একটা গভীর জঙ্গলের গল্প বলি। দূর থেকে সবুজ গাছগুলোকে নীলচে দেখাতো। গ্রামের ধারে সেই জঙ্গলের ভিতর একটাই ঘর ছিল। সকলে দূর থেকে অবাক হয়ে দেখে ভাবতো, ওই বাড়িতে যারা থাকে তারা কত্ত সাহসী। নাহলে বুনো পশুদের মাঝখানে অমন করে থাকা যায় নাকি?এমনিতেই একটা নেকড়ে বাঘের ভয়ে সবাই কাঁটা হয়ে থাকতো। মাঝে মাঝেই গ্রামে হামলা করতো মানুষখেকো নেকড়ে। সে তো জঙ্গলে রাজা। যে সময়ের কথা বলছি তখন অন্যরকম সময়। আকাশের দেবতারা মাটির মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারতো। ভূত ,প্রেত , বাঘ , সিংহের ভয় ছিলো খুব। ম্যাজিকও হতো। তো গ্রামের লোকজনযে বাড়িটা নিয়ে কথা বলতো, সেখানে থাকতো দুই ভাইবোন—রবি আর শশী আর ওদের বাবা। মা ছিলো না। সেই ছোট্টবেলায় গ্রামের জলাশয় থেকে নেকড়ে বাঘ টেনে নিয়ে গিয়েছিলো ওদের মাকে। সেই থেকে বাবা কেমন পাগল পাগল হয়ে গেলো। ওদের কোলে করে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে চলে এলো। ঘর বানিয়ে থাকতে লাগলো। বলতো, রাতের বেলা মা নাকি এসে কথা বলে। ছোটো থেকেই রবি আর শশী এমন করেই বড়ো হয়েছে। নিজেরাই জঙ্গলে ঘুরে খাবার জোগাড় করে, নিজেরাই রান্না করে আর বাবাকেও খাওয়ায়। কোনোদিন কিছু কিনতে গ্রামে গেলে সবাই কেমন থাকায়। ওরা বোঝে লোকে ওদের ভয় পায়। পছন্দ করে না একদম। ওরাও রেগে রেগে থাকে। শুধু বাবাকে ভালোবাসে। কারণ কোনো কোনোদিন বাবা ওদের সঙ্গে আদর করে কথা বলে। মায়ের কথা শোনায়। রবি আর শশী মায়ের কথা ভাবে আর ঘুমিয়ে পড়ে। ওদের কেউ নেই তো!
এদিকে ওই মানুষখেকো নেকড়ে আরো লোভী হয়ে উঠলো। রবি আর শশীর নরম মাংস খাওয়ার জন্য ওর জিভ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। মাঝে মাঝেই ওদের কুটিরের চারপাশে লেজ নেড়ে ঘুরে বেড়াতো ব্যাটা। একদিন খুব বৃষ্টি পড়ছে। খুব। বাইরে জামা শুকোতে দিয়েছিলো শশী। বৃষ্টি হচ্ছে বলে তাড়াতাড়ি জামাটা নিতে গেছে, অমনি নেকড়েটা লাফিয়ে এলো সামনে। শশীকে খাবে। শশী তো কান্না শুরু করলো। রবি এসে যেই ডেকেছে—‘ বোন। ’ অমনি নেকড়েটা ওর দিকে আগুনের মতো চোখ করে তাকালো। ভাই বোনের কান্না আর নেকড়ের গর্জনে গ্রামের লোক বুঝলো আজ খারাপ কিছু ঘটবে। নেকড়ের মনে খুব আনন্দ। পছন্দের খাবার পেয়েছে। থাবা চাটতে লাগলো ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে। এমন সময় ঘরের ভিতর থেকে ওদের আধপাগলা বাবা ছুটে এলো সামনে। বাবারও চোখ জ্বলছে। বাঘের মতোন। বাবা রেগে রেগে বললো,‘ আমার ছেলে মেয়েকে খাবি না তুই। ’ রবি আর শশী বুঝতে পারলো, আসলে বাবা ওদের খুব খুব ভালোবাসে। ওদের জন্য লড়াই করবে নেকড়ের সঙ্গে। নেকড়ে তো গর্জন করে দিয়েছে এক লাফ। বাবাও লাফিয়ে পড়লো। তারপর দুজনেই পড়ে গেলো। রবি শশী দেখে নেকড়েটার শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বাবার হাতে একটা ধারালো ছুরি ছিল। নেকড়ে মরলো ওদের চোখের সামনে। কিন্তু বাবাও বাঁচলো কই?ওই একই সঙ্গে বাবাও চলে গেলো ওদের ছেড়ে। রবি আর শশী কাঁদতে কাঁদতে কুটির ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। ওরা বুঝতেই পারলো না ওদের পিছন পিছন ছায়া হয়ে ওদের বাবা মাও চলেছে। পাহারা দিয়ে। তারপর যখন ওরা কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়লো , একটা ম্যাজিক হলো। আকাশের সূর্য আর চাঁদ থেকে দুজন দেবদূত নেমে এসে ওদের নিয়ে চলে গেলো। রবি রইলো সূর্যের মধ্যে আর শশী চাঁদের মধ্যে। ওদের কুটিরটা বাতাসে মিলিয়ে গেলো। পরের দিন গ্রামবাসী এসে দেখলো কুটিরের জায়গায় একটা ফুলগাছ জন্মেছে। তাতে একটা থোকায় চারটে ফুল। যেন রবি শশী আর ওদের বাবা মা! দূরে শয়তান নেকড়ের শরীর জ্বালিয়ে দিয়ে গ্রামবাসী ওই গাছটাকে বেড়া দিয়ে ঘিরে দিলো। আর যেন কেউ গাছটার ক্ষতি করতে না পারে। রোজ একজন করে এসে ওই গাছের যত্ন করে যেতো। সবাই অবাক হয়ে দেখতো গাছটায় চারটে ফুল সবসময় একসঙ্গে ফুটে থাকে। রবি আর শশীর মনের ইচ্ছের মতো।
বাহ বাহ । অনেক বড় হও দেবাদৃতা।
খুব সুন্দর লিখেছ। আরো লেখো। কেমন? আরো গল্প শোনাও।
খুব সুন্দর , অনেক আশীর্বাদ
খুব ভালো হয়েছে। আরো লেখো।
বাহ বাহ! খুব সুন্দর গল্প হয়েছে দেবাদৃতা। আরো লেখ। আরো আরো লেখ। অনেক আদর।
ভারী সুন্দর লেখা হয়েছে দেবাদৃতা। গল্পটা পড়ে দুঃখ হচ্ছিলো, আবার শেষটা কী সুন্দর! ম্যাজিকের গল্প আমার খুব ভালো লাগে।
আর বলতে ভুলে গেছিলাম, ছবিটাও ভীষণ ভালো হয়েছে!
খুব ভালো লাগলো গল্প টা কুহু,ফুলের মতোই সুন্দর হয়ে উঠুক তোমার ভবিষ্যৎ।
দারুণ হয়েছে দেবাদৃতা। যেমন গল্প লেখা, তেমন সুন্দর আঁকা। এভাবেই এগিয়ে যাও। আরও লেখো। অনেক আদর।
খুব সুন্দর গল্প। অসাধারন!!