এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মানবাশোক বিরচিত - অথ রামকথা

    Ashoke Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৪৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মানবাশোক বিরচিত

    অথ রামকথা

    যদি থাকে গজানন, করিনু নমন,
    রামের মহিমা(?) আমি করিব বর্ণন।

    অযোধ্যা নামেতে এক আছিল নগর,
    রাজত্ব করিত সেথা নৃপতি সগর।
    ষাট হাজার পুত্রের সগর জনক,
    স্বভাবে তাহারা সব অতি ভয়ানক।
    কপিলের শাপে ভস্ম হলো ভ্রাতাগণ,
    গঙ্গোদকে স্বর্গে যাবে মিলে আশ্বাসন।
    সগরের নাতি ছিলা অংশুমান নামে,
    দিলীপ তাহার পুত্র খ্যাত ধরাধামে।
    দিলীপের পত্নিপুত্র ভগীরথ নামে,
    গঙ্গাদেবী আনিলেন এই ধরাধামে।
    পূর্বপুরুষ ভস্মোপরি গঙ্গা বহিয়ে,
    স্বর্গবাসী হ’লো তারা শাপমুক্ত হয়ে।
    আরো বহুকাল পরে সগরের কুলে,
    দশরথ জন্মিলো ইন্দুমতীর কোলে।
    পিতা তার মহারাজা অজ মহামতি,
    প্রজারঞ্জক সুভদ্র অযোধ্যা নৃপতি।
    পিতৃ অন্তে দশরথ অযোধ্যা-রাজন,
    প্রধানা মহিষী তার ছিলো তিনজন।
    বহুকাল হৈল গত পুত্র নাহি হয়,
    পুত্রার্থে দশরথের আকুল হৃদয়।
    একদা মৃগয়াকালে রাজা দশরথ,
    হরিণ ভাবিয়া করে মুনিপুত্র বধ।
    পুত্র হারাইয়া মহা ক্রোধে অন্ধমুনি,
    দশরথে অভিশাপ দিলেন তখনি।
    পুত্রহারা হয়ে আমি ত্যজিব জীবন,
    পুত্রশোকে তোমারও হইবে মরণ।
    শাপে বর হৈল ইহা ভাবে দশরথ,
    মুনিশাপে পূর্ণ হবে তার মনোরথ।
    পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞের দ্রুত করে আয়োজন,
    যাজ্ঞিক ঋষ্যশৃঙ্গ বিভাণ্ডক-নন্দন।
    বিভাণ্ডক ঔরসে গর্ভবতী হরিণী,
    ঋষ্যশৃঙ্গে জন্ম দিলা সেই কুরঙ্গিনী।
    চরু বানাইলা মুনি বসি যজ্ঞস্থলে,
    পুত্রবতী হবে পত্নি সে চরু খাইলে।
    সে চরু খাইয়া তিন পত্নি ভক্তিভরে,
    গর্ভবতী হইয়া চারি পুত্র প্রসব করে।
    জ্যেষ্ঠ্যপুত্র রাম তার শুনো সর্বজন,
    অনুজ ভরত শত্রুঘ্ন আর লক্ষ্মণ।
    পত্নিরূপে বরে রাম জনক-দুহিতা,
    রূপবতী গুণবতী নাম তার সীতা।
    পিতার আদেশে রাম যায় বনবাসে,
    অনুজ লক্ষণ চলে তার পাশে পাশে।
    জনক-নন্দিনী সীতা রামচন্দ্র সাথে,
    রাজ্য ছাড়ি তিনজন যায় বনপথে।
    লঙ্কার অধিপতি রাক্ষস দশানন,
    বনমাঝে জানকীরে করিল হরণ।
    সীতারে হরণ করি রাজা দশানন,
    প্রহরায় রাখে তারে অশোক কানন।
    সীতার উদ্ধার লাগি রাম রঘুনাথ,
    সসঙ্গী সুগ্রীব সাথে করিল আঁতাত।
    সুগ্রীবের পরিচয় দিলাম হেথায়,
    বালি তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা রাজা কিস্কিন্ধ্যায়।
    মহাবল বালি রাজা জানে সর্বজনে,
    লাঙ্গুলে বাঁধিয়াছিলো রাজা দশাননে।
    ডুবাইয়া ছিল সাত সাগরের জলে,
    কিস্কিন্ধ্যার নরপতি বালি মহাবলে।
    বালিপত্নি তারাদেবী অতি রূপবতী,
    সুগ্রীবের কামদৃষ্টি ছিলো তার প্রতি।
    তার সাথে রাজ্যলোভ সুগ্রীবের মনে,
    বসিতে বাসনা তার রাজ সিংহাসনে।
    লালসা বুঝিয়া তার কিস্কিন্ধ্যা-রাজন,
    প্রহারিয়া সুগ্রীবেরে করে বিতাড়ন।
    সকল জানিয়া রাম করে অঙ্গীকার,
    রাজাসনে বসাইবে মিত্রকে তাহার।
    আশ্বস্ত হৈল সুগ্রীব রামের বচনে,
    মল্লযুদ্ধে রত হয় জ্যেষ্ঠভ্রাতা সনে।
    শ্রীরাম লুকায়ে থেকে বৃক্ষ অন্তরালে,
    বাণ মারি বধ করে বালি মহাবলে।
    তদন্তর রামচন্দ্র সুগ্রীবেরে লয়ে,
    লঙ্কাপুরী উপজিল সাগর তরিয়ে।
    সিংহাসনে বসি আছে লঙ্কেশ রাবণ,
    হেনকালে উপজিল ভ্রাতা বিভীষণ।
    কহিলেক জানকীরে কর তুমি মুক্ত,
    রামের শরণ লয়ে হও তার ভক্ত।
    একথা শ্রবণ করি রাজা দশানন,
    পদাঘাতে বিভীষণে করে বিতাড়ন।
    বিভীষণ পঁহুছিল শ্রীরাম সকাশে,
    বন্ধনে আবদ্ধ হলো মিত্রতার পাশে।
    ভুলিয়া আপন দেশ আপনার জন,
    দেশের গোপন কথা করিলো জ্ঞাপন।
    আরম্ভিল মহারণ রাম দশাননে,
    মারিতে না পারে রাম লঙ্কেশ রাবণে।
    অকালে করিল রাম দুর্গার বোধন,
    বাসনা অন্তরে তার রাবণ নিধন।
    পৌরহিত্য তরে রাম না পায় ব্রাহ্মণ,
    পূজারি হইল সেথা রাজা দশানন।
    অকাল বোধন কেনো জানিয়া কারণ,
    শুদ্ধাচারী দশানন করিল পূজন।
    রাবণ বধের তরে গুপ্ত অস্ত্রখানি,
    চুরি করি হনুমান রামে দিলা আনি।
    সেই অস্ত্রে বধি রাম রাজা দশাননে,
    বিভীষণে বসাইলা রাজার আসনে।
    মুক্ত হয়ে সীতা আসে রামের সকাশে,
    জানকীরে হেরি রাম কহে কটুভাষে।
    এতদিন ছিলা তুমি রাবণ কবলে,
    সতী তুমি নহ আর মন মোর বলে।
    সমুখে চাহিয়া দেখো সুগ্রীব লক্ষ্মণ,
    আরও আছে লঙ্কার রাজা বিভীষণ।
    ইহাদের মধ্য হতে করি নির্বাচন,
    করিবারে পারো তুমি পতিত্বে বরণ।
    রামের বচন শুনি জনক নন্দিনী,
    আত্মাহুতি দিতে সেথা জ্বালিলেন অগ্নি।
    প্রবেশ করেন সীতা জ্বলন্ত অনলে,
    দহে না সীতারে অগ্নি মহা পূণ্যফলে।
    তদন্তর শ্রীরাম সীতা আার লক্ষ্মণ,
    সঙ্গে হনুমান আর কপি সৈন্যগণ।
    পুষ্পক বিমানে আসে অযোধ্যা নগরী,
    রাজাসনে বসে রাম লক্ষ্মণ ছত্রধারী।
    তদন্তর রাম সীতা অযোধ্যা প্রাসাদে,
    কাটাইলো কিছুকাল আমোদ-প্রমোদে।
    রামের ঔরসে সীতা হৈল গর্ভবতী,
    জন্ম দিতে শ্রীরামের বংশের বাতি।
    সীতারে লইয়া প্রজা করে কানাকানি,
    দশানন করিয়াছে সতীত্বের হানি।
    তাহারে লইয়া রাম করে সংসার,
    এই পাপে অযোধ্যা হইবে ছারখার।
    এমতো শুনিয়া রাম ডাকিয়া লক্ষ্মণে,
    নির্দেশিল সীতারে ত্যজি আইসো বনে।
    বাল্মিকী আশ্রমে সীতা পাইল আশ্রয়,
    তথায় জনম দিলো যুগল তনয়।
    রামের রাজত্বে এক বালক ব্রাহ্মণ,
    সে বালকের হইল অকাল মরণ।
    অযোধ্যা-নরেশ যেথা রাম রঘুপতি,
    তথায় অকালে মৃত্যু হইলো কেমতি।
    নারদ কহিল শুদ্র সামন্তক নাম,
    অকালমৃত্যু তার কার্য্যের পরিণাম।
    শুদ্র হৈয়া তপ করে সেই দুরাচার,
    অবিলম্বে করো তার প্রাণ সংহার।
    রামচন্দ্র পঁহুছিলো সামন্তক যেথা,
    সংহারিল সামন্তকে চূর্ণ করি মাথা।
    আরো কিছকাল পরে সপুত্র সীতারে,
    ফিরাইয়া আনে রাম অযোধ্যা নগরে।
    শ্রীরাম কহিল শুনো জনকনন্দিনী,
    নির্দশিব যাহা তুমি পালিবে এখনি।
    রাম কহে জানকী অগ্নি-পরীক্ষা দেহ,
    দূর করিবার তরে প্রজার সন্দেহ।
    ভীষণ তাপিতা সীতা দুঃখে মুহ্যমান,
    কাঁদিয়া কহিলা ধরা বক্ষে দাও স্থান।
    ধরণী হইল দ্বিধা সে রোদন শুনি,
    সীতারে আপন বক্ষে লইলেক টানি।
    আরো কিছুদিন পরে কৌশল্যানন্দন,
    প্রিয় ভ্রাতা লক্ষ্মণেরে দিলা বিসর্জন।
    তদন্তর বহুবর্ষ রাজত্ব করিয়া,
    বৈকুন্ঠে উপজিল জীবন বিসর্জিয়া।

    ক্ষুদ্রবুদ্ধি মোর অতি নারি বুঝিবারে,
    শ্রীরাম পুরুষোত্তম হৈল কি বিচারে।
    ক্ষুদ্রাকারে রামকথা করি বিরচন,
    ত্রুটি হৈলে ক্ষমিবেন জ্ঞানী-গুণী জন।

    ------------
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নবীন | 148.113.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১১736950
  • অসাধারণ লেখা 
  • Anindya Rakshit | ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:২০736952
  • ঐ সব অন্যায্য কর্মগুলো আপনি করতে পারলে আপনিও 'পুরুষোত্তম' বিবেচিত হবেন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন