কিছু কিছু কথা থাকে যেগুলোকে কোনোদিন ভোলা যায় না।এমন অনেক ঘটনা থাকে যা মানুষের মনে একটা দাগ রেখে যায়। যুগ যুগ আগের কথা হলেও, সেগুলো মনে হয় এই তো হলো সেদিন----। এই যে আমি লিখতে বসেছি, এমনই একটা ঘটনার কথা বলব বলে। সথ্যি বল কি আমি এখনো বুঝতে পারছি না, যে ঘটনাটা শুনে আমি হাসবো না ভয় পাবো । তবে আর কি, স্মৃতির অতল ঘোলা জলে ডুব দিয়ে সেই ঘটনার কথা বলি।
আমার তখন তেরো বছর বয়স। ক্লাস সেভেনে পড়ি। মাথার কাছে মাধ্যমিকের নিঃশ্বাস । বাবা মায়ের কাছ থেকে যে চাপ আসছিল, তা আর বলার নয়। বাবা মাকে বলে বোঝাতে পারি না, যে এখন সবে ক্লাস সেভেন, মধ্যমিক এখনো তিন বছর দেরি। কিন্তু কে কার কথা শোনে? তাদের কথায় ক্লাস সেভেনই হলো মাধ্যমিক প্রস্তুতির সময় । ফলে দিন রাত বইতে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকতে থাকতে আমার গলদঘর্ম ছুটে যাচ্ছিল। তো যাই হোক, এ সময়ে আমার একটই চিন্তা মাথায় ঘুরছিল একটু ফাঁকা সময় পাওয়া। স্যার যখন ডিকশনারি সাইজের বইগুলি আমার সামনে রাখতেন তখন শুধু ঠাকুরকে ডাকতাম একটু ফাঁকা সময় দেওয়ার জন্য । তো ঠাকুর বোধহয় কানে সেদিন হেডফোন গোঁজেননি, তাই আমার কথা শুনতে পেয়েছিলেন। দুই দিন পরই দেখলাম বাবা - মা বাইক নিয়ে কোথায় যেন চলে গেলেন, দেখে মনে হলো মামার বাড়ি যাছে । আমার একটু রাগ হলো বটে। যে আমাকে না বলেই চলে গেল।একটা অন্য কথাও মাথায় এলো, যদি কোনো ভুত আসে এখন। বেশ চিন্তা হচ্ছিল, ঘাড় মটকে যাবার ভয় নয়, তারা আমাকে নিয়ে গেম খেলবে মোবাইলে, তাই। আর আমার গেম খেলতে একটুও ইচ্ছা চিল না। শুনে একটু অবাক হলেন না ? যে ভূতেও আবার গেম খেলে ? হ্যাঁ, ভুতেরা এখন একবিংশ শতাব্দীতে এসে ফুলি আপডেটেড। কারন মানুষ কী একাই উন্নত হতে জানে ? তো যাই হোক টিভি দেখছিলাম এমন সময় হঠাৎ শুনি কে যেন আমায় নাম ধরে ডাকল ঠাকুর ঘর থেকে । প্রথম প্রথম খেয়াল করি নি, তারপরে হঠাৎ শুনতে পেলাম ঠাকুর ঘরে অনেকজন যেন গলা ছেড়ে কাঁদছে। আমি ছুটে গিয়ে দেখতে গেলাম যে কী হচ্ছে আমি তো বাড়িতে একা ছিলাম, তাও কে আমায় ডাকছে? যাইহোক ওপরে ঠাকুর ঘরে গিয়ে কী দেখলাম জানেন ? দেখলাম শিব, লক্ষ্মী, এমন কী বিষ্ণু প্রমুখ দেবদেবী বসে আছড়ে পরে কাঁদছে। কী হল, কী হল না ব্যাপারটা আমি আসলে সন্ধ্যে দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মী বলে উঠলেন "প্রথমে ভেবেছিলাম হোয়াট্সআপে মেসেজ করে দেব। কিন্তু তারপর ভাবলাম সদলবলে চলে আসি। এবার তুই সন্ধ্যেটা দে ব্রাদার"।আর ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল, পুরো Aquaguardর জলের মতো। তক্ষুনি যাহোক করে প্রদীপ আর ধূপ জ্বালিয়ে সব দেবতাকে শান্ত করতে হলো।কিন্তু আপনিই বলুন তো তেত্রিশ কোটি দেবতার নাম মনে রাখা যায় ? তাই vip কিছু জনের নাম উচ্চারন করে বাকিগুলির জায়গায় ইত্যাদি, প্রভৃতি বসিয়ে দিলাম। অন্দরমহলের ঠাকুরকে তুষ্ট করে চলে গেলাম বাইরে প্রদীপ দিতে।কিন্তু সেখানেও আর এক বিপত্তি । দেখি পাঁচিল থেকে দুটো কালো মতন কী ঝুলছে।প্রথমে মনে হলো যে দুটি কালো বস্তা। কিন্তু তারপর চোখ বড় বড় করে বুঝলাম যে ঐগুলোর কাছে মোবাইল জাতীয় কিছু জিনিস আছে। বুঝতে আর বাকি রইল না যে তারা facebook করছে। এটা বুঝতে পারার সংগে সংগে আমি প্রদীপটিকে তার স্থানে রেখে দিলাম। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম তোমরা কে ? হোয়াট্স অ্যাপ নাম্বার কী ? দেখলাম বস্তাগুলো তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। কেননা এতক্ষন তারা আমার উপস্থিতি টেরই পায়নি ফোনে ব্যাস্ত ছিলো কিনা । তারপর ফোন থেকে খুব কষ্ট হচ্ছে চোখ সরাতে এমন ভাব করে বস্তাগুলো আমার দিকে তাকাল। দেখলাম তাদের চোখে যেন আগুন জ্বলছে। বুঝলাম এই ব্যাটাগুলো নির্ঘাত ভূত। ভাঙা ভাঙা গ্লায় তারা বলল - "আমরা হ্লাম ভুত ,তোদের বাড়ির কাছে যে শ্মশান আছে সেখান থেকে এসেছি"। এবার আমার চমকানোর পালা। কেন জানিনা একটা প্রশ্ন মাথায় এলো। বললাম "আচ্ছা তোমরা ভেতরে ঢুকলে কী করে ? আমরা যে ঠাকুরকে পুজো করি , তারা তোমাদের আটকায়নি ?"কথাটা বলে মনে হয় ভুল করলাম। কারন ভুতগুলো দেখলাম অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। পরমুহূর্তেই তারা গুগুল , গুগুল বলে জোর হেসে ফেলল। দেখে আমিও একটু স্বস্তি পেলাম। খুব কষ্টে হাসি চেপে নচ্ছারগুলো বলল, এই দেখ তোর ঠাকুরকে ঘুস দিয়ে e-pass জোগাড় করেছি।তোদের এলাকায় জন্য। ভুতগুলো এবার দেওয়াল থেকে নেমে বলল, দে, ঘাড়টা একটু দে দিকিনি মটকাতো, হেবি লাগে বুঝলি তো ঘাড় মটকাতে। ঘাড় মটকানোর কথা শুনে আমার তো হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি করে আমি কটা খাঁটি দেবতার নাম ডাকতে লাগলাম, কারন বাকিগুলো সব বোগাস। প্রথমত রাম, আচ্ছা আপনারাই বলুন যে লোকটা পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতে বাঁদরের সংগেই হাত মেলাল, তাকে কী ডাকা যায় ? এই আমাকেই হয়তো গন্ডার ভেবে উড়িয়ে দেবে । আর হঠাৎ একটা ভুত দেখলাম আমার মনের কথা পড়ে বলল, ওরে তুই রাম নাম জপ করবি? এ্যা? এ্যা ? রাম নাম জপ করবি ?কিসু হবে না তা করে। এই দেখ রাম আমার facebook follower। আমি দেখলাম সত্যিই তো রাম এদের Facebook follower, আর শুনলে অবাক হবেন রামের প্রোফাইল পিকচারে একটা আস্ত পাঁঠার ছবি।এবারে ডাকতে লাগলাম শিবকে। কিন্তু পরমুহুর্তেই মনে পরে গেল খবরের কাগজের একটা হেডলাইনের ' কৈলাসে থেকে মাথা জমে গেছে শিবের তাই তাকে বিশিষ্ট্য সর্ষের তেলে ভাজা হচ্ছে মাথা খোলার জন্য'। তার পরেই মনে পড়ল দুর্গার কথা, কিন্তু তার সাথে এও মনে পড়ল যে স্বর্গের পুলিশ দুর্গার হাতগুলোকে এক্সট্রা লাগেজ বলে প্লেনে উঠতে দিচ্ছে না।কাজেই সে আর কী করে আসবে ? শেষ পর্যন্ত আর নাম খুঁজে না পেয়ে আমি আওড়াতে লাগলাম "জয় এলন মাস্ক, জয় এলন মাস্ক" ।এবার দেখলাম ভুতগুলো ভয় পেল। আস্তে আস্তে তারা দেখলাম চলে যেতে লাগল । একটা ভূত বলল ওরে রকি চ অন্য কোথাও গিয়ে ফেসবুক করি। আমি শুনে চমকে গেলাম, ভূতেদের আবার নাম হয় ? তাও আবার রকি। যাইহোক আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না কারন বাবা মায়ের গলা পেয়ে গেছি গেটের বাইরে।