পিথাগোরাসের মধ্যে দার্শনিক, পয়গম্বর, বিজ্ঞানের লোক আর চালিয়াতের যে মিশ্রণ আমরা এর আগে দেখেছি, তা পূর্ণ রূপ পায় এম্পেদোক্লিসের মধ্যে, ৪৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ উত্থান হওয়ায় যাঁকে পার্মেনিদিসের অনুজ সমসাময়িক বলাই যায়, কিন্তু যাঁর মতামতের সঙ্গে হেরাক্লিতোসের মতবাদের মিল অনেক বেশি। ভদ্রলোক সিসিলির দক্ষিণ উপকূলের আক্রাগাস (বর্তমান আগ্রিজেন্তো, Agrigento)-এর বাসিন্দা ছিলেন; ছিলেন একজন গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ, যিনি আবার একইসময়ে নিজেকে দেবতা বলে দাবি করতেন। অধিকাংশ গ্রিক নগরীতে, বিশেষ করে সিসিলির শহরগুলিতে স্বৈরতন্ত্র আর গণতন্ত্রের মধ্যে এক নিরবচ্ছিন্ন দ্বন্দ্ব চলতো; যে দলেরই নেতারা হারুন না কেন – তাঁদের হয় নির্বাসন, নয় প্রাণদণ্ড হত। যাঁরা নির্বাসিত হতেন, তাঁদের কমসংখ্যকই লজ্জার মাথা খেয়ে গ্রিসের শত্রুদের সঙ্গে—পূর্বে পারস্য, পশ্চিমে কার্থেজ—আঁতাত করার চেষ্টা করতেন। যথাসময়ে এম্পেদোক্লিসও নির্বাসিত হয়েছিলেন, তবে মনে হয় নির্বাসনের পরে একজন কৌতূহলোদ্দীপক উদ্বাস্তুর বদলে ঋষি হওয়াকেই তিনি পেশা বেছে নিয়েছিলেন। যৌবনে তিনি সম্ভবত মোটের ওপর অর্ফীয় মতবাদী ছিলেন; নির্বাসনের আগে সম্ভবত রাজনীতি আর বিজ্ঞানকে মিশিয়েছিলেন, আর–খুব সম্ভব–পরবর্তীকালে, নির্বাসিত অবস্থায় তিনি হয়েছিলেন পয়গম্বর।
এম্পেদোক্লিসের সম্পর্কে কিংবদন্তি অঢেল। তিনি নাকি অলৌকিক, বা সেইরকম দেখতে ঘটনা ঘটাতেন—কখনো ম্যাজিক, কখনো তাঁর বিজ্ঞানের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে। আমরা জানতে পারি, তিনি নাকি বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন; তিরিশ দিন আগে মৃতা এক মহিলাকে নাকি তিনি ফের বাঁচিয়ে তুলেছিলেন; আর শেষমেশ নাকি নিজেকে দেবতা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ‘এটনা’ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের ভেতরে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণটি খুইয়েছিলেন। কবির ভাষায়,
“এম্পেদোক্লিসের ছিল মহৎ স্বভাব,
এটনায় ঝাঁপ দিয়ে হলেন কাবাব”
ম্যাথু আর্নল্ড এই নিয়ে পদ্যও লিখেছেন একখান—তাঁর লেখা সবচেয়ে খারাপ কবিতাগুলির একটি—তবে তাতে এই দু-লাইন নেই। [১]
পার্মেনিদিসের মতোই এম্পেদোক্লিসও পদ্যে লিখতেন। তাঁর দ্বারা প্রভাবিত লুক্রিশাস ( Lucretius), কবি হিসেবে তাঁর উচ্চ-প্রশংসা করলেও, তাঁর কাব্যপ্রতিভা তর্কসাপেক্ষ। বিশেষ করে, যেহেতু তাঁর লেখার কিছু বিচ্ছিন্ন অংশমাত্রই পাওয়া গেছে—সে কবিতার গুণাগুণ নিয়ে সন্দেহ থাকবেই।
যেহেতু এম্পেদোক্লিসের বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অপরের সঙ্গে সমঞ্জস ছিল না, তাই তাদের আলাদা করে সময় দেওয়া দরকার। আমি প্রথমে তাঁর বিজ্ঞান, তারপরে তাঁর দর্শন, আর সবশেষে তাঁর ধর্ম নিয়ে কথা বলবো।
বিজ্ঞানে তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল বায়ুকে এক পৃথক বস্তু হিসেবে আবিষ্কার। এর প্রমাণ হিসেবে তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল, কোনো বালতি বা সদৃশ পাত্রকে জলের মধ্যে উলটো করে ধরলে জল তাতে প্রবেশ করে না। তিনি বলছেন:
“চকচকে পেতলের জলঘড়ি নিয়ে ক্রীড়ারতা কোনো কন্যে যখন সেই ঘড়ির নলের ছিদ্র তার সুশ্রী হাতে বন্ধ করে ঘড়িটিকে রুপোলী তরল জলে নিমজ্জিত করে, তখন সেই তরল পাত্রে প্রবেশ করে না, বরং ভিতরের বায়ু, ঘনসন্নিবিষ্ট ছিদ্রগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি করে ততক্ষণ তাকে বাইরে রাখে, যতক্ষণ না মেয়েটি সঙ্কুচিত ধারামুখ খুলে দেয়; তখন সেই বায়ু বেরিয়ে আসে আর সম-আয়তনের জল ভিতরে ধাবিত হয়।” [২]
এই অনুচ্ছেদটি শ্বসনকার্যের ব্যাখ্যা লিখতে গিয়ে লেখা।
কেন্দ্রাতিগ বলেরও (centrifugal force) অন্তত একটি উদাহরণ তিনি আবিষ্কার করেছিলেন: দড়ির মাথায় বেঁধে জলভরা পেয়ালা ঘোরালে, জল বাইরে বেরিয়ে আসে না। উদ্ভিদের যৌনজনন সম্পর্কে তিনি জানতেন আর বিবর্তন ও যোগ্যতমের উদ্বর্তন নিয়ে তাঁর নিজস্ব তত্ত্ব ছিল (যদিও বেশ আজগুবি, মানতেই হবে)। মূল কথাটি: “সে এক বিস্ময়কর দৃশ্য—অগুণতি, সমস্ত সম্ভাব্য আকার-আকৃতির নশ্বর গোষ্ঠীর জীব ছড়িয়ে ছিল সর্বত্র।”[৩] গলাছাড়া মাথা যেমন ছিল, তেমনই ছিল কাঁধ-ছাড়া হাত, কপাল ছাড়া চোখ, ছিল মিলনাকাঙ্খায় উদ্যত অদ্বিতীয় অঙ্গ; এগুলি সুযোগ পেলেই একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হত। অগণন হাত-ওয়ালা জীবেরা পা ঘষটে চলতো, বিপরীতমুখী স্তন ও মুখমণ্ডল সহ জীব, ষাঁড়ের শরীর ও মানুষের মুখধারী জীব এবং মানবশরীরে বৃষমুখী জীবও ছিল। নর ও নারীর উভয়ের ধর্ম বহনকারী কিন্তু নির্বীজ উভলিঙ্গরাও ছিল। সবশেষে, এ সবের মধ্যে কেবল কিছু নির্দিষ্ট আকারই টিকে থাকে।
জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রসঙ্গে: চাঁদ যে প্রতিফলিত আলো ছড়ায়, তা তিনি জানতেন, তবে সূর্য সম্পর্কেও তাঁর একই ধারণা ছিল; তিনি বলেছিলেন, যে আলো এক জায়গা থেকে অন্যত্র যেতে সময় নেয়, কিন্তু তা এতই কম, যে আমাদের ঠাহর হয় না; তিনি এও জানতেন, যে, পৃথিবী আর সূর্যের মাঝে চাঁদ এসে পড়ে বলে সূর্যগ্রহণ হয়—মনে হয় এ তথ্য তিনি জেনেছিলেন আনাক্সাগোরাসের থেকে।
তিনি ইতালির চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, আর সেই গোষ্ঠী পরে প্লেটো ও আরিস্তোতলকেও প্রভাবিত করে। বার্নেটের মতে [৪], এর প্রভাব পুরো বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক চিন্তার ধারার ওপরেই পড়েছিল। এ থেকে তাঁর সময়ের বিজ্ঞানের প্রসারের পরিমাণের একটা আঁচ পাওয়া যায়, যার তুলনা গ্রিসের পরবর্তী যুগগুলিতে মোটে আর পাওয়া যায় না।
এবারে ভদ্রলোকের সৃষ্টিতত্ত্বে আসা যাক। আগেই বলেছি, ইনিই প্রথম ক্ষিতি, অপ, তেজ আর মরুৎ-কে চারটি পৃথক মৌলরূপে প্রতিষ্ঠা করেন (যদিও মৌল/element শব্দটি তাঁর ব্যবহৃত নয়)। এই চারটিই অবিনশ্বর হলেও এদের বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে এই জগতের নানা ধরনের জটিল, পরিবর্তনশীল বস্তুসমষ্টি বানানো সম্ভব। এরা বাঁধা পড়ে প্রেমে, আর বৈরিতায় পৃথক হয়। এম্পেদোক্লিসের কাছে প্রেম ও বৈরিতা-ও মাটি, আগুন, বায়ু আর জলের মতোই আদি বস্তু। কোনো কোনো যুগে প্রেম মাথা তোলে, আবার কোনো যুগে বৈরিতা বেশি শক্তিশালী হয়। এক স্বর্ণযুগ ছিল, যখন প্রেম পূর্ণ জয়লাভ করেছিল। সেই যুগে মানুষ শুধু সাইপ্রাসের আফ্রোদিতের উপাসনা করতো [৫]। জগতের পরিবর্তনের কোনো উদ্দেশ্য নেই, নেহাতই সম্ভাবনা আর প্রয়োজনের দ্বারা এই পরিবর্তন চালিত হয়। আর এই পরিবর্তন চক্রাকার: প্রেমের প্রভাবে মৌলগুলি যখন সম্পূর্ণ মিশে যায়, বৈরিতা ধীরে ধীরে তাদের আবার আলাদা করা শুরু করে; বৈরী মৌলগুলি পুরোপুরি পৃথক হওয়ার পর প্রেম আবার তাদের পুনর্মিলিত করে। এই কারণে, সব যৌগিক পদার্থই নশ্বর; প্রেম, বৈরিতা এবং মৌলিক পদার্থগুলি কেবল অবিনশ্বর।
হেরাক্লিতোসের সঙ্গে এই মতবাদের মিল থাকলেও এর সুর অপেক্ষাকৃত নরম, কারণ বৈরিতা বা দ্বন্দ্ব একাই পরিবর্তনের জন্যে দায়ী নয়, তার জন্যে প্রেম ও বৈরিতা উভয়েরই প্রয়োজন। প্লেটো তাঁর সফিস্ট (Sophist [৬]) বইয়ে হেরাক্লিতোস ও এম্পেদোক্লিসকে মিলিয়েছেন:
“কিছু আয়োনীয়—এবং অধুনা সিসিলীয়—মিউজ়ের মতে, এই দুটি আদর্শকে (এক ও অনেক) একত্র করাই শ্রেয় আর সত্তা একইসঙ্গে এক ও অনেক। কঠোর অনুসারীদের মতে এ দুটি শত্রুতা ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে একত্রে ধরা থাকে—সতত বিচ্ছিন্নতাকামী, সতত মিলনাকাঙ্খী; অন্যদিকে, নরম সুরের অনুসারীরা অবিরাম যুদ্ধ ও শান্তির ওপর জোর না দিয়ে, তাদের পরিবর্তন ও এই নিয়মের বাঁধন শিথিল হওয়ার কথা স্বীকার করেন; কখনো কখনো আফ্রোদিতির রাজত্বে শান্তি ও ঐক্য প্রাধান্য পায়, কখনো বৈরিতার নিয়ম মেনে যুদ্ধ ও বহুত্ব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।”
এম্পেদোক্লিসের ধারণায় পার্থিব জগত গোলীয় আকারের; যাতে কিনা, স্বর্ণযুগে সেই গোলকের বাইরে ছিল বৈরিতা আর ভিতরে ছিল প্রেম; তারপর ধীরে ধীরে বৈরিতা ভিতরে প্রবেশ করে আর প্রেমকে নির্বাসন দেয়, ততক্ষণ, যতক্ষণ পূর্ণ দ্বন্দ্বের স্থান ভিতরে আর ভালোবাসার অবস্থান বাইরে না হয়। তারপর, কোনো এক অজানা কারণে, আবার বিপরীত যাত্রা শুরু হয়, স্বর্ণযুগ ফিরে আসা অবধি। এ অবস্থাও চিরস্থায়ী নয়, পুরো চক্রটির তখন পুনরাবৃত্তি ঘটে। কারুর মনে হতেই পারে, যে, এই চূড়ান্ত অবস্থাদুটি অন্তত স্থায়ী হওয়ার কথা, কিন্তু এম্পেদোক্লিসের মত তা ছিল না। তাঁর চেষ্টা ছিল পার্মেনিদিসের যুক্তি অনুসরণ করে জগতে গতির অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা; কোনো অবস্থাতেই তিনি এক অপরিবর্তনীয় মহাবিশ্বে পৌঁছনোর চেষ্টা করেননি।
ধর্ম নিয়ে এম্পেদোক্লিসের মতামত মূলত পিথাগোরীয়। খুব সম্ভবত পিথাগোরাসের উল্লেখ সম্বলিত এক টুকরোয় তিনি বলছেন, “এদের মধ্যে একসময় একজন বিরল জ্ঞানের অধিকারী, সর্ববিদ্যাবিশারদ ছিলেন, এমন এক মানুষ, যিনি জ্ঞানার্জনের শিখরে পৌঁছেছিলেন; কারণ, যখনই তিনি নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করতেন – দশ, থুড়ি, বিশ প্রজন্মের সমান সমগ্র জগতের গতিপ্রকৃতির হদিস পেতেন।”[৭] আগে যেমন বলেছি, স্বর্ণযুগে মানুষ শুধুই আফ্রোদিতের উপাসনা করতো, “আর পূজার বেদি ষাঁড়ের শুদ্ধ রক্তের গন্ধে ম-ম করতো না, বরং শরীর থেকে প্রাণ নিংড়ে নেওয়ার পর অবশিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভক্ষন করাকে মহাপাতক বলে মনে করা হত।”
এক জায়গায় তিনি মহাসমারোহে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন দেবতা হিসেবে: “আক্রাগাসের হলুদ প্রস্তরমুখী মহান শহরে, দুর্গ-নিকটবর্তী উঁচু স্থানে বসবাসকারী, শুভকর্মে লিপ্ত, আগন্তুকের সম্মানীয় আশ্রয়, ক্ষুদ্রতা ও নীচতায় অনভিজ্ঞ বন্ধুরা – তোমাদের সকলকে অভিবাদন। এই যে তোমাদের মধ্যে আমি সশরীরে চলে ফিরে বেড়াচ্ছি, যারাই দেখা করছে, সম্মান জানাচ্ছে, ফুল আর ফিতে দিয়ে সাজানো মালার মুকুট পরাচ্ছে—আমার মৃত্যু নেই, আমি এক অমর দেবতা। যখনই কোনো সমৃদ্ধিশালী নগরে আমি আমার অনুসারীদের নিয়ে প্রবেশ করি, তখনই, পুরুষ-নারী নির্বিশেষে আমায় শ্রদ্ধা জানায়; অগণিতের ভিড় আমার পিছু নেয়, জানতে চায় — কোন পথে বেশি লাভ; কেউ চায় ভবিষ্যদ্বাণী, কিছু—নানা রোগযন্ত্রণায় জর্জর, বহু ক্লান্তিকর দিন কাটানো মানুষ—চায় নিরাময়ের বাণী... কিন্তু কেন আমি বারংবার এই নিয়ে এভাবে কথা বলছি? এ কি কোনো মহান ব্যাপার, যে এই মরণশীল, নশ্বর মানুষদের আমি ছাপিয়ে যেতে পেরেছি?”[৮]
অন্য এক জায়গায় নিজেকে তাঁর মহাপাতকী বলে মনে হচ্ছে, যেন নিজের অপবিত্রতার প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে তাঁকে:
“দেবতাদের প্রাচীন, চিরায়ত, কঠোর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এক আইন আছে—‘প্রয়োজন’[৯]-এর দৈববাণী—দীর্ঘায়ু কোনো দৈত্যের পাপী হাত যখনই রক্তে রাঙা হয়, অথবা বিবাদে লিপ্ত হয়ে তারা তাদের শপথভঙ্গ করে, অমৃতলোক থেকে নির্বাসিত হয়ে তাকে ত্রিশ সহস্র বৎসর কাটাতে হয় বারংবার নানারকম নশ্বর শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, এক ক্লান্তিকর জীবনের বিনিময়ে আরেক যাপন করে করে। বলশালী বায়ু তাকে সাগরে তাড়িয়ে দিলে, সমুদ্র আবার শুকনো ডাঙায় ছুঁড়ে ফেলে; পৃথিবীর টোকায় সে যখন জ্বলন্ত সূর্যের রশ্মিতে গিয়ে পড়ে, সূর্য তাকে আবার ফেরত পাঠায় বায়ুর ঘূর্ণাবর্তে। সকলেই তাকে অন্যের থেকে নিয়ে, অবশেষে প্রত্যাখ্যান করে। এই দৈত্যদেরই একজন এখন আমি—স্বর্গ থেকে নির্বাসিত এক পরিব্রাজক—কারণ অর্থহীন বিবাদে আমি একসময় ভরসা করেছিলাম।”
কী পাপ যে তিনি করেছিলেন, তা আমাদের অজানা; হয়তো আমাদের চোখে ভয়ঙ্কর তেমন কিছুও নয়, কারণ তিনি এও বলছেন,
বিজ্ঞানের বাইরে এম্পেদোক্লিসের স্বকীয়তা বলতে, চারটি মৌলিক পদার্থের মতবাদ আর পরিবর্তন ব্যাখ্যা করতে প্রেম ও বৈরিতার ব্যবহার।
এম্পেদোক্লিস অদ্বৈতবাদ (monism) খারিজ করেছিলেন আর মনে করতেন – প্রকৃতির কার্যধারা কোনো উদ্দেশ্যের বদলে সম্ভাবনা ও প্রয়োজন দ্বারা চালিত হয়। এই দিক থেকে পার্মেনিদিস, প্লেটো বা আরিস্তোতলের থেকে তাঁর চিন্তাধারা বেশি বিজ্ঞানসম্মত। অন্য সব ব্যাপারে তিনি সত্যিই কুসুংস্কার-অনুসারী ছিলেন; তবে সে দিক থেকে দেখলে ইদানীংকালের অনেক বিজ্ঞানের ব্যক্তিত্বের থেকে তিনি কোনো অংশে খারাপ কিছু ছিলেন না।
— বার্ট্রান্ড রাসেল
A History of Western Philosophy বইটির পঞ্চম পরিচ্ছেদের প্যালারাম-কৃত অনুবাদ
টীকা-টিপ্পনীর ব্র্যাকেটের মধ্যে অক্ষর থাকলে তা রাসেলের আসল ফুটনোট, সংখ্যা থাকলে তা অনুবাদকের পাকামো। ফুটনোট কণ্টকিত লেখাটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী, তবে ছবি-ছাবা দিয়ে সেই দোষ স্খালনের একটা চেষ্টা করা হয়েছে।