মিনি কিছুদিন ধরেই দেখছিলো যে স্কুলের প্রীতি দিদিমণি কিরকম একটা চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু এটা শুধু মিনির চিন্তার মধ্যে একটা। ওর বন্ধু বৃওমি বম্বে চলে যাচ্ছে। ওর দিদি, হিয়া, কেমন একটা করছে, কথা বলে না, ভালো করে খায় না, মনে হয় না ভালো ঘুম হয়।
মিনি গোয়ায় থাকতো, সমুদ্রের ঠিক পাশে। ওর মা আর দিদির সঙ্গে। বাবা নাকি মাসে দুই দিন বাড়ি থাকে। মিনি সাঁতার কাটতে এত ভালোবাসে যে ওর স্কুলের ইউনিফর্মের নিচে একটা সুইম স্যুট পড়ে থাকে, স্কুল শেষ হলেই জলে নামবে।
সেই দিন মিনি হিয়ার ঘরে গিয়ে বলল "এই দিদি তোর কী হয়েছে বল তো!" হিয়া কিছু বলল না। তখন ওর চোখে পড়ল দুই বছর আগে তোলা ছবি। ওই একটা বছরের জন্য বাবা দুই হপ্তা থেকেছিলেন। সেখানে দিদির চোখ কালো। এখন চোখ নীল। মিনি কিছু বলার আগে হিয়ার চোখ হঠাৎ করে লাল হয়ে গেল। মিনি জীবনে কোনদিন একটা ঘর থেকে এত তাড়াতাড়ি বেরোয়নি।
পরদিন স্কুলের ছুটি, মিনি জলে নামল। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। বন্ধু নেই। দিদি কিরকম একটা। প্রিয় শিক্ষিকা কিরকম একটা। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা ঢেউ এসে ওকে একদম ডুবিয়ে দিলো। যখনো কোনমতে উঠলো ও দেখল ঠিক কতটা দূরে চলে এসেছে। তখন একটা খুব অদ্ভুত জিনিস হল। যে ঢেউগুলো ওকে ডাঙ্গার দিকে ঠেলছিল সেইগুলোই ওকে এখন গভীর এর দিকে ঠেলতে লাগলো। এক মিনিটের মধ্যে ওরা থামল। তখনই সব অন্ধকার হয়ে গেল, আর যখন মিনির দৃষ্টি ফিরলো, ও দেখল ও ডাঙ্গায় ওর হাতে একটা কাগজ, তাতে লেখা "হিয়াকে ডাইনি ধরেছে, ওকে এটা দিও"। তার পাশে একটা শুকনো মুড়ি লেগে আছে। মিনি এখনো পরী ডাইনি এসবে বিশ্বাস করে। ও তাড়াতাড়ি মুড়িটা গুঁড়ো করে হিয়ার বোতলে দিলো। সেদিন মা বেরিয়েছিলেন। তখনই হিয়া এসে এক ঢোঁক জল খেল। মিনি দমবন্ধ করে দেখলো। হিয়া কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ বলল, "এই খেলতে যাবি ?"। মিনি মুচকি হাসলো; ওর দিদি ফিরে এসেছে! ও বলল, "আমায় দশ মিনিট দে।" ও সমুদ্রে দৌড়ে গেল, এবার ওর হাতে একটা কাগজ, তাতে লেখাঃ "ডাইনীটা কে?"। যখন জলটা আবার ওকে ত্থু করে ফেলে দিয়েছিল ডাঙ্গায়, ও বারবার ছোট্ট কাগজে লেখা নামটা পড়তে থাকলঃ "প্রীতি সাহা এখন জেলে!" কাগজটা বলল।
যখন স্কুল খুললো পরদিন তখন সবাই শুনলো যে প্রীতি দিদিমণি রিটায়ার করেছেন। কেন কেউ জানত না। মিনি এটা শুনত, আর একটু একটু হাসত যে ও সব জানে।
(বানান অপরিবর্তিত)