ঢং ঢং ঢং করে বেল বেজে উঠলো আর দারোয়ান কাকু ঘোষণা করে দিলেন যে কালী পুজোর আগে শেষ ক্লাস এখানেই সমাপ্ত হয়েছে। অদিতি,অনিক আর মিতা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে বলেছিল ' এই বারে মনে হয় মা - বাবা আর আমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবে না'। তবে সব সময় যে সবার বা কথা সত্যি হবে তার কিন্তু কোনো মানে নেই। তারা সবাই বাড়িতে গিয়ে শুনলো যে তারা আগামীকালই শান্তিনিকেতন বেড়াতে যাবে। এই কথা শুনেই সবার ঠোঁটের পাশে একটা মিট মিটে হাসি ফুটে ওঠে ছিল । সবাই পা বাড়িয়ে দিল যাওয়ার দিনের দিকে।
শান্তিনিকতেনে পৌছেই সবাই আগে বিশ্বভারতী-টা ঘুরে নিল। পরেরদিন সকালে ওরা বাকি জায়গাগুলো ঘুরে নিল । শান্তিনিকেতনকে বিদায় জানিয়ে কলকাতার দিকে ফেরার পথে সন্ধেবেলায় শুরু হল মারাত্মক দুর্যোগ। গাড়ির কাঁচ ঝাপসা হয়ে আসছিলো , সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, তাই গাড়িটাকে রাস্তার এক ধারে দাঁড় করানো হল।
বড়রা ঠিক করলো যে এই দুর্যোগ- গাড়ি চালানো ঠিক হবে না। তাই তারা কাছাকাছির মধ্যে কোনো হোটেল খুঁজতে লাগলো। কিন্তু অনেক খোঁজাখুজির পর ও তারা কোন হোটেল পেলনা। ইতিমধ্যে ঝড় ও বৃষ্টি বাড়তে থাকলো। তবে অদিতি লক্ষ্য করল যে সামনে ছোট্ট হোটেল তার পাশে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বসে ছিলেন ।
তখন তারা সবাই সেই হোটেল - টার দিকে খুব সাবধানে এগোতে লাগলো। ওরা সবাই খুব ভালো করে বয়স্ক ভদ্রলোকেকে দেখে নিলো , গায়ের রং একটু চাপা, রোগা, চোখে চশমা। তাদেরকে তিনি একটা পরিস্কার - পরিচ্ছন্ন ঘরে নিয়ে এলেন। সবাই খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন সবাই মোটামুটি সকাল ৬টার দিকে উঠেছে । হঠাৎ একজন মাঝ বয়সি ভদ্রলোক আমাদের দরজার বাইরে থেকে ডাকলেন 'ভেতরে যদি কেউ থাকেন তাহলে একটু বাইরে আসবেন'। তখন সবাই একসাথে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালে তিনি তখন সবাইকে জিজ্ঞেশ করলেন ' আপনারা এখানে কী করে এলেন? এই হোটেলটা তো অনেকদিন ধরেই বন্ধ আছে '।তখন ওরা সবাই গতকাল রাতের পুরো ঘটনা-টা ওনাকে খুলে বলেন । তিনি খুব চমকে গিয়ে বললেন 'আপনারা আমার বাবাকে দেখেছিলেন । কিন্তু তিনি তো তিন বছর আগে পরলোক গমন করেন । এই কথাটা শুনে তো তাদের শরীর শিউড়ে ওঠে । শান্তিনিকেতন থেকে ফেরার পর থেকে সবার মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুরছে যে তিনি 'ভুত না ভগবান'?