এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক

  • দিলদার নগর ১৮

    Aditi Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ২৪ নভেম্বর ২০২৫ | ২৯ বার পঠিত
  • স্বপ্ন বিনা এ জীবন জাগিব কী রীতে?
    শোণিতে কন্টক তুলি কমল পিরিতে।


    দিলদার নগরে প্রতি বছরই শীতে সার্কাসের তাঁবু পড়ে।এ বছরও তার ব্যতিক্রম হলোনা। যাত্রা আর সার্কাসের মধ্যে প্রথমটাতেই বাচ্ছাকাচ্চা নিয়ে যায় লোকে। যাত্রাতে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া তেমন হয়না। শীতের হিম রাত ছাড়াও আরেকটা কারণ হল যাত্রার বিষয়গুলি তাদের উপযোগী সবসময় থাকেনা। পৌরাণিক দু একখান ছাড়া। তবে রাসের মেলার দুপুরের যাত্রা বা সন্ধ্যের যাত্রাতে তাদের দেখা যায়। কিন্তু সারারাত ব্যাপী নাম করা দলের নাম করা পালাগুলি কেবল বড়োদের। তাই সার্কাস দেখাতে তাদের নিয়ে যাওয়া বড়োদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়, অন্ততঃ যাদের সাধ্য আছে তাদের। সবার সে সাধ্য তো আর থাকেনা। তাঁবুর আসেপাশে কত বাচ্ছাই তো ঘুরে বেড়ায় শুকনো মুখে। লোকে হয়তো মায়ার বসে দুটো পয়সা দেয় তাদের, সার্কাস দেখাতেতো আর ঢোকাতে পারেনা! ইচ্ছে হলেও নানান সমস্যার কথা ভেবেই হয়তো। যাই হোক, কাঞ্চির বাবা কাঞ্চি, কাঞ্চির মা কাঞ্চির খুড়তুতো বোন ঝিল্লিকে নিয়ে গেলেন মানে ধরেই নিতে হয় তাঁর সে সাধ্য ছিলো। তবে তাঁবুর মধ্যে  ট্রেতে করে বড় বড় চকচকে সব চকোলেট সাজিয়ে বার বার কয়েকজন লোক ওদের দিকে আসছিলো। কাঞ্চি চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সে জানে ও দিকে দেখতে নেই। তবে কারা কিনছে সে কৌতূহল চাপতে পারেনি। ঝিল্লি  কী বুঝেছে কে জানে,আপন মনে বকবক করে যাচ্ছে। 
     
    এখন কাঞ্চি একটা ঘোরের  মধ্যে ঢুকে পড়েছে। শুরুতেই ঝলমলে পোশাক পরে একদল মেয়ে আর একদল ছেলে পতাকা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল। মাঝখানে দাঁড়িয়ে একজন কালো ফুল প্যান্ট, কালো টুপি আর কুঁচি দেওয়া ধবধবে সাদা শার্ট পরা । সে মেলে ধরেছিল: দ্য গ্রেট লোটাস সার্কাস। তালে তালে বাজনা বাজছিলো। ওর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে তখন থেকেই। সামনের মেয়েগুলির কয়েকটা ওরই বয়সী হবে। ও নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলো। তারপর তো ঘোড়া এলো, হাতি এলো,বাঘ এলো,কাকাতুয়া এলো। হাতি অঙ্ক কষে দেখালো, বল খেললো,  ,বাঘ মস্ত রিং এর মধ্য দিয়ে এপার ওপার হলো, কাকাতুয়া আগুনের রিং এর মধ্যে দিয়ে উড়ে গেল। কাঞ্চির হাঁ  আর বন্ধ হয়নি। এখন একটা মস্ত বড় গ্লোবের উপর একটা মেয়ে জিমনাসটিক দেখাচ্ছে। গ্লোবটা ঘুরছে তো ঘুরছে। তাঁবুর ভিতর আলো ছায়া। নীলচে আলো ঝিলিক দিয়ে ঘুরছে। এই আলোই ওরা দূর থেকে দেখতে পায় বুঝি। আহা, অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দূরের সার্কাসের এই ঠিকরে আসা আলো দেখেই না ওরা কি খুশি হয়! আর আজ তো সেই তাঁবুর মধ্যেই এক্কেরে। মেয়েটা একটা কালোর উপর চুমকি বসানো ছোট জামা পড়েছে। জামার তলায় মিহি স্ল্যাক্স । কাঞ্চি ভাবে কোথায় পাওয়া যায়! ঘুরন্ত মেয়ের কসরত সব্বাই দেখতে পাচ্ছে কারণ গ্লোবটাই তো ঘুরছে। একেই কি পরী বলে? ভাবে কাঞ্চি। খেলা শেষ হয়। শেষ খেলা ট্রাপিজ। চাপা সাদা গেঞ্জি আর স্ল্যাক্স পরে ছেলেরা, মেয়েদের পরনেও তাই তবে সাথে উপরে ছোট্ট স্কার্ট। কত উঁচু সেই দাঁড়গুলো থেকে দোল খেয়ে একটা থেকে আরেকটাতে যায়, এ ওকে ধরে নেয়! এর মাঝে জোকার ও উঠে পড়েছে চকড়া বকড়া ঢিলা প্যান্ট পরে! দোল খেতে খেতে কেউ একজন যেন না জেনেই টান মারে তার ঢিলা প্যান্ট এ ,সে প্যান্ট উড়ে গিয়ে পড়ে এক্কেবারে নিচে। জোকার কাউ মাও করতে থাকে, তলায় আরেকটি প্যান্ট পরে এসেছিল  সে ভাগ্যিস! হাসির হররার মধ্যে প্রত্যেকদিনই তাকে এ মজা দেখাতে হয়। কাঞ্চি তা জানেনা। সে ভয় পায়, ওরা যদি পড়ে যায়! তলায় ঝোলা জালটাকে সে ঠিক  বিশ্বাস করতে পারেনা। খেলা সাঙ্গ হলে ভয় আর ভালোলাগার  ঘোর নিয়ে কাঞ্চি এক সময় বেরিয়ে আসে তাঁবু থেকে। ঝিল্লি তখন ঘুমে কাদা বাবার কোলে। ঝিল্লির মা বাবা আজ যাত্রা দেখতে যাবে, ওরা ফিরে যাবে তার মধ্যে। বাড়ি ফিরে ঝিল্লি দুধ রুটি খেলো ঘুম চোখে। কাঞ্চি খেল ফুলকপির ডালনা আর ঝোলা গুড় দিয়ে রুটি। রাতে কাঞ্চি সার্কাসের উদেশ্যে আবার রওনা দিলো।
     
    মাঠের গন্ধ আছে। সে গন্ধ ঋতু ভেদে, দিনের সময় ভেদে বদলে যায়। শীতকালের মাঠের গন্ধ গরম কালের রোদে জ্বলা আর বর্ষার জলে ভেজা গন্ধের থেকে আলাদা। আবার সকালবেলা যে গন্ধ তা আর দুপুরে পাওয়া যায়না। বিকেল পড়ে এলে আবার অন্য রকম একটা গাঢ় গন্ধ ছড়ায় মাঠ। কাঞ্চি ভাবে অনেক রাতে একলা মাঠ কী করে? কেমন গন্ধ ছড়ায় সে? মাঠ কি ওদের কথা ভাবে তখন একলা শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে? মাঠের জন্য মায়া হয় কাঞ্চির। মাঠে ফেলে যাওয়া কাগজের ঠোঙা, শালপাতারা তখন বাতাসের সাথে কথা বলে। মাঠের সাথে বলে কি? নাকি মাঠ শুধু চুপ করে শোনে? ওদের ইস্কুলের মাঠ, মস্ত বড় কলেজের মাঠ, শিশু উদ্যানের মাঠ, কিংবা গ্যালারিওয়ালা কেতা দুরস্ত ডায়মন্ড গ্রাউন্ড---আর কত মাঠ পাড়ায় পাড়ায় --- দিলদারের আনাচে কানাচে ---নুনঝাল মাখানো কাটা শসা, পেয়ারা, পাকা কুল,কাজুফল,জামির আর আচারের গন্ধমাখা ! ফুটবল,ক্রিকেট,ডাঙ্গুলি, কবাডি, বালিকাদের নিজস্ব খেলাগুলি, বা নেহাতই গুলতানি আর হেঁটে বেড়ানো। নানান বয়সের মানুষ! মাঠ কি ওদের মনে রাখে?  বড়ো কোনো মাঠে খুব জোরে যদি ছোটা যায়, কানের দুপাশে সাই সাই করে কেটে যাওয়া বাতাসের শব্দ হয়, কাঞ্চি ছুটতে ছুটতে ভাবে বাতাস কিছু বলছে বুঝি। সে হাওয়া গরমের বিকেলে যা বলে শীতের দুপুরেও কি তাই বলে? ভেবে থৈ পায়না কাঞ্চি।

    এখন কাঞ্চি দেখছে এক শেষ বিকেলের আলো অন্ধকার, পাশে অনেকেই আছে---  যেন স্পোর্টসের দিন। মা-ও আছে অন্য দিদিমণিদের সাথে যেন। কিন্তু দূরে সার্কাসের তাঁবু দেখা যায়, কাঞ্চি দৌড় মারে---কানের পাশে হাওয়া কথা বলতে বলতে উল্টো দিকে দৌড়োয় তার সাথে, দৌড়োতে দৌড়োতে পিছনের সব মিলিয়ে যায়। ও এসে পড়ে সার্কাসে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায়না,শুধু ঝলমলে জামা সারি সারি ঝোলে ট্রাপিজের দোলনাগুলোতে। ও দেখে ওও ঝলমলে জামা পরে আছে। তাঁবুর ভিতর থেকে ও পিছনের দিকে যায়। সেখানে দেখে সার্কাসের লোকজন বসে দুধরুটি খাচ্ছ। শালপাতায় রুটি কিন্তু দুধ আছে গোল গোল কাঁসার বাটিতে। ঝিল্লির পদ্মকাটা বাটিটাও দেখতে পেলো জোকারের সামনে। একটু চিন্তা হলো,ভাবলো ওকে বলে নিয়ে যায় বাটিটা, কিন্তু সেটা অসভ্যতা হবে হয়তো। দুধের মধ্যে ফুলকপি ভাসতে দেখে অবাকও  হলো একটু। সবাই, ওকেও বসে পড়তে বলে , কিন্তু কোন খেলা সে দেখাবে সেটা কেউ বলে দিচ্ছেনা। ও ভাবে ও তো কিছুই শেখেনি, হটাৎ দেখাবেই বা কী? এ সব ভাবতে ভাবতেই ও দেখে ইস্কুল দেখা যাচ্ছে। তার মানে ইস্কুলের মাঠ এটা , আনেকটা বড় হয়ে গেছে। পিটি করছে মেয়েরা এক পাশে ইস্কুলের সবুজ টিউনিক পরে। আসলে ড্রিল বলতে হবে। মনেও থাকেনা ছাই!শ্যামলীদি রতনদা কেও দেখতে পায়। রতনদা এসেছে মানে বাইরের কোনো বড় অনুষ্ঠানের মহড়া চলছে। ও সেদিকেই হাঁটা লাগায় অগত্যা। সার্কাসের লোকেরা যেন দেখতেই পায়না ওকে। একটু মন খারাপ লাগে।

    কাঞ্চি যে মশারির গায়ে ঝুলছে সেটা প্রথম দেখে ঝিল্লি।ও রাতে কাঞ্চি আর তার মেজ জেঠীর মাঝে শুয়ে ছিলো। জেঠি উঠে গেছে কোন ভোরে। কাঞ্চিকে ঝুলতে দেখে সেও উল্টো দিকে গিয়ে ঝুলবার চেষ্টা করে, কিন্তু মশারির গোঁজ খুলে মাটিতে পড়ে যায়! চিল চিৎকার  জোড়ে।দুজনকেই তুলে হনুমান টুপি ও সোয়েটার পড়িয়ে বার করে আনা হয় দাঁত  মাজাদি কার্য উপলক্ষ্যে।

    পরের বছর কাঞ্চি যোগ দিল জাতীয় ক্রীড়া ও শক্তি সংঘের  দুই সপ্তাহ ব্যাপী   জিমনাস্টিকস ক্যাম্পএ মনের ভিতর এক সুপ্ত বাসনা গোপনে রেখে। 
    দিলদার নগরে খেলাধুলা , সাঁতার, দেহচর্চার চল অনেক পুরোনো। বিদেশি অত্যাচারের সাথে লড়তে যেমন তা কাজে লেগেছে তেমনি এখন দেশ রক্ষার কাজে লাগে। সেনাবাহিনীতে অনেকেই যোগ দেয়। যারা সে সুযোগ পায়না তারাও কিন্তু দেহ চর্চা ছাড়েনা। তবে দেহ। সৌষ্ঠব  নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির ফল ভোগে কেউ কেউ।  অতি পেশীবহুল দেহের অনুপাতে মাথাটি যেন ছোট দেখায়,  অন্যান্য চর্চায় ভাঁটা পড়ে, দেহটির প্রতি অতি রক্ষনশীল হয়ে উঠে কেউ কেউ। ব্যায়ামাগার আছে অনেকগুলি ,পয়লা বৈশাখের প্রভাতফেরিতে দিলদার ও আশেপাশের বিদ্যায়তন , সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলির সাথে ব্যায়ামারগুলিও পা মেলায় পতাকা নিয়ে। ব্যান্ড বাজে,বাজে ধামসা মাদল।  জিমনাস্টিকস চর্চা ব্যামাগারগুলির সাথেই একটু আধটু চলে। কাঞ্চি তেমন কোনো সুযোগ পায়নি। সে যে  খেলাধুলোতে খুব চৌকশ তা নয়। কিন্তু তার পাতলা নমনীয় শরীরটি নিয়ে যে কোনো দূরূহ আসন সে করে ফেলতে পারে। অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাত পা বেঁকিয়ে যে মাঝে মাঝে বসে থাকে আর বকা খায়। 

    কাঞ্চি মোটামুটি হিসাব করে দেখেছে সার্কাস আসে নভেম্বরের মাঝখানটাতে, ঠিক যখন ওদের পরীক্ষা চলে। অন্য ইস্কুলের থেকে ওদের রাজনারায়ণ ইস্কুলের একটা আলাদা ব্যাপার হলো ওদের  আনুয়াল পরীক্ষাতেই  এসপার ওসপার হয়না। এপ্রিল,সেপ্টেম্বর আর নভেম্বর ---মোট তিনটে পরীক্ষার উপর গড় হয়। গড়ে পঞ্চাশে সতেরো পেলে পাস। তার মানে আগের দুটোতে কেউ যদি মোট একান্ন তুলে ফেলে তাহলে আর তাকে ফেল করানো যাবেনা। কিন্তু শেষের পরীক্ষাটাতে না বসতে চাইলে কী হবে, সেটা কাঞ্চি ঠিক জানেনা। ভয়ও করে জিজ্ঞেস করতে। যা মেজাজ একেকজনের! মা-ই বা কম কী? তবে শ্যামলীদিকে একদিন খেলার ক্লাসে একটু আস্তে আস্তে জিগ্যেস করবে কিনা ভাবে। কিন্তু, উনি আবার হয়তো হেসেই মাকে  বলে দেবেন। তার পরে কী হইবে ও বেশ ভালোই জানে!  তার চেয়ে আগেভাগে বেশি বেশি পড়ে অনেক নম্বর তুলে নিলে শেষেরটায় চাপ কম থাকবে। পরীক্ষা শেষে যোগ দিতে পারে সার্কাসে। দিলদারনগর থেকেই ও জয়েন করবে। তারপর জানুয়ারিতে তো স্পোর্টস,সংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা সব চলে, ক্লাস প্রায় হয়ইনা। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় নাহয় ফিরে আসবে। ডিসেম্বর জানুয়ারি পর্যন্ত দিলদারেই থাকে সার্কাস,তারপর হয়তো কিছুদিন ওকে বাইরে থাকতে হতে পারে। বাবাকে বলে দেখবে সেই জায়গা থেকে নিয়ে আসতে পারবে কিনা। তবে ট্রেনে উঠিয়ে দিলে ও কী আর পারবেনা? রেল সহর পর্যন্ত এলেও পারবে। ও যায়না সেখানে? বাস ধরে চলে আসবে। একটু এডজাস্ট সকলকেই করতে হয় সংসারে থাকতে হলে-- মা বাবাকেই তো বলতে শোনে!

    জানুয়ারীর রোদঝলমলে কনকনে শীতের দিনটিতে কাঞ্চি একা একাই চলে গেলো ক্যাম্পে যোগ দিতে। কতটুকু আর ওদের বাড়ি থেকে! সবাই যে খুব উৎসাহ দিলো এমন নয়। আবার বাধাও দিলোনা। বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠে চলবে সে ক্যাম্প। এ ইস্কুল নাকি অনেক পুরোনো। কেউ কেউ একে ‘ হাঁড়ি ভাঙা' ইস্কুল বলে। কেন বলে কাঞ্চি ঠিক জানেনা। এটা ছেলেদের ইস্কুল। মেয়েদের বিভাগ রাস্তার ওপাশে।  ইস্কুলের মধ্যে মাঠ আছে , আবার পাশে একটা মস্ত বড় মাঠও নাকি ওদের। সেখানে একবার কালীপুজোর সময় ভয়ঙ্কর কঙ্কালের মুন্ডু তালগাছে ঝুলছিলো। কাঞ্চি খুব ভয় পেয়েছিল। ও পথে আসতেই চাইতোনা। কিন্তু এখন ওসব ভয় নেই। দুপুরে একবার এসে ভাত খেয়ে যাবে। তারপর আবার চারটে পর্যন্ত চলবে অনুশীলন। ক্যাম্পএ ছেলের সংখ্যা বেশি। মেয়ে কম। একটা সরু কালো ফ্রেমের চশমা পরা দিদি ওকে খুব আপন করে নিলো। ও মুগ্ধ হয়ে গেলো। দিদি পড়ে ক্লাস নাইনে। প্রথমে ওরা শপথ নিলো। তারপর নানা রকম কসরত এক এক করে শিখতে লাগলো। দু জন স্যার আর এক জন ম্যাডাম শেখাতে শেখাতে নানান গল্প করতে লাগলেন। এক স্যার এর ছেলে ক্যাম্প এর কোনো দাদার সাথে একই ইস্কুলে পড়ে। তবে ক্লাসে উঠতে পারেনি এ বছর। স্যারই বললেন সোজাসাপ্টা ছেলের ফেল হবার কথা। তারপর  রাজেশ খান্নার  মত একটা হাত একটু ছুড়ে আঙ্গুলগুলি কপালের একটু ডান দিকে ঠেকিয়ে বললেন “ ব্যাড লাক !” খুব ভালো লাগলো কাঞ্চির । কম নম্বর পেলে ও ও এভাবে  বলবে ঠিক করলো। নয়তো সবাই বলবে ফাঁকি মেরেছে! ও ফিসফিস করে কথাটা আওড়ালো কিছু সময়, ড্রিল এর ফাঁকে ফাঁকে। এই ভাবেই কী করে জানি এক সপ্তাহ চলে গেল। পরের সপ্তাহের শুরুতে ওরা ছোট ছোট মানুষ পিরামিড তৈরী করতে লাগলো। তারপর পিরামিডের  আকার বড় হতে লাগলো। কাঞ্চি সবচেয়ে ছোট হওয়ায় ওকে একেবারে মাথায় উঠতে হয় সবসময়। এমনিতে মজার, কিন্তু মুশকিল হলো ছেলেগুলির মাথায় অনেক সময়েই ভালো রকম নারকেল তেল মাখা থাকে। তেল চপচপে মাথার উপর সটান দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কঠিন। পা পিছলে যাওয়ার ভয়ে ও পায়ের আঙ্গুল দিয়ে সে ছেলের চুলগুলি খালি আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে আর সে “উরি বাব্বারি” করে  চেঁচায়। এমনি এক সংকটজনক মুহূর্তে, যখন পিরামিড তার পূর্ণ মহিমায় প্রতিষ্ঠিত,  কিন্তু কাঞ্চি তার দুই পা তেলের উপর প্রানপনে আটকে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন হটাৎ দূর থেকে পেঁচাকে দৌড়ে আসতে দেখা যায় দুহাতে দুটো আধখানা পেয়ারার টুকরো ধরে খঞ্জনীর মত বাজাতে বাজাতে! পেঁচা এক আশ্চর্য় মানুষ, আপনি দিল কা বান্দা। তাই ক্যাম্পএ যোগ দিলেও কোনো রকম নিয়ম কানুনে  ওকে বদ্ধ করা যায়নি। হালও ছেড়ে দিয়েছেন প্রশিক্ষকরা। তবে ভারী হাসিখুশি ছেলে। কসরত যদি দেখায় মর্জিমত সেটি কিন্তু যথেষ্টই সুন্দর হয়। পেঁচার এ হেন নামকরণের কারণ তার চোখ দুটি মস্ত বড় গোল গোল আর মনি দুটি মাঝে মাঝেই কাছাকাছি নাকের দু পাশে চলে আসে। তার উপর সে মাঝে মাঝেই স্যান্ডো গেঞ্জিটির পিছনের দিকটি সামনে করে পরে। ফলে ঘাড়ের অল্প কাটা অংশ সামনের গলার কাছে চেপে বসে আর পেছনের দিকের কাঁধ থেকে বগলের অনেক নিচ পর্যন্ত গভীর করে কাটা দুই  অংশ সামনে বুকের দু পাশে দুটি পাখনার মত দেখায়। আজও পেঁচা সেই মূর্তিতেই আবির্ভূত হয় পেয়ারার খঞ্জনী বাজাতে বাজাতে, আর সেই অপরূপ দৃশ্য দেখে পিরামিড এর মানব  ইঁটগুলি হাসির ছটায় কাঁপতে থাকে। সবার আগে ভেঙে পড়ে তার শীর্ষ দেশ ---যার নাম কাঞ্চি, তারপর হুড়মুড় করে সমস্তটা। পড়ার সময় খাবলে খুবলে একে ওকে ধরবার চেষ্টার মধ্য দিয়ে মাথাটি বেঁচে গেলেও ডান হাতের কব্জিটির উপর ভর দিয়েই সে ভূমিশয্যা নেয়। জল, বরফ, স্প্রে ইত্যাদি দিয়ে বাকি দিনটি শেষ হলেও রাতে সে কব্জি ফুলতে থাকে। কাঞ্চি শত গোপনীয়তা সত্ত্বেও তা ঢাকা দিতে পারেনা। পরদিন সে ক্যাম্পের বদলে যায় নিরাময় ক্লিনিক এ এক্সরে করাতে এবং প্লাস্টার করা হাত গলায় ঝুলিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় দেয় তার সাধের ক্যাম্প কে ---নিরাময়ের ঠিক উল্টো দিকে। ওদের গুলঞ্চ তলার বাড়ির সামনের মাঠে নগেন কাকু জর্দা পান মুখে নিয়ে পানের বোটায় লাগানো চুন আলগোছে জিভে ঠেকিয়ে ফোড়ন কাটে :মেয়েছেলে, হাত পা ভাঙলে বিয়ে থা দেওয়া মুশকিল! সব সময় লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়ানো চিমড়ে নগেনকে যে বড়ো মা, ছোট কাকিমা -- কেউই দেখতে পারেনা তা ও জানে।  রান্নাঘরে ওদের আলোচনা মন দিয়ে শুনেছে ও। সব কথা বুঝেছে তা নয়, তবে “নগেন ইশারা করে” শুনে একটু ঘাবড়েছে কারণ, ও বুবলা, টুটু সবাই নিজেদের মধ্যে ইশারাতে কথা বলে অনেক সময়। ব্যাপারটা বোধ হয় ভালো না। নগেনের কথায় গায়ে জ্বালা ধরে ওর। দাঁত কিসকিস  করে বলে : শালা চিমড়া নগেন ! যদিও খুবই আস্তে, তবু, মা হুঙ্কার ছেড়ে ওর মাথার ঝুঁটিতে টান দেয়। 

     কাঞ্চির আরেকটি সাধ আছে। জর্দা পান না হোক, একদিন মুখ ভর্তি মিষ্টি পান ,হাতে পানের বোটায় চুন লাগিয়ে রাস্তার দু পাশে পানের পিচ  অনেক দুর পর্যন্ত ছুঁড়তে ছুঁড়তে পথ চলবে! দিলদারে অনেক চটপটে মানুষকেই ও দেখেছে। বেশ একটা যেন কাজে ওস্তাদ ভাব আসে । অবশ্য  মেয়েদের কাউকে অমন ভাবে পানের পিচের পিস্তল ছুঁড়তে ছুঁড়তে হাঁটতে দেখেনি সে। বড়মা, ঠাকুমা সবাই জর্দা পান খায়, তারা উঠে গিয়ে এক জায়গায় ফেলে আসে। তাতে কী? সেই না হয় শুরু করবে! ছোট কাকিমা যেমন ওদের নিয়ে ফুটবল খেলা দেখতে যাওয়া শুরু করেছে! কিন্তু সমস্যা হলো তার জন্য দোকানে আগে পান কিনতে হবে, আর প্রবীর কাকু ছোটদের একটু মিষ্টি মশলা হাতে ধরিয়ে ছেড়ে দেয়,পান চাইলে ধমক মারে! আশেপাশের সব পান দোকানেই এই হাল । তা ছাড়া একটু দূরের রাস্তা না হলে আড়াল হবে কেমন করে? খানিকটা পথ তো হাঁটতেও হবে পান মুখে। অন্য পাড়ার দোকানিও যদি ধমক মারে? তবে সুযোগ মিলে গেল একদিন। ওদের একটা পিরিয়ড আগে ছুটি হয়, তখন রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা থাকে। এই সময় ইস্কুলের সামনে দেখা হয়ে গেলো টিঙ্কু দাদার সাথে। টিঙ্কু দাদা সাইকেল নিয়ে পান দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। হাতে একটা সিগরেট।  লোকে বলে পড়াশুনা ছেড়ে আফুয়া হয়ে গেছে, বাপের জমিদারি ভাঙিয়ে খাবে আর কি! টিঙ্কু দাদা কিন্তু খুব ভালো ব্যবহার করে ওদের সাথে। ওকে দেখতে পেয়ে ডেকে লজেন্স কিনে দিতে চাইলো আর ও চাইলো মিষ্টি পান। সেই পান মুখে ও একটু ঘুর রাস্তা ধরলো বাড়ির পথে। একটা পানের বোটাও চেয়ে নিয়েছিল। ঠাকুমা ওকে তো এমনিইই খেতে দেন ,পান সাজার সময়, পানের বোটায় পাপ নেই। সে বোটা জিভে ঠেকায় আর পানের পিচ  ছোড়ে দু দিকে। এমন সময় মুখোমুখি হয় ও টুটুর, ওর ইস্কুলও ছুটি হয়েছে। ও পড়ে দিলদার নগর কলেজিয়েট ইস্কুলের মেয়েদের বিভাগে। ওদের লাল রং এর টিউনিক,তবে সাদা ব্লাউজ এর সাথে লাল স্কার্ট ও চলে। অবাক হয়ে ওর পানের পিচ ফেলা দেখে  সে, জিগ্যেস করে নিজের পয়সা দিয়ে দোকান থেকে কিনেছে কিনা । ও বলে, টিঙ্কু দাদা কিনে দিয়েছে। টুটু বলে, আমায় দেয়নি তো কোনোদিন! নিজের মনেই গজগজ করে: আমরা তো একই প্রতিহার বংশের ! কাঞ্চি খেয়াল করে তাইতো! টিঙ্কু দাদারাও তো প্রতিহার, বাড়ি আলাদা হলেও! মাঠের পশ্চিম দিকের  ওদের   সব বাড়িগুলিই বেশ  পুরোনো থাম টাম ওয়ালা। এই সময় সাইকেলে হটাৎ ই কেউ এসে পড়ে  ডান দিক থেকে আর পানের পিচ বেরিয়ে গেলে কী আর আটকানো যায়? 

    সাদা ধুতি আর পাঞ্জাবির কিনারায় লালের ছোপ নিয়ে সে লোক সাইকেল থেকে নেমে পড়ে। সবুজ টিউনিক কোন ইস্কুলের বলে দিতে হয়না! ওর হাতের নাড়া ধরে ইস্কুলে বড়দির কাছে নিয়ে যেতে চায় সে গোমড়া মতো লোক। কাঞ্চি তো ভয়ে কাঠ!  টুটু এগিয়ে এসে কাকুতি মিনতি করে বলে , আর হবেনা জ্যেঠু, ওকে ছেড়ে দিন, আমি বাড়িতে বলে দেব। সে লোক ওকে ছেড়ে রাস্তার টিউবওয়েল পাম্প করে রং ধুয়ে সাইকেলে উঠলে ওরাও হাঁফ ছাড়ে। বাড়ির কাছাকাছি এসে ও টুটু কে থ্যাংকু জানায়,কিন্তু টুটু সত্যরক্ষার পথ থেকে নড়েনা। বাড়ি বয়ে এসে বলে যায়। ও অবাক হয়ে যায়---এই টুটুর সাথেই ও সেদিন নিজের জমানো পয়সায় একটা বরফ আইসক্রিম কিনে লুকিয়ে ভাঙা বাড়িতে ভাগ করে খেয়েছে! নর্দমার জল দিয়ে বানানো বলে বাড়িতে বারণ আছে, যদিও নর্দমায় অমন সাদা জল কখনো দেখেনি ওরা!  বরফ আইসক্রিমের কটকটে রানী কালার বা অমন সবুজ ও না। সে রাশিয়াতে  হতে পারে! সেখানে বরফ পড়ে আর ছেলেমেয়েদের কেউ পেটায়না। 
     
    সন্ধ্যেবেলা ওর বিচার সভা বসে। খুবই অপমানিত হয় সে সেদিন। তবে সবাই ছিলো বলে মায়ের মারের হাত থেকে অন্তত রক্ষা পায়। অথচ ওরাই  ছোটদের রাশিয়ান বই কিনে জন্মদিনে উপহার দেয় গদগদ হয়ে! নির্ঘাত দাম কম বলে! ছোট কাকিমা শুধু ঘটনার বর্ণার সময় হটাৎ ফিক করে হেসে উঠে আঁচল দিয়ে মুখ মোছার ভঙ্গি করে। সভা বসেছিলো ঠাকুমার ঘরে। ও পাশের ঘরের একটা জানলা আছে মাঝখানে, পর্দা ফেলা থাকলেও কাঞ্চি বেশ বুঝতে পারে দাদা আর বড়দা পড়া ছেড়ে এদিকেই মন দিয়ে আছে। এক সময় একটু পর্দার ফাঁকে দাদার দাঁত বের করা মুখ দেখে জ্বলে ওঠে। ওর মস্ত  ম্যাপ বই এর ভিতর থেকে সিনেমার বই ও সবার সামনে টেনে বার না করে একদিন! ঝুটুন ছিলোনা। গান শিখতে গিয়েছিল। ঝিল্লি ছোটকাকিমার গায়ের উপর লেপ্টে শাড়ির ্পাড় পাকিয়ে হাতে সুড়সুড়ি খাচ্ছিলো। আর বুবলা কাঁচমাচু মুখ করে ছিলো। মাত্র দশ দিনের ছোট বুবলার সাথে চুলোচুলি লেগেই থাকে, কিন্তু অন্য কোনো বাইরের ঝামেলায় ওরা ঐক্য বজায় রাখে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে।  অনেক্ষন পর ঠাকুমা বলে উঠলেন: এবার ছাড়ান দ্যাও অরে, অনেক হইসে! কাঞ্চি বসে থাকে ঠাকুমার ঘরে, বুবলা ও। ঝিল্লিকে খাইয়ে ছোটকাকিমা খেতে ডাকতে আসে। কাঞ্চি উত্তর করেনা, গোঁজ হয়ে বসে থাকে। ঠাকুমা ছোটকাকিমাকে বলেন ,একখান থালায় ভাত লইয়া আসো,খাওয়াইয়া দ্যাও দুজনরে এখানেই। ছোট কাকিমা অবাক হয়ে ইতস্তত করে, ঠাকুমার বিছানায় এঁটোকাঁটার কথা ভেবে। ঠাকুমা বলেন,  চাদর বদলাইয়া লইব। লইয়া আসো আগে ভাত। সেইদিন রাতে ঠাকুমার কাছেই শোয় কাঞ্চি,বুবলাও বায়না করে। সব আলো নিভে গেলে ঠাকুমা চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলেন, আর অমন কইরোনা। কাঞ্চি টের পায় ওর দু চোখের  দুকোন দিয়ে জলের লাইন কানে গিয়ে পড়ছে , কান সুড়  সুড় করে। ঠাকুমা হাতড়ে হাতড়ে মুছিয়ে দিয়ে গুন গুন  বলে চলেন তাঁর পতিরামের ইস্কুলের কথা। গায়ে রোজ আরশুলা ছেড়ে দিত এক ছেলে, শুনতো না বারণ। তা একদিন ক্ষেপে গিয়ে তাকে ছাতা দিয়ে এমন পিটুনি দিয়েছিলেন যে আর কোনো দিন করেনি! কাঞ্চি হেসে ফেলে। আসতে আসতে ঘুমের অতলে হারিয়ে যায়। ঝিমঝিমে শেষ রাতে বুঝি একবার ঘুম ভেঙেছিলো তার। ল্যাম্পপোস্ট থেকে হলুদ আলো তেরছা ভাবে পড়েছিল দেওয়ালে। রাত পাহারাদার বাহাদুর ল্যাম্প পোস্ট এ লোহার শিক দিয়ে  ঠং ঠং করে মোট তিনবার বাজালো ও খেয়াল করে,   তারপর এটা সেটা ভাবতে ভাবতে কখন আবার ঘুমিয়েছে জানেনা।

    কাঞ্চি নাকি এক প্রাচীন শহর, যার নামে তার  নামটা রাখা হয়েছে, মা বলেছিলো। কিন্তু একদিন দুপুরবেলা লেবুপাতা আর বেশ করে কাঁচা লঙ্কা,নুন চিনি দিয়ে তেঁতুল মাখার খুব অল্পই ভাগ দিয়ে দিদি ঝুটুন মুখ বেঁকিয়ে বলেছিলো ,দূর! ওতো ছোটকাকা রেখেছে তোর নাম, “হরে রাম হরে কৃষ্ণ” সিনেমা থেকে। সে সিনেমা নাকি আটবার দেখেছিলো কাকা। কৃষ্ণ ঠাকুরের সিনেমাতে রাধা থাকার কথা ,কাঞ্চি  সেখানে কে? মনে করার চেষ্টা করে ও। ঠাকুমার  কৃষ্ণঠাকুরের গল্পেতো কাঞ্চি নামটা শোনেনি ! কী ভেবে আর কাউকে জিগ্যেস করেনি ও। ঝুটুন যদি রাগ করে আবার! ওর কাছে লুকোনো কাজল পেন্সিল আর লিপস্টিক আছে। বড়মা , মানে ঝুটুনের মা, তা জানেনা। কেউই জানেনা। ছোট কাকিমা লুকিয়ে দিয়েছে। দুপুরবেলা ওরা ছোট কাকিমার শাড়ি পরে সাজে। গামছা দিয়ে লম্বা চুল করে দেয় ঝুটুন ওর ,ও শ্যামলীদি হয়ে যায়। তারপর হটাৎ গোলাপি প্লাস্টিকের সানগ্লাসটা পরে নিয়ে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটতে থাকে! ঝুটুন হাহা করে হেসে ওঠে। কাঞ্চি এখন হেনা পিসি। ছোটকাকার বন্ধুর বোন হেনা পিসির হেব্বি স্টাইল, সবসময় স্নো  লিপস্টিক,সেন্ট মেখে থাকে,    শীতকালেও ছাতা নেয়। ওদের বাড়িতে সবাই খুব সমীহ করে পিসিকে। ওরা সামনে আসেনা,দূর থেকে দেখে। ওদের জামা, চেহারা সব নিয়েই পিসির কিছু বক্তব্য থাকে। সিনেমার বই দেখায় ঝুটুন ওকে। সার্কাসের মেয়েদের মতোই ঝলমলে সাজের সব নায়িকা। 

    কাঞ্চির প্লাস্টার কাটা হলো প্রায় এক মাস পরে ---ফেব্রুয়ারির সাত আট তারিখ। ঐ হাত নিয়েই ইস্কুলে গেছে সে। টিফিনে তেমন খেলা টেলা কিছুই হয়নি। মা কে দেখতো মাঝে মাঝে টিচার্স রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়াতে। এখনো দিলদারে বেশ শীত আছে , তবে দিন বড় হয়েছে,দুপুরের রোদ চড়া। কাঞ্চি একদিন সকালের দিকে সার্কাসের তাঁবুর দিকে যাবে বলে ভেবে রাখলেও রবিবার বাড়ি থেকে বেশি দূর যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে শিবরাত্রির দিন একটা সুযোগ নিলো মিথ্যে বলে। টুটুকে মা জেঠীদের সাথে জল ঢালতে যেতে দেখেছে কেবল ওই। ঠাকুমাকে বললো টুটুদের সাথে মন্দিরে যাবে, ঠাকুমা খুশি হয়ে বললেন, যাও গিয়া, ঘুইরয়া আইস । চার্চ এর মাঠ খুব কাছে নয়, আবার খুব দূরেও নয়। ওদের বাড়ি থেকে ইস্কুল যতখানি, ইস্কুল থেকে প্রায় ততখানি বা আর একটু কাছে। ও হাঁটতে থাকে। সার্কাসের শো তিনটে থেকে শুরু। এখন সকাল দশটা। ঢের দেরি। আজই  কথা বলে নিতে চায় ও। সার্কাসে একজন ম্যানেজার থাকে ও জানে। সকালের আলোয় রাতের সে ঘোর নেই। দূরে দূরে মানুষজন এটা সেটা কাজে ব্যস্ত। দুটো ঘোড়া দেখতে পেল ও। পেছনের দিকে এসে দেখে ভেজা কাপড় সব ঝুলছে সার সার। স্কার্ট, ব্লউজ, শার্ট প্যান্ট গামছা। বেশ বিবর্ণ । কয়েকটা মেয়ে বসে আছে ,চুল আঁচড়াচ্ছে কেউ। সাধারণ রং চটা জামাকাপড়। কলাই করা কানা উঁচু থালায় করে ভাত খাচ্ছে কেউ কেউ হাতে নিয়ে। ও লক্ষ্য করে ভাত আর ডালের পাশে একটু আলুসেদ্ধ মাত্র।   ওর থেকে বড়, ওর বয়সী, আরো ছোট –মেয়েগুলি। ছেলেরাও ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা কাজে, কসরত করছে কেউ কেউ। ,কেউ খাচ্ছে। ওকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে একটু বড় একটি মেয়ে জিগ্যেস করে কী চাই।ও বলে,  ও সার্কাসে যোগ দিতে চায় ,ম্যানেজার কে চাই। ও সব কিছু আসলে ঠিক করে নিয়ে তবেই বাড়িতে জানাতে চায়। ম্যানেজারকে পাওয়া যায়না, কোনো কাজে রেল শহরে গেছে। বড় মেয়েটি বলে ,তোমার বাড়ির লোক জানে? ও কোনো উত্তর দেয়না । ----কী খেলা দেখাতে চাও তুমি? ও বলে, গ্লোবের উপর। আর দড়ির উপর। --- পারবে তুমি? ও বলে, আমি প্র্যাক্টিস করবো ট্রেনিং নেবো। ----আমাদের ভোর পাঁচটায় উঠতে হয়। ছটা থেকে প্রাকটিস করতে হয়। একটু আগে ছাড়া পেয়েছি। আবার একটা থেকে দুটো  প্রাকটিস। তিনটে থেকে  শো। পর পর তিনটে ।  রোজ। ---  তোমরা বাড়ি যাওনা? হিহি করে হাসে সে। ---এটাই বাড়ি। ঐ যে কল্পনা,ওর মা বাবা দুজনেই সার্কাসে। তবে সবার মা বাপ নয়।---- তারা বাড়ি যায়না?--- যায় হয়তো কয়েকজন বছরে একবার, দিন কয়েকের জন্য ছুটি পায়। তবে বাড়ির সন্ধানই অনেকের নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে মেয়েটি। কবে কোন ছোটবেলায় কলকাতায় কাজের সন্ধানে গ্রামের কাকা মা বাবার কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলো। সার্কাসে দেয়  সে আমায়। পরে শুনি টাকা নিয়েছে। মালিক ছাড়েনি।--- মা বাবা খোঁজ করেনি?  ---আমি কোথায় আছি জানবে কী করে?--- তোমার গ্রামের নাম মনে নেই? ---আছে। কিন্তু,   কীভাবে যেতে হয়, চিঠির ঠিকানাই বা কী ,তাতো জানিনা। ---মা বাপ খোঁজ করেনি? পুলিশে,কাগজে? উত্তর মেলেনা।  কাঞ্চির গলা শুকিয়ে আসে। বলে, তাও তো কত মজা, কত জায়গা ঘোরো,পড়াশুনা করতে হয়না, কেউ বকেনা, কত মানুষ হাততালি দেয়!---  তাই? হাসে সে। চোখের কোন চিকচিক করে বুঝি। ---দড়িতে হাঁটার খেলার সময় ব্যালেন্স হারিয়ে  পড়ে গিয়েছিলাম বলে ট্রেনার পিঠের উপর লাঠি ভেঙেছিলো। পুরো একদিন খেতে দেয়নি। ট্রাপিজের খেলায় যে নেট দেখো ,ওটা এতটাই পলকা, যে পড়ে গেলে মাটিতেই পড়বো। এমন সময় ওদিকে লাফ ঝাঁপ করা একটা ছেলে  হটাৎ এদিকে এগিয়ে আসে। ছেলে ঠিক নয় অনেকটাই বড়। ধমক দিয়ে বলে, এদিকে কি হচ্ছেরে তোদের? কাজ কাম নেই? এটা কে?   ---সার্কাসে   নামতে চায়। ছেলেটা ওকে খুব বিচ্ছিরি ভাবে তাড়িয়ে দেয়! ----যাহ! ভাগ এখন থেকে! বাড়ি যা। এদিকে আর  যেন না দেখি!  মেয়ে গুলি হিহি করে হেসে ওঠে। ও দৌড়োতে থাকে,পেছনে শুনতে পায়: সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়!  কাঞ্চি ঢোক গেলে।ওর মনে হয় টুটুরা এতক্ষনে শিবের মাথায় জল ঢেলে ফিরে গেছে,আর ওকে সবাই খুঁজছে। মার ও খাবেই মার হাতে। তাও ওর ভয় লাগেনা আজ। শুধু বুঝতে পারে জমাট বাঁধা ঝিম আঁধার আর গলার কাছে দলা পাকানো কষ্ট –--ইধার ভি হ্যায় উধার ভি! তবে উধার বুঝি আরো গাঢ় ,আরো অচেনা। 

    বাড়ির কাছাকাছি আসতে দেখে মাঠে রীতিমত জটলা। যা ভয় করেছিল তাই। টুটু হাত পা নেড়ে কি সব বলছে। চিমড়া নগেন যথারীতি পানের বোটা হাতে গুলঞ্চ গাছ ভর দিয়ে একটু বেঁকে দাঁড়িয়ে ফুট কাটছে। ওকে দেখে একটা “এইযে এইযে” রব উঠলো। তারপর, “কোথায় কোথায়?” ও শুধু বলে, সার্কাসের ঘোড়া দেখতে। এই সময়ই মাঠে চরে বেড়ায় ওরা! তারপর এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। বকাবকিতেই শেষ হয় সেই দিন।  তখনও ‘সার্কাস ক্রীতদাস’ বা ‘সার্কাস অপরাধী’ ধারণাগুলির সাথে লোকের পরিচয় হয়নি।

    অনেক বছর পর, সবে গরমের ছুটি শেষ হয়ে ইসকুল খুলেছে, এমন এক বাদলা দিনে,  দিলদার নগর ব্যাপটিস্ট মিশন ইস্কুলের ভূগোলের  কাঞ্চি দিদিমনি খবরের কাগজে একটি খবর পড়ে চমকে ওঠে! কৈলাশ সত্যার্থী নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ‘বচপন বাঁচাও’ আন্দোলনকারীদের একটি দল, সরকারি সহায়তায়,  উত্তরপ্রদেশে চলা এক ভ্রাম্যমান সার্কাসের ভিতরে জোর করে ঢুকে পড়ে একান্নটা বাচ্চা মেয়েকে উদ্ধার করেছে! বেশির ভাগই হত দরিদ্র, নেপালের  গ্রামের মেয়ে তারা! মা বাপকে এক কালিন মোটা টাকা ও পরবর্তী মাসিক কিস্তির চুক্তিতে তাদের মেয়েদের রঙিন ঝিকিমিকি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল দালালরা। তারপর সার্কাস দলে বেচে দিয়ে পালিয়েছে! দশ- বারো - চোদ্দ বছরের  মেয়েগুলি ঠিকঠাক খেতে শুতে পাওয়াতো দূরের কথা , হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমএর পর তাদের  নিত্যসেবা দিতে যেতে হত পুরুষ সিংহদের, আর খেতে হত রাশি রাশি জন্মনিরোধক বটিকা! কৈলাশ আর তার সঙ্গীদের বীভৎস মার খেতে হয় সার্কাস দলের মালিক, ম্যানেজার আর তাদের গুন্ডাদের হাতে । তারা অবশ্য দোষী  সাব্যস্ত হয় পরে। কিন্তু, সরকারি ঢিলেঢালা ভাবের মাশুল গুনতে হয় উদ্ধার পাওয়া মেয়েগুলিকে। তাদের নিরাপদ স্থানান্তর না করে রেখে দেওয়া হয় সিল করা সার্কাসের তাঁবুতেই। এর মধ্যে গায়েব হয়ে যায় অনেক গুলি নিতান্ত শিশু কন্যা,তাদের বাপ মারা নিতে এসেও পায়না তাদের! সেই সালটা ছিলো দুহাজার চার।

    কৈলাসের সাথে আরো অনেক সামাজিক সংস্থা কিন্তু কাজ চালিয়ে যেতে থাকে তাদের।বিভিন্ন ভ্রাম্যমান সার্কাস দল থেকে তারা উদ্ধার করে কত কত শিশু ক্রীতদাস! শ্রম আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে সার্কাস মালিকরা বলতে থাকে শিশুগুলির টাকায় তাদের গরীব বাপ মায়ের সংসার চলে! এই ক্রীতদাসদের কথা আবারো জোরালো আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো দুহাজার এগারোতে, যখন দেরাদুনে চলা  এক সার্কাসের অপরাধ জগৎ এর পর্দা আবার ও  ফাঁস করে দিলো সমাজ কল্যাণ সংস্থাগুলি। ইতিমধ্যে এস্থার বেঞ্জামিন ট্রাস্টই উদ্ধার করেছে চারশ সার্কাস ক্রীতদাস বাচ্চাকে 2004 সাল থেকে শুরু করে। রেড যখন হল , সার্কাস পার্টির লোকজন চেষ্টা করলো মেয়েগুলিকে লুকিয়ে অন্য গেট দিয়ে সরিয়ে ফেলতে। কিছু বাচ্ছাকে উদ্ধার করা গেলোইনা। স্থানীয় অপরাধ জগতের সাথে যোগ সাজসে কয়েকটা বাচ্চা লোপাট করে দেওয়া কী এমন ব্যাপার? সত্যার্থী আবারো এগিয়ে এলেন । সরকার নড়ে চড়ে বসলো। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট চোদ্দ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের সার্কাসে ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে তাদের শিক্ষার অধিকারের সংবিধানিক ধারা বলে।

    কিছুটা হলো। পুরোটা কি হলো? কাঞ্চির ঘরে তখন সাত বছরের মালিনী দেওয়ালে ছবি আঁকছে কলকল করে কথা বলতে বলতে। সে তার দিকে চেয়ে থাকে আর ভাবে। মনে মনে কুর্নিশ  জানায় কৈলাশ সত্যার্থী সহ সমস্ত মানবাধিকার সংগঠনএর  মানুষজনদের, যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সার্কাস অপরাধীদের উপর, মুক্তি দিয়েছিল সার্কাস ক্রীতদাসদের ! সব্বাইকে হয়তো পারেনি,তাও। তবে বাহাদুর বাচ্চা নীতা লিমাকে রাখে সব্বার আগে। হত দরিদ্র বাপ মায়ের সেই  পুঁচকে মেয়েইতো সব ফাঁস করে দিয়েছিল দু হাজার চার সালে, সার্কাস থেকে গোপনে মা বাপকে চিঠি লিখে। একটু এদিক ওদিক হলে সেও তো লোপাট হয়ে যেত! আর এক জনকেও সে মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানায়। সেইযে, ওকে বিচ্ছিরি ভাবে  তাড়িয়ে দেওয়া সেই সার্কাসের দাদাটা ! 

    দিলদার নগরে কত কিছুই তো বদলে গেলো!  ওদের মাঠের  গুলঞ্চ গাছটা এক ঝড়ে একদিন পড়ে গেল। সেই জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল। তাদের সেই মোটা মোটা কড়ি বরগা আর লোহার শিকওয়ালা দোতলা ভাড়া বাড়িটাই তো হারিয়ে গেল।  পরিবারটি শহরের ইতিউতি ছড়িয়ে পড়লো। অবশ্য তার আগেই এক পৌষের রাতে ঠাকুমা গোপালকে শেষ শয়ানটি দিয়ে সেই যে শুলেন আর উঠলেননা। দিলদারে কত মাঠ হারিয়ে গেল। হারিয়ে গেল ডাঙ্গুলি--মারবেল –পিট্টু --বৌ বসন্ত --- স্বপন স্মৃতি টুর্নামেন্ট। হাসপাতালের মর্গের পেছনের জোনাকি জ্বলা শুনশন রাস্তায় এখন কাফে আর বিরিয়ানি পয়েন্ট। বরফ আইসক্রিমের বদলে গুরুজন স্বীকৃত  ‘নভেল্টি’ আইসক্রিম ও এখন হাসির খোরাক বেলজিয়ান ওয়ফেল  এর কাছে। বিশ্বায়নের যুগে দিলদার ই পিছিয়ে থাকে কেন? 
     
    শীত এলে আজও সার্কাসের তাঁবু পড়ে চার্চ এর মাঠে। কিন্তু সার্কাসে এখন ভিড় কই তেমন? পশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে বলে অনেকেই আর গা করেনা যেতে। মানতেই চায়না তারা নতুন নতুন সংগীতময় রম্য কসরত এর আকর্ষণ । তবু, ছোট শিশুরা সার্কাস দেখার বায়না আজও করে । শিশুরা সার্কাস দেখে, কিন্তু সার্কাসে আর  কোনো ছোট শিশুকে  আগুনজ্বলা হুলা হু কোমরের চারপাশে ঘোরাতে বা দড়ি বেয়ে বিপজ্জনক উচ্চতায় দোল খেতে দেখা যায়না। অন্তত দেখার কথা লোকে ভাবতে পারেনা, দেখা যাওয়া উচিত নয় ---এমন একটা বোধের জায়গা থাকে। সবার থাকে তা নিশ্চিত বলা যায়না অবশ্য। সাধারন মানুষ বোধ হয় বুঝেছে সার্কাসের সবটা রোমান্টিক নয়, যা হয়ে আসতো  তার সবটা ঠিক নয়। সার্কাস কোনো অলৌকিক জাদু নয়, হাড়ভাঙ্গা মেহনত আর মনসংযোগের আনন্দময় ফলাফল। যারা আনন্দ দেয় তাদের আনন্দ আর ইচ্ছেটাও খুব জরুরি --- সভ্য বিনোদনে! নতুন ধারার সার্কাস শিল্প উঠে আসে চিরায়ত সার্কাসের দক্ষতার সাথে সংগীত ও অন্যান্য ললিতকলার হাত ধরে, যেখানে শিল্পীর নিরাপত্তার দাবিটি সবার আগে ঠাঁই পায়! মা বাপহীন সার্কাস শিশুদের স্বপ্ন দেখায় এই নতুন সার্কাস। 
     
    সার্কাস বড্ডই রোমান্টিক! কাঞ্চি ও ভুলতে পারেনা সেই মোহ। শুধুই কি কাঞ্চি? দিলদারের আরো অনেকেই। আসলে কিছু ঘাড়ত্যাড়া  রোমান্টিক বুঝি সব দেশে সব কালেই থেকে যায়।  কাঁটাকে ‘কাঁটা’ বলে দেখতে তাদের অসুবিধা নেই, আবার তাই বলে কমল তুলতে যাবেনা তাও কি হয়?  কাঁটাটি  উপড়ে তাই তারা কমলটি তুলিতে ছোটে ! তাই বুঝি   সার্কাসে সব সিট খালি যায়না আজও। তাদের কাছে দিলদারের পথঘাট, কুয়াশা ঢাকা কপিশার বুকে ট্রেনের হুইশল, চার্চ এর বড়দিন মেলা,  মকর সংক্রান্তির বনদেবী বা বড়াম পূজা, ঘুড়ি-লাটাই , খেলার তীর -ধনুক, বড়ো হুজুরের উরস পাক এর  ধুলো মাখা আতরের তীব্র গন্ধ, দিদিমার হালকা ভাজা, ফেলুদার আলুকাবলি --- ইত্যাদি  যেমন পুরোনো হয়না, তেমনি পুরোনো হয়না সার্কাস! 

    দিলদার ছাড়া   অন্য কোনো নগরের নাগরিক যারা ----তারা কি এমন ভাবেই ভাবে? কাঞ্চিরা তা জানেনা।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৪ নভেম্বর ২০২৫ | ২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন