“নব বৎসরে করিলাম পণ”। আজ পয়লা বৈশাখ ১৪২৮। বাঙালির সাধের হালখাতা। এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। চৈত্র শেষে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করার পর বৈশাখ এসে সামনে দাঁড়াতেই মন গেয়ে উঠলো – “আজি প্রাতে সূর্য ওঠা, সফল হলো কার”! শুভ বাংলা নববর্ষ। ... ...
বদনাম কিংবা সুনাম যাই হোক, বাঙালি নাকি খেতে পেলে শুতে চায়! পেটে দুমুঠো অন্ন পড়লেই, মেঝেতে পড়ে দে ঘুম। যাতায়াতের পথে, তখন দেওয়াল লিখন চোখে পড়তো, “বাঙালি জাগো”। কলকাতার সর্বত্র আলকাতরা দিয়ে কে বা কারা রাতের অন্ধকারে বীরত্ব দেখাতো অন্যের দেওয়াল নষ্ট করে। এটা দেখতে দেখতে লোকের চোখ জোড়া যখন পচে যাওয়ার উপক্রম, এমনি সময়ে কে কারা লুকিয়ে ক্রশ চিন্হ দিয়ে পাশেই লিখে দিল – “কাঁচা ঘুম ভাঙাবেন না “। এতো কড়চা! ... ...
স্টেশনের নাম খন্যান। শেয়ালদা-ডানকুনি কর্ড লাইন। নেহাৎই ছোট স্টেশন। এখান দিয়ে শুধু মাত্র লোকাল ট্রেন নিয়মিত ভাবে যাতায়াত করে। সেদিন এই স্টেশনে সিগন্যাল না পেয়ে আচমকাই দাঁড়িয়ে গেল দিল্লিগামী ভেসটিভিউল ট্রেন।এখন যাকে আমরা রাজধানী এক্সপ্রেস বলে ডাকি। ওই ট্রেনেই জাতীয় পুরস্কার আনতে দিল্লি যাচ্ছেন মহানায়ক। ট্রেন হঠাৎ বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে যেতে স্রেফ কৌতুহলবশত তিনি নিজের আসন ছেড়ে, কামরার দরজা খুলে, বাইরে উঁকি দিয়ে ব্যাপারটা আন্দাজ করার চেষ্টা করলেন। তখন স্টেশনের নাম খন্যান চোখে পড়ল। স্টেশনের সঙ্গে চায়ের সম্পর্ক চিরকালই বেশ নিবিড়। ... ...
সেকালে সিনেমা হলে পৌঁছে গেটের মুখে "হাউস-ফুল" বোর্ড ঝোলানো দেখে অনেকেই ভিরমি খেতেন। চোখে সর্ষেফুল দেখার মতো অবস্হা। সেই সুযোগে অনেকে টু’পাইস কামিয়ে নিতো টিকিট ব্ল্যাক করে। গেটের মুখে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় হাঁকতো - "দো কা পাঁচ, দো কা পাঁচ।" অর্থাৎ দু’টাকার টিকিট কালোবাজারীর হাত ঘুরে পাঁচ টাকা। উপায় না দেখে অনেকেই বেশি দাম দিয়ে টিকিট কিনে হলে ঢুকতেন। সঙ্গে একজন বান্ধবীও থাকতো।সিনেমা হলে ঢোকার অগ্রিম টিকিট বুকিং কাউন্টার থেকে দু'দিন আগে দেওয়া হতো। সকাল আটটা নাগাদ কাউন্টার খুলতো। দশটার মধ্যেই সব টিকিট শেষ। দারোয়ান "হাউস ফুল "বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে ঝাঁপ বন্ধ করে দিতো বুকিং কাউন্টারের। ... ...
অদ্ভুতুড়ে সব কান্ড কারখানা চোখে পড়ছে চারদিকে।এই মুহূর্তে সত্যি কারের ভুতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। হামদো-মামদোয় দেশ ছেয়ে গিয়েছে। তাহলে অরিজিনাল ভুতেরা সব গেল কোথায়? আওয়াজ উঠেছে, "খেলা হবে, খেলা হবে"। আজ বাদে কাল ভোট। এতো দিন জানতাম,ভোট-পুজো। এখন শুনছি,এটা এক ধরনের খেলা। ভোটে হারজিৎ আছে। খেলাতেও তাই। স্পোর্টিং স্পিরিট নিয়ে সবাই এখনই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একেক দিন একেক রকমের অভিযান। সবাই সংবাদপত্রে শিরোনাম হতে চায়। খেলা না শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় ভয়ঙ্কর খেলা ! ভুতের নাচ শুরু হলো বলে! ... ...
মাঘ-ফাল্গুন মধু মাস। বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। এমন দিনে মন তো উড়ুউড়ু হবেই। ঝলমলে নীল আকাশ। সঙ্গে মিঠে রোদ মাখা হিমেল হাওয়া। আজ বাদে কাল ভালাইনটেন ডে। ফেসবুকের বান্ধবী বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন একদিন বাদেই। ওইদিন বাঙালির ঘরে ঘরে সরস্বতী পুজো। শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিয়ের দিন অনেকেই লুফে নেন। বেশ একটা থ্রিল থাকে বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে। সকালে পুষ্পাঞ্জলি। সন্ধ্যায় গলায় ফুলহার। "পরো পরো মালা পরো, সাজো আমার এই পুষ্প হারে।" বর যেন সাক্ষাৎ উত্তমকুমার। ... ...
দুষ্টু সরস্বতী গেলেন কোথায়? স্কুল বছর ভর বন্ধ থাকার পরে সবে খুলছে। কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয় এখনই খুলছে না। মাধ্যমিক - উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পেছলো সেই জুন মাস পর্যন্ত। গৃহ শিক্ষকদের পৌষ মাস দীর্ঘায়িত হয়েছে। ছাত্রদের সরস্বতী পুজো নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো চিন্তা নেই। বাধ্যতামূলকভাবে স্কুল যেতে হচ্ছে না। বাড়ির পুজো অধিকাংশ বাড়িতে নিউ নর্মাল কারনে উঠে যেতে বসেছে। লেখাপড়ার দেবী কৈলাস ছেড়ে এই হাড় কাঁপানো শীতে পুজো মন্ডপে আসবেন কিনা, এখনও কনফার্ম নয়।যদিও কুমোরটুলি এই মুহূর্তে খুবই ব্যস্ত। পুজো এখন বাণিজ্য। পড়ুয়ারা রণে ভঙ্গ দিলেও, লেখাপড়ার সঙ্গে যাদের দীর্ঘদিনের আড়ি হয়ে গেছে, সেইসব নব কার্তিকরা হঠাৎ সরস্বতীর আরাধনায় মেতে উঠেছে। এখন আর বিলবই ছাপানোর দরকার ... ...
"আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে, নইলে মোদের রাজার সনে মিলবো কী স্বত্বে?" নাচ থামিয়ে সবে কৈশোরে পা দেওয়া দেবলীনা তার মা'কে জিগ্যেস করে বসলো - "আমরা যদি সবাই রাজা হয়ে থাকি, তাহলে প্রজা বলতে কাকে বোঝানো হচ্ছে? তবে যে বলা হলো, ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস মহাসমারোহে উদযাপিত!" সত্যিই তো, এ তো সঠিক প্রশ্ন! প্রজা কে? রাজারই যখন কোনো অস্তিত্ব নেই! ... ...
বোকা বাক্সর পাল্লায় পড়ে গোল্লায় গেছে বাঙালির ভদ্রতা, শিষ্টাচার। দুপুর থেকে মাঝ রাত, টিভি চলছে তো চলছেই। একটার পর একটা সিরিয়াল। একটা এপিসোড মিস করলে গল্পের খেই হারিয়ে যাবে।কাজেই, বাড়িতে লোকজনের আসা যাওয়া একরকম বন্ধ। এখন প্রায় সব বাড়িতেই একাধিক টিভি সেট। কর্তা গিন্নি, ছেলে মেয়ে আলাদা ঘর, আলাদা সেট। কোনো বিবাদ নেই। সন্ধের পর সবাই ব্যস্ত। সোপ অপেরার দুর্নিবার আকর্ষন এড়ানো কঠিন। বেশিরভাগ গল্পের কাহিনী নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাপনের চেনা ছক, খুবই পরিচিত। বিচ্ছেদ ছাড়াছাড়ি প্রেম হীনতা, আটপৌরে গল্পের করুণ পরিণতি! তাই এতো দেখার জন্যে টান। অবশ্যই শেখার কিছু আছে। সিরিয়াল অনেক নাম খুঁজে দিয়েছে। নামকরনের জন্যে যথেষ্ট। ... ...
নব বৎসরে করিলাম পণ, করিয়াছি পণ, নেবো না পণ। এই হোক দিনের বাণী। একুশ সালের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সেই একুশ অবশেষে ধরা দিল। দুনিয়া করোনা মুক্ত হয়েছে বলা যাবে না। তবে উৎকন্ঠা এই মুহূর্তে অনেকটাই কম। বহু সহ নাগরিককে আমরা গত এক বছরে হারিয়েছি। তারা আর কোনদিন ফিরে আসবে না। বহু মানুষের কাজ গিয়েছে। পরিযায়ী মানুষ আজও ছন্নছাড়া, না আছে চাল, না চুলো। সরকারের সাহায্য এসেছে। কিন্ত তা পেতে দাদা ধরতে হবে। ... ...