"ও মা, আমায় এই রোবটটা কিনে দেবে?"
"না! তোমার প্রচুর রোবট আছে।"
"তুমি আমায় কক্ষনো রোবট কিনে দাও না।"
"চুপ করো।"
যে ছেলেটি বায়না করছে তার প্রচুর রোবট আছে; সে যত রোবট খেলনা পায় তত রোবট চায়। সবই রোবট - রোবট গাড়ি, রোবট পুতুল, রোবট অ্যালার্ম ...
মা রোবট পুতুল কিনে না দেওয়ায় সে মুখ ভার করে বাড়ি ঢুকল। দাদু ভার মুখ দেখে বলল, "কী হয়েছে বান্টি দাদা? মুখ অমন হাঁড়ি করে রেখেছ কেন?" বান্টি বলল, "মা রোবট পুতুল কিনে দেয়নি।" দাদু বলল, "ঠিকই তো করেছে। সবসময় রোবট রোবট করলে চলে না। আরও তো অনেক কিছু
আছে। তোমার গল্পের বই, রঙ পেন্সিল, আঁকার খাতা, আমার গাছগুলো - সেগুলোও তোমারই তো! তুমি জিমির সঙ্গেও খেলা করতে পারো।।"
বান্টি তার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। ও খুব রেগে গেছে, দাদুও কেন বলছে ও সারাক্ষণ রোবট
রোবট করে। বড়রা কিচ্ছু বোঝে না - কিছুদিন পর রোবটরাই সবকিছু করবে। ও পড়েছে, রোবটরা তো এখনই হোটেলে খাবার পরিবেশন করে, কারখানাতেও কাজ করে।
সেদিন ২৪ শে ডিসেম্বর। কালকেই বড়দিন। বান্টি শুনেছে সান্টাক্লজ রাত্রিবেলা সব বাড়ি বাড়ি ঘুরে
বাচ্চাদের ইচ্ছে পূরণ করে। সত্যিই সান্টা এল ওর কাছে।
বান্টি বলল, "সান্টাক্লজ, আমাকে রোবটের দেশে নিয়ে যাবে?" সান্টা বলল, "এটাই কি তোমার ক্রিসমাস উইশ?"
বান্টি বলল, "হ্যাঁ।"
সান্টা বলল, "ঠিক আছে। কাল সকালে তুমি রোবটের দেশে পৌঁছবে।" পরেরদিন বান্টি দেখল ওর চারপাশে কত্ত রোবট! স্কুলে গিয়ে দেখে তার বন্ধুরাও রোবট হয়ে গেছে।
বান্টি ওদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে চাইল কিন্তু পারল না, ওদের স্পিড এত বেশি! বন্ধুরাও ওকে খেলায় নিতে
চাইল না।
"ধ্যুত ভালো লাগে নাকি!" বান্টি মনে মনে বলল।
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে মার কাছে রোজকার মত আদর খেতে গিয়েও বিপত্তি।
মা বলছে, "না না। এখন নয়। এখন টিফিন। তারপর পড়া।" মার গলাটাও যেন কেমন অন্যরকম শুনতে লাগল!
এবার ও গেল দাদুর ঘরে। দাদু বই পড়ছে - ওর দিকে ফিরেও তাকাল না। ও দাদুকে পিছন থেকে
গিয়ে জড়িয়ে ধরল। ওমা! এ কী কাণ্ড! দাদু ওকে ঘাড় ধরে ঘরের বাইরে বের করে দিল আর বলল,
"আমরা খেলা করি না। শুধু কাজ করি।" দাদুর গলাটাও কেমন মেশিনের মতন শোনাল! বান্টির চোখে জল এসে গেল। সান্টাক্লজ এটা কী করল? ও তো রোবটের দেশে থাকতে চেয়েছিল; মা, বাবা, দাদু, বন্ধু সবাই রোবট হয়ে যাবে - এটা কবে বলল?
সন্ধেবেলা বাবা অফিস থেকে আসলে ও আর সাহস করে বাবার কাছে গেল না। জিমিটাও কেমন দম দেওয়া পুতুলের মতন হয়ে গেছে, রাতে কোনরকম খাবার খেয়ে উঠে গেল! শোবার সময় মাও ওকে আদর করল না, গল্পও বলল না। "ঘুমিয়ে পড়।" বলে লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
রোবটের দেশ এমন বোরিং! সে চায় না এমন দেশে থাকতে। কিন্তু ও কী করবে? সান্টা তো সেই একবছর পরে আসবে! এই একটা বছর ও কাটাবে কী করে?
হঠাতই ও শুনতে পেল সান্টার গলা।
বান্টি আনন্দে লাফিয়ে উঠল। বলল, "সান্টা, তুমি এখনও ফিরে যাওনি? আমি রোবট চাই না। তুমি সবাইকে আগের মত করে দাও।"
সান্টা বলল, "জানি তো। ওদেশে কোন মানুষ থাকতে পারে না। ঠিক আছে, তুমি চোখ বন্ধ কর - যা চাও তাই হবে। সব আগের মতন করে দেব।" বান্টি চোখ বন্ধ করল। ও শুনতে পেল কারা যেন বলছে, "মেরি ক্রিসমাস বান্টি। উঠে পড়।" আরে এতো মা, বাবা, দাদুর গলা। বান্টি চোখ খুলে দেখে সকাল হয়ে গেছে। বান্টি বলল, "তোমরা মানুষ হয়ে গেছ!"
বাবা বলল, "আমরা তো মানুষই ছিলাম। তুই যে একটা বাঁদর সেটা তো সবাই জানে।" বান্টি ওর মার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল, "আদর কর মা। আদর কর মা। জিমিও এরমধ্যে চলে এসেছে মার কাছে আদর খেতে। ওদের কী খেলা! এত মজা কি আর রোবট পুতুল খেলে আছে?