাজের মেয়ে মিলি। ওনার স্ত্রী মারা গেছেন এবং তাঁর দুই মেয়ে বিবাহ ও কর্মসূত্রে অন্য জায়গায় থাকে। তাই রিটায়ার্ড রায়দাদুর বাড়িটা খাঁ খাঁ করে সারাদিন। শুধু মাঝেমধ্যে জোজোর আওয়াজ শোনা যায়। আশেপাশের বাড়িগুলি থেকেও খুব একটা সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না। কিন্তু রোজ বিকেলে পাড়ার ওই বাঁদরের দল খেলত এসে গলিটাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মাতিয়ে রাখে। বাঁদরের দল নামটা রায়দাদুই ওদের দিয়েছেন। বাঁদরের দল অর্থাৎ পাঁচটি ছেলেমেয়ের দল। রায়দাদু ছাড়া সকলে ডাক নাম ধরেই ডাকে ওদের...রাজু , বিল্টু , রিয়া , রিম্পা এবং রনি। ওদের চেঁচামেচিতে রায়দাদু সর্বদাই বিরক্ত থাকতেন। কিন্তু আবার কোনোদিন ওরা খেলতে না এলে ওনার কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগতো। বাঁদরের দলের খেলার জায়গাটা ছিল রায়দাদুর বাড়ির ঠিক সামনে। ফলে ক্রিকেট খেলার সময় প্রায়ই ওদের বল গিয়ে ঢুকতো রায় দাদুর বাড়িতে। কখনো কখনো জানলার কাঁচও ভাঙতো। অমনি লাঠি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতেন রায়দাদু। সেদিনও খেলতে খেলতে ওদের বল ঢুকে গেল রায় দাদুর বাড়িতে। কিন্তু ওরা লক্ষ্য করল যে বাড়িতে বলটা ঢুকে যাওয়া সত্ত্বেও উনি বেরিয়ে এলেন না। ওদের একটু অবাক লাগলো। বাড়ির দরজা খোলা পেয়ে বাঁদরের দল একটু সাহস করে ভেতরে ঢুকে গেল কি হয়েছে দেখার জন্য। ভেতরে গিয়ে রায়দাদুর ঘরের আধ খোলা দরজাটা দিয়ে দেখল রায় দাদু বিছানায় শুয়ে সমানে কেসে চলেছেন। বিছানায় পাশে পড়ে আছে থার্মোমিটার। আর পায়ের কাছে শুয়ে আছে জোজো। কাজের দিদিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। বোধহয় ভয়ে পালিয়েছে। ওদের বুঝতে অসুবিধা হল না। ছুটে গিয়ে সব ঘটনা পাড়ার ক্লাবের বড় দাদাদের জানাতেই তাঁরা ডাক্তারের ব্যবস্থা করলেন। রোজ একজন নার্স এসে রায়দাদুর চেকআপ করে যায়। বাঁদরের দলও কিছুদিন তাদের খেলা বন্ধ রেখেছে পাছে রায় দাদুর অসুবিধা হয়। রোজ বিকেলে তারা দল বেঁধে যায় রায়দাদুর খবর নিতে। রায় দাদুর বাড়ির কাজের দিদি প্রথমে থাকতে চায়নি। ওরাই বুঝিয়ে-সুজিয়ে তাকে নিয়ে এসেছে। বাজার করে দেওয়া, ওষুধ এনে দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু ওরাই দেখাশোনা করছে। সেই সঙ্গে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করতেও ওরা ভোলেনি। দেখতে দেখতেই রায়দাদু সেরে উঠলেন। সবাই বাঁদরের দলের সাহসের প্রশংসা করলো। রায়দাদু ওদের নতুন নাম দিলেন... সাহসীর দল। আবার শুরু হল ওদের খেলা। এখন ওদের দলে রায়দাদুও যোগ দিয়েছেন। উনি এখন ওদের ক্রিকেট খেলার আম্পায়ার। খেলায় কারচুপি দেখলে বকাঝকা করেন ঠিকই কিন্তু এখন আর উনি বিরক্ত হন না। রায়দাদুর নিঃসঙ্গ একাকী জীবনে এখন ওরাই একমাত্র সঙ্গী।