সেদিন ছিল বুধবার। অনান্য দিনের মত বুধবারও স্কুল থেকে ফিরে লাঞ্চ খাওয়ার পর ফুটবল খেলতে যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখি আমার বন্ধু রিজু দারিয়ে আছে। দুজনে সাইকেল নিয়ে যাছিলাম। ফুটবল মাঠের গেটের কাছে দেখি চারটি কুকুর দাড়িয়ে আছে। চারটি কুকুরের মধ্যে দুটোর রঙ কালো এবং স্বাস্থ্যবান। আর দুটো ছিল মোটামুটি গেরুয়া রঙের হবে, মানে--যেগুলো সাধারনত রাস্তায় আমাদের চোখে পড়ে। তবে আমার চোখে সব সময় পড়ে, কারন আমি খুব ভয় পাই রাস্তার কুকুর দেখলে। আর আমার মা বলে ভয়ের কিছু নেই। ব্রেভ হও। কুকুরকে কিছু না বললে সেও কিছু নাকি বলে না। সবই তো শুনি কিন্তু যেই রাস্তায় দেখি, সেই একই ভয় এসে যায়। এই রকম অনেক বার হয়েছে। কখনো সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি, অনেক কুকুর দেখে বাড়ি ফিরে গেছি, সাইক্লিং আর হয়্নি। আর আমাদের কেম্পাসে মনে হয় একটু বেশি কুকুর আছে। হস্টেলে যে সব দাদা দিদিরা থাকে তারা সেই সব কুকুরকে কোলে নেয়, আদর করে, আর তাদেরকে পাসে বসে খাওয়ায়। তা দেখেও আমি সাহস পাই না। যাইহোক, এবার সেদিনের ঘটনায় আসি -- যখন গেটে পৌঁছে সাইকেল পার্ক করছি দুজনে, তখন সেই চারটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে দৌড়ে এলো। আমরাও তখন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে দৌড়তে সুরু করলাম। আমরা কোন রকম দৌড়ে গেটের মধ্যে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি আমাদের টিমের আটজন প্লেয়ার এসে গেছে, আর একজন বাকি। বাকিরা আমাদের এত হাপানোর কারন জিজ্ঞেস করলো। আমি তো বলার অবস্থায় ছিলাম না। রিজু সব উত্তর দিতে লাগল। তখন মনে মনে ভাবলাম, রিজুর সাহস মনে হয় আমার থেকে বেশি। কিন্তু মনে প্রানে আমি নিজেকে সাহসী ভাবি। তখনো আমার শরীর কাঁপছে। ভাবছি যদি কামড়ে দিত কি না হত। হাস্পাতালে যেতে হত, ইঞ্জেকশান দিত -- অরে বাবা ইঞ্জেকশান, সেওত আরও ভয়ানক ! ভ্যাক্সিন নিতে গিয়ে কত কেঁদেছি। তিন চার জন আমাকে চেপে ধরে ভ্যাক্সিন দিত। আবার এই কুকুরের জন্য হাস্পাতাল আর ইঞ্জেকশান নিতে হত। ঠাকুর আজ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে, এই মনে মনে বলে ঠাকুরকে ধন্যবাদ জানালাম। এমন সময় বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। ঘুরে দেখি একটা ছেলে দৌড়চ্ছে। পেছনে আনেক কুকুর। বাবা রে! সবাই গেটের ভিতর থেকে এগোতে লাগলাম। অন্যদিক থেকে সিকুরিটি লাঠি হাতে এগিয়ে এল। লাঠির ঘা দিয়ে কোন ভাবে ছেলেটিকে রক্ষা করল। কাছে গিয়ে দেখি, আরে ও তো আমাদের টিমের নিখিল। আর তার জামাটা একপাশে ফাটা। তার কারন হল ও কুকুরের ভয়ে যখন সাইকেল থেকে পড়ে গিয়েছিল তখন কুকুর তার জামার ওপর দিয়ে কামড় দিয়ে জামাটাকে ছিঁড়ে দিয়েছে। সেই কামড়ের দাগও দেখতে পেলাম। তার গা বেয়ে ঝর ঝর করে রক্ত পড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে সিকুরিটি আঙ্কেল নিখিলের বাব-মাকে জানাল। তাকে হাস্পাতালে নিয়ে যাওয়া হল রেবিস ভ্যাক্সিন দেওয়ার জন্য। নিখিলের কুকুর কামড়ানোর যন্ত্রানা, ভ্যাক্সিন-এর ব্যাথা, আর কুকুরের দৌড় সবটাই আমার কাছে ভয়াবহ। আমি ঐদিন বাড়ি ফিরে, না ঠিক করে খেতে পারলাম, না ঠিক করে রাতে খুমতে পারলাম। সারারাত ছটফট করেছি। তা আজও মনে পড়লে শিউরে উঠি।