এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সূর্য ডোবার পালা যদি আসে, আঁধার ঘনায় শুক্লা-আকাশে

    Asok Kumar Chakrabarti লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ মার্চ ২০২১ | ১৯৪৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • সেকালে সিনেমা হলে পৌঁছে গেটের মুখে "হাউস-ফুল" বোর্ড ঝোলানো দেখে অনেকেই  ভিরমি খেতেন। চোখে সর্ষেফুল দেখার মতো অবস্হা। সেই সুযোগে অনেকে টু’পাইস কামিয়ে নিতো টিকিট ব্ল্যাক করে। গেটের মুখে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় হাঁকতো - "দো কা পাঁচ, দো কা পাঁচ।" অর্থাৎ দু’টাকার টিকিট কালোবাজারীর হাত ঘুরে পাঁচ টাকা। উপায় না দেখে অনেকেই বেশি দাম দিয়ে টিকিট কিনে হলে ঢুকতেন। সঙ্গে একজন বান্ধবীও থাকতো।

    সিনেমা হলে ঢোকার অগ্রিম টিকিট বুকিং কাউন্টার থেকে দু'দিন আগে দেওয়া হতো। সকাল আটটা নাগাদ কাউন্টার খুলতো। দশটার মধ্যেই সব টিকিট শেষ। দারোয়ান "হাউস ফুল" বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে ঝাঁপ বন্ধ করে দিতো বুকিং কাউন্টারের। আর তখনই হাতে গোছা ভর্তি টিকিট নিয়ে মাঠে নেমে পড়তো কালোবাজারীর উঠতি মস্তান ছেলে-ছোকরারা। পুলিশের কিছুই করনীয় নেই। তাদের আরো অনেক কাজ আছে।



    বছর পঞ্চাশেক আগের কথা। লেক টাউন এলাকায় একটা সিনেমা হলে রাজ কাপুরের মার মার, কাট কাট হিন্দি ছবি "ববি" রিলিজ করেছে। নবাগতা ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গে নবীন নায়ক ঋষি কাপুর। হলের বাইরে সে কি ভিড়, কি ভিড়! হলের কাছে গিয়ে কেউ দাঁড়ালে পাবলিক ছুটে এসে জিজ্ঞেস করতো, "দাদা, এক্সট্রা আছে নাকি?" কালোবাজারীদের পোয়া বারো। দো কা দশ, দো কা দশ। সেই সময় অগ্রিম টিকিটের লাইনে হাতাহাতি, ঘুষোঘুষিতে বাপি জানা নামে বছর আঠারোর এক তরুণ সাত সকালে খুন হল। বাড়ি দমদমের কাজীপাড়ায়। তখন টিভি ছিল না। প্রভাতী সংবাদপত্রে ওই খুনের খবরটা দেখে "ববি" দেখার চাহিদা আরও বেড়ে গেল। হলের বাইরে লম্বা লাইন বহু দিন ধরে লোকের নজর কেড়েছে।

    সেদিন আজ ইতিহাস! এখন টিভি সিরিয়াল ছেড়ে লোককে হলমুখী করা শিবেরও অসাধ্য! প্রতি শুক্রবার সিনেমা হলে নতুন ছবি মুক্তি পেত। লোকে অপেক্ষায় থাকতো সুচিত্রা-উত্তমের নতুন ছবি কবে রিলিজ করছে তা জানার জন্যে। “সিনেমা জগৎ”, “জলসা” নামে একাধিক ফিল্মি-দুনিয়ার খবর সমৃদ্ধ ম্যাগাজিন সংবাদপত্রের হকার লোকের বাড়িতে নিয়মিত পৌঁছে দিত সেই সময়। “নব কল্লোল”, “উল্টোরথ” বনেদি বাড়ির বৈঠকখানায় স্ট্যাটাস-সিম্বল ছিল এই সেদিনও। হাতিবাগান এলাকায় থিয়েটার হলগুলোতে ফিল্ম স্টার দেখা যেতো নাটক দেখতে গিয়ে। কে না এসেছেন? এখন সেটাও ইতিহাস!

    সিনেমা, থিয়েটার নিয়ে দর্শকদের আজ আর ছিটে ফোঁটাও আগ্রহ নেই। নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অধিকাংশই সিরিয়ালের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। যদিও বয়স্কদের সবাইকে আর সেভাবে দেখাই যাচ্ছে না। স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনে দু’চার জনকে টিভি সিরিয়ালে সুযোগ দেওয়া হয় কোথাও-কোথাও।

    সিনেমা থিয়েটার কদর হারিয়েছে টিভি-র জন্যে। ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল গত কয়েক বছর স্রেফ মাছি তাড়িয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে যেটুকু উন্মাদনা। সেখানেও  প্রধান আকর্ষন মুম্বাই তারকাদের উপস্থিতি। আমন্ত্রণ পত্র পাওয়ার জন্যে সাধারণ মানুষের সেরকম আকুলতা নেই আগের মত। লাইভ টেলিকাস্ট মানুষকে অলস করে দিয়েছে। বাড়ির বাইরে বেরুনোর ব্যাপারে সব মানুষেরই প্রবল অনীহা। যানবাহন সমস্যার পাশাপাশি অর্থনৈতিক দূরবস্থা  ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর লোক নেই। যাই হোক আজকের দিনটা না হয় কাটল। কাল কি হবে?

    এই বসন্ত কালটা খোলা মাঠে ফাংশন করার জন্যে উপযুক্ত সময়। ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। পাড়া গাঁয়ে এখন আর যাত্রার আসর বসে না কলকাতা থেকে নামকরা দল নিয়ে গিয়ে। এখন না হয় ভোট পর্ব চলছে। গেল সালটা পুরোটাই করোনা খেয়েছে। লক ডাউন আর লক ডাউন। চাষবাস শিকেয় উঠেছে। আমফানের ঝড় দুই ২৪ পরগনা তছনচ করে দিয়েছে, গেল বছর। মানুষ এখন কিল খেয়ে কিল হজম করতে অভ্যস্ত। সাংস্কৃতিক-চর্চা অনেকের কাছেই স্রেফ বিলাসিতা!

    রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চে তখন নিয়মিত ভাবে অনুষ্ঠান হত। দর্শক উৎসুক হয়ে খবরের কাগজের পাতা ওলটাতো যদি নতুন ধরনের কোনো অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। বুকিং কাউন্টারের সামনে লাইনের দৈর্ঘ্য দেখে লোকে আন্দাজ করে নিত নিশ্চয়ই ভালো কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। সোজা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তো লাইনের পিছনে। টিকিট পাবো তো?

    সত্যিই সবাই সেই অনুষ্ঠানের‌ টিকিট পান নি। রবিবারের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপনেই রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহ কানায় কানায় পূর্ণ। “প্রেমের কবিতা - প্রেমের গান” - হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও আরতি মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে প্রেম নিয়ে সরস আলোচনা - সন্তোষ কুমার ঘোষ এবং সমরেশ বসু। প্রেমের কবিতা আবৃত্তি - গৌরী ঘোষ, পার্থ ঘোষ ও প্রদীপ ঘোষ। আর কি চাই? দর্শক আছড়ে পড়লো রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে।



    হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মঞ্চে এসে দাড়াতেই দর্শকদের হাততালিতে দেওয়ালে ফাটল ধরার উপক্রম। কিংবদন্তী শিল্পী প্রথমেই গান ধরলেন, "ও আকাশ সোনা সোনা, এ মাটি সবুজ সবুজ"। গান থামল। প্রেক্ষাগৃহে তখন পিন পড়ার শব্দ কানে আসছে। একটুখানি থেমে ফের সেই সোনালী দিনের কন্ঠ "নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়"। এই ভাবে গুনে গুনে একটুও না ক্লান্ত হয়ে সাত খানি গান দর্শকদের উদ্দেশ্যে পরিবেশন করে হারমোনিয়ামের বেলো টেনে যেই না চেয়ার টেনে উঠতে যাবেন, হল থেকে আওয়াজ উঠলো, "আর একটা, আর একটা"। এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তরুণ আবৃত্তিকার সোমনাথ। সোমনাথ বন্দোপাধ্যায় ছুটে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে বললো - "জ্যেঠু, তোমাকে সহজে ছাড়ছি না"! সকলের অনুরোধ মেনে নিয়ে শিল্পী ফের হারমোনিয়ামের বেলো টেনে ধরলেন সেই মন ছুঁয়ে যাওয়া অসাধারন গানটি, "সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক, বেশ তো, গোধূলির রঙে হবে এ ধরণী স্বপ্নের দেশ তো"। আবার তুমুল হাততালি।


    আরতি মুখোপাধ্যায়


    আরতি মুখোপাধ্যায়


    হেমন্ত মুখোপাধ্যায়


    মুনমুন সেন


    মুনমুন সেন সম্বর্ধনা দিচ্ছেন অমিতাভ চৌধুরীকে

    আলোচনা সহজেই জমে উঠেছিল সন্তোষ কুমার ঘোষের সরস বাচন ভঙ্গি এবং খোলামেলা প্রেমের সম্পর্ক, দৈনন্দিন জীবনের অকপট গার্হস্থ্য আচরন বিধির কথায়। পাল্লা দিয়ে পরের বক্তা সমরেশ বসু আসর জমিয়ে দর্শকদের সবটুকু ভালোবাসা আদায় করে নিলেন অতি সহজেই। বিবর, প্রজাপতির লেখককে কাছে পেয়ে সে কি উচ্ছ্বাস! সমরেশ বসু সচরাচর লেখা ফেলে বাড়ির বাইরে বেরোন না।

    আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। সেদিন সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। পাশাপাশি কবিতাও শুনিয়েছেন তাঁর অননুকরনীয় গলায়। পার্থ ঘোষ ও গৌরী ঘোষ অবিস্মরনীয়! 



    দর্শক ক্রমেই অধৈর্য হয়ে উঠছিলেন। আরতি মুখোপাধ্যায় কোথায়?  ঘড়িতে সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছে। অনেক দূরের দর্শক আরতির গান না শুনলে  ফিরতে নারাজ। অনেকে আবার স্রেফ আরতির জন্যে টিকিট কেটেছেন। ওদিকে পরিচালক সাংঘাতিক টেনশনে এ-সি হলে বসে ঘামছেন ! অবশেষে তিনি এলেন এবং প্রথম গানেই মন জয় করলেন। এক এবং অদ্বিতীয়া আরতি মুখোপাধ্যায়!

    "এক বৈশাখে দেখা হলো দুজনায়, জৈষ্ঠ্যতে হলো পরিচয়, আসছে আষাঢ় মাস, মন তাই ভাবছে কি হয়, কি হয়‌, কি জানি কি হয়" - গোটা রবীন্দ্র সদন যেন দুলে উঠল। মিউজিসিয়ানদের ইশারায় কিছু একটা ইঙ্গিত দিয়ে ফের ধরলেন, "না বলে এসেছি, তা বলে ভেবো না, না বলে বিদায় নেব, চলে যাই যদি, যেন হই নদী, সাগরে হারিয়ে যাবো"। দর্শকদের নার্ভ বুঝে নিয়েছেন দু’খানা গান থামিয়ে। ফের ধরলেন, "বন্য বন্য এই অরণ্য ভালো"। হাজার দর্শকের দু'হাজার হাতের তালি শিল্পীকে সম্মোহিত করে ফেললো নিমেষেই। গলা চড়িয়ে ফের শুরু করলেন, "তখন তোমার একুশ বছর বোধহয়, আমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়"। গোনা হয় নি। তবে দর্শকদের ষোল আনার জায়গায় আঠারো আনা পুষিয়ে দিয়ে মঞ্চ ছেড়েছেন আমাদের এই শহরেরই মেয়ে অনন্যা আরতি!



    অমিতাভ চৌধুরী "পদ্মশ্রী" খেতাব পেলেন সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের জন্যে। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ অমিতাভ চৌধুরী শান্তি নিকেতনের কাজ ছেড়ে দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় বার্তাসম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। রাতারাতি খবরের কাগজের গেট-আপটাই  বদলে গেলো। টিউব রেল হয়ে গেলো পাতাল রেল। এখন অবশ্য মেট্রো । টেস্টটিউব বেবি দেখা দিলো "নল-জাতক" হিসেবে। ভারী বর্ষণে কলকাতার পথ-ঘাট জল থৈ থৈ। প্রথম পাতায় বড় ছবি, নীচে ক্যাপশন - "নদীর নাম সাদার্ন এভিনিউ"! এই রকম নিত্য নতুন চমক।

    অমিতাভ চৌধুরীর জন-সংযোগ ঈর্ষা করার মত। কে না তাকে চেনেন? উল্টো দিকে, তিনি চেনেন না এমন লোক কলকাতা শহরে আছে বলে মনে হয় না। সাংবাদিক পরিচয় ছাড়াও তার অন্য একাধিক পরিচয় ছিল। ছড়া লেখায় তার জুড়ি মেলা ভার। রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে তাঁর অনেকগুলো গ্রন্হ-গবেষকদের কাছে খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও তিনি ছিলেন “আড্ডাবাজ"। রবিবারের সকালটা তাঁর রাণীকুঠীর তিন তলার ফ্ল্যাটের দরজা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকতো। বিশিষ্টজনদের মধ্যে অভিনেতা বসন্ত চৌধুরী, সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্ত নিয়মিত আডডা দিতে আসতেন। মেয়র প্রশান্ত শূর ওই বাড়ির একতলায় থাকতেন। তাঁর সঙ্গেও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। একেবারে নতুনদের তিনি সহজেই আপন করে নিতেন। তাঁর স্ত্রী সুনন্দা চৌধুরী অতিথিদের চায়ের সঙ্গে “টা” দিতেন নিজের হাতে তৈরি করে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও যারা তাঁর সঙ্গ ছেড়ে যেতে চাইতেন না, তাঁরা লাঞ্চ পর্যন্ত সেরে গেছেন বহুদিন।

    এ হেন মজার মানুষ যখন দিল্লি থেকে "পদ্মশ্রী" খেতাব নিয়ে  ফিরে এলেন, তাঁর প্রিয় জনেরা আব্দার জানালেন, "কিছুটা সময় দিতে হবে"। স্বয়ং অন্নদাশঙ্কর রায় ও "স্নেহের অমিতাভ"কে একটি চিঠি লিখে একই অনুরোধ জানালেন। তিনি গুণমুগ্ধদের আব্দার রাখতে চেয়ে আড়াই ঘন্টা সময় নির্দিষ্ট করলেন ওয়ার্কিং ডে-তে। কেননা, ছুটির দিনে শুধুমাত্র বাড়ির বৈঠকখানায়  আডডা দিতে আসা ভক্তদের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন সারাবছরই। সেখানে কোনো নড় চড় হবে না।

    তারিখটা ছিল ৬মে, ১৯৮৩, রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে "অমিতাভ চৌধুরীর সঙ্গে আড়াই ঘন্টা"।  রবিবারের আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি মাত্র বিজ্ঞাপন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন মুনমুন সেন। সিনেমা জগৎ, শিল্পী মহল, সাহিত্যিকদের প্রায় সবাই বিজ্ঞাপন আলো করে রয়েছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, অশোকতরু বন্দোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, বাণী ঠাকুর, উৎপলেন্দু চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা বিকাশ রায়, রবি ঘোষ, অনুপ কুমার, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সাহিত্যিক মনোজ বসু, সন্তোষ কুমার ঘোষ, শঙ্করলাল ভট্টাচার্য, পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, প্রদীপ ঘোষ আরও অনেক নাম। সংস্কৃতি জগতের কেউই বাদ ছিলেন না নামের তালিকায়। মহানায়িকা সুচিত্রা সেন অমিতাভ চৌধুরীকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। কন্যা মুনমুন সেন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়ে এক কথায় রাজি।

    এদিন মুনমুন সেন মঞ্চে এসেই আব্দারের সুরে বললেন, "অমিতাভদা, আমাকে নিয়ে কোনও ছড়া না বললে আমি কিন্ত  অনুষ্ঠান শুরু হতে দেবো না। এটা আমার রিকোয়েস্ট।" অনুরোধ আসা মাত্র হঠাৎ ছড়া তৈরি করে শুনিয়ে দিলেন - "এক চাঁদে রক্ষে নেই, এ যে ডবল মুন, মায়ের মতোই রূপবতী, মায়ের মতোই গুণ"।

    সাহিত্যিক-সাংবাদিক সন্তোষ কুমার ঘোষ দেরি করে মঞ্চে ঢুকে দর্শকদের উদ্দেশ্যে মজা করে বললেন, "লোকে বলাবলি করছে - ওদিকে পুলিশ লাঠিচার্জ করছে, রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে ভুলেও যাবেন না। ওখানে নাকি মুনমুন সেন এসেছে!"

    অভিনেতা অনুপকুমার মঞ্চে উঠে বললেন, "রবিকে এখনই মঞ্চে তুলবেন না। এখন সবে রাত নটা। রবি'র উদয় হতে ভোর হয়ে যাবে"। বন্ধু অভিনেতা রবি ঘোষ অনুপকুমারের রসিকতা উপভোগ করলেন।

    এর পর রবীন্দ্রসংগীত। প্রত্যেক শিল্পী গাইলেন দুখানা করে। ওদিকে দিকপাল বাচিক-শিল্পীরাও আবৃত্তি ও পাঠ করলেন অমিতাভ চৌধুরীর ইচ্ছে অনুযায়ী।

    আড়াই ঘন্টা দেখতে দেখতে কাবার। তখনো লোক-সঙ্গীত শিল্পী উৎপলেন্দু চৌধুরী মঞ্চে বসে। অমিতাভ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নির্মলেন্দু চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্র উৎপলেন্দু চৌধুরীর গান দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হলো। পরদিন কাগজের হেডিং ছিল, "আড়াই এর বদলে পৌনে তিন”।

    দিন যায়। কথা থাকে। ওই পৌনে তিন ঘন্টা যে কোথা দিয়ে কিভাবে কেটে গেল, আজও কেউ তা আঁচ করতে পারছেন না।

    শুধু আফসোস একটাই, প্রাণচঞ্চল অমিতাভ চৌধুরীর সঙ্গে রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে সেদিন যেসব উজ্জ্বল নক্ষত্র হাসি, মজা, গানে সোনালী মুহূর্ত রচনা করে ছিলেন, মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে  বাদ দিলে, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বেশির ভাগকেই আমরা হারিয়েছি!


    অমিতাভ চৌধুরী
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন