এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  পরিবেশ

  • বার্নিহাট বার্নিং

    সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
    আলোচনা | পরিবেশ | ২৭ মার্চ ২০২৫ | ৩৭০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (৪ জন)


  • সক্কাল সক্কাল খবরের কাগজে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে বার্নিহাট এই নামটা দেখে বেশ অবাক হয়ে গেছিলাম।পাশে তিরঙ্গা জাতীয় পতাকার ছবি ধন্দ আরও বাড়িয়ে দিল সঙ্গে প্রবল অস্বস্তি , জায়গাটা চিনতে না পারায়। হাতের সামনে পাওয়া এ্যাটলাসের পাতা হাতড়াতে হাতড়াতে হাত ব্যাথা, চোখ বিগলিত। তবুও তেনার দেখা নাই। উপায়ান্তর না দেখে আমার এক ছাত্রকে ফোন করলাম। ও এখন কর্মসূত্রে অসম রাজ্যের বাসিন্দা। প্রথম প্রচেষ্টায় ওদিক থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আবার তার নম্বর মেলাতে যাব, এমন সময় আমার মুঠোফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠতেই বাটন টিপে কানের কাছে ফোনটা ধরতেই ওদিক থেকে কথা ভেসে আসে –
    “বার্নিহাট কোথায় ? -তা জানতেই বোধহয় ফোন করেছেন দাদা ? জায়গাটা আমাদের গুয়াহাটি থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে। অবশ্য শিলং থেকে এই শহরের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। অসমের গায়ে গা লাগিয়ে থাকা মেঘালয় রাজ্যের রি- ভোই জেলায় মেঘালয় পাহাড়ের ঢাল যেখানে এসে গুয়াহাটির সমতলে মিশেছে সেখানেই এই বার্নিহাট শহর।” খট্ করে আওয়াজ তুলে কলটা কেটে যায়। বুঝতে পারি অসমে থাকার দরুণ বেচারিকে হয়তো শহরের অবস্থান জানাতেই নাজেহাল হতে হচ্ছে।

    খুব সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে WHO বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে। বায়ুদূষণ সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত মান্যতা প্রাপ্ত সংস্থা IQ AIR সারা দুনিয়ার ১৩৮ টি দেশে এবং অঞ্চলে এই সমীক্ষা চালিয়েছিল। বাতাসে ঠিক কী পরিমাণ পার্টিকুলেট ম্যাটার থাকলে সেই বায়ু প্রাণদায়ী স্বাস্থ্যকর বলে গণ্য হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তা ঠিক করে দিয়েছেন । ‌উদ্বেগের বিষয় হলো এই যে সমীক্ষিত ১৩৮ টি দেশের ১২৬টি দেশ বা অঞ্চলে অর্থাৎ পৃথিবীর ৯১.৩ শতাংশ অঞ্চলেই বায়ুতে উপস্থিত PM 2.5 এর মাত্রা নির্ধারিত বিপদ সীমার অনেক ওপরে। বিশ্বের যে ২০ টি দূষিততম শহরের তালিকা IQ AIR জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে তার মধ্যে ১৩ টি হলো আমাদের দেশ ভারতে। অঞ্চলগত ভাবে মধ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেই বায়ুদূষণের রবরবা।

    বার্নিহাটের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। নিতান্তই অপরিচিত সেই অর্থে অখ্যাত এক জনপদের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে অবস্থানের বিষয়টি রীতিমতো উদ্বেগের। এতোদিন দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স বলে কথিত ছোট ছোট পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত রাজ্যগুলো তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিশেষ ভাবে পরিচিত ছিল। একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে আজ বার্নিহাট রাজধানীর গরিমায় থাবা বসিয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ স্থান দিল্লিই দখল করবে বলে যখন সকলেই একরকম ধোঁয়া নিশ্চিত ঠিক তখনই এই চমকপ্রদ ( ! ) উত্থান ঘটলো অসম ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী শহরটির। বার্নিহাটের বাতাসে যখন PM 2.5 এর পরিমাণ প্রতি ঘন মিটারে ১২৮.২ মাইক্রো গ্রাম সেখানে দিল্লির বাতাসে উপস্থিত PM 2.5 এর পরিমাণ ৯১.৮ মাইক্রো গ্রাম প্রতি ঘন মিটার বায়ুতে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর দিল্লি হার মানলো - পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের শিরোপা খুইয়ে দিল্লি এখন দুনিয়ার সবথেকে দূষিত রাজধানী শহর। ২০২৪ এর বায়ুদূষণ সংক্রান্ত WHO এর বার্ষিক রিপোর্ট এমনটাই জানিয়েছে আমাদের।

    এই নিবন্ধের আলোচনার অভিমুখ একান্তভাবে বার্নিহাটের দিকে নিয়ে যাবার আগে ভারতের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে দু একটি প্রাসঙ্গিক কথা ইত্যবসরে বলে নেওয়া যাক্। বলতে দ্বিধা নেই যে,এদেশের নগরায়ন ও শিল্পায়নের ধারা এবং গতি দুইই অত্যন্ত অপরিকল্পিত ও দুর্বল যদিও এরা একে অন্যের পরিপূরক। নগর বিদদের মতে,শহর বা নগর গড়ে ওঠার পেছনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক মানোন্নয়নের সঙ্গে তাল রেখে গ্রাম সমাজের সামাজিক ও সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বিক্ষিপ্ত গ্রামগুলোর মানুষ কাজের সুবিধা আছে এমন স্থানে জমায়েত হতে শুরু করলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিষেবা ক্ষেত্রের বিকাশ ঘটতে থাকে এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তরে তা সংগঠিত শহরের রূপ নেয়। ইতিহাসের পাতায় এই রূপান্তরের চমকপ্রদ ইতিবৃত্ত আমরা পাই। এভাবে নাগরিক পরিষেবার মান একটি নির্দিষ্ট কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছলে মূলত স্থানীয় সম্পদের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে নানা ধরনের শিল্প। ফলে জনসংখ্যার পাশাপাশি বৃদ্ধি পায় শিল্প ও জন পরিষেবার। আমাদের দেশের মতো একান্তই কৃষি নির্ভর একটি দেশে এমন রূপান্তরের হার অত্যন্ত শ্লথগতির, ফলে আমাদের দেশের সর্বত্রই অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ছবি নজরে পড়বে।

    নাহলে বার্নিহাট,লোনি,মল্লারপুরের মতো নিতান্তই অপরিচিত স্থান দূষণের দায়ে একেবারে আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় ঠাঁই
    পায়? অখ্যাত, নেহাতই অপরিচিত বার্নিহাটের এই শিরোনামে আসার পেছনে যে কারণগুলোকে মুখ্যত দায়ী করা হয়েছে সেগুলো হলো অপরিকল্পিতভাবে শিল্প স্থাপন , শিল্প নির্গত দূষিত ধোঁয়া, জাতীয় সড়ক মাধ্যমে ভারী ভারী ট্রাক পরিবহনব্যবস্থার সম্প্রসারণ, সীমান্তবর্তী অবস্থান, কাঁচা সড়ক ইত্যাদি। এছাড়াও বার্নিহাটের ভৌগোলিক অবস্থান এমন লাগামছাড়া দূষণের কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা । শেষ থেকেই বরং আলোচনা শুরু করি।

    ভূ প্রাকৃতিক গঠনের বিচারে বার্নিহাটের অবস্থান অনেকটাই বাটির মতো। শহরটি এই বেসিন বা অধিত্যকার একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। দুপাশে খাড়া উঁচু পাহাড়ের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এক অঞ্চলের ঠিক মাঝখানে অবস্থান করছে নয়া শিল্প তালুক বার্নিহাট। এমন বিশেষ অবস্থানের কারণেই বাতাসে মিশে থাকা ধুলোময়লা দূষিত উপাদান এলাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এমন বিশেষ অবস্থানের দরুণ‌ই বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমে যায়। ভেতরের দূষিত বাতাস এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবস্থানের কারণে ছড়িয়ে পড়তে না
    পারার ফলেই বার্নিহাটের এমন ভয়ঙ্কর হাল”
    – এমনটাই অভিমত প্রকাশ করেছেন নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ডঃ রাজেশ বাজপাই।

    বার্নিহাটের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির পেছনে এই জনপদের অপরিকল্পিত শিল্পায়ন‌ই যে প্রধান কারণ তা বোধহয় বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই অসম ও মেঘালয় এই দুই রাজ্যের সীমানায় অবস্থিত বার্নিহাট শহরকে কেন্দ্র করে একটি আঞ্চলিক শিল্প হাব গড়ে তোলার কাজ চলছে। প্রধান বসতি এলাকাটি মেঘালয় রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রধান শিল্প ইউনিটগুলো অসম এবং মেঘালয়ের ভৌগোলিক পরিসীমাতেই গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে দুটি প্রধান শিল্প তালুক গড়ে তোলা হয়েছে ব্যাপক শিল্পায়নের লক্ষ্য নিয়ে – মেঘালয় সরকার প্রতিষ্ঠিত বার্নিহাট এক্সপোর্ট প্রমোশন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং অসম সরকার প্রতিষ্ঠিত কামরূপ মেট্রোপলিটন ডিস্ট্রিক্টের অন্তর্গত তামুলিকুচি শিল্প হাব। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই দুই সংলগ্ন এলাকায় শিল্প গড়ে তোলা হয়েছে। উমত্রু নদীর জলের জোগান, মেঘালয় পাহাড়ের খনিজ সম্পদ, জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থানের সুযোগ, সর্বোপরি বিদেশে রপ্তানির হাতছানি বার্নিহাটে শিল্প গড়ে তোলার মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

    কী কী শিল্প গড়ে তোলা হয়েছে এখানে? প্রধানত মেঘালয় পাহাড়ের খনিজ সম্পদের সাহায্যে এখানে গড়ে উঠেছে জ্বালানি কোক তৈরির কারখানা, সিমেন্ট কারখানা, ফেরো এ্যালয় এবং স্টিলের কারখানা,ইট তৈরি এবং ডিস্টিলেশন ইউনিট। সরকারের সহযোগিতা ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহের ডানায় ভর করে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বার্নিহাটে ব্যাঙের ছাতার মতো শিল্প স্থাপন করা হয়েছে পরিবেশ আইনকে একরকম উপেক্ষা করে। গুয়াহাটি শহরের নিকট অবস্থানের কারণে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের ছোট বড়ো শিল্প। শিল্প ও অর্থনৈতিক বিকাশের নামে চলছে অব শিল্পায়ন ও পরিবেশ মানের অবনমন।

    ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মেঘালয় সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের করা এক সমীক্ষায় জানা যায় যে বার্নিহাট শিল্পাঞ্চলের অসম রাজ্যের অংশে রয়েছে ৩৯ টি শিল্প সংস্থা এবং অন্যদিকে মেঘালয় রাজ্যে রয়েছে ৪১ টি শিল্প ইউনিট। এই ৮০টি শিল্পের মধ্যে অসমের ২০ টি শিল্প এবং মেঘালয়ের ৫টি শিল্পকে জাতীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিপজ্জনক রেড ক্যাটিগরির শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সব শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট কারখানা,নিম্ন মানের স্থানীয় কয়লা থেকে কোক তৈরির কারখানা , লৌহ ও ইস্পাত কারখানা, এবং মদ প্রস্তুত শিল্প।

    এখানেই শেষ নয়। অসমের ১৫ টি এবং মেঘালয় রাজ্যের ২২ টি শিল্প ইউনিটকে অরেঞ্জ ক্যাটিগরির শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এদের মধ্যে রয়েছে ইট তৈরি শিল্প এবং সিমেন্ট শিল্পের অন্যতম পাথুরে কাঁচামাল গুলোকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবার শিল্প। শিল্পের তালিকায় নজর দিলেই আমরা বুঝতে পারছি যে শিল্পায়নের নামে বার্নিহাটে একরকম যথেচ্ছাচার চালানো হয়েছে। শিল্প স্থাপনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় নিয়মকানুন কিছুরই তোয়াক্কা করা হয়নি। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য নতুন নতুন শিল্পের স্থাপন অত্যন্ত জরুরি , তবে শৃঙ্খলাহীন অপরিকল্পিত শিল্পায়নের এক হাতেগরম উদাহরণ হলো আজকে বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে থাকা বার্নিহাট।

    এই মুহূর্তে বার্নিহাট নিয়ে বিশ্বময় প্রবল জল্পনা শুরু হতেই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে , দু বছর আগেই সংশ্লিষ্ট দুটি রাজ্যকে এই বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল, শহরের গায়ে দেগে দেওয়া হয়েছিল “ক্রিটিক্যালি পল্যুউটেড এরিয়া” বা CPA তকমা। কিন্তু কোনো হুঁশ ফেরেনি দুই রাজ্যের। এই দীর্ঘ অবহেলার কারণেই আজকের এই অবস্থায় পৌঁছেছে শহরটি।
    পাশাপাশি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে শহরের বুক চিরে প্রসারিত ন্যাশনাল হাইওয়ে NH -40 কেও অনেকাংশে দায়ী করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একাংশ। কলকাতার CSIR এবং NEERI - এই দুই সংস্থার এক যৌথ সমীক্ষায় উঠে এসেছে এক অন্যরকম তথ্য। ২০২২ -২৩ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তাঁরা জানিয়েছে যে বার্নিহাটের জাতীয় সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭০০০ মেট্রিক টন পরিমাণ PM - 10 এবং PM - 2.5 পার্টিকুলেট ম্যাটার বাতাসে মিশছে। বিভিন্ন দূষক উৎসের মধ্যে এটি সবথেকে বেশি। এরপরে রয়েছে শিল্পগুলোর সম্মিলিত যোগদান। সমীক্ষা অনুযায়ী এই অঞ্চলের শিল্প ইউনিটগুলো থেকে সরাসরি প্রায় ৪০০০ মেট্রিক টন ছাই মিশছে বার্নিহাটের বাতাসে। এরপরেই আসছে যানবাহনের ধোঁয়া যা আবাসিকদের শরীর স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় মানুষের রান্নাঘরের ও খাবারের দোকানগুলোতে ব্যবহৃত জ্বালানি কাঠের ধোঁয়া, গৃহ ও অন্যান্য বাড়িঘর নির্মাণ,ভাগাড় বা ল্যান্ডফিলে জমা হ‌ওয়া কঠিন বর্জ্য পদার্থের দহন এবং আরও অন্যান্য কার্যকলাপ। পাশাপাশি শিল্প গড়ে তোলার জন্য এই অঞ্চলের পাহাড়ের ঢাল আগলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালার বড়ো অংশ কেটে ফেলা হয়েছে বিগত কয়েক বছরে। ফলে একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হানি যেমন ঘটেছে তেমন‌ই নষ্ট হয়েছে প্রকৃতির ভারসাম্য। এই সমস্ত ধ্বংসাত্মক গভীর নেতিবাচক কর্মকান্ডের পরিণতিই হলো আজকের বার্নিহাট।

    এমন একটা শিরোপা অর্জন করার পরে দায়ভাগ নিয়ে তরজা হবে না তেমনটা আবার কখনও হয় নাকি ! শিল্প দূষণের বিষয়টিকে যথাসম্ভব আড়ালে রেখে জাতীয় সড়কে বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচলকেই বার্নিহাটের এহেন পরিণতির জন্য প্রধানত দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন অসমের পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের প্রধান পরিবেশ বিজ্ঞানী গৌতম কৃষ্ণ মিশ্র। আসলে শিল্পায়নের বিষয়টিকে প্রধান অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হলে তা হয়তো অন্যরকম বার্তা পৌঁছে দেবে বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর তাই হয়তো এমন হিসেবী মন্তব্য। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন – “বার্নিহাট সীমান্তবর্তী শহর। ফলে এই ভয়ঙ্কর দূষণের জন্য অসম ও মেঘালয় দুই রাজ্যের‌ই ভূমিকা রয়েছে। এখানে পারস্পরিক দোষারোপের কোনো স্থান নেই। এমন অবস্থার পরিবর্তনের জন্য দুটি রাজ্যকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে দ্বিধাহীনভাবে।” কিছুদিন আগেই শিল্পায়নের ধ্বজা উড়িয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছেন কনরাড জী, আর এখন
    মুখ লুকনোর জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
    দূষণের বাতাবরণকে সরিয়ে এক সহনীয় প্রাণময় পরিবেশ পটভূমি পুনরায় ফিরিয়ে আনা হোক ,এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।



    ম্যাপে বার্নিহাটের অবস্থান




    ঋণ স্বীকার
    বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদপত্র থেকে এই নিবন্ধের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ছবির জন্য প্রচলিত উৎসগুলোর কাছে আন্তরিকভাবে ঋণী।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৭ মার্চ ২০২৫ | ৩৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • DrSouravM | 2401:4900:775d:de7:fc6c:74b5:9ee7:***:*** | ২৭ মার্চ ২০২৫ ১৭:১০541941
  • I travel to Shillong quite often and we have to go theough Burnihat. It's very hot over there and once we cross that one can feel the cold embrace of Meghalaya. It's a congested industrial area and polluted locally. Those pollutants are perhaps not carried far in air due to heavy particle size but that particular place is hot as hell!!!
  • #:+ | 2405:201:8000:b11b:3541:3797:1d80:***:*** | ২৭ মার্চ ২০২৫ ২০:৩৯541944
  • পরিবেশ নিয়ে কেউই আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন ন‌ই‌ । আজকের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে কেন্দ্রীয় সরকার পরিবেশ পরিষেবার জন্য বাজেটে বরাদ্দ  অর্থের ১ শতাংশ‌ও খরচ করতে পারেনি বা করেনি। নাগরিক সচেতনতা প্রায় তলানিতে। দেশে গরীবের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদনের সংস্থান করতে গিয়েই নাস্তানাবুদ তারা। পরিবেশ নিয়ে ভাববে কখন? 
    এমন একটা লেখার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে লেখক আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হলেন। ধন্যবাদ জানাই তাঁকে।
  • Somnath mukhopadhyay | ২৭ মার্চ ২০২৫ ২২:১৭541946
  • আমার লেখার জন্য কেউ অপেক্ষা করে আছেন একথা পড়ে সত্যিই খানিকটা স্বস্তি বোধ করছি। যে শহরের নামটুকু পর্যন্ত জানা ছিল না , সেই ছোট্ট শহর রাতারাতি (কু) খ্যাত হয়ে উঠেছে দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়েছিলাম। এইসব রিপোর্ট প্রকাশ পায়, দুদিন হৈচৈ, তারপর নীরবতা পালন।
    এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলুক।
  • সৌমেন রায় | 2409:40e1:106f:d437:8000::***:*** | ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৭:৪১541949
  • দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে দূষণ বেশির অন্যতম কারণ জনসংখ্যার ঘনত্ব। বিপুল জনতার চাহিদা পূরণ করতে শিল্প স্থাপন জরুরী, বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়া জরুরী। তাই দূষণ এখানে জনজীবনের অঙ্গ হবেই। তবে সদিচ্ছা থাকলে , পরিবেশকে গুরুত্ব দিলে সেটা কমানো সম্ভব। সেই সদিচ্ছাটুকু আমাদের দেশে নেই। চীনের বড় বড় শহর গুলি ওভার পপুলেটেড , তা সত্ত্বেও তারা বাতাসের গুণমান অনেকখানি উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।দূষণ কমিয়ে শিল্প উৎপাদন করতে খরচ একটু বাড়বে। সেখানে বাধা হচ্ছে আমাদের জনগণের দারিদ্র। যেখানে গ্রাসাচ্ছাদন করতেই সময় কেটে যায় সেখানে কে পরিবেশ নিয়ে ভাববে? এই চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া খুব মুশকিল, সদিচ্ছাই একমাত্র ভরসা।
    লেখক  একটি  আশ্চর্য ও বার্নিং সমস্যা তুলে ধরেছেন যা সকলকে ভাবতে বাধ্য করবে।
  • Somnath mukhopadhyay | ২৯ মার্চ ২০২৫ ০৮:২২541973
  • মতামতের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাই। পৃথিবীর এমন দূষিত পরিবেশের সঙ্গে সহবাসী হয়ে থাকাতে আমরা ক্রমশই অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। আমাদের পরমায়ু কমছে, বাড়ছে নানান রোগব্যাধির সমস্যা। মাত্রাভেদে সমস্যা আজ বিশ্বজুড়ে। উন্নত প্রযুক্তি আর আর্থিক স্বচ্ছলতার কারণে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এই সমস্যাকে বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারা সম্ভব হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সমস্যা বল্গাহীন গতিতে বেড়ে চলেছে। সদিচ্ছার অভাব রয়েছে সর্বস্তরেই। 
  • Ritabrata Gupta | 117.195.***.*** | ৩০ মার্চ ২০২৫ ১০:০২541992
  • ভয়াবহ ভবিষ্যত আরো ভয়াবহ হতে চলেছে !  অসাধারণ লেখা . আমাদের  এই শৈল্পিক উন্নয়ন কতটা এগিয়ে নিয়ে যাবে জানিনা . কিন্তু ধ্বংসের পথেই নিয়ে যাচ্ছে নিশ্চিত . তথ্যের জন্য  ধন্যবাদ , সোমনাথদা . আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম .
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন