

"ওসব পারমিশন -টারমিশান নিতে পারব না। ওতে অনেক ঝক্কি, বাঁকা পথে কিছু দেখ হে"
........
-"রাখ তােমার পুলিশ, ওদের দৌড় আমার দেখা। যা বলছি তাই কর।"
……
- " হাহ! ঝামেলা, তাও করবে ওই গেঁয়ােগুলাে। তুমিও না, ফোনটা রেখে আর ঠাণ্ডা মাথায় ভাবাে।"
কিছুদিন ধরে আমরৌলি গ্রামে একটা জমির ওপর নজর পড়েছে প্রােমােটার অনিল গুপ্তের। এক ভদ্রলােক কিনতেও চেয়েছে সেটা কিন্তু বাধ সেধেছে একটা বটগাছ, আসলে জমিটা একটা বেশ বড় মাঠ, মাঠটাতে প্রতি শ্রাবণে একটা জমজমাট মেলা বসে ওই বটগাছটাকে কেন্দ্র করেই। স্থানীয় লােকেরা মেলাটাকে "বট মেলা" বলে আর বটগাছটাকে পূজো পর্যন্ত করা হয়। গাছটা কাটতে গেলে সরকারি পারমিশন দরকার আর পারমিশন নিয়ে কাটতে গেলেও যে গ্রামবাসীরা ঝামেলা করবেনা, এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায় না। তবে অনিল বাবু ওসব দিক দিয়ে হাঁটার কথা ভাবছেনই না। পুলিশ-টুলিশ, পাবলিকের ঝামেলা অনিল বাবু বড় একটা তােয়াক্কা করেন না, উপর পর্যন্ত সেটিং আছে তার, তাই নিশ্চিন্তভাবে বাঁকা পথে হাঁটা যায়। তাই নিয়েই কথা বলছিলেন তার অ্যাসিস্টেন্ট অবিনাশের সাথে। তার কথায় অবিনাশবাবুর আইন অনুযায়ী পারমিশন নিয়েই গাছটা কাটা উচিৎ কিন্তু অনিলবাবু না করে দিয়ে অন্য উপায় ভাবতে বলেছেন। অত ঝক্কি তার সয় না। উপায় অবশ্য হয়ে গেল পরদিনই। অবিনাশই খবর দিলাে একজন কাঠুরিয়ার। সে খুব কম সময়ের মধ্যেই গাছটাকে কেটে দিতে পারে। অবিনাশই অনিল বাবুকে দেখা করাল বুধন কাঠুরিয়ার সাথে। সে একগাল হেসে অনিল বাবুকে বলল "হে হে, চিন্তা করবেননি বাবু রাতের অন্ধকারে যা কাজ করবাে না কাকপক্ষীতেও টের পাবেনি। শুধু এইটা পাবাে তাে?" বুধন দুবার হাতের তর্জনী দিয়ে বুড়াে আঙ্গুলে টোকা দিল। অনিল বাবু ইঙ্গিতটা বুঝে গেলেন, পার্স থেকে একটা দুহাজার টাকার নােট বার করে বুধনের হাতে দিয়ে বললেন "এটা অ্যাডভান্স, এরপর আরাে পনেরাে আছে।" "তা, কবে কাজটা করব বাবু?" টাকাটা নিয়ে বুধন জিজ্ঞেস করল। "এই মঙ্গলবার রাতে" বললেন অনিলবাবু। “কাজটা যেন তাড়াতাড়ি হয়ে যায়" আরাে বললেন তিনি। বুধন মাথা নেড়ে চলে গেল। আর দুদিন পরেই আসবে মঙ্গলবার, অথচ এই দুটো দিন অপেক্ষা করতেও অনিলবাবুর মনে হচ্ছিল তাকে দুটো বছর পার করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যেবেলায় তিনি বুধনকে ফোন করে কাজটার কথা মনে করিয়ে দিলেন আবারও। বেশ হালকা বােধ করছিলেন তিনি। কি সুন্দর কোন ঝামেলা ছাড়াই গাছটা কাটা হয়ে গেল। পরদিন সকালে আবারাে বুধনকে ফোন করলেন কাজটা ঠিক করে হয়েছে কিনা জানতে। কিন্তু বুধনের ফোন নট রিচেবল বলল, কি হলাে? বুধন কি তাহলে কাজটা করে নি? একটু বেলার দিকে বুধনকে আবার ফোন করলেন তিনি। কিন্তু না, এবারও নট রিচেবল। এইবার অনিল বাবু ভয় পেলেন, বুধন আবার পুলিশে খবর দিয়ে দেয়নি তাে? ভয়টাকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলেন এই ভেবে যে ওর ফোন তাে খারাপ হয়ে যেতেই পারে, কিংবা হয়তাে রিপেয়ারিংয়ে দিয়েছে, তবুও মন। মানছিলাে না। তাই একবার সরজমিনে গিয়ে দেখে আসবেন ঠিক করলেন। বাসে আমরৌলি বেশি দূর নয়, তিন চার ঘণ্টার পথ। সন্ধ্যাবেলার দিকে পৌঁছনাের পর বাস স্টপ থেকে মাঠের দিকে হাঁটা দিলেন তিনি। যতক্ষণে তিনি মাঠটাতে পৌঁছালেন ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে। নাহ্, যেটা ভয় করেছিলেন সেটা হয়নি। বুধন গাছটাকে কেটে রেখেছে একেবারে গুড়ি থেকে। খুশিমনে বাস স্টপের দিকে তিনি হাঁটা দিলেন তিনি। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন ডাকল তাকে "কিহে প্রােমােটার অনিল গুপ্ত, বেশতাে ফন্দি করে আইনের মারপ্যাঁচ এড়িয়ে কেটে দিলে আমাকে!" চকিতে পিছন ফিরে তাকালেন তিনি। আধাে আধাে অন্ধকারে তিনি যা দেখলেন তাতে তার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা একটা স্রোত নেমে গেল। এক্ষুনি যে জায়গায় গাছের কাটা গুঁড়িটা পড়েছিল, সেই জায়গায় ভূতের মত ডালপালা মেলে দাড়িয়ে আছে বটগাছটা। তার থেকেও ভয়ঙ্কর বিষয় হলাে গাছটার ঠিক মাঝখানে আগুনের গােলার মতাে জ্বলজ্বলে বস্তু, যেন গাছটার দুটো চোখ। "কি হে সেদিন খুব বলছিলে তুমি নাকি পুলিশের ভয় পাও না, পাবলিকের ঝামেলাতেও ভয় পাও না। আমাকে কেন ভয় পাচ্ছাে?"
গমগম করে উঠলাে বটগাছটার কণ্ঠস্বর। অনিল বাবু বােধ করলেন যেন তিনি যেন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না, একি হচ্ছে? একি আদৌ সম্ভব? "কিন্তু কি জানাে তাে, তােমার মত অনেক প্রােমােটার, কাঠুরিয়াই আমায় কাটতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। তােমার বুধনও নয়" বটগাছটা আবার বলে উঠলাে "একটা কথা ভেবে খালি আমার দুঃখ হয়। তােমরা মানুষ এত অকৃতজ্ঞ, সেই কত লক্ষ বছর আগে তােমাদের জন্মলগ্ন থেকে তােমাদের আমরা লালন-পালন করছি, অথচ প্রতিদান হিসেবে তােমরা খালি আমাদের বিনাশই চেয়েছাে"। অনিলবাবুর মনে হতে লাগলাে এইখানে তার থাকা আর এক মুহূর্ত ঠিক হবে না। পিছন ফিরে পালাতে গেলেন কিন্তু পারলেন না। মনে হলাে তার দুটো পা মাটির মধ্যে শক্তভাবে গেঁথে গেছে। "পারবেনা, পালাতে পারবে না,বুধনও যেমন পারেনি,আমরাও যেমন পারি না যখন তােমরা আমাদের মেরে ফেলাে। কেন জানাে তাে, বুধনের মত তােমার পাদুটোও ইতিমধ্যেই গাছের গুঁড়ি হয়ে গেছে যে, যেমন একটু পরেই তােমার সারা শরীরটাও হয়ে যাবে। " বলল বটগাছটা। পরক্ষনেই অনিল বাবুর মনে হতে লাগল তার শরীরের কোনাে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াতে পারছেন না, শুধু চোখের মণি দুটো ঘুড়িয়ে দেখতে পেলেন তার শরীরটা একটা গাছে পরিণত হচ্ছে ধীরে ধীরে।
পরদিন সকালে আমরৌলির বাসিন্দারা দুটো অদ্ভুত জিনিস দেখতে পেল, একটা হল বটগাছটার থেকে মিটারখানেক দূরত্বে মাঝারি আকারের একটা লেবুগাছ, অন্যটা বট গাছের সামনেই একটা আকন্দ গাছ যার অদূরেই পরে আছে একটা ভাঙা সেলফোন আর একটা কুঠার। আশ্চর্যের কথা হল গাছদুটোকে দেখে মনে হয় যেন কেউ হঠাৎ করে ও দুটোকে লাগিয়ে দিয়ে গেছে, দুটোর মধ্যে কোনটাকেই আগে কোনােদিনও দেখা যায়নি।
Abhyu | 47.39.***.*** | ২৯ নভেম্বর ২০২১ ১১:০৭501521
ভাস্বতী লাহিড়ী | 2409:4060:39d:b414::b95:***:*** | ২৯ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৪৪501527
kk | 68.184.***.*** | ৩০ নভেম্বর ২০২১ ২২:৩৫501555
Abhyu | 47.39.***.*** | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০৪501569
Abhyu | 47.39.***.*** | ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:০৮501983
আত্রেয়ী চন্দ্র | 2405:201:8011:806e:2d3d:69d:5316:***:*** | ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:২২501985
dc | 122.178.***.*** | ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:৪১501995
শাশ্বতী | 14.2.***.*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:৪৮502090