এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক

  • দিলদার নগর ১০

    Aditi Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৩৫২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (৪ জন)
  • বেচা কেনা সাঙ্গ করে বন্ধ চোখ দোকানের ঝাঁপ
     নিতে চায় নীরব এ বিশ্রামের স্বাদ---
    ফিরতি পথে ---মাতৃ পথে-- পাড়ি দিতে চায় আজ যত পুণ্য পাপ ---
    সেই পথ ঘিরে রাখে সে আদিম অনাহত নাদ।
     
    পাখি বুড়ির চোখ কটা , ঝুলে পড়া চামড়া এখনো আলো আলো। কাঁচা পাকা চুল এখনো ঢেউ খেলে কপালের উপর। পাখি বুড়ি কালো ব্লাউজ আর গায়ে মাখা সাবানের সুবাস মাখা হালকা রং এর শাড়ি পরে রাস্তার কলের ধারে তার বাড়ির রোয়াকে বসে থাকে আর পান খাওয়া লাল টুকটুকে ঠোঁট নেড়ে মিষ্টি মিষ্টি সুরে খাস্তা খাস্তা খিস্তি মারে। পাও দোলায়। জল নিতে আসা বৌরা, মেয়েগুলি হেসে কুটিপাটি হয়। পাখি বুড়ির একটু পেয়ারের যে গুটি কয় মেয়ে বৌ, যারা পাখিকে ততটা ভয় খায়না, তারা তাকে ‘বেঙ্গমী’ বলে ডাকে মাঝে মাঝে, আর বেঙ্গমার খোঁজ করে।পাখিবুড়ি তখন তাদের বাপের বা শ্বশুরের নাম করে! কখনবা পথ চলতি কোনো পাতলা গোঁফ ওঠা কিশোরকে দেখিয়ে দেয়। সে পালাতে পারলে বাঁচে! 
     
    পাখি রহস্য ভালোবাসে।পাখিবুড়ি মজার, পাখিবুড়ি ভয়ের, পাখিবুড়ি একা, পাখি বুড়ি অনেক! 
     
     সে যখন রাস দেয় ঠিক বন্দোবস্ত হয়ে যায় সব। তার নিজস্ব রাস মন্দির আছে চাতালওয়ালা। বাড়ির পাশে, রাস্তার ঠিক উপরেই। আলোয় সেজে ওঠে মন্দির, কবিগান হয় কত রাত পর্যন্ত।বাবরি চুলের কবিয়ালের সাথে দুই বেণী মোটা কাজল কবিয়ালনিও আসে। ছেলে ছোকরার ভীড় বাড়তেই থাকে! কীর্তন ও দেয় পাখি । এ রাস মন্দিরও দত্তদের কোনো শরিকেরই। লোকে ফিসফাস করে, পাখির নাকি মোহর আছে। আরো বলে অনেক কথা।
     
    তবে পাখিবুড়ির রাস একটু থমকে দাঁড়ায় দত্তদের মূল রাসের কাছে! তার মন্দির পাড়ার ভেতর সরু রাস্তার বাঁকে। আর ওদের একটা বেশ বড় চৌমাথায়, মালার মত মন্দির ঘেরা উঁচু রাসমন্দির, সামনে খোলা মাঠে দুপুরে ও রাত্তিরে যাত্রার আয়োজন।রাস্তার মাথা ঢাকে বিশাল কাগজের মাছ আর ফুলে, এই চত্বর ডান হাতে রেখে সামনের রাস্তা ধরে দু পা এগোলেই ডান দিকে পুকুরের ওপারে আবার পুতুল নাচের স্টেজ, এপার থেকে দেখে মানুষ। সন্ধ্যে বেলা বাজি পোড়ানো। সব নিয়ে  বেশ জমে যায়  কয়দিনের জন্য!  দুপুরে সস্তা দলের সামাজিক পালাগুলি, নটনটিদের তোবড়ানো গাল, রুক্ষ ক্লান্ত চুল, বসে যাওয়া চোখ ই বলে দেয় সে কথা। তবু রাতে যাত্রা দেখার অনুমতি না পাওয়া বাচ্চারা আর কৌতূহলি পথের মানুষ দর্শক হয়ে গিয়ে দাঁড়ায়, দাঁড়ায় গিয়ে দোকানিরা। দুপুর বেলায় বেচা কেনা একটু ঢিমে, ওই আশেপাশের গ্রামের মানুষজন যা আসে আরকি, তারা বেলা পড়ে এলে বাসে চেপে গ্রামে ফিরে যায় , ভীড় হয় মোটামুটি। বাচ্চারা পান গুমটির উপর উঠে পড়ে আর মন দিয়ে পালা শোনে ----সংসারের অন্যায়, বড়ো ভাইয়ের ত্যাগ, ভালো বৌ বনাম খারাপ বৌ, অবৈধ প্রেম ---আরো কতকি! সন্ধ্যের দিকে ভীড় পুতুল নাচে। রাজা রাণী, সন্ন্যাসী , মাদুলি ---তারপর বাজি দেখে পড়ুয়া ছেলেপুলে নিয়ে কিছু মানুষ ঘরে ফিরে যায়। এ সময় ইস্কুলের পরীক্ষা চলে। রাতের দিক জমজমাট হয় পৌরাণিক পালায়। যেমন তার সাজগোজ তেমন তার বাজনা! কনসার্টই তো চলে আগে কত সময় ধরে। উত্তেজনায় বুক গুড় গুড় করে!  কখোনওবা শুরুর আগে হটাৎ ই খড়্গ ধরে জিভ বার করে মা কালী দৌড়ে আসে স্টেজে! বাচ্চারা কেঁদে ওঠে! তারপর গান্ধারী জননীর আক্ষেপ বা কৃষ্ণদাসী পদ্মার দৈত্য পুরীর পাষান অলিন্দে কৃষ্ণ প্রেমের আলপনা অথবা কৃষ্ণ সুদামার প্রতিজ্ঞা ---চিরদিন বন্ধু হয়ে থাকার! রাত গড়িয়ে ভোরের পথে পা বাড়ায় , আকাশের চাঁদ মাঝ আকাশ পার করে পশ্চিমে এগোয়। বুঁদ হয়ে থাকা নারীপুরুষ খুলে রাখা ঠান্ডা চটি গলিয়ে, পায়ের ঝিঁঝি ছাড়িয়ে চাদরে মুড়িশুড়ি মেরে বাড়ির পথ ধরে। গানের কলি ভাসে কুয়াশাঘেরা পথে।সাথে কুকুরের ডাক। দত্তদের বাড়ির মেয়ে বৌরা হলুদ হলুদ, তারা যাত্রা দেখেনা।
     
    এদিকে পাখিবুড়ি তখন তার নাট মন্দিরের আলো গুলি নেভায় আর কবি গানের পংক্তি গুলি আওড়ায় ।এমন সময় ছায়ার মত একটা নারী মূর্তি এসে দাঁড়ায়। আসার কথাই যেন ছিল।একটু সামনে ঝোকা, লম্বা সাদা বেণী, কানে বড়ো রিং। শার্ট আর ঘাগরা পরা,নানারকম চুড়ি হাতে, !পাখি আলগোছে শালপাতার খালায় একটু লুচি তরকারি আর পুজোর মিষ্টি দেয়।অন্য সময় অবশ্য রুটি ভাত যা বাঁচে! কিন্তু আজ যে রাস পূর্ণিমা! পাশের টগর গাছের পাতা থেকে চুপচাপ শিশির পড়ে।
     
    বর্গীর হাঙ্গামা থেকে বাঁচতে বেশ কিছু টাকা কড়ি ওয়ালা পরিবার এসে বসত গেড়েছিল শহরের ঠিক বুকের মধ্যে। জমিদার ব্যবসায়ী দুইই। এসেছিলো বেশ কিছু রাজপুত তারও আগে ----সৈন্য হয়ে আসা সেই সিংহ রা আসতে আসতে ব্যবসাপতি চাকরি বাকরি তে থিতু হলো। এলো মারওয়াড়ি গুজরাটি ---এমনকি এক ঘর চীনে পর্যন্ত। সায়েব শাসকের সাথে সাথেই এলো মিশনারীরা। এ নগর কাউকেই ফেরায়না। টাকাকড়ি জমিয়ে বড়োলোক হওয়া মানুষ দের অনেকেরই মধ্যে টাকা উড়িয়ে বিলাসিতার নেশাও দেখা দিল ---যেমন হয় আরকি! তাই অন্যরকম গান বাজনা নাচ ঘর নর্তকী আরো কত কি! বাচ্চারা বাজারের দিকের গেট দিয়ে ওবাড়ির  পিছনের মাঠে ঢুকে খেলা করে। দূরে কালচে দুর্গের মত সে বাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, যার রাস্তামুখী সদর দরজার উপরে দুটো মস্ত সিংহ,মাঝখানে কাটা মুন্ডু একটা! ভয় করে কেমন। নাটমন্দির আছে,  দুগ্গা মন্দির আছে চারপাশে ঢাকা বারান্দা আছে তার উপর দোতলা আছে। সে দোতলা চিক দিয়ে অন্ধকার।
     
     এপাশে এই মাঠের বাঁ দিকে একেবারে আলাদা একটা বাড়ি, লোকে বলে নাচঘর। সেখানে নাকি জরি বসানে ঘাগরা আছে, ওড়না আছে! যারা পরতো সেসব তারা কোথায়? কেউ ঠিক বলতে পারেনা! বিরহীলালের মস্ত দোকানের সিঁড়িতে বসে থাকা দিল্লী খেপির সাজগোজ দেখে ওরা ধরে নেয় খেপিই সেই নাচনি। দিল্লী খেপির নাম এমন কেন কেউ বলতে পারেনা।ঘাগরা শার্ট পরা দিল্লী খেপির মুখটি ছোট্ট নাকটি লম্বা কানে বড়ো দুল হাতে অনেক অনেক চুড়ি, যা পেয়েছে গলিয়েছে! বেনীতেও নানান রঙের ফিতে জড়ানো। সে চুপচাপ থাকে,জামিলা খেপির মত চিৎকার করে নাচ ফাচ করেনা,কাউকে কিছু বলেওনা, কেবল একটা বাক্স আঁকড়ে ধরে থাকে। তার মধ্যে থেকে মাঝে মাঝে আরশি চিরুন বেরিয়ে আসে। সে পরিপাটি করে চুলের সামনেটা খালি আঁচড়াতে থাকে। অনেক রাতে তাকে হেঁটে হেঁটে আসতে দেখা যায় হাতে কিছু খাবার দাবার নিয়ে। গরমের দিনে বিরহীলালের সিঁড়িতে ঘুমোলেও শীতে সে উল্টো দিকে প্রদীপের পান গুমটির নিচের ছোট্ট জায়গাটাতে গুটি শুটি মেরে শোয়।
     
    ছোটো থেকে একসাথে বড়ো হওয়া এক ঝাঁক বেলা গড়ানো পুরুষ অনেক রাতের দিকে রাস্তায় আড্ডা মারতে নামে। পেটে একটু উগ্র পানীয় পড়লে তারা রাস্তার থামে ঠঙ ঠঙ শব্দ তুলে লুকোচুরি খেলে। এখানের ভাষায়: আইস বাইস । এ নিয়ে শহরে রসের চৰ্চা হয়। ছেলেছোকরারা হাসাহাসি করে। ওরা পরোয়া করেনা। বেশির ভাগই দোকান বন্ধ করে আসে। কিছু জনের দোকান নেই, টুকিটাকি কাজ কারবার, পেটের জন্য যতনা তার চেয়ে বেশী মান রাখার দায়ে!হাজার হোক পুরুষ মানুষ। নতুবা চাষ বাড়ি থেকে যা আসে খেয়ে তাতে দিব্যি চলে যায়! এদের মধ্যেই কেউ---ধরা যাক, তার নাম ছায়াময়, কখনো থমকে দাঁড়ায় বিরহীলালের দোকানের সামনে।খুব আবছা ছেলেবেলার সবচেয়ে কাছের ভরসার একটি হারিয়ে যাওয়া মুখ, কোনো ঘুম পাড়ানি গান ---নাকি গত জন্মের ---তাকে বার বার এদিকে টেনে নিয়ে আসে বুঝি । এলোমেলো কত ভাবনা আসে এ সময় ---হয়তো নেশার ঘোরে! সে ভাবতে থাকে দজ্জাল পাখি বুড়ির চোখ সেই ছোট থেকেই তাকে দেখে এতো নরম স্নেহে ডোবে কেন? ----কেন? আবার কোনও একটা গন্ডগোল, লাঠি সোটা, বাপ দাদার ঝগড়া চিৎকার –সব কেমন গুলিয়ে যায়। পরদিন সে ভুলে যায়।
     
    আবার কী যেন ভোলেও না! তার দিকে ঠাকুরদা আর দাদামশায় দুজনেই কেমন করে জানি মাঝে মাঝে চেয়ে থাকতেন, সে দৃষ্টিতে আর যাই থাকুক নরম স্নেহ যে থাকতোনা সে বেশ বুঝতো। কিন্তু মা যেন কিছু চাপা দিয়ে তাকে আগলে রাখতে চাইতো বুকের মধ্যে। সে পাকা গমের গৌর, তার শ্যামলা মা তাকে ছায়া দিয়ে আড়াল করতো সংসার থেকে আর বার বার বলতো,  ছেলে তার বাপের মত হয়েছে! বড়ো নরম ছিল সেই মা। সংসারের ঝাঁঝ বুঝি সামলাতে পারলোনা সে। মরেই গেল হটাৎ। কেউ যেন ফিসফিস করেছিল :ছেলেটার দেখি কপালে মা সয়না! 
     
    পাখি বুড়ির মা ফুল্লরাণীর ঘরে মাঝে মাঝে পুলিশ হানা দিত। তার ছিল লুকিয়ে চুরিয়ে শর্করাজাত ফেনিল উচ্ছাসের  ব্যবসা। তার বরের জেল ফেরত আসা যাওয়া ছিল, তবে কবে সে আসা বন্ধ হলো দিলদারের কেউই এখন তা মনে করতে পারেনা। আবগারির আগমন এর খবর তার কাছে আগেই পৌঁছে দিত তার বাঁধা খদ্দেররাই। কাজেই নানান ব্যবস্থাও তার ছিল মিষ্ট ও তেতো। দু একবার তাকে তুলেও নিয়ে গেছে, ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে বেঙ্গল ।
     
    এর চেয়ে বেশী সায়েবি নাম বেঙ্গলের মা ছেলের জন্য মাথা খাটিয়ে বার করে উঠতে পারেনি। আর যা যা নাম মনে এসেছিলো সেগুলি রেল শহরে ওদের মহল্লায় কারুর না কারুর ছিলই। তারা গুসসা হতে পারে ওদের নাম চুরি করলে, এই ভাবনাতেই বুঝি বেঙ্গলের নেপালি মা আর বেশী দূর এগোয়নি। তবে বেঙ্গলের তামাটে পোড়া রং, পেটানো দোহারা চেহারা অন্য গল্প বলে যেন। বাদামী চোখ তার। কপালে দুটো আড়াআড়ি ভাঁজ। সে টাইট গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরতে ভালো বাসতো। সে মাঝে মাঝে দিলদার নগরের আবাসগড় চার্চ এ যেত।
     
      রিক্সা ভ্যান দুইই টানতো সে। রেল শহর ছেড়ে মায়ের সাথে কেন চলে এসেছিলো দিলদারে তা নিয়ে কেউ তাকে কিছু জিগ্যেস করার সময় পায়নি। লোকে বলতো ও বডিগার্ড ফুল্লরানীর! রেল শহরের ওয়ার্কশপে কাজ করা ফাজিল মানুষরা বলতো: ফুল্লবারের বাউন্সার
    অনেক সায়েবসুবো র সাথে তাদের দিনরাত ওঠাবসা ছিল। অনেককিছু জানতো তারা।
     
     পাখি কিশোর কালে একবার নাইট শোতে একটা ইংরিজি সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। হেব্বি ঝাড়পিট। একটা বদমাস লোহার দাঁতওয়ালা লোক ছিল, আর হিরো যেন পুরো বেঙ্গল কাকা! এমনকি কপালের উপর আড়াআড়ি ভাঁজদুটো পর্যন্ত! একটা করে অ্যাকশন করে আর তারপর আরাম করে কি সব কলাই সেদ্ধ মত খায় মদের বোতল খুলে! সুন্দর সুন্দর মেয়ে চলে আসে কোথা থেকে! সিটি পড়ছিলো খুব হলে। কিন্তু পাখির খুব মন খারাপ করছিলো। ফুল্লরাণীর মারের হাত থেকে বেঙ্গল কাকাইতো ওকে বুকে আগলে রক্ষা করতো! রিক্সতে চাপিয়ে কত ঘোরাতো আর প্রিন্সেস বলে ডাকতো আদর করে! 
     
    কোনো এক ফসল ওঠা পড়ন্ত বেলায় গরুকে খাওয়ানোর চিটে গুড়ের বস্তা ভ্যানে চাপিয়ে যাচ্ছিলো সে ফুলপাহাড়ির ওদিকের গ্রামগুলির মুদিখানায় সাপ্লাই দিতে ---জঙ্গল পেরিয়ে। বন মোরগের ডাক শুনে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে সাকরেদ মন্টুকে দাঁড় করিয়ে। আর বেঁচে ফেরেনি। জানতোনা হাতি নেমেছে। চিৎকার শুনে মন্টু আর দাঁড়ায়নি, ছুটতে শুরু করে। পথ চলতি এক সাইকেল সওয়ারি পেয়ে তার রডে বসে জঙ্গল এর ফিরতি পথ ধরে। সেই ফুল্লরানীকে খবর দেয়! পাখির খটখটে দাপুটে মা ও চোখের জল ফেলতো তার চুল বেঁধে দেবার সময়। দাঁতে ফিতে চেপে শক্ত মুঠোয় চুলের ঝুঁটি ধরে লোমকূপ টানা গোড়া বাঁধা থেকে ও রেহাই পেয়েছিল ক দিন! জীবন গড়িয়ে যায়, কত মানুষ আসে যায়, ওও চালাক চতুর হয়ে ওঠে! 
     
    পাখির মা আর পাখি দুজনের ই আনাগোনা ছিল ও বাড়িতে, যদিও খিড়কি রাস্তায় নিপাতনে সিদ্ধ পথে। মাঠের ওদিকের মহলের গুটি কয় মানবীর মাঝে মাঝে অবসর মত নিজেদের খুশী নিজেদের খুশী মতই উপভোগ করতে ইচ্ছে জাগতো, অন্যের ইচ্ছেতে নয়। তাই ফুল্লরানীর কম পয়সার সুধা তাদের স্বাধীনতার উদযাপন ছিল। তাদের মধ্যে দুটি বাংলা বলতে পারতো একটি পারতোনা। পাকা গমের মত রং তার,  টিকল নাক।
     
    বার বাড়ি ছাড়িয়ে ভিতর বাড়িতে খুব কমই ঢুকতে পেত তারা। কলকাতার বৌকে বাড়ির সবাই  আড়ালে কালো বৌ বলতো। বাপের মস্ত রঙের ব্যবসা,কারখানাও আছে। ফি ইংরেজি বছরে রং চঙে ক্যালেন্ডার বের হয়।এদের মতো কলসির জল গড়িয়ে খাওয়া নয়। বাড়ির হলুদ রং তার ছিলোনা। তার পয়সাওয়ালা দাপুটে বাপের দাপটও সে পায়নি। লাঠিসোটা , গন্ডগোলের দিন চিকের আড়ালে দাঁড়িয়ে সে কেঁপেছে আর চোখের জল ফেলেছে। যাকে মসনদে বসানোর যুদ্ধ তার মত কেই বা শোনে, তার মন কেইবা বোঝে! সে তো নিমিত্ত মাত্র ক্ষমতার লড়াইয়ে!  নারীকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ তো আর নারীর নিজের জন্য যুদ্ধ না! রণবাদ্য তার কণ্ঠস্বর তাই চাপা দিয়ে দেয়!
     
    মায়ের সাথে মাঝে মাঝে সন্ধ্যের দিকে পিছনে,বাড়ির চৌহদ্দির মাঠে একটু হওয়া খেতে দাঁড়াতো ছায়াময়। তখন চারপাশ শুনশান।ওই দিকের মহল থেকে একটু আধটু হাসির শব্দ শুধু। বেশী রাতে এদিকে আসা বারণ।এমনই এক সন্ধ্যাবেলা মা ওকে বুকে চেপে চাদর মুড়ি দিয়ে সটান বাজারের রাস্তার ওপাশের সরু গলি পেরিয়ে ফুল্লরানীর ঘরে গিয়ে দাঁড়ালো। কাউকে কিছু দিতে বলছিলো। আর কি সব বলেছিলো মনে নেই। হাত থেকে একখানা চুড়ি খুলে দিয়েছিলো। ফুল্লরানী একটু অবাক হয়ে চেয়েছিল। এটা মনে আছে। তারপর মাথা নেড়ে বললো : দিয়ে দুব, পান বাদ গেলে যত আসে। পাখি হলুদ রং এর শাড়ি পরে ওকে দাঁড়ে বসা ওদের টিয়া দেখাচ্ছিল। মা ওকে আবার কোলে নিয়ে একই ভাবে ফিরে এসেছিলো। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই কিছু দিয়ে আসতো। ফুল্লরানী একদিন দুহাত তুলে প্রণাম করছিলো। কাকে কে জানে! তারপর তো মাও চলে গেল। কতদিন হয়ে গেছে।
     
    পাখি মায়ের ব্যবসাটি ধরেনি। কিছুদিন সিনেমা হলে টিকিট দেখতো, লটারিও করেছে ক দিন, এটা সেটা। ওকে বড়ো দিদির মত চোখ পাকিয়ে শাসন করতো পথে ঘাটে। তবে রাতের শো তে সিনেমা হলে দু একবার দেখে চেনেনি। অন্য লোক ছিল সাথে। ওর ন কাকাকেও একদিন দেখেছে। ও তাই আর রাতের শো তে ব্যালকনির টিকিট কাটতোনা , নিচেই বসত। সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেত।
     
    পাখি পুরোনো বাড়ি থেকে মাকে নিয়ে এদিকে চলে এল, এই দেবত্তর সম্পত্তি দেখাশোনার ভার পেলে, বাড়িটি ফ্রি। ফুল্লরানী এক বসন্তের ভোরে ঝরে পড়লো, পাখি ততদিনে তার মধ্য গগনে স্বাধীন মত। সে নাচ জানেনা, গান জানেনা, কিন্তু ব্যবসায়ী বুদ্ধি ধরে। তাই কারুর খাঁচায় তাকে ঢোকানো যায়নি! সেই প্রয়োজন অনুযায়ী পাখি ধরেছে। আর তাই বুঝি তার মাথার উপর ছাদ আর পায়ের তলার মাটি তারই আছে। তবে ভয় যে তার একটুও নেই সে কথা বললে মিথ্যে বলা হবে! ক্ষমতাবানরা তাদের লেঠেল বাহিনী দিয়ে ভয় প্রতিষ্ঠা করে, সেটাই তারপর অভ্যেস হয়ে যায়। কবে বুড়ো কর্তা দেহ রেখেছে সেই হিন্দি বলা নাচনি কে উৎখাত করে! আজ এতো বছর পর ও তার হাজার চোখ যেন ঘুরে ঘুরে বেড়ায় এখনো চারপাশে, ঠিক যেমন বেড়াতো ফুল্লরানীর আমলে! হয়তো পাখি মিথ্যেই ভয় পায়! 
     
    তবে পাখি যেটা বোঝেনি সেটা হলো এই যে, বুড়ো কর্তাও তার মাথাটিকে চাঁদির জুতোর তলায় রাখতে বাধ্য হয়েছিল নিজের বোলবোলা টিকিয়ে রাখার দায়ে! সোনার মোহর এর যুগ শেষ হয়ে আসছিলো, কাজেই মাথা নোয়াতে হয়েছিল কারখানার গেটে!  রঙ এর কারবারিই তখন তার মধুসূদন। সেই  কারখানা -গেট অনেক কিছু কেড়ে নেয় ---কেড়ে নেয় পাঁকের মধ্যেও পাপড়ি মেলা মানবিক বোধ গুলি ----মায়া, মমতা, সহনশীলতা আর আত্মপরিচয়। এ নিয়ে জার্মানি দেশের দুই জন বনের মোষ তাড়ানো মানুষ চেতাবনি দিয়ে গিয়েছিলো তাদের ইস্তেহারে। অহেতুক কিছু এখানে ঘটেনা, ঘটতে নেই। হিসাবই এখানে দেবতা!
     ছায়াময়ের তানপুরা, এস্রাজ বাজানো বাবা বড্ড বেহিসাবি ছিল। তবে বেহিসাবিপনায় তাকেও বুঝি দশ গোল মেরে চলে গিয়েছিলো ছায়াময়ের ভীতু,কালো মা! আর কেউ? ছিল কি ?
    ছায়াময় জানবে কী করে? 
     
    রাস পূর্ণিমার দিন দুয়েক পর দুপুরের দিকে ছায়াময় এমনিই দাঁড়িয়েছিল বাড়ির সামনের পৈঠায়। দু একজন ছিল আরো। ভাত খেতে যাবার আগের অলস উপভোগ। এমন সময় পাখি বুড়িকে হন হন করে আসতে দেখলো। সামনে এসে পাখি নিজেই বলে :এই একটু বাজারে এসেছিলাম, তারপর আসতে করে বলে: দিল্লী খেপি নাকি পড়ে আছে ওদিকে? একটু দেখেই যাই। কিন্তু সে পা বাড়ায়না, চোখ ও সরায়না ছায়াময়ের মুখের উপর থেকে! ইতস্তত করে সেও বলে: কোথায়? চলো তো -----! বিরহীলালের দোকানের পাশের যে একটু গলি মত --–লোকে সাইকেল, মোটর সাইকেল দাঁড় করায়-- সেখানেই পড়ে আছে দিল্লী খেপি। শ্বাস টানছে। লোকজন জমছে। চট করে গেঁজের ভিতর থেকে একটা রং চটা ছোট্ট জলের বোতল বার করে পাখি, তার হাতে গুঁজে দেয়, তারপর উদাসী স্বরে সবার দিকে তাকিয়ে বলে :মুখে একটু জল দাওনা গো কেউ! 
     
    হাঁড়ি পাড়ার ছেলেরাই নিয়ে যায়। পাড়ার আশু ডাকতার সার্টিফিকেট দিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি। ছায়াময় হাঁটতে থাকে। অঘ্রানের বেলা পড়ে আসে। ইলেকট্রিক চুল্লি কাজ করেনা তাই চিতাতেই তোলা হয়। কাঠ ফাটার আওয়াজ, আগুনের ফুলকির ওপারে কপিশার জলকে লালে লাল করে সূর্য ডোবে। সে আসতে আসতে উঠে পড়ে হাঁটতে থাকে বাড়ির পথে। কিন্তু এসে দাঁড়ায় পাখির বাড়ির সামনে। অন্ধকারে চাদর মুড়ি দিয়ে রোয়াকে কেউ বসেছিল। প্রদীপ জ্বলছিল একটা। পাখিই। বলে:এসো। পাশে একটা জাঁতি ও ছিল। বলে: লোহা আগুন ছুঁয়ে নাও। সে যা বলে তাই করে সে। তারপর যেন ঘুমের ঘোরে ঢুকে পড়ে পাখির দরজা দিয়ে। চলন ঘর পেরিয়ে উঠোনে পাত কুঁয়োর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বালতি ডুবিয়ে জল তুলে ঢালতে থাকে মাথার উপর। শীতের রাতের কুঁয়োর জল এখন মৃদু উষ্ণ হতে শুরু করেছে। পাখি একটা গামছা আনে। বলে ভালো করে মাথা মোছো। তারপর একটা লম্বা হাতা পাঞ্জাবী আর পাজামা আনে, ন্যাপথলিনের গন্ধ। একটু নিমপাতা দেয় পাখি মুখে দিতে। সে জামাকাপড় পরে ভিজে মাথাতেই গড়িয়ে পড়ে পাখির বিছানায়। একটা মোটা কাঁথা দিয়ে দেয় পাখি তার গায়ে। সে নাক পর্যন্ত জড়িয়ে নেয়। কেমন নিশ্চিন্ত একটা সোদা সোদা গন্ধ! তার খুব মায়ের কোলে মুখ গুঁজতে ইচ্ছে হয়! আজ আর রাস্তায় রাস্তায় লুকোচুরি খেলতে ইচ্ছে হয়না!
    আর কি হবেও কোনোদিন?
    কে জানে!
    রাত করে ভাঙা পূর্ণিমার লাল চাঁদ ওঠে। সে যদি বলতে পারে!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৩৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:১২540009
  • আহা দিলদার নগরটি বড় দিলদার গো। 
  • kk | 172.58.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০৯540019
  • কী অদ্ভুত সুন্দর লেখার স্টাইল আপনার। যেন কোনো থই পাওয়া যায়না!
  • Kakali Bandyopadhyay | 223.223.***.*** | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:০৪540053
  • জামীলা ,দিল্লী খেপী ...এরা ফিরে ফিরে  আসে ....শহর বা  গ্রামে ..নামগুলো  খালি  বদলে  বদলে  যায়।  কেউ  মনে রেখে  কলম ধরে , কেউ  বা  শুধুই  খেলার  ছলে  হাসতে  হাসতে  ঢিল  ছুঁড়ে  মারে। 
    আমাদের গ্রামের ঢেঙ্গি  পাগলী  ..পাথরে খোদাই  সাঁওতাল  রমণী ...মা  হল  একদিন  ...ধান  কেটে  নেওয়া  মাঠে , নিজেই নিজের  বাচ্ছাকে  প্রসব  করিয়েছিল  সে ...
     আর  কাকে কাকে যে ফিরিয়ে  আনবেন ....
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন