এখনকার সাল ৩০০৯। আমার জন্ম ২০০৯ সালে, অর্থাৎ আমার বর্তমান বয়স ১০০০ বছর। কালই আমি ৯৯৯ থেকে ১০০০ এ পা দিয়েছি। খুব ধুমধাম হয়েছে। আমার যখন ৩০ বছর বয়স তখন শুনেছি বিজ্ঞানীরা ‘Live Long Medicine’ বা বাংলায় ‘অমর জীবন ঔষধ’ এর গবেষণা করেছিল। এই ঔষুধ খেলে নাকি মানুষ আর মরে না। প্রথম প্রথম জনসাধারণ খুব হেসেছিল, কিন্তু ১৫ বছর পর বিজ্ঞানীরা সত্যি সত্যিই যখন অমর জীবন ঔষধ বানিয়ে ফেলল, তখন জনসাধারণ এর মধ্যে ব্যবহার খুবই ছড়িয়ে পড়ল। প্রায় সবাই এই ঔষুধ খেয়েছে – আর সেই সবের তালিকায় আমি ও আমার পরিবারও আছি। প্রায় বলছি কারণ এই ঔষুধ কেনার ক্ষমতা নেই প্রায় ১০% মানুষের।
৫০০ বছর আগে আমাদের মোবাইল নামে একটি বস্তু ছিল, এখনও তাই। খালি এর আয়তন গোল ও প্রায় ২ সেমি ব্যাস। এই যন্ত্রটি আপনা থেকেই আমাদের মনের কথা জেনে, সেই মত আকৃতি ধারণ করবে। এর নাম ‘মোবিও’। মোবাইল এর নাম থেকেই এই ‘মোবিও’ নামটি এসেছে। ইতিহাসের নানা অজানা জিনিসও সমাধান হয়ে গেছে। যেমন মহেঞ্জোদারোতে একটু মূর্তি পাওয়া গেছে যার চুল আঁচরানো, বাঁ কাঁধে চাদর ও চোখদুটি আধখানা। এই মূর্তিটিকে ভালো করে স্ক্যান করে জানা গেছে যে এটি একজন পুরোহিতের। আগে কনফিউশন ছিল যে এটি একজন পুরোহিতের নাকি রাজার। তারপর নেতাজীর মৃত্যু হয় প্লেন দুর্ঘটনায় – এটাও জানা গেছে।
এবার এখানকার মানুষদের বৈশিষ্ট দিই। এদের মানে আমাদের সবার গাল অনেক ফুলে গেছে। চোখ ছোটো হয়েছে। চুলের রঙ নীল – আর আমাদের রক্তের রঙ হলুদ। পৃথিবীর মতই এটিও একটি গ্রহ, গবেষণা করে দেখা গেছে। খালি পার্থক্য এই যে এখানে সবকিছু উলটো। যেমন এখানকার মানুষ হাতে হাঁটে ও পা দিয়ে সব কাজ করে। এখানের বাড়ি ঘরের সব ডিজাইন দেখলে মনে হবে পৃথিবীর বাড়ি ঘরকেই কে যেন উলটে রেখেছে। সব থেকে বড় কথা আমরা এখন মঙ্গলে বাস করি। আর পৃথিবী, যা ছেড়ে আমরা প্রায় ৬০০ বছর আগে চলে এসেছি, তার চিহ্ন এখন আর পাওয়া যায় না। তখন ২৪০৯ সাল – পৃথিবী ছেড়ে চলে আসার এক বছর আগে শুনি পৃথিবীর কার্বন-ডাই-অক্সাইড এতই বেড়ে গেছে ও অক্সিজেন এতটাই কমে গেছে যে গ্রামে গেলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। মানুষ অত্যধিক গাছ কেটে ফেলেছে। দূষণের মাত্রাও খুব বেড়ে গেছে। প্রত্যেক খবরের চ্যানালে এই নিয়ে বলছে – পৃথিবী হয়ে উঠেছে বসবাসের অযোগ্য।
অতএব এর একটাই উপায় – পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া। কিন্তু চলে যাব বললেই তো আর চলে যাওয়া যায় না! কোথায় যাব, কি খাব! শেষে ঠিক হল মঙ্গলে যাওয়া হবে। সরকার তাই যত পারে রকেট তৈরী করছে। যখন রকেটে করে আসছি তখন দেখলাম পৃথিবীর অন্তিম দৃশ্য – বিরাট শব্দে ফেটে চৌচির হয়ে গেল। রকেটের দরজা জানালা সব সীল করা। কিন্তু তাও বাজ পড়ার মত শব্দ হল। এরপর পৃথিবীর অবস্থানের জায়গায় তৈরী হল এক বিরাট কালো গহ্বর।
মঙ্গলে পৌঁছলাম আরো তিনদিন পর। এখানে চারিদিকে শুধু লাল মাটির মত পদার্থ। বাড়ি তৈরী করতে লাগলো আরও এক সপ্তাহ। এখানে স্কুল আছে, বাড়ি আছে, গাড়ি আছে। তবে গাড়ি সবই ইলেকট্রিক এবং মাটি থেকে এক কি দুই ফুট ওপর দিয়ে চলে। অবশ্য এর উচ্চতা বাড়ানো বা কমানো যায়। এখানে প্রায় ৯০% জিনিসই রোবট চালিত।
এই রোবটের জন্য যে কত অসুবিধায় পড়তে হয়েছে! যেমন এখানে আসার পর কিছুদিন হোটেলে ছিলাম। হোটেলে স্নান করার জন্য সাবান ছিল না রুমে – সাবান চাইতে গেছি, তখন ম্যানেজার জিজ্ঞেস করল, কে সাবান মাখিয়ে দিচ্ছে আপনাকে? আমি অবাক হয়ে বললাম – সাবান আবার কে মাখিয়ে দেবে? নিজেই মাখবো! ম্যানেজার অমনি হাঁ হাঁ করে বলল, – “আরে দাদা, বলেন কী? এসব দামী সাবান, আপনি নিজে মাখবেন না – রোবট মাখিয়ে দেবে আপনাকে। নইলে আপনি অনেকটা ক্ষইয়ে ফেলবেন”। আমি কত করে বললাম বেশী খোয়াবো না – কিন্তু ম্যানেজার কিছুতেই শুনবে না! অতএব রোবটেই চান করালো!
আরেকদিন একটা দোকানে খেতে গেছি, পকেটে বেশি টাকা নেই। দোকানে ঢোকা মাত্রই একটি রোবট আমাকে স্ক্যান করতে এল। পেট স্ক্যান করে বলল আমার নাকি খুব খিদে পেয়ে গিয়েছে! এবং কতটা পরিমাণ খাবার খেতে হবে সেটা বলে দিল! সেই খাবারের পরিমাণের দাম ১০০ মাংডন (এখানকার টাকা)। কিন্তু আমার কাছে আছে মাত্র ২০ মাংডন। কি করি আর – ধার করেই খেতে হল সেদিন! দেখলাম পৃথিবীর মত এখানেও ধার সিষ্টেম আছে।
আজ এই পর্যন্তই থাক। মঙ্গলের এখনকার আমাদের গল্প নিয়ে আবার অন্য কোন সময় লিখব।