এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শুভ বিবাহে হাওয়া বদল, মালা বদলে পালা বদল!

    Asok Kumar Chakrabarti লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ মার্চ ২০২১ | ১২২৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)


  • মাঘ-ফাল্গুন মধু মাস। বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। এমন দিনে মন তো উড়ুউড়ু হবেই। ঝলমলে নীল আকাশ। সঙ্গে মিঠে রোদ মাখা হিমেল হাওয়া। আজ বাদে কাল ভালাইনটেন ডে। ফেসবুকের বান্ধবী বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন একদিন বাদেই। ওইদিন বাঙালির ঘরে ঘরে সরস্বতী পুজো। শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিয়ের দিন অনেকেই লুফে নেন। বেশ একটা থ্রিল থাকে বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে। সকালে পুষ্পাঞ্জলি। সন্ধ্যায় গলায় ফুলহার। "পরো পরো মালা পরো, সাজো আমার এই পুষ্প হারে।" বর যেন সাক্ষাৎ উত্তমকুমার। এদিন "দিল তো পাগল হ্যায়" । লাখ কথা নয়, এখন স্রেফ এক দেখায় বিয়ে। এ যেন এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। নো গার্জেন, নট কিচ্ছু! মিয়া-বিবি রাজী, তো কি করবে কাজী? "যদিদং হৃদয়ং মম, তদিদং হৃদয়ং তব"। মন্ত্র উচ্চারণ ছাড়াই দিব্যি বিয়ে। হলোই বা কলম-বিয়া। কাগজের বৌয়ের হলমার্ক? সিন্দুর নয়, সাহস। দাপট দেখালেই দুনিয়া বশ! মিস থেকে মিসেস। ছোট খাটো একটা রিসেপশন অনুষ্ঠান। সবাইকে খুশি করার প্রয়োজন কি? যাদের নিয়ে রোজ ওঠা-বসা, শুধু তাদের বললেই হলো। এই নিউ নর্মাল পরিস্থিতিতে দোহাই খুঁজতে অভিধান দেখতে হয় না। ‌

    অথচ ছেলে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে অভিভাবকদের একদিন ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। প্রবাদ আছে, লাখ কথা ছাড়া ছেলে-মেয়ের নাকি বিয়েই হয় না। তখন ঘটকালি সমাজে একটা পেশা ছিল। ঘটক মশাই বিবাহ -যোগ্য ছেলে মেয়েদের খোঁজ খবর সংগ্রহ করতেন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে। সেকালের বাংলা সিনেমা "নায়িকা সংবাদ" মনে পড়ে? নৃপতি চাটুজ্জে ঘটকের চরিত্রে কি দারুন অভিনয় করেছেন। দর্শক আজও তাঁকে মনে রেখেছেন। ঘটকালিতে সামান্য পারিশ্রমিক। অমানুষিক খাটাখাটুনি। উপরি পাওনা নেই বললেই চলে। হেনস্থা অনেকটা গা সহা হয়ে গিয়েছে এই পেশার মানুষ জনদের । পেশাটি পুরুষদেরই একচেটিয়া। তবে কোথাও কোথাও মহিলারাও এই ঘটকালি পেশায় নাম লিখিয়েছেন। বাগিয়ে নিতে জানলে রোজগার মোটামুটি ভালোই। কাজ মিটে গেলে মোটা ঘটক-বিদায়। একটা সূত্র থেকে আরেকটা নতুন যোগাযোগ হয়ে যায়। তবে এই পেশার মানুষের সামনে এখন বিপদের হাতছানি। বিয়ে না টিকলে বা গোড়ায় গলদ দেখা দিলে ঘটকের দোষ! " -কেন তুমি ভালো করে খোঁজ খবর নাওনি?"। দিনকাল পাল্টেছে। ভরসা চলে গিয়েছে তাই ঘটক সম্প্রদায়ের ওপর থেকে। এখন সবাই ছুটছে কাগজের অফিসে। সবদিক জেনে-বুঝে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বিয়ের জন্যে। ফলে, ঘটক সম্প্রদায় বেশিরভাগই অন্য পেশায় হাত লাগিয়েছেন।

    মালা বদলে যতই পালা বদল ঘটুক, বিয়ের কার্ড ছাড়া আজ ও বিয়ে অসম্ভব। "শুভ বিবাহ" লেখা চিঠি একালে "স্ট্যাটাস সিম্বল"। দু'হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা শ। অবস্থা বোঝাতে আরো দামী কার্ড ছাপাতে দেওয়া হয় এই নিউ নর্মাল পরিস্থিতিতেও। তবে হোয়াটসঅ্যাপ থাকতে কেউ দূরে নেমন্তন্ন করতে ছোটে না। ফোন কল যথেষ্ট। বিয়ে বা বৌভাত বাড়িতে লোক জনের সংখা এখন আগের তুলনায় অনেক কম। ক্যাটারিং ব্যবসা তাই লাটে ওঠার জোগাড়। নিজের আয়োজনে অতিথি আপ্যায়ন। খরচ বাঁচাতে অনেকেই এখন এই পথে হাঁটছেন। খেয়ে এবং খাইয়ে তৃপ্তি ! শেষ পাতে বাংলা পানের বদলে হজমোলা বা পান মশলা।

    উভয় তরফেই দেনা-পাওনা নিয়ে এখন সামনা সামনি কোনো কথা হয় না। সবকিছুই গায়ে গায়ে। মেয়ে পছন্দ হলে কোনো কথা হবে না। না চাইতেই অনেকে প্রায় সব কিছুই উপহার হিসেবে মেয়ের সঙ্গে লরি বোঝাই করে পাঠিয়ে দেন। তবে মানুষ চেনা সত্যি বড় কঠিন। যথা সর্বস্ব দিলেও চাহিদা থেকেই যায়। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মর্মান্তিক অত্যাচারে, দুর্ঘটনায় কত বিয়ের কনে কে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হয়েছে, সে কথা বোধহয় নতুন করে না বললেও চলে।

    এই বিয়ের মরশুমে বউবাজারে গয়না পাড়ায় সোনার দোকানগুলো মাছি তাড়াচ্ছে, এমন নয়। সোনার ভরি অনেক দিন ধরেই পঞ্চাশ হাজারের আশপাশে। অবস্থা ভালো যাদের, তাদের জন্য দোকানে যথেষ্ট সমাদর। তবে সাধারণ মানুষের মুখ দেখলে শো রুমের লোকেরা সহজেই চিনে ফেলে। কে ক্রেতা আর কে শুধু ভিড়ের সুযোগে হাত সাফাইয়ের উদ্দেশ্যে এসেছে। এটা চিনতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। নজর দারি বেড়ে যায়। এসব খদ্দের যেন দোকান ছেড়ে গেলে বাঁচি। পাকা কলার কাঁদি অনেক দোকানে মজুত থাকে। এক বনেদি সোনার দোকানে কলা খাইয়ে এক মহিলার শরীর থেকে হাত সাফাইয়ে গিলে ফেলা কানের দুল উদ্ধার করা হয় বলে কাগজের পাতায় সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে। রেডিওতে সংবাদ-বিচিত্রা-য় ঠাঁই পাওয়ার মতো এই খবর কে না শুনেছে? ঠগিনীরা তাহলে হারিয়ে যায়নি। নিকটেই আছে!

    বেনারসী ছাড়া মেয়েদের বিয়েই হয় না! কলেজ স্ট্রীট অঞ্চলে বনেদি বেনারসী হাউসগুলো লক ডাউন পরবর্তী পরিস্থিতিতে ফের ঝাঁপ খুলে বসেছে। দাম নিয়ে কোন ও কথা হবে না। পাঁচ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার। বেনারসীর বিকল্প খুঁজতে কেউ লেহেঙ্গা খুঁজছেন। ঘাঘরার চল ও নাকি ইদানীং খুবই মন-পসন্দ্! বিয়ে এবং বৌভাত বা রিসেপশন - দুই পর্বে আলাদা পোশাক। পৃথক সাজগোজ। এজন্যই বিয়ের কনের এতো ব্যস্ততা। মার্কেটিংয়ের যেন শেষ নেই। নিউ নর্মাল বলে কোন জিনিসটা কম আছে?

    বিয়ের কনের রূপ লাবণ্য ফুটে ওঠে তার মেক-আপে। শহরে এবং শহরতলিতে এই মুহূর্তে অগুনতি বিউটি পার্লার। বিশেষ করে, যেসব বাড়ি বিয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়, তার কাছাকাছি কনে-সাজানোর দোকানে এইসব লগনসার দিন গুলোয় বাড়তি কর্মী নিয়োগ করা হয়। রেট বলে কিছু নেই। যার কাছ থেকে যেমন পাওয়া যায়। টাকার অঙ্ক শুনে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থায় পড়লেও, লাজলজ্জা বিসর্জন দেওয়া যাবেনা। তিন হাজার থেকে তিরিশ হাজার টাকা ফি। বিয়ে তো লোকে একবারই করে! অতো হিসেবে কাজ কি?

    বিয়ে বা বৌভাত অনুষ্ঠান করার জন্য বাড়ি ভাড়া নেওয়ার রেওয়াজ বহু দিনের। নিজেদের এক চিলতে ফ্ল্যাটে একসঙ্গে এতো অতিথি পা রাখবেন কিভাবে? অগত্যা বেশি পয়সা গুণে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার চল। কলকাতার মতো শহরে এক দিন একটি বাড়ি নেওয়া মানে নগদ এক লাখ, প্রতি চব্বিশ ঘন্টা। জায়গা বুঝে ভাড়া। তবে চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা এখন কমন রেট। তাও আগে থেকে না বলে রাখলে পছন্দ মতো জায়গায় বাড়ি পাওয়া এক রকম অসম্ভব। আজকাল ক্লাবের কমিউনিটি হলগুলো অবশ্য কিছুটা কম পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে। পনের -বিশ হাজার টাকা দিলেই কাজটা মোটামুটি নির্বিঘ্নে সেরে ফেলা যায়। ডেকরেশন বা ক্যাটারিং খরচ স্বতন্ত্র। অনেকেই এই পথে হাঁটছেন।

    বিয়ে হবে অথচ সানাই বাজবে না, তা কখনো হয়? কলেজ স্ট্রীট- হ্যারিসন রোড বরাবর সানাইয়ের দোকান-ঘর। নামকরা ওস্তাদ। সবাই নাকি বিসমিল্লা খানের বংশধর। বড় বড় সাইন বোর্ড। এখানেও রেট বলে কিছু নেই। যার কাছ থেকে যেমন পাওয়া যায়। সকাল থেকে মাঝ রাত। দশ হাজার দিয়ে শুরু। পঁচিশ -তিরিশ হাজার দেওয়ার লোক এই শহরে এখন আকছার। বাজী পুড়িয়ে, ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, এমন বাঙালির সন্ধান নাগালেই আছে। এসব দৃশ্য দেখেও আনন্দ। শুনেও সুখ! বিয়ের ব্যাপারে সাবেকীয়ানার মায়া কাটানো বেশ কঠিন। অবাঙালিদেরই কি শুধু অর্থের প্রাচুর্য? কে বলেছে? লড়ে যেতে প্রস্তুত নব-নায়করা। বিয়ে তো লোকে একবারই করে !

    বিয়ের ফুল ফুটেছে যখন,তখন রজনীগন্ধার খোঁজ তো নিতেই হবে। কোলাঘাট-মেচেদা ফুলের ব্যাপারে আজো একচেটিয়া ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রজনীগন্ধার খোঁজ নিতে কোলাঘাট যাওয়ার দরকার নেই। হাওড়া ফুলের বাজার সারাবছর তৈরি। বিয়ের মরসুম ছাড়াও সারা বছর ফুলের চাহিদা যথেষ্ট। স্রেফ ফুল চাষ করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন এখন। বাড়ি ঘর হয়েছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। এমন কি, বিদেশেও ফুল রপ্তানির সুযোগ খুঁজে পেয়েছেন। একেকটা বিয়ের লগনসায় একজোড়া রজনীগন্ধার মালা জোগাড় করতে পারা, বাঘের দুধ সংগ্রহ করার মতোই দুঃসাধ্য কাজ। আর দাম? পাইকারি হারে যেদিন বর-কনের মাথায় টোপর ওঠে, সেদিন এক জোড়া মালা নগদ পাঁচ হাজার টাকায় যদি পান, নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন! মালা বদলে যতই পালা বদল ঘটে থাকুক, রজনীগন্ধার সৌরভ না ছড়ালে সে বিয়ে, বিয়েই নয়! ফুলশয্যার রাতেও, "রজনীগন্ধা তোমাকে চাই"।

    বিয়ের আসরে সবার আগে যার খোঁজ পড়ে, তিনি হলেন ম্যারেজ রেজিষ্টার। অগ্নি সাক্ষী করে বিয়ের পাশাপাশি আইনের সাহায্য নিতে হবে সবাইকেই। তাই ম্যারেজ রেজিষ্টারকে আমন্ত্রণ জানানো প্রয়োজন। ওইদিন যদি বিয়ের উৎসব চলে, ম্যারেজ রেজিষ্টারকে আগে থেকে না বলে রাখলে, পাওয়া খুবই কঠিন। রেজিষ্টারের চাপ থাকে অসম্ভব। বেশি পয়সার দরকার নেই। সরকারি রেট যৎসামান্য। তবে ম্যারেজ রেজিষ্টার তাঁর যাতায়াত খরচ দাবি করতেই পারেন। অনেকেই খুশি মনে রেজিষ্টার সাহেবকে উপহার সামগ্র ও দেন। বিনিময়ে দুটির জায়গায় চারটি কপি সার্টিফিকেট মেলে, সংরক্ষণ উদ্দেশ্যে।

    বিয়ে মানেই পুজো-অর্চনা। "প্রজাপতি- ঋষি, অগ্নির দেবতা, গায়ত্রী ছন্দ-"।বেল কাঠ, গাওয়া ঘি, কুলো,খই,ফুল বেল পাতা, কনের মুখ আড়াল করার জন্যে বড়সাইজের পান পাতা, হোম-দানী, ছাওনি নাড়ার ফুল আরও কত কি! পুরোহিত মশাইয়ের লম্বা ফর্দ। দশকর্ম দোকান গুলোতে শুধু বলতে হবে, মেয়ের বিয়ে না ছেলের। ওখানেই সব রকমের ব্যবস্থা একদম রেডি। শুধু হাজার খানেক টাকার বিল মেটালেই ঝামেলা খতম! মেয়ের বাড়ির পুরোহিত মশাই শুধু পাত্রী সম্প্রদান পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। সিন্দুর-দান পর্ব, কুসুম ডিকা, গাঁট -ছড়া বন্ধন ইত্যাদি দ্বিতীয় পর্বের কাজ সামলাতে বর- কর্তা সঙ্গে করে পুরোহিত নিয়ে আসেন। সেটাই প্রথা। ওই পুরোহিতের দক্ষিনা মেটাবেন স্বয়ং বর-কর্তা।

    হোম যজ্ঞ মিটে গেলে বাসর-ঘর। বাঙালির বিয়েতে বাসর ঘর অনেকটা বিতর্ক সভার ওপেন-ফোরাম। হাসি ঠাট্টা, ইয়ার্কি- ফাজলামো কিছুই বাদ নেই। অভিভাবকদের নো এন্ট্রি ! বরযাত্রীর সঙ্গে আসা পাত্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা গান গেয়ে আসর মাতাতেন। -"ও চাঁদ তুমি সামলে রেখো জোৎস্নাকে"-। বাসরে উপস্থিত স্বয়ং যেন মান্না দে। পাত্রীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী স্বপ্না হাসলে গালে টোল পড়ে। তাই দেখে পাত্র -সঙ্গী মিহির গান থামিয়ে এক গ্লাস জল চেয়ে বসলো স্বপ্নাকে। জল এল সঙ্গে সঙ্গে। যাকে বলে, লাভ এট ফার্স্ট সাইট! অপর বন্ধু ফাল্গুনী জল কোন দিকে গড়াচ্ছে বুঝতে দেরি করেনি। অনুমান সত্যি হলো! ঠিক ছ’ মাসেই দুধ জমে ক্ষীর! "শুভ বিবাহ" লেখা ছাপানো চিঠি হাতে মিহির এল বন্ধুদের বাড়িতে। সেই রাতে বাসরে দেখা স্বপ্নাকে সাত পাকে বাঁধতে চলেছে বাবা মায়ের সম্মতি নিয়েই। প্রজাপতির কি মহিমা!



    বিয়েতে ছাদনাতলায় অন্য মজা। ছড়ার ফুলঝুরি ওড়ে। কানে আঙ্গুল দিতে হয় কেঠো-মেঠো-জোলো রসিকতার দাপটে। সেই সেলুন-কাকু এখন বিরল প্রজাতির প্রাণীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন। অথচ এই ছাদনাতলায় কনেকে পিড়িতে বসিয়ে বর বড় না কনে বড় প্রতিযোগিতা চলে। তারপর মাথার ওপর দিয়ে ছাওনি নাড়া ফুল ছোঁড়াছুঁড়ি। সঙ্গে রসালো ছড়া বর্ষনে কান ঝালাপালা। নিয়ম মেনেই অনুষ্ঠান হয় কোথাও কোথাও। সনাতনী প্রথা মানতে কেউই আপত্তি করেন না। অজুহাত তো ওই একটাই, বিয়ে তো বারবার হয় না!

    কনকান্জলি অনুষ্ঠানটি বড়ই হাস্যকর। "- এত দিন যা খেয়েছি, তা ফেরৎ দিয়ে গেলাম।" মুঠো ভর্তি চাল তিন বার ছুঁড়ে দিলে আঁচল ভরে মা মেয়ের ঋণ শোধ বুঝে নিয়ে সেই মুহূর্তে ভেতরে ঢুকে যাবেন। আর মেয়ের মুখ দেখবেন না। এই ব্যবস্থাই চলে আসছে।



    এই একুশ সাল অনেক কিছুই উল্টে পাল্টে দিয়েছে। উপহার দেওয়ার চল কিন্তু দিব্যি চলছে এবং চলবে। সামাজিকতা রক্ষার দায় পিতৃ-মাতৃ দায়ের মতোই কঠিন। না চাইলেও মানতে হবে। এই করোনা-উত্তীর্ণ সময়ে, নিউ নর্মাল মেনে নিয়ে শুভ বিবাহ অনুষ্ঠান হচ্ছে ঠিকই। তবে বিয়ের পর সাধের হনিমুনে যাওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছেন অনেকেই। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর লাল বাতি জ্বলে গিয়েছে কবেই। কেউ কোপাচ্ছেন মাটি, কেউ বেচছেন শাড়ি! অদৃষ্টের কি পরিহাস!

    বিয়ের জন্যে এই যে এতো খরচ-খরচা হয়, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে এবং থাকবে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জহরলাল নেহেরু বিবাহ উৎসবের আয়োজন নিয়ে সুন্দর একটি রচনা লিখে গিয়েছেন। তাঁর মতে, বিবাহ উৎসব পারিবারিক মিলন মেলা! পয়সার বিচারের উর্দ্ধে। বহুদিন বাদে প্রিয় জনকে কাছে পায়। দেখা সাক্ষাৎ হয়। এই মুহূর্তে সেই কথাটাই মনে রাখতে হবে সকলকে।

    দেখতে দেখতে আমাদের এই পৃথিবীটা কত পুরোনো হয়ে গেল! তবু মানুষের জন্ম, বেঁচে থাকা, সুখ-দুঃখ আজ ও কি বিপুল রহস্যময়!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন