ঘটমান বর্তমান ঘটেনাতো পিছনের কথামুখ ভুলি।
দিলদরিয়াতে নেমে একে একে খুলে যায় --
এ ‘আমির’ আবরণ গুলি।।
এ শহরে গরম বড়ো শুকনো। বেলা না বাড়তেই লাল ধুলোয় ঘূর্ণি বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায় শুকনো শাল পিয়াশাল এর পাতা। পথের মানুষগুলির শরীর থেকে শুষে নেয় জল ---মুখ আর হাত পায়ের আঙ্গুলগুলি শুকিয়ে ওঠে। ঠোঁট, গাল ফেটে যায় শীতকালের মতোই। ভিজে গামছা মুখে মাথায় জড়িয়ে লোকে কাজে কম্মে বেরোয়। কোর্ট কাছারি ইস্কুল শুরু হয় বেশ সকাল সকাল, বেলি, জুঁই আর পাকা কাজুফলের গন্ধ মেখে। কিন্তু ছুটির সময়তো সেই পুড়তেই হয়! রিকশা করে মাইক নিয়ে ঘোষণা করা হয় বাড়ি থেকে না বেরুতে।
এদিকে শুক্রবার শুক্রবার বই বদলায় আর সেটাও জানাতে মাইক নিয়ে ভর দুপুরে বেরোয় শহরের বিখ্যাত ঘোষক সাব্বির। পরিচিত দানাদার, একটু বিকৃত নাটুকে গলায়, জগাখিচুড়ি হিন্দি তে প্রতিধ্বনি হতে থাকে ---হাঁ.....আইয়ে… অব মিলনী টকিস কি রূপলি পরদে মে দে….খিয়ে…… মস…হুর ফিল্ম…. খুদা গাওয়া…. আআআ…..। বাতাসে ঘুরপাক খেতে খেতে ঘরের কোনে পৌঁছে যায় সেই আওয়াজ। শুধুই পেটের দায়, নাকি মনের মাঝের অন্য ভুবন থেকেও আসে এই জোর? আমাদের একেকজনার থাকা কি কেবল একটি মাত্রাতেই, একটি ভুবনেই বাঁধা ? মুরগি বেচা আতাউর সন্ধ্যে গড়ালে দোকানের ধোয়াধুয়ি শেষে সবজিবাজারের দিকটার খালি চাতালে বসে বাঁশি বাজায়। পাশেই তাসের আড্ডা বসে। ওজনে দাঁড়িমারা মাছওয়ালা স্বপন তাসের দিকে নজর রেখে মাথা দোলায়। জামিলা পাগলী তার সুঠাম শরীর নিয়ে এখানেই রাতে ঘুমোয় । অনেক রাতে দু একটা ছায়া ঘোরে আশেপাশে, আর তাদের ঘিরে চেঁচামেচি করে ঘুরতে থাকে খান তিন চার নেড়ি কুকুর । এরা দিনের বেলা জামিলার সাথেই খায়। নেপালি নাইট গার্ড মস্ত বড় টর্চ নিয়ে এসে দাঁড়ায়। সবাই তাকে বাহাদুর বলে ডাকে।অন্ধকারে পাশের অশ্বত্থ গাছ বুঝি সব দেখে, আর দেখে মধুশালা ফেরত কিছু রসিক জন, নাইট শো ভাঙা নারী পুরুষ।
দুপুরের পর থেকেই ঘরের দেওয়ালগুলি ভিতরে তাপ ছাড়তে শুরু করে। দরজা জানলা বন্ধ করে ঘর অন্ধকার করে যে আরামটুকু নিয়ে কিছুটা সময় কাটানো গেছে, আর সেটি থাকেনা। রাত পর্যন্ত ঘরগুলি তে ঢুকতেই ইচ্ছা হয়না। তাই বিকেল থেকে সন্ধ্যে, সন্ধ্যে থেকে রাত লোকজন রাস্তায়, ছাদে, মাঠে। রান্নাবান্নাও আর রাতে তেমন করতে চায়না কেউ। ও বেলার ভাতে জল ঢেলে, হয়ত সামান্য ভাজাভুজি। ছাদেই বিছানা পাতে বহু মানুষ। গ্রীষ্ম যাপন তাই একা নয়,আশপাশের মানুষকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে--- চাঁদের আলোয় বা তারার আলোয় ---কেমন জানি এক বয়ে যাওয়া গল্প। এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া বা ভেসে আসা কোনো সুর, ঘরোয়া সাদামাঠা কথা, অজানা আদেখা তীর্থস্থানের গল্প গুনগুন করে বলে যায় কেউ। তাকে ঘিরে কৌতূহল। কখনো বা অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো দুঃখের চারণ, এ জীবনে, কারবালা,বা মহাভারতের পাতায় অভিমন্যু ----সব একাকার হয়ে যায় এই সব রাতে, রাতের গল্পে। গাছের পাতাগুলি শিরশির করে যেন মাথা নাড়ে। সব দেশে সব কালে সাধারণ মানুষ বুঝি এভাবেই একসাথে বলে যায়, সয়ে যায়, নিয়ে যায় গল্পের পিছনে গল্পকে। আর আমাদের দিলদার নগর তো গল্প বলে সারা অঙ্গ দিয়ে।
ওরাও গল্প করছিলো। দীর্ঘ পরীক্ষা শেষে সারাদিন কী করি কী করি অস্থিরতায় অপেক্ষা করে থাকে বিকেলের জন্যে। শহরের মধ্যিখানে বিশাল সেই মাঠ। দূর থেকে হেঁটে আসা মানুষটিকে যেন পুতুলটির মতো লাগে, ঠাহরই হয়না ঠিক ঠাক। কাছে এলে তবে বোঝা যায়। এ মাঠে গরমে ফুটবল, শীতে ক্রিকেট, সকালে বিকালে দেহচর্চা, বয়স্কদের হাঁটা। কলেজ আর ইস্কুলের মাঠ একসাথে, তাদের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয়, আর হয় ২৬ জানুয়ারি র দশ মাইল দৌড়। বেলুন, ফানুস, লোকের ভিড়ে জামজমাট। সাইকেল চালানো শেখে ছেলেমেয়েরা। ওদেরও কেউ কেউ এখানে সাইকেল শিখেছে, যারা শেখেনি তাদের শেখাচ্ছে। কানের পাশ দিয়ে বাতাসের শব্দ বয়ে যায়, জোরে দৌড়ালে বা সাইকেল চালালে।
একটু আগেই আলো ছিল। তখন পর্যন্ত ট্রেনিং চলেছে। পিছনে তেঁতুল গাছ আর কলেজ হোস্টেলের আড়ালে পশ্চিম সূর্য একটু লালচে হতেই সামনে পূব দিকে দূ..উ... রে…রাস্তার ওপারে কলেজ আর কলেজিয়েট ইস্কুলের হলদে মেরুন পুরোনো বাড়িগুলো কেমন জানি একটা কমলারঙা হয়ে গেলো। রাস্তা দিয়ে সাইকেল, গাড়ি, মানুষজন সবই ছোট ছোট দেখায় এখান থেকে।
ওরা যেন কেমন আলাদা একটা দ্বীপে বসে আছে। ডান দিকে কাঁচা রাস্তার ওধারে পুরাতন জেলখানার জানালাগুলি এখন মাটি ছোঁয়া, টিমটিমে আলো দেখা যায় দু একটিতে। ওধারে একদিকে ভবঘুরেদের আবাস হয়েছে, এদিকটাতে কিছু মানুষ থাকে, একটু ছান্নছাড়া যেন। এরা ঠিক জানেনা ওরা কারা। কতদিনের এই জেলখানা কেউই ঠিক বলতে পারেনা। ইংরেজদের আগে থেকেই এটা ছিল। ছোট থেকে শুনে আসছে একটা নাকি সুড়ঙ্গ আছে ভিতরে, সেই পশ্চিম দিকে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের গড়ে গিয়ে উঠেছে। ওদিকে হাতির আনাগোনা।পাঠান, মোগল, বর্গী, নাকি জেলের কয়েদি বানিয়েছিলো সেই পথ তাও কেউ সঠিক বলতে পারেনা। এই জেলখানা নাকি আসলে দূর্গ। কখনো পাঠান, কখনো বর্গী আবার কখনো এখানে ডেরা বেঁধেছিলো আলিবর্দি নবাব, নাতি সিরাজ, সেনাপতি মীর জাফর! ইস্কুলের ইতিহাস বইতে সেসব কথা লেখা নেই । মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, দিল্লী, বোম্বাই, কলকাতার কথা মুখস্ত করেছে ওরা, আর ঘর করেছে এসব নিয়ে। ঘরের গল্প মুখে মুখেই ফিরেছে খুব বুড়ো মানুষ, শহরে পড়ে থাকা তন্নিষ্ঠ অথচ অস্বীকৃত মানুষজনের আড্ডায়। মাঠ এখন যত বড়, তার চেয়ে অনেক বড়ো ছিল নাকি আগে। ইস্কুল, কলেজ, পোস্টাপিস, হাসপাতাল--- কিচ্ছু ছিলোনাক সেই তেপান্ন্তরে! এ মাঠ যুদ্ধের মাঠ। পাঠানের সাথে মোগল, বর্গীর সাথে নবাবের যুদ্ধের মাঠ। মাটি ছুঁয়ে বাস করা মানুষের কত বিদ্রোহের সাক্ষী! ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, জনতার সামনে ফাঁসিও দেখেছে এই মাঠ! আর ওই যে দূরে ইস্কুলের কোয়ার্টার, সেখানেই তো বাস করতেন এক ঋষি মানুষ। নব জাগরনের রাজনারায়ণ। শহরের লাল মাটির চওড়া রাস্তাগুলি, শহরের পাশের পাহাড়, জঙ্গল, ঝর্ণা ----সব কিছুকে ভালোবেসে তিনি চেয়েছিলেন এই নগরের নাগরিক হিসাবেই পরিচিতি পেতে। মেয়ের বিয়ে দিলেন এখান থেকেই। সেই মেয়ের সন্তান নাতিটি বিলাত গেলেও বিলাতি হলোনা, নিজেকে দিয়ে দিলে দেশের কাজে। সশস্ত্র ছিল সেই পথ, আর সেই পথই আবার তাকে টেনে আনলে এই শহরেই। অনেক পরে তার পথ গিয়ে ছোঁবে তারার আলোয় মাখা সর্ব মানুষের মুক্তির পথকে, সে নিজেও হয়ে যাবে আরেক ঋষি, লিখবে, দিব্য জীবন !
অথচ এই শহর ই দেখো কত কতবার নরক দর্শন করলো! নাকি সে সেই কষ্টের মধ্যে দিয়েই বীতশোক হওয়ার পথে এগোলো?
পূর্ণিমার পর পর ই চাঁদের ক্ষয় শুরু হয়। শিবাজী সদাশিব এর গল্পে গড়া মন সহ্য করতে পারেনা বর্গীর নিষ্ঠুরতার গল্প । আবার সেই নাগপুর থেকে! যেখানে কত আত্মীয়, আসাযাওয়া, ঝলমলে স্বাধীন জীবনের হাতছানি! এ শহরের রেল স্টেশনকে একদা বেঙ্গল নাগপুর রেল স্টেশন বলেতো ডাকা হত! বীর শিবাজীর গেরুয়া ঝান্ডা দুর্বলের রক্ষাকারী, শত্রুর যম। নারী তাঁর কাছে পরম সম্মানের, যে ধর্মেরই হোন। তাহলে তাঁর পথের রেখা কাজে লাগিয়ে কারা চড়াও হলো এ শহরে? তাদের ওড়ানো ধূলিটুকুই শুধু গেরুয়া, আর সব কালো, মাথার লাল ফেট্টি টুকু বাদ দিয়ে! সারা বাংলা জুড়ে ওলোট পালট এই হিংস্র বুলবুলির দাপটে! তোলাবাজি আর অত্যাচারের সেই ঝড় দিলদারকে রক্তে ভিজিয়ে দিয়ে গেলো। অথচ দেখো, বৃন্দাবনকে অনুসরণ করে গড়ে ওঠা কিছুদূরের পরম বৈষ্ণব সহরটি কিন্তু বেশ লড়াই দিয়েছিলো। তাদের নগর দেবতাই নাকি স্বয়ং বর্গীর দল মর্দন করে দিলেন বিশাল কালো কুচকুচে কামানটি দেগে । দিলদারে কামান ছিলোনা, ছিল দেবালয়, মাজার, মসজিদ। লোকে বলে কাবার চেয়ে নাকি মাত্র এক তিল কম তার মান। সেখানেই মানহারা হলো মানবী! যে অমৃত সুধার ভরসায় মানব শিশু চোখ খোলার আগে মুখ খোলে, খেলার ছলে তারোয়ালের কোপে সেই অমৃত ভান্ডার ছিন্ন করলে তারা! গলায় দড়ি বেঁধে পশুর মতো ধরে নিয়ে যাওয়া হলো বধূ কন্যা , একে একে ছিন্ন ভিন্ন করা হলো তাদের সতীপীঠ ----হর হর মহাদেব চিৎকারে! নাক কান কাটা পুরুষ গুলি হাহাকার করে বেড়াতে লাগলো পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি খেত খামারে! বারবার আসতো তারা ---এক দশকেরও বেশী সময় ধরে! বাংলার জলময় দক্ষিণ দিক নাপসন্দ ছিল শুকনো জায়গার এই হানাদারদের। সেই দিকটি নাহয় জলদস্যুদেরই থাক। দিলদার তাই অন্তত বেঁচে গেলো মগ, পর্তুগীজ, আরাকানির হাত থেকে কিছুটা। তবু খবর তো আসে কিছু! আত্মীয় স্বজন আসা যাওয়ায়! রাধামানির দাস বাজার আর কদ্দুর!
বুলবুলির দল এলো উত্তর পশ্চিমের পঞ্চকোট পাহাড়ের পথ ধরে পুরুলিয়া হয়ে বর্ধমান জ্বালিয়ে বাঁকুড়া হয়ে। তাদের দমনে আলিবর্দি মীর জাফর সিরাজ। বার বার যুদ্ধ বার বার আক্রমণ। রাজায় রাজায় লোভের যুদ্ধে তস্করের পোয়া বারো! পালের গোদা ভাস্কর পন্ডিতকে ছলে বলে আলিবর্দি মুর্শিদাবাদ নিয়ে গিয়ে হত্যা করলে আক্রমণ হলো আরো তীব্র আরো নিষ্টুর-- রঘুজী ভোসলে র জমানায়। ছারখার শহর শেষমেষ বুঝি একটু শান্ত হলো কোম্পানি ফৌজ এর হাতে পড়ে। তখন কে জানতো যে, সেই আপাতত শান্তি আসলে আরেক নৈরাজ্যের সূচনা? তিলে তিলে ভাতে মারার অদ্ভুত এক বেনিয়া জমানার খুঁটি পুজো?
ওরা চুপচাপ বসে আছে। গল্প টা বলেছিলো ইতিহাসের পাগলা স্যার। কোনো ইস্কুলে পড়ায়না , অথচ কোচিং এ কি ভীড়! গল্প বলে বলে মাথায় ঢুকিয়ে দেয় । ফাঁকিবাজরা গল্পটুকু লিখেই পাস নম্বর তুলে ফেলতে পারে। গল্প তো আর ভোলেনা তারা, সেতো হৃদয়ে গাঁথা! ক্লাসের পড়ার বাইরে সব কথা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি ওরা, তবু আবছা মত কিছু কথা, যা এমনি বলা কওয়ায় আসেনা, অথচ রোজকার জীবনে, পড়ে আসা ক্লাসের পড়ার সাথে কী যেন একটা ভাবে জড়িয়ে পড়ে। কত বই স্যারের! কিছু বই একটু অন্যরকম,ওগুলোকে জার্নাল বলে। বিদেশ এর গন্ধমাখা কিছু। আবার খুব পুরোনো, কেমন যেন বাংলা, ছাপাটাও অন্য রকম। প্রকাশনা তারিখ দেখতে শিখেছে ওরা –প্রায় একশ বছর আগের! আদর করে ওরা পাগলা বলে, আসল নাম তো মদনমোহন! পুরো নামে ডাকেনা কেউ। মা ছাড়াও স্যারের বৌ কে দু একবার দেখেছে ওরা, বাপের বাড়ি থাকে।
বর্গীদের সবাই নাকি মারাঠা ছিলোনা! একদিকে তারা যেমন দস্যু লেঠেল পুষতো, অন্য দিকে যত রাজ্যের অপরাধী, চালচুলোহীন অপদার্থ, জাল- জুয়াচোর গিয়ে আশ্রয় নিতো বর্গী শিবিরে --- লাভের গুড় খেতে। একটা দেশ, জাতি বা আদর্শ ---তিল তিল করে গড়ে উঠতে, শিখরে পৌঁছতে কতইনা তার সংগ্রাম! আর দেখো যখন তার কাঠামো,আদর্শ দুর্বল হয় তখন কেমন মাছির মত চারপাশ থেকে ছুটে এসে ঢুকে পড়ে একেবারে উল্টো পথের মানুষ! নাকি আবর্জনা? দারিদ্র তাদের শুধু অর্থে নয়, সর্বার্থে ---পরমার্থে !
স্যার মাথা নেড়ে ছড়া কাটেন :
সর্বহারা নয় এরা সর্বার্থে হারা।
বীর্যহীন মেধাহীন পাজি হতচ্ছাড়া।।
সমাজের চাকা নয়, পুতিগন্ধ ডোবা!
সমাজকে করে দেয় নীতিহীন বোবা।।
রাজা ধর্মহীন হলে মাৎস ন্যায় দেশে ।
এদের উত্থান হয় গরীবের বেশে।।
সার্বিক অনুকম্পা আহরণ করে ।
চিত্তের বিকারেতে দশ দিক ভরে।।
লুন্ঠন, জালিয়াতি করে ভরে পেট।
ইতিহাসে লুম্পেন প্রলেতারিয়েট।।
এটা সেটা ছাড়া ছাড়া গল্প সল্পের মধ্যে জেলখানার আলো….অন্ধকার পথ বেয়ে ওরা কি চলে গিয়েছিলো ১৭৪০ থেকেশুরু হওয়া সেই জ্বালা পোড়া সময়টাতে? মাথার উপর আচমকা পেঁচার ডাক,একটু মেঘের গুড় গুড়, এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়ায় ভর করে বড়ো কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি। তড়বড় করে উঠে পড়ে সব।বৃষ্টি নামে ঝমঝম করে । নাকে এসে লাগে গরম মাটিতে প্রথম বর্ষার জল খাওয়া ভাপ আর সুগন্ধ। কিন্তু এখন রাত্রি নামছে। ঘোর অন্ধকারে এবড়ো খেবড়ো মাঠের মধ্যে দিয়েই ওরা সাইকেল চালাতে থাকে দূরে আলো জ্বালা রাস্তার দিকে। প্রত্যেকেই এখন পৌঁছতে চায় যার যার বাড়ি, যত তাড়াতাড়ি। আলো জ্বলা বাড়ির স্থিতিশীল বর্তমান শুষে নেয় কত অজানা ভয়, কত অনিশ্চয়তা! ওরা এখনো বোঝেনি এরকম প্রতিটি বর্তমান আর বর্তমান এর প্রতিটি আলোজ্বলা বাড়িই একদিন সময়ের আবর্তে হারিয়ে যায়। নাকি কিছুই হারায়না ? দিলদার তার বুকের মধ্যে তাদের টেনে নেয় মাত্র? তারপর তারা হয়ে যায় গল্প –উপকথা, কোনো শোকগাথা হয়তো বা, রূপকথাও কখনো কখনো ---উপাদানের চরিত্র মাফিক?
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।