এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আশিস মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস আলোচনা

    PURUSATTAM SINGHA লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ মার্চ ২০২৫ | ৮৫ বার পঠিত
  • শোষকের দুর্বৃত্তায়নকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার আখ্যান
    পুরুষোত্তমম সিংহ

    বাংলা উপন্যাসে সম্পূর্ণ ভিন্ন গোত্রের আখ্যান আশিস মুখোপাধ্যায়ের ‘পোকাবিদ্রোহ ও পীমলদের জাতীয় ইতিহাস (প্রথম খণ্ড)’ (১৯৮৫)। লেখক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক বাংলা আখ্যানের মোড় ফেরাতে চেয়েছেন। ‘ছাঁচ ভেঙে ফ্যালো’ ট্যাগলাইনে নতুন ফরমান জানান দিতে এসেছেন। গত শতকের আটের দশকে বসে বাংলা আখ্যানকে সর্বার্থেই বোধ মস্তিষ্কচর্চার হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসেছেন। সেই অলিখিত বিদ্রোহে তিনি যে সফল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলা আখ্যানের দুর্বল ন্যারেটিভ সম্পর্কে কিছু সূক্ষ্ম ব্যঙ্গও ছুঁড়ে দেন। পোকাদের বিবিধ স্তরের কার্যকলাপ, নানা ইঙ্গিত, ক্ষমতাতান্ত্রিক পৃষ্ঠপোষকের ভেঙে পড়া, রাজতন্ত্রের পাঠে নানামাত্রিক ঘুণ ধরা ও ব্যঙ্গ শ্লেষের মধ্য দিয়ে শ্রেণিবিদ্রোহের নতুন কায়দা আবিষ্কার করেন। রবীন্দ্র কথিত সেই ‘ওরা কাজ করে’ কবিতায় শত শত সাম্রাজ্যের ভেঙে পরার মধ্য দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের জয়গান বা রাজতন্ত্রের পতনের জন্য নানাদিক থেকে নানা দংশন যা গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস বীক্ষণের পাঠ। ইতিহাসের পুথির মধ্যে পোকা আক্রমণ চালায়, যেকোন জাতির ইতিহাস মুছে ফেলাই বিপক্ষ দলের প্রথম-প্রধান টার্গেট। পোকারাও পীমল রাজাদের লাইব্রেরি আক্রমণ চালায়। ইতিহাসহীন জাতির কোনো সত্তা থাকতে পারে না। এ জন্য জাতি ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে নিজেই ইতিহাস হয়ে যায়। দুষ্কৃতকারী সংগঠনের ইতিহাসের প্রয়োজন হয়েছিল। শোষিতের ইতিহাস, শ্রেণিশত্রুর ইতিহাস মুছে দেবার জন্য শ্রেণিচ্যুত মানুষ ধীরে সূক্ষ্মভাবে কাজ চালায়। লেখক ইঙ্গিতে ইতিহাসের অত্যাচার, সাম্রাজ্যের পতন, ইতিহাসের ধ্বংস বিশেষের বয়ান নির্মাণ করে চলেন।

    আখ্যানের বাক্য যে দর্শনের লজিক অনুসারে চলতে পারে তা শেখাচ্ছেন আশিস মুখোপধাধ্যায়। বাক্যের অভ্যন্তরীণ শক্তিই যে পরের বাক্য রচনার যুক্তি দেখাতে পারে তা ‘পোকাবিদ্রোহ ও পীমলদের জাতীয় ইতিহাস (প্রথম খণ্ড)’ আখ্যান পড়লে বোঝা যায়। চশমা, দুষ্কৃতকারীদের স্বাধীনতা ও সংঘশক্তির কথা বলতে বলতে প্রথম পরিচ্ছেদের অন্তিমে শোনান—‘জাতীয় স্বাধীনতা হল দুষ্কৃতকারীদেরই স্বাধীনতা’। বাক্যের অমোঘ শক্তি দ্বারাই যুক্তির পরম্পরার শৃঙ্খলই যে ভয়ানক বোধের জন্ম দিতে পারে তা দেখাচ্ছেন লেখক। শৃঙ্খল, নিয়মানুবর্তিতা, কার্যকারণ একটি বাক্যের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে কোথায় নিয়ে যায় তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই আখ্যানে।

    এই আখ্যান তত্ত্বের, বোধের, মেধার। গল্প বলার বদলে তা মস্তিষ্কচর্চার। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার তত্ত্বকে জটিল বিরোধাভাসে ব্যক্ত করা, ব্যঙ্গ করা। যেখানে দুষ্কৃতকারীরা নিজেরাই প্রতিষ্ঠান, নিজেরাই আরোগ্য সেতু, নিজেরাই ছিনিয়ে নেওয়ার দক্ষ জহুরি সেখানে বিরোধিতা মূল্যহীন। আবার প্রতিষ্ঠানে থেকে তো প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা হয় না। আমরা কোনো না কোনোভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানে আছিই। তেমনি সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান বলে কিছু হয় না। সাহিত্যের হয় পাঠক। পাঠকের যেহেতু বিবিধ মেধা আছে তাই আপনি সেই বৃত্তীয় লেখকের পাঠকের। আর প্রতিষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার প্রসঙ্গ এলেই কেন্দ্র বিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়, দেবে। সেটাই নিয়ম। কেননা তাদের দুষ্কৃতকারীরা আছে। আবার দুষ্কৃতকারীদেরও প্রতিষ্ঠান আছে। কে চেয়ারে বসবে। ভারী অদ্ভুত এই বয়ান। মননশীল মেধাচর্চায় নিমগ্ন এই আখ্যান। পাঠকের সুবিধার্তে দ্বিতীয় পৃষ্ঠা থেকে সামান্য তুলে ধরা যাক—

    “একআধবার কারো কারো মধ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বীজ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠান তাদের কারো কারো মধ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বীজ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠান তাদের বীজনাশকনিয়ে যেতে চান। রূপক, সংকেত, ব্যঙ্গ, শ্লেষবীজনাশক ওষুধ প্রস্তুতের জন্মও বিখ্যাত। গাছ হবার আগেই বীজগুলি অসময়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়। আরো ক্ষমতা সম্পন্ন বীজনাশক তৈরী হয়। নাশকতামূলক কার্যকলাপ রোধ করার জন্যই নাশকতামূলক কার্য্যকলাপের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পিত নাশকতার বীজ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। নাশকতামূলক কার্য্যকলাপ ভেদ করে গড়ে তোলা হয় উচ্চতর মানুষগুলির প্রচার পরিকল্পনা।”
    (পোকাবিদ্রোহ ও পীমলদের জাতীয় ইতিহাস প্রথম খণ্ড, আশিস মুখোপাধ্যায়, প্রথম প্রকাশ, ১৯৮৫, পৃ. ০২)

    এই আখ্যান আসলে যুক্তি সরণির। বৃহত্তর অন্ধকারকে পর্বে পর্বে স্পর্শ করার অভিপ্রায়। পর্বে পর্বে স্পর্শ করার আঙ্গিকটাই তার অভিনবত্ব। বাক্যের ভিতর বাক্য ঢুকিয়ে, ঘটনার পিছনে ঘটা ঘটনাকে উত্তাল করে প্রকৃত ঘটনাকেই মূল্যহীন করে দেওয়ার অমোঘ কৌশল। জাগতিক ঘটনাবিশ্বে এত জটিলতা বর্তমান যা আমরা দেখলেও বিশ্লেষণে অক্ষম। অথচ প্রকৃত ঘটনার আড়ালে একাধিক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। মঞ্চে উপস্থাপনের আগে যেমন মহড়া থাকে, মহড়াটাই প্রধান, মহড়ার উপর নির্ভর করে স্টেজ পারফরম্যান্স কেমন হবে তেমনি দুষ্কৃতকারীদের নির্বাচনের আগে নির্বাচন করা হচ্ছে কারা নির্বাচনী প্রচার চালাবে। বাতেলাবাজি, প্রচারের নান্দনিকতা, মানুষকে বশ করার ক্ষমতা কার কত বেশি। এটাই প্রকৃত নির্বাচন। এটাই প্রকৃত যুদ্ধ। ভোট তো কয়েক সেকেন্ডের বোতাম টেপা। তার আগের মস্তিষ্ক যুদ্ধটাই প্রধান। এই বশীকরণ বিদ্যায় কারা পারদর্শী তাদের নির্বাচন চলছে।

    এই আখ্যানে একটা ভয়ানক শ্লেষ আছে। সভ্যতার প্রতি, সিস্টেমের প্রতি, গণতন্ত্র, প্রতিষ্ঠান, ক্ষমতার প্রতি। মানুষ নতুনকে বরণ করতে প্রায়ই অক্ষম। মানুষ চায় ইতিহাস। মানুষ চায় বাজার দর বিচার করতে। একটি প্রতিষ্ঠানকে নানাদিক থেকে জানতে বুঝতে। ভুল সত্য নয় চাই ইতিহাস। দুষ্কৃতকারীদেরও সংগঠনের ইতিহাস প্রয়োজন পরে। লেখা হয় সংগঠনের ইতিহাস। প্রয়োজন পরে বহু তাজা ও তরুণ দুষ্কৃতকারীদের। ইতিহাস বিস্মৃত প্রতিষ্ঠানকে, পার্টিকে মানুষ বিশ্বাস করে না। লেখা শুরু হয় দুষ্কৃতকারীদের নব ইতিহাস। যে বিষয়ের ইতিহাস যত বড় সে বিষয় তত গম্ভীর, গুরুত্বপূর্ণ। দেশ-জাতির পক্ষে তত সমৃদ্ধ। তার সত্য-মিথ্যা বিচারের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনে কিছু গল্প ঢুকিয়ে দেওয়া ভালো। প্রান্ত থেকে সকলেই কেন্দ্রে যেতে চায়, বৃত্তের বাইরে থেকে বৃত্তে আসতে চায়, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার গল্প বলতে বলতেই যুযোগ পেলে প্রতিষ্ঠানে ঝাঁপ দেয়। এই বিভ্রান্ত প্রবণতাসহ সিস্টেমের গোলকধাঁধা, জাতির ইতিহাস প্রবণতার প্রতি তিনি সূক্ষ্মভাবে ব্যঙ্গ ছুঁড়ে চলেন।

    আমাদের ইতিহাস আছে। গড়ে ওঠে আঞ্চলিক ইতিহাস। বৃহত্তর ইতিহাসের পাশে ক্ষুদ্র ইতিহাস। পার্টির ইতিহাসের পাশে সংগঠনের ইতিহাস। সংগঠনের প্রয়োজন এজেন্ডা, পতাকা, আদর্শের মেকিপনা। রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতা দখলের নামে কত না গল্প বানায়। শহিদ না হলে রাজনৈতিক দলের পবিত্রতা রক্ষা হয় না। মুক্তির, আদর্শের পতাকা আকাশে উড়িয়ে দেয়। আশ্চর্যের বিষয় আকাশটাই নেই। দূষিত, জীর্ণ ধোঁয়ায় পূর্ণ হয়ে গেছে। দুষ্কৃতকারীদের ইতিহাস সংগঠনের আড়ালে লেখক গোটা সময়টাকেই ব্যঙ্গ করছেন। আদর্শচ্যুত ভিত্তিহীন, সিস্টেমহীন যে সংগঠন, দল, সমিতি চলে তাদের কাছা খুলে দিচ্ছেন। কিন্তু আক্রমণের পদ্ধতি ভিন্ন। আপনার ঘুণধরা আদর্শ, মেকিপনা, প্রতিষ্ঠানচিন্তায় তা জ্বালা ধরাবে না। অথচ অলক্ষ্যে আক্রমণের বিষয় আপনিই।

    ‘পোকাবিদ্রোহ ও পীমলদের জাতি ইতিহাস (প্রথম খণ্ড)’ আখ্যান আসলে সমাজতত্ত্বের আড়াল দিয়ে বীক্ষণের তরঙ্গ। বাংলা আখ্যানের ভাষ্কর্য, বিশ্লেষণ কত প্রগাঢ় হতে পারে তা পড়লে বোঝা সম্ভব। মনন, বীক্ষণের অন্দরমহল থেকে ভাবনাসমূহ উত্থান করে পীমলদের প্রবেশ-অনুপ্রবেশের মধ্য দিয়ে দুষ্কৃতকারীদের যে রূপবদলের চিত্রনাট্য গড়ে তোলেন তা যেমন জটিল তেমনি বাক্যের সিঁড়ি দিয়ে বোধবিশ্বের নথিনামা। তিনি পাঠককে সমস্তই ব্যক্ত করছেন কিন্তু পাঠকের মস্তিষ্কে আঘাত করছেন। পাঠক বোধবীক্ষায় যাচাই করছেন বিশ্লেষণের পরম্পরা। সাধারণ পাঠকের বৃত্তের বাইরে এই আখ্যানের উপস্থাপন।

    ক্ষমতাতান্ত্রিক বয়ানের নন্দনতত্ত্ব কত গভীর হতে পারে তা এই আখ্যান নানাভাবে জানান দিচ্ছে। ভোট, নির্বাচন, ঘোষণা, পাবলিক ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ক্ষমতাতত্ত্বের প্রকোষ্ঠ কত ব্যপ্তিময় ও তার খননখাদ কত গভীর তিনি প্রগাঢ় বিশ্লেষণে দেখাচ্ছেন। ব্যঙ্গ, শ্লেষ, রূপক, সংকেত দ্বারা এই আখ্যান জটিল তত্ত্ববিশ্ব রচনা করেছে। বয়ান থেকে পাঠককে সামান্য স্বাদ দেওয়া যাক—

    “মানুষ মানুষের জন্য শিল্প প্রসব করেছে। মানুষের ডিম মানুষ প্রথমে ফোটবার অপেক্ষায় চেয়ারে বসে হাই তুলেছে। জল খেয়েছে। তারপর ডিম ফুটে মানুষের চোখ মুখ আর মানুষ বার হলেই চেয়ারে বসা মানুষটি ডিমে ঠোক্কর মেরেছে। চশমাপরা মানুষ বিখ্যাত হয়েছে ডিম নষ্ট করার জন্য। চশমাপরা মানুষ শিল্পে ঠোক্কার মেরেছে। মানুষের জন্য তৈরী শিল্পে মানুষের জন্য তৈরী মানুষ ঠুকরে দিয়েছে। মানুষের মহত্ত্ব এতদূরই যেতে পারে বলে মানুষ দাবী করেছে। মানুষের মা মানুষের জন্য শিল্পের চচ্চড়ি তৈরী করেন। বদ্‌হজমের জন্যেও মানুষ যে বিখ্যাত এটা আজ জানা গেছে।”
    (তদেব, পৃ. ০৯-১০)

    বৃত্তের ভিতর বৃ্ত্ত, কথার ভিতর কথাকে টেনে এনে এই আখ্যান এক কথাজাল রচনা করেছে। কথার নন্দনতত্ত্ব আবিষ্কার করেছে। চশমা, নির্বাচন, দুষ্কৃতকারী বয়ান, রূপক এনে পাঠককে ভাবনাসমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছে। ‘স্কুল জীবন তাঁকে প্রশ্ন সচেতন করে তোলা হয়নি’, ‘একজন সর্বহারার হাতে কোনো চাবি থাকে না’, ‘ঘাতকের শরীরে কখনও হননকারীর চিহ্নগুলি থাকে না’ ইত্যাদি একাধিক বাক্যে জীবনের অন্তর্বয়নকে এমন চোরা বিশ্লেষণে ধরে দেন যা গুরুত্বপূর্ণ। আশিস মুখোপাধ্যায় একটা অন্তর্ঘাতের ভাষা আয়ত্ত করেছেন। ব্যক্ত-অব্যক্ত, আলো-অন্ধকার, বাক্যের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে পুরোমাত্রায় ব্যবহার করে এমন বয়ান নির্মাণ করেছেন যা অত্যন্ত মেধাবী। গত শতকের সাতের-আটের দশকে যখন বাংলা আখ্যানে গ্রামজীবন, প্রান্তিক মানুষকে নিয়ে লেখার ঢেউ এসেছে তখন এই আখ্যান (১৯৮৫) কিন্তু বাংলা উপন্যাসের মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে। ঘাতকের বয়ান, হনন বৃত্তান্তের চেহারা কত জটিল এবং তাকে সামনে রেখে বৃত্তের চৌহদ্দি কীভাবে প্রসারিত হয় তার অলীক জাল আখ্যানকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে।

    পীমল জাতির ইতিহাসকে সামনে রেখে এ আখ্যান প্রকৃতপক্ষে দার্শনিক সন্দর্ভ রচনা করতে চেয়েছে। একাধিক চরিত্রের নাম উল্লেখ, পেশা, আলো-অন্ধকারের খেলা দ্বারা বহমান ইতিহাসের ভিতর কোদাল চালিয়ে কিছু বিশ্লেষণাত্মক কথা পাঠকের মস্তিষ্কে ছুঁড়ে দিয়েছেন। আমাদের সন্ত্রাস, জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ, দৃষ্টিভঙ্গি, নিজেদের আন্তর্জাতিক করে তোলার অভিপ্রায় অথচ ভিতরে অন্ধকার, শূন্যতা—সব মিলিয়ে সময়কে নানা নিরীক্ষণে দেখাতে চেয়েছেন। পীমল জাতির ক্যানভাস এখানে একটা ইমেজ। তল দিয়ে লেখক সময়, ইতিহাস, দৃষ্টিভঙ্গি, প্রবণতা ও বৃত্তের খননভূমিতে নেমে যান। নেমে গিয়ে দেখান ভাবনা, ঘটনা, ঘটতে পারার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। ক্ষমতাতান্ত্রিক বয়ান, নির্বাচন প্রক্রিয়া মানুষকে কীভাবে ভুলবোধে আক্রান্ত করে, মানুষের মধ্যে জন্ম নেওয়া আগ্রহের মৃত্যু ঘটায়, মানুষের বিস্ময়বোধ কাটিয়ে দেয়। মানুষকে সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেবার নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, এক ভুলভুলাইয়ায় জর্জারিত হয়। সমগ্র পরিসরটি এলোমেলো হয়ে যায়। ভেঙে যায় বিশ্বাস, ভাবনা প্রক্রিয়া। সমান্তরাল বিভাজন ভেঙে গিয়ে অসমান্তরাল বিভ্রান্ত বিভাজনে মানুষকে নষ্ট করে দেয়।

    এই আখ্যান প্রকৃতপক্ষে জীবনের উলটো পিঠের বয়ান। প্রবাহিত ঘটনাকে যেমন ভিন্ন আঙ্গিকে শিল্পে উত্তীর্ণ করা যায় তেমনি ঘটনার মধ্যে চিরুনিতল্লাসি করে দেখানো সম্ভব ঘটনার কত স্তর। একাধিক স্তরে প্রবাহিত যে জীবন অথচ যা আমরা বীক্ষণের অভাবে দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে ক্লান্তিকর করে তুলি সেই প্রবণতাকে তিনি আক্রমণ করেন। বন্ধন-বন্ধনহীনতা, প্রচার-প্রচারহীনতা, জীবনবোধ-জীবনবোধহীনতা, দৃষ্টিভঙ্গি-দৃষ্টিভঙ্গিহীনতা, বিশ্বাস-বিশ্বাসহীনতা ব্যক্তিকে কীভাবে দংশন করে বা ব্যক্তিকে কীভাবে মুক্তির আলোয় নিয়ে যেতে পারে তার তাৎপর্যপূর্ণ বীক্ষণ। বিশ্বাসের মধ্যে যেমন বিশ্বাসহীনতা থাকে তেমনি পরিকল্পনা গড়েই ওঠে ভেঙে ফেলার জন্য। মানুষের বোধ প্রতিনিয়ত নিজের কাছেই ধাক্কা খায়। নিজের নির্মিত বোধ, বিশ্বাস মানুষ নিজেই ভেঙে ফেলে। অস্থিরতার ভিতর দিয়ে স্থিরতায় পৌঁছনোর ইঙ্গিত যেমন থাকে তেমনি স্থিরতাকে ভেঙে দিয়ে নিরুদ্দেশলোকে ভেসে যাওয়ার প্রবণতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির সংকট কত গভীর এবং সেই প্রবণতার বিবিধ জ্বালামুখকে মননসজ্জায় জারিত করে যে জ্যা-ব্যাসার্ধ গড়ে ওঠে তার নথিনামা এই আখ্যান।

    পোকাবিদ্রোহও একটা সংকেত, রূপক। পোকাদের জীবনবিজ্ঞান বইয়ে স্থান পাওয়া, ছাত্রদের বিবিধ জ্ঞানলাভ, বিদ্যালাভ অথচ শিকার প্রবণতা সম্পর্কে বিভ্রান্তি নিয়ে আখ্যান রূপকের আড়াল দিয়ে ধ্বংস, দংশনের সত্যে এগিয়ে যেতে চান। যেকোন রাজবংশ, সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। সাম্রাজ্যে ভিতর দিয়ে, ইতিহাসের পুথির ভিতর দিয়ে পোকারা আক্রমণ চালায়। ক্ষমতাতন্ত্রের বয়ান, নির্বাচনের প্রহসন, সাম্রাজ্যলাভ সমস্ত কিছুর মধ্যেই পোকারা থেকে যায়। সময় মোতাবেক দাঁত বসিয়ে দেয়। সেই প্রক্রিয়া ধীরে, দৃষ্টি এড়িয়ে কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রেণিচ্যুত জাতির শ্রেণিযুদ্ধ চিহ্নিত হয়ে চলে। গোটা সিস্টেমটাই কীভাবে ভেঙে পরে তার তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত রেখে যান লেখক। মনে পড়ছে তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইঁদুর’ গল্পের কথা। মহাকরণে ইঁদুররা কীভাবে সব তছনছ করে চলেছিল। ইঁদুর ধরা, টেন্ডার ডাকা, ড্রাফট করা ইত্যাদি প্রভৃতি করতে করতেই প্রায় সব শেষ। সরকারি অব্যাবস্থার প্রতি লেখকের ব্যঙ্গ বর্ষিত হয়েছিল সূক্ষ্মভাবে। এখানে লেখক পোকাবিদ্রোহের মধ্য দিয়ে রাজবংশের অধঃপতন দেখাচ্ছেন। চর্চার অভাবে, প্রয়োগের অভাবে, অব্যবহারে যেকোন জিনিসেই ঘুণ ধরে, মরচে ধরে, সুযোগ পেলেই আক্রমণ চালায় নিম্নশ্রেণি বা শোষিত শ্রেণিচ্যুত জাতি।

    রূপকের মধ্য দিয়ে এই আখ্যান দুর্বৃত্তায়ন শাসক ও শোষিত জনগণের ভাষ্য রচনা করে। ভোটের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন বা সাম্রাজ্যের পত্তন ও বিস্তার, সেই অত্যাচারী হয়ে উঠলে, শোষকের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হলে মানুষ লড়াইয়ে নামে, নামতে বাধ্য হয়। শোষকও জনগণকে শায়েস্তা করতে গুলি চালায়, পুলিশকে কাজে লাগায়, জনগণও সরকারি সম্পত্তি লন্ডভন্ড করে। পীমল রাজাদের বয়ান ও পোকাদের বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে লেখক সূক্ষ্মভাবে সেই বয়ানকেই ঢুকিয়ে দিয়ে যান।

    শোষিত জনগণ, রাষ্ট্রীয় শাসক বা সাম্রাজ্যকে যেভাবে ভেঙে ফেলে তার নব্য ডিসকোর্স এই আখ্যান। গণসংগীতের মধ্য দিয়ে জনগণ যেভাবে উজ্জীবিত হয়, নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে, মিছিলে অংশ নেয়, গোপনে লড়াই চালায়, সব ভেঙে ফেলার জন্য প্রস্তুত হয় তেমনি পোকারাও প্রস্তুত হচ্ছে। জনগণ ক্রুদ্ধ হলে শাসক যেমন বেরিকেড গড়ে, পুলিশ নামায়, সন্ত্রাস চালায়, উচ্চপদস্ত কর্মীরা নানা স্টেটমেন্ট দেন, মুখ লুকান, লড়াই নিধনে তৎপর হন তেমনি পীমল সম্রাটরাও হচ্ছেন। এই নারকীয় ঘটনায় রাষ্ট্রের মুখ পোড়ে, নেতামন্ত্রীরা ছোটাছুটি করেন, গোপনে আন্দোলন ভেঙে দেবার চক্রান্ত করেন। টোটাল সিস্টেমটাই পোকাবিদ্রোহ ও পীমল রাজতন্ত্রের বয়ানে উপস্থাপিত হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে বুদ্ধিজীবী নেমে পড়েন, জাতীয় সম্পত্তি ক্ষতির পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলে। সাধারণ মানুষের এই হঠকারিতাকে কেউ কেউ সুস্থ স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। রাষ্ট্র ও শাসক সাধারণ মানুষের গণবিক্ষোভকে কীভাবে মোকাবিলা করে তার রসদ আছে, পথ আছে, গুপ্তধন আছে, এজেন্ডা আছে তেমনি একবার পথে নেমে গেলে জনগণও যে নাছোরবান্দা হয়ে ওঠে সাম্রাজ্যের পতনের জন্য তার নানামাত্রিক বয়ান আখ্যানকে নান্দনিকতায় উন্নীত করেছে। ক্ষমতাতান্ত্রিক বয়ান ও জনযুদ্ধের খতিয়ানের আশ্চর্য সুন্দর মেধাবী বীক্ষণ নির্মাণ করেছেন লেখক। টেক্সট থেকে সামান্য স্বাদ পাঠককে দেওয়া যেতে পারে—

    “সমস্ত ঘটনাটিতে বিশেষজ্ঞ ও কায়েমী স্বার্থের রক্ষাকারীরা এবং সাধারণ মানুষ পর্যন্ত এতটা হতচকিত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন যে, জাতীয় অসুখ হিসেবে অভিহিত করলেও, তার উৎপত্তি ও প্রভাবকে আর জাতীয় ক্ষমতাপ্রসূত বলে ভুল করা যাচ্ছে না। কারণ, জাতীয় ক্ষমতার মধ্যে সহস্র দোষ ক্রটি থাকা সত্ত্বেও, তাঁরা জানেন যে, আমাদের জাতীয় ইতিহাসের ওপর শেষ পর্যন্ত আস্থা রাখা যায়। আস্থা রাখা যায় কারণ তা যতই অনাস্থামূলক কার্যসূচী সামনে রাখুক না কেন, শেষ পর্যন্ত তা নিরাপদ। যা কিছু নিরাপদ তাই জাতীয় হতে বাধ্য। জাতীয় তাই নিরাপদ। নিরাপদ এবং শেষ পর্যন্ত আস্থাশীল।”
    (তদেব, পৃ. ৩২-৩৩)

    বিদ্রোহ ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পত্রিকার ভূমিকা, লাভক্ষতির অংক, টোটাল সিস্টেমকে কীভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হয় তার রসদ বেরিয়ে আসে। যেকোন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যা ঘটে, যা নির্মিত হয়, কৌশল প্রক্রিয়া কেমন, নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা কেমন, অভিজ্ঞতা থেকে উত্তরণের পথ কেমন, আন্দোলনে পূর্বজ অভিজ্ঞতা কাজে লাগে কিনা প্রতিটি আন্দোলনই নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দেয় ইত্যাদি প্রভৃতি নিয়ে আখ্যান জটিল তত্ত্ববিশ্ব রচনা করে। শোষক-শোষিত, কেন্দ্র-প্রান্ত, বিদ্রোহ-বিদ্রোহ দমনের পথ, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষ, মতভেদ, মতবাদ এসব নিয়ে আখ্যান ক্ষমতাতত্ত্বকে যেমন আঘাত করে তেমনি আঘাতের পথে কত বাধা, জটিলতা তা নিয়ে গূঢ়ার্থ সংকেত দিয়ে চলে। বিদ্রোহ, আন্দোলন, গোষ্ঠীকেন্দ্রিক সংগ্রাম মানুষের চোখে পড়ে, মানুষ সমর্থন জানায়। একদা বিদ্রোহের নেতাদের নিয়ে পুঁজিবাদ বিজ্ঞাপনের বাজার নির্মাণ করে। ফ্লেক্স, গেঞ্জি, জামার ছবি, মার্কেটিং, সংগীতের মধ্য দিয়ে চেতনা বিস্তৃত হয়ে যায়। বিকৃত হয়ে যায়। সংগ্রামের নেতা মানুষের উৎসবে, বিনোদনে ভেসে যায়। আন্দোলন, প্রতিরোধ, বিদ্রোহের আগে-পরের ঘটনা, পূর্ব-পশ্চাৎ জটিলতা, জনগণের মনোভাব ও বিদ্রোহের বাজার সব মিলিয়ে যে সামগ্রিক জটিলতা তা স্পষ্ট হয়ে চলে। মহৎ প্রয়াস, একদিন কীভাবে বিনোদনের বাজারে, বিপ্লব নামক খেলায় পরিণত হয় সেই রহস্য সরাসরি জানান দিয়ে চলেন—

    “এসবে সাধারণে আরও উৎসাহিত হয়ে পড়েন। পোকাদের ছবি আঁকা গেঞ্জী ও প্যান্ট পরে তারা রাস্তায় নামেন। প্রতিমাসেএর প্রথম রবিবার পোকাদিবস পালন শুরু হয়। ঐদিন পোকাদের ছবিছাপা বেলুন ওড়ানো হয়। সাধারণে সেই ঐতিহাসিক পোকাগানগুলি গাইতে থাকেন। পোকাচিহ্নিত সিগারেট একসময় খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঐ চিহ্ন লাগানো গুঁড়োদুধও যথেষ্ট বাজার তৈরী করে ফেলে। এমনকি তেল চা ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতিগুলিও ঐ নামকে মূলধন করে ক্রেতাদের দখল করে। পোকাছাপমারা যাবতীয় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যোগান অনুপাতে চাহিদা বেড়ে যায়। এমনকি পোকা চিহ্ন দেওয়া ঘুমের ওষুধ ছাড়া সাধারণের ঘুম আসে না।”
    (তদেব, পৃ. ৩৭)

    ইতিহাসের নায়ক আশ্রয় পায় সংগ্রহশালায়, সংরক্ষণকেন্দ্রে। ইতিহাসকে সংরক্ষণ জরুরি। আগামী ইতিহাসের প্রেরণাভূমি হিসেবে। মানুষের স্মৃতির অংশ হিসেবে। পোকা ইতিহাস বোতলে বন্দি করা হয়। বোতলের গায়ে ইতিহাস লেখা হয়। আন্দোলন-বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে রসদ বেরিয়ে আসে। বণিক সম্প্রদায় বিজ্ঞাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও লঘু করে দেয়, মানুষ প্রতিবাদ করে না অথচ গ্রহণ করে। ইতিহাসের নির্মাণ, ইতিহাসের ক্ষয়রোগের মধ্যে কোথায় ঘুঘুরবাসা, কোথায় নন্দনতত্ত্ব, কোথায় ভিত্তিহীনতা, কোথায় জনশ্রুতি, কোথায় আন্দোলনের আবেগ, কোথায় পথ-পথহীনতা সমস্ত মিলিয়ে আখ্যান ইতিহাসকে শুধু বিনির্মাণ করে না, ইতিহাসের খেলায় বিরোধাভাস রচনা করে। জরুরি এই বীক্ষণ। ভাবনাস্রোতের মেধাবী প্রয়াস ইতিহাসের নন্দনতত্ত্বকে নতুনভাবে আলো দান করে।

    ‘সাঁচ ভেঙে ফ্যালো’ বীক্ষণে তিনি শুধু নতুন বয়ানই আনেননি ন্যারেটিভের স্টাইলও ভেঙে ফেলেছেন। ইতিহাসকেন্দ্রিক প্রচলিত উপন্যাসকে উড়িয়ে দিয়ে জনগণতান্ত্রিক ইস্তাহারের অসামান্য দলিল রচনা করেছেন। হ্যাঁ সেজন্য উপসংহারের পরেও পরিশিষ্ট লিখতে হয়েছে। পাঠকের মস্তিষ্কে আঘাত করে মননের জানালা খুলে দিতে চেয়েছেন। ‘উপসংহার’টি প্রচলিত। কেননা সব ইতিহাসের পরিণাম একই। তার বয়ানও একই। সেই বয়ানকে তিনি আক্রমণ করেন। তেমনি ইতিহাস লেখার সাঁচও একই। বাংলা আখ্যানের দুর্বল শব্দ, পুনরাবৃত্তি, ভাবের একঘায়েমিকে আক্রমণ করেন। একজন লেখক সর্বদাই নতুন বীক্ষণ নিয়ে উপস্থিত হবে। সে পাঠককে চ্যালেঞ্জ করবে। পাঠকের মস্তিষ্কে আঘাত দেবে। অথচ বহু লেখা পাঠকের সজ্জাসঙ্গী, বিনোদনের রসদ হয়ে ওঠে। সেই বোধহীনতা, একঘায়েমি থেকে বেরিয়ে তিনি পাঠককে নতুন জীবনচেতনায় নিয়ে যেতে চান। রূপক, সংকেত, ব্যঙ্গ, শ্লেষ, বোধের জাগরণে, ইতিহাসের ঘুর্ণিতে, সিস্টেমের গোলকধাঁধায় ধাঁধিয়ে দেখাতে চান এমন ভাবেও বাংলা আখ্যান নির্মিত হতে পারে। সেই প্রয়াস সাধুবাদযোগ্য।

    (২)

    আশিস মুখোপাধ্যায়ের ‘একফোঁটা মিথ্যে বলিনি’ (২০২০) আখ্যানের দুটি স্তর। বাস্তব-অবাস্তব। একদিকে ভোট দেওয়া নিয়ে মানুষের নানা কোলাহল, অন্যদিকে গণেশের দুধ খাওয়ার মতো ভিত্তিহীন প্রসঙ্গ (বাস্তবের আড়াল দিয়ে ক্ষমতাকে পূজা করার বিবিধ সোপান)। তবে দুটোই বাস্তব-প্রাসঙ্গিক। একদল মানুষ দেবতার আরাধনার মধ্য দিয়ে ষেভাবে নিত্য নৈমিত্তিক ভিত্তিহীন ভক্তিভাবের জোয়ারে ভেসে গিয়ে ন্যক্কারজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তা বাঙালি জীবনে বড়ই শোচনীয়। আবার রাষ্ট্রযন্ত্রের যন্ত্রকলকে চলমান রাখতে নিত্য চলছে নানা পরিসরের ভোট। সময়ের পরিবর্তনে আজকের গোপাল পূজার প্রসাদ বদলে গেছে। তেমনি বদলে গেছে গণেশের দুধের রকমফের। সন্তোষরা নিত্য দল বদল করছে পার্টিতে থাকতে না পেরে। তবে মানুষের উপকারে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ চোখ বন্ধ করে গণেশ পূজা করেই যাচ্ছে। আখ্যানের সূচনা হয়েছে কথক আদিনাথ ও বন্ধু গণেশকে সামনে রেখে। আদিনাথের জীবন চরিতে নানা পরিসরে গণেশ সংযুক্ত হয়ে গেছে। বাস্তব-অবাস্তব, হঠকারিতা, ভিত্তিহীনতা, নগরচিত্র মিলে আখ্যান জীবনের প্যাশান বজায় রাখে। যা কলকাতার ক্ষমতাতত্ত্বের অন্ধকারসহ দলীয় রাজনীতির অন্ধত্বকে ব্যঙ্গ করে।

    আজ মানুষের জীবনে পরম শত্রু গণতন্ত্রের নামে সন্ত্রাস ও ধর্মের নামে আদেখলাপনা। কিছু মানুষ গণতন্ত্রের স্তম্ভ ভোটকে এমন অনৈতিক পন্থায় চালনা করে যা মানুষের জীবনকে ব্যতিবস্ত করে তোলে। গণতন্ত্রের প্রকৃত সৈনিক অথৈই জলে পরে যায়। তেমনি ধর্মের নামে আদখেলাপনা সাধারণ জীবনে যেন অন্ধকার ডেকে আনে। এ আখ্যান একটা দৃশ্যজাল। একাধিক দৃশ্যের কার্যকারণ সূত্রে সময়ের অন্ধকারকে ব্যক্ত করে চলে। সেখানে ধর্ম, ভোট, প্রশাসন, সাংবাদিক ক্রমেই জড়িয়ে পরে। সকলেই রক্ষণশীল, ঢ্যামনামি, নিজের ক্ষমতা ফলাতে চায়। ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে আসে। সুযোগ বুঝে আবার ধাক্কা দেয়। জনগণের জীবন ব্যতিবস্ত হয়ে ওঠে। প্রশাসন, সাংবাদিকদেরও কালঘাম ছুটে যায় উপরমহলের চাপে। সিস্টেমের জাঁতাকলে মানুষের শোষণ চলে নানামাত্রায়। কিছু না জানা, কিছু না বোঝা সরল মানুষও আটকে যায় সেই সিস্টেমে। সেই অনিয়ন্ত্রিত অন্ধকার এই আখ্যানের সেতুবন্ধ।

    আশিস মুখোপাধ্যায় এ আখ্যানে চলমান জীবনের নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক ঘটনাকে সংযুক্ত করে জীবনলিপির অলিগলিতে ভ্রমণ করেছেন। একজন সাধারণ মানুষের (আদিনাথ) জীবন সামান্য ঘটনায় পুলিশ কীভাবে ব্যতিবস্ত করে তোলে তার যে নিখুঁত বর্ণনা এনেছেন তা বড় জীবন্ত। পুলিশের সিস্টেমের অংশ। ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে নানাভাবে। গণতন্ত্র, ধর্ম মানুষের জীবনকে ঝালাপালা করে তুলেছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। পুলিশ যেন ভেড়া-গাধার মতো ভিত্তিহীন, নিয়মতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করে চলেছে। যা দ্বারা সভ্যতার আধুনিকতা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেই দ্বন্দ্বচরিতে কারা কীভাবে প্রতিনিয়ত ভুল করে চলেছে তার নিগূঢ় নথিনামা এই আখ্যান।

    এই আখ্যানের একটা আলগা চলন আছে। হালকা চালে সরস ঢঙে জরুরি কথা বলার প্রয়াস আছে। একটা খামখেয়ালি ঢঙ আছে। তা সিস্টেমকে আঘাত করছে বটে, সিস্টেমের ভুলকে চিহ্নিত করছে বটে তবে তা রুক্ষভাষায় নয়। একটা আয়েশি চালে ক্ষমতাতন্ত্রের ফাঁকফোকর চিহ্নিত করছে। ফলে সে বয়ান কাউকে চাপেটাঘাত করছে না, বা বক্র দৃষ্টিতে দেখছে না। আঘাত করলেও তা ভাষার সরস চালে ভেসে যাচ্ছে। আখ্যানে নানা মেটাফোর আছে। বৈপরীত্য ও বিরোধাভাসে ধর্ম-পুলিশতন্ত্রকে ব্যঙ্গ করার যে মোটিভ নির্মিত হয় তা সময়কে বহুমত্রায় নির্মাণ করে চলে। এ আখ্যান ক্ষমতার স্বরকে আক্রমণ করছে। কিন্তু যে ভাষায় করছে তা গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের রহস্য নিকেতন ও সময়কে নষ্টবৃত্তে প্রবেশ করার জহুরিদের কার্যকলাপকে তিনি যে বৃত্তায়নে ভাসিয়ে দেন তার নান্দনিক পাঠ আখ্যানকে বিশেষ মূল্য দান করে। পাঠকের জন্য সামান্য দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক—

    “বাঙালি পুলিস স্বাধীনতা পাবার পর আর কিছু না হোক এই কড়কানি রগড়ানি খুব শিখেছিল। ক্রমে মানুষ থেকে পুতুলে পালটে যেতে যেতে তারা আসলে মেরে গেল। আমার টাকার ব্যাগ কতবার পকেটমার হয়েছে। তখন পুলিসের শরণাপন্ন হয়েছি। যা জানতে চেয়েছি জানিয়েছি। বারবার পুলিসের দপ্তরে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। পুলিস বলেছে, সাতদিন পরে আসুন। একবার খালি-পার্স ফেরত পেয়েছিলাম। তাই পুলিসের ব্যাপারে আশায় আশায় থাকি। কোথায় যেন পড়েছিলাম, পুলিসের ওপরে বিশ্বাস হারানো পাপ।”
    (একফোঁটা মিথ্যে বলিনি, আশিস মুখোপাধ্যায়, এবং মুশায়েরা, প্রথম প্রকাশ, অক্টোবর ২০২০, পৃ. ৪৮)

    জীবনের ভিতর অন্তর্জীবন, জীবনের নানা খানাখন্দকে চিরুনিতল্লাশি করে এ আখ্যান এগিয়ে গেছে। বলা ভালো সে জীবন নাগরিক জীবন। আদিনাথের স্মৃতিকেন্দ্রে চলার পথে একাধিক চরিত্র তাদের ক্রিয়াকর্ম দ্বারা একটা অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযুদ্ধের গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে। জীবনের পথ চলায় কত দৃশ্য, কত গোলকধাঁধা, কত সমস্যা, মানুষের নিত্য নৈমিত্তিক অভিসম্পাত মিলিয়ে এ আখ্যান ব্যক্তির হয়েও গোষ্ঠীর তেমনি নগরের অমাবস্যা-পূর্ণিমাসহ দৈনন্দিন জীবনের স্বরলিপি। সেই দ্বন্দ্বময় জীবনকে কেউ হেঁয়ালিতে, কেউ ইয়ার্কিতে, কেউ ক্ষমতার মসনদে, কেউ না পাত্তা দিয়ে কাটাচ্ছে। সেখানে আদিনাথ ডুবছে, ভাসছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে। সব মিলিয়ে একটা অস্তিত্বের চোরা সংলাপ নির্মিত হচ্ছে। ঘটনার ভিতর ঘটনা, ঘটনার অনুষঙ্গে ঘটনা, ঘটনাকে অতিক্রম করে অন্য দৃশ্যচিত্রে রূপান্তরে ঘটনার পুনরাবৃত্তি দ্বারা এ আখ্যান সরল গতিতে জীবনের জটিলতার গল্প শোনাচ্ছে। ঘড়ির কক্ষপথের মতো জীবনেরও কক্ষপথ আছে কিন্তু সেখানে নানা জটিলতা, জীর্ণতা, বাধা বর্তমান। সেই সমস্ত জীবনেরই অঙ্গ। কেউ সেই জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে যায়, কেউ উপভোগ করে, কেউ ভুক্তভোগী হয়। এই সমস্ত মিলিয়ে নাগরিক জীবনের আদি-অন্ত-দিগন্তকে শুনিয়েছেন আশিস মুখোপাধ্যায়।

    আশিস মুখোপাধ্যায় ‘একফোঁটা মিথ্যে বলিনি’ একটা বলা, না-বলা ন্যারেটিভ। অতিকথন, স্বল্পকথন দুইই আছে। পাঠককে একটা উপান্তে নিয়ে যেয়েও যাচ্ছে না। প্রখর বাস্তবতা, প্রশাসনের ভিত্তিহীনতাকে স্পর্শ করেও স্পর্শ করছে না। কিছুটা বলেই, পাঠককে গনগনে আঁচের খবর দিয়েই আড়ালে চলে যাচ্ছে। বাস্তবতাকে খুব সচেতনভাবে আড়াল করে ঢেকে রাখছে। কখনো দৃঢ় চিত্তে সামান্য বলেই বিরোধাভাসের জন্ম দিচ্ছে। খুব সচেতনভাবেই এই লিখনক্রিয়াকে লেখক নির্মাণ করেছেন। ক্ষমতাতান্ত্রিক নষ্টামিকে লেখক গণেশের দুধ খাওয়ার আড়াল দিয়ে আঘাত করে চলেন—

    “লোকটা কী বুঝল কে জানে। থুতু ছিটিয়ে বলল, ‘এখন উনারা গণেশ মহারাজ কে লিয়ে দিবেন। কাল উনকা ছোটা ভাইকে লিয়ে ফীর দিবেন। সবাই লাইন পাতিয়ে রেখেছেন দুদ খাবেন বোলে। গণেশ মহারাজের পর সব এক এক করকে আসিয়ে যাবেন।’ লোকগুলো আর না দাঁড়িয়ে থুতু ছেটাতে ছেটাতে পশুদের পেছনে দৌড়ল।
    বিরু রায় মুখ গম্ভীর করে জানালেন, ‘এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের হাই-কামান্ড কী ভাবছে জানি না। হাই-কামান্ড না বলে দিলে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে যতদিন দুধ খাওয়া চলবে ততদিন নির্বাচন স্থগিত।”
    (তদেব, পৃ. ৮৯)

    গণেশ ক্রমে দুধ খেয়েই যাচ্ছে অন্যদিকে নির্বাচনের হিংসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশ শ্যাম রাখি না কুল রাখি দ্বন্দ্বে এদিক-ওদিক দৌড়চ্ছে। প্রয়োজনে নিরীহ মানুষকে উঠিয়ে, ছেড়ে দিয়ে শাসনতান্ত্রিক গোত্র রক্ষা করছে। কেউ দুধ খাচ্ছে, কেউ পাহারা দিচ্ছে, জনগণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার হিংসায় ভুক্তভোগী হচ্ছে। নারদের দেখা মিলছে, হারিয়ে যাচ্ছে। কারণে-অকারণে জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে সূক্ষ্মভাবে ক্ষমতাতান্ত্রিক নষ্টামি বোনা আছে। টেক্সট থেকে কিছুটা অংশ তুলে ধরা যাক—

    “নারদ এল, তাই গণেশ আবার দুধ খাওয়া ধরল।’
    ‘নারদ এল, তাই নির্বাচন কেন্দ্রগুলো বোমায় তছনছ হয়ে গেল।’
    আমার ফেলে আসা মোবাইল পকেট থেকে বার করে, বিচিত্র টেবিলে রাখল। বলল, ‘এটাও নারদের জন্যেই ঘটেছে। আপনি ভুল করে মোবাইল ফেলে এলেন।’
    ‘নারদের জন্যেই আজ ভুল বাস আপনাকে বিনোদিনী সার্কাসে নিয়ে গেছে।’
    ‘নারদ এসেছিল বলেই আজ সারাদিন লাসার কাছে পৌঁছতে পারলেন না।’
    (তদেব, পৃ. ৯৪)

    আদিনাথের একদিনের জীবনবৃত্তান্ত এ আখ্যান। সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত মনস্তাত্ত্বিক দোলাচলতা, ভোটের দিনে নির্বাচনের জটিলতায় পুলিশের জালে জড়িয়ে জীবনচরিতের একটা ভগ্নাংশ এই আখ্যান। একাধিক চরিত্রের জপমালায়, নানাবিধ মেটাফোরে নগর কলকাতার এক দিবস রজনীর ভ্রাম্যমাণ দলিল এই ন্যারেটিভ। লেখক যেহেতু আশিস মুখোপাধ্যায় সেহেতু এখানে ক্ষমতাতান্ত্রিক আক্রোশকে আক্রমণের অভিসম্পাত থাকাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সেই আলেখ্যকে তিনি যে দোলায় দুলিয়েছেন সেটাই আখ্যানের নান্দনিক ভাষ্য। খুব জটিল না করেও, টেক্সটকে গুরুগম্ভীর না করেও, ভাষাকে রুক্ষ না করেও তিনি আড়াল দিয়ে ক্ষমতার মসনদের গোপন দুয়ারকে স্পর্শ করেছেন। যা একুশ শতকের বাংলা উপন্যাসে অভিনবত্ব তো বটেই সেইসঙ্গে নগর কলকাতার আশ্চর্য ব্যাধির রূপক।

    পুরুষোত্তম সিংহ। ঘোষপাড়া, সুভাষগঞ্জ, রায়গঞ্জ। উত্তর দিনাজপুর। ৭৩৩১২৩। ৬২৯৭৪৫৮৫৯১।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন