এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  •  ভুতেরা সব গেল কোথায়? খেলা হবে হেথায়-হোথায়! 

    Asok Kumar Chakrabarti লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ মার্চ ২০২১ | ১৪৪১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অদ্ভুতুড়ে সব কান্ড কারখানা চোখে পড়ছে চারদিকে।এই মুহূর্তে সত্যি কারের ভুতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। হামদো-মামদোয় দেশ ছেয়ে গিয়েছে। তাহলে অরিজিনাল ভুতেরা সব গেল কোথায়? আওয়াজ উঠেছে, "খেলা হবে, খেলা হবে"। আজ বাদে কাল ভোট। এতো দিন জানতাম,ভোট-পুজো। এখন শুনছি,এটা এক ধরনের খেলা। ভোটে হারজিৎ আছে। খেলাতেও তাই। স্পোর্টিং স্পিরিট নিয়ে সবাই এখনই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একেক দিন একেক রকমের অভিযান। সবাই সংবাদপত্রে শিরোনাম হতে চায়। খেলা না শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় ভয়ঙ্কর খেলা ! ভুতের নাচ শুরু হলো বলে!

    ভাষার সন্ত্রাসে কেউই কম যায় না। এ বলে আমায় দেখ,ও বলে আমায় দেখ। তুই তোকারি এখন জল- ভাত। হাতা হাতি,মারামারি। পুলিশের লাঠিচার্জ, জল-কামান এতো নিত্য দিনের হেড লাইন। চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের পুলিশের লাঠিচার্জ।

    লাঠির বাড়ি খেয়ে একজন তরতাজা যুবক প্রাণ হারান। ভোটের মুখে পরিবারের একজনকে চাকরি, নিহতের মাকে বার্ধক্য ভাতা, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি। "জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা,মরণে তারে কেন দিতে এলে ফুল?" ভুত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান - গা জোয়ারিতে সব ভেঙে খানখান । এখন গায়ে চিমটি কেটে দেখতে হয়, বেঁচে আছি তো! রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার রাতারাতি আটশো। পেট্রল,ডিজেল, কেরোসিন - টা টা গুড বাই করে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ দুনিয়ায় ভাই সবই হয়, সব সত্যি,সব সত্যি। কোনো কথা হবে না । করোনার খপ্পর থেকে যদিও বা বাঁচলেন, এখন দরদামের ঠেলায় প্রাণ অস্থির। বিধান সভা, লোক সভায় দর দস্তুর চলেনা। সেখানে আলোচনার জন্য আরও হাজারটা বিষয় আছে। ঘরের ছোটখাটো কথা ওসব পাবলিক প্লেসে প্রকাশ না করাই ভালো। পাঁচ রাজ্যের ভোট ভাবনা এই মুহূর্তে প্রধান আলোচ্য বিষয়। ক্ষমতা রক্ষা এবং ক্ষমতা দখল। মুখে মুখে এই আলোচনায় দেশ মশগুল। কেউ এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নন। প্রতিশ্রুতি না প্রলোভন বোঝাই দায়। সাধারণ মানুষ বেশির ভাগই বিভ্রান্ত। তবু জনসভায় নেতাদের ডাকে ছুটতে হয়। সবটাই কেমন যেন ভুতুড়ে ব্যাপার। আজ যেখানে পেল্লায় ভিড়,কাল বা তার পরদিন সেই একই মাঠে তিল ধারনের জায়গা নেই। ভিন্ন মতাবলম্বী এত লোক জনের ঠিকানা তো একই। নিশ্চয়ই ভিন্ন গ্রহ থেকে আসেনি। অদ্ভুতুড়ে কান্ড কারখানা প্রতিদিন ঘটেই চলেছে। ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা জোরদার। কেউ দিচ্ছেন ট্য়াব। কেউ সাইকেলের পরিবর্তে মোটরসাইকেল। ফুলের সঙ্গে ফুলের লড়াই। ওদিকে হাত ধরেছে কাস্তে। সমীক্ষা যাই বলুক, আসল খেলা এখনও শুরু হয়নি। হাওয়া না উঠলে কিসের উন্মাদনা? এই ভোট-যুদ্ধে আসল কৃতিত্ব তো ওই ভোটারদেরই। ভুতের বেগার খেটে মরাই যাদের বিধিলিপি। নেতাদের পিঠ চাপড়ানিতে গলে গিয়ে উঠতি বয়সী ছেলেছোকরারা দিন রাত এক করে খেটে চলেছে। প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত। সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে যারা এগিয়েছেন তাদের পক্ষেই পাল্লা ভারী, না উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে যারা সরকারের কাজ কর্ম মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন,তা রাই সংখা গরিষ্ঠ, তা নিয়ে বিচার সময়ই করবে। তবে এটুকু এই মুহূর্তে বেশ জোর দিয়েই বলা যায়, পারদ ক্রমেই চড়ছে।

    সরস্বতী পুজো কাটতে না কাটতে,শীত উধাও। বসন্ত এসে হাজির। মানুষ শীতের কামড় থেকে বাঁচার আনন্দে খুশিতে টগবগ। করোনা পুরোপুরি ভেগেছে, এ কথা কেউই জোর দিয়ে বলার সাহস দেখাতে রাজি নন। তবে পাবলিকের নাক থেকে মাস্ক ক্রমেই সরছে। কেমন যেন কেয়ারলেস ভাব! টীকা এসে গেছে। ভয় কিসের?

    ওদিকে মানুষ কি নিয়ে বাঁচবেন সেই চিন্তায় বিভোর। টি ভি সিরিয়াল এক ঘেয়ে। কোথাও যাওয়ার চিন্তা নেই। রোগের ভয় ছাড়াও খরচের চাপ। লোক-লৌকিকতা এড়ানো যাচ্ছে না। বিয়ে -বৌভাত হচ্ছেই। উপহার না হাতে নিয়ে কোথাও যাওয়া একরকম অসম্ভব। গিফট্ মানেই পকেট খালি! নিখরচায়" বুক ইজ দা বেস্ট ফ্রেন্ড।"

    বই পড়ার পাঠ একেবারে উঠে যায়নি। যদিও লাইব্রেরী তালা বন্ধ।

    আসন্ন বই মেলায় ভুতের বই নতুন করে ছাপা হচ্ছে না। কাটতি একদমই নেই। নতুন প্রজন্ম ভুতকে ডরায় না। গোয়েন্দা গল্প তবু যেটুকু চলে ! ফেলুদা,বোমকেশ এখনও দিব্যি ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছে। সত্যি প্রেমের গল্প এখন ঘরে -ঘরে । ফেসবুকের মাধ্যমে দেশের গন্ডি টপকে বন্ধু বা বান্ধবী এখন "বসুধৈব কুটুমবকম"!

    "সত্যি ভুতের গল্প "নামে পঞ্চাশ বছর আগে একটা বা দুটো বই অনেক বাড়িতেই সেল্ফ ঘাঁটলে হাতে উঠে আসতো। গা ছমছম করা ওইসব বই রাতে হাতে নেওয়া যেতো না ।তখন পাড়া গাঁয়ে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি সব জায়গায়। হারিকেনের আলোয় লেখাপড়াও করেছি আজ থেকে ষাট- সত্তর বছর আগে।

    বাঁশ,বাদুড়,ভুত -তিন নিয়ে খেপুত। মেদিনীপুর (এখন পশ্চিম) জেলার দাসপুর থানা,ঘাটাল মহকুমার অধীন অজ পাড়া-গাঁ এই ছোট্ট গ্রাম। সন্ধ্যায় লোকের দেখা মিলতো না হাটতলায়। দোকানদার খদ্দের না দেখলে তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতো। অযথা কে আর কেরোসিন পোড়ায়? এই খেপুত গ্রামের মধ্যিখানে আছে অতি প্রাচীন এক মন্দির - মা ক্ষেপ্তেশ্বরী। কষ্টি পাথরের তৈরি দুর্গা। বেশ জাগ্রত। এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলে ওই মন্দিরে আগে পুজো পৌঁছে মায়ের আশীর্বাদ নিতে হয়। ওই মন্দিরে সন্ধ্যা নামলে কেউ ভুলেও যেতো না। চারদিকে ঘন জঙ্গল। নিবিড় বাঁশ ঝাড়। ভয়ঙ্কর শেয়ালের উৎপাত। ঘড়ি ধরে শেয়ার ডাকতো তিন প্রহর। সন্ধ্যা ছটায়, রাত নটা এবং বারোটায়। শিশুদের ঘুম ভেঙেছে কতদিন!

    কলকাতা থেকে ওই গ্রামে যাওয়া হাজার ঝকমারি। হাওড়া থেকে ট্রেনে কোলাঘাট। স্টিমার ধরে রূপনারায়ণ ডিঙিয়ে গোপীগঞ্জ। ওখান থেকে পায়ে হেঁটে খেপুত। অসময়ে ডিঙি নৌকায় চড়ে ভাটা ঠেলে তিন ঘন্টার পথ আট-ন ঘন্টা। ভোগান্তির এক শেষ!

    কোলাঘাটের ইলিশ খুবই লোভনীয়। জোড়া ইলিশ তখনকার দিনে এমন কিছু মহার্ঘ ছিল না । দু'হাত দিয়ে দুখানা ইলিশ ঝুলিয়ে নৌকা থেকে নেমে হনহন করে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন আমার বাবা। তখন মাঝরাত। ঠিক কটা জানার উপায় নেই। কেননা, রিস্ট ওয়াচ বা হাতঘড়ি তখনকার দিনে শুধুমাত্র বিত্তশালী ব্যক্তিদেরই একচেটিয়া ছিলো। গোপীগঞ্জ। বাজারে ততক্ষণে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে,সময় জানার শেষ চেষ্টা বৃথা গেল। অগত্যা জোর কদমে পা চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন আমার মাঝ বয়েসী বাবা। সম্ভবত আমাবস্যার রাত। জোনাকি ছাড়া কোথাও কোনও আলোর ইশারা‌ নেই। অল্প কিছু দূর এগোনোর পর থেকেই বাবা টের পেলেন,কেউ একজন পিছু নিয়েছে । পিছনে তাকিয়ে দেখলেন কেউ নেই। হাঁটা না থামিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। পঞ্চানন তলা পেরোতেই স্পষ্ট শোনা গেল,"ইলিশ মাছ দেনা। ইলিশ মাছ খাবো-"। নাকি সুরে মেয়েলী কন্ঠস্বর। শুনেছি বাবা বেশ ডাকা- বুকো ছিলেন। বুকের পাটা বেশ চওড়া। পরাধীন ভারতের রেলওয়ে কর্মী ছিলেন। ওই রকম সাহসী মানুষটিও ওই শীতের রাতে ঘামতে শুরু করলেন। ক্ষেপ্তেশ্বরী মন্দিরের কাছে বিশাল বাঁশ বন। সামনে এগোতে যাবেন, বাঁশ রাস্তায় নেমে এসে বাধার সৃষ্টি করলো। পেছন দিকে ফিরে যেতেই আবার উঠে গেল আপনাআপনি। এইভাবে বেশ কিছু ক্ষণ চলার পর বাবা বেগতিক বুঝে ঘুরপথে লম্বা লম্বা পায়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলেন। ডাকাডাকি করার ক্ষমতা ছিল না। শুনেছি ভোরবেলা আমার দাদু ঘুম থেকে উঠে বাবাকে সদর দরজার মুখেই রাখা একটা কাঠের বেঞ্চিতে অচৈতন্য অবস্থায় বসে থাকতে দেখেছিলেন। জোড়া ইলিশ পায়ের নীচে মাটিতে পড়ে। ভাগ্যিস বাবা পেত্নীর ডাকে সাড়া দেননি! সবাই ঘটনা শুনে থ।

    ভুত-পেতনী আছে কি নেই,তা নিয়ে বিতর্ক চলবে। একদল যথেষ্ট কনফিডেন্ট। আর একদল বরাবরই অবিশ্বাসী। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক যথেষ্ট জোরালো। সত্যজিৎ রায় ভুত নিয়ে একাধিক ছবি করেছেন। যা আজো নতুন। আকাশ বাণী ভবনের আগে যেখানে রেডিও অফিস ছিল,সেই গারসটিন প্যালেসের স্টুডিওতে সাহেব ভুতের উপস্থিতির কথা অনেকেই বলে থাকেন। সাহিত্যিকদের অনেকেই ভুতে বিশ্বাসী। জোরালো যুক্তি দেখিয়েছেন। লেখায়,আলোচনায়।

    দিল্লিতে বঙ্গ ভবনে ভুত? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা। রাইটার্স বিল্ডিং থেকে একজন উচ্চ পদস্থ তরুণ অফিসার আচমকা দিল্লিতে হাজির। বঙ্গ ভবনে তিন দিন থাকবেন। কিন্ত সেই সময়ে বঙ্গ ভবনে ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। কি একটা সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে সাত দিন ধরে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। তাদের ফিরতে এখনও তিন চার দিন বাকি । ওই তরুণ অফিসার দিল্লিতে গিয়েছেন মেলার কাজ তদারকি করতে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। তাকে ঘর না দিয়ে উপায় নেই। কেয়ারটেকার সাহেব পড়লেন মহা ফাঁপরে। চার তলার চিলে কোঠার ঘরটি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ পড়ে রয়েছে। ভুতের ভয়ে সেখানে কেউ থাকার সাহস দেখায় না। ঘরটি ওই অফিসারের জন্য বরাদ্দ করা হলো। তবে কেয়ারটেকার সাহেব রহস্য রোমাঞ্চ যা কিছু ছিল,তার সবটুকু ওই অফিসারকে খোলাখুলি জানিয়ে রাখলেন। তরুণ অফিসার বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়ে ওই বহুদিন পরিত্যক্ত রুমে সন্ধের মুখে মুখেই পড়লেন। সুন্দর সাজানো গোছানো বেডরুম। সঙ্গে আরও সুন্দর ওয়াশ রুম। শাওয়ার, টয়লেট সব কিছু। ভগবানকে ধন্যবাদ দিলেন মনে মনে। এ যাত্রায় এ রকম একটা তোফা বাসস্থান জুটিয়ে দেওয়ার জন্যে। সারাদিন যথেষ্ট ধকল গিয়েছে। রাত দশটার মধ্যে ডিনার সেরে নরম বিছানায় শরীর সঁপে দিলেন। গভীর ঘুম। -" সেদিন জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে-"। হঠাৎ গান কানে আসতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ওয়াশ রুমে কেউ চান করতে করতে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইছেন। বালতিতে কল থেকে জল পড়ার শব্দ। ঘর অন্ধকার। ওয়াশ রুমের আলো নিবিয়ে দিয়ে গতকাল রাতে এই খাটে ওই তরুণ অফিসার শুতে এসে ছিলেন, পরিস্কার মনে আছে। আলো নেভানোই আছে। তাহলে? খানিকক্ষণ চুপচাপ কাটলো। এরপর বেডরুমে কেউ যেন হেঁটে বেড়াচ্ছে। হাল্কা তোড়া বা নূপুরের শব্দ। কি বিপদ! ভয়ে চোখ বন্ধ করে পাশ বালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমোনোর চেষ্টা। পরদিন সকালে কেয়ারটেকার নিজে খোঁজ নিতে চারতলার চিলে কোঠার ঘরটিতে উপস্থিত। তরুণ অফিসারের কাছে সব শুনে জানালেন - "প্রায় ত্রিশ বছর এই বঙ্গ ভবনে চাকরি করছি। কোনো দিন এরকম শুনিনি। তবে এই ঘরটা সারা বছরই তালা বন্ধ থাকে। একজন মহিলা আই এ এস অফিসার দিল্লিতে সরকারি কাজে এসে ওই ঘরে এক সপ্তাহ ছিলেন। যাওয়ার আগের দিন হাতের শিরা কেটে তিনি আত্মহত্যা করেন। কারন জানা যায়নি। অবিবাহিতা ওই মহিলা অফিসার কলকাতায় সরকারি আবাসনে একাই থাকতেন।"

    পরদিন ওই তরুণ অফিসারকে ঘর পাল্টে দেওয়া হলো। কেউ বলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন নির্ঘাত। কারন ভুত বলে কিছু নেই। দুর্বল চিত্তের লোকেরা ভুতের ধারনা ছোটবেলা থেকেই মনে পুষে রাখে। আরেক দল ভুত-তত্ত্ব আঁকড়ে ধরে এক ধরনের বিলাসিতা উপভোগ করে মনে মনে। "বিজ্ঞান যাই বলুক,অশরিরী আত্মা আছে এবং চিরকাল থাকবে।" বিতর্ক সভায় প্রায়ই গলা ফাটাফাটি হয়। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।

    আমাবস্যার রাত। অজ পাড়া-গাঁয়ে মেঠো রাস্তা দিয়ে কলকাতা থেকে একাই বাড়ি ফিরছিল মহীতোষ। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে মহীতোষ দেখলো, পাশের বাড়ির ছোট কাকিমা গাছ তলায় বাঁশের তৈরী লম্বা বেঞ্চিতে একা বসে পা দোলাচ্ছে। - "কি কাকিমা এত রাতে একা বসে কেন?" - কাকিমা কোনো উত্তর করলো না। মহীতোষ ভাবলো,নিশ্চয়ই সংসারে অশান্তি হয়েছে। তাই রাগ করে বাইরে এসে শরীরের জ্বালা জুড়চ্ছে। কথা না বাড়িয়ে দ্রুত পায়ে বাড়িতে ঢুকে গেল যুবা-মহীতোষ। মা এগিয়ে আসতেই ঘটনাটা মাকে বললো, জানতে চাইলো রাগারাগির কারন কি। কেন এতো রাতে একা একা বাড়ির বাইরের বেঞ্চিতে বসে বসে অহেতুক পা দোলাচ্ছে ! মা শুনে অবাক। -"ছোট কাকিমাকে ঠিক দেখেছিস? "

    - “কেন? ছোট কাকিমাকে আমি চিনবো না?”

    মহীতোষ ঘুরে দাঁড়ালো। মা বললো – “বলছিস কি? এই তো একটু আগে তোর ছোট কাকিমাকে শশ্মানে দাহ করে তোর ছোট কাকারা পুকুরে চান করে বাড়ি ঢুকেছে। জ্বল জ্বল করছে শিবানীর মুখটা।"

    -“কেন,কি হয়েছিলো ছোট কাকিমার ?"

    মহীতোষ চোখ গোল গোল করে মায়ের দিকে তাকালো ।

    - "দুপুরে সবাই মিলে দিব্যি বসে ভাত খাচ্ছিল। সবে দু’চার গাল ভাত মুখে তুলেছে, হঠাৎ বিষম লেগে শুরু হলো কাশি । শ্বাস নালীর মধ্যে ভাত ঢুকে গিয়ে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। দু’ একবার হেঁচকি তুললো মাথা ঝাকিয়ে।তারপর সব থেমে গেল। লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। হোমিওপ্যাথি ডাক্তার হাতের কব্জি ধরে জানিয়ে দিলেন, হার্ট অ্যাটাকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শিবানী মারা গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী চার ঘন্টা অপেক্ষা করার পর দাহ করা হলো।"

    মহীতোষ আচমকা বাড়ি ফিরে এ কি শুনলো! এতো অল্প বয়সে হার্ট এ্যাটাক? আর কোন দিন দেখা হবে না ছোট কাকিমার সঙ্গে। মহীতোষ সায়েন্স নিয়ে শহরে পড়তে গেছে। বরাবরই কুসংস্কার মুক্ত। ভুত প্রেত কোনদিনও চোখে দেখেনি। গল্পের বই ছোট বেলায় পড়েছে। ওই পর্যন্তই। তবে আজ মহীতোষকে ভাবতে হচ্ছে, অতো রাতে একা একা বেঞ্চিতে বসে পা দোলাচ্ছে যে ছোট কাকিমা, কে সে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন