

ক্যালকুলেটরে হঠাৎ একদিন দেখাল—
"১+১=৩"
পড়ে গেল হইচই। সভাসদদের মধ্যে কেউ চিন্তিত, কেউ বিস্মিত। বুড়ো রাজপরামর্শদাতা ফিসফিস করে বললেন রাজার কানে, "মন্ত্রীমশায় যাদুবল প্রয়োগ করেছেন।"
রাজা-ও ওমনি মন্ত্রীর হাত থেকে ওই ক্যালকুলেটর ছিনিয়ে নিয়ে নিজে হিসেব করতে বসলেন। খুব সাবধানে ধীরে ধীরে '১','+', '১', '='... বোতাম গুলো টিপলেন পরপর।
কী কান্ড! ফলশ্রুতি একই! উত্তর আসছে 'তিন'!
যন্ত্র তো কখনো ভুল করেনা! সৃষ্টিকর্তা তাকে ঠুকে ঠুকে বানিয়েছেন দৃঢ়, যাতে দুনিয়া টলে গেলেও তার উত্তর বদলাবেনা। তবে আজ আচমকা এমন ঘুরে বসল কেন সে?
ঢেড়া পিটিয়ে দেশের লোককে অবগত করা হল এই বিস্ময়কর ঘটনা সম্পর্কে। খবর খুব তাড়াতাড়িই ছড়িয়ে পড়ল বাইরে। দেশ-বিদেশ থেকে এলেন গণিতজ্ঞরা। রাজদরবারে বিজ্ঞদের ভিড় লেগে গেল।
কারও ইয়া ব্বড়ো দাড়ি, তার মধ্যে লুকিয়ে কাঠ-পেন্সিল, কারও আবার বিদেশি স্যুট-প্যান্ট, পকেটে দামি পার্কার। চাইনিজ এক গণিতজ্ঞ এসেছেন সপরিবারে, তার বক্তব্য, "আমি হিসেবে ভুল করলেও আমার স্ত্রী ধরিয়ে দেবে সে ভুল, আর নাহলে আমার দুই ছেলে।"
টানা তিন-চারদিন ধরে চলল সংখ্যারেখায় ম্যারাথন — গণিতজ্ঞ আর ক্যালকুলেটরের।
"নোহ্! আই গিভ আপ!", বলে উঠলেন এক ইউরোপীয় ম্যাথামেটিশিয়ান। একে একে সবারই হল একই হাল। দিন শেষে দরবারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চকের গুঁড়ো, কালো শ্লেট, কাগজের ছেঁড়া টুকরো আর পেনের ফাঁকা রিফিল।
নতুন আবিষ্কার! নামিদামি দৈনিকগুলো ছাপতে শুরু করে এই বিষয়ে। "কাল-পরশু" পত্রিকাতে হেডলাইন—
"যন্ত্র দিল চোখ খুলে আমাদের, ১ + ১ = ৩"
জনসাধারণ হাওয়া তো পেয়েইছিল, এবার শিওর হল। রাজদরবারে আসতে শুরু করলেন ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও ব্যবসায়ীরা। রাজদরবার হয়ে উঠল পর্যটনকেন্দ্র। সেই ঘিরে রোজ রোজ বসতে লাগল মেলা। মেলায় খাবারদাবার-গয়নাগাটি থেকে শুরু করে নাগরদোলা— কিছুরই কমতি ছিলনা।
তবে গড়মিল দেখা দিল এরপর...।
মেলাতলায় ভিড়, ব্যবসা জমজমাট পুরো!
—"১০ টাকায় কটা দিচ্ছ?"
উত্তরে ফুচকাওয়ালা বলেন ৫ টা। অথচ সবাই লক্ষ্য করে যে ১০ টাকায় কেউই ৫ টা ফুচকা পাচ্ছেনা, পাচ্ছে ৪টে! তবে ফুচকাওয়ালা তো ভুল না! ও তো হিসেব করে দেখিয়ে দিচ্ছে যে এই ১ টা ফুচকা, ৩ টে ফুচকা, ৪ টে ফুচকা, ৫ টা ফুচকা। আজব ব্যাপার!
সারাদিন খেটেখুটে মোহন যখন এল মুদির দোকানে চাল কিনতে, তখন সে নিয়ে গেল ৩ কিলো চাল। মাস শেষ হওয়ার আগেই তো সে চাল ফুরিয়ে গেল, পেটের খিদে আর মিটল না। মনে হল আরো ১ কিলো চাল নিলে বোধহয় ভালো হত।
যত দিন যায় তত কনফিউশান বাড়তে লাগে, ভাঁড়ারে টান পড়ে! কী দুঃসময় এলো রে!
যন্ত্রানুগত চোখগুলোয় ধীরে ধীরে এবারে পড়তে শুরু করে সন্দেহের ছানি। যন্ত্রের কথা মানা যাচ্ছেনা যে আর! এবার কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে! শুরু হল যুদ্ধ, বিপ্লব! রাজদরবারে বোমা পড়ল, বিপ্লবীদের দাবি— ভেঙে ফেলা হোক ও যন্ত্র!
"ও যন্ত্র নিয়ম জানে, বাস্তব জানে না! মেরে ফেলো ওই যন্ত্রকে! ভেঙে ফেলো ওই ক্যালকুলেটর!"
তবে রাজা খুব নিয়মমাফিক চলা মানুষ, নিয়ম ভাঙতে উনি পারবেন না! তাই রাজসেনাও নেমে পড়ল যুদ্ধে। হল রক্তারক্তি, ধাতব অস্ত্রের টুংটাং শব্দে ধীরে ধীরে দিগ্বিদিক শূন্য হতে লাগল দুইপক্ষের সেনা-ই।
অবস্থার গভীরতা বুঝে মন্ত্রীমশাই গেলেন উত্তরের পর্বতের গুহায় ধ্যানরত মহামুনির কাছে, তাকে জাগিয়ে অনুরোধ করলেন দিশা দেখাতে। মহামুনি মন্ত্রীকে শেখালেন এক অদ্ভূত মন্ত্র, তা উচ্চারণ করে নাকি যন্ত্রদের সাথে কথা বলা যায়, মুনি নিজেও অনেকবার বলেছেন।
অপারগ মন্ত্রী সেই মন্ত্র উচ্চারণ করে চোখ বন্ধ করে দেখতে পায় সর্বত্র অন্ধকার আর তার মধ্যে একটা ছোট্ট আলো। সেই আলো বলে উঠল, "আমি ক্যালকুলেটর।"
মন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করে যে কেন সে এই বিধান দিল?! কেন সে বলল ১+১=৩?! এই প্রশ্নের মধ্যে যেমন ছিল রাগ-উত্তেজনা; তেমনই ছিল আক্ষেপ ও আত্মগ্লানি।
সেই আলো, নিভন্ত হয়ে আসে, খুব নিচু গলায় বিড়বিড়িয়ে বলে, "ভুল করে ফেলেছি বাবু।"
ওদিকে বিপ্লব দমানো সম্ভব হয়েছে, ক্লান্ত রাজা নিজের প্রজাদের রক্ত মেখে শহিদ গুনছেন,
"১,৩,৪,৫...."
dc | 122.174.***.*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:৩৭502051
সুকি | 2401:4900:3312:d987:1:1:f403:***:*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৪৩502057
kk | 68.184.***.*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৩৭502072
Abhyu | 47.39.***.*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৬502084
Rangana Pal | 2409:4061:39d:f527:5da1:7e89:b89c:***:*** | ২৮ মার্চ ২০২২ ১৩:৩১505705
উজ্জ্বল | ৩০ মার্চ ২০২২ ১২:১০505787
Mahasweta Mahapatra Sau | 42.***.*** | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৯516747