বয়স: ১২
ষষ্ঠ শ্রেণি
সেন্ট জনস ডায়োসেশান গার্লস হায়ার সেকেন্ডারী স্কুল
পাড়ায় ঢাকের বাদ্যি বেজে উঠেছে। মিনি, তিতির, সুমি সবাই নাচছে। আনন্দে কালো ভুতুও একটু কোমর দুলিয়ে নিল। দুর্গা ঠাকুর আসবে। কি মজা! কিন্তু গোলুর মজা নেই। কালো ভুতু ভৌ ভৌ করে গোলু কে জিগ্যেস করল, "গোলু দিদি, তোমার মন খারাপ? কেন গো? কি হয়েছে?" গোলু মুচকি হাসে, আবার কেঁদেও ফেলে। কালো ভুতু কে জানলা দিয়ে দেখায় যে মুখুজ্যেদের বাড়ির সামনে, একটা ছোট্ট মেয়ে বসে আছে। ওর কেউ নেই। পুজোয় একটাও নতুন জামা হয়নি। কিন্তু এই যে গোলু, মিনি, তিতির, সুমি এদের সবার এত্ত এত্ত জামা, এক বছরেই ছোট হয়ে যাবে। তখন কী হবে? এদিকে এই মেয়েটার মতো কত কত মেয়ে আছে, যারা পুজোয় জামা পায় না। ওই মেয়েটাকে দেখে গোলুর খুব কষ্ট হচ্ছিল। কালো ভুতু বলল, " ভৌ ভৌ! এই ব্যাপার! তোমার একটা জামা মেয়েটাকে দিয়ে দাও না। কত্ত জামা আছে তোমার। ওকে আমি চিনি গো। ওর নাম লিলি। লিলি খুব মিষ্টি।" গোলু বলে, " তা বললেই হয় রে। আমি মাকে বলেছিলাম। তবে নিজের মনেই একটা কেমন হল। আমার পরা জামা কাউকে দেবো? ওকে দিলে আমি নতুন জামা দেবো।" কালো ভুতু লেজ দুলিয়ে বলল,"ঠিক আছে, যা খুশি করো"।
কিন্তু গোলুর মনকেমন যায় না। ক্রমশ বাড়ে। চোখের সামনে মেয়েটাকে কষ্ট পেতে দেখতে ভালো লাগছে না গোলুর। হঠাৎ আকাশ থেকে একটা শিউলিফুল এসে পড়ে। একটু বড়! গোলু যেই না হাতে নেয়, ফুলটা কথা বলতে শুরু করে। বলে, "গোলু, তোমার মনে আছে মেঘ দিদির কথা?" গোলু বলে, "হ্যাঁ। কেন বলো তো?" "ওই আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছে। তোমার দুঃখ মেটাতে। কি হয়েছে তোমার?" শিউলি ফুল বলে ওঠে। কিন্তু গোলু কিছু বলেনা। ওর মনে হয় স্বপ্ন দেখছে। গোলু বলে, "জানো তো, ওই যে মুখুজ্যেদের বাড়ির কাছে, একটা মেয়ে বসে আছে, পুরনো গোলাপি জামা পরে, ওর খুব কষ্ট। পুজোয় একটাও জামা হয়নি। খুব দুঃখ। এদিকে দেখো। আমাদের কত জামা। এক বছরেই যেটা ছোট হতে চলেছে।" শিউলি ফুল খিলখিলিয়ে হেসে বলে, "মাত্র এই ব্যাপার। নিজের একটা জামা ওকে দিয়ে দাও। হয়ে গেল। তুমি যাও, পুজোয় মজা করো। কত এমন মেয়ে আসবে। প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছে।" গোলু রেগে যায়। বলে, "তুমি মেঘদিদির মতো ভালো নয়। মেঘ দিদি সমস্যার সমাধান করত। তুমি সমস্যা এড়াতে চাইছ। তুমি চলে যাও"। তখনই একটা দমকা হাওয়া এসে ফুলটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। ঢ্যাঙকুড়াকুড় শব্দের সঙ্গে গড়িয়ে গেল পুজোর দিন।
আজ দশমী। পুজোর শেষ দিন। গোলুর ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হচ্ছে। চোখ খুলে দেখে ছয়টা জামা। একটা কাগজে লেখা, "লিলি, মানে মুখুজ্যেদের বাড়ির সামনের মেয়েটাকে দিও। নতুন জামা।" কাগজটার পাশে কয়েকটা শিউলিফুল ছড়ানো ছিল। গোলুর বুঝতে বাকি রইলো না, এ সেই শিউলিফুল দিদি। সেই। মেঘদিদির মতোই ভালো। গোলু মনে মনে বলল, "শিউলিফুলদিদি, তোমাকে কক্ষনো ভুলব না।"
গোলু জামাগুলো নিয়ে ছুটতে ছুটতে দেখল আকাশে মেঘগুলো ঠিক শিউলি ফুলের মতো ধপধপে সাদা আর গোলুর মনে ঠিক সেইরকম খুশির মেঘ ভাসতে লাগল।