

মঙ্গলে এক বছর হল এসেছি। পৃথিবীর মত অত বড় নয় এই মঙ্গল। তাই বাড়িঘর এখানে খুবই ঘন ঘন। আর গাছপালা তো কিলোমিটারে একটা কি দুটো দেখা যায়। অবশ্য সেগুলো নেহাৎই শোভা বাড়ানোর জন্য রাখা। কারন মানুষ কৃত্তিম অক্সিজেন তৈরী করা শিখে গেছে। রোবটদের সংগে থেকে থেকে মানুষের যে আবেগ সেটাই আস্তে আস্তে লোপ পেতে শুরু করেছে । মনুষ্যতা না থাকলে সে আর কিসের মানুষ । তবে এদের একটা গুন হচ্ছে সততা। চুরি - চামারি এখানে নেই। এই তো সেদিন এখানকার হাইটেক বাসে করে যাচ্ছিলাম। তো কিছুদূর যাওয়ার পর বাসের রোবট কনডাক্টর হঠাৎ বাস থামাতে বলল। তো বাস থামতেই কন্ডাক্টর এক ছুটে একটা লোককে ধরে কিছু মাংডন দিয়ে এল। আমি তো অবাক। অকারনে একটা লোককে এত মাংডন দেওয়ার দরকার কী ? জিজ্ঞেস করতে কন্ডাক্টর বলল যে ঐ লোকটি আগের দিন এই বাসের ভাড়া দিয়ে চেঞ্জ না নিয়েই চলে গেছিল, তাই সে এখন গিয়ে চেঞ্জের মাংডন দিয়ে এল। আমি তো অবাক এরা এতো সৎ ? আমাদের পশ্চিমবংগ হলে এ হয়তো চেঞ্জ তো দিতোই না বরং উল্টে সে লোকটার পার্সটাই সটকে দিত। পার্স বলতে একটা কথা মনে পরে গেল যে এখানে লোকের পার্স চুরি করা এখানে অতো সহজ না । কারন এখানকার হাইটেক পার্সে হিডেন ফিংগারপ্রিন্ট লাগানো আছে। যা ভুল ফিংগারপ্রিন্ট পরলেই হাই ভোল্টের শক দেয়।
যাইহোক, আরো একটা মজার ঘটনা বলি , এই কিছুদিন আগেই আমার জন্মদিন গেল। কততম তা এই মুহুর্তে বলতে পারব না। হ্যাঁ, যা বলছিলাম জন্মদিন। তা জন্মদিনে পৃথিবীর লোক কী গিফট দেয়, না চকোলেট, বই ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই আমার জন্মদিনে কী পেলাম জানেন? আই ফোন, ল্যাপটপ, টিভি এবং অন্যান্য জিনিস। আসলে কী জানেন তো পৃথিবীতে তো এসবের প্রচুর দাম ছিল কারন এদের কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু মঙ্গলে বিকল্প কি, এদের থেকে হাজার ধাপ ওপরের জিনিস আনিষ্কৃত হয়েছে। তাই এসব জিনিসের দাম অত্যন্ত কমে গেছে। নানান সব রহস্যের সমাধান করে ফেলেছে মানুষ যর সমাধান মানুষ পৃথিবীতে বসে করার কথা ভাবতেও পারতো না। ই যেমন বারমুডা ট্রাঙ্গেল । সব থেকে বড় রহস্য ছিল সেটা। কিন্তু এখন জানা গেছে যে ঐ অংশের প্রায় দেড় কিমি ওপরে এক মহাজাগতিক চৌম্বকয় ক্ষেত্র ছিল। যার ফলে সব জিনিস তার আকর্ষনে একেবারে জলের তলায় চলে যেত। কিন্তু এখনও একটা রহস্য অজানা থেকে গেছে , হয়তো আর উদঘাটন হবে না। রহস্যট হলো সবথেকে বড় এই মহাকাশ। এই মহাকাশের সীমা কোথায় ? এর দৈর্ঘ্য কত ? কি করেই বা সৃষ্টি হ্লো এই কালান্তর শূন্য স্থান ? হ্যাঁ, এখনো অবধি মানুষ শুধুমাত্র দশ হাজার আলোকবর্ষবধি যেতে পেরেছে। অবশ্য এটি খুবই সামান্য যাওয়া। এর থেকেও হয়তো কোটি কোটি গুন বড় এই মহাবিশ্ব। অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় পাঁচশো কোটি আলোকবর্ষ অবধি দেখা গেছে। এই যে পরমানু, ইলেকট্রন, প্রোটন, এগুলো কী করে এলো ? কে বানালো ? এর উৎপত্তি কোথায় ? এইসব নিয়ে মানুষ এখনো গবেষনা চালাচ্ছে। আদৌ এই রহস্য উন্মোচন হবে কিনা তাই সন্দেহ। তো মংগলে এসে পর্যন্ত কারোর অমংগলের কথা শুনি নি। মানে এই গ্রহে একপ্রকার ভালো ছাড়া খারাপ ঘটে না। এই মংগলের মানুষরুপি প্রানী কতটা ভালো তার একটা উদাহরন দেই । এই সেদিন কী একট কাজে এখানকার স্থানীয় একটা অফিসে গেছিলাম। তো গিয়ে দেখলাম, যে এমপ্লয়িকে দরকার ছিল সে আসে নি। কী করবো হতাশ মনে ফিরে এলাম ভাবলাম পরের দিন যাব। তো পরের দিন যাওয়ার সংগে সংগে সেই এমপ্লয়িটি আমার কাছে ছুটে এল। আমার হাত ধরে বলল "দাদা , আমি কাল আসিনি তাই আপনি হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন, ঐজন্যে আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন দাদা, আমার না আসলে কাল জ্বর হয়েছিল, তাই আসিনি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন"। আমার তো একেবারে কিংকর্তব্য বিমূড় অবস্থা। আমাদের মংগল বলেই এটা সম্ভব। র আমাদের পৃথিবী হলে আমাদের উল্টে কর্মচারিটিকে বলতে হতো আপনি কেন আগের দিন আসেননি ? আর লোকটি খৈনী খেতে খেতে আচ্ছাসে দুটো গরম গরম কথা শুনিয়ে দিত। আর এমপ্লয়িটি যদি একটু বয়স্ক হতো, তাহলে তো আর দেখতে হতো না, প্রথমে কাস্টমারদের তাড়াহুড়ো নিয়ে দুটো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলত, তারপর যেত সরকারের অক্ষমতা হ্যান ত্যান প্রসংগে। শেষে একটা উক্তি দিয়েই কথা শেষ করত "দেশের কিচ্ছু হবে না"। তো এই হ্ল পৃথিবী ও মংগলের মানুষরুপি প্রানীর পার্থক্য। যাকে বলে আকাশ পাতাল পার্থক্য। তাহলে আজ এই পর্যন্তই থাক। পরের গল্পে আবার দেখা হবে।
kk | 2601:14a:502:e060:21d4:d6a8:3250:***:*** | ৩০ মে ২০২৩ ০১:৩৯520124
Tania Das | 2402:3a80:1cd0:a821:178:5634:1232:***:*** | ৩০ মে ২০২৩ ১০:১২520136
S. Chattopadhyay | 59.96.***.*** | ০৫ জুন ২০২৩ ১২:১৪520233