
একদিন অভীক, সময়, বিমান আর নবীন গ্রামের মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। খেলতে খেলতে বলটা অভীক এত জোরে মারল যে সেটা মাঠের পাশের জঙ্গলে গিয়ে পড়ল। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে আসছে। মাঠের সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। কেউ ওই জঙ্গলে যেতে সাহস পাচ্ছিল না। কারণ ওই জঙ্গলের পিছনের আছে গ্রামের সেই বিখ্যাত হানাবাড়ি, যেটা কি না কম করে দুশো বছর পুরনো। এটি ছিল গ্রামের জমিদার বাড়ি। সবাই বলে, সেই বাড়িতে নাকি ভূত আছে। তখন দলের সবচেয়ে সাহসী ছেলে নবীন এগিয়ে এল। বলল, ‘তোরা সব ভীতু। ওদের বল আনতে হবে না। আমিই আনছি।’ তখন সবার মনে পড়ে গেল নবীনের ছোটবেলার একটা ঘটনা, যা থেকে বোঝা গেছিল যে নবীন মারাত্মক সাহসী ছেলে। একবার নবীন বাবা-মায়ের সঙ্গে দার্জিলিং-এ বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে তাকে একটি সাপে ধরেছিল। তখন তার বয়স মাত্র দশ বছর। সে একটা গাছের ডাল কুড়িয়ে নিয়ে তাই দিয়ে সাপটাকে মেরে ফেলেছিল। খেলার মাঠে ওর বন্ধুরা ওকে সাবধানে বলটা আনতে বলল। নবীন বলল, ‘ঠিক আছে’। এই বলে নবীন সেই জঙ্গলের দিকে চলল। বলটা খুঁজতে খুঁজতে সে কিছুদূর পেরিয়ে এসে দূর থেকে সেই হানাবাড়িটাকে দেখতে পেল। নবীন আপনমনে এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে সেদিক এগিয়ে চলল। হঠাৎ-ই সেই যেন বাড়িটার ভিতর থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পেল। খট-খট-খট-খট। আওয়াজটা শুনে তার কৌতুহল হল। বলের কথা ভুলে গিয়ে সে সেই আওয়াজ লক্ষ করে বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল। যেতে যেতে আওয়াজটা তার কানে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠল। একটু ভয় ভয় করলেও সে চলা থামাল না।
এখন সে হানাবাড়িটার খুব কাছে। আওয়াজটা হয়েই চলেছে। সে পা টিপে টিপে সেই বাড়িটার ভিতরে ঢুকে পড়ল। বাড়ির প্রথম ঘরটায় সেই দেখল অনেক কাঠের টুকরো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ে আছে। এগুলো সব ভাঙা দরজা-জানলার টুকরো। সেই সেই কাঠকুটো ডিঙিয়ে চলে এল বাড়িটার বৈঠকখানায়। এই ঘরটাও ভাঙাচোরা। বৈঠকখানার একদিকে একটা দরজা মোটামুটি আস্ত ছিল। সেটা বন্ধ অবস্থায় ছিল। সেই দেই দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকল। সেখানে সে দেখতে পেল একটা ঘর আর ঘরের এক প্রান্তে একটি নীচে নামার সিঁড়ি। নবীন সেই সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে লাগল। সিঁড়িটা এসে পৌঁছেছে মাটির নীচে আরেকটি ঘরে। সে দেখল সেই দেয়ালের গায়ে একটা সুড়ঙ্গ। সেটা গভীর অন্ধকার। সে যখন সেই সুড়ঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তখনই সেই খট-খট আওয়াজটা আবার শুনতে পেল। মনে হল কে যেন সিঁড়ি বেয়ে তার দিকে নেমে আসছে। এই প্রথম নবীনের বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠল। সে সবে ভাবছে যে কোথাও লুকিয়ে পড়বে কিনা, তখনই সে একটা হা-হা-হা অট্টহাসির শব্দ শুনতে পেল। তখন ওপর দিকে তাকিয়ে সে দেখল একটা আস্ত নরকঙ্কাল সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে। তারই পায়ের আওয়াজ হল সেই খট-খট শব্দ। ভয়ে দিশেহারা হয়ে নবীন পড়িমড়ি করে সেই অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়ল। সুড়ঙ্গটা ক্রমশ সরু হয়ে গেছে। নবীনকে রীতিমত হামাগুঁড়ি দিয়ে চলতে চলতে হচ্ছিল। পিছনে সেই কঙ্কালটা আসছে কিনা সেই দেখতে পাচ্ছিল না, তবু সে ভয়ে দিশেহারা হয়ে প্রায় ছুটছিল। ছুটতে ছুটতে সেই একসময় সে দিনের আলো দেখতে পেল। সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় পৌঁছে সে দেখল যে সে মাঠ পেরিয়ে গ্রামের অন্য প্রান্তে তাদের নদীর ধারে এসে পড়েছে। নদীর ধারে গাছপালায় ঘেরা জঙ্গলের মত একটা জায়গায় সে সুড়ঙ্গের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে সে আবার খেলার মাঠে এসে পৌঁছল। তখন পুরোপুরি সন্ধ্যে নেমে গেছে। তবু সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছিল। নবীন তাদের কাছে পৌঁছে পুরো ঘটনাটা তাদের বলল। তখন ওদের দলের অভীক বলল যে, ও নাকি ওর বাবার কাছে এই বাড়িটার ইতিহাস শুনেছে। বাড়িটা নাকি ১৭৯৮ সালে তৈরি। ওই বাড়িতে স্থানীয় জমিদার থাকত। একবার সেই বাড়িতে ডাকাত পড়ে। ডাকাতেরা নাকি কারোকেই বাড়িতে পায়নি। শুধু জমিদারের অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে পায় এবং তাকে মেরে বাড়ির সব সম্পত্তি লুট করে নিয়ে চলে যায়। তখন ওরা সবাই বুঝল যে জমিদার বাড়ির সবাই সেদিন ওই সুড়ঙ্গপথেই পালিয়ে গিয়েছিল। আর নবীন যে কঙ্কালটা দেখেছে সেটা ওই জমিদারের বাবার অতৃপ্ত আত্মা।
kk | 69.143.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০২:১৫518748
Palash Paul | 202.142.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৩০518754
শালবনী ঘোষ | 2405:201:800d:d80c:ad7e:bdaf:a7de:***:*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০৮518755
প্রজ্ঞাপারমিতা | 223.223.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৪৯518760
সুশান্ত কুমার শী | 103.17.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৫৪518761
সুজাতা বসু রয় চৌধুরী | 49.37.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১০:০৩518763
মোর্শেদা পারভীন | 2405:201:8014:4180:fd1d:e5ca:48f:***:*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:০৫518770
Anurupa Ghosh | 2409:4060:281:ba69:6cbb:8053:2445:***:*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৩৫518776
কৃষ্ণেন্দু তালুকদার | 2402:3a80:1cd5:ef62:4727:ca87:8848:***:*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:১২518781
নন্দিনী ঘোষ | 117.24.***.*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২০:৩৭518792
চন্দন | 115.187.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১০:১৮518824
ঋতুরাজ গোস্বামী | 2405:201:9004:1054:b02f:ca1a:5948:***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৪৬518825
Sukti Sarkar | 37.232.***.*** | ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৫০518844
aranya | 2601:84:4600:5410:fce3:9fc7:336b:***:*** | ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০১:০২518845
মধুমিতা গণ। | 2409:40e0:105b:4f4a:8000::***:*** | ১৭ মে ২০২৩ ২২:১৬519855
Kalyan dasgupta | 115.96.***.*** | ২১ জুন ২০২৩ ০৭:০৪520597