এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সমাজ

  • আমাদের নতুন গুহাজীবন

    সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
    আলোচনা | সমাজ | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৮৮১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)

  • বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত এবং অমানবিক জেনেও সবিনয়ে আপনাদের সামনে একটা ছোট্ট প্রশ্ন রাখছি – কখনো ঢিল দিয়ে পাখি মেরেছেন ? বিষয়টি অন্যায় জেনেও কেন “এক ঢিলে দুই পাখি মারা” – এমন শব্দবন্ধের প্রচলন ? আমি অবশ্য একবার এক ঢিলে তিন পাখি মারার ফন্দি করেছিলাম। এই নিবন্ধে সেই প্রসঙ্গ নিয়েই কয়েকটি কথা বলবো। তবে গোড়াতেই খোলাসা করে বলি পাখি মানে সত্যিই তো আর পাখি নয় । এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বেরিয়ে একাধিক কর্ম সাধনের নাম হলো পাখি মারা। আমিও তেমনি বেরিয়ে পড়েছিলাম এক রবিবাসরীয় সকালে।

    গন্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর আগে আমার পাখিদের কথা বলে নিই। শীতের আভাস পাওয়া গেলেই গুটিকয়েক মরশুমী ফুলের গাছ লাগানোর কথা মনে হয়। সেগুলো নার্সারি থেকে কিনে আনাটাই ছিল আমার প্রাথমিক লক্ষ্য। বাকি দুই উদ্দেশ্যর কথা ক্রমশ প্রকাশ্য। জেলা সদরের গায়ে গা লাগিয়ে থাকা আমাদের এই জনপদের বাইরের দৃশ্যপট বিগত এক দশকে বিলকুল বদলে গেছে। এতোটাই বদলেছে যে অনেক সময় পুরনো আবাসিকদের অনেকেই এখন স্মৃতির পাতা হাতড়ে হাতড়ে অতীতের পরিচিত দৃশ্যপটের সঙ্গে এখনকার ছবিগুলোর মিল খোঁজার চেষ্টা করেন। মেলেনা কিছুই মেলেনা।

    প্রশ্ন উঠবে বদলের ধরন নিয়ে। একালে এখানেও তেমন কোন জটিলতা নেই। এখন বদলে যাওয়া মানেই হলো আকাশছোঁয়া ফ্ল্যাট বাড়ির জঙ্গল , ঝাঁ চকচকে শপিংমল ও অগণিত সংখ্যক আলোকিত বিচিত্র সম্ভারের বিপণি, বিপুল সংখ্যক বহিরাগত মানুষের আনাগোনা , রাস্তা দাপিয়ে চলা অসংখ্য দুচাকা, চার চাকা যানের ব্যস্ত চলাচল , ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ফাস্ট ফুডের দোকান ফলে প্রচলিত নাগরিক পরিষেবার অবনমন, এক অতি সরব পরিবেশ ইত্যাদি….। বিশ্বজোড়া এমন প্রবণতাকে এড়িয়ে,অন্য কোনো পথে পথ হাঁটা কি সহজ কথা? আমাদের শহর‌ও সেই নিয়মেই বদলাচ্ছে খুব দ্রুত গতিতে।

    বিস্তর দরদাম করে গুটিকয় মরশুমী ফুলের চারা সংগ্রহ করে সাবধানে হেঁটে আবার সেই মোড়ে ফিরি। এ জায়গাটা এখন বেশ ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছে আকাশ ধরে ফেলা হালফিল ফ্ল্যাট বাড়ির দৌলতে। মনে পড়ে , প্রথম যখন এই জমিতে ফ্ল্যাট তৈরির কাজ শুরু হলো তখন ঢাউস সাইজের ফ্লেক্সে বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো হাত বাড়ালেই আম পাড়ার সুযোগ পাবেন। সঙ্গে থাকতো দাদু আর নাতির উজ্জ্বল মুখের ছবি। দুজনের মুখেই বিশ্বজয়ের ভূবন ভোলানো হাসি। যেন ওখানে থাকলেই আম খেতে খেতে দুনিয়াদারির হক পাওয়া যাবে। প্রতিদিন যাতায়াতের পথে আমিও ঐ বিজ্ঞাপন দেখতাম এবং হাসতাম। ফলবান আম গাছগুলোর জন্য একধরনের মায়া হতো। জবাইয়ের আগে মাংসের দোকানের সামনে বেঁধে রাখা পাঠাগুলোকে যেমন কাঁঠাল পাতা খেতে দেওয়া হয় , অনেকটা সেরকমই ব্যাপার। কেটে ফেলার আগে বিজ্ঞাপনে ঠাঁই দিয়ে বাড়তি কিছু খদ্দের টেনে আনার স্থূল, হাস্যকর কৌশল আর কি!

    সেই গাছগুলো কবেই বিদায় নিয়েছে, মাথা উঁচু করে একঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ফ্ল্যাট বাড়ির আগ্রাসনের শিকার হয়ে। ব্যস্ত মোড়ে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান। একটু গরম চায়ের জন্য মনটা কেমন যেন উতলে উঠল। দোকানের সামনে পাতা নড়বড়ে চেহারার বেঞ্চে গিয়ে বসবো কিনা ভাবছি । আমার এমন ইতস্তত ভাব দেখে দোকানী আমায় আশ্বস্ত করেন – ভাঙবে না।বসুন। বিশ্বাস করে বসে পড়ে গরম চায়ের গেলাসে চুমুক দিই। হঠাৎ নজরে পড়ে একজোড়া মানবকের ওপর – একটি কিশোর ও একটি কিশোরী। বয়স আনুমানিক সাত এবং দশ বছর। রাস্তার রোড গার্ডের লোহার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দুই ভাইবোন সামনের লম্বা বাড়ির কটা তলা আছে তা গুণছিল এক দুই তিন করে করে। কখনো আগে ভাই , তারপর দিদি, আবার এর উল্টো ক্রমে। কখনো আবার দুজনেই একসাথে।
    আমিও গোণা শুরু করলাম। তিনজনেই কিছুটা গোণার পর খেই হারাচ্ছিলাম।

    এই করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ল আমাদের এক ছাত্রের কথা, এখন এই হাউজিং এস্টেটের আবাসিক। ভাবলাম একবার ঘুরে এলে মন্দ হয়না। দ্বিতীয় পাখির দিকে ঢিল তাক করি। সন্তর্পনে সিগন্যাল দেখে রাস্তা পার হয়ে সেই আলিশান মকানগুলোর প্রধান ফটকের সামনে এসে দাঁড়াতেই ওপার থেকে প্রশ্ন ভেসে এলো – কোথায় যাবেন? বললাম – আমার এক পরিচিত এখানে থাকেন, ভাবছিলাম একবার দেখা করে যাব। সে তো যাবেন বললেই যাওয়ার উপায় নেই স্যার! এটাতো আপনার পরিচিত কারও ফ্ল্যাট বাড়ি নয়, এটা হলো একটা গেটেড সোসাইটি। এখানকার নিয়ম কানুন বিলকুল আলাদা। আর তাছাড়া…….! আমি আর দাঁড়াই না। বুঝতে পারি আমার দ্বিতীয় ঢিলটা ফস্কে গেল। তবে মনের ভেতর সিকিউরিটি পার্সনের শেষ কথাকটি যেন গেঁথে যায়। আজকের নিবন্ধ এই নতুন শোনা এবং শেখা শব্দবন্ধ – গেটেড সোসাইটি নিয়েই।

    Gated Society র বাঙলা কি হবে প্রাকারবদ্ধ সমাজ যা হলো এক বিশেষ অর্থনৈতিক শ্রেণির জন্য, বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্য যুক্ত এক আবাসিক এলাকা। যেহেতু এমন সমাজ গড়ে তোলা হয়েছে এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে,এক বিশেষ ধরনের উপভোক্তা নাগরিকদের জন্য, সেহেতু এখানে আম জনতার অবাধ গতায়াতের যথেচ্ছ সুযোগ নেই। চারপাশের সমস্ত প্রচল ব্যবস্থাকে এড়িয়ে সেখানে এক বিশেষ শ্রেণির মানুষজনের জন্য বিশেষ সুবিধাযুক্ত এক নয়াধারার যাপন ব্যবস্থাকে গড়ে তোলা হয়।
    মধ্যযুগের ইউরোপে এই ধরনের উঁচু পাঁচিল ঘেরা নগরীর পত্তন করা হয়েছিল আবাসিকদের বিশেষ সুরক্ষা ও স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে। আমাদের ভারতেও
    এমন মধ্যযুগীয় দুর্গ শহরের দেখা মিলবে রাজস্থানে। এমন “শহরের মধ্যে শহর” তৈরির প্রবণতা একেবারে হাল আমলের তেমন কিন্তু মোটেই নয়। ১৯২০ সালের আশেপাশের সময়ে পশ্চিম ইউরোপীয় শহরগুলোতে এমন প্রাকার বেষ্টিত সমাজের উদ্ভব হতে শুরু করে মূলত শহরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দ্রুত গতিতে বেড়ে যাবার ফলে। নাগরিকদের আবাসিক এলাকার বাড়তি নিরাপত্তার কথা ভেবে এমন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা শুরু হয়। সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষজনের মধ্যে অবাধ মেলামেশার সুযোগকে কাটছাঁট করে বিশেষ শ্রেণির মানুষের নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার আয়োজন করা শুরু হলো। ১৯২৮ সালে লন্ডনের প্রান্তিক অবস্থানে জন গলস‌ওয়ার্দি প্রথম আধুনিক গেটেড সোসাইটি স্থাপন করলেন। বহু বিত্তবান অভিজাত মানুষ এই ব্যবস্থা মেনে নিলেন । ফলে পরবর্তীতে এমন সমাজ অন্যত্র‌ও গড়ে তোলার কাজ জোরকদমে শুরু হলো।

    ভারতবর্ষে এমন নিরাপদ, নিরিবিলি প্রাকার বেষ্টিত সমাজ গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে অপেক্ষাকৃত অল্প কিছুদিন আগে। এমনিতেই বলা হয় যে ভারতের নগরায়নের প্রক্রিয়া বেশ ধীরগতিতে চলে তার অর্থনীতিতে গ্রামীণ সমাজের প্রাধান্যের কারণে। তবে বিগত কয়েক দশকে এদেশে টার্শিয়ারি সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নাগরিক সমাজে গেটেড সোসাইটিতে বসবাসের তাগিদ বেড়েছে। যৌথ পরিবার ভেঙে তৈরি হ‌ওয়া অণু পরিবারের সদস্যদের কাছে গণ্ডি বাঁধা গেটেড সোসাইটিগুলো অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠায় এমন সামাজিক যাপনের প্রতি তরুণ প্রজন্মের নাগরিকদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। নগরীর মূল বাণিজ্যিক এলাকা ছেড়ে নগর প্রান্তিক শহরতলিতে গড়ে উঠছে এমন হাউজিং এস্টেট। নানান ধরনের লোভনীয় পরিষেবা আর প্যাকেজের আকর্ষণ এড়িয়ে যাওয়া মোটেই সহজ নয়, বিশেষ করে যখন পকেট ভারী করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ব্যাঙ্কগুলো । ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে ভারতে এই মুহূর্তে ২৬১৭ টি প্রাকার বেষ্টিত সমাজের অস্তিত্ব রয়েছে। এই সংখ্যাটা আগামী দিনে আরও আরও বাড়বে। সবাই তখন হয়তো নিজেদের প্রাচীরের ঘেরাটোপে নিজেদের বন্দি করে রাখতে পছন্দ করবে।
    প্রশ্ন হলো কোন বিশেষ আকর্ষণে আজকের নাগরিক সমাজ নিজেদের প্রাকারের অন্তরালে সুরক্ষিত রাখতে চাইছে। আগেই বলেছি এক্ষেত্রেও রয়েছে নির্মাণ সংস্থাগুলোর মধ্যে তীব্র আকচাআকচি। সুযোগ সুবিধার তালিকা দেখে বিভ্রান্ত হতে হয়। সুযোগ সুবিধার তালিকা দেখতে গিয়ে বেশ কয়েকটি নির্মিয়মান গেটেড কমপ্লেক্সের বিজ্ঞাপনের দিকে নজর দিলাম। সবাই আবাসনের পসরা সাজিয়ে হাঁকাহাকি ডাকাডাকির খেলায় মেতে উঠেছে। কী কী সুবিধা মিলবে এহেন প্রাকারিত স্বপ্ন পুরীতে? দেখে নিই।

    শরীরচর্চার জন্য জিমনেশিয়াম
    ক্লাব হাউস
    খেলাধুলার ঢালাও আয়োজন – ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ভলিবল কোর্ট, টেনিস কোর্ট।
    ইনডোর গেমস হাউস ফর কিডস্ এন্ড অ্যাডাল্টস্
    বিনোদন বা রিক্রিয়েশন এর ব্যবস্থা ।
    সুইমিং পুল – পুরুষ ও মহিলাদের জন্য।
    চিলড্রেনস পার্ক
    জগিং এন্ড ওয়াকিং ট্রাক
    প্লে গ্রাউন্ড
    গার্ডেন, ওপেন গ্রীন স্পেস….. !

    তালিকা আরও আরও দীর্ঘ হতে পারে। তবে আমি এখানেই ইতি টানবো। সুযোগ সুবিধার কথা ক‌ইতে ক‌ইতে রবিঠাকুরের সেই বিখ্যাত কবিতার প্রসঙ্গ মনে পড়ে গেল যেখানে খাঁচার পাখি আর বনের পাখি মনখুলে আলাপচারিতায় নিজেদের সরব রেখেছে। বনের পাখি মুক্ত জীবন ছেড়ে খাঁচায় ঢোকার কথা ভাবতেই পারেনা। আর খাঁচার পাখি ঐ নিরিবিলি পিঞ্জরাবাসেই সুখী। ইদানিং গেটেড সোসাইটির এমন‌ সব এ্যামিনিটিস এর হাতছানি এড়িয়ে যাওয়া , এক কালের কিনু গোয়ালার গলি অথবা ছিদাম মুদি লেনের এজমালি বাড়িতে কোনো রকমে মাথা গুঁজে থেকে হাউই হয়ে ছিটকে বেরিয়ে পড়া প্রজন্মের নবীন মানুষজনের পক্ষে এককথায় অসম্ভব। গেটেড সোসাইটির কথা বাদ দিলেও আমরা দেখবো আড়াইজন মানুষ নিয়ে গড়ে ওঠা এই সময়ের সংসারগুলো সব‌ই পাতা হচ্ছে ফ্ল্যাট বাড়ির পরিমিত চৌহদ্দিতে। একদিকে বলা হচ্ছে , আধুনিক ডিজিটাল যুগে,পৃথিবীর পরিধি নাকি সবার হাতের মুঠোয় এসে গেছে, অন্যদিকে আমাদের চিরকালের যাযাবর মনকে এখন সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা ফ্ল্যাট গুহা বাড়িতে বন্দি করে রাখার জন্য সবাই উদগ্রীব। সামাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কোনো ব্যবস্থা তড়তড়িয়ে বেড়ে ওঠে। এটা হয়তো তার‌ই অনিবার্য প্রতিফল।

    বিষয়টি নিয়ে, এমন স্বেচ্ছা বন্দিত্বের জীবন যাপনকে মেনে নেওয়ার তথাকথিত বাধ্যবাধকতা বা সুবিধা অসুবিধা নিয়ে অনেক অনেক কথা বলার আছে। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনার সুযোগ আছে, তবে সেই বিতন্ডায় যাবো না।আজ শেষ করবো আশু বাবুর গল্প দিয়ে।

    আশু বাবু , আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়। একজন আপাদমস্তক সাদামাটা ,সরল মানুষ।একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করতেন। পুজোপার্বণের সময় মানে লক্ষ্মী পুজো, সরস্বতী পুজোর সময় পাড়ার কয়েকটি বাড়িতে পুজো করতেন। সেই সূত্রেই আমাদের সঙ্গে পরিচয়, পরে হৃদ্যতা। আশুবাবুর স্ত্রী ছবি দেবীকে আমরা কাকিমা বলেই ডাকতাম। ওদের একমাত্র ছেলে অম্লান, পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। লেখাপড়ার ধাপগুলো সহজেই উৎরে যেতেই ডাক পেয়ে গেল এক বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা কোম্পানির চাকরিতে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছবি কাকিমা আর আশু কাকু অনেক মিষ্টি নিয়ে একদিন এলেন আমাদের বাড়িতে। সঙ্গে অম্লান‌ও এসেছিলো।
    এর‌ই কিছুদিন পরেই শুনলাম আশু কাকুরা এ পাড়া ছেড়ে নতুন ফ্ল্যাটে চলে যাবেন। অনেক দিন ধরে এই পাড়ায় ছিলেন ওঁরা। এখন অম্লানের চাকরিসূত্রে এই পুরনো আবাস ছেড়ে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। শত হলেও সামাজিক মান বেড়েছে তো!

    ছবি কাকিমারা চলে যাওয়ায় মা খানিকটা মুষড়ে পড়লেন। বাবার আড্ডা মারার এক সঙ্গী কমে গেল। এভাবেই চলছিল। হঠাৎ একদিন সন্ধেবেলায় কাকু আর কাকিমা এসে হাজির। আমরা ভাবলাম বোধহয় দেখা করতে এসেছেন। কাকু বললেন – ওখানে আমাদের মতো লোকের থাকা খুবই মুশকিল। আমরা আৎকে উঠে বললাম – কেন ? এতো দাম দিয়ে কেনা হলো, কতশত আধুনিক ব্যবস্থা,কত আয়েশ আরামের আয়োজন,কত প্রশান্তি,গাছ ,বাগান, ফুল দিয়ে সাজানো এস্টেট! তোমরা চলে এলে?

    “সব ঠিক, কিন্তু প্রাণের পরশ নেই। ঢুকতে খাতায় স‌ই করো, বেরোতে হলে জাবদা খাতায় স‌ই করে বের হ‌ও , মন খুলে কথা বলার লোক নেই সবাই কেমন পুতুলের মতো। আর তাছাড়া আমার মতো প্রাইভেট ফার্মের এ্যাকাউন্টেন্টকে নিয়ে সামান্য মাথা ব্যাথা নেই ওদের। কেমন একটা অসাম্যের বাতাবরণে দমবন্ধ করে থাকা। এখানে থাকলে কত লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা, কথা বলা । ওখানে সেসবের সুযোগ কোথায়? বাইরের সদা চলমান জীবন থেকে দূরে সরে খাঁচার ভেতর বন্দিদের মতো থাকতে আমরা অভ্যস্ত ন‌ই। সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে,একধরনের সচেতন আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলছিল। তাই চলে এলাম। অম্লান ব্যাপারটা মানতে পারছিল না , তবুও বলে এলাম দিন কয়েকের জন্য আমাদের চেনা এঁদো গলির বাতাসে শ্বাস নিয়ে আসি। আগে ছিল বারো ঘর, এক উঠানের যাপন। আর এখন হয়েছে বারো ঘর,বারো উঠান। এ যেন উল্টো স্রোতে গা ভাসানো। একটা মানুষের জীবনে অত কিছু বৈভবী আয়োজনের কি কোনো প্রয়োজন আছে?”-- আশু কাকু তাঁর দীর্ঘ জবানবন্দি শেষ করে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেন। আমরা সবাই কিছুক্ষণের জন্য মৌনতা পালন করি।

    সেদিনের তৃতীয় পাখি ছিল ওখানকার এক বিখ্যাত দোকান থেকে গরম গরম কচুরি আর জিলিপি কিনে আনা বাড়ির সবার জন্য। এই ঢিল অবশ্য ঠিকঠাক লক্ষ্যে লেগেছিল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৮৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aditi Dasgupta | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৩540370
  • উঃ কি যে ভালো লাগলো!  আমার প্ৰিয় পাহাড়ি নদীর ধারেও পাঁচিল ঘেরা  ভূমন্ডল মুষড়ে  দিয়েছিল। কেউ সেই পাঁচিল সংস্কৃতি থেকে ফিরে আসার কথা, অন্য ভাবনার কথা বললেন।
  • Somnath mukhopadhyay | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:২০540371
  • এমন একটা মন্তব্য পাওয়ার জন্য আমি আরও হাজার পাতা লিখতে রাজি আছি। বছর শেষের ক্ষণে এমন উচ্ছ্বসিত মন্তব্য শিকল ছেঁড়া পাখির গান হয়ে মরমে পশিল।
    ছড়িয়ে পড়ুক আরও মুমুক্ষু মানুষের কাছে।
  • সুরক্ষাচক্র | 2405:8100:8000:5ca1::282:***:*** | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১২540372
  • পড়তে পড়তে দমদির লেখা সুরক্ষাচক্র মনে পড়লো। সে আরো জোরালো লেখা। পুনায় থেকে অনেকদিন হয়ে গেল দমদি মত বদলেছে কিনা জানতে মুঞ্চায়।
  • Somnath mukhopadhyay | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৭540373
  • নিঃসন্দেহে দমদির লেখা অনেক অনেক দমদার। লেখাটা পড়ার সুযোগ করে দেবার জন্য সুরক্ষাচক্রকেও কৃতজ্ঞতা জানাই। দমদি নিজে ঐ পরিবেশের অনুপুঙ্খ ব্যবস্থাপনাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, আমিতো ধাক্কা খেয়ে গেট পেরিয়ে অন্দরে ঢোকার সুযোগ পাইনি। আমার সবটাই আশুকাকুর বিবরণী অনুযায়ী লেখা। আমার‌ও জানতে ইচ্ছে করছে দমদি কি নিজের মতকে আগের মতোই আগলে বসে আছেন? নাকি প্রাকার সমাজের চরিত্র বিলকুল বদলে গেছে ?
  • sarmistha lahiri | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৪540376
  • এই নব্য নগরায়নের সংস্কৃতি র সঙ্গে আমরা এখন সবাই পরিচিত হয়ে উঠছি।পাড়া সংস্কৃতি তে বেড়ে ওঠা মানুষ জন   ঝাঁ চকচকে জীবনের আশায় এই সকল বহু মূল্যবান কমপ্লেক্সে নিজেদের আস্তানা গড়ছে। এখানে পড়শী বলে কেউ নেই। সবাই  যার যার পাঁচিলের বৃত্তে আবদ্ধ পক্ষী। নতূন জীবনে অভ্যস্ত হতে হতে একসময় এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বাসীর জীবন  মেনে নিতে হবে।হয়তো এর ও একদিন অবসান হবে। সেই আশাই রাখি। 
  • #:+ | 2405:201:8000:b11b:214b:9c47:4d3:***:*** | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৫৮540380
  • বছরের একদম শেষদিনে এমন একটি লেখা পড়ার সুযোগ পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। আমি নিজে গেটেড সোসাইটির বাসিন্দা হয়ে এই সমস্যার সঙ্গে পরিচিত।এও এক বৃহত্তর সমাজবিচ্ছিন্ন যাপনের অধ্যায়।
  • পৌলমী | 2409:4060:e88:e92d:8579:706f:d61b:***:*** | ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৫540393
  •  লেখককে নতুন ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা। খাঁচার জীবনে আমরা বোধহয় স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি অনেকটা বাধ্য হয়েই। সময়ের সাথে সাথে সব যাপন যন্ত্রণাই বোধহয় সয়ে যায়।না হলে ঐ মনভোলানো আয়োজনে আমরা মজবো কেন ? 
  • সৌমেন রায় | 202.142.***.*** | ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৫৫540402
  • কালচক্র । রোধ করবে কে !
    নবীনরা প্রয়োজনে নবনির্মান করে। প্রবীণরা কষ্ট পায়। চিরন্তন খাঁচার পাখি বনের পাখির গল্প।
    লেখাটি মন ছুঁয়ে গেল।
  • Dr Sourav M | 2401:4900:3bd9:88f7:7138:a111:5cca:***:*** | ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৪540429
  • আশুবাবুর স্টোরি টা ❤️‍
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:65ce:d657:e80d:***:*** | ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৭540430
  • গেটেড কমিউনিটি আর পাড়ায় নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাট - দুয়েরই নিজের সুবিধ, অসুবিধে দুটোই আছে। পাড়ায় যেমন পড়শীদের সাথে চেনাশোনা হয়ে যায়, মাঝেমাঝে কথাবার্তা হয়, সেরকম গেটেড কমিউনিটিতেও বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে চেনা হয়ে যান, বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আবাসনে থাকার সুবিধেগুলোর মধ্যে হলো, নানা সার্ভিস এর জন্য সোসাইটির অ্যাসোসিয়েশানকে ফোন করলেই হলো, অ্যাসোসিয়েশানের প্লাম্বার বা ইলেকট্রিশিয়ান বা হাউস ক্লিনার রা এসে কাজ করে দিয়ে যাবে (অ্যাসোসিয়েশান বাসিন্দাদের দেওয়া মেন্টেনেন্সের টাকাতেই চলে)। আর পাড়ায় থাকার সুবিধা হলো, বহু দোকানপাট একদম হাতের কাছে পাওয়া যায়। 
     
    তবে এই জায়গাটায় একমত নাঃ “সব ঠিক, কিন্তু প্রাণের পরশ নেই। ঢুকতে খাতায় স‌ই করো, বেরোতে হলে জাবদা খাতায় স‌ই করে বের হ‌ও , মন খুলে কথা বলার লোক নেই সবাই কেমন পুতুলের মতো। আর তাছাড়া আমার মতো প্রাইভেট ফার্মের এ্যাকাউন্টেন্টকে নিয়ে সামান্য মাথা ব্যাথা নেই ওদের। কেমন একটা অসাম্যের বাতাবরণে দমবন্ধ করে থাকা। এখানে থাকলে কত লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা, কথা বলা । ওখানে সেসবের সুযোগ কোথায়?"
     
    প্রথমত, সোসাইটিতে ঢুকতে বেরোতে কোথাও সই করতে হয় না, মাইগেট বা নোব্রোকারহুড অ্যাপ দিয়েই কাউকে কিছু না বলে ঢোকা বেরনো যায়। তাছাড়া বেশীরভাগ সোসাইটিতে গাড়ির আর স্কুটারের স্টিকার থাকে, গেটের সিকিউরিটি গার্ডরা সেই স্টিকার দেখলে আটকান না। দ্বিতীয়, প্রাণের পরশ বা মন খুলে কথা বলার অবকাশ সোসাইটি আর পাড়া, দু জায়গাতেই থাকে। আমার বাড়ি কিলপাকে পাড়ার মধ্যে, আর একটা ফ্ল্যাট আছে একটা কমিউনিটিতে। দুজায়গাতেই আমার বহু পরিচিত, হাঁটতে বেরোলে বহু লোকের সাথে কথা হয়। দিওয়ালি, ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার ইত্যদিতে দুজায়গাতেই আমার বন্ধুরা অমাকে ডাকে। সোসাইটিতে বরং বহু লোক এক জায়গায় হয়ে আনন্দ করে, সব পাড়ায় সেরকম হয় না। 
  • Somnath mukhopadhyay | ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৪540431
  • dc, আপনার মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ। সব মানুষের অভিজ্ঞতা সমান হলে হয়তো সমাজের চেহারাটাই বদলে যেত। গেটেড সোসাইটি নিশ্চয়ই তথাকথিত সমাজ বদলের পরিণতি। না হলে চারদিকে এমন ব্যবস্থাপনার রমরমা হয়! যৌথ পরিবার যখন ভেঙেচুরে খানখান হয়ে গেছে, তখন এমন ব্যবস্থাতে সায় না দিয়ে উপায় কি! মেলাবেন তিনি মেলাবেন।
    ভালো থাকবেন। 
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e015:de99:3814:***:*** | ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৬540432
  • সোমনাথবাবু, আপনাকেও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। প্রত্যেকের নিজের নিজের মতো অভিজ্ঞতা হয়, এ ব্যাপারে একদম একমত। আপনিও ভালো থাকবেন :-)
  • Somnath mukhopadhyay | ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৫540433
  • মিগজাউমের ঝড়ের সময় চেন্নাই গিয়ে পিঠে খাওয়ার কথা উঠে ছিল আপনার শাশুড়ি মায়ের হাতে। এখনও সেই আমন্ত্রণ বহাল রয়েছে আশা করি। সেই অবসরে।..... 
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e015:de99:3814:***:*** | ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪২540434
  • অবশ্যই আছে laugh​শাশুড়ি মায়ের বানানো পিঠে হয়তো খাওয়াতে পারবো না (কারন তিনি ব্যাঙ্গালোরে থাকেন), কিন্তু যখনই চেন্নাইতে আসবেন, আমাকে ফোন করবেন। 
  • kk | 172.56.***.*** | ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৫২540438
  • আমি ডিসির (16:37)পোস্টের সাথে একমত। সোমনাথবাবুর লেখায় অনেক খানি আবেগ আছে, সেটা বুঝতেও পারছি। তবে সব রকম কম্যুনিটিতেই তো দুটো দিক থাকে। আমার মা (সাতাত্তর বছর বয়স) একেবারেই একা থাকেন। ছেলেমেয়েরা সবাই বাইরে এদিকে ওদিকে, বাবাও নেই। কিন্তু মা আর আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি কেবল মাত্র ওটা গেটেড কম্যুনিটির অ্যাপার্টমেন্ট বলে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা খুবই ভালো, আর ডিসি যেমন বললেন মেইন্টেন্যান্স নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়না। এগুলো না হলে ঐ বয়সী একজন ভদ্রমহিলা একা একা কী ভাবে থাকতেন সেটা ভাবনার বিষয়। পাড়ায় থাকার অভিজ্ঞতাও আছে। সেখানে রোজ সন্ধ্যেবেলা উঠোনে কেউ হেঁটে বেড়াতো, বাগানের কলের পেতলের মাথা সব চুরি করে নিয়ে গেছিলো। পাড়ার লোকেদের জানালে তারা কোনো সাহায্য বা পরামর্শ কিছুই দেয়নি। পাড়া কালচারের অনেক আবেগ আছে ঠিকই। কিন্তু গসিপ, পরচর্চা, জেলাসি এগুলোও কম দেখিনি। ঐ যেমন বললাম, সব কিছুরই দুটো দিকই আছে।
  • Somnath mukhopadhyay | ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:২৭540439
  • সাধু, সাধু ! আমি আগাগোড়াই মন্থনে বিশ্বাসী। শিক্ষকতার জীবনেও শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি - "সংশয় থেকেই সত্যের জন্ম। তোমরা প্রশ্ন করতে শেখো। প্রশ্ন করার জন্য কাউকে না পেলে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করো । ঠিক উত্তর খুঁজে পাবে।"-এই যে আলোচনার পরিসর তৈরি হলো , তাতেই লেখক হিসেবে আমি কৃতার্থ। কে কের মতে ভালো মন্দ দুটোই আছে  কোনো ব্যবস্থাপনায়। আগে ডি সি ও এই প্রসঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। আসলে আমরা অনেক আগেই নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অভ্যাস রপ্ত করেছি বা রপ্ত করতে হয়তো বাধ্য হয়েছি। সুতরাং নিজেদের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে প্রাকারবদ্ধ সমাজের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে খুব কষ্ট কার‌ও হবে বলে মনে হয় না। হালফিলের ট্রেন্ড এটাই। সুতরাং .....আশু কাকুর সিদ্ধান্ত একান্ত ভাবে তাঁর। কোম্পানি তার জন্য দায়ী নয়।
    সকলের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ মূল্যবান মতামত জানানোর জন্য।
    ভালো থাকবেন সবাই।
  • Subhrangsu | 2401:4900:531f:dd6e:f247:9575:8e18:***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৩540514
  • তবে আমার মনে হয়, ঐ চহোদ্দি তে যে amenities দেওয়া হয় তার সিকিভাগ ও ভোগের সময় হয়না ঐ আবাসিক দের।
  • Kishore Ghosal | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:১২540538
  • সোমনাথবাবুর লেখায় পল্লী-সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া  আশুবাবুর অনুভবকে প্রায় পূর্ণাংশে স্বীকৃতি দিয়েও বলি - যে কোন পাড়ায় নিজস্ব বাড়িতে একক বাসের সুবিধা যেমন আছে - তেমনি আছে - নিম্নলিখিত অসুবিধে গুলিওঃ- 
    ১) নিজস্ব বাড়ির মেনটিন্যন্স - এটি একটি নিয়মিত শিরঃপীড়া। 
    ২)  দুর্গাপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, শীতলা, লোকনাথবাবা, শিবরাত্রি পুজো  - পূজাকমিটিগুলির সঙ্গে সরাসরি চাঁদা নেগোসিয়েসন যথেষ্ট তিক্ততা বাড়ায়। (প্রসঙ্গতঃ এই পুজোগুলির সংখ্যা এবং  নিত্য নতুন পুজোর উদ্ভব বেড়েই চলেছে - আমাদের ছোটবেলায় পাড়ায় দুর্গাপুজো হত একটি - কালীপুজো হত গোটা দুয়েক - এখন দুটোই বেড়েছে।  নতুন সংযোজন হয়েছে অন্য পুজোগুলি)। 
    ৩) বাড়ি খালি রেখে কিছুদিনের জন্য বাইরে বেড়াতে যাওয়া - নিরাপত্তা নেই তা বলব না - কিন্তু যথেষ্ট দুশ্চিন্তাজনক। 
    ৪) কখনও কখনও যেমন হোলি বা বিশ্বকর্মা পুজোর সন্ধ্যায় ও রাতে, অথবা শাসক রাজনৈতিক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ এবং বিরোধী দলের সঙ্গে লড়ালড়িতে -  মদাসক্তদের ( মদ এখানে দু অর্থেই - তপ্ত পানীয় অথবা শাসক দলের মদমত্ততা) অপূর্ব বচনে কানপাতা দায় হয়ে ওঠে - বিশেষতঃ তাঁদের পক্ষে - যাঁদের বাড়িতে শিশু, বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী পুত্র-কন্যা বর্তমান। 
     
    হয়তো সব পাড়াতে এমন হয়না -  যেমন সল্টলেকের বা বালিগঞ্জের একক বাড়ির পাড়াগুলিতে - (তবে সেখানেও পাড়া সংস্কৃতি সেভাবে চোখে পড়েনি - গুগ্ল ম্যাপ আসার আগে - নির্দিষ্ট বাড়ির ঠিকানা, মালিকের নাম বললেও, তার কয়েকটি আগে বা পরের বাড়িতে বাস করা মানুষরা সঠিক সন্ধান দিতে পারেননি) - তবুও উপরের চারটি কারণের জন্যেই গেটেড আবাসন অবশ্যই  গ্রহণযোগ্য। তাতে জিম, কমিউনিটি হল, সুইমিং পুল ইত্যাদি বাহুল্যমাত্র।
     
    যদিচ পাড়ার মানুষদের বণ্ডিং - ছোড়দা (আমি পিতামাতার কনিষ্ঠ সন্তান ছিলাম), অথবা ঘোষালদা, কিশোরদা, কিংবা কিশোরকাকু, কিশোরজেঠু...এ আন্তরিক ডাকগুলো মিস করি। এখন মিঃ ঘোষাল, কিংবা ঘোষাল আংকল্‌ ছাড়া কোন ডাক আর শুনিনা। 
     
    কী আর করা - কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতে হয়।  কালকা মেলে হাওড়া - দিল্লি ট্রেন জার্নিতে সহযাত্রীদের মধ্যে যে বণ্ডিং পেয়েছি, রাজধানীতে সে বণ্ডিং অনেকটাই নিষ্প্রভ, আর ফ্লাইটে নৈব নৈব চ। এটা কি সভ্যতা আর উন্নতির (নাকি সব কি বিকাশ?) অবদান নয়?  
  • Ritabrata Gupta | 2401:4900:76c0:c6f6:cc59:383:e78:***:*** | ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:০৯540557
  • আমাদের  আধুনিক  জীবন  যে  আমাদের  আরো  কত  বিচ্ছিন্ন  করে  দেবে ,  কে  জানে ?  আধুনিকতার  মূল্য  আমাদের  ভালোভাবেই  টের  পেতে  হবে  !
  • Somnath mukhopadhyay | ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:০২540596
  • এই নিবন্ধটি লেখার সময় নিজের একান্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সকলেই আমরা এমন ব্যবস্থাকে মেনে নিতে প্রস্তুত হয়ে গেছি কমবেশি। সুতরাং আবেগঘন হয়ে খুব লাভ নেই। এখন অভিভাবকদের পক্ষ থেকেই এক বিচ্ছিন্নতাকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে হয়তো খানিকটা হতাশার জায়গা থেকে। অপেক্ষায় থাকলাম। মতামত প্রকাশের জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন