সালটা ছিল ২০১৫, দিনটা আমার ঠিক মনে পড়ে না। তখন আমার বয়স ১০ কি ১১ হবে। সারাদিনের দৌড় ঝাঁপ, খাটাখাটনির পর , সেদিন আমি যখন খাওয়া-দাওয়ার পর শুতে গেলাম তখন বাজে সাড়ে এগারোটা।
কিছুক্ষণ পর কিসের একটা শব্দে যেন আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘরের অন্ধকারে ঘড়ির দিকে তাকালাম ঠিকই কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। তবে রাতের গভীরতা দেখে আন্দাজ করলাম বড়জোর ১ কি ২ বাজে। মনে হল জানলার বাইরে থেকেই শব্দটা আসছে। কীসের শব্দ? মনে হচ্ছে কেউ যেন তীব্র গতিতে পায়ে ঘুঙুর পরে ঠিক আমার জানলার পাসেই দৌড়াদৌড়ি করছে। বাবা এতো রাতে আবার কে? পাস ফিরে মা বাবার দিকে তাকালাম। তারা তখন ঘুমের জগতে স্বপ্ন বুনছে। একে শীতের রাত, আমার আর কম্বলের ভিতর থেকে বেরিয়ে, এতো রাতে জানলায় কে তা দেখবার ইচ্ছা হল না। পুনরায় কম্বল চাপা দিয়ে, নেহাতই আমার মনের ভূল বলে ব্যাপারটা পুরো এড়িয়ে গেলাম। তারপর দু-এক রাত সব চুপ চাপ, কোথাও কোন শব্দ নেই, তাই আমিও এ বিষয় নিয়ে আর মাতামাতি করলাম না। হঠাৎ এক-দু সপ্তাহ পর, একদিন মধ্য রাতে আবার আমার ঘুম ভেঙে গেল। সেই একই শব্দ, তবে এবার যেন আরো তীক্ষ্ণ। উফ! কান ফেটে যাচ্ছে, পাস ফিরে দেখি মা বাবা ঠিক আগের বারের মতো অঘরে ঘুমাছে। তবে কি একমাত্র আমিই শুনতে পাচ্ছি এ শব্দ?
সেই রাতটা কোনভাবে কাটিয়ে দিলাম। পরের দিন সকালে মা বাবাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে যানতে পারলাম তারা এরকম কোন আওয়াজই পায়নি। আমার কোথাও একটা খটকা লাগল। তারপর একটানা ৬-৭ দিন ধরে রাতে আমার এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা চলতেই থাকে। না এবার আর চুপ করে থাকলে চলবে না। মাকে একদিন জব্বর পাকড়াও করে এই সব কথা খুলে বললাম।মা নেহাতই ব্যাপারটাকে হালকা ভাবে নিয়ে, উপহাসের সুরে আমায় বলল, যেহেতু আমাদের বাস্তু ভিটেতে আগে দুর্গা পূজো হত, তাই নাকি স্বয়ং মা দুর্গাই আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। ভেবেছিলাম মায়ের সঙ্গে কথা বলে আমার মনের সব জটিলতা দূর হয়ে যাবে, কিন্তু আমার সন্দেহ রয়য়েই গেল। তবে সত্যি কোথা বলতে এই অভিজ্ঞতার দরুন আমার একবারও সাহস হয়নি জানলা খুলে দেখার।
মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জাগল, ঠাকুর কি এতো সহজে সকলকে দেখা দেয় ? শব্দটাকি শুভশক্তির ছিল নাকি অশুভ শক্তির? সেটি কি আদেও ঠাকুর ছিল, নাকি…………
সে রহস্য আমি আজ 5 বছর পরও সমাধান করতে পারিনি। তবে এখন আমার মনে হয় একবার জানলাটা খুলে দেখতেই পারতাম।